সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো লেখা

এপ্রিল, ২০২৪
ভারতে বর্ণ ব্যবস্থার উদ্ভব কবে হয়েছিল? বর্ণ ব্যবস্থার উদ্ভব প্রসঙ্গে কেউ কেউ ইঙ্গিত করেন ঋগ্বেদের পুরুষ সূক্তের দিকে। যেখানে বলা হয়েছে – যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে বা হবে সকলেই সেই পুরুষ থেকে উদ্ভূত। এই পুরুষের মুখ থেকে ব্রাহ্মণ, দুই বাহু থেকে রাজন্য, ঊরু থেকে বৈশ্য এবং দুই পা থেকে শূদ্রের উৎপত্তি হয়েছে। পুরুষসূক্তের উল্লেখ পাওয়া যায় অথর্ববেদ (১৯।৬), সামবেদ (৬।৪), যজুর্বেদ (বাজসনেয়ী সংহিতা ৩১।১-৬) ও তৈত্তিরীয় আরণ্যকের (৩।১২,১৩) মতো বৈদিক গ্রন্থে। বাজসনেয়ী সংহিতা (৩১।১-৬), সামবেদ সংহিতা (৬।৪) ও অথর্ববেদ সংহিতায় (১৯।৬) এই সূক্তের অর্থব্যাখ্যা সহ উল্লেখ পাওয়া যায়।
আজ থেকে ২ লক্ষ বছর আগে যে মানব প্রজাতিগুলো জন্মেছে তারাও জানত, একদিন আমাদের মৃত্যু হবে। তারা কীভাবে নিয়েছে মৃত্যুকে? কোন বিবর্তনীয় সময় সেপিয়েন্স বা আরও ব্যাপকার্থে হোমিনিন গণের সদস্যদের মৃত্যুর 'অনুভূতি' তৈরি হতে শুরু করে? এক সময় মানব প্রজাতিগুলো, বিশেষ করে নিয়েন্ডারথল এবং হোমো সেপিয়েন্স কি ভাবতে থাকে মৃত্যুর পরেও আছে জীবনের ধারাবাহিকতা? একথা অনস্বীকার্য এই ভাবনা আমাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। নইলে, ‘আমি নেই ভাবতেও ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায়’। তবে এই ভাবনার জন্য জ্ঞানীয় চিন্তার একটি স্তরও পার হতে হয়।
ইউরোপ, এমনকি মহাসাগরের ওপারে ইউরোপীয় সভ্যতারই সম্প্রসারিত রূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কল্পনা ও মননে রোমের পতনের দীর্ঘ ছায়া আজও বিদ্যমান। আজও ‘পশ্চিম’-এর পতন সংক্রান্ত যে কোনও বিতর্কে হামেশাই রোমের পতনের সঙ্গে তুলনা টেনে আনা হয়। বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন রোমান সাম্রাজ্যের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও কোনও একদিন পতন হবে কিনা, ইউরোপের অতি-দক্ষিণপন্থীরা বর্বর আক্রমণের সঙ্গে তুলনা টানেন অভিবাসনের। মোট কথা, ‘পতন’ বলতেই ইউরোপীয়দের (এবং আমেরিকানদের) মননে প্রথম যে চিত্রটি ভেসে ওঠে, তা প্রাচীন রোম-সংক্রান্ত। এই প্রসঙ্গে বলে নেওয়া ভালো, রোমের পতন বলতে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকের শেষের দশকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের কথা আমরা বলছি। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য, যা ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ অবধি বজায় ছিল, তার সম্পর্কে ইউরোপের ঐতিহাসিক স্মৃতি ও ধারণা অন্যপ্রকার, সে এই আলোচনার বিষয় নয়। এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য, আধুনিক ইউরোপের বদলাতে থাকা ঘটনাবলী রোমের পতন সংক্রান্ত ঐতিহাসিক আলোচনাকে কিভাবে প্রভাবিত করেছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত ধারণা প্রদান করা।
ইতিহাস তথ্য ও তর্ক ফেসবুক গ্রুপ তৈরি হয় ২০১৮ সালে এবং ইতিহাস আড্ডা পোর্টাল প্রথম জনসমক্ষে আসে ২০২০ সালে। বলে রাখা ভালো, গ্ৰুপ এবং পোর্টালটি যারা পরিচালনা করেন তাদের এক বড়ো অংশ পেশাদার ইতিহাসবিদ নয়। অধিকন্তু কিছু ইতিহাসের শিক্ষক, গবেষক এই গোষ্ঠীর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত। দুইয়ে মিলিয়ে চলে চালনার কাজ। আবার লেখক ও পাঠকদের মধ্যেও এই দুই’ অংশের মানুষের অংশগ্রহণ ও অবদান দেখা যায়। বর্তমানে ফেসবুক গ্রুপের সদস্য সংখ্যা লক্ষাধিক। পোর্টালেও নিয়মিত পাঠকের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
মার্চ, ২০২৪
রাশিয়ায় ষোড়শ, এমনকি সপ্তদশ শতকেও বই বলতে হাতে লেখা বইয়ের কথাই ভাবা হতো। ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়ার গুটিকয়েক মানুষ অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে হাতে লেখা বই থেকে ছাপানো বই গ্রহণ করেছিলেন। দিনটা ১৫৬৪ সালের ১৯ এপ্রিল, মস্কো প্রেস হাউজ থেকে প্রথম বই প্রকাশ পায়, তাই এই দিনটিকেই রাশিয়ার মুদ্রণ যুগের সূচনার দিন বলে ধরে নেওয়া হয় (আর কিছুদিন পরেই রাশিয়ায় ছাপার ৪৬০ বছর পালন করা হবে)। প্রথম ছাপা এই বইটি ছিল ধর্ম বিষয়ক। এটি ছাপিয়েছিলেন সে যুগের বিখ্যাত দুই বন্ধু, ইভান ফ্যুদরফ ও পিটর মিসতিলভেস্‌, এদেরকে রাশিয়ার মুদ্রণ জগতের প্রতীক বলে মনে করা হয় এবং তাঁদের তুলনা করা যেতে পারে একমাত্র ফ্রান্সিস্ স্কারিনা’র সঙ্গে; যাকে পূর্ব ইউরোপের ছাপাখানার জনক বলা হয়। বলতে গেলে সেই সময় হাতে লেখা বইয়ের ব্যবসা এতটাই জমজমাট ও জনপ্রিয় ছিল যে, ছাপা বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়াটা খুব কঠিন ছিল।
২ রা জুলাই, ১৮৪৩ সাল। সকাল বেলা রিচমন্ডের 'মর্নিং হেরাল্ড'-এর একটা প্রতিবেদন দেখে ভ্রু কুঁচকে উঠল ব্রিটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন গ্রোভার-এর। প্রতিবেদনটা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটা চিঠি, লিখেছেন রেভারেন্ড যোসেফ ওল্ফ। দুই ব্রিটিশ সামরিক অফিসার, ক্যাপ্টেন আর্থার কনোলি এবং চার্লস স্টড্ডারট, বিগত ৫ বছর ধরে নিরুদ্দেশ। এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যোসেফ ওল্ফ। এই দুই অফিসার মধ্য এশিয়ার বুখারা থেকে নিখোঁজ। যেহেতু যোসেফ ওল্ফ নিজে কিছুদিন বুখারায় তাঁর মিশনের কাজে ছিলেন এবং এই অঞ্চলে থাকার অভিজ্ঞতা আছে, তাই তাকে যদি সামান্য অর্থ সাহায্য করা হয় বা কেউ যদি তাঁর সঙ্গে এই নতুন অভিযানে যেতে ইচ্ছুক হন তাহলে তিনি বিশেষ উপকৃত হবেন। তিনি বিশেষ ভাবে চিন্তিত কারণ তাঁর কাছে খবর আছে যে, এই দুই ব্রিটিশ অফিসারকে বুখারার কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি করে রেখে অবশেষে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কনোলি এবং স্টড্ডারট দুজনেই ভক্ত খ্রীষ্টান, তাদের খোঁজ নেওয়া যোসেফের দায়িত্ব।
১৯৩৫ সালের ২রা আগস্ট কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সপ্তম কংগ্রেস অধিবেশনে পেশ করা ‘যুক্তফ্রন্ট থিসিস’-এ প্রখ্যাত বুলগেরিয়ান কমিউনিস্ট নেতা জর্জি ডিমিট্রভ ‘দি ক্লাস ক্যারেক্টার অফ ফ্যাসিজম’ প্রবন্ধে জার্মান নাৎসিবাদকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছিলেন, “The most reactionary variety of fascism is the German type of fascism. It has the effrontery to call itself National Socialism, though it has nothing in common with socialism. German fascism is not only bourgeois nationalism, it is fiendish chauvinism. It is a government system of political gangsterism, a system of provocation and torture practised upon the working class and the revolutionary elements of the peasantry, the petty bourgeoisie and the intelligentsia. It is medieval barbarity and bestiality, it is unbridled aggression in relation to other nations.” (“সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ধরনের ফ্যাসিবাদ হল জার্মান ফ্যাসিবাদ। এর নিজেকে জাতীয় সমাজতন্ত্র বলে অভিহিত করার ধৃষ্টতা রয়েছে, যদিও সমাজতন্ত্রের সঙ্গে এর কোনওই মিল নেই। হিটলারের ফ্যাসিবাদ শুধুমাত্র বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ নয়, এ হল পাশবিক জাতিদম্ভ। এ হল রাজনৈতিক দস্যুতার এক শাসনব্যবস্থা, শ্রমিকশ্রেণি, কৃষক, পেটি-বুর্জোয়া ও বুদ্ধিজীবীদের বিপ্লবী অংশের বিরুদ্ধে প্ররোচনা ও নির্যাতনের ব্যবস্থা। এ হল মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও পাশবিকতা, অন্যান্য জাতিদের সম্পর্কে বল্গাহীন আক্রমণ।”)
অফিসবাড়িটা সমুদ্রের ধারে। সেই বাড়ির মাথায় লাগানো হাওয়া মোরগের দিকে গত কয়েকদিন ধরেই কড়া নজর সবার। পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশ ঘুরে , প্রায় ষোলো হাজার মাইল পেরিয়ে ,সুদূর প্রাচ্যের চীন দেশের ফুচাও বা ক্যান্টন বন্দর থেকে দুষ্প্রাপ্য সুগন্ধি চা-বাহী জাহাজগুলো কবে নাগাদ বন্দরে ঢুকবে তার ইঙ্গিত দেবে ওই হাওয়া মোরগ। সে নট নড়ন চড়ন হয়ে গম্ভীর হয়ে থাকলেই লন্ডন শহরের জাহাজ মালিক থেকে চায়ের দোকানী, জাহাজীবাবু থেকে চায়ের দালাল; সবার মুখ গম্ভীর, ভুরুতে ভাঁজ… হাওয়া তার মানে পড়তি। কিন্তু মোরগের মুখ যদি তিরতির করে ঘুরে যায় দক্ষিণ পশ্চিমে? তাহলে হাহাকার! সমুদ্দুর পেরিয়ে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে চা নিয়ে জাহাজগুলোর পৌঁছনো তার মানে পিছিয়ে গেল আবার! কি যে হবে! দুষ্প্রাপ্য এই পাতাগুলোর স্বাদ-গন্ধ-গুণ-মান ঠিক থাকবে তো?
বিজ্ঞানীরা একটি হরিণের ক্যানাইন দাঁত থেকে তৈরি ২০,০০০ বছর আগের লকেট থেকে তার মালিককে সনাক্ত করতে পেরেছেন। এ কোনো ব্যোমকেশের গল্প নয়, পুরো পদ্ধতি ছিল বৈজ্ঞানিক। অবশ্য ব্যোমকেশ থাকলে হয়তো বলতেন সাংখ্য দর্শন পড়া বাবার ছেলে তো যুক্তি দিয়েই অপরাধীকে ধরতে পারতেন। বিজ্ঞানীরা অবশ্য প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে করে লকেটের মালিকের সন্ধান পেয়েছেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ব্যাকরণ গ্রন্থ অষ্টাধ্যায়ীর রচয়িতা পাণিনি সম্পর্কে আমরা আজও বিশেষ কিছু জানি না। পঞ্চদশ শতক সাধারণাব্দের শেষার্ধে ওড়িশার গজপতি শাসক পুরুষোত্তমদেব রচিত ত্রিকাণ্ডশেষ শিরোনামের একটি সংস্কৃত অভিধান গ্রন্থে (২.৭.২৪) পাণিনির ৬টি নামের উল্লেখ পাওয়া যায়— পাণিনি, আহিক, দাক্ষীপুত্র, শালঙ্কি, পাণিন ও শালাতুরীয়।১ অন্ত-মধ্যযুগে সংগৃহীত এই নামগুলি নিঃসন্দেহে পাণিনির সঙ্গে যুক্ত দীর্ঘ ঐতিহ্যের স্মারক।
এই বছর বই মেলাতে ‘ইতিহাস তথ্য ও তর্ক’ ফেসবুক গ্রুপ এবং ‘ইতিহাস আড্ডা’ পোর্টালের পক্ষ থেকে একটি মজলিসি আড্ডার আসর বসানো হয়েছিল। সে ছিল আলাপের আসর, আবার ইতিহাসের আলোচনার আসরও বটে। তাতে যোগ দিয়েছিলেন লেখক, পাঠক,আলোচক, সমালোচক, দরদী (পুরোনো ও নতুন) এবং কার্যকর্তারা।
মহাস্থানগড়ের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল হল গোবিন্দ ভিটা। পুণ্ড্রনগরের উত্তরদিকের সুরক্ষা প্রাচীরের বাহিরে জাহাজঘাটা থেকে কয়েকশো গজ দূরে এটি অবস্থিত। প্রত্নস্থলটির উত্তর কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে শীর্ণকায়া করতোয়ার একটি ধারা। করতোয়ার ধারাটি এখন শীর্ণকায়া হলেও একসময়ের বিশাল প্রমত্তা এই নদীর বুকে বণিকদের বাণিজ্যতরী বয়ে যেত দূরদেশে। গোবিন্দ ভিটার আরেকটি স্থানীয় নাম ‘গোবিন্দের দ্বীপ’, অর্থাৎ বিষ্ণুর দ্বীপ/আবাসস্থল। মূলত ভূপৃষ্ঠ থেকে অপেক্ষাকৃত উঁচু নদীতীরবর্তী স্থানকে বরেন্দ্র অঞ্চলে দ্বীপ নামে ডাকা হয়। এই গোবিন্দ ভিটা পুণ্ড্রের ধর্মেতিহাস ও প্রত্নতাত্ত্বিক গৌরবের একটি বিরাট অধ্যায় ধারণ করে আছে।
ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে কয়েকটি রাজবংশকে প্রবল পরাক্রমশালী রাজবংশ বলে গণ্য করা হয়, সেই সব রাজবংশের একটি হল দক্ষিণ ভারতের চোল রাজবংশ। চোল শাসনের পত্তন হয়েছিল আনুমানিক ৮৫০ সাধারণ অব্দ নাগাদ, তামিলনাড়ুর কাবেরী বদ্বীপ অঞ্চলে। রাজধানী ছিল তাঞ্জাভুর (তাঞ্জোর)। চোল সাম্রাজ্য পরাক্রমের শীর্ষে পৌঁছেছিল সাধারণ অব্দের দশম শতকের শেষ দিকে যখন চোল সিংহাসনে আসীন হন প্রথম রাজরাজ চোল (৯৮৫-১০১৪ সাধারণ অব্দ)। পরবর্তী প্রায় ১৩০ বছর, প্রথম কুলতুঙ্গ-এর রাজত্বকাল (১০৭০-১১২০ সাধারণ অব্দ) পর্যন্ত অব্যাহত ছিল চোলদের বিজয়যাত্রা। সেই সময় দক্ষিণ ভারতের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল হয়ে গিয়েছিল চোল শাসনাধীন। চার'শ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যপাট চালানোর পর চোল শাসনের অবসান ঘটে সাধারণ অব্দের তেরো শতকের শেষ চতুর্থাংশে। শেষ চোল শাসক ছিলেন তৃতীয় রাজেন্দ্র চোল (১২৪৬-১২৭৯ সাধারণ অব্দ) ।
এবারের বইমেলা থেকে কটা বই কিনলেন? অনেকগুলো? বাহ্‌, বেশ কথা। তা বই তো অনেক কেনা হল। কিন্তু যতগুলো বই কিনলেন তার সবকটা কি পড়ে উঠতে পারবেন? আচ্ছা, এমন বই কি কখনও কিনেছেন, কেনার পর থেকে বইটা তেমন ভাবে পড়ে উঠতে পারেনি নি, কিম্বা ওই দুএক পাতার বেশি উলটে দেখেন নি? আচ্ছাআআ, এই মুহুর্তে তেমন কোনও বইয়ের নাম মনে পড়ছে না? কুছ পরোয়া নেহি। এসে গেছে হকিং ইন্ডেক্স। এই ইন্ডেক্সই বলে দেবে কেনা সত্ত্বেও কোন বইটা সব থেকে কম পড়েছেন পাঠক। কোন বহুল বিক্রীত বই সে ভাবে পাতা উলটেও দেখেন নি পাঠক? হকিং ইন্ডেক্স! সেটা আবার কী? কীভাবে সে টের পাবে পাঠকের মনের কথা? আসুন, জেনে নেওয়া হকিং ইন্ডেক্সের কর্ম পদ্ধতি। জেনে নেওয়া যাক, তার জন্ম বৃত্তান্ত, তার ইতিহাস।
গত বছর আগস্ট মাসের শেষে ভারতের সংবাদপত্রগুলিতে প্রকাশিত একটি সংবাদ অনুযায়ী গুজরাত পুলিশ সুরাতে মিতুল ত্রিবেদী নামে এক ব্যক্তিকে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছিল। সম্ভবত বাণিজ্যের স্নাতক মিতুল ত্রিবেদী চন্দ্রযান-৩-এর সফল অভিযানের পর কয়েকটি সাক্ষাৎকারের সময় নাকি দাবি করছিলেন, তিনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানী এবং লুনার ল্যান্ডারটি তাঁরই পরিকল্পিত। তিনি আরও দাবি করছিলেন, তিনি ইসরোর প্রাচীন বিজ্ঞানের প্রয়োগ বিভাগে পারদ শক্তিচালিত মহাকাশযান নিয়ে কর্মরত গবেষকদের একজন। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এই রকম কোনও বিভাগ বা গবেষণার অস্তিত্ব না থাকলেও মিতুল ত্রিবেদীকে একেবারে উড়িয়ে দিলে ভুল হবে।
প্রাচীন ভারতের গণরাজ্য সংক্রান্ত বিষয়টিকে কয়েকটি ক্রমে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যেমন বিভিন্ন সময়ের গণরাজ্যের নাম, তাদের কাজ, গণরাজ্যের অবদান ও পতন। গণ কথাটির উল্লেখ বহু প্রাচীন। ঋগ্বেদ থেকে অথর্ববেদ— বহুবারই আমরা গণ কথাটির উল্লেখ পাই। এর ব্যাখ্যা ঐতিহাসিকগন নানাভাবে করেছেন। ফ্লিট বলেছেন, এর দ্বারা স্বয়ংশাসিত উপজাতিকে বোঝায়। জয়সোয়ালের মতে গণ বলতে একের অধিক সংখ্যাকে বোঝায়। সে ক্ষেত্রে গণরাজ্য হল যেখানে একাধিক সংখ্যক লোকের শাসন জারি আছে। অর্থাৎ এটি হল অনেকটা সংসদের সমার্থক যেখান থেকে একাধিকের দ্বারা ওই নির্দিষ্ট উপজাতি ও ভূমির শাসন পরিচালিত হয়।
কে প্রথম উত্তর মেরুতে পৌঁছেছেন? সকলে বলবেন এতো জানা কথা— রবার্ট পেরি। সত্যি কি তাই? ১৯০৯ সালে আফ্রিকান আমেরিকান ম্যাথিউ হেনসন অভিযাত্রী রবার্ট পেরির সঙ্গে ট্রেক করছিলেন, যে অঞ্চলটিকে উত্তর মেরু বলে দাবি করেছিলেন সেখানে তারা পৌঁছেছিলেন। কে সেখানে প্রথম পা দিয়েছিলেন?
সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘রসগোল্লা’ গল্পটি তো সবাই পড়েছেন। ইতালির ভেনিস বন্দরে চুঙ্গিওলার নাকে রসগোল্লা থেবড়ে দেওয়া, অতঃপর রসগোল্লার জাদুতে সবাই বিভোর হয়ে যাওয়ার গল্পটি এখনও হাস্যরস উদ্রেক করে। সেই সঙ্গে বাঙালি হিসেবে রসগোল্লা নিয়ে গর্ববোধ হয়, বিশেষত মিষ্টান্ন প্রেমিকদের জন্য। রসগোল্লার পাশাপাশি আর যে মিষ্টিগুলো বাঙালিকে শীত ঋতুতে বেশি টানে, খেজুর গুড়ের জিলাপি তার মধ্যে অগ্রগণ্য। পুণ্ড্র-বরেন্দ্রীতে যখন শীত নামতে শুরু করে, সেসময় এই জিলাপি যেন অমৃত সমান। আহা, খেজুর গুড়ের জিলাপির প্যাঁচে যেন আটকে পড়েও সুখ।
বিশদ পড়ুন
জানুয়ারি, ২০২৪
গান্ধিহত্যা কি স্বাধীন ভারতের সর্বপ্রথম এবং তর্কযোগ্যভাবে সর্ববৃহৎ 'ইন্টালিজেন্স ফেলিওর'? আগাম প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ও গোয়েন্দাবিভাগ যথাযথ তৎপরতা দেখালে আততায়ীদের দলটিকে কি আগেভাগেই ধরা যেত এবং গান্ধিহত্যা এড়ানো যেত? তদন্তকারীদের অফিসারদের এই ব্যর্থতা কি নিতান্ত পেশাদারিত্বের অভাব, অনিচ্ছুক গাফিলতি, নাকি আরও বড় কোনও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার ইঙ্গিতবাহী? বর্তমান নিবন্ধে আমরা এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব।
পেনি ইউনিভার্সিটি— নামটা কানে বেশ একটু অদ্ভুত শোনাচ্ছে বটে, কিন্তু অক্সফোর্ড শহরের কফির দোকানগুলোকে তখন এই নামেই ডাকে সেখানকার মানুষ। শব্দটা সপ্তদশ শতাব্দীর। সময়টা আন্দাজ ১৬৫০। অক্সফোর্ড শহরের রাস্তার ধারে খোলা হয়েছে ইংল্যান্ডের প্রথম কফিহাউস। মাত্র এক পেনির বিনিময়ে সেখানে মেলে ফায়ার প্লেসের ধারে সুগন্ধি গরম কফি, বিদগ্ধ আলোচনা আর জ্ঞানী-গুণী মানুষজনের সান্নিধ্য। অক্সফোর্ডের ছাত্র বা শিক্ষক না হয়েও সেখানকার জ্ঞানী-গুনী মানুষের সঙ্গে সমানে সমানে কথাবার্তা, আলোচনা, তর্ক বিতর্কের সুযোগ। সঙ্গে? কফি। পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে আসা চনমনে সুগন্ধি এক নতুন পানীয় যা মানুষের শরীর মন দুইই চাঙ্গা করে দেয়।
“একজন খোরাসানি মেয়েকে কেনো ঘরের কাজের জন্য, হিন্দু মেয়েকে কেনো সন্তান প্রতিপালনের জন্য, পারস্যের মেয়ে কেনো ভোগ করার জন্য আর বাকি তিন বাঁদিকে ভয় পাওয়ানোর উদ্দেশ্যে মারধর করার জন্য কেনো ট্রান্সকশিয়ানার মেয়ে…।” যেহেতু এই নিবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য হল মধ্যযুগের উত্তর ভারতে ক্রীতদাসীদের অবস্থা সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা উপস্থাপন করা, তাই আলোচনা শুরু হোক উপরোক্ত এই উদ্ধৃতিটির মধ্য দিয়ে।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। এদেশে আধুনিক রসায়নচর্চার পথিকৃৎ। রসায়নবিদ হিসাবে যতটা তার চেয়েও বেশি ছিলেন সমাজসংস্কারক, শিল্পোদ্যোক্তা, ছাত্রবৎসল, শিক্ষাবিদ। সারা জীবনে প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন একটা অগোছালো, উদ্দেশ্যহীন, আত্মবিস্মৃত জাতিকে বলিষ্ঠ, স্বনির্ভর, আত্মসচেতন সত্তায় সংগঠিত করতে। জাতিটার নাম—বাঙালি। বিজ্ঞান বিষয়ক নানা প্রবন্ধ লিখেছেন পরম মমতায়। শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত ছোটদের পত্রিকা 'মুকুল'-এ লিখেছেন 'পশুর কৌতুকপ্রিয়তা', 'প্রকৃতি' পত্রিকায় লিখেছেন 'প্রাণীদিগের দংশন কাহাকে বলে?'। বালক- বালিকাদের উপযোগী করে বাংলায় সচিত্র বই লিখলেন 'সরল প্রাণীবিজ্ঞান'। অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে সেকালের নানা সাময়িক পত্রে। সেই সংগ্রহ থেকে শোনাব দুটি গল্প।
আমার জন্ম বেলারুশে, ডাক্তারদের একটি পরিবারে। আমার বাবা-মা আমাদের রেখে যেতেন একজন আয়ার যত্নে, যিনি বেলারুশের গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন। আয়া বেলারুশের রূপকথার গল্প বলতেন, তাকে বিরক্ত করলে চিৎকার করতেন ‘পেরুন তোকে ধরে নিয়ে যাবে’! পেরুনকে (প্রাক-খ্রিস্টিয় পাগান স্লাভদের মূল দেবতা) তিনি স্বর্গে বসবাসকারী এবং ঝড়, বজ্রপাত আর বজ্রপাতের নিয়ন্ত্রক বলতেন। বিজ্ঞান পেরুন সম্পর্কে আমার ছেলেবেলার আয়ার চেয়ে সামান্য বেশি জানে। এমনকি আমরা যে কয়েকটি তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি তা পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং তাঁর সঙ্গে যুক্ত পৌত্তলিক দেবতাদের সম্পর্কিত; যেমন বলি, মূর্তি, শপথ, নাম সংকীর্তন ইত্যাদি। (‘পেরুনের পুনরুত্থান, পূর্ব স্লাভিক পৌত্তলিকতার পুনর্গঠনের জন্য’ বইটির১ ভূমিকা, ২০০৪)
ভারতে বর্তমানে বিতর্ক চলছে আদিবাসীদের কেন আদিবাসী বলব তাই নিয়ে। আদিবাসীরা যদি সত্যিই আদিবাসী তথা আদি বাসিন্দাই হয়, তবে গোটা ভারতের বাদবাকি মানুষ কি পরে আসা বহিরাগত? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এর সাথে নানা আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক সমস্যা জড়িয়ে যাওয়ায় এই প্রশ্ন খুবই জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশদ পড়ুন
মাসের শেষ, বছরেরও শেষ। কবি বলেছেন, জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক। যে বৃহৎ দুই যুদ্ধে পৃথিবী কেঁপে কেঁপে উঠছে, সেই পুরাতন যুদ্ধ নতুন বছরে ভেসে যাক। আর কোনো ভীতিপ্রদ, নৃশংস ও ভয়ঙ্কর যুদ্ধের অভিশাপ যেন পৃথিবীকে আঘাত না করে। আর কোনো শিশু যেন সময়ের আগে শুকিয়ে ঝরে না পরে। আর কোনো যুবক যেন প্রেমিকার ছবি বুকে চেপে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ না হারায়।
বিশদ পড়ুন
সত্যেন্দ্রনাথ বসু এ’যুগের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তাঁর প্রতিভার বহুমুখী স্ফুলিঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সত্যেন্দ্রনাথ শুধু বিজ্ঞানের উপাসক ছিলেন না, তিনি ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক, সমালোচক, ভাষাবিদ, সঙ্গীতশাস্ত্রজ্ঞ। জ্ঞানের প্রায় সমস্ত রাজপথেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। সত্যেন্দ্রনাথের প্রিয় বন্ধু দিলীপকুমার রায় তাঁর স্মৃতিচারণে শুনিয়েছেন সে কথা। “সংস্কৃতজ্ঞদের সঙ্গে সংস্কৃত, ঐতিহাসিকদের সঙ্গে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ববিদের সঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব, গীতজ্ঞদের সঙ্গে সঙ্গীত, কবিদের সঙ্গে কাব্য-কোনো আলোচনাতেই ও পেছপা হত না। এমন সব মন্তব্য করত যে বিশেষজ্ঞরা খুশি না হয়ে পারতেন না। অন্তত সঙ্গীত ও সাহিত্য নিয়ে আমি এবং ওর আরও নানা বন্ধু ওর সঙ্গে বহুবারই আলোচনা করে বিশেষ লাভবান হয়েছি একথা হলপ করে বলতে পারি।"
বিশদ পড়ুন
ডিসেম্বর, ২০২৩
প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে উঠে আসে গঙ্গাঋদ্ধি সভ্যতার কথা। সেই সভ্যতার কেন্দ্র গঙ্গারাজ্যের সঠিক অবস্থান আজও নির্ণীত হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার চন্দ্রকেতুগড় এবং বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী উয়ারী-বটেশ্বর প্রত্নস্থান দুটি এক্ষেত্রে খুব উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। গ্রিক দিগ্বিজয়ী আলেকজান্ডার পঞ্চনদ অঞ্চলের বিপাশা নদীর তীর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে গঙ্গাঋদ্ধি জাতি বা রাজ্যের শক্তিশালী সামরিক শক্তির কথা শুনে আর না এগিয়ে ফিরে যান। হয়তো আজকের উয়ারী-বটেশ্বরেই ছিল সেই গঙ্গাঋদ্ধি জাতি বা রাজ্যের রাজধানী। উয়ারী-বটেশ্বরের দ্বিস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা প্রাচীর, সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত প্রাচীন বসতি, আড়াই হাজার বছর সময়কাল ও পূর্ব ভারতে এর ভৌগোলিক অবস্থান একে গঙ্গারিডি বা গঙ্গাঋদ্ধি বলে শনাক্ত করতে ভূমিকা রাখে।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় একজন বহুমাত্রিক মানুষ। একাধারে বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক, শিক্ষক, শিল্পোদ্যোগী, সাহিত্যিক ও সাহিত্যবোদ্ধা — তাঁর জীবনের প্রত্যেক দিক নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা সম্ভব। তাঁর প্রথম পরিচয় অবশ্যই শিক্ষক ও বিজ্ঞানী, একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে তিনি দীর্ঘদিন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রফুল্লচন্দ্রের সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তাঁর গবেষণাকে কোন চোখে দেখতেন, রাজিন্দর সিং ও অর্ণব রায়চৌধুরির এক প্রবন্ধে তার পরিচয় পাওয়া যাবে। রসায়নে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের গবেষণা সম্পর্কে লেখার যোগ্যতা আমার নেই, এই লেখাতে আমরা শুধুমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাব্রতী প্রশাসক প্রফুল্লচন্দ্রকে সংক্ষেপে চেনার চেষ্টা করব; হয়তো তার সঙ্গে তাঁর চরিত্রের অন্য দিকগুলিরও কিছু পরিচয় পাওয়া যাবে।
শিরোনামটা দেখলেই যে অনিবার্য প্রশ্নগুলোর মুখে পড়তে হবে তা হল, “কণাপদার্থবিদ্যা বিষয়টা আবার কী মশাই? তার বিবর্তনই বা আবার কী বিষয়?” প্রশ্নগুলো সহজ কিন্তু খুব সহজে এর উত্তর দেওয়া যায় না কারণ আপাত সরল প্রশ্নের আকারে আসলে পেশ করা হয়েছে মানবমনীষার মৌল প্রশ্ন। সুতরাং আগে বুঝে নিই কণাপদার্থবিদ্যা বিষয়টা ঠিক কী। কণাপদার্থবিদ্যাকে প্রকৃতপক্ষে বলা উচিৎ … Continue reading "কণাপদার্থবিদ্যার বিবর্তন (পর্ব – ১)"
ব্যারানভ চলে গেলেন। আলাস্কার সৈকতে সাগরের ঢেউ আগের মতোই ভাঙতে লাগল। স্প্রুসের ডাল থেকে খসে পড়া পাতা মাটিতে মিশে পরের প্রজন্মের চারাদের লালনে ব্যাস্ত থাকল। বাতাস আগের মতোই জলীয় বাস্প বয়ে নিয়ে গিয়ে জন্ম দিতে লাগল অন্ধ কুয়াশার। আর আলাস্কার আদিবাসী মানুষেরা বিশ্বাস করল যে আগের ছন্দেই চলতে থাকবে জীবন। ততদিনে রুশদের সঙ্গে অ্যালিউট আর লিঙ্গিতদের একটা তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ বিনিময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বানিজ্যিক বিনিময়ের বাইরে স্থাপিত হয়েছে সামাজিক সম্পর্ক। রুশদের সঙ্গে আদিবাসীদের মিশ্রণের ফলে জন্ম নিয়েছে এক মিশ্র প্রজাতির যার নাম ‘ক্রেওল’, সামাজিক অবস্থানে যারা যথেষ্ট সম্মানজনক স্থান পেয়েছে। শুধু প্রবল নাড়াচাড়া পড়ে গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরমহলে।
১৯২০ সালে রাশিয়ার বলশেভিকরা তিন বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের পর শ্বেতরক্ষীদের নির্ণায়কভাবে পরাস্ত করতে সক্ষম হলেও দেশের অর্থনীতি ও পরিকাঠামো ভেঙে চুরে যায়। রাশিয়ার পুনর্গঠনের লক্ষ্যে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ থেকে খানিকটা পেছনে সরে এসে নেওয়া হয় নয়া আর্থিক নীতি বা নেপ। এতে গ্রামাঞ্চলে ধনী কৃষক ও কুলাকদের অনেকটা ছাড় দেওয়া হয়, যাতে রাশিয়ায় কৃষি উৎপাদন বাড়ে এবং সেনাবাহিনী ও শহরে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ বরাদ্দ থাকে। ভারী শিল্প ও কলকারখানা এরপরেও বেশ কয়েক বছর বেশ সঙ্কটগ্রস্থ অবস্থায় থাকলেও কৃষি উৎপাদন ক্রমশ বাড়তে থাকে। ১৯২৪ এ লেনিনের মৃত্যুর পর রাশিয়ায় শুরু হয় নেপ নিয়ে এক মহাবিতর্ক।
একটা পুরো মহাসাগরের নাম আমাদের দেশের নামে হয়ে গেছে। পৃথিবীতে যুগে যুগে বহু ক্ষমতাধরেরা এসেছেন, সেসব দেশের পাশেও মহাসাগর আছে, কিন্তু তবু অন্য কোনো দেশ এই সৌভাগ্যের অধিকারী হয়নি, তাদের নামে একটা মহাসাগরের নাম হয়নি। ভারতের সঙ্গে এই মহাসাগর, তার নিকটবর্তী অন্যান্য সাগরগুলির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অতি প্রাচীন যুগ থেকে, প্রথমে পশ্চিম ও পরে পূর্ব উপকূল ধরে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এই উপমহাদেশের মানুষ সমুদ্রপথে বাণিজ্য করেছে। সেই ইতিহাস আজ হারিয়ে গেছে। ভারতবর্ষের মানুষের সেই গৌরবের কথা, সম্পদের স্মৃতিও আর নেই। তবে সেই ইতিহাস তার প্রতি বিদেশি বণিকের আকর্ষণ গড়ে তুলেছিল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ইতিহাসে সেই বাণিজ্য ও তার সঙ্গে সাংস্কৃতিক দেনাপাওনার স্মৃতি রয়ে গেছে।
বিশদ পড়ুন
একটি পছন্দের পানীয় নিয়ে কিছু কথা। যব গেঁজিয়ে প্রাপ্ত পানীয় নয়। জলের পর পৃথিবীর সর্বাধিক জনপ্রিয় পানীয়ের কথা। বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস (Camellia sinensis), যাকে নিয়ে অনেক কথা লেখা যেতে পারে কারণ এর ইতিহাস প্রায় সাড়ে চার হাজার বছরের পুরোনো।
বিশদ পড়ুন
সিনাগগ হল ইহুদিদের উপাসনা ক্ষেত্র। ঊনবিংশ শতকে সমগ্র ইউরোপ জুড়ে যখন বড়ো বড়ো সিনাগগ তৈরি হয়, তাদের স্থাপত্য খ্রীষ্টান চার্চের থেকে স্বকীয়ভাবে গড়ে ওঠে। এরকম এক প্রাচীন সিনাগগ দেখতে চললাম প্রাগ শহরে। প্রাগ মধ্য ইউরোপে, কিন্তু প্রাগের সব থেকে পুরোনো সিনাগগের নাম "স্প্যানিশ সিনাগগ"! প্রাগে কীকরে এল স্পেনের সিনাগগ? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দেখা গেল শিল্পের মেলবন্ধন কীভাবে গৌণ করে দেয় ধর্মের বিভাজন!
বিশদ পড়ুন
কয়েক দিন আগে আমাদের কুম্ভকর্ণের মতো দীর্ঘনিদ্রা ভঙ্গ হয়েছিল, সম্পূর্ণ ঐতিহ্যবিহীন সুরে কাজী নজরুলের ভাঙার গান ‘কারার ঐ লৌহ-কবাট’ গানের এক নতুন সংস্করণ শুনে। কিন্তু তার আগের দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলিতে কাজী নজরুলের ভূমিকা কীভাবে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছি, সেই লজ্জার কাহিনি স্বীকার করতে কেউ বোধ হয় রাজি হব না। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাম্যবাদী ভাবনার ভাবুকদের অংশগ্রহণের উজ্জ্বল দিকচিহ্নগুলিকে সম্ভবত সচেতনভাবেই বিস্মৃতির অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
নভেম্বর, ২০২৩
সময়টা সাধারণাব্দের চতুর্থ শতকের শেষ, পঞ্চম শতকের শুরু। ইউরোপীয় ইতিহাসচর্চায় তখনও গ্রিকো-রোমান ধারারই রমরমা। প্রায় হাজার বছর আগে হেরোডোটাস চিন্তার যে নতুন রাজপথ খুলে দিয়েছিলেন, তাতে ইতিহাসের রথ চালিয়ে চলে গেছেন গ্রিকদের মধ্যে থুকিডিডিস, পলিবিয়াস আর রোমানদের মধ্যে লিভি, প্লুটার্ক আর তাসিতুসদের মতো রথী মহারথী। প্রায় হাজার বছর ধরে ইউরোপীয় ইতিহাস চিন্তার জগতে একাধিপত্য করে চলেছে গ্রিকো-রোমান ইতিহাস চর্চার এই রথ। হঠাৎ এই রথের পথরোধ করে দাঁড়ালেন কয়েকজন। এতদিন ইতিহাস আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মানুষ ও তার কাহিনী। সময়ের ধারণা ছিল চক্রাকার। মনে করা হত ইতিহাসের ঘটনাগুলি পূর্বেও ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। গ্রিকো-রোমান ধারায় ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্যই তো ছিল ভবিষ্যতে যখন একই ঘটনা আবার ঘটবে, তখন মানুষ যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে আর ভুল সিদ্ধান্ত থেকে দূরে থাকে তা নিশ্চিত করা।
ভাবতে অবাক লাগে গোটা একটা বই লেখা হলো (সিংগিং দ্য নিউজ অফ ডেথ: এক্সিকিউশন ব্যালাডস ইন ইউরোপ ১৫০০-১৯০০) ইউরোপের গত চার শতকের শিরচ্ছেদের ব্যালাড নিয়ে, আর এই গবেষণাপত্রটিকে একটা পূর্ণাঙ্গ বইয়ের রূপ দিতে উনা ম্যাকিলভেন্না সময় নিলেন দশটা বছর! ২০২২ সালের ৫ জুলাই বইটি ছাপা আকারে প্রকাশিত হয়। দু’টো পর্বের এই বইটির প্রথম অংশের বিষয়বস্তু হল ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন কারণে ইউরোপে সংগঠিত শিরচ্ছেদের সময়ে বা পরে রচিত ব্যালাডগুলিতে ঘটনার সত্যতা ও রচনার কাব্যিক অতিকথন নিয়ে। দ্বিতীয় অংশের বিষয় বিবিধ - সমাজ ও সংস্কৃতিতে (বিশেষত অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে) ভালো-মন্দের হিসেব, হত্যা ও নৃশংসতা সম্পর্কে লেখক ও পাঠক বা শ্রোতা-মনের প্রতিক্রিয়া এবং ব্যালাড যুগের অন্তকাল নিয়ে।১
বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের অধিকাংশ, পাঞ্জাব প্রদেশের কিছু অংশ এবং পূর্ব আফগানিস্তানের একটি অংশ বহু প্রাচীনকাল থেকে গান্ধার নামে পরিচিত ছিল, ঋগ্বেদেও (১.১২৬.৭) গান্ধারের উল্লেখ আছে। ষষ্ঠ শতক সাধারণপূর্বাব্দের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চতুর্থ শতক সাধারণপূর্বাব্দের শেষার্ধে আলেকজান্ডারের অভিযান পর্যন্ত গান্ধার (প্রাচীন পারসিক ভাষায় গন্দার) অঞ্চল আকিমিনীয় সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চতুর্থ শতক সাধারণপূর্বাব্দের শেষে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এই এলাকাকে তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। প্রথম সহস্রাব্দ সাধারণপূর্বাব্দের মাঝামাঝি থেকে প্রাচীন গান্ধারের দুটি মুখ্য নগর ছিল পুষ্কলাবতী (বর্তমান চারসদ্দা) ও তক্ষশিলা।
ইতালির পম্পেই নগরের কথা মনে আছে তো? সে অনেক দিনের কথা— তা প্রায় ৭৯ সাধারণ অব্দ কালে। তখন ভারতের উত্তর পশ্চিমাংশে রাজত্ব করছে কুষাণ রাজারা। ইতালির নেপলসের কাছে ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতের কথা সকলেই জানি। ওই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভার সঙ্গে ছাই, পাথর ইত্যাদি নির্গত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। আর সেই ছাই ও পাথরে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল পম্পেই শহর। আজও পম্পেই শহরে গেলে দেখা যায় প্রস্তরীভূত মানুষের দেহ।
সিন্ধু সভ্যতার যে নিদর্শনগুলো পাওয়া গেছে সেগুলোকে প্রাক আর্য সভ্যতার নিদর্শন বলে ঐতিহাসিকরা স্বীকার করে নিয়েছেন। পাথরের দেবী মূর্তিগুলোকে তাঁরা মাতৃকা মূর্তি বলেছেন। এই মূর্তিগুলোর মধ্যে একটি মাতৃকা মূর্তি দুটি হাঁটু ফাঁক করে বসে আছেন আর তাঁর গর্ভ থেকে একটি বৃক্ষলতা বাইরে বেরিয়ে আসছে। এটিকে তাঁরা শস্য উৎপাদিকা ও প্রজনন শক্তির প্রতীক পৃথিবীর মাতৃমূর্তি বলেছেন। ভারতের মতো পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এই রকম মাতৃকা মূর্তি পাওয়া গেছে।
“তোমার নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি যাবজ্জীবন কঠোর পরিশ্রমে উহা ভোগ করিবে। উহাতে তোমার জন্য কন্টক ও কাঁটাগাছ জন্মিবে, এবং তুমি ভূমির তৃণ ভোজন করিবে। তুমি মুখে ঘর্ম তুলিয়া খাদ্য পাইবে যতকাল তুমি মাটিতে ফিরিয়া না যাইতেছ; তুমি তো তাহা হইতেই নির্মিত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” জেনেসিস ৩:১৭-১৯, কিং জেমস বাইবেল।
বিশদ পড়ুন
ভারতের প্রথম এবং অদ্যাবধি একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। বেঁচে থাকলে এই নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখ তাঁর বয়স হত ১০৬ বছর। ইন্দিরা গান্ধীকে সামান্য জানতে ও বুঝতে হলে একমাত্রিক দৃষ্টিতে চিন্তা করলে চলবে না। তিনি ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর একমাত্র কন্যা, কৈশোরের শেষে মাতৃহীন। তাঁর ছিল অস্থির শিক্ষা জীবন এবং অসুখী বিবাহিত জীবন।
বিশদ পড়ুন
অক্টোবর, ২০২৩
বাংলা গান। বাঙালির এক অপরিমেয় অহংকার। তার নিজস্ব রত্নভাণ্ডার। বাঙালির হাজারও দোষের চর্চা হলেও ভারত জুড়ে আজও তার কোকিলকন্ঠের প্রশংসা করার লোকের অভাব হয় না। চর্যাপদের গায়েন থেকে শুরু করে আজকের স্বনামধন্য গায়ক গায়িকা পর্যন্ত সংগীতের এক স্বপ্নিল উত্তরাধিকারের ধারক বাঙালির সংগীতপ্রেমের জুড়ি মেলা ভার। শুরুর সেদিন থেকে বাঙালির সংগীত বহু ধারা উপধারায় বহমান। সমস্ত ধারাকে একসাথে এই ছোট্ট পরিসরে ধরা এক সুকঠিন কাজ। কারণ, বাঙালির সংগীতের সূচনালগ্ন থেকেই তাতে সমান্তরাল দুটি ধারা পরিপুষ্ট হয়ে চলেছে —লোকসংগীত ও শাস্ত্রীয় সংগীত। আর গান মানে তাতে বিভিন্ন রাগ রাগিণীর ব্যবহার থাকবেই। বঙ্গাল, ভাটিয়ালি, গৌড় মল্লার, গৌড় সারঙ্গ ইত্যাদি রাগিণী যে এই পোড়া দেশের ছাই উড়িয়ে পাওয়া অমূল্য রতন তা তো ‘নাম দিয়ে যায় চেনা’। সূচনালগ্নের চর্যাগান থেকে কীর্তন ও ঢপ কীর্তন পর্যন্ত পারস্পরিক আত্মীয় সম্পর্কে বাঁধা কয়েকটি গানের ধারা কেবল আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করব। তবে শুরুরও একটা শুরু থাকে।
১৯২২ সাল, প্যারিসের ‘ইকোল নরমাল সুপেরিয়র’ (ইএনএস) বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হলেন ১৬ বছরের ছাত্র অঁদ্রে আবহাম ভেই (১৯০৬-১৯৯৮)। গণিত তাঁর প্রিয় বিষয় হলেও প্রাচ্যের ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়েও বিশেষ আগ্রহী ছিলেন তিনি। বিশেষত সংস্কৃত ভাষা ও ভারত ছিল তাঁর ভালোবাসার কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু প্যারিসে বসে কী আর সংস্কৃত ভাষা শেখা সম্ভব? ভেই তাই ভাবছেন, কীভাবে, কার কাছ থেকে ভারত ও সংস্কৃত ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়? সেই সময়ে প্যারিসের ‘প্র্যাকটিক্যাল স্কুল ফর হায়ার স্টাডিজ’-এ অধ্যাপনা করতেন বিশিষ্ট প্রাচ্যবিদ অধ্যাপক সিলভাঁ লেভি (১৮৬৩-১৯৩৫)।
ভারতের আটটি শাস্ত্রীয় নৃত্যের অন্যতম হল মণিপুরি নৃত্য। মণিপুরি নৃত্যের জন্মস্থান উত্তর-ভারতের মণিপুর রাজ্যে যা কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বতমালা, পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণাধারা, সুবিস্তৃত সবুজ জঙ্গলে ভরা অণুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সজ্জিত। যে মণিপুর ১৮২৮ সালে রাজা গম্ভীর সিং-এর আমলে বর্মার আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল— সেই মণিপুরকে পরে দেশ স্বাধীন হলে ১৯৪৭ সালে রাজা বোধচন্দ্র সিং তাঁর রাজ্যকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করেন। অবশ্য দু’ বছর পর ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসাবে মণিপুরকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য এবং তারও পরে ১৯৭২ সালে পূর্ণরাজ্যের অধিকার পেয়েছিল।
আমেরিকার ‘ওয়েস্ট কোস্ট’-এর উত্তর কোণের ওয়াশিংটন রাজ্যের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে কলম্বিয়া নদী যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরে এসে মিশছে, সেখান থেকে উত্তর দিকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া ছুঁয়ে কেউ যদি আলাস্কার দক্ষিণ পূর্ব উপকূল ধরে সিটকা পেড়িয়ে ইয়াকুতাত নদীর অববাহিকা অব্দি পৌঁছে যায়, তবে তার পায়ের তলায় থাকবে এমন এক ভূভাগ যার বিচিত্র চরিত্র তাকে অবাক তো করবেই, বিভ্রান্তও করবে যথেষ্ট। অশান্ত সমুদ্রের প্রায় পাড় থেকেই উঠে গেছে উঁচু পাহাড় যাদের কারোর কারোর উচ্চতা ৩ থেকে ৪ হাজার ফিট। সেই উচ্চতাতেই তাদের মাথায় বরফের টুপি। স্থলভূমির এই পাহাড়ি চরিত্র বিস্তৃত হয়েছে সংলগ্ন সমুদ্রের তলদেশে। জলের নিচে থাকা পাহাড় সমুদ্রের ওপরে বিভিন্ন উচ্চতায় মাথা বের করে তৈরি করেছে অসংখ্য ছোটো বড়ো দ্বীপ।
‘হর্ষের হর্ষ উবে গেল’। লিখেছিলেন রবিকীর্তি। বাদামি চালুক্য বংশের প্রবল পরাক্রমশালী শাসক দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তি। কর্ণাটকের আইহোলের মেগুতি পাহাড়ের ওপর এক জৈন মন্দির আছে। সেই মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা এক লেখতে, যে লেখর পোশাকি নাম 'আইহোলে লেখ'। হর্ষ কে? তাঁর হর্ষ উবে গিয়েছিল কেন? এমন হেঁয়ালি কেন রচনা করেছিলেন রবিকীর্তি? এইসব প্রশ্ন নিশ্চই আসছে আপনাদের মনে। দোষের কিছু নেই। আমারও এসেছিল। পরে বইপত্র ঘেঁটে বুঝেছিলাম যে হেঁয়ালি রচনা করেননি রবিকীর্তি। রসিকতা করেছিলেন। বিদ্রুপ করেছিলেন থানেশ্বরের (প্রাচীন নাম স্থানিশ্বর) পুষ্যভূতি বংশের চতুর্থ প্রজন্মের রাজা প্রবলপ্রতাপান্বিত হর্ষবর্ধনকে। বাপরে বাপ! কী সাহস! হর্ষবর্ধনকে নিয়ে রসিকতা! কেন এহেন রসিকতা করেছিলেন রবিকীর্তি হর্ষবর্ধনকে নিয়ে? সাহস পেয়েছিলেন কী করে? হুম, তাহলে তো একটু কষ্ট করে জানতে হবে আইহোলে লেখর প্রেক্ষাপট।
জন্মেজয় বৈশম্পায়নকে শুধালেন: “দেশস্য গৌরবং চক্রে কিমর্থং দ্বিজসত্তম। বাসুদেবো মহাত্মা যদভ্যষিঞ্চত্ স্বয়ং স্ত্রিয়ম্॥” অর্থাৎ, “হে দ্বিজ বলুন, মহাত্মা বাসুদেব সেই সম্মানিত দেশটির শীর্ষে কেন এক নারীকে অভিষিক্ত করেছিলেন?” উত্তরে কৃষ্ণের সিদ্ধান্তকে ব্যাখ্যা করে নীলমতপুরাণে বৈশম্পায়ন শুরু করলেন তাঁর উত্তর, “যৈব দেবী উমা সৈব কশ্মীরা নৃপসত্তম।
বিশদ পড়ুন
আজকাল অনেকে ভারতকে ‘গণতন্ত্রের জননী’ বলে অভিহিত করছেন বলে দেখতে পাচ্ছি। এর অন্যতম কারণ হিসাবে তাঁরা প্রাচীন ভারতের গণরাজ্য বলে অভিহিত কয়েকটি জনপদে একক বংশানুক্রমিক শাসকের অনুপস্থিতির উল্লেখ করেন। কিন্তু, ভারতের এই প্রাচীন গণরাজ্যগুলিতে জননীদের রাজনৈতিক অধিকারের কোনও চিহ্নমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। ভারতের প্রাচীন যুগে রচিত ধর্মশাস্ত্রে দেখি সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বা সামাজিক অধিকার, নারীদের কোথাও স্থান নেই, নেই তাঁদের বেদ শিক্ষার অধিকার। আদি মধ্যযুগের স্মৃতিশাস্ত্রে সম্পত্তির অধিকার কিছুটা যদি বা নারীদের দেওয়া হল, তো সংযোজিত হল বিধবাদহনের মতো অমানবিক প্রথা।
বিশদ পড়ুন
সেপ্টেম্বর, ২০২৩
অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৮৫১-১৯১৫)। জন্মেছিলেন ঢাকা বিক্রমপুরের লোহাজাং থানার ব্রাহ্মণগা গ্রামে। বিক্রমপুর ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। বিক্রমপুর-এ জন্মেছেন পণ্ডিত শীলভদ্র, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, জগদীশ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, বিনয় - বাদল - দীনেশ প্রমুখ। অঘোরনাথের পিতা রামচরণ চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন। ছেলেবেলায় পড়াশুনা ঢাকার পোগোজ স্কুলে, সেখান থেকে পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এখানে সাড়ে তিন বছর পড়েছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন প্রচুর পড়াশুনা করে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি লাভ করেন এবং স্কটল্যান্ড-এর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। বি এস সি পরীক্ষায় তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন। এর পর ১৮৭৫-এ ডি এস সি ডিগ্রি পান। গবেষনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পেয়েছিলেন হোপ পুরস্কার এবং Baxter scholarship।
লং শট – ভিউ ফাইন্ডারে কোডিয়াক দ্বীপের থ্রি-সেন্টস বে-র সমুদ্র, পাথরভরা তটভূমি। এই কোডিয়াকে শেলিকভের রাশিয়ান-আমেরিকান কোম্পানি পত্তন করেছে তাদের প্রথম স্থায়ী আস্তানা, আর তার প্রধান পরিচালকের পদে নিয়োগ করেছে ব্যারনভকে। জাহাজে করে এর বন্দরে এসে পৌঁছনর কথা তাঁর। কিন্তু দেখা গেল সমুদ্রের জলে ভাসছে একটা পলকা নৌকো। সীলমাছের চামড়ায় মোড়া নৌকোর ভগ্নপ্রায় দশা। শেষবারের মতো তাকে সৈকতে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে দু’জন দাড়িওয়ালা লোক। দাঁড় চলছে কিছুটা যেন এলোমেলো হয়ে। পাকা মাঝির ছন্দোবদ্ধ চলন তাতে অনুপস্থিত।
“ইউফ্রেটিস নদীর পাড়ের শহর আজ়ুপিরানু। সেখানে আমার মা ছিলেন মন্দিরের উচ্চস্তরের পুরোহিত। বাবার কথা আমার জানা নেই। বাবার জ্ঞাতিগোষ্ঠীরা পাহাড়কেই বেশি পছন্দ করত। মা আমাকে গোপনে তাঁর গর্ভে ধারণ করেছিলেন। লুকোনো অবস্থায় আমার জন্ম দেন। মা জলনিরোধক ঘন আলকাতরা মাখা নলখাগড়ার এক ঝুড়িতে আমাকে রেখে, ঢাকনা বন্ধ করে, সে ঝুড়ি ভাসিয়ে দেন নদীতে। নদীর জল ঝুড়িতে ঢোকেনি। নদীর জলে ভেসে ভেসে আমি চলে আসি আক্কির কাছে। জল সেচ করার কর্মী আক্কি আমাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে নিজের ছেলের মত করে বড়ো করেন। তারপরে আমাকে বাগানের মালির কাজে লাগিয়ে দেন। বাগানে কাজ করতে করতে আমি দেবী ইশতারের আশীর্বাদ ধন্য হই। আর তারপরে আমি চার ও ... বৎসর রাজত্ব করতে থাকি।...” সম্রাটের রাজকীয় মোহর লাগানো, মাটির তালে, কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা, ভাঙা টুকরোর এই অংশের মুল অনুবাদ করেছেন ইতিহাসবেত্তা সুসান বাওয়ার।
ইতিহাসের যদি কোনো ঈশ্বর থাকেন তবে তাঁর রাজত্বে তাঁর কিছু নিজস্ব নিয়মকানুন, রীতিনীতিও আছে। সে নিয়মানুসারে এক সম্রাট যদি আর এক সম্রাটের সাম্রাজ্য দখল করতে মনস্থ করেন তবে তিনি প্রথম পাঠান তাঁর সেনাবাহিনীকে। সামরিক শক্তিতে প্রাথমিক বাধা অতিক্রম করে বিজয়ী সম্রাটের জন্য লাল কার্পেট পেতে দেবার দায়িত্ব তাদেরই। তারপর আসেন রাজপুরুষের দল। প্রশাসনিক স্তরে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে তারা তৎপর হন। সব শেষে আসে সাধারণ মানুষ, অর্থাৎ জনগণ। প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার বিনিময়ে সম্পর্ক স্থাপন হয় বিজিত জনগণের সঙ্গে। যদিও এ দখলদারি সাময়িক — অদূর বা সুদূর ভবিষ্যতে দেশের মাটি দেশের মানুষের একদিন প্রতিদিনের সীমানাতেই বাধা পড়ে। তবে অল্প কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে ঈশ্বর তাঁর নিয়মের ব্যতয় ঘটান — যেমন কিনা আলাস্কার বেলায়। ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে দেবার নিয়মে রাশিয়ার আলাস্কা অধিকারের প্রক্রিয়ায় সেখানে প্রথম যায় তার সাধারণ মানুষ, তারপর রাজপুরুষ বা তার প্রতিনিধিস্থানীয় মানুষ, বহু পড়ে নিয়মরক্ষার্থে এক ছোট্ট সেনাদল আর সম্রাট বা জার কখনই না।
সবে তখন বহুল প্রচারিত দৈনিক সংবাদপত্রের দফতরে চাকরিতে গেছেন। নিয়মিত কার্টুন ছাপা হচ্ছে কাগজে। বরানগরের একটা অনুষ্ঠান থেকে আমন্ত্রণ এল। গুণীজন সংবর্ধনা। গাড়ি করে সভায় নিয়ে গেলেন আয়োজকরা। তাঁর সঙ্গেই সংবর্ধনা পাবেন অভিনেতা বিকাশ রায়, ফুটবলার শৈলেন মান্না, সাঁতারু আরতি সাহা প্রমুখ বিখ্যাত মানুষেরাও। যথারীতি ফুল-মানপত্র ইত্যাদি প্রদানের পর ভাষণ শুরু হল অনুষ্ঠানের সভাপতি যুগান্তর প্রত্রিকার সম্পাদক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়ের। সে ভাষণ আর থামে না। বিকাশ রায় আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন, “বাড়ি ফেরার ইচ্ছে আছে? তা হলে চলুন আমার সঙ্গে। নইলে অনেক রাতে পায়ে হেঁটে ফিরতে হবে।” তিনি তো অবাক। উদ্যোক্তাদেরই তো গাড়ি করে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা। হাসলেন বিকাশ রায়, “আপনি সবে গুণীজন হয়েছেন। নতুন এ লাইনে। এরা অনুষ্ঠানের আগে গাড়ি করে নিয়ে আসে। ফেরার দায়িত্ব কেউ নেয় না।” হতভম্ব তিনি সেদিন বিকাশ রায়ের গাড়িতে চুপি চুপি অনুষ্ঠান থেকে কাটলেন। এর পর দেখা হলেই বিকাশ রায় তাঁকে ‘কাঁচা গুণী’ বলে ডাকতেন।
সুজাতা স্তূপের কিছুটা দূরে এক টুকরো চৌকোণা মসৃণ পাথর চোখে পড়ায় কৌতূহলবশত তা হাতে তুলে নিয়েছিলাম। বেশ পাতলা কিন্তু শক্ত গড়নের পাথর। একদিকে অস্পষ্ট রেখা ফুটে উঠেছে। কিছু যেন আঁকা আছে ওখানে। বহুদিনের ধুলোকাদা ময়লা লেগে খোদিত রেখাটা প্রায় দেখা যায় না। হোটেলে ফিরে পরিষ্কার করে দেখব ভেবে সেটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলাম। ভাবলাম ইতিহাসের পথে পাওয়া দান স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ কাছে রেখে দেব।
বিশদ পড়ুন
আগস্ট, ২০২৩
'Swallowed by the great land' - আলাস্কাকে বিষয় করে লেখা সেথ কাঁতনার-এর একটা বইয়ের নাম। একটি বাক্যে প্রতিটা শব্দ কি অমোঘভাবে অর্থবহ হয়ে উঠে এক বৈপ্লবিক 'স্টেটমেন্ট'-এর জন্ম দেয়, তার সার্থক উদাহরণ হতে পারে এই বাক্যটি। ভূমি যে মহান তাতে তো সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু ভূমিপুত্রের জন্মবৃত্তান্ত, পারিপার্শ্বিক প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে তাদের আন্তঃসম্পর্ক, তাদের জীবনযাপনের লড়াই, সে লড়াইতে তথাকথিত সভ্য জগতের দখলদারির গল্পের ঘূর্ণাবর্তে যে একবার পড়েছে, তার আর নিস্তার নেই। আলাস্কার ইতিহাসে বড় মায়া। সে নিশিডাকে একবার যে সাড়া দিয়েছে, তাকে অক্টোপাসের আলিঙ্গনে গিলে নিয়েছে আলাস্কা — কাঁতনার-এর ভাষায় swallowed.
কম্বোডিয়া - অতীতের নাম কম্বুজ। ভারতের বাইরে আরেকটা ভারত। আঙ্কোরওয়াট বিষ্ণুমন্দিরের বিশালতা আমাদের মনে বিস্ময় উদ্রেক করে। কিন্তু আরও আশ্চর্য করল আঙ্কোর-পূর্ববর্তী যুগের শিল্পকৃতি। আঙ্কোর যুগ হল নবম থেকে ত্রয়োদশ শতক যখন আঙ্কোর ছিল খ্মেরদের রাজধানী। তার আগে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতক ছিল চেনলা কিংডমের যুগ। এই যুগের মন্দির অল্প কিছু অবশিষ্ট আছে, তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অভাব নেই, নম পেনের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ কম্বোডিয়ায় গেলে দেখা যায়। আঙ্কোর-পূর্ব, আঙ্কোর ও আঙ্কোর-পরবর্তী তিন যুগেরই সংগ্ৰহ এই মিউজিয়ামে আছে।
১৯১৬ সালে জাপান গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। জাপানের সংস্কৃতিজগত দেখে অভিভূত হলেও জাপানীদের উগ্র জাতীয়তাবাদ কবিকে আশঙ্কিত করেছিল। তিনি দেখেছিলেন, কীভাবে প্রাচ্যের উদীয়মান শক্তি জাপানের মানসিকতায় পাশ্চাত্যে সাম্রাজ্যবাদের বিষ প্রবেশ করছিল। ১৯০৫ সালে রাশিয়াকে যুদ্ধে পরাজিত করবার পর ১৯১০ সালে কোরিয়া এবং ১৯১৪ সালের আগস্ট মাসে চীনের বেশ কিছুটা অঞ্চল দখল করে নিজের উপনিবেশ বানিয়ে নেয় জাপান। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে, সকলেরই দৃষ্টি ইউরোপে সীমাবদ্ধ। সাম্রাজ্য বিস্তারের আকাঙ্খায় এই সুযোগে জাপান চীনের কাছে একুশ দফা দাবী পেশ করে।
আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। সঠিকভাবে বলতে গেলে আজও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। এই জাহাজ, যার নাম 'সেন্ট পিটার' - তার বিস্তীর্ণ ডেকের ওপর খেলে বেড়াচ্ছে এলোমেলো হাওয়া। নাম না জানা এক দ্বীপের ধারে আজ নোঙর করতে পেরেছি। দিনটা ৩০ অগাস্ট ১৭৪১। জাহাজের চারধারে অজানা সমুদ্রের সাম্রাজ্য। আজ থেকে ঠিক ৮৬ দিন আগে ৪ জুন আমরা ভেসেছিলাম কামচাটকার ছোট্ট বন্দর পেত্রপোভলস্ক থেকে। ৯০ ফুট লম্বা জাহাজে আমরা ৭৬ জন নাবিক। আমাদের নেতা ভিটাস জোনাসেন বেরিং। ডেনমার্কের মানুষ এই বেরিং বিগত ২০ বছর ধরে রুশ নৌবাহিনীতে কর্মরত। এঁরই হাতে ছিল ১৭২৭ এর প্রথম কামচাটকা অভিযানের ভার। আজ দ্বিতীয় অভিযানেও প্রধান দায়িত্ব তাঁর। রাশিয়ান সেনেটের 'উকাজ' বা নির্দেশ অনুসারে আমাদের লক্ষ্য কামচাটকার পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব সাগরে অভিযান চালিয়ে দেখা সেখানে কোন কোন স্থলভাগের অস্তিত্ব আছে, আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে নেমে তার ভূগোল ও প্রকৃতি সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি করা, আর সম্ভব হলে সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা।
শতবর্ষ পূরণের কিছুদিন আগে চলে গেলেন বিশ শতকের ইতিহাস চর্চার অন্যতম স্তম্ভ অধ্যাপক রণজিৎ গুহ (২৩ মে ১৯২৩ – ২৮ এপ্রিল ২০২৩) । অধ্যাপক গুহ এবং তাঁর সঙ্গীরা মিলে "নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা" নামে যে ইতিহাস রচনার ধারাকে জনপ্রিয় করে তোলেন তার প্রভাব আমাদের দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়াতেও পৌঁছেছিল। নিম্নবর্গের ইতিহাস চর্চা যে নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলনের বিপ্লবী রাজনীতি থেকে তার প্রেরণা সংগ্রহ করেছিল, সেকথা অধ্যাপক রণজিৎ গুহ নিজেই বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন।
উত্তর আমেরিকার মূল শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন তার ৪৯তম রাজ্যের নাম আলাস্কা। ভূগোলের সঙ্গে সঙ্গে তার ইতিহাসও আমেরিকার থেকে একেবারে স্বতন্ত্র। বস্তুত, আমেরিকান হওয়ার আগে সে ছিল রাশিয়ার অংশ। আর তার আগে? সৃষ্টির আদি থেকে ভেসে থাকা এ স্থলভাগে প্রথম মানুষের পা পড়েছিল আনুমানিক ১৬০০০ বছর আগে। সাইবেরিয়া থেকে আসা মানুষ তখন বর্তমানে লুপ্ত বেরিং ব্রিজ পেরিয়ে এখানে এসে বসবাস শুরু করেছিল। কয়েক হাজার বছর চলেছিল তাদের কৌম জীবনের যাপন, যতদিন না রাশিয়ার পিটার দ্য গ্রেটের আকাঙ্ক্ষা তাকে এনেছিল সভ্যসমাজের দৃষ্টিসীমায়। তারপরের ইতিহাস বিচিত্র, রোমহর্ষক। তার বর্ণনা থাকবে পরবর্তী কয়েকটি আখ্যানে।
বিশদ পড়ুন
১৯০৫ সালে ইউএসএ-র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয় প্রাচীন ভারতের খ্যাতনামা নাট্যকার শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক নাটকের ইংরাজি অনুবাদ ‘দ্য লিটল ক্লে কার্ট’। ‘হার্ভার্ড ওরিয়েন্টাল সিরিজ’-এর অধীনে তখন দু’ এক বছর ছাড়া ছাড়াই প্রকাশিত হতো সংস্কৃত, পালি প্রভৃতি ভাষায় লিখিত বিভিন্ন পুস্তকের ইংরাজি অনুবাদ। আর সে বইগুলো যথেষ্টই সমাদর লাভ করত সুধীসমাজে। কিন্তু এবারের মৃচ্ছকটিকের অনুবাদটা যেন সাড়া ফেলে দিয়েছে পাঠক মহলে। নাটকটা অনুবাদ করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ভাষার ইনস্ট্রাকটর আর্থার উইলিয়াম রাইডার। রাইডারের কাজে মুগ্ধ পণ্ডিত মহল। এক লহমায় পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন রাইডার. আর সেই সূত্রেই, সুদূর পশ্চিম প্রান্তের বার্কলে শহরের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফর্নিয়া থেকে অধ্যাপনার ডাক পেলেন।
বিশদ পড়ুন
হিন্দুত্ববাদীরা ইতিহাস বদলায়, নাম বদলায়, সুযোগ পেলে লোকের জাতও বদলে দেয়। "গুর্জর-প্রতিহার" সাম্রাজ্য। এভাবেই আমরা ইতিহাসে পড়ে এসেছি। নবম শতকে তখনও রাজপুত‌ বলে কিছু ছিল না। হরিয়ানার কৈথলে গুর্জর-প্রতিহার সম্রাট মিহিরভোজের মূর্তি উন্মোচনের পর সপ্তাহখানেক আগে স্থানীয় রাজপুত হিন্দুত্ববাদী নেতা ও কর্মীরা আন্দোলন শুরু করে মূর্তির নাম থেকে গুর্জর শব্দ বাদ দেবার দাবিতে। "গুর্জর প্রতিহার সম্রাট" কথাটাকে "প্রতিহার সম্রাট" নয়তো "হিন্দু সম্রাট" করতে হবে - এরকমই ছিল তাদের দাবি।‌
বিশদ পড়ুন
জুলাই, ২০২৩
জীবনে প্রথম রেলগাড়ি দেখার অভিজ্ঞতা এইভাবেই তাঁর সুনিপুন অক্ষরের নকশায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন রাস্কিন বন্ড। সেই বয়সেই তাঁর দেখার চোখ ছিল। পরিতাপের বিষয়, এই ঈশ্বরপ্রদত্ত দৃষ্টি, বর্তমান লেখকের কস্মিনকালেও ছিল না। তবুও এইটুকু মনে আছে, ছোটবেলায় পুজোর সময় ভোরবেলার আকাশ যখন আস্তে আস্তে গোলাপী হয়ে উঠত, তখন হ্যামলিনে বাঁশির মতো রেলগাড়ির হর্নের মায়াবী সুরের টানে বাবা মা-এর হাত ধরে দাঁড়াতাম শেয়ালদার কোনও প্ল্যাটফর্মে। আরব্য রজনী থেকে উঠে আসা এক আশ্চর্য যান প্রবল বেগে ছুটে চলত গন্তব্যের দিকে। জানলা দিয়ে অবাক হয়ে দেখতাম গাছ, বাড়ি, পুকুর, মানুষ, ধানক্ষেত – সবেরই পেছন দিকে দৌড়। আর যখন জুবিলি সেতু আসত, রেলগাড়ি তার উর্ধ্বশ্বাস দৌড় থামিয়ে, ধীর শ্বাস ফেলতে ফেলতে, সকালের সোনাগলানো রোদে চিকচিক করতে থাকা গঙ্গা পার হতো, তখন রাস্কিনের মতোই, পুরো ব্যাপারটাই মনে হতো রূপকথার বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা।
অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্য ছিলেন সংস্কৃত সাহিত্যের অসামান্য পণ্ডিত এবং বিশিষ্ট ঐতিহাসিক। তাঁর গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বৈদিক যুগ ও তৎপরবর্তী সময়ের ভারতীয় সাহিত্য। বিশেষভাবে বৈদিক যুগে বিভিন্ন পেশার মানুষের সামাজিক অবস্থান, সেই সময়ে সমাজে নারীর স্থান, ধীরে ধীরে বর্ণ প্রথার প্রবর্তন, পরবর্তীকালে বেদবিরোধী ধর্মগুলির উন্মেষ নিয়ে সুকুমারী ভট্টাচার্যের চর্চা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বৈদিক যুগকে দেখতে বাধ্য করে। তাঁর লেখায় শুধু তথ্য পরিবেশিত হয়নি, সেই তথ্যের বিশ্লেষণের ফলে বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত বা পুরাণ নিয়ে ইতিহাসভিত্তিক গবেষণায় যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। তাঁর গবেষণাধর্মী রচনা বেদ ও বৈদিক সমাজ, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ইত্যাদি নিয়ে বহু গুণীজন আলোচনা করেছেন। ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরও চর্চা হবে। আর্যভাষীদের ভারতে আগমন, এই দেশে এসে তখনকার দেশজদের সাথে তাদের মিশ্রণ ও তাঁর ফলে জাত মিশ্রসংস্কৃতি ইত্যাদি নিয়ে অধ্যাপিকা ভট্টাচার্যের গবেষণাধর্মী লেখা পাঠককে আজও মগ্ন করে।
সভ্যতার কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষণ জাতিগত সৌকর্য এবং নান্দনিকতার চিহ্ন হিসেবে কাজ করে। বই তাদের মধ্যে অন্যতম একটা সৃষ্টিশীল নিদর্শন। যাদের আমরা সভ্যজাতি বলি তাদের বৈশিষ্ট্যের অনেকগুলি মানদণ্ডের মধ্যে একটি নিশ্চিত ভাবে বই। তাই বই সমাজের উন্নতির একটি আলাদা গুরুত্ব বহন করে। পৃথিবীতে বর্তমানে প্রতিদিন কমবেশি প্রায় পাঁচ হাজার বই প্রকাশিত হয়। এমনকি বাংলা ভাষাতেই প্রতিবছর ৫০ হাজারের বেশি বই লেখা হয়। ঠিকভাবে কাকে বই বলা যাবে জাতিপুঞ্জ সেই সংজ্ঞা বেধে দিয়েছে।১ তবে বইয়ের সংজ্ঞায়নের আইন, রীতিনীতি এবং বিতর্কগুলি থেকেও অন্য একটি আকর্ষণীয় দিক আছে। সুনীল চট্টোপাধ্যায় তাঁর একটি বইয়ের শুরুর লাইনটিতেই লিখেছিলেন ‘এটি গ্রন্থ নয়, বই’। হয়তো পাঠ্যপুস্তক লিখতে গিয়ে তাঁর এই ধরনের স্যাটায়ারের ইচ্ছে হয়েছিল, কিন্তু তিনি একথা বলে যাননি বই থেকে গ্রন্থ হয়ে উঠতে গেলে কী প্রয়োজন। আমরা কেবল তার ধারণা করে নিতে পারি এইমাত্র।
বিভিন্ন দেশের সিনেমা তাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করে। তবে সেই চিত্রণ প্রণালীর স্বকীয়তার কথা বলতে গেলে, ইরান অন্যতম। হালে যে সব ইরানি সিনেমা জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তার প্রায় প্রতিটিই বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার প্রতিফলন। তবে ইরানের ইতিহাস না জেনে শুধু সিনেমা দেখলে, এই সিনেমাগুলি কেবল মাত্র "রোমান্টিক" বা "থ্রিলার" বা "ট্রাজেডি" হিসাবেই বেঁচে থাকবে। তাই পারস্যের সিনেমা নিয়ে আলোচনার আগে, সেদেশের ইতিহাস নিয়ে আলোকপাত প্রয়োজনীয়।
আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার পরিমণ্ডলে স্বাধীনতা-পূর্ব পশ্চিম ভারতের ভিল ও গরাসিয়া আদিবাসীদের একী আন্দোলন সম্বন্ধে খুবই কমই উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়।১ ‘একী’ কথাটির অর্থ একতা। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে বর্তমান রাজস্থান ও গুজরাতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের আদিবাসীরা দীর্ঘদিনের নির্যাতনের প্রতিবাদে মোতিলাল তেজাবতের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের শপথ নিয়েছিলেন বলে নিজেদের আন্দোলনকে তাঁরা ‘একী’ নামে অভিহিত করেছিলেন। তৎকালীন রাজপুতানা এজেন্সির মেবাড় ও তার পার্শ্ববর্তী দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকদের সাধারণ প্রজাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অমানবিক করের বোঝা থেকে মুক্তি, বেগার শ্রমের অবসান ও অরণ্যের জমি থেকে উপজাত দ্রব্যের উপর অধিকার ছিল এই আন্দোলনের মুখ্য দাবি। এই সময় বর্তমান রাজস্থান ও গুজরাতে অবস্থিত মেবাড়, সিরোহি, দুঙ্গরপর, দাঁতা, পালনপুর, ইডর প্রমুখ দেশীয় রাজ্যগুলিতে পৃথক পৃথক কর ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। একী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম দাবি ছিল একই কর ব্যবস্থার প্রচলন। পশ্চিম ভারতের ভিল আদিবাসীরা মূলত উদয়পুর শহরের দক্ষিণে অবস্থিত ভোমট ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মগরা নামের দুটি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করতেন। সেই কারণে এই আন্দোলন ‘ভোমট ভিল’ আন্দোলন নামেও পরিচিত।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমেরিকায় খ্রিস্টধর্মে মৌলবাদের ধারণা প্রথম উঠে আসে; পরবর্তীকালে অন্যান্য সংস্কৃতিতে তা ছড়িয়ে পড়ে। আধুনিকতার কিছু দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিক্রিয়া সঞ্জাত হল মৌলবাদ। আধুনিকতা (মডার্নিসম)এর বিপরীত শব্দ হল মৌলবাদ (ফান্ডামেন্টালিসম)। নিজেদের অবস্থান বোঝাতে কথাটি প্রথম ব্যবহার করে আমেরিকান কিছু খ্রিস্টান গ্রুপ। এই অবস্থানটি ছিল, তাদের মতে, আধুনিক বিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্বসমূহের থেকে বিযুক্ত; অধার্মিক প্রবণতাগুলির বিপরীতে। তাদের মতে খ্রিস্টীয় মতবাদের সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল ডারউইনের বিবর্তনবাদ এবং আধুনিক ঐতিহাসিক ভাষাবিদ্যা ও ধর্মতত্ত্বের বাইবেলের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি।১ (ব্রক্কি এবং আহমেদ, ২০২৩)
বিশদ পড়ুন
বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা প্রযুক্তি উৎসুক কিছু মানুষের ছোট গণ্ডী ভেঙে সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে চর্চিত হচ্ছে। এর ব্যাপক সম্ভাবনার নানা দিক যেমন আলোচনার মধ্যে আছে, তেমনি আছে একে নিয়ে নানা আশঙ্কাও।
বিশদ পড়ুন
"কফি ও চিনি ইউরোপের আনন্দের জন্য অত্যাবশ্যক কিনা তা জানি না, কিন্তু এটা খুব ভালো করে জানি যে এই পণ্য দুটি বিশ্বের বিশাল অঞ্চলে দুঃখ ডেকে এনেছে। এগুলি চাষ করার জন্য আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে জনশূন্য করা হয়েছে। আর এগুলি চাষের জন্য মানুষ পেতে আফ্রিকাকে জনহীন করা হয়েছে।" (যে এইচ বার্নার্ডিন, ১৭৭৩)
বিশদ পড়ুন
জুন, ২০২৩
ভোরবেলা ওঠা ইন্দুপ্রকাশের অভ্যাস, আর সমুদ্রযাত্রায় তাঁর বরাবরই ঘুম ভালো হয় না। জাহাজের তৃতীয় শ্রেণির ছোট ঘরে তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসে। অবশ্য এই লুসিটানিয়া জাহাজটি অত্যন্ত মনোরম, তার তৃতীয় শ্রেণির ব্যবস্থা অনেক জাহাজের দ্বিতীয় শ্রেণির সমান। ভাড়া বেশি, কিন্তু যুদ্ধের সময়ে অন্য উপায়ই বা কোথায়? অন্যদিন তিনি ভোরের আলো ফুটলেই গায়ে ডেকে গিয়ে সূর্যের প্রতীক্ষা করতেন। কিন্তু আজ বাইরে গাঢ় কুয়াশা, ডেকে ওঠার উপায় নেই। সে না থাক, কাল জাহাজ লিভারপুলে ভিড়বে, ডাঙায় নেমে ভালো করে হাত-পা খেলিয়ে নেবেন ইন্দু। তবে হার্ভার্ড থেকে পিএইচডি করে ইংল্যান্ডে গিয়ে কী জুটবে সেটা চিন্তার বিষয়। গোটা মার্কিন দেশটা দ্রুত উন্নতি করছে, হার্ভার্ডের পড়াশুনার মান অতিশয় ভালো, কিন্তু ইংল্যান্ডের অধ্যাপকেরা তাতে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ধারণা ইংলিশ চ্যানেলের এপারে তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল প্রথম শ্রেণির, আর চ্যানেলের ওপারে ফ্রান্স আর জার্মানিতে কয়েকটি দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়া ত্রিভুবনে বাকি সব দেশ হল অজ মুখ্যুদের দেশ।
যত্র তিষ্ঠতি চক্রাঙ্কো দেবো দ্বারবতীভবঃ । তীর্থকোটি সহস্রাণি তত্র সন্নিহিতানি বৈ ।। সম্বৎসরন্তু যৎ পাপং মনসা কর্মণাকৃতং । তৎসর্বং নশ্যতে পুংসাং সকৃচ্চক্রাঙ্ক দর্শনাৎ ।।
মাস আষ্টেক আগে দিল্লি থেকে একা ফিরছি। ট্রেনে। নিউ দিল্লি ষ্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে দেখি আমার কুপে পাঁচটা ছেলে-মেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। ছয় নম্বর সিটটা আমার। দেখে মনে মনে একটু আশঙ্কিতই হলাম। একুশ বাইশ বছরের এতগুলো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে। হুল্লোড়ের চোটে আমার জার্নিটা মাটি না হয়! ট্রেন ছাড়তেই একটু গুছিয়ে বসে আলাপ করে জানলাম, এরা সবাই ইউপিএসসি-র প্রস্তুতির জন্য দিল্লির কোনও এক কোচিং সেন্টারে পড়াশুনো করে, কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ফিরছে। ট্রেন গতি নিয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে মশগুল দেখে আমিও একটা বই খুলে আরাম করে বসলাম। আমার এখনও মনে আছে, বইটা ছিল ‘মুঘল রিলেশনস উইথ পার্সিয়া’। কয়েকটা পাতা এগিয়েছি সবে। চোখ তুলে দেখি ওরা আমার বইটার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে কথা বলছে।
বিশ্বসংস্কৃতির আঙ্গিনায় ভারতীয় সংস্কৃতি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রাচীনকাল থেকেই এই ভারতীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় সম্পদ যে সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, নৃ্ত্যকলা তা আর আলাদা করে উল্লেখের আপেক্ষা রাখে না। তবে এসবের মধ্যে নৃত্যকলাকেই সংস্কৃতির প্রাচীন ধারা হিসাবে মেনে নেওয়া হয়। এই নৃ্ত্যকলা প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় জনজীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে এসেছে। ভরতনাট্যম, কত্থক, কুচিপুড়ি, মণিপুরি, ওড়িশি, মোহিনীঅট্টম, কথাকলি — এই সাতটি শাস্ত্রীয় নৃ্ত্য ছাড়াও বর্তমানে অসমের সত্রীয়া নৃ্ত্যকেও শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ভারতের এই সাতটি শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যই আজ বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত। আর ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত যে কত্থক নৃ্ত্যকলা তাতে সন্দেহ নেই। ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক কত্থক তার আপন তালের ঝংকারে আপন ঠাটের মহিমায় সদা উজ্জ্বল!
আমাদের মধ্যে যাঁরা দেশের অর্থনীতি, ব্যবসাবাণিজ্য নিয়ে খোঁজখবর রাখেন, তাঁদের কাছে 'আ্যসোচ্যাম, ফিকি, সি.আই.আই' - এই সংস্থাগুলো খুব চেনা। এই সংস্থাগুলো হল বর্তমান ভারতের বিভিন্ন বণিকসভা। এঁদের কাজ হল দেশের উদ্যোগপতিদের স্বার্থ রক্ষা করা। তাই প্রতিবছর বাজেটের আগে এই সংস্থাগুলির নাম খুব বেশি করে শোনা যায়। কারণ সেই সময় এই সংস্থাগুলি দেশের অর্থমন্ত্রীর কাছে তদ্বির করে থাকে শিল্প এবং ব্যবসাবাণিজ্য ক্ষেত্রকে বাজেটের মাধ্যমে সুযোগসুবিধা দেওয়ার জন্য।
মনুস্মৃতিতে (৭.৩-৪) বলা হয়েছে, মানুষের ভয় দূর করতে, তাঁদের রক্ষার্থে, অষ্ট দিকপাল দেবতার সারভূত অংশ গ্রহণ করে প্রভু রাজার সৃষ্টি করেছেন। শাসককে দৈব শক্তির দ্বারা নিযুক্ত বা দেবতাস্বরূপ বলে অভিহিত করার রীতি পৃথিবীর সব প্রাচীন সংস্কৃতিতেই দেখা যায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগের ভারতের বহু শাসকই নিজেদের সার্বভৌমত্বের বৈধতা প্রমাণের জন্য ধর্ম ও ঐশী শক্তির আশ্রয় নিয়েছেন। আজও পৃথিবীর যে কয়েকটি দেশে রাজতন্ত্র রয়ে গিয়েছে, সেখানে ধর্ম ও ইশ্বরের দ্বারাই শাসকের বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। অতি সাম্প্রতিক কালে যাঁরা গ্রেট ব্রিটেনের তৃতীয় চার্লসের রাজ্যাভিষেক দূরদর্শনে দেখেছেন তাঁরা নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটি লক্ষ্য করেছেন। অন্ত-মধ্যযুগের ভারতের শাসকদের সিংহাসনের উপর অধিকারের দৈব স্বীকৃতির প্রতীক হিসাবে তাঁদের দৈব শক্তি বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে পতাকা, রাজদণ্ড বা তরবারি প্রাপ্তির কাহিনি প্রচলনের একাধিক উদাহরণ দেখা যায়। আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসকের ক্ষমতার স্বীকৃত উত্স জনসমর্থন। সেই কারণে, সাধারণত আধুনিক যুগের গণতান্ত্রিক দেশের শাসকরা নিজেদের রাষ্ট্রক্ষমতার স্বীকৃতির জন্য সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতীকসমূহের আশ্রয় গ্রহণ করেন। স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতীক হিসাবে কোনও রাজশক্তির পরিবর্তে অশোকের স্তম্ভশীর্ষের ধর্মচক্রের চয়ন স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন শাসকদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি দায়বদ্ধতার নিদর্শন।
বিশদ পড়ুন
মে, ২০২৩
সময়টা অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ। দোয়াত থেকে চলকে পড়ে যাওয়া কালির মতো ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লাল রং। ১৭৫৭ সালেই পলাশীর প্রান্তরে বণিকের মানদণ্ড বাংলায় দেখা দিয়েছে শাসকের রাজদন্ড রূপে। আর সেই রাজদন্ডকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছেন ১৭৬৫ সালে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হিন্দুস্থানের মহামহিম বাদশাহ, সুলতান-ই-আজম দ্বিতীয় শাহ আলম স্বয়ং।
মহারাজাধিরাজ দেবপাল। পরম পরাক্রমশালী পালবংশের তৃতীয় রাজা। মুঙ্গের তাম্রশাসনে দেবপাল নিজের পরিচয় দিয়েছেন এভাবে: “সমুদ্রের শুক্তি যেমন মুক্তারত্ন প্রসব করিয়া থাকে, সেইরূপ প্রশংসনীয়া পতিব্রতা সেই রণ্ণাদেবীও প্রসন্নবদন দেবপালদেবকে প্রসব করিয়াছিলেন।”
দুঙ্গারপুরের রাস্পাতাল গাঁও, দলিত ভীলদের আর পাঁচটা গ্রামের মতোই ভীষণ রকম গরিব। দিন আনা দিন খাওয়া কিষান, পশুপালক, ছোটখাটো ফেরিওয়ালা, ভূমিহীন মজদুর আর মুচি-কামার-ছুতোর মিস্ত্রীদের মতো কারিগরেরা দুঙ্গারপুরের মহারাওয়াল (রাজা) লক্ষ্মণ সিংহের চরম স্বৈরাচারী অপশাসনে নিয়ত তটস্থ থাকতেন। ইংরেজ সরকারের হুকুমবরদার এই রাজাটিকে বাস্তবিকই আরেকজন ‘হীরক রাজা’ বলাই যায়। ইংরেজ মদতপুষ্ট মহারাওয়ালদের দৈনন্দিন বহুতর অত্যাচারে বহুকাল ধরেই ভীলদের যাতনার শেষ ছিল না। তবে আদিবাসী ও নিম্নবর্ণজাত হওয়ার ‘অপরাধে’ সমকালীন রাজা লক্ষ্মণ সিংহ ভীলদের পড়াশুনো করার অধিকারকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। বই-খাতা-কলমকে তিনি যেমন নেহাতই 'উচ্চবর্ণের বিশেষাধিকার' মনে করতেন, তেমনই ভীলদের ছেলেপুলেরা পড়ালেখা শিখে জ্ঞানবুদ্ধি হাসিল করলে তাঁর অন্যায় রাজপাটকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে বলেও মনে মনে ভারি ডরাতেন রাজামশাই।
একটা প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরে ফিরে আসে নানা আলোচনায়, প্রাচীনতম ভাষা কী? ভারতের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উত্তরে হয় দুটো, না হয় তিনটি ভাষার নাম পাওয়া যাবে; সংস্কৃত, দ্রাবিড়, মুন্ডা। এর সঙ্গে কখনও আবার বিচিত্রভাবে যোগ হয় হিন্দি বা সিলেটিও। এমন উত্তরের পেছনে অবশ্যই কয়েকটি কারণ রয়েছে। বাংলায় প্রশ্ন করলে আমরা ধরে নেব ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম ভাষার কথাই জানতে চাওয়া হয়েছে। হরপ্পা সভ্যতার সূত্র ধরে বহুকালের চলা বিতর্কিত ধারণা অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবেই দ্রাবিড় আর সংস্কৃতের নাম আসে, সেই সঙ্গে বর্তমানে হিন্দি আর সিলেটি যোগ হয়েছে মূলত বর্তমানের রাজনৈতিক আবহের ভিত্তিতে। তাই এই তালিকার শেষ দুটো নাম নিয়ে আমরা ভাবছি না। তবে, সবার আগে, উত্তর নিয়ে ভাবতে বসার আগে প্রশ্নটি নিয়েই ভাবা দরকার। এই প্রশ্নে কি জানতে চাওয়া হয়েছে? প্রাচীনতম ভাষা বলতে মৌখিক ভাষা না লিখিত ভাষা?
ধর্মের ইতিহাস নিয়ে চর্চার সময় সবাই লক্ষ্য করেছেন যে পৃথিবীর সব ধর্মীয় বিশ্বাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সৃষ্টিতত্ত্ব। প্রাচীন কাল থেকে দর্শন চর্চারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সৃষ্টির রহস্য সন্ধান। ধর্মীয় বিশ্বাসের বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে সৃষ্টির রহস্য সন্ধানে যুক্তির ধারার অনুসারী প্রাচীন দার্শনিকদের পথ ধরেই বহু কাল যাবৎ বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা আর প্রমাণের মাধ্যমে খুঁজে চলেছেন সেই প্রশ্নের উত্তর – ‘এলেম আমি কোথা থেকে?’ এককোষী প্রাণের উদ্ভব থেকে বহুকোষের জটিল সমন্বয়ে গঠিত জীবের উৎপত্তি আর প্রাণী জগতের বিবর্তনের ধারায় প্রাচীন মানব থেকে আধুনিক মানব পর্যন্ত বিবর্তনের ইতিহাস খুঁজে বার করা বিগত কয়েক শতকে বিজ্ঞানচিন্তার অগ্রগতির অন্যতম উল্লেখনীয় ফসল আর এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের পথে এক উজ্জ্বল মাইলফলক ডারউইনের ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব’।
এপ্রিল, ২০২৩
হিন্দু দেবমণ্ডলীতে সবচেয়ে পুরোনো পাথুরে প্রমাণ অর্থাৎ পাথরে খোদাই করা নাম আছে যাঁর, তিনি হলেন বাসুদেব অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ। হিন্দু ধর্মের প্রধান সাহিত্যগুলি (মহাভারত, গীতা এবং রামায়ণ) কৃষ্ণ ও বিষ্ণুকে ঘিরেই এবং লোকসাহিত্যেও কৃষ্ণের জনপ্রিয়তা অনস্বীকার্য, তাই বৈষ্ণব ধর্মকে হিন্দু ধর্মের মুখ্য ধারা বললে ভুল হয়না। বৈদিক ও বৌদ্ধ ধর্মের স্তর পেরিয়ে যখন ভারতে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের উত্থান হচ্ছে সেই সময়টার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত বাসুদেব ও বিষ্ণুর উত্থান। এই যুগসন্ধিক্ষণকালকে বোঝার জন্য বিশেষ ভাবে সহায়ক হল বিভিন্ন বৈষ্ণব শিলালেখ, প্রস্তরচিত্র ও মুদ্রা।
সম্প্রতি পোলিশ এবং আমেরিকান গবেষকদের একটা দল দক্ষিণ-পূর্ব মিশরের লোহিত সাগরের উপকূলে অবস্থিত এক প্রাচীন বন্দর শহর বেরেনিসে-তে একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পাথরের বুদ্ধ মূর্তি আবিষ্কার করেছেন। মূর্তিটির ডান পাশের অংশ এবং ডান পা নেই, ভেঙে গেছে। এর উচ্চতা ৭১ সেন্টিমিটার। বুদ্ধের মাথার চারপাশে তাঁর প্রভা এবং পাশে একটি পদ্ম ফুলের ছবি খোদাই করা আছে। বেরেনিসে সমুদ্রবন্দর কায়রো থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে এবং প্রাচীন ভারতের বন্দর শহর খাম্বাত থেকে প্রায় ৩,৮০০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। খাম্বাত বর্তমান গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত। আজকের মার্সা আলমের ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে বেরেনিসে ২৭৫ সাধারণ পূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মিশরীয় রাজা টলেমি দ্বিতীয় (২৮৩ থেকে ২৪৬ সাধারণ পূর্ব) এটির নামকরণ করেছিলেন তার মায়ের নামে।
কিছুদিন আগে ইতিহাস তথ্য ও তর্ক গ্রুপের এক সদস্য “দেখেছি রূপসাগরে মনের মানুষ…” গানটির রচয়িতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। সে বিষয়ে খোঁজ করতে গিয়ে নিতান্তই সৌভাগ্যক্রমে সন্ধান পেলাম এক অন্য ভাবসাগরের। সেই সাগরের অফুরন্ত মণিমুক্তোর সামান্য কিছু অংশ পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই লেখার অবতারণা। কীর্তন আমার অন্যতম প্রিয় সংগীত (অবশ্য অধুনা পাড়ায় পাড়ায় সংকীর্তনের নামে যে চিৎকার চলে, সেটি মোটেই কীর্তনের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক নয়)।
১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালা থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কার করলেন চর্যাপদ সমূহের একটি সংকলন। আবিষ্কারের দশ বছরের মাথায় তাঁর সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে সেগুলি প্রকাশিত হল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে। তারপর থেকে এর ভাষা ও বিষয়বস্তু নিয়ে, চর্যার পদকর্তাদের নিয়ে অনেক গবেষণা হল। আলাপ আলোচনা ও বিতর্কের দীর্ঘ ইতিহাস পেরিয়ে প্রাচীনতম বাংলা ভাষার প্রায় একমাত্র এই নিদর্শনের নানাদিক আমাদের কাছে এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বৌদ্ধধর্মের বিশেষজ্ঞ আচার্য বিধুশেখর শাস্ত্রী, চর্যাপদের তিব্বতী টীকার আবিষ্কর্তা প্রবোদ চন্দ্র বাগচী ছাড়াও যে সমস্ত ভাষাতাত্ত্বিকের গবেষণা এই কাজে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ শহীদুল্লাহ, আচার্য সুকুমার সেন, অধ্যাপক পরেশচন্দ্র মজুমদার, অধ্যাপক রামেশ্বর শ, অধ্যাপক নির্মল দাশ প্রমুখ।
আজকে বাংলাদেশে পালিত হবে পয়লা বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। আবার আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গে আড়ম্বরের সঙ্গে নববর্ষের সূচনা হবে। এদিকের বাঙালি পেট পুজো করবেন মাছ, মাংস মিষ্টি দিয়ে। অবধারিতভাবে বাংলাদেশেও মানুষের পাতে থাকবে ভাতের সঙ্গে মাছ, বিশেষ করে শুঁটকি দিয়ে পান্তা ভাত। ৪০o সেলসিয়াসে এই খাবারের বিকল্প নেই। অবশ্য কড়ি গুনতে পারলে আকালের ইলিশ মাছও থাকতে পারে পান্তা ভাতের সঙ্গে। এসব ছোটোখাটো পার্থক্য থাকুক, তবে বৈশাখ মাসে পয়লা বৈশাখ এবং ২৫শে বৈশাখ হল বাঙালির প্রাণের উৎসব। ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব, তাতে যোগ দেবেন সব ধর্মের সব অঞ্চলের বেবাক মানুষ। বাংলা নববর্ষের আগে আসে চৈত্র সংক্রান্তি। চলে বিভিন্ন দোকান ও শিল্পশালা ধোয়া মোছা, পুরোনো জিনিসপত্র স্বল্পমূল্যে বিক্রিবাটা। চৈত্র সংক্রান্তির দিন গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা হয় গ্রামে গ্রামান্তরে। তারপরে নতুন বছরের প্রথম দিনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী শুরু করেন হালখাতা খোলা, কোলাকুলি, মিষ্টি বিতরণ। চলে আনন্দ, মেলা, যাত্রা, শোভাযাত্রা।
প্রয়াণের অর্ধ শতক পেরিয়ে যাওয়া টেরাকোটা মন্দির গবেষক অধ্যাপক ডেভিড ম্যাককাচন ছিলেন বাংলার টেরাকোটা মন্দিরশিল্প চর্চায় এক অন্যতম পথিকৃত। এই ইংরেজ সাহেব তাঁর করা কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে বাঙালীদের বাংলার শ্রেষ্ঠ এক শিল্প সম্পদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এই অদ্ভুতকর্মা মানুষটি তাঁর গবেষণামূলক কাজের প্রধান ক্ষেত্র পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পেরিয়ে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেত্রসমীক্ষার প্রয়োজনে গিয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ তার পাকিস্তান আমলে ভারত থেকে যাওয়া একজন মানুষের পক্ষে মোটেও নিরাপদ স্থান ছিল না।
বিশদ পড়ুন
হরপ্পীয় সমাজে নারীর স্থান কেমন ছিল? হরপ্পীয় সভ্যতার অধিবাসীরা ছিল মিশ্র মানুষ। এই দেশের প্রথম জনগোষ্ঠী আফ্রিকা থেকে আগত ‘আন্দামানি শিকারী-সংগ্রাহরা। দীর্ঘদিন ওই শিকারী-সংগ্রাহকরা দক্ষিণ এশিয়াতে নিরঙ্কুশভাবে থেকেছে। এরাই আদি ভারতীয়। পরে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে আসে প্রাচীন ইরান থেকে আরেক শিকারী-সংগ্রাহক জনগোষ্ঠী। দেশের আদি শিকারী-সংগ্রাহকদের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে এরা পরে শুরু করে কৃষি ও পশুপালন। গড়ে তোলে হরপ্পীয় সভ্যতা। ভারতবর্ষে সেই প্রথম তৈরি হয়েছে শহর, জেটি, বাঁধানো সোজা রাস্তা, বলদে টানা গাড়ি। গড়ে উঠেছে পুরোদস্তুর নগরসভ্যতা। সিন্ধু নদের তীরে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ইঁট-বাঁধানো শস্যাগারে মানুষ চাষবাস করে ফসল তুলে রেখেছে। মহিষ, ষাঁড়, ছাগলকে গৃহপালিত করেছে। তখন মানুষ চাষের কাজে হালের ব্যবহার হয়েছে। হাল বা লাঙল ভারতীয় আদিম কৃষিযন্ত্র।
বিশদ পড়ুন
১৬ই মার্চ, ১৯৬৮-এর সকাল বেলায় আমেরিকান ডিভিশনের ১১তম পদাতিক ব্রিগেডের একটা ইউনিট চার্লি কোম্পানির সৈন্যরা দক্ষিণ ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলে মাই লাই গ্রামে পৌঁছেছিল। তাদের ৪৮তম ভিয়েতকং ব্যাটালিয়নকে এলাকা থেকে নির্মূল করার জন্য ‘অনুসন্ধান এবং ধ্বংস’ মিশনে পাঠানো হয়েছিল। তারা মাই লাইতে কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি, তবে সেখানে তখনও প্রায় ৭০০ বাসিন্দা ছিল। অবশ্য সেখানে যুদ্ধ করার উপযোগী ও বয়সী কোনো পুরুষ ছিল না। সেই সকালে গ্রামবাসীরা জলখাবার খেতে বসেছে। তা সত্ত্বেও, পরবর্তী তিন ঘণ্টায় সৈন্যরা ৫০৪ জন ভিয়েতনামী নাগরিককে হত্যা করে। ড্রেনের খাদে সারিবদ্ধ করে রেখে অনেককে গুলিবিদ্ধ করা হয়। মৃত বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ৩ বছর বা তার কম বয়সী ৫০ জন, ৪ থেকে ৭ বছরের মধ্যে ৬৯ জন এবং ৭০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন।
বিশদ পড়ুন
মার্চ, ২০২৩
২০২০ সালের ১২ই জুলাই একটি বহুলপ্রচারিত দৈনিকের পাত্র/পাত্রী কলমে নিম্নলিখিত এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়েছিল। "পঃবঃ সরকারী অফিসার (30+, 6') বৈদিক ব্রাহ্মণ (আচার্য্য রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদী পরিবারের) পিতা পঃবঃ সরকারের কর্মরত (IAS)-র একমাত্র পুত্র। কলিকাতায় নিজস্ব বাসস্থান। উচ্চ পরিবারের শিক্ষিতা, ধর্মপরায়ণা, মার্জিতা, রুচিশীলা, দীর্ঘাঙ্গী, ২৫ এর মধ্যে সুন্দরী ব্রাহ্মণ পাত্রীর (সরকারি চাকুরীরতা এবং কলকাতা নিকটস্থ অগ্রগন‍্যা) অভিভাবকরা যোগাযোগ করুন। সত্ত্বর বিবাহে ইচ্ছুক। পিতা ...। যোগাযোগ..."
কাকে বলে ইতিহাস? প্রশ্ন অতি সহজ এবং প্রাথমিক। কিন্তু উত্তর? না, এর উত্তর প্রদান করা সহজ নয় মোটেই। যুগে যুগে দেবী ক্লিও-এর সেবকরা প্রচেষ্টা করেছেন এই মোক্ষম প্রশ্নের একটি সর্বজনগ্রাহ্য সরল উত্তর খোঁজা। যে বিষয়ের জন্য তাঁরা পুরো জীবন উৎসর্গ করছেন, তার মূলগত চরিত্র কী, সন্ধান করেছেন বহু ঐতিহাসিক। বোঝার প্রচেষ্টা করেছেন তার বৃহত্তর উদ্দেশ্য। নির্ণয় করতে প্রয়াসী হয়েছেন, তা কি ব্যক্তির কাহিনী বলে, না সমাজের? তাতে নৈতিক বিচারের স্থান আছে না নেই? তার কি কোনো বৃহত্তর অর্থ আর ছন্দ আছে না তা একেবারেই খামখেয়ালী এক প্রবাহ যার ‘নাইকো মানে নাইকো সুর’? গত শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসবেত্তা অধ্যাপক ই.এইচ. কার-এর ‘হোয়াট ইজ হিস্ট্রি?’ (‘What is History?’) ছিল এইপ্রকারই এক উত্তর সন্ধানের প্রচেষ্টা।
ইউরোপে সস্তা বই নিয়ে জোরদার চর্চা শুরু হয় গত শতকের সত্তরের সময় থেকে। পিটার বার্কের লেখা ‘পপুলার কালচার অফ আর্লি মডার্ন ইউরোপ’ (প্রথম প্রকাশ ১৯৭৮) সেখানকার সংস্কৃতি চর্চার জগতে মৌলিক পরিবর্তন এনেছিল, এতে কোন সংশয় নেই। প্রায় একই সময়ে চলতে থাকে ফরাসি বিপ্লব নিয়ে নতুন ভাবনাচিন্তা;১ আমেরিকার গবেষকরাও তখন অনেকটা আগ্রহী হয়েছিলেন সাধারণের সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে। কারণ নয়া বাজার অর্থনীতিতে সংস্কৃতি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করছিল। স্বাভাবিকভাবেই এতদিনের প্রচলিত ইতিহাস চর্চার বাইরের বিভিন্ন দিকগুলি একে একে ইতিহাসের বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে আসতে থাকে। এদের মধ্যে একটি বিষয় ছিল ‘জনপ্রিয় ছাপা’ চর্চা। এখন প্রশ্ন হল ‘জনপ্রিয় ছাপা’ কথাটির অর্থ কী? আমরা দুইভাবে এর উত্তর পেতে পারি। প্রথমত, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ছাপার যুগের প্রায় শুরুর থেকেই এমন ধরনের বই প্রকাশিত হয়, তাকে ঠিক বই বলা কঠিন — বরং আমরা অনুপুস্তিকা বলতে পারি। বাংলার ক্ষেত্রে যেমন তার নাম বললে আমরা সহজেই বুঝি – ‘বটতলার ছাপা’।
দক্ষিণ ভারতের এক ছোট্ট পাহাড়ঘেরা গ্রাম। সূর্যাস্তের পর চতুর্দিক নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। পথ ঘাট জনমানব শূন্য। আঁধাররাতে ছোট ছোট পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, যেন চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রান্তে এক ছোট বাংলো। সেই বাংলো থেকে টিমটিম আলো দেখা যাচ্ছে। রাত যত গভীর হতে লাগলো চতুর্পাশ আরও নিঝুম হয়ে গেলো। তখনো বাংলো থেকে মোমবাতির আলো আসছে। দরজা জানলা সব বন্ধ। হালকা হালকা শীত পড়েছে। চাদর মুড়ি দিয়ে এক যুবক দ্রুত পদে বাংলার দরজায় পৌঁছে কড়া নাড়তে লাগলেন। বেশ কিছুক্ষণ কড়া নাড়ার পর বাংলার দরজা উন্মুক্ত হোল। যিনি দরজা খুললেন, তিনি যুবতী এবং বিদেশিনী। যুবক উদ্বিগ্ন হয়ে তার অবস্থা ব্যক্ত করলেন। যুবতী কিন্তু যুবকের ভাষা ও পরিস্থিতি দুটোই বুঝতে পারলেন। যুবক জানালেন, তার স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এই মুহূর্তে না গেলে তার স্ত্রীর প্রাণ সংশয় হতে পারে। যুবতী দেখলেন গ্রামের ব্রাহ্মণ যুবক। বড়ই বিপদে পড়েছেন। কিন্তু তিনি নিরুপায়।
ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
১৭৮৮ সাল। স্কটিশ এনলাইটমেন্টের জোয়ার এসেছে উত্তর সাগরের কোলে থাকা এই ছোট্ট দেশে। সবাই প্রশ্ন করছে; ধর্ম, রাজনীতি, সমাজ সব কিছুকেই প্রশ্ন করার সাহস পেয়ে গেছে স্কটল্যান্ডবাসীরা। ক্ষমতার দুই কেন্দ্র, চার্চ এবং রাষ্ট্র, স্বাগত জানিয়েছে এই সাহসকে [
ছুটতে ছুটতে দারিয়ানাসু তার থেকে দরজার দূরত্ব আরেকবার মনে মনে মেপে নেয়, আর মুখে ফুটে ওঠে মৃদু হাসি। নিশ্চিন্ত হবার হাসি, পেছনে ছোটা ঘোড়সওয়ারদের বোকা বানানোর হাসি। আরও পিছনে হৈহৈ করতে থাকা লোকগুলোকে এখন দেখা যাচ্ছে না, টিলার আড়ালে হারিয়ে গেছে। ঘোড়সওয়ারদেরও আগেই সে বোকা বানিয়ে দিতে পারত। হরিণের মতো ছুটতে পারে সে, কিন্তু পিঠের বোঝাটা ফেলে দিতে চায়নি। অবশ্য তাতে কিছু ক্ষতি হয়নি, আর দশবার শ্বাস নিতে-না-নিতেই সে পৌঁছে যাবে গোল দরজার পাশের ফাঁকটায়। ব্যাস, তারপর একটা ছোট্ট লাফ, তারপর দু’পলকে দরজার ফাঁকটুকু বুজে যাবে। হাঃ হাঃ হাঃ, ঘোড়সওয়ারগুলো বুঝতেই পারবে না কোথায় ভ্যানিস হল তাদের শিকার, ছাউনিতে গিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদবে অন্যদের কাছে, বলবে ভুতুড়ে মানুষের কথা, যাদের দেখা যায় কিন্তু ধরতে গেলেই হাওয়া হয়ে যায়।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় লিখেছেন, “বাঙালী অতীশ লঙ্ঘিল গিরি তুষারে ভয়ঙ্কর, জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালী দীপঙ্কর।” তিব্বত ও মঙ্গোলিয়ায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে এখনও যিনি বৌদ্ধ সাধনার পথপ্রদর্শক হিসেবে গভীর শ্রদ্ধার আসনে প্রতিষ্ঠিত, এক সহস্রাব্দ আগের সেই বাঙালি মহাপরিব্রাজক আচার্য অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান (৯৮২-১০৫৪ সাধারণাব্দ) আজকের ভারতে প্রায় বিস্মৃত।
দিল্লির লাল কেল্লা আজ পর্যন্ত তিনটি ঐতিহাসিক বিচারের সাক্ষী৷ প্রথমটি ছিল দিল্লির শেষ স্বাধীন সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরের বিচার, ১৮৫৭-এর মহাযুদ্ধ ব্যর্থ হওয়ার পর ব্রিটিশরা বন্দি সম্রাটের বিচার করেছিল। দ্বিতীয়টি, ১৯৪৫ সালে যুদ্ধবন্দি আজাদ হিন্দ ফৌজের বিচার। তৃতীয় ও শেষ বিচারটি ছিল নাথুরাম গোডসে সহ গান্ধিহত্যায় অভিযুক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার।
লট নম্বর আট থেকে মুড়িগঙ্গা নদীপথে ভেসেলে চড়ে ভেসে চলেছি গঙ্গাসাগরের পথে। সামনেই মকর সংক্রান্তি। আর এই মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে সারা ভারত যেন একাকার হয়ে মিলেছে সাগর সঙ্গমে। নানা ভাষা নানা বেশ নানা পরিধান চাক্ষুষ করছি, ওদিকে লঞ্চ এগিয়ে চলেছে ভুট ভুট ভুট ভুট। জেটিঘাটে ভেসেলে কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। লক্ষ মানুষের মিলনমেলা। শত বিপত্তি উপেক্ষা করে আসমুদ্র হিমাচল চলেছে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে। চো
চকোলেট ডে, হাগ্ ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, ক্রিসমাস ডে, পুজোর সময় আনন্দমেলা, খাদ্য মেলা, শিল্প মেলা, এসবের মধ্যে গুঁজে আছে সপ্তাহভর বই মেলা - চলুক। আরও যা সব 'ডে', মেলা, খেলা, হপ্তা আছে সব চলুক। বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। অথবা হুজুগে বাঙালি। অথবা বাজারের রমরমা। এই মেলাই দেয় মাঝারি ও ছোটো প্রকাশকদের আশ্বাস। বড় প্রকাশকদের প্রচার। বই মেলা চাই। বই মেলা হয়ে উঠুক আনন্দ মেলা , তবে তাতে বিক্রি বাটাও যে চাই। শুধু খাবার নয়, বইয়ের, লিটিল ম্যাগাজিনের- সব ধরনের প্রকাশনা সংস্থার বইয়ের।
বিশদ পড়ুন
জানুয়ারি, ২০২৩
কেউ বলে সে নাকি ছিল এক ঠোঁট আর মুখের দারুণ প্রসাধনী। কেউ বলে বা সে ব্যথাহরণ মলম। কখনো সে সাদা পাউডার বা কখনো বা রঙ, স্বাদ, গন্ধহীন তরল। ঠিক ধুলোর মত মিহি বা ঠিক জলের মতো টলটলে এই প্রসাধনী নিজের ঘরে তৈরি করে ১৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সিসিলির রাজধানী পালেরমো শহরে বিক্কিরি করতেন জনৈকা তোফানিয়া ডি'আডেমো। স্বচ্ছ কাঁচের ছোট্ট এক শিশিতে ভরে চড়া দামে তা কিনে নিয়ে যেত ধনী অভিজাত ঘরের বিবাহিত মেয়ে-বউ। ঘরে তাঁদের জীবন কবে থেকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে স্বেচ্ছাচারী স্বামীরা বা কখনো সখনো নজরদার বাবা-দাদারা।
ফিল্মস ডিভিশন নামে সরকারী প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন ভারতে জন্ম হয়েছিল আজ থেকে প্রায় পঁচাত্তর বছর আগে। এ বছরের এপ্রিল মাসেই এই প্রতিষ্ঠানটির পঁচাত্তর বছর পূর্তি উদযাপন করা যেত। অথচ সম্প্রতি ভারতীয় ফিল্মস ডিভিশন প্রতিষ্ঠানটি তার দীর্ঘদিনের স্বাতন্ত্র হারাল। গত ১লা জানুয়ারি NFDC (ন্যাশন্যাল ফিল্ম ডেভলপমেন্ট কর্পরেশন) র সঙ্গে মিশে গেল। একই সঙ্গে National Film Archive of India, Directorate of film festivals এবং Children’s Film Society-র মত প্রতিষ্ঠানকেও এই NFDC র আওতায় আনা হল। এক ছত্রছায়ায় থাকলে এই প্রতিষ্ঠানগুলি আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে বলে ভাবছেন অনেকে।
আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে কলেজে পড়াতে গিয়ে পাঞ্জাবের কৃষির অর্থনৈতিক বিবর্তন আলোচনার একটি বিষয়বস্তু ছিল। সেখানে কী করে গ্রামাঞ্চলে ক্যানেলের জল গেল, বন্ধ্যা মরুভূমি আধুনিক কৃষিযোগ্য ভূমিতে পরিণত হলো, দূর দূর থেকে কৃষকরা ছুটে এলো এবং সেই জমি চাষ করে বহু সোনার ফসল ফলালো—এগুলো আলোচনার বিষয় ছিল। এই অর্থনৈতিক প্রাচুর্যের পাশাপাশি আরেকটা ছবি মনে পড়ে যেটা ক্লাসে বলতাম। কৃষি ঋণটা একটা ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে গেল যার ফলে অনেক কৃষক ঘটিবাটি, নিজের জমিজায়গা বন্ধক রেখে অথবা বেচে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেল বা সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়ে হংকং, মালয় এমনকী ফ্রান্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল। যুদ্ধ শেষ হলো ১৯১৮-এ। যখন তারা ফিরে এলো তখন চাকরি চলে গেছে, বরখাস্ত হয়ে গেছে সেনাবাহিনী থেকে, ফলে তারা বিক্ষুব্ধ।
কথায় বলে ‘ভাগ্যের লিখন খণ্ডাবে কে?’। ঠিক তাই হয়েছিল ময়ূরশর্মার সঙ্গে। অবশ্য এই নিয়ে পরবর্তী জীবনে, সম্ভবত ওনার কোনও আক্ষেপ ছিল না। ওনার বংশধরদের তো নয়ই। আপনার কোনও পূর্বপুরুষ যদি ময়ূরশর্মার মত কাজ করে বসতেন, তা নিয়ে আপনি যে একফোঁটা অভিযোগও করতেন না, সে কথা আমি হলফ করে বলতে পারি। উল্টে হয়তো বলতেন, “ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্যেই করেন।”
‘আমাদের দেশে ফসিল পাওয়া যায় না কেন?’ ‘কেন?’ ‘কারণ আমরা জানিনা ফসিল কি করে রক্ষা করতে হয়। দেশে বেসিক এডুকেশন নেই। আমরা সভ্য না, শিক্ষিত না। ফসিল পেলে সেগুলো ফেলে দিয়ে জমি সাফ করে চাষ করে দিই। দু চারটে বিক্কিরিও হয়ে যায়।’
ফরাসী বিজ্ঞানী জাঁ ব্যাপতিস্ত ল্যামার্ক। তিনি ডারউইনের অনেক আগে বিবর্তনের একটি সুসংহত তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। তখন ১৮০৯ সাল, পাশ্চাত্যে রেনেসাঁ শেষ হয়ে প্রথম শিল্পবিপ্লবের সময়। ভারত তথা কলকাতায় পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের একেবারে গোড়ার যুগ চলছে, হিন্দু কলেজ স্থাপিত হবে এর আট বছর পরে। আর কলকাতার মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হবে তারও ১৮ বছর পরে। সেই সময়ে জীববিজ্ঞানে অনেক কিছু অজানা ছিল, বিবর্তনের প্রমাণ তেমন যোগাড় হয়নি। জীববিজ্ঞানের সেই প্রাথমিক যুগে ল্যামার্ক বলেছিলেন, জীবের দেহে বিভিন্ন রসের প্রাকৃতিক প্রবণতা থেকে জটিল ও উন্নত জীব সৃষ্টি হয়। আর পরিবেশের সঙ্গে জীবের মানিয়ে নেবার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় অভিযোজন।
বিশদ পড়ুন
আর একটি ছাব্বিশে জানুয়ারি এসে পড়ল। যে দিনটিতে স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল, ভারতের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্মদিন হিসাবে স্বীকৃত সেই দিনটির পর আরও বাহাত্তর বছর পার হয়ে গেল। এত দিনে বোধ হয় আধুনিক ভারতের গণতান্ত্রিক শাসনকাল নিয়ে চর্চার দায়িত্ব শুধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নয়, ঐতিহাসিকদেরও গ্রহণ করার সময় এসে গেছে। তবে, ইদানিং ইতিহাস চর্চায় ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রবল প্রভাব দেখে ভয় হয় ভারতে গণতন্ত্রের ইতিহাসের যুক্তিসম্মত চর্চার কাজটি বোধ হয় খুব সহজ হবে না।
বিশদ পড়ুন
ডিসেম্বর, ২০২২
৫০০ পূর্বাব্দে প্রতিষ্ঠিত ইয়োরুবাদের ইলে-ইফে বা ইফে শহর। ইয়োরুবা জাতির প্রাচীন রাজধানী। ১২০০ থেকে ১৪০০ সাধারণাব্দের ইফে বিখ্যাত ছিল ঢালাই তামা, পিতল, পাথর, আর টেরাকোটা মূর্তি বানাবার জন্য। শহরের বাসিন্দা জনগোষ্ঠী ইয়োরুবাদের বিশ্বাসে, তাদের উৎপত্তিস্থল ও ধর্মীয় পীঠস্থান এই ইফে। ইফে শহরে ইয়োরুবাদের মন্দির ও দেবতার সংখ্যা বলা হয় ২০১. এই খানে ২০১ মানে আসলেই ২০১ নয়, ২০০ র পরে ১ যোগ হল মানে দুইশতের বেশি তিন শতের কম। ইয়োরুবা ভাষায় ইফে শব্দের অর্থ হল বৃদ্ধি বা ছড়ানো। আর ইলে শব্দের অর্থ ঘর বা বাড়ি। দুয়ে মিলে ইলে-ইফে, বাড়তে থাকা বাড়ি। যা হয়ত ইয়োরুবাদের প্রাচীন আধিপত্যের রূপক, যা বলে তাদের শক্তি কেন্দ্র ইফে থেকে ক্রমবর্ধমান দখলীকৃত এলাকার কথা।
আমাদের ছোটবেলা (১৯৬০-৬৫) ইতিহাসে পড়ানো হত “অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ কাহাকে বলে?” আমরা মুখস্থ করতাম,"আফ্রিকাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয়।" পরীক্ষার খাতায় উক্তিটির ব্যাখ্যায় লিখতে হত – “এই মহাদেশ সম্পর্কে মানুষ তেমন কিছু জানিত না। লিভিংষ্টোন এবং অন্যান্যদের দুঃসাহসিক অভিযানের ফলে এই মহাদেশের কথা মানুষ প্রথম জানিতে পারে।এই মহাদেশ সম্পর্কে মানুষ তেমন কিছু জানিত না, কারণ এই অঞ্চলে ছিল ভয়ঙ্কর জন্তু-ভর্তি গভীর অরণ্য, দুর্গম পর্বত, খরস্রোতা নদী, মরুভূমি, অস্বাস্থ্যকর জলবায়ু আর আদিম হিংস্র অধিবাসীরা বসবাস করিত। ফলে সভ্য লোক সেখানে যাইতে পারিত না। তাই উহাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয়।”
১৬১৩ সাল..., শান্ত শরৎ বাতাস বইছে আরব সাগরময়। এমনই এক দিনে সুরাটের পর্তুগিজ বণিকরা, পশ্চিম উপকূল আর লোহিত সাগরের মধ্যে নিত্য যাতায়াত করা, 'রহিমি' নামের সুবিশাল জাহাজটিকে আটক করলেন। জাহাজে ভরা 'নীল' রঞ্জকের ভাণ্ডারের লোভে বহুদিন ধরে তক্কে তক্কে থাকলেও, হিন্দুস্তানের জাহাঁপনার মায়ের জাহাজের পথ আটকানো ছিল এক প্রবল স্পর্ধার বিষয়। হ্যাঁ, 'রহিমি' নামের ১৫৩ ফুট লম্বা-৪২ ফুট চওড়া আর হাজার টন ওজনের মহাজাহাজটি ছিল বাদশাহ আকবরের অন্যতমা স্ত্রী তথা সম্রাট জাহাঙ্গীরের মা, মরিয়ম-উস-জামানির নিজস্ব জাহাজ। এই জাহাজটি সহ আরও অনেকগুলি জাহাজের মাধ্যমে মরিয়ম পশ্চিমে নীলের ব্যবসা আর মক্কাগামী হজযাত্রীদের আনা-নেওয়ার ব্যাপক লাভজনক ব্যবসা চালাতেন দীর্ঘদিন ধরে।
বিদিশার প্রাসাদোপম শ্রেষ্ঠীগৃহে গতকাল থেকে সাজো সাজো রব উঠেছে। বিশেষ করে অতিথিশালার বহিরাঙ্গন থেকে অলিন্দ, শয্যাগৃহ থেকে স্নানঘর... সর্বত্রই ব্যস্ত পরিচারক ও পরিচারিকাবৃন্দ। কোথাও যেন এতটুকু মালিন্য না থাকে, সেই সঙ্গেই উৎসব-সাজেও যেন না থাকে ঘাটতি। পুষ্পসজ্জা, গন্ধদ্রব্য, নানা প্রকার আরামদায়ক আসন, সৌখিনতম বস্ত্রাদি, বিভিন্ন অনুলেপনের প্রাচুর্যে চারপাশ পূর্ণ। আয়োজন করা হয়েছে নানাপ্রকার পানীয় ও সুস্বাদু খাদ্যেরও। বিশেষ করে এই অতিথির আমিষ খাদ্যপ্রীতির কথা সর্বজনবিদিত। প্রস্তুতির এই আড়ম্বরের কারণও যথাযথ।
ইতিহাস কি শুধু মানুষের? আর প্রকৃতির? প্রকৃতির ইতিহাস আমরা জানি তো? প্রকৃতিকে কি আমরা পাল্টে দিচ্ছি? প্রকৃতি পাল্টে গেলে অসীম ক্ষমতাধর মনুষ্য প্রজাতি বেঁচেবর্তে থাকবে তো? বইটা পড়তে পড়তে বারবার মনে হয়েছে, যেন কোন এক ভুতুড়ে, অন্ধকারময় গ্রহে একজন মানুষ ঘুরে চলেছেন প্রাণের হদিস পেতে। দুর্গমতম স্থানে যাচ্ছেন নিজের চোখে দেখতে পাখিরা, পশুরা ভাল আছে তো?
ধর্ম যতদিন দুঃখী মানুষকে বেঁচে থাকার সাহস দেয়, ততদিন রাস্তা নিয়ে কারও সঙ্গে তার ঝগড়া থাকে না। রাস্তা কারও একার নয়। বরং তাকেই একদিন রাস্তা ছাড়তে হয়, যার স্পর্ধা আকাশ ছুঁয়ে যায়।
বিশদ পড়ুন
১০৫৪ সাধারণ অব্দে তিব্বতের লাসার কাছে প্রায় ৭৩ বছর বয়সে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান বা অতীশ মারা যান। তিনি ছিলেন ভারত তথা বিশ্বের সেকালের অন্যতম প্রধান পণ্ডিত। পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে ভারত ও তিব্বতে বৌদ্ধমতের চর্চায় তাঁর প্রভাব অতুলনীয়। দেশে নানাজনের কাছে ও নানা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা সমাপ্ত করার পর তিনি গিয়েছিলেন সুমাত্রায়, সেখানকার বিখ্যাত পণ্ডিত ধর্মকীর্তির কাছে বৌদ্ধ দর্শন অধ্যয়নের জন্য। ভারতে ফিরে এসে অতীশ তখনকার কয়েকটি প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। এগুলির মধ্যে ছিল বিক্রমশীল, ওদন্তপুরী, সোমপুরী, নালন্দা প্রভৃতি। এরপর তিব্বতের রাজা ও জনগণের আমন্ত্রণে সে দেশে বৌদ্ধধর্ম ও বৌদ্ধশিক্ষার সংস্কার ও বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি কঠিন পথ পরিক্রমা করে তিব্বতে যান। একদিকে শিক্ষক, অন্যদিকে লেখক ও সংগঠক হিসেবে অতীশ অসামান্য অবদান রাখেন। নিজের এবং অন্যান্যদের লেখা নানা বৌদ্ধ গ্রন্থের তিব্বতী অনুবাদেও তাঁর বিরাট ভূমিকা ছিল।
বিশদ পড়ুন
নভেম্বর, ২০২২
নীল চাষ বা নীল বিদ্রোহ শুধু আমাদের দেশের ইতিহাসের অঙ্গ নয়, বিশ্ব ইতিহাসের অঙ্গ। আমাদের দেশে নীলকর সাহেবদের আগমন আবার জড়িত আমেরিকার ইতিহাসের সঙ্গে। কেমন করে? সে কথাই বলব। ব্রিটিশরা এদেশে আসার আগেও এদেশে নীল চাষ হত এবং নীল দিয়ে আমাদের দেশের বস্ত্র রঞ্জিত হত। অনেকেই মনে করেন, নীলের জন্ম এদেশেই। ১৮৮২ সালে ইউরোপে রাসায়নিক পদ্ধতিতে নীল উৎপাদন শুরুর আগে পর্যন্ত এশিয়ার নীল বা এশিয়ান ইন্ডিগো ছিল বস্ত্রকে নীল রঙে রঞ্জিত করার প্রধান উপায়। বস্ত্রশিল্পে রঞ্জক হিসেবে নীল বা ইন্ডিগোর ভালো চাহিদা ছিল।
বিশ্বাস হয় না যেন। প্রাগৈতিহাসিক শিকারী-সংগ্রহকারীরা আগের স্বীকৃত নিদর্শনের হাজার হাজার বছর আগে সফল অস্ত্রোপচার করেছিল। প্রায় ৩১,০০০ বছর আগে, একজন দক্ষ প্রাগৈতিহাসিক সার্জন বোর্নিওতে একটি শিকারী-সংগ্রাহকের নীচের পা কেটে বাদ দিয়েছিল। এখন, প্রত্নতাত্ত্বিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই অস্ত্রোপচারটি প্রাচীনতম অঙ্গচ্ছেদ চিকিৎসা।
দীর্ঘকাল প্রামাণিক বলে চিহ্নিত কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান আদতে জাল, এমন খবর আমরা মাঝেই মাঝেই পাই। বিশেষ করে প্রাচীন মুদ্রার ক্ষেত্রে এইপ্রকার সংবাদ হরদম পাওয়া যায়। কিন্তু সম্প্রতি অধ্যাপক পল পিয়ার্সনের নেতৃত্বে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এবং ইউনিভার্সিটি অফ গ্লাসগোর গবেষকদের একটি রোমান মুদ্রা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফলে উঠে এসেছে সম্পূর্ণ উল্টো খবর। এতদিন ধরে জাল হিসেবে বিবেচিত হওয়া এই রোমান মুদ্রাটিকে তাঁরা ঘোষণা করেছেন আসল বলে। এর ফলে অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন একজন রোমান সম্রাটের। রোমান সাম্রাজ্যের তৃতীয় শতকের বিপর্যয়ের সময়ে দানিউবের উত্তরে ডেসিয়া প্রদেশের রোমান ইতিহাস রচনায় খুলে গেছে এক গুরুত্বপূর্ণ দ্বার।
সন ১৮৪৬, ১লা আগষ্ট। সময় সন্ধ্যা সওয়া ছটা। লন্ডনের প্রাচুয্যপূর্ণ মেফেয়ার অঞ্চলের সুপ্রসিদ্ধ সেন্ট জর্জ হোটেল। ঠিকানা ৩২ নম্বর অ্যালবিমার্ল স্ট্রীট। ৫১ বছর বয়সের এক বাঙ্গালী ভদ্রলোক শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুশয্যাতেও তাঁর অগাধ সৌজন্যবোধের এতটুকু ঘাটতি দেখা যায়নি। তাঁর সদাহাস্য মুখে ছিল একটিই কথা “আমি সন্তুষ্ট”। ভদ্রলোকের নাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর - রবীন্দ্রনাথের পিতামহ, যার সম্বন্ধে কবিগুরু চিরকাল এক রহস্যময় নীরবতা বজায় রেখেছেন।
পতঞ্জলির মহাভাষ্য থেকে শুরু করে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের পরিব্রাজনবৃত্তান্ত, মহাভারত থেকে শুরু করে বাংলার অন্নদামঙ্গলের বিদ্যাসুন্দর উপাখ্যান অবধি বহু সাহিত্যে তামিলনাড়ুর একটি সমৃদ্ধ জনপদের কথা জানতে পারা যায়। তার নাম কাঞ্চীপুরম। ১০০০-১৩০০ বছর পুরোনো এতগুলি ফ্রি-স্ট্যান্ডিং স্থাপত্য এরকম অক্ষত অবস্থায় এত বছর ধরে টিকে থাকার উদাহরণ পৃথিবীতে কমই আছে। সেই বিচারে কাঞ্চীপুরম রোম আর খাজুরাহের সঙ্গে তুলনীয়। ভারতের সবচেয়ে পুরোনো ফ্রি-স্ট্যান্ডিং স্থাপত্যগুলির মধ্যে পড়ে গুপ্ত ও চালুক্যদের বিভিন্ন মন্দির, আর তারপরেই পল্লব স্থাপত্য। পল্লব স্থাপত্য দেখার দুটো সেরা জায়গা হল মহাবলীপুরম (সপ্তম শতক) আর কাঞ্চীপুরম (অষ্টম শতক)। কাঞ্চীপুরমে আছে চোল আর বিজয়নগর যুগের মন্দিরও।
“বেঁচে থাকা প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালীরা বিবর্তনের ফলে বেঁচে থাকে না, সবচেয়ে বুদ্ধিমানরাও বিবর্তনের ফলে বেঁচে থাকে না, যারা পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি অভিযোজিত হতে পারে তারাই টিকে থাকে।” প্রায় দেড়শ বছর আগে প্রকৃতিবিদ, ভূতত্ত্ববিদ চার্লস ডারউইন একথা বলেছেন।
বিশদ পড়ুন
লিওপোল্ড ফন র‍্যাঙ্কে জন্মগ্রহণ করেছিলেন জার্মানির স্যাক্সনি প্রদেশের থুরিঞ্জিয়ায় উইহা শহরে। তাঁর পরিবার বহু প্রজন্ম ধরে এই প্রদেশে নিয়োজিত ছিলেন লুথারিয়ান যাজক হিসেবে। এই ঐতিহ্য ভঙ্গ করেছিলেন র‍্যাঙ্কের পিতা, গটলব র‍্যাঙ্কে। তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আইন। পরবর্তীকালে এই কাজে গটলব যাজকবৃত্তির মানসিক শান্তি খুঁজে না পেলেও র‍্যাঙ্কে পরিবারের আর্থিক অবস্থা এতে প্রভূত উন্নতি হয়। গটলব এবং ফ্রিডরিকে র‍্যাঙ্কের প্রথম সন্তান জন্মগ্রহণ করেন ১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর। স্যাক্সনিতে তখন পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে তার পূর্বের প্রভাব অনেকটাই হারিয়েছে। একদা স্যাক্সনির রাজবংশ পোলিশ-লিথুয়ানিয়ান কমনওয়েলথের রাজপদে প্রতিষ্ঠিত ছিল, পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে তাঁদের আলাদা মর্যাদা ছিল। সেই দিন তখন আর ছিল না। প্রাশিয়া, অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া পোল্যান্ডের ভাগাভাগি করে নেওয়ার সময় থেকেই স্যাক্সনির পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা আলগা হতে শুরু করে। তবুও তা তখনও সাধারণ মানুষের মন থেকে একেবারে মুছে যায় নি। সেই কারণেই তৎকালীন পবিত্র রোমান সম্রাট দ্বিতীয় লিওপোল্ড-এর নামে গটলব তাঁর প্রথম পুত্রের নাম রাখেন লিওপোল্ড।
বিশদ পড়ুন
অক্টোবর, ২০২২
অবশেষে দেখা হল! যাবো, যাবো করে বারবারই প্ল্যান চেঞ্জ করেছি বিভিন্ন কারণে। ১০/১০/২০২০ তারিখটি ম্যাজিকাল হলো আমার জন্য। হুট করেই প্রত্নতত্ত্বের সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে দুপুর তিনটেয়, কিন্তু অলরেডি লেট! ৩৫ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আগ্রাদ্বিগুণ দেখা শেষ করতেই বিকেল ৫টা। দিবর দিঘি আগ্রাদ্বিগুণ থেকে প্রায় ১৭ কি:মি:। যখন দিবর দিঘি থেকে ২ কি:মি: দূরে তখন ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমেছে। দিবর দিঘিতে পৌঁছে দেখি সন্ধ্যা উত্তীর্ণ! চারিদিকে অন্ধকার।
ডা. দিলীপ মহলানবিশ ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে তিনি ব্রিটেনে যান ও সেখানে চাকরি করতে করতে শিশুরোগ চিকিৎসার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে এসে কলকাতার জন হপকিন্স সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এ যোগ দেন, এবং ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ডা. মহলানবিশ আফগানিস্তান, মিশর এবং ইয়েমেনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কলেরা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীতে ১৯৭০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করেছিলেন। ১৯৮০-র দশকে তিনি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা ছিলেন।
প্রথমবারের মতো, গবেষকরা একটি নিয়ান্ডারথাল পরিবারকে চিহ্নিত করেছেন: একজন বাবা এবং তার কিশোরী কন্যা, সাথে আরও কয়েকজন নিকটাত্মীয়। তারা প্রায় ৫৪,০০০ বছর আগে সাইবেরিয়ার গুহায় বাস করত। বিজ্ঞানীদের একটি দল, যার মধ্যে শারীরবিদ্যা বা মেডিসিনের জন্য এই বছরের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী স্বান্তে পাবো আছেন, এই সপ্তাহে বিজ্ঞানের বিখ্যাত জার্নাল নেচারে এক পেপার প্রকাশ করেছেন।
শিলালেখ - তাম্রশাসনাদি বিষয়ক গবেষণার সাথে বাংলার যে অগ্রগণ্য প্রত্ন ঐতিহাসিকের নাম জড়িয়ে আছে, তিনি হলেন ড. দীনেশচন্দ্র সরকার। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের হাত ধরে যার সূত্রপাত এবং রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়দের সেই উত্তরাধিকার ড. সরকার সার্থক ভাবে বহন করে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার শালকাঠী কৃষ্ণনগর গ্রামে এক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক পরিবারে ১৯০৭ সালের ৭ জুন দীনেশচন্দ্র জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামাতা হলেন যজ্ঞেশ্বর ও কুসুমকুমারী সরকার।
এখন তো উৎসবের মরসুম। দুর্গা পুজো গেল। কালীপুজো আসছে। তারপর আসবে ক্রিসমাস। ক্রিসমাস এলেই প্রভু যীশুর সাথে যার নাম মনে আসে তিনি হলেন সান্তা ক্লস। কিংবদন্তি অনুযায়ী সান্তা ক্লস বলে কোন এক সময়ে কেউ একজন ছিলেন যিনি নাকি ক্রিসমাসের আগের দিন রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্রিসমাসের উপহার রেখে আসতেন।
বছর কয়েক আগে যখন অধ্যাপক সোয়ান্টে পেবোর অবশ্যপাঠ্য ‘আত্মজীবনী’ পড়ার সুযোগ আসে তখন দু’টি জিনিস মনে দাগ কেটেছিল। এক, গবেষণার ফলাফলকে নিরপেক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করার ব্যাপারে তাঁর নির্মোহ, প্রায়-ম্যানিয়াগ্রস্ত খুঁতখুঁতুনি। দুই, ল্যাবরেটরির প্রতিটি সাফল্যে নিজের ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও পরিশ্রমের বিস্তারিত বর্ণনা। সেই জন্যে কয়েকদিন আগে নোবেল কমিটির “সোয়ান্টে পেবো অসাধ্যসাধন করেছেন....জন্ম দিয়েছেন একটি বিজ্ঞানের একটি নতুন বিষয় – প্যালিওজিনোমিক্স... ওঁর অনন্য আবিষ্কারগুলি থেকেই আজ আমরা জানতে পারছি কেমন করে বিবর্তনের পথে হেঁটে কি ভাবে আমরা সবাই 'মানুষ' হয়ে উঠলাম” ঘোষণা শুনে যখন আরেকজন বিজ্ঞানী বললেন, “পেবোকে তো চিনি।
বিশদ পড়ুন
“জাহাঙ্গীরের আমলের স্বর্ণমুদ্রা”, বললেন শঙ্করবাবু। “দেখুন, প্রত্যেকটিতে একটি করে রাশির ছবি খোদাই করা। এই জিনিস একেবারেই দুষ্প্রাপ্য।” আমাদের অনেকেই বোধ হয় জাহাঙ্গিরের অতি দুর্লভ সোনার মোহরের কথা প্রথম জেনেছি ছোটবেলায় সত্যজিৎ রায়ের এই ‘জাহাঙ্গীরের স্বর্ণমুদ্রা’ কাহিনির সূত্রে। ভারতের চতুর্থ মোগল বাদশাহ নূরউদ্দিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গির (রাজত্বকাল ১৬০৫-১৬২৭ সাধারণাব্দ) তাঁর বৈচিত্র্যময় স্বর্ণমুদ্রার প্রচলনের কারণে শুধু ভারতে নয় সারা পৃথিবীতে আজও বহুল চর্চিত।
বিশদ পড়ুন
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০২-তম জন্মদিনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ নানা প্রসঙ্গে ঘুরে ঘুরে অনেকের সঙ্গেই আমার বাংলা ভাষার প্রশ্ন নিয়ে কথা হচ্ছিল। কিছুটা ফেসবুকে, অনেকটা চলভাষে—মুখে কানে মুখে . . . বিষয় ছিল; বিদ্যাসাগর সত্যিই বাংলার ভাষার বিকাশের জন্য কতটা কী করেছেন, তা নিয়ে। উপলক্ষ—একটা অভিযোগ।
বিশদ পড়ুন
বিশ শতকের শুরুতে জাতীয় কংগ্রেস সম্বন্ধে মোহভঙ্গের বেদনা যখন রাজনীতি সচেতন বাঙালী তরুণ-যুবসমাজকে হতোদ্যম করে তুলছে ঠিক সেই সময় কয়েকটি আন্তর্জাতিক ঘটনা হতাশ যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। প্রথম ঘটনাটি হল, প্রবল পরাক্রান্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বোয়ার যুদ্ধে বারংবার অশিক্ষিত কৃষকদের কাছে পর্যুদস্ত হওয়া। দ্বিতীয়টি — ১৯০২ সালে জাপানের সঙ্গে ইংল্যান্ডের সন্ধি স্থাপন এবং ১৯০৩-০৪ সালের রুশ-জাপান যুদ্ধে জাপানের অবিশ্বাস্য জয়। এবং তৃতীয় ঘটনাটি, ১৯০৫ সালের জানুয়ারী মাসে রাশিয়ার শ্রমিক বিপ্লব, যা দমন করতে জারের পুলিশ 'ব্লাডি সানডে'র মত ঘটনা ঘটিয়েও থামাতে পারে নি, জার বাধ্য হন ডুমা বা সংসদীয় ব্যবস্থার প্রচলন করতে।
বিশদ পড়ুন
সেপ্টেম্বর, ২০২২
২০২০ সালে ডোনাল্ড ব্লক্সহামের দুটো বই প্রকাশ হয়, যার একটি বেশ বিতর্ক তৈরি করে।১ ‘হোয়াই হিস্ট্রি? আ হিস্ট্রি’ গ্রন্থে তিনি দেখাতে চেয়েছেন একবিংশ শতকে আমাদের সাধারণের ইতিহাসের আলোচনার দিকগুলি কিভাবে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে। এই পাল্টে যাওয়াকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন ড্যানিয়েল উলফের মত বিখ্যাত ঐতিহাসিকরা।২ আমরা যারা অপেশাদার ইতিহাসচর্চা করি, তারা অতীতকে নির্দিষ্টভাবে দেখার বা বর্ণনা করার যে সমস্ত দিকগুলিতে আগ্রহ পাই তা ধীরে ধীরে পেশাদার ঐতিহাসিকের বিষয় নির্বাচনে কতটা প্রভাব বিস্তার করবে - তা অবশ্যই একটি গবেষণার বিষয়। আগামী সময়ের যে ধরনের আগাম লক্ষণ দেখা যায়, তাতে মনে হয় ইতিহাস একটা মৌলিক পরিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। উলফ আমাদের সেসব পছন্দের বিষয়গুলোকে আট ভাগ করে উল্লেখ করেছেন। এগুলি হল- বিনোদন, স্মৃতিচারণ, নৈতিক (জাতীয়তাবাদী) শিক্ষা, অনুমানমূলক দর্শন, ভ্রমণ, আলাপচারিতা, মেথড বা পদ্ধতি এবং পরিচিতি।
আমি বাচুই, এক সাধারণ ইনকা নারী। কোন ষাট সত্তর বছর আগে জন্মেছিলাম পেরুর এক দূরতম অখ্যাত গ্রামে, তারপর থেকে এতগুলো বছর জীবনসংগ্রামেই কেটে গেল। একসময় ছিলাম ইনকা সাম্রাজ্যের সূর্যদেবতা ইন্তি-র জন্য মনোনীত নারী আকলা কুনা (সূর্যকুমারী), কিন্তু ভাগ্যের তাড়নায় আজ আমি এস্প্যানিওল নাবিক কারিনো মাতিয়াসের স্ত্রী ফিওরেলা। আমার সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য জানিনা, ইন্তি (সূর্য দেব) আর মামাক্যুলিয়া-র (চন্দ্র দেবী) আনুকূল্য ছেড়ে আমাকে পরম পিতার চরণে আশ্রয় নিতে হল। আমাদের দেশের মানুষ লিখতে জানে না, কিন্তু এস্প্যানিওলদের কল্যানে আমি লিখতে শিখেছি, জেনেছি অক্ষরের মাধ্যমে কিভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে হয়।
ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে, উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম গিরিবর্ত্মগুলি পেরিয়ে ভারতের সমভূমি হয়ে, তিব্বত ও চীন দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও আগে থেকে পরিচিত ছিল সিল্করুট। ডুয়ার্সের বিভিন্ন পথের মধ্য দিয়ে সংযোজিত এই সিল্করুট যুগ যুগ ধরে ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে পল্লবিত করেছে।
শিরোনামটা দেখলে কেমন একটু ধাঁধা লেগে যায়, তাই না? ছিল বেড়াল, হয়ে গেল রুমালের মতো, ছিল বেড়াল, হয়ে গেল কম্পিউটার গোছের একটা কথা। যে গল্পটা বলতে চলেছি সেটাকে বিজ্ঞান তো দূরের কথা, ইতিহাস বলেই হয়তো কেউ স্বীকার করতে চাইবেন না, এমনই অসম্ভব শুনতে লাগবে ব্যাপারটা। কারণ ভবিষ্যতের কম্পিউটার বানানোর জন্য আমরা ব্যবহার করতে চলেছি এমন এক তত্ত্ব যার সম্পর্কে বিজ্ঞানী মারে গেলম্যান বলেছেন, “এই অদ্ভুত রহস্যময় তত্ত্ব আমরা বুঝি না কিন্তু একে ব্যবহার করতে জানি”।
একানব্বই বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন (৩০ আগস্ট, ২০২২) পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট (১৯৮৮-৯১) মিখাইল সেরগেইভিচ গর্বাচেভ। ১৯৮৫ সালে যখন তিনি সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের পদে আসীন হন, তখন তিনিই ছিলেন পলিটব্যুরোর সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। নতুন প্রজন্মের কমিউনিস্টদের প্রতিনিধি ছিলেন গর্বাচেভ, চেয়েছিলেন সোভিয়েত ব্যবস্থার 'সংস্কার' -- অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোয় ‘আমূল’ পরিবর্তন নিয়ে এসে ‘গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমাজতন্ত্র’-এর পত্তন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে চলতে থাকা ঠাণ্ডা যুদ্ধের পরিসমাপ্তি।
রাজনৈতিক তথ্যচিত্র নির্মাণ ও চলচ্চিত্রের ওপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছিল সেই হীরালাল সেনের সময় থেকেই। তিনি ১৯১১ সালে পঞ্চম জর্জের আগমন এবং কলকাতা ও দিল্লির দরবারের ছবি তুলেছিলেন সরকারি আমন্ত্রণে। সেই ছবি ১৯১২ সালের জানুয়ারি মাসে দু’দিন দেখানোর পর নিষিদ্ধ হয়েছিল। আবার বাংলার পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় ওই বিষয়ের ওপর ছবি হলে রক্তচক্ষু দেখায় সরকার। অর্থাৎ প্রথম থেকেই ছবি তৈরির সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের বাধার সম্মুখীনও হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
আগস্ট, ২০২২
ভারতবর্ষে সূর্য উপাসনার চল ছিল নিওলিথিক যুগ থেকেই। তারপর সময়ের সাথে সাথে ভারতে একে একে এসে পৌঁছোয় সূর্য উপাসনার বৈদিক ধারা, ব্যাকট্রিয় গ্রিক ধারা এবং ইরান থেকে আগত মঘদের ধারা। এই সব ধারার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে, সূর্য উপাসনার একটি স্বতন্ত্র এবং সুনির্দিষ্ট ধারা গড়ে ওঠে সাধারণ পূর্বাব্দের দুই শতক থেকে সাধারণ অব্দের ছয় শতকের মধ্যে। শৈব এবং বৈষ্ণবদের মতো একটি স্বতন্ত্র অর্চনা গোষ্ঠী তৈরি করেন সৌর উপাসকরা।
১৮৫৩ থেকে ১৮৫৭ সাল অব্দি আমেরিকার ১৮তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্র্যাঙ্কলিন পিয়ের্স। তাঁকে ১২ জানুয়ারি, ১৮৫৪ (ভিন্ন মতানুযায়ী ১৮৫৫) সালে রেড ইন্ডিয়ানদের Suwamish এবং Duwamish ট্রাইব-এর নেতা চিফ সিয়াটল একটি চিঠি লেখেন বলে জানা যায়। ৪ জুন, ১৯৭৬ সালে The Irish Times পত্রিকায় এ চিঠি ছাপা হয়। যদিও গবেষকমহলে এ বিষয়ে কিছু মতদ্বৈধ আছে।
গ্রেগর যোহান মেন্ডেল। আধুনিক জিনশাস্ত্রের জনক। তাঁর বয়স দুশো বছর হল। আধুনিক জীবনবিজ্ঞানের ধারায় তাঁর গবেষণার গুরুত্ব বা অবদান নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তাঁর সেই আশ্চর্য কাজ ফিরে দেখার চেষ্টা করলাম।
এখন পর্যন্ত জানা এবং সাধারণ ভাবে স্বীকৃত, ভারতে হোমো-স্যাপিয়েন্সদের আগমন কাল ছিল এখন থেকে ৬৫-৭০ হাজার বৎসর আগে। সদ্য লাওসের ট্যাম-পা-লিং গুহায় ৬০-৬৫ হাজার বৎসর আগের স্যাপিয়েন্স খুলি পাওয়ার পরে, ৬৫ নয় বরং ৭০ হাজার বৎসর বলাটাই হয়ত ঠিক হবে। সমুদ্রতট থেকে হাজার কিলোমিটার দূরের এই ট্যাম-পা-লিং গুহায় স্যাপিয়েন্সদের অস্তিত্ব থাকার ফলে আমাদের ভাবতে হবে যে আফ্রিকা থেকে আসা স্যাপিয়েন্সরা, আগে ভাবা মতো, শুধুই সমুদ্রতটেই তাদের চলাচল ও বসবাস সীমিত রাখে নি। ৬৫ হাজার বৎসর আগেই তারা নদীর ধার ধরে মুল ভূখণ্ডের দূরদূরান্তে চলে গিয়েছিল।
‘এল রেইনো দেল এস্তে মুনদো’ - এই মর্তের রাজত্ব - নামের সাড়া জাগানো উপন্যাসটি কিউবার বিখ্যাত লেখক আলেহো কার্পেন্তিয়ের লিখেছিলেন লাতিন আমেরিকার ফরাসী উপনিবেশ হাইতিতে আফ্রিকান ক্রীতদাসদের বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৯ সালে। এর ছয় বছর আগে ১৯৪৩ সালে কার্পেন্তিয়ের হাইতি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেইসময় অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতকের সন্ধিলগ্নে ঘটা দাসবিদ্রোহের কাহিনীগুলির সাথে তাঁর নিবিড় পরিচয় ঘটে। কালো রাজা অরি ক্রিস্তফের কাহিনী সম্পর্কে কার্পেন্তিয়ের বিশেষ কৌতূহলী হয়ে ওঠেন। এসবের ছায়াপাত ঘটে তাঁর ‘এই মর্তের রাজত্ব’ নামের উপন্যাসে।
আধুনিক গবেষকরা চেষ্টা করছেন দীর্ঘ-হারানো মসলিন পুনরায় তৈরি করবার ঢাকার মসলিন সহস্রাব্দ ধরে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল, কিন্তু বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এর তৈরি করবার পদ্ধতি স্মৃতি থেকে মুছে যায়। এই মসলিন এতই হালকা ছিল যে একে বলা হত বোনা বাতাস, এত পাতলা যে, যারা এটি পরতেন তাদের বিরুদ্ধে কখনও কখনও অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হত এবং এটি তৈরি করা এত জটিল যে কীভাবে এই কাপড় তৈরি করা যায় তার জ্ঞান হারিয়ে গেছে।
বিশদ পড়ুন
সম্প্রতি জম্মু এবং কাশ্মীরে পাওয়া গেল বিষ্ণুকে। বিষ্ণু বলতে যে সে বিষ্ণু নয়, 'ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর'-এর বিষ্ণু। ভগবান বিষ্ণু। তবে উনি সশরীরে দেখা দেননি।যা পাওয়া গিয়েছে তা হল ওনার মূর্তি। কত প্রাচীন সে মূর্তি? তা ধরুন প্রায় বারোশ বছর।আজ্ঞে হ্যাঁ, জম্মু কাশ্মীরের বুধগাম জেলায় পাওয়া এই বিষ্ণু মূর্তিটি সাধারণ অব্দের নয় শতকে তৈরী হয়েছিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
বিশদ পড়ুন
জুলাই, ২০২২
কর্ণাটকের ভীমা নদীর তীরে কলবুর্গি (গুলবর্গা) জেলায় সন্নতি গ্ৰামে চন্দ্রলাম্বা পরমেশ্বরী মন্দির কমপ্লেক্স। বহু পুরোনো অনেকগুলো দেবী মন্দিরের সমষ্টি। এদের মধ্যেই ছিল এক কালী মন্দির। ১৯৮৬ সালে তার ছাদ ভেঙে পড়ে। মেঝে ফেটে যায়। ভাঙাচোরা অবশেষ পরিষ্কার করতে করতে বেরিয়ে আসে কিছু শিলালেখ- সম্রাট অশোকের। দেখা যায় কালীমূর্তির বেদীটি ছিল আসলে অশোকের শিলালেখ। এখান থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা আভাস পান এই মন্দিরের আশেপাশে ঐযুগের আরো বৌদ্ধ পুরাবস্তু থাকার। আরো খোঁড়াখুঁড়ির পর আরো প্রত্নসম্পদ পাওয়া যায়, এবং ইঙ্গিত পাওয়া যায় কাছেই কোনো বড়মাপের বৌদ্ধ স্তূপের অবশেষ আছে।
যখন মানুষ আফ্রিকায় চামড়া পরছে, শিশুকে কবর দিচ্ছে, পাথরের ওপরে ক্রশহ্যাচ আঁকছে, তখন ইউরোপে ‘নিয়েণ্ডারথাল’রা কেমন আছে? তারা কেমন জীবন কাটাচ্ছে? আধুনিক মানুষ, ‘নিয়ান্ডারথাল’ ও ‘ডেনিসোভান’ উদ্ভূত হয়েছে একই পূর্বপুরুষ থেকে। ‘হোমো ইরেক্টাস’-এর যে মূল শাখাটি আফ্রিকাতে ছিল তাদের উত্তরসূরি হল ‘হোমো হাইডেলবার্গেনসিস’। ‘হোমো হাইডেলবার্গেনসিস’-রা পৃথিবীতে ছিল ৮ থেকে ৩ লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত। থাকত পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপ, চীন, জাপানে। ওরা আগুনের প্রারম্ভিক ব্যবহার জানত, হাতে থাকত কাঠের বল্লম। ‘হোমো হাইডেলবার্গেনসিস’ থেকে উদ্ভূত তিন জ্ঞাতি ভাই আধুনিক মানুষ, ‘নিয়ান্ডারথাল’ ও ‘ডেনিসোভান’।
‘মনে অহরহ ইচ্ছা জাগিতেছে যে, স্বহস্তে কোদাল ধরিয়া সমস্ত উচ্চভূমি খুঁড়িয়া সমান করিয়া দিই। প্রাচীন পুকুরগুলিকে প্রাচীন কটাহের মত ধরিয়া তুলি এবং উল্টাইয়া ফেলিয়া দিই, দেখি তাহাদের অভ্যন্তরে কী আছে। কিন্তু দুর্বৃত্ত উদর দুই বেলা যথাসময়ে চোঁ চোঁ করিয়া জানাইয়া দেয় যে রাজা অশোকের কটা ছিল হাতি তাহা না জানিলেও পৃথিবীর বিশেষ ক্ষতি হইবে না। তথাপি “নেশা যারে ধরে তারে পাগল করে”। প্রত্নতত্ত্বের নেশাগ্রস্ত হতভাগ্যগণ আমার কথার সত্যতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিবেন।’ উক্তিটি কার জানেন? তাঁর নাম নলিনীকান্ত ভট্টশালী।
ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে। আরে লাল লাল নীল নীল বাতি দেইখ্যা নয়ন জুড়াইছে। ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে, মনের আশা ফুরাইছে।
জুন, ২০২২
সাঁওতাল বিদ্রোহ। ভারতের আদিবাসী বিদ্রোহগুলির মধ্যেকার এক মহাবিস্ফোরণ। সাঁওতাল বিদ্রোহের নাম শোনেননি এমন লোক মেলা ভার। ১৮৫৫ সালে সিধু কানুর নেতৃত্বে ভাগনাডিহির মাঠে সাঁওতাল বিদ্রোহের ডাক দেওয়া হয়েছিল, ইংরেজরা এই বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করেছিল ইত্যাদি সাধারণ তথ্যগুলো আমরা সবাই জানি। তাহলে এ বিষয়ে একটা নতুন বই আবার কষ্ট করে পড়তে যাব কেন? এই বইটার পাঠপ্রতিক্রিয়া দিতে যখন বসেছি, তা তো নিশ্চয়ই বলব, তবে তার আগে বইটার নাম, প্রকাশক, বিপণন ও মুদ্রণ শিল্পীর নামগুলোর দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। পন্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আরশালবাতি ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে এক অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যখন এমন এক গবেষণালব্ধ বইয়ের বিপণনের দায়িত্ব নিয়েছে যার লভ্যাংশ সাঁওতাল সমাজের জনসেবামূলক কাজে লাগানো হবে তা সর্বাংশে ব্যতিক্রমী বইকি!
বাংলার প্রাচীন বা মধ্যযুগের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা নদী আর মাটি। প্রাচীন কাল থেকে বাংলার নদীগুলি ক্রমাগত প্রবাহপথ পরিবর্তন করে চলেছে, আজ নদী যে খাত ধরে ভীমবেগে প্রবাহিত, কাল সেই খাত পরিত্যক্ত, বিস্মৃত। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার জনপদ আর ধর্মীয় সৌধমালার উত্থান-পতনের সঙ্গে বাংলা থেকে নদীপথ হয়ে সমুদ্রে বাণিজ্যযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ যখন প্রত্নতাত্ত্বিক মাটির গভীর থেকে বাংলার ইতিহাসকে সূর্যের আলোকে নিয়ে আসতে উত্সুক হন, তখন পলিমাটির গভীর থেকে সেই সত্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁকে প্রথমে জানতে হয় বাংলার ভূতত্ত্বের সেই ইতিবৃত্ত – নদী আর মাটির কথা। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় ভূতত্ত্বের জ্ঞানের প্রয়োজন আজ বিশ্বজনীন, আর সেই কারণে বিকশিত হচ্ছে এক নতুন শাস্ত্র – ভূপ্রত্নতত্ত্ব। ইতিমধ্যেই বাংলার বেশ কয়েকজন তরুণ গবেষক এই নতুন পথে চলতে শুরু করেছেন। কে বলতে পারে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভূতত্ত্বকে বাদ দিয়ে প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হবে।
'প্রসঙ্গ : সাম্প্রদায়িকতা ও ভারতের ইতিহাস' প্রবন্ধে ঐতিহাসিক গৌতম নিয়োগী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যটির উল্লেখ না করে থাকতে পারছি না — "জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সামিল করার জন্য অনেক সময়েই জাতীয়তাবাদী নেতারা ধর্মচেতনায় সুড়সুড়ি দিতেন। এতে তাঁদের উদ্দেশ্য অনেকাংশে সফল হলেও সাম্প্রদায়িক সংহতি বিনষ্ট হল।" এই মনোভাবটি হিন্দু ও মুসলমান — উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের ক্ষেত্রেই সত্যি। অরবিন্দ ঘোষ এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আগের আলোচনায় আমরা দেখেছি বাংলার শাসককুলের ভাগ্য-পরিবর্তনে বিশেষ করে পলাশীর যুদ্ধের পর একদিকে অর্থলিপ্সু ব্রিটিশ কোম্পানি আর অন্যদিকে ক্ষমতাহীন নবাবী শাসন, এই দ্বৈত শাসনব্যবস্থার মাঝখানে পড়ে সাধারণ গ্রামীণ প্রজাকুলের শান্ত নিস্তরঙ্গ জীবন নানাধরনের সমস্যায় একেবারে জর্জরিত হয়ে গিয়েছিল। আগেকার বাংলা আর বাঙালির জীবনের ধারা ছিল শান্ত, নিশ্চল। গৃহীপরিবারগুলি ধনী না হলেও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে সচ্ছলতার অভাব সেখানে ছিল না কোনদিনই। যাযাবর ফকির আর সন্ন্যাসীদের মানুষ আনন্দের সঙ্গেই মুক্তহস্তে দান করত।
আবুধাবির উপকূলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা সংযুক্ত আরব এমিরেটস-এর (ইউএই) প্রাচীনতম ইমারত আবিষ্কার করেছেন। দ্বীপের নাম ঘাঘা। সেখানে পাওয়া গেছে পাথরের বৃত্তাকার কাঠামো। সেগুলো কমপক্ষে ৮,৫০০ বছরের পুরানো। স্থানীয় সংবাদপত্র দ্য ন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্কৃতি ও পর্যটন বিভাগের (ডিসিটি আবুধাবি) গবেষকরা প্রত্নতাত্ত্বিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই আবিষ্কার করেছেন।
অন্ত মধ্যযুগ থেকে যে ভূভাগ বাঙ্গালা বা বাংলা নামে পরিচিত, আদি মধ্যযুগ থেকেই সেই ভূখণ্ডের ভৌগোলিক অঞ্চলগুলির ক্রমশ একটি রাজ্যতন্ত্রের অধীনে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সাধারণাব্দের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শতকের মধ্যবর্তী কোনও সময় রচিত আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে (৫৩.৬৮৭) উল্লিখিত ‘গৌড়তন্ত্র’১ সম্ভবত এই পরিবর্তনের ইঙ্গিতবাহী। আদি মধ্যযুগে বাংলা বেশ কয়েকবার বহিঃশত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণাব্দের অষ্টম শতকে কাশ্মীরের শাসক ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় এবং একাদশ শতকে তামিল ভূমির শাসক রাজেন্দ্র চোলের সেনার আক্রমণে। আশ্চর্যজনকভাবে বাংলার অভ্যন্তরীণ কোনও উত্স থেকে আদি মধ্যযুগের এই দুই বহিঃশত্রুর আক্রমণ ও আক্রমণের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে প্রায় কোনও তথ্যই পাওয়া যায়নি।
বিশদ পড়ুন
মানব সভ্যতা এগিয়েছে মানুষের বেঁচে থাকার লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে।টিকে থাকার এ পর্বে মানুষ তার বিজয়গাথাকে লিখে রাখতে পারেনি। হয়তো তখন তাদের মস্তিষ্কে এই বোধ-ই জন্মায় নি।হাজার বছরের তীব্র লড়াই আর সংগ্রামের ভিতর দিয়ে মানুষ যখন গুহাগাত্রে ছবির মাধ্যমে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে থাকে তখন থেকেই মানুষের ইতিহাস শুরু হয়।প্রাগিতিহাস।এই সময় থেকে মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা হতে শুরু করে। এভাবেই ইতিহাসের যাত্রা শুরু বলে পণ্ডিতরা মনে করেন। তারপর আগুন জ্বালিয়ে গাছের গুঁড়িতে বসে দাদুর মুখে গল্প শুনে শুনে ইতিহাসের একটি মৌখিক রূপ দাঁড়ায়। ইশারা-ইঙ্গিত এবং গুহাগাত্রে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বঙ্গোপসাগরীয় এলাকায় বসবাসকারী নৃগোষ্ঠীথেকেহিন্দু মুসলিম, বড়ুয়া, মগ-রাখাইন–পৃথিবীর সব নরগোষ্ঠীর আদি যাত্রাপথ এভাবেই শুরু হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
আধুনিক সামাজিক রাজনৈতিক ধর্মনিরপেক্ষতা হলো সর্বপ্রকার ধর্মীয় প্রবণতা ও প্রভাব মুক্ত শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের মাধ্যমে ধর্ম এবং রাষ্ট্রকে পৃথক করা এবং সমস্তরকম ধর্মীয় ভেদাভেদ মুক্ত সমাজ গড়ে তোলা। ধর্মনিরপেক্ষতার বা ‘secularism’-এর কথা পড়তে গেলে আধুনিক ইতিহাস এমনকি গুগলেও জর্জ জ্যাকব ইলিয়কের (১৮১৭ – ১৯০৬) নাম পাবেন আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণার প্রবর্তক হিসাবে।
বিশদ পড়ুন
মুক্তির দাবি মানুষের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। কিন্তু মুক্তির স্বাদ অত সহজে পাওয়া যায় না। মুক্তির পথ চির কঠিন। মুক্তি কেউ কাউকে হাতে তুলে দিতে পারে না বা দেয় না। চরম মূল্য দিয়ে তাকে অর্জন করে নিতে হয়। সে মূল্য দেশ-কাল-সময়-সমাজ বিশেষে পৃথক হতে পারে। স্বাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে, স্বাধীনতা অর্জনের উদ্দেশ্যে গণ সংগ্রামই মুক্তির সাধনা। শেকল ভাঙার গানই মুক্তি। শোষকের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে শোষিতের প্রতিরোধের ভাষাই মুক্তি। মানব সভ্যতার উষালগ্ন থেকে মানুষের শৃঙ্খল মোচনের বাসনাই মুক্তির স্বপ্ন।
বিশদ পড়ুন
আদিগন্ত বিস্তৃত সিকিম হিমালয়ের দুর্গম দক্ষিণ কোলে ছোট্ট গ্রাম সাংমু। ১৯০২ সালের কোন এক ভোরে আচুং লেপচার বাড়িতে জন্ম নিলো এক কন্যা। একটু বড় হতেই আঙিনায় প্রাচীন পিয়ার গাছটির আশপাশে খেলে বেড়ায় সে। ফুটফুটে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে হেলেন। আচুং তাঁর সাত সন্তানকেই আধুনিক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তাই গ্রাম ছেড়ে সপরিবারে উন্নততর জীবনের খোঁজে তিনি বাসা বাঁধলেন দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং শহরে। হেলেন তখন বেশ ছোট্ট। শহরের স্কটস্‌ মিশনারি স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে ভর্তি করা হলো হেলেনকে। কিন্তু স্কুলের গণ্ডিবদ্ধ পঠন-পাঠন আর কঠোর শৃঙ্খলা মোটেই ভালো লাগতো না শিশুটির। তাই কষ্টেসৃষ্টে কয়েক বছর পড়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাড়ির প্রবল অমত সত্ত্বেও বিলাতি স্কুল ছেড়ে দিল হেলেন।
বিশদ পড়ুন
মে, ২০২২
ইউয়ের্গ পি মারমেট-এর নাম কি মনে আছে আমাদের? সম্ভবত 'না'! মনে রাখা তো দূরের কথা, আমাদের অনেকেই হয়তো ইউয়ের্গ পি মারমেট-এর নাম এই প্রথম শুনলাম। ঠিক কি না? ইউয়ের্গ পি মারমেট কিন্তু মোটেই হেঁজিপেঁজি লোক ছিলেন না। উনি যে কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন তা অর্জন করার কথা আমি বা আপনি হয়তো স্বপ্নেও ভাবতে পারবো না। তাও উনি যে কে, কি করতেন - তা আমরা ঠিক করে জানি না! কি আর করা যাবে! তার চেয়ে বরং আপাতত ইউয়ের্গ পি মারমেটকে কাটিয়ে দেই চলুন।
১৯৮৭-এর বছর কয়েক পর, প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলী কলকাতায় আসেন। গভর্নর হাউসের এক জমায়েতে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন চিফ জাস্টিস পি. ভি. চক্রবর্তী তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের পিছনে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ভূমিকা ঠিক কতটা। এটলি জানান, সামান্যই, বরং নৌ-বিদ্রোহ তাঁদের বাধ্য করেছিল, পরিকল্পিত সময়ের আগেই ভারত ছাড়তে!
একটি প্রশ্ন বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই শোনা যায়: আধুনিক মানুষের বিবর্তন কি আদৌ হচ্ছে? অনেকে মনে করেন, বিবর্তন হচ্ছে, এবং এর ফলে কোনও এক ভবিষ্যতের দিনে আমরা এক শুঁটকো মানুষকে পাব, যাদের মাথা বিরাট হবে আর হাত-পা হবে চিমড়ে। বিবর্তন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাণীকে বেশি খাপ খাওয়ানোর মত করে তৈরি করে। মানুষের মস্তিষ্কের কাজ বাড়ছে আর দৈহিক কাজ কমছে, অতএব এমনটাই হওয়া যৌক্তিক বলে তাঁদের মনে হয়। সমস্যা হল, ভাল করে অঙ্ক কষতে কিংবা ইংরাজি বলতে পারলে ভাল চাকরি মেলে ঠিকই, কিন্তু বুদ্ধি জিনিসটা কেবল আকাদেমিক পাণ্ডিত্যের জন্য কাজে লাগে এমন নয়; ফুটবলারের গোল করতে বা পর্বতারোহীর শৃঙ্গ আরোহণ করতে বুদ্ধি কম কাজে লাগে না। তার ওপরে ভাল রোজগার করলে তার অনেক সন্তান হবে ও ‘বড় মাথার’ বংশগত প্রবণতা পরের প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে, অভিজ্ঞতা এমন দেখায় না।
আজ থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগে এক রাজপুত্র মতান্তরে ধনাঢ্য ও সমাজে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান জরা, মরণ ও দুঃখ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে তাঁর সম্পদ ও রাজসুখ ছেড়ে গৃহত্যাগী হয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার পর গৃহ থেকে বহু দূরে অধুনা গয়ার কাছে বুদ্ধগয়ায় এক অশ্বত্থ বৃক্ষের নীচে বোধিজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ হলেন। এরপরে তাঁর পরিনির্বাণ পর্যন্ত আগামী পঁয়তাল্লিশ বছর বহুজনের হিত ও সুখের জন্য এই বোধিজ্ঞান তিনি তাঁর হাজার হাজার অনুগামী ও শিষ্যদের মধ্যে প্রচারের মাধ্যমে এক ধর্মীয়, দার্শনিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিপ্লবের সূচনা করে নিজেকে ভগবান রূপে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই পর্যন্ত প্রায় আমরা সকলেই জানি।
হরপ্পা সভ্যতার দুটি নগর, হরপ্পা ও ফারমানায় দেখা গেছে সেখানকার কবরস্থরা ছিলেন প্রথম প্রজন্মের অভিবাসী। এই আপাত সামাজিক মর্যাদা সম্পন্ন স্বচ্ছল অভিবাসীদের নগরে আনা হয় তাদের বাল্যাবস্থায়। যেহেতু কবরস্থল দুটো ব্যবহৃত হয়েছে হরপ্পা পর্যায়ে (২৬০০-১৯০০ সাধারণ পূর্বাব্দ), টানা কয়েক শতাব্দী ধরে, তাই অনুমান এই অভিবাসীদের আগমন ছিল নিয়মিত ও নিয়ন্ত্রিত। এঁদের সামাজিক মর্যাদা ও স্বচ্ছলতা বলে এই অভিবাসন প্রক্রিয়া ছিল নগরের অভিজাতদের কাঙ্ক্ষিত, এবং নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রাতিষ্ঠানিক।
স্টিভেন এইচ. মাইলস ২০২০ সালে প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থ The Torture Doctors: Human Rights Crimes & Road to Justice-এ লিখছেন – “২০০৩ সালের বসন্তে ইরাকে আমেরিকার ‘জিজ্ঞাসাবাদের’ কেন্দ্র আবু ঘ্রাইব থেকে লুকিয়ে পাচার করা অনেকগুলো ফটোগ্রাফের মধ্যে ছিল একটি ফটো ছিল বরফের ব্যাগে ভরা এক ক্ষতবিক্ষত বন্দীর ওপরে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক সেনার ছবি। মন আদেল আল-জামাদি নামে এই ব্যক্তির মৃত্যু এর আগে রিপোর্টেড ছিল না। এ ঘটনার ফলে সাংবাদিকেরা আমেরিকান সরকারের ওপরে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে এই বন্দীর মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য। সরকার আংশিক এক সেট ডেথ সার্টিফিকেট প্রকাশ করে যাতে স্বাভাবিক মৃত্যু এবং লুকিয়ে রাখা মৃত্যুকে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছিল, যেখানে বাস্তবে ঘটেছিল হত্যা করা এবং জেলের অ-নিরাপদ পরিস্থিতি। আল-জামাদির মৃত্যু হয়েছিল হিংস্র অত্যাচারের ফলে।” (পৃ: ১৪৯)
বিশদ পড়ুন
বিপ্লবী সাহিত্যিক নিকোলাই চেরনিশেভস্কির ‘হোয়াট ইজ টু বি ডান’ নামের উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ১৮৬৩ সালে, যা পরে লেনিনকে অত্যন্ত প্রভাবিত করেছিল। এই বইটি লেনিনের এতই পছন্দের ছিল যে তিনি অন্তত পাঁচবার এটি পড়েছিলেন, আর তাঁর এক বিখ্যাত বইয়ের নাম দিয়েছিলেন এই বইয়ের নামে। চেরনিশেভস্কির লেখালেখি ও সম্পাদনাকর্ম সমৃদ্ধ সোভ্রেমেনিক (এই রুশ শব্দটির অর্থ সমসাময়িক) নামের জার্নালটি এ সময়ে প্রগতিশীল মহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং এটির লেখক ও সহ সম্পাদক হবার কারণে চেরনিশেভস্কিকে কারাবাসও করতে হয়েছিল। উপন্যাস শিল্পের নিরিখে না হলেও সামাজিক প্রভাবের দিক থেকে দেখতে গেলে এই উপন্যাস ও তার প্রতিক্রিয়া সমূহও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে করা হয় চেরনিশেভস্কি এই উপন্যাস লিখেছিলেন তুর্গেনিভ এর ‘ফাদার্স অ্যান্ড সনস’ এর প্রতিক্রিয়ায়, আবার চেরনিশেভস্কির এই ‘হোয়াট ইজ টু বি ডান’ এর প্রতিক্রিয়াতেই দস্তয়েভস্কি লেখেন তাঁর অতি বিখ্যাত আখ্যান ‘নোটস ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড’।
বিশদ পড়ুন
রঞ্জনদার কাছে একবার একটা পাথর নিয়ে গিয়েছিলাম, যেটাকে দেখে আমার ফসিল মনে হয়েছিল। পাথর হলেও অনেকটা গাছের কাণ্ডের মতো দেখতে। মনে হয়েছিল যে প্রস্তরীভূত গাছ (Petrified Wood) হয়তো হবে, কিন্তু সে আশায় জল ঢেলে দাদা বলল যে, ওটা কোন ফসিলই নয়, সাধারণ পাথর। অনেক পাথরের বাইরের দিকটা বিভিন্ন কারণে এবড়ো খেবড়ো হয়ে যায়; আর তখন দেখলে মনে হয় যে, পাথরে পরিণত হওয়া গাছের কাণ্ড বুঝি। ওই পাথরটাও দেখতে অনেকটা সেই রকমই ছিল, কিন্তু জানতে পারলাম যে ওটা প্রস্তরীভূত গাছ নয়। আমার মনটা খারাপ দেখে রঞ্জনদা সান্তনা দিয়ে বলল, “ভাবিস না রে, কয়েকদিন পরেই আমি রাণীগঞ্জের কাছে ট্রান্সফার হয়ে আসছি। দেখা যাক, তোকে একটা গাছের ফসিল হয়তো জোগাড় করে দেওয়া যাবে।” তাও ভালো!
বিশদ পড়ুন
এপ্রিল, ২০২২
মানব বিবর্তন চলাকালীন সময়ে মস্তিষ্কের আকার তিন গুণ বেড়ে যায়। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক যে কোন জীবিত প্রাইমেটের মধ্যে বৃহত্তম এবং সবচেয়ে জটিল। বৃহৎ এবং জটিল মস্তিষ্ক প্রচুর তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং সঞ্চয় করতে পারে। এপের মস্তিষ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। পরবর্তীকালে, বিশেষ করে হোমো ইরেক্টাসের শেষের দিক থেকে এই পরিবর্তন হয়েছে দ্রুত। কেন হয়েছে এই দ্রুত পরিবর্তন?
আজকের এই মানবসভ্যতা, যাকে আমরা ‘আধুনিক’ ভেবে শ্লাঘা অনুভব করি, এখনকার ইতিহাস অনুযায়ী তার সমস্ত কৃতিত্ব, ইউরোপীয় দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ও চিন্তাবিদদের দেওয়া হয়। তা যে কতদূর মিথ্যা এবং কিভাবে কালো আফ্রিকার জঠর থেকে উচ্ছ্রিত অস্থি, রক্ত স্বেদের বিনিময়ে আজকের আধুনিক পৃথিবীর বুনিয়াদ গড়ে উঠেছে তার ওপর থেকে যবনিকা তুলেছেন এই গবেষক। না, এটা কোনো ‘কমিউনিস্ট’ প্রচার নয়। অন্ধকার ইতিহাসের ওপরে নতুন আলোকপাত।
নূতন রাজ্য দখলের সময় রাজারা ধনসম্পদ লুঠপাট করে, কিন্তু অশুরবানিপাল এমন একজন রাজা ছিলেন যিনি বইপত্র লুঠ করতেন। তবে শুধু লুঠ করে বই সংগ্রহ করতেন তা কিন্তু নয়, তিনি দূর দূরান্তে লোক পাঠাতেন লেখা সংগ্ৰহ করতে, বিদ্বজ্জনদের নিয়োগ করতেন অনুবাদের জন্য। একত্রিত করেছিলেন হাজার হাজার লিখিত মৃৎফলক, আর চামড়া ও প্যাপিরাসে লিখিত অগুনতি পুঁথি। পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাপ্ত গ্রন্থাগারগুলির একটি- তৈরি করেছিলেন এই অশুরবানিপাল (৬৮৫-৬৩১ সাধারণ পূর্বাব্দ)। বর্তমান ইরাকের মোসুল শহরের কাছেই ছিল অশুরবানিপালের রাজধানী- নিনেভা- সেখানেই ছিল অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত এই গ্রন্থাগার। নিও-আসিরিয়ান সাম্রাজ্যের শেষ বড়মাপের সম্রাট ছিলেন তিনি।
—"উইলিয়াম জেমস হার্শেল কে ছিলেন?” —"ইংলিশম্যান। আই. সি. এস.। একসময় বাংলাদেশে পোস্টেড ছিলেন। আঠারোশো আশি সালে ইংল্যান্ডের নেচার পত্রিকায় তাঁর একটা চিঠি বেরোয়। আঙুলের ছাপ থেকে যে অপরাধী ধরার একটা উপায় হতে পারে, এই চিঠিতেই সেটা প্রথম জানা যায়।"
স্পোকযুক্ত ধর্মচক্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এ পর্যন্ত নাটেশ্বরে পঞ্চমবারের মতো অষ্টকোণাকৃতির বৌদ্ধস্তূপ পাওয়া গেছে। এখানে আরও তিনটি স্তূপ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৩ -১৪ সাল থেকে এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্য শুরু হয়। এবারের উৎখননে এর আদি পর্যায়ের অনেক অংশ পাওয়া যাওয়াই এই আবিষ্কারকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। 
আদিবাসী অর্থাৎ ইংরেজি ট্রাইব শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ট্রাইবাস থেকে। এই শব্দটি রোমানরা ব্যবহার করতো প্রযুক্তিগত ভাবে অনুন্নত গোষ্ঠী বা জনজাতি বোঝাতে। ব্রিটিশ ভারতে (ইম্পিরিয়াল গেজেট অনুসারে) আদিবাসী বলে চিহ্নিত করা হতো সাধারণ নাম বিশিষ্ট কতকগুলি পরিবারের সমষ্টিকে যারা একই ভাষায় কথা বলে, একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করে এবং মূলগতভাবে এক হলেও সাধারণত অন্তর্বিবাহকারী নয়।
বিশদ পড়ুন
আজ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষশুরুর দিনের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে উনিশ শতকের শেষ দশকে গিরিশ চন্দ্র তর্কালঙ্কার ও প্রাণ নাথ সরস্বতীর লেখা ‘ক্রনোলজিক্যাল টেবলস’ আর রবার্ট সিওয়েল ও শংকর বালকৃষ্ণ দীক্ষিতের লেখা ‘দ্য ইন্ডিয়ান ক্যালেন্ডার’ গ্রন্থদুটি থেকে প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে প্রচলিত বেশ কয়েকটি সনের নামের সন্ধান পাওয়া গেল। এদের মধ্যে কলিযুগ, সপ্তর্ষি সংবৎ বা লৌকিক অব্দ, শকাব্দ বা শালিবাহন অব্দ, মালব সংবৎ বা বিক্রম সংবৎ, বৃহস্পতি চক্র বা বার্হস্পত্য সংবৎ, বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ, ফসলি সন, বিলায়তি সন, কোল্লম আণ্ডু, আমলি সন, নেওয়ার বা নেপাল সংবৎ, এবং মগী সন এই গ্রন্থদ্বয় প্রকাশের সময় প্রচলিত ছিল।
বিশদ পড়ুন
এই লেখায় যে বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে আলোচনা হবে, তা হয়তো পৃথিবীর অন্যতম বিতর্কিত বাদ্যযন্ত্রের একটি। বাদ্যযন্ত্রের ইতিহাস-প্রিয় আজকের মানুষের মূল দৃষ্টি থাকে সাধারণত মধ্য এশিয়ার দিকে। কারণ এই অঞ্চলকেই আধুনিক যন্ত্রের আঁতুড়ঘর মনে করা হয়। সেই তুলনায় বর্তমানের ইউরোপীয় যন্ত্রগুলি আধুনিক ও তার ইতিহাস স্পষ্ট। তবে ইউরোপের এই যন্ত্রটিকে আলাদা করে উল্লেখ করার একান্ত প্রয়োজন।
বিশদ পড়ুন
নীচের ছবিটা খুব পরিষ্কার নয়, তবু একবার দেখুন। বল হাতে নিয়ে দৌড়ে আসছে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবক। আশেপাশে ছড়িয়ে রয়েছে বিপক্ষের কয়েকজন শ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়, তারা কেউ এই যুবককে আটকাতে পারেনি। রাগবি খেলার ছবি, অ্যামেরিকানরা যাকে বলে ফুটবল। রাগবি খেলা আমি বুঝি না, এ-খেলায় আমার কোনো আগ্রহ নেই। আপনাদেরও নেই নিশ্চয়ই। তবু ছবিটা একবার দেখুন। নিছক খেলার ছবি নয়, এক নিপীড়িত জাতিসত্তার মাথা তুলে দাঁড়ানোর ছবি।
বিশদ পড়ুন
ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধে যে কয়েকজন ভারতীয় পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা রসায়ন শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করলেও দেশীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ভারতীয় ঐতিহ্যকে সমগ্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ (১৮৭৭ সাধারণ অব্দ - ১৯৭১ সাধারণ অব্দ ৪ঠা এপ্রিল) ছিলেন অন্যতম। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ও ভেষজ ঔষধ প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতি হিসাবে, তাঁর দ্বারা ঢাকায় ‘সাধনা ঔষধালয়’ স্থাপিত হয় (১৯১৪ সাধারণ অব্দতে)। ভারতীয় জাতীয়তাবাদ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণা মূলক গ্রন্থ প্রকাশ, পত্র-পত্রিকায় প্রচার এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুত প্রণালীতে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন।
বিশদ পড়ুন
দুর্বাসার অভিশাপ জানি, এই তন্ত্র মন্ত্রের দেশে জবা ফুল দিয়ে বশীকরণ শুনেছি, কিন্তু রীতিমত খোদাই করে লিখে ঈশ্বরকে সাক্ষী মেনে অভিশাপ দেওয়া? না এখনও পর্যন্ত শুনিনি।
বিশদ পড়ুন
"সভার চরণে করি কোটী নমস্কার । বারমাসী পালা আমি করলাম প্রচার।।" -পালাগান শুরু হত এভাবে গায়েনের সুরে সুরে, নমস্কারে! বাংলার সাহিত্য ও শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে গায়েন সম্প্রদায়। স্মৃতিনির্ভর করে সাহিত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এদের গুরুত্ব অপরিসীম। আবার শুধু সাহিত্যই নয়, একই সঙ্গে তারা সঙ্গীতের (সুর,তাল, ছন্দ, লয়ের) সাধক ও বাহক। মধ্যযুগীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতির বেশ কিছুটা তাদের হাত ধরে আধুনিক যুগে এসে পৌঁছেছে তা আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই। মুখে মুখে কত হারিয়ে যাওয়া পুথির গান বা গীতিকা ওদের জন্য সময়ের বেড়াজাল টপকে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে..!
বিশদ পড়ুন
মার্চ, ২০২২
একটা চিঠি, বাস্তবিক উড়ো চিঠিই বলা চলে। উড়ো চিঠিই যখন, কোনও ইয়ারবন্ধুর করা প্র্যাকটিক্যাল জোক মনে করে উড়িয়ে দেওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু চিঠিটা আদ্যোপান্ত পড়ে কোথাও একটা খটকা লাগল ছেলেটার। কোথাও যেন একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছে তার সাহসিকতার পরীক্ষার জন্য। বুঝতে পেরে মুচকি হেসে চিঠিটা আরেকবার ভালভাবে পড়া শুরু করল... “যদি তুমি সত্য দেশসাধক হও, দেশহিতে জীবন বলি দেওয়ার স্পর্ধা থাকে, তাহা হইলে আগামী অমাবস্যার দ্বিপ্রহর নিশীথে শ্মশানের বটবৃক্ষ মূলে আমার সহিত সাক্ষাৎ করিও।”
প্রিয় ইমতিয়াজ, আশাকরি তুমি ভাল আছো। তোমার চিঠির উত্তর দিতে এতোটা দেরি হয়ে গেল ব’লে আগেভাগেই তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসলে ই-মেল, হোয়াটস অ্যাপের যুগে চিঠি লেখার অভ্যেস বা চিঠি পাওয়ার মজা দুটোই তো নষ্ট হয়ে গেছে, তাই সুদূর রাজশাহী থেকে তোমার ডাকটিকিট লাগানো হাতে লেখা চিঠিখানা যখন পেলাম, একটু অবাকই হয়েছিলাম। সত্যি বলতে কি, চিঠিটা খুলে পড়তে পড়তে বারে বারে ফিরে যাচ্ছিলাম ছোটবেলার সেই ডাকপিওনের দিনগুলোতে। নস্টালজিয়া যেন ঘিরে ধরছিল। তাই চিঠির মূল প্রতিপাদ্যতে মন না দিয়ে বাংলাদেশের ডাকটিকিট, সুন্দর খাম, হাতের লেখা ইত্যাদিতে বেশি মন দিয়ে ফেলছিলাম। যাইহোক, তোমার চিঠির বিষয়বস্তুতে ফিরে আসি।
বৃহত্তর তৃতীয় বিশ্বের সঙ্গে ভারতের নারীরা জাতীয় আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাদের স্বাধিকারের লড়াই শুরু করেন। জাতীয় পর্যায়ের আন্দোলনের সূত্র ধরেই বাংলা প্রদেশের অন্যতম জেলা বর্ধমানের নারী সমাজ অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হন। অহিংস আন্দোলনের এই পরিসর ছাড়িয়ে বিপ্লবী আন্দোলনেও বর্ধমানের নারীরা অগ্রসর হন। কিন্তু জাতীয় আন্দোলনের মূল ধারার এই আন্দোলন উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মহিলাদের গণ্ডি অতিক্রম করে কখনওই নিম্নবিত্ত, গরিব কৃষক রমণী থেকে নারী শ্রমিককে স্পর্শ করেনি। অথচ ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের সব থেকে শোষিত অংশ রূপে নারীরা ছিলেন সাম্রাজ্যবাদের অন্যতম শোচনীয় শিকার। রুশ বিপ্লব সঞ্জাত সমাজতন্ত্রের আদর্শ যে নতুন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার দিক নির্দেশ করছিল ও ভবিষ্যতে শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিশ্বাস তৈরি করেছিল তার ভিত্তিতে বর্ধমানেও বাম রাজনীতির বিকাশ হয়।
না, মিশর নয়, ল্যাটিন আমেরিকা বা চীনেও নয়। এই মমি পাওয়া গেছে পর্তুগালে। অবশ্য আগে বোঝা যায়নি প্রাচীন মরদেহগুলিকে মমি করা হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকে খননের সময়, দক্ষিণ পর্তুগালের সাডো উপত্যকায় পুরনো কবরে এক ডজন মানব দেহাবশেষ পাওয়া যায়। এগুলি আবিষ্কার করেছিলেন পর্তুগিজ প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যানুয়েল ফারিনহা ডস সান্তোস, ২০০১ সালে তিনি মারা যান। এগুলি ছিল ৮০০০ বছর আগের মরদেহ।
ঊনবিংশ শতকের শেষ দশকে মহারাষ্ট্রে বালগঙ্গাধর তিলকের উদ্যোগে এক নব্য হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়, সার্বজনীন গণপতি উৎসব প্রচলনের ভিতর দিয়ে। দশদিন ধরে চলা এই উৎসবে তিলক মারাঠা জাতির অতীত গৌরবময় দিনগুলি স্মরণ করা এবং শিবাজী মহারাজের বিভিন্ন কীর্তিকলাপ, ধর্মপ্রীতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনাচক্রের ব্যবস্থা করতেন।
আজ থেকে বছর দশেক আগে যখন ফেলুদা কাহিনীর শেষ উপন্যাস 'রবার্টসনের রুবি' পড়ি, তখন সত্যজিৎ রায়ের লেখার মাধ্যমে ডেভিড ম্যাককাচন সাহেবের কথা প্রথম জানতে পারি। তারপর দীর্ঘদিন পর বিদ্যাসাগর কলেজে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক শেখর ভৌমিক স্যারের একটি লেখায় ডেভিড ম্যাককাচনের উল্লেখ দেখে তাঁর প্রতি গভীর আগ্রহ তৈরি হয়। স্যারের সেই লেখাটি পড়ার পর বহুদিন কেটে গেছে, সেই সাথে আমার ডেভিড ম্যাককাচন চর্চার আগ্রহ বেড়েই চলেছে। টেরাকোটাপ্রাণ এই বিলিতি সাহেব মানুষটিকে জানার যেন কোনো শেষ নেই। তাঁর সম্পর্কে পড়তে গিয়ে দেখতে পাই তিনি ও বাংলার মন্দির টেরাকোটা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছেন।
বিশদ পড়ুন
বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায় ভাগীরথী নদীর পুরোনো গতিপথের ধারে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধ জনপদ রক্তমৃত্তিকার নাম আজ প্রায় বিস্মৃত। আদি মধ্যযুগে এই জনপদ যে বাণিজ্যকেন্দ্র হিসাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল, রক্তমৃত্তিকার প্রত্নক্ষেত্র থেকে আবিষ্কৃত প্রত্নবস্তুসমূহের অধ্যয়নে পাওয়া গেছে তার অসংশয়িত প্রমাণ। এই জনপদে স্থাপিত বৌদ্ধ মহাবিহার যে প্রাচীন বাংলায় শাস্ত্রচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছিল, চিনা পরিব্রাজক জুয়ানজ্যাং-এর বর্ণনায় তার প্রমাণও লিপিবদ্ধ। সম্ভবত বাংলায় গুপ্ত অধিকারের সময় রক্তমৃত্তিকার মহাবিহার প্রতিষ্ঠার কাল। সেই সময় থেকে অন্ত মধ্যযুগে ভাগীরথীর গতিপথ পরিবর্তনের আগে পর্যন্ত রক্তমৃত্তিকা জনপদের গুরুত্ব সম্ভবত কখনও একেবারে বিলুপ্ত হয়নি। আজও প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা জনপদের স্মৃতি বহন করে চলেছে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর ব্লকের অন্তর্গত রাঙামাটি নামের একটি গ্রাম। এই নিবন্ধের চর্চার বিষয় এই প্রাচীন জনপদের গৌরবময় ইতিহাস।
বিশদ পড়ুন
"উস তরফ মত যাইয়ে, উধার সব বন্ধ হ্যায়"। গন্তব্যস্থলে যখন পৌঁছলাম তখন বিকেল ৫'টা বাজতে আর মিনিট দশ-পনেরো বাকি ছিল। আর যা দেখার জন্য আসা, তার ঝাঁপ পড়ে যাওয়ার কথা বিকেল ৫'টায়। অতএব, হাতে সময় ছিল না বললেই চলে। পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করতে করতেই দেখে নিয়েছিলাম যে পুরো জায়গাটা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা আর আকৃতিতে তা হল ইংরেজি বর্ণমালার 'এল' অক্ষরের মত। গাড়ি থেকে নেমে খেয়াল করলাম যে যে সেই 'এল'এর একটা বাহুতে লোকজন না থাকলেও, আর এক বাহুতে বেশ কয়েকজন ঘোরাঘুরি করছে। কপাল ঠুকে সেদিকেই দিলাম হাঁটা যদি শেষ ৫-১০ মিনিটে কিছু দেখা যায় এই আশা নিয়ে। তখনই পিছন থেকে ভেসে এল অযাচিত উপদেশবাণী - "উস তরফ মত যাইয়ে, উধার সব বন্ধ হ্যায়"।
বিশদ পড়ুন
স্বাধীনতা-পূর্ব যুগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইতিহাসে আরো অনেক ব্যক্তিত্বের নাম পাওয়া যায়। তাঁদের কয়েকজনকে আমরা ভুলে গেছি, কয়েকজনকে হয়তো মনে রেখেছি। তাঁরা সবাই কিন্তু ভুলে যাওয়ার মতো মানুষ নন। এ কথা অনস্বীকার্য যে রামন, মেঘনাদ বা সত্যেন্দ্রনাথের মতো মৌলিক অবদান তাঁরা বিজ্ঞানে রাখেননি; কিন্তু আজকে দেশের প্রায় যে কোনো বিজ্ঞানীর থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁদের পরিচিতি মোটেই কম ছিল না। সব থেকে বড় কথা হল এঁদের প্রত্যেককেই নিজেদের গবেষণাগার একেবারে গোড়া থেকে তৈরি করতে হয়েছিল, দেশে তাঁদের পথ দেখানোর মতো বিজ্ঞানী বিশেষ কেউ ছিলেন না। আমাদের লেখাতে আগে বিভাগের এই সমস্ত ব্যক্তিত্বের নাম এসেছে, এই পর্বে আমরা তাঁদের কাজের খুব সংক্ষিপ্ত পরিচয় রাখব। তবে শুরু করব এমন একজনের কথা দিয়ে যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো পড়ানোর সুযোগ পাননি।
বিশদ পড়ুন
ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৮২০ সাল, এদেশে বিদ্যাসাগর জন্মালেন। সেই বছরেই ব্রিটেনে এক সম্ভ্রান্ত, সম্পত্তিবান পরিবারে জন্মাল একটি মেয়ে। সেই মেয়ে বড় হয়ে হল এক নার্স। উঁচু ঘর থেকে আসা প্রথম সেবিকা। ভারতের প্রথম মহিলা ডাক্তার জন্মেছেন এরও ৪১ বছর পরে।
এদের মধ্যে সত্যিই কি কোন আবশ্যিক সম্পর্ক আছে ? থাকলেও তা কি সুদূরপরাহত ? না কি নিছকই সমাপতন? একটু খতিয়ে দেখা যাক। “ইনফ্লুয়েঞ্জা” কথাটা প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ইটালিতে; শব্দটার উৎপত্তি মধ্যযুগের ল্যাটিন ভাষার ইনফ্লুয়েন্সিয়া (influentia) কথাটা থেকে। অর্থ, ইনফ্লুয়েন্স বা প্রভাব। নক্ষত্রের। ইটালিতে, ~১৫৮০ সালে, যখন নাকি নক্ষত্রলোকের বিশেষ সহাবস্থানে জন্য মানুষ এই রোগের কবলে পড়েছিল। পরবর্তীতে, ১৭৪৩ সালে, রোম থেকে গোটা ইউরোপে যখন জ্বর আর শ্বাসকষ্টের অতিমারি দেখা দেয় এবং বহু লোক মারা যেতে থাকে, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা” কথাটা তখন আবার ঘুরে-ফিরে আসে। সংক্ষেপে আমরা তাদের বলি “ফ্লু”।
শের শাহ প্রথম ঘোড়ার ডাক প্রচলন করেন। স্কুলের ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে। তার আগে ঘোড়া ডাকতো না? রসিকতা তো বটেই। কিন্তু এটা সত্যি ঘোড়ার জাতি-বংশ রঙ স্বাস্থ্য সব এখন মানুষের নিয়ন্ত্রণে।
'পান্টি' শব্দটি বরেন্দ্রভূমির একটি আঞ্চলিক শব্দ, যার অর্থ গরু-ছাগল মাঠে চরানোর সময় রাখালদের ব্যবহৃত লাঠি। প্রকৃতপক্ষে ‘ভীমের পান্টি’ একটি গরুড় স্তম্ভ। এটির অপর নাম ‘বাদাল স্তম্ভ’। এই স্তম্ভের উপর খোদিত ‘গরুড় স্তম্ভলিপি’, ‘বাদাল প্রশস্তিলিপি’ বা ‘বাদাল শিলালেখ’ সমগ্র বাংলায় প্রাপ্ত দীর্ঘ শিলালেখগুলির অন্যতম। পাল আমলের অনেক তথ্যবাহী এই শিলালেখ বাংলার ইতিহাসের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রামাণিক দলিল।
পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ লগ্ন থেকেই পৃথিবীর নানা অঞ্চল, সমুদ্র, দ্বীপ, নতুন মহাদেশ সম্পর্কে জানাবোঝা বাড়তে থাকে ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের অভিযানগুলির হাত ধরে। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ লগ্ন থেকেই এই অভিযানগুলি আরম্ভ হয়ে গিয়েছিল এবং ষোড়শ শতকে এই অভিযান ও বাণিজ্যের সূত্রে বিভিন্ন শক্তি পরস্পরের মধ্যে সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ে। নৌ অভিযান সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ক্ষেত্রে নানা নতুন আবিষ্কার হতে থাকে, নৌ সমরবিদ্যাকেও ঢেলে সাজানোর দরকার পড়ে। পৃথিবীর মানচিত্র ও সমুদ্রচিত্র সম্পর্কে জ্ঞান বস্তুগত প্রয়োজনের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞানকে বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রযুক্তি হাতে এসে যায় গুটেনবার্গ এর ছাপাখানা আবিষ্কার (১৪৪০ খ্রিঃ) ও তার অগ্রগতির মধ্যে দিয়ে। ষোড়শ শতাব্দীতে যখন সমুদ্র অভিযানগুলি পূর্ণ মাত্রায় চলছে ও নতুন নতুন তথ্য ও পর্যবেক্ষণ হাতে আসছে, তখন দর্শনের জগতেও একটা মৌলিক বদল আনলেন ফ্রান্সিস বেকন। অ্যারিস্টটলের ধারণা ও নির্ধারণবাদভিত্তিক দর্শনের জায়গায় বেকন বললেন পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষালব্ধ জ্ঞানের ভিত্তিতে সত্যে উপনীত হবার কথা। এটাই ছিল আধুনিক বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মূল ভিত্তি।
আরইউন অ্যাকারনেখট বলেছেন ১৮৪৮ সাল থেকে লুই পাস্তুর এবং ক্লদ বার্নার্ডের হাত ধরে মেডিসিনের উত্তরণ ঘটে “হসপিটাল মেডিসিন” থেকে “ল্যাবরেটরি মেডিসিন”-এ – “In 1848, a new medicine, “laboratory medicine,” made its appearance in Paris under the leadership of Louis Pasteur, Claude Bernard, and the Societe de Biologie.”। (Erwin Ackernecht, Medicine at the Paris Hospital 1794-1848, p. xiii)
বিশদ পড়ুন
অশোকের (৩০৫ -২৩২ সাধারণ পূর্বাব্দ) রেখে যাওয়া শিলানুশাসনগুলি তার কীর্তির অনন্য স্বাক্ষর। হরপ্পীয় অপঠিত লেখর পরে এই প্রথম ভারতবর্ষে কোন লিখিত পুরাদ্রব্য পাওয়া গেল। শিলানুশাসনগুলি খোদিত হয়েছে প্রাকৃত, ইন্দো-আরমীয় ও গ্রিক ভাষায়। এগুলিতে ব্রাহ্মী, খরোষ্ঠী, গ্রিক ও আরমীয় লিপি ব্যবহার করা হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
২০২১ সালে মহা ধুমধাম সহযোগে পালিত হল আমাদের দেশ ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি, তাকে আমরা লাভ করেছি লক্ষ লক্ষ মানুষের শোণিতের বিনিময়ে। বহু ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের আত্মত্যাগের এই অর্জন। আমাদের দুর্ভাগ্য এই অসংখ্য মানুষের অধিকাংশই দেশবাসী কর্তৃক বিস্মৃত। তাঁদের জীবন, তাঁদের সংগ্রাম আলোচনার বাইরেই থেকে যায়। এমনই এক মানুষ, চট্টগ্রামের সুবোধ রায়, প্রখ্যাত বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সুযোগ্য শিষ্য। তাঁর স্বাধীনতা পূর্ব জীবন ও সংগ্রামে আলোকপাত করার উদ্দেশ্যেই এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধের অবতারণা। বিপ্লবী সুবোধ রায়ের স্বাধীনতা পরবর্তী জীবনের আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে সম্ভবপর না। এই কারণে এই বিশ্লেষণ তাঁর স্বাধীনতা পূর্ববর্তী কার্যকলাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিশদ পড়ুন
জানুয়ারি, ২০২২
আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে যখন মানুষ ছবি তুলত না তখন দূর দূরান্তের মানুষ কীভাবে দেখত সে যুগের বিখ্যাত সৌধগুলোকে? প্রতিকৃতির মাধ্যমে। আর যখন একটা সৌধ কোন যুগের বিশ্ববিখ্যাত একজন মানুষকে নিয়ে, তাকে ঘিরে দেশ-বিদেশের লোকের আগ্ৰহ থাকবেই। মহাবোধি মন্দির চিরদিনই দেশ-বিদেশের বৌদ্ধদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বুদ্ধগয়ার সেই পিপুলগাছ, যার নিচে বুদ্ধর নির্বাণলাভ, তাকে ঘিরেই এই মন্দির।
৩০ জুন কাছে এলেই হুল দিবসের কথা মনে আসে। ‘হুল’ শব্দের অর্থ বিদ্রোহ। এই কথাটা আমরা প্রথম জানতে পারি বিদ্রোহের সমসময়কার ইতিহাসকার দিগম্বর চক্রবর্তীর লেখায়। তিনিই সাঁওতাল বিদ্রোহ সম্পর্কে প্রথম ভারতীয় ইতিহাসকার। দিগম্বর চক্রবর্তী (১৮৪৯-১৯১৩) লিখেছেন, 'হিস্ট্রি অব দি সান্থাল হুল'। রচনাকাল ১৮৯৫-৯৬। এই ব‌ইটি প্রথম মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয় ১৯৮৮ সালে। দিগম্বর চক্রবর্তী ছিলেন পাকুড় কোর্টের আইনজীবী। বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাঁর না থাকলেও যাদের ওই অভিজ্ঞতা ছিল তাদের মুখে তিনি ঘটনা শুনেছিলেন। যেমন সিধু কানুর বাবা চুনু মুর্মুর মুখে তিনি শুনেছেন। যে পাকুড়ের সুদখোর মহাজন দীনদয়াল রায়কে শ্মশান কালীতলায় বলি দিয়েছিল সেই জগন্নাথ সর্দারের মুখ থেকে শুনেছেন। শুনেছেন দীনদয়ালের বলির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শিনী ভগিনী বিমলা দেবীর মুখে। প্রচলিত অর্থে দিগম্বর চক্রবর্তী ঐতিহাসিক ছিলেন না। কিন্তু তাঁর বর্ণনা ইতিহাসের উপাদান। তিনি তাঁর গ্রন্থে 'হুল' শব্দের ব্যবহার‌ও করেছেন ঐতিহাসিক ভাবে। বিদ্রোহীদের প্রতি তাঁর ছিল সহানুভূতির স্পর্শ। 'হুল' শব্দের এমন মর্যাদাপূর্ণ ব্যবহার এবং স্বীকৃতি তাঁর আগে কেউ করেননি।

‘সত্য আর মিথ্যা এসে বিবাহে বসেছে একাসনে’

ভারতের ইতিহাস চর্চার এক অভাবনীয় পর্বের যবনিকা প্রতিদিন উন্মোচিত হচ্ছে। ভারতে প্রযুক্তিবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ মানের উচ্চশিক্ষার জন্য নির্মিত প্রতিষ্ঠান আজ এক বিচিত্র ইতিহাস চর্চা নিয়ে ব্যস্ত। প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থানের সেই ইতিহাস চর্চা থেকে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধ অপসৃত হয়েছে গহন তমিস্রায়; অন্ধ বিশ্বাস আর ধর্মীয় বিদ্বেষ আছন্ন করেছে মনন। প্রচণ্ড প্রচারের মাধ্যমে ক্রমশ এক সম্মোহনী মায়ায় অস্বচ্ছ করে দেওয়া হচ্ছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ – ঔপনিবেশিক শাসনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে দেশের পরাধীনতার কালপর্বকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক সহস্রাব্দ পূর্বে। পরাধীনতার দিনগুলিতে বিদেশি শাসককুলের সঙ্গে তাদের দেশি সহযোগীদের গলাগলির ইতিহাসকে জনমানস থেকে মুছে দেবার জন্য এক বুদ্ধিদীপ্ত ভোজবাজির খেলা চলছে!

বৌদ্ধ ধর্মের মতোই ভারতভূমির এক প্রাচীন ধর্ম হলো জৈনধর্ম। এর আগে বুদ্ধদেব ও বৌদ্ধ সাহিত্য বিষয়ে যখন লিখেছিলাম সেসময়ই জৈন সাহিত্য বিষয়ে লেখার ইচ্ছা মনের মধ্যে ছিলই। বাঙলায় জৈন ধর্ম, দর্শন বা সাহিত্য বিষয়ে আলোচনা এমনিতেই অতি কম, তবে সম্প্রতি নবাঙ্কুর মজুমদার এবং ডঃ অভিজিৎ ভট্টাচার্য - এই দুই বিদগ্ধ বন্ধুর চর্চা দেখে উৎসাহিত হই।
বিংশ শতাব্দীর একটি প্রতিবাদী ও সংস্কারবাদী শিল্পধারা হলো গণসংগীত। চল্লিশের দশকে বাংলায় গণসংগীত আন্দোলন ছিল একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অঙ্গ। শুধু গানে নয়, শিল্প-সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রেই চল্লিশের দশকে বেশ একটু লক্ষণীয় বিকাশ ঘটেছিল, যাকে সাধারণত বলা হয় বামপন্থী বা মার্কসবাদী সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
গত দুই দশকে ইউরোপ ও আমেরিকায় (বিশেষত ইংরেজি ভাষায়) বইয়ের ইতিহাস নিয়ে যে ধরণের গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, সেই আলোচনাই হয়তো পরবর্তী কোন এককালের ইতিহাসের বিষয়বস্তু হবে। অতীতের বইকে আমরা দেখছি নানান দৃষ্টিকোণ থেকে, আমার আজকের যে ইতিহাস নির্মাণের প্রক্রিয়া সেও ক্রমশ ভিন্ন রূপ নিচ্ছে। যেহেতু বইয়ের বিষয়বস্তুর উপর সাহিত্যের সরাসরি দখল, তাই এতদিনের বইয়ের মূল্যায়ন বলতে ছিল মূলত সাহিত্যকেন্দ্রিক। বর্তমানে কাগজ, হরফ, ছাপা, বাঁধাই, বিপণন, এমনকি ছাপা যন্ত্রেরও ইতিহাস খুঁজে দেখা হচ্ছে। কোডিকোলজি বা গ্রন্থবিদ্যা নিয়ে এই সময়ের অনুসন্ধান আমাদের আগ্রহী করে। তেমন কাজে সারা ওয়ার্নার আজ আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি নাম। এই প্রবন্ধে মূলত তার লেখাকে কেন্দ্র করেই বইয়ের ইতিহাসের আলোচনা হবে।
বিশদ পড়ুন
১৯৪৭-এর দেশভাগ ও তার সহগামী বর্বর ও ভয়ঙ্কর দাঙ্গা সত্ত্বেও ভারতের মানুষ সংবিধানে প্রতিষ্ঠিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে মৌলিক মূল্য রূপে গ্রহণ করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ও সমাজ স্থাপনের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। গান্ধিজির আত্মবলিদান, ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি নেহরুর অখণ্ড আনুগত্য এবং মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহ্যের প্রভাবে ১৯৫০–এর দশকে সাম্প্রদায়িকতা সুপ্ত শয়ানে ছিল; কিন্তু সাম্প্রদায়িক তাত্ত্বিকরা তাদের কাজ করে যাচ্ছিল১। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক একটি রাষ্ট্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা স্থাপিত হওয়ার পর ও নানা কারণে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় গণ্ডিকে কেন্দ্র করে সম্প্রদায়গত স্বাতন্ত্র্যবোধকে প্রকট করে তুলেছে, তাতে অসহিষ্ণুতা ক্রমবর্ধমান হয়ে কোন কোন স্থানে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের রূপ ধারণ করেছে, সংবিধানের মৌল আদর্শ বিপর্যস্ত হচ্ছে২।
বিশদ পড়ুন
গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকের শেষে স্থাপিত প্যারিসের সিনে ক্লাবগুলি দেশের জনসাধারণের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্রের শিল্পের পরিচয় করাতে চেয়েছিল। উদ্দেশ্য সফল হওয়া এই ক্লাবগুলি ফ্রান্সের সমাজজীবনে বিশেষ প্রভাব বিস্তারও করেছিল। এই ক্লাব থেকেই উঠে এসেছিল সমালোচক আঁন্দ্রে বাজাঁ, উঠে এসেছিল ফরাসি মাসিক চলচ্চিত্র পত্রিকা ‘Cahiers du Cinema’ ও ‘positive’। উঠে এসেছিল গদার, ক্রুফো, রোমার, রিভেত এর মত বিখ্যাত সমালোচক ও পরিচালক। এই সিনে ক্লাবগুলি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন কলকাতার কিছু শিক্ষিত যুবক। তাঁরা কেউ সাংবাদিক, কেউ বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মী, কেউ আর্ট ডিরেক্টর তো কেউ সাহিত্যিক ছিলেন। সাহিত্য, থিয়েটার ও অন্যান্য চারুকলার পাশে চলচ্চিত্রকে স্থান দিতে চলচ্চিত্র নিয়ে মননশীল চর্চার প্রয়োজন অনুভব করলেন। বিনোদন ও বাণিজ্যিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে সুস্থ সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে এই যুবকরা ফিল্ম সোসাইটি স্থাপন করার কথা ভাবলেন। আর ভারত স্বাধীন হবার একমাস কুড়িদিন পর ১৯৪৭ সালের ৫ অক্টোবর খোদ কলকাতাতেই স্থাপন করলেন ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি।
বিশদ পড়ুন
সমাহিত করার সময় শিকল খোলা হয়নি। নিরুপায় হয়ে শিকল পরা অবস্থাতেই সমাহিত করা হয়েছিল, অবহেলায় বা আক্রোশে আজ তা গবেষণার বিষয়। খ্রিস্টিয় প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর কয়েকশো এমন কবর পাওয়া গেছে দক্ষিণ পশ্চিম ফ্রান্সের কবরস্থানে। প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি অনুযায়ী সমাধিগুলি রোমান যুগের। আশ্চর্যের বিষয়, এই কবরগুলির মধ্যে বেশকিছু কবরে দুটি করে মৃতদেহ রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা খনন করে যে পাঁচটি মৃতদেহ বার করেছেন তার মধ্যে একটি শিশুর মৃতদেহ।
বিশদ পড়ুন
ইতিহাস আড্ডা পোর্টাল ও ইতিহাস তথ্য ও তর্ক গ্রুপের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্বাধীনতার যাত্রাপথের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতা ও তার পরবর্তী কালের বিভিন্ন গণ-আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপচারিতা এরই একটি অংশ। এই পর্বে আমাদের আলাপচারিতা শ্রমিক-কর্মচারী আন্দোলনের এক উল্লেখনীয় ব্যক্তিত্ব চন্দ্রশেখর বসুর সঙ্গে। ইতিহাস আড্ডার পক্ষে এই আলাপচারিতায় অংশগ্রহণ করেছেন কৃশানু নস্কর।
বিশদ পড়ুন
প্রথম যুগের বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র পাল লিখেছিলেন, "নবগোপাল মিত্র এবং তাঁহার বন্ধু ও গুরুস্থানীয় রাজনারায়ণ বসু মহাশয়, ইঁহারাই বাংলার 'স্বদেশী'র প্রথম পুরোহিত।"১ বস্তুত, ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে স্বাদেশিকতার ভাব জাগরণ ও জাতীয় চেতনার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮৬৭ সালের ১২ই এপ্রিল রাজনারায়ণ বসুর প্রেরণায় এবং জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহপাঠী 'ন্যাশনাল পেপার'এর সম্পাদক নবগোপাল মিত্র চৈত্রমেলা নামে একটি জাতীয় মেলার সূচনা করেন। ঘটনাটির সময়কাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারত সভা স্থাপিত হওয়ার প্রায় বছর দশেক আগে। পরবর্তীকালে এরই নামকরণ হয় হিন্দুমেলা।
বিশদ পড়ুন
ডিসেম্বর, ২০২১
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিদ্যা বিভাগের সব থেকে পরিচিত ত্রয়ীর অন্যতম হলেন সত্যেন্দ্রনাথ। রামন বা ডি এম বোস শিক্ষক হিসাবেই যোগ দিয়েছিলেন; কিন্তু ক্লাস যখন শুরু হয় তখন তাঁদের দুজনের কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না। তখন শিক্ষক হিসাবে ফণীন্দ্রনাথ ঘোষ ও যোগেশচন্দ্র মুখার্জির পাশাপাশি কয়েকজন গবেষক ছাত্রকেও ক্লাস নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, শৈলেন্দ্রনাথ ঘোষ, শিশিরকুমার মিত্র ও অবিনাশচন্দ্র সাহা। প্রথম তিনজনকে স্যার আশুতোষ নিজে ডেকে পড়ানোর দায়িত্বও দিয়েছিলেন। শৈলেন্দ্রনাথ অবশ্য পড়ানোর সুযোগ পাননি, আগেই বলেছি যে বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগের কারণে তাঁকে দেশত্যাগ করতে হয়। এই পর্বে আমরা সত্যেন্দ্রনাথের সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করব। প্রথম পর্বে ১৯১৬ থেকে ১৯২১ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন, এরপর চলে যান ঢাকাতে। আবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ফেরেন ১৯৪৫ সালে। সত্যেন্দ্রনাথের বিশ্বখ্যাতি যে বিশেষ গবেষণাটির জন্য, তা কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে করা নয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে বৈদিক জনগোষ্ঠীদের বিবাহের ধারণা সম্পর্কে প্রাচীনতম উল্লেখ রয়েছে ঋগ্বেদের বিবাহ সূক্তে (১০.৮৫)। সাধারণপূর্বাব্দের প্রথম সহস্রাব্দ জুড়ে রচিত বৈদিক সাহিত্য থেকে তৎকালীন বৈদিক জনগোষ্ঠীদের মধ্যে বিবাহ সম্পর্কিত ধারণার ক্রমিক বিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই সহস্রাব্দের শুরুর দিকে রচিত কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার সংহিতায় (৬.১.৬.৬) উল্লেখ করা হয়েছে পিতা তাঁর কন্যাকে অন্য একটি পরিবারকে দান করেন (অর্থাৎ, কোন ব্যক্তিকে নয়)। এর বেশ কয়েক শতাব্দী পর, এই প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতিধ্বনি শোনা যায় এই তৈত্তিরীয় শাখারই আপস্তম্ব ধর্মসূত্রে (২.১০.২৭.৩), যেখানে বলা হয়েছে, নারীদের অন্য একটি কুলে দান করা হয় (কোন ব্যক্তিকে নয়)। আদি মধ্যযুগে লেখা স্মৃতিচন্দ্রিকা গ্রন্থে অধুনালুপ্ত বৃহস্পতির ধর্মশাস্ত্র থেকে উদ্ধৃত শ্লোকেও এই রীতির উল্লেখ রয়েছে। মহাভারতে উল্লিখিত দ্রৌপদীর সঙ্গে পঞ্চ পাণ্ডব ভ্রাতাদের বিবাহও এই প্রাচীন প্রথার স্মারক। সংস্কৃতে ‘দেবর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থও এই প্রাচীন বিবাহ প্রথারই ইঙ্গিতবাহক।
হাসপাতাল মানবেতিহাসের অতি প্রাচীন মানবিক সংগঠনগুলোর একটি। এবং এর ইতিহাসও অতি প্রাচীন। আজ থেকে প্রায় ২০০০ বছর আগে এলিয়াস অ্যারিস্টিডিস বলছেন – “Neither belonging to a chorus nor sailing together nor having the same teacher is as great a thing as the boon and profit of being a fellow pilgrim to the temple of Asclepius and being initiated into the first of the holy rites by the fairest and most perfect torch-bearer and leader of the mysteries.” (Guenter B. Risse, Mending Bodies, Saving Souls: A History of Hospital, 1999, পৃঃ ১৫)
পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে খাইবার পাকতুনখোয়া প্রদেশে সোয়াত উপত্যকা। ঐতিহাসিক গান্ধার অঞ্চলের একাংশ হল এখানে। বৌদ্ধ সংস্কৃতির এক প্রাচীন পীঠস্থান এই সোয়াত উপত্যকা যেখানে ছড়িয়ে আছে অজস্র বৌদ্ধ স্তূপ ও বিহারের ধ্বংসাবশেষ। এদের বেশিরভাগই কুষাণযুগে তৈরি, তবে কুষাণদের আগেও এখানে বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক প্রচলন ছিল। কুষাণদের আগে এখানে রাজত্ব করেছে শকরা (প্রথম শতাব্দীতে), তারও আগে ইন্দো-গ্ৰীকরা (তৃতীয় থেকে প্রথম সাধারণ পূর্ব শতাব্দী)।
বৈশালী নগরীর উপকণ্ঠে ক্ষত্রিয়কুণ্ডপুর গ্রাম। সমৃদ্ধি ও ব্যাপ্তির দিক থেকে এক ছোটখাটো উপনগরী বলা চলে। কাল আনুমানিক ৫৬৯ সাধারণ পূর্বাব্দ। সিদ্ধার্থ গৌতমের মহাভিনিষ্ক্রমণ হতে আরো ৩৫ বছর বাকি। সেই দিনটি ছিল মার্গশীর্ষ মাসের কৃষ্ণা দশমী তিথির উত্তর ফাল্গুনী নক্ষত্রের দিনমান। সময় চতুর্থ প্রহর। সূর্য অস্তাচলে যাবার সময় হয়েছে। সমগ্র নগরী সেদিন সুদৃশ্য পত্র পল্লব পুষ্পমালায় সুসজ্জিত। নগরের পুরবাসীগণ সেই প্রাক সন্ধ্যা কালে উৎসব মুখর, কিন্তু তাদের মন বিষাদগ্রস্ত। ত্রিশ বছর বয়সী রাজকুমার বর্ধমান যে শ্রমণ দীক্ষা গ্রহণ করতে চলেছেন।
(অধ্যাপক রণবীর চক্রবর্তী ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাসের অধ্যাপক-গবেষকদের মধ্যে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রাচীন যুগে ভারতের আর্থিক ও সামাজিক ইতিহাস এবং ভারত মহাসাগরে সমুদ্র বাণিজ্যের ইতিহাস। পরবর্তীকালে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর হিস্টোরিক্যাল স্টাডিজ-এ দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করেন। বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লিখেছেন অথবা সম্পাদনা করেছেন বহু গ্রন্থ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কতগুলো গ্রন্থ হল- A Sourcebook of Indian Civilization, Trade in Early India, Trade and Traders in Early Indian Society, Warfare for Wealth: Early Indian Perspective, Exploring Early India up to c. AD 1300, The Pull Towards the Coast and Other Essays, ভারতের ইতিহাস-আদি পর্ব, প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে)
বিশদ পড়ুন
চিকিৎসা ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের উৎসাহ কেবলমাত্র তাত্ত্বিক জিজ্ঞাসুর মতো ছিল না। শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় শুরুর আগে থেকে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্র পড়েছেন ও চিকিৎসা করেছেন। আর শান্তিনিকেতনে বিদ্যালয় স্থাপনের পরে সেটা তাঁর আর পাঁচটা কর্তব্যের মধ্যে অন্যতম কর্তব্য হয়ে উঠেছিল।
বিশদ পড়ুন
একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র রাজনীতি অন্যতম চর্চিত বিষয়। সমাজের একটা অংশের মানুষ, ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে কট্টর বিরোধী। তাদের মতে ছাত্রদের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকাটা অপ্রয়োজনীয়। সরকার বা প্রশাসনের উচিত ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা। আর একাংশের মানুষ ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্র রাজনীতিকে ছাত্রদের অধিকারস্বরূপ ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছাত্র রাজনীতিকে শুধু অধিকার হিসাবে দেখলে তা নিতান্তই ক্ষুদ্র দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় হবে। অপরদিকে ছাত্র আন্দোলন নিষ্প্রোয়জন বা ছাত্রদের রাজনীতির বাইরে রাখার তত্বটাও কোনওভাবে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না। এই দুটি অংশের বাইরে আর একটি অংশ আছে, যে অংশটি ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আগে থেকে স্বাধীনতার কয়েক বছর পর পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলনকে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের ছাত্র রাজনীতিকে আর প্রাসঙ্গিক হিসাবে দেখেন না। কারণ হিসাবে, ছাত্র রাজনীতি ও আন্দোলনের ধারার পরিবর্তনকে দায়ী করার চেষ্টা করেন।
বিশদ পড়ুন
ডাচ ফুটবল খেলোয়াড় রুড গুলিটকে মনে আছে? গুলিটকে বলা হত ব্ল্যাক টিউলিপ। সমকালীন পৃথিবীর অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তবে শুধু খেলোয়াড় নয়, তিনি ছিলেন এক কণ্ঠস্বর, লাখো মানুষের আওয়াজ তৈরি হত তাঁর নেতৃত্বে।
বিশদ পড়ুন
হরপ্পা সভ্যতার সাধারণ পরিচিতি ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা। এই পরিচিতির সূত্র ধরে আমরা ভাবতে পারি হরপ্পা সভ্যতায় ব্রোঞ্জ শিল্পের উন্নতি যথেষ্ট উন্নত পর্যায়ে গিয়েছিল। এবং হরপ্পান কারিগরেরা ব্রোঞ্জ শিল্পে দক্ষ হস্ত ছিলেন। আর ভাবা যেতে পেরে হরপ্পা সভ্যতার যুগে লোকের হাতে হাতে ছিল ব্রোঞ্জের নানা উপকরণ ও হাতিয়ার। হরপ্পা সভ্যতা থেকে পাওয়া ব্রোঞ্জের মূর্তি বা নানা উপকরণ সেই ধারনাকেই জোরদার করবে। তামা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই। সেই মেহেরগড় থেকেই তামার ব্যবহার চলছে। সোনা রূপারও ব্যবহারও হরপ্পা সভ্যতায় ছিলই। সব মিলিয়ে যে ছবি ফুটে ওঠে তা হরপ্পা সভ্যতার আমলের প্রচলিত সব ধাতুরই ব্যবহার হরপ্পা কারিগরদের জানা ছিল এবং ব্যবহারও হতো।
বিশদ পড়ুন
রাজকুমার সিদ্ধার্থ তাঁর স্ত্রী, পুত্র ও রাজৈশ্বর্য পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছিলেন জরা, ব্যাধি, মৃত্যু ও দুঃখ থেকে মুক্তির পথ(মার্গ) খুঁজতে। কঠিন সাধনার পর বোধিপ্রাপ্ত হয়ে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন তথাগত বুদ্ধ- এই গল্পটা আমাদের সকলেরই জানা। তাঁর প্রথম জীবনের এই গল্প অত্যন্ত জনপ্রিয়ও বটে। তবে তাঁর মহাভিনিষ্ক্রমণের পরবর্তী জীবন, দুর্গম তপস্যার পথ, তাঁর বোধিপ্রাপ্ত হওয়া, নতুন পথের সঙ্গী পাওয়া, তাঁর উপদেশ সমূহ নিয়ে সাধারণের মনে আগ্রহ তুলনামূলক কম। তথাগত বুদ্ধের জীবনকে দুটি ভাগে অনায়াসে ভাগ করা যায়। প্রথমটি বোধিপ্রাপ্ত হওয়ার আগের জীবন আর দ্বিতীয়টি বোধিপ্রাপ্তের পরের জীবন। তথাগত বুদ্ধের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ জীবনের দ্বিতীয় ভাগের পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ‘নমো তস্স’ বইয়ের মূল বিষয়। এই বইটিতে রাজপুত্র সিদ্ধার্থকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। ২২৩ পাতা জুড়ে আছেন শুধুই তথাগত বুদ্ধ। আলোর উদ্দেশে ভগবান বুদ্ধের কঠিন যাত্রাপথ গল্পাকারে বর্ণিত।
বিশদ পড়ুন
নভেম্বর, ২০২১
ঋগ্বৈদিক যুগে ভারতের আর্য (ভাষাভাষী) মানুষের বসতির প্রথম কেন্দ্রস্থল উত্তর পশ্চিম অঞ্চল। ঋগ্বেদ সংহিতার উপাদান থেকে যে চিত্র পাওয়া যায়, তার ভৌগোলিক পরিসর হল আফগানিস্তান, পাঞ্জাব, সিন্ধুপ্রদেশ, রাজপুতানার অংশবিশেষ, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, কাশ্মীর এবং সরযূ নদী পর্যন্ত বিস্তৃত পূর্বাঞ্চল। এই অঞ্চলের নদীগুলো হল রসা, কুভা (কাবুলে), কোরাম, গোমতী, সুবাস্তু (সোয়াত উপত্যকা), সিন্ধু, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী, বিপাশা, শতদ্রু, সরস্বতী, যমুনা, গঙ্গা প্রভৃতি।
আগের দু’পর্বে আমরা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজ্ঞান কলেজ, এবং পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাকস্বাধীনতা যুগ নিয়ে কিছু কথা বলেছি। বিভাগের প্রথম তিরিশ বছরকে যদি মোটামুটি সমান দু ভাগে ভাগ করি, তার প্রথমার্ধকে (১৯৩৩ পর্যন্ত) রামন যুগ নাম দিলে অন্যায় হয় না। এই সময়ে সত্যেন্দ্রনাথ, মেঘনাদ, দেবেন্দ্রমোহন, শিশির মিত্র সকলেই পড়িয়েছেন, ভারতে বিজ্ঞানের ইতিহাসে এঁদের প্রত্যেকের নামই নিজের প্রতিভায় ভাস্বর, কিন্তু তা হলেও বিভাগের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন রামন। আগেই বলেছি, রামন ১৯১৪ সালেই পালিত অধ্যাপক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, কিন্তু সরকারী চাকরি ছেড়ে যোগ দিতে দিতে ১৯১৭ হয়ে গিয়েছিল। ১৯৩৩ সালে কলকাতা ছেড়ে রামন বাঙ্গালোর চলে যান, ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সের অধিকর্তা হয়ে। এই ষোলো বছর রামন পালিত অধ্যাপক এবং সেই সুবাদে বিভাগীয় প্রধান ছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর কালটিভেশন অফ সায়েন্সে নিজের চারদিকে তরুণ গবেষকদের গোষ্ঠী গড়ে তুলেছিলেন, এবং নিয়মিত প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। ১৯৩০ সালে তিনি এশিয়ার প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে নোবেল পুরস্কার পান, ভারতে রবীন্দ্রনাথের পর দ্বিতীয়।
এখানে জঙ্গল খুব ঘন। চারিদিকে ছোট ছোট নদী নালা। গাছপালা নালার উপরে ঝুঁকে পড়েছে। নালার জল প্রায় দেখা যায় না। আজ সকালে গাঁয়ের দশ-বারোজন মউলি মধু সংগ্রহের জন্য গাঁ থেকে বেরিয়েছে। সোঁদর বনের মউলি ওরা। ওদের কোমরে আছে টাঙ্গি, পিঠে থলি আর হাতে পাকা বাঁশের মোটা লাঠি। পোঁটলাপুঁটলি নিয়ে সঙ্গে আছি আমি। শেষ বেলায় গাছের ছায়ায় চারিদিকে ঝুপসি অন্ধকার। বন প্রায় নিস্তব্ধ। একেবারে শব্দহীন। গাছের কোটরে দু-চারটে পাখি ডেকে উঠছে।

নভেম্বর মাস বিপ্লবের মাস। ১৯১৭ র পর থেকে যখন রুশ ক্যালেন্ডারে বদল হল, তখন এগারো দিন এগিয়ে এসে অক্টোবর বিপ্লব নামে কথিত রুশ বিপ্লব নতুন নাম পরিচয় পেল। তার নাম হল নভেম্বর বিপ্লব।

নভেম্বর বিপ্লব এমন এক বিশ্বব্যাপী প্রেরণা ছিল, যে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে গড়ে উঠল কমিউনিস্ট পার্টি। কোথাও তারা সাফল্যের সঙ্গে অনেকটা এগিয়ে গেল, আবার কোথাও শাসক শ্রেণি তাকে রুখে দিতে পারল।

'পেশিটা' হল সিরিয়াক বাইবেল। মূলগতভাবে আরামাইক ভাষায় লেখা। পৃথিবীর অধিকাংশ খ্রিষ্টানই গ্ৰীক বাইবেলের অনুবাদ পাঠ করে, কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের যে শাখাগুলো সিরিয়া বা আসিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত তারা পেশিটা বা সিরিয়াক বাইবেলের অনুবাদ পাঠ করে। এই শাখাগুলির বেশিরভাগই কেরলে আর মধ্যপ্রাচ্যে। এই শাখাগুলি হল কেরলের সিরো-মালাবার ক্যাথলিক, জেকোবাইট সিরিয়ান অর্থোডক্স, মলঙ্কর অর্থোডক্স, মার থোমা ইত্যাদি, আর মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়ান অর্থোডক্স আর আসিরিয়ান চার্চ অফ ইস্ট। পেশিটা গ্ৰীক বাইবেলের থেকে কিছুটা আলাদা। এটি যীশুর মাতৃভাষা আরামাইকে লেখা। কারো কারো মতে এটি গ্ৰীক বাইবেলের থেকে কিছুটা পুরোনো- যদিও সেটা নিয়ে সংশয় আছে- গ্ৰীক বাইবেলকেই সবচেয়ে পুরোনো বাইবেল বলে ধরা হয়।
ইতিহাস আড্ডা পোর্টালের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্বাধীনতার যাত্রাপথের যে বিভিন্ন আঙ্গিক তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে, ১৯৪৭ ও তার পরবর্তী কালের বিভিন্ন গণ আন্দোলনের সাথে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে আলাপচারিতা তার একটি অংশ। এই পর্বে আমাদের আলাপচারিতা ভারতীয় গণনাট্য আন্দোলনের এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব অমল গুহের সঙ্গে। ৮৬ বছর বয়সি অমল গুহ আজও বয়সের তোয়াক্কা না করে সাংস্কৃতিক আন্দোলন, বিশেষত নাট্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। তাঁর বয়স এবং করোনা অতিমারির কথা চিন্তা করে সামনাসামনি না হয়ে দূরভাষেই এই আলাপচারিতা সারা হল। ইতিহাস আড্ডার পক্ষে এই আলাপচারিতায় অংশগ্রহণ করেছেন নবাঙ্কুর মজুমদার।
বিশদ পড়ুন
রাজ্যের রাজধানী রাঁচির কাছেই গুমলা। পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা এই অঞ্চল আদিবাসীদের বাসভূমি। আদিবাসীদের মধ্যে ওঁরাও সম্প্রদায়ের সংখ্যাধিক্য। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এই অঞ্চলের 'চিংড়ি নাভাটোলি' গ্রাম থেকে ওঁরাও সম্প্রদায়ের মধ্যে এক নব জাগরণ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। গ্রামের পঁচিশ বছরের তরতাজা যুবক 'যাত্রা ওঁরাও' ছিলেন এই জাগরণের হোতা। ১৯১৪ সালে যাত্রা ওঁরাও ঘোষণা করেন, তাঁদের দেবতা 'ধর্মেশ'- এর কাছ থেকে তিনি 'ওঁরাও' রাজ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ পেয়েছেন। যাত্রা বলেন ওঁরাওদের ধর্মের কলুষতা থেকে মুক্ত করতে হবে। মদ্যপান, পশুবলি, ভূত বা আত্মায় বিশ্বাস, অপদেবতা সন্দেহে নিধন বন্ধ। যাত্রা কৃচ্ছতাসাধন, নিরামিষ ভক্ষণ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন‍্য আহবান জানান। এই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। আর এই আন্দোলনের সঙ্গে অচিরেই যুক্ত হল জীবন ও জীবিকার প্রশ্নগুলি।
বিশদ পড়ুন
জ্যামিতির সাথে আমার পরিচয় বহুদিনের। সেই যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে নিরঞ্জন স্যার ( আমার অন্যতম প্রিয় শিক্ষকদের মধ্যে একজন ) কোণ রেখা বৃত্ত ত্রিভুজ ইত্যাদির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। এর সঙ্গেই পরিচয় হলো জ্যামিতির কিছু বিশেষ ধর্মের সঙ্গে। পরবর্তীকালে যেগুলোকে হয় উপপাদ্য অথবা স্বতঃসিদ্ধ বলে জানলাম। তখন অবশ্য জানা ছিল না যে জ্যামিতির ইতিহাস আদতে বুড়ি পৃথিবীর মতই প্রাচীন। সভ্যতার আদিকাল থেকেই নানা প্রাত্যহিক প্রয়োজনে, যেমন গৃহ নির্মাণ, যজ্ঞবেদী নির্মাণ অথবা বন্যার পরে ভূখণ্ডকে পুনর্বিভাজন ইত্যাদি কারণে রেখা কোণ এবং তার বৃত্তীয় পরিমাপ সংক্রান্ত টুকরো টুকরো জ্ঞান জমা পড়ছিল মানব সভ্যতার ভান্ডারে। ত্রিভুজ চতুর্ভুজ ও বৃত্তের কিছু কিছু ধর্ম আবিষ্কৃত ও ব্যবহৃত ছিল। সমকোণ আঁকার পদ্ধতিও অনেক প্রাচীন সভ্যতা বের করে ফেলেছিল। চীন, ভারত মিশর ইত্যাদি সব সভ্যতাতেই জ্যামিতিক জ্ঞানের কিছু ব্যবহার দেখা যায়।
বিশদ পড়ুন
অক্টোবর, ২০২১
এদেশে স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ এর নাট্যরূপ অভিনয়, একাধিক দলের একাধিক অভিনয়, আর স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে ১৯৬৭-তে সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন ও মোহম্মদ সোলেয়মান হোসেনের অনুবাদে ‘মা’এর সফল মঞ্চায়নের নির্দেশ দিলেন আতায়ুর রহমান ও হাসান ইমাম। মা-এর চলচ্চিত্ররূপটিও উৎপল দত্তর পরিচালনায় যথেষ্ট আদৃত হয়েছিল। মা-এর ভূমিকায় ছিলেন শোভা সেন। দার্জিলিং চা বাগানের পটভূমিতে নেপালী ভাষায় নির্মিত ‘মা’ চলচ্চিত্র।
১৯৯৭ সালে ফ্রঁসোয়া ফুহ্রের মৃত্যুর পর তার জীবন ও লেখাপত্র নিয়ে মিশেল মোসাহ্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বর্ণনা করেছিলেন। সেই লেখাটিতে বাকি সব কথার বাইরেও কেবল একটি বাক্যবন্ধে ফুহ্রের সারাজীবনের প্রচেষ্টার অনেকটা ব্যাখ্যা করেছিলেন তিনি, ‘Leader of The Exodus of French intellectuals from Marxism’.
'মৈমনসিংহ গীতিকা' কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যজগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মৈমনসিংহ জেলা থেকে সংগৃহীত দশটি পালাগানের এই সঙ্কলনটি শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বিদেশের সাহিত্য জগতেও সমাদৃত হয়েছিল। এর মূল কারণ ছিল পালাগানের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। মৈমনসিংহ গীতিকার ইংরাজি অনুবাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে সমাদৃত হওয়া এবং ২২টি বিদেশি ভাষায় অনুদিত হওয়া একই কারণে। ছড়া-পাঁচালীর ঢঙ্গে লেখা এই পালাগানগুলিকে দীনেশচন্দ্র সেন কখনও 'গাথা' কখনও 'গীতিকা' বলেছেন।
হটাৎ করে বহুবছর আগের এক দুর্গাপুজোর কথা মনে পড়ে গেল। কত আগের? দাঁড়ান, কড় গুনে বলছি। ১৯৮৯.....১৯৮৮.....১৯৮৭.......১৯৮৬। হ্যাঁ ১৯৮৬। তখন আমি ক্লাস এইট'এ পড়ি। তা কি বিশেষ কান্ড ঘটেছিল সেই দুর্গাপুজোয়? হুম......সেই প্রথম আমি ট্রাউজার পরেছিলাম। একটা বাদামি রংয়ের ট্রাউজার। তখন অবশ্য আমরা ট্রাউজার বলতাম না। বলতাম ফুল প্যান্ট। সেই পুজোর পাঁচদিন ওই একটাই ফুল পেন্টুল'এ কাটিয়েছিলাম। জীবনে প্রথম ট্রাউজার পরে এতটাই খুশি আর উত্তেজিত ছিলাম। এখনকার ছেলে মেয়েরা অবশ্য প্রথম ট্রাউজার পরে মাঞ্জা দেওয়ার আনন্দ আর পায় না। কারণ সেই বয়সে আসার আগে থেকেই ট্রাউজার পরতে শুরু করে দেয় যে।
আমেরিকার উটা মরুভূমিতে পাওয়া গেল পোড়া তামাকের বীজ। এই পোড়া বীজ মানুষের তামাকের প্রাচীনতম ব্যবহারের সাক্ষ্য দেয়। আমেরিকাতে বসবাস করা প্রথম মানুষ এই উদ্ভিদ ব্যবহার করেছিল বলে মনে করা হচ্ছে। গবেষকরা বলেছেন, এই আবিষ্কারের ফলে বোঝা যায় যে, আগের ভাবনার অনেক আগে থেকেই মানুষ তামাক ব্যবহার করছে।
আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের দেশে এসেছে পশ্চিমি দুনিয়া থেকে, আজও দেশের মাটিতে তার শিকড় খুব দৃঢ় নয়। তাই ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে তার ইতিহাস সাধারণত কয়েকজন বিজ্ঞানীর জীবন ও কাজ এবং বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের বর্ণনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। জগদীশচন্দ্র বসু, সি ভি রামন, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, হোমি ভাবার মতো শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের উপর লিখিত বইয়ের সংখ্যা কম নয়। আধুনিক যুগে বিস্মৃতপ্রায় হলেও নিজেদের সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সুপরিচিত বিজ্ঞানীদের নিয়েও কাজ শুরু হয়েছে, এঁদের মধ্যে পড়বেন কে এস কৃষ্ণন, দেবেন্দ্রমোহন বসু, শিশিরকুমার মিত্র, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ডি ডি কোসাম্বি, প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের মতো বিজ্ঞানীরা। এঁরা সবাই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, অনেকেই আবার নিজের প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন।
বিশদ পড়ুন
আজকাল একটা অদ্ভুত অভ্যাস হয়েছে। একটা বিষয়ের ওপর কোন বই বা লেখা পড়তে পড়তে আচমকা সুইচ করে অন্য বিষয়ের কোন বই বা লেখা পড়তে শুরু করে দিচ্ছি। মনসংযোগের অভাব মনে হয়। এই দিন কয়েক আগে যখন 'বাবরনামা', অর্থাৎ মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের দিনলিপি পড়ছিলাম, ঠিক সেই রকমই হল। আচমকা বাবরনামা বন্ধ করে দিলাম। বাবরকে ছেড়ে কাকে নিয়ে পড়লাম? আগে ভাগেই বলে দেই যে, সঠিক অনুমানের জন্য কোন পুরস্কার নেই। কারণ তাঁর নাম শিরোনামেই দেওয়া আছে - কৃষ্ণদেবরায়।
বিশদ পড়ুন
বিশ শতক সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য সময়। এই সময়ে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ছিল উত্তাল তেমনি তার প্রভাব বিভিন্ন দেশ গুলির আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও দেখতে পাওয়া যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে জার সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটে, সোভিয়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। এই ঘটনা একদিকে যেমন বিশ্বের সর্বহারার শ্রেণী আন্দোলনে নতুন জোয়ার নিয়ে এল, তেমনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একাধিপত্যেও বেশ কিছুটা ঘা লাগল। রাশিয়ার বিপ্লব ভারতবর্ষের মতো পরাধীন দেশ গুলির চোখে ঔপনিবেশিক শক্তির করাল ছায়া থেকে মুক্তির এক নতুন স্বপ্ন বুনে দিচ্ছিল । দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ধনতন্ত্রের সংকট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে শেষ হল না, বিশ্বশান্তিও বেশি দিন স্থায়ী হল না। এ
বিশদ পড়ুন
সেটা ১৮১৭ সালের কথা। স্কটল্যান্ডে বসে বসেই জেমস মিল লিখে ফেললেন তাঁর নিজের ভাবনার রসে জারিত তিন খণ্ডে ভারতের ইতিহাস ‘দ্য হিস্ট্রি অফ ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’। মুখবন্ধে তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, তিনি ভারতে কখনও আসেন নি, ভারতের কোনও ভাষা সম্পর্কে তাঁর প্রাথমিক জ্ঞান নেই এবং তাঁর মতে ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য এসব অপরিহার্যও নয়। আশ্চর্য ব্যাপার হলো, এহেন লেখকের ভারতের ইতিহাসের ত্রিযুগী বিভাগের ভাবনার প্রভাব থেকে আজও আমরা মুক্ত হতে পারিনি। সেই কারণেই আজ যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর অমৃত মহোত্সবের আয়োজন চলছে, তখন বোধ হয় আরও বেশি করে ভাবনার প্রয়োজন আছে, কাদের ইতিহাস আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যাঁরা স্বাধীনতার অমৃতের স্বাদ পেয়ে ধন্য হলেন, না স্বাধীনতার ঊষাকালের মহামন্থন থেকে উঠে আসা হলাহল পান করে যাঁরা আজও নীলকণ্ঠ।
বিশদ পড়ুন
গণিকাবৃত্তি বলতে কী বোঝায়, সেই সংজ্ঞাটি প্রথমেই দেওয়া প্রয়োজন। ‘নারী যখন অর্থ বা কোন মূল্যবান উপহারের বিনিময়ে পুরুষকে নিজের দেহ যৌনতা সম্পর্কিত ব্যাপারে দান করে, যেখানে ওই নারী-পুরুষের মধ্যে কোন ভালোবাসার সম্পর্ক থাকে না, থাকে কেবল দেহ বিষয়ক আর্থিক লেনদেন, তখন সেই নারীকেই গণিকা বলা হয় এবং আর্থিক ব্যাপারটি থাকায় এইধরনের কাজের সঙ্গে বৃত্তি কথাটি যুক্ত হয়'।
বিশদ পড়ুন
আজ থেকে প্রায় একশ বছর আগে ১৯২৫ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারতের মাটিতে সংগঠিত চেহারায় পা রাখে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি। কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবসকে ঘিরে ভিন্নমত এবং মতাদর্শগত বিতর্কে আকাশ বাতাস সরগরম হয়েছে সাম্প্রতিক অতীতেও। কিন্তু সেই বিতর্কে না ঢুকে আজ আমরা নতুন করে আলোচনা করতে বসেছি এই ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে, রুশ বিপ্লব কীভাবে বিভিন্ন ধারার স্বাধীনতা সংগ্রামীর মননে নাড়া দিয়েছে এবং কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠবার সূচনা লগ্নেই কিভাবে জন্ম নিচ্ছে আরেকটি বিপরীত ধারা- রাজনৈতিক হিন্দুত্ব।
বিশদ পড়ুন
“তেষাং দিক্ষু প্রথিতবিদিশালক্ষণাং রাজধানীং গত্বা সদ্যঃ ফলমবিকলং কামুকত্বস্য লব্ধা। তীরোপান্তস্তনিতসুভগং পাস্যসি স্বাদু যস্মাৎ সভ্রূভঙ্গং মুখমিব পয়ো বেত্রবত্যাশ্চলোর্মি॥” - কালিদাসের ‘মেঘদূত’, পূর্বমেঘ, ২৫
বিশদ পড়ুন
সেপ্টেম্বর, ২০২১
আমরা হলাম গিয়ে 'হোমো স্যাপিয়েন্স'। আজ আমরা একা হলেও একসময় আমাদের বেশ কয়েকজন জ্ঞাতি ভাই ছিল এই পৃথিবীতে। আজ অবশ্য তাঁরা আর টিকে নেই। শুধু আমাদের জিনোমে রয়ে গিয়েছে তাঁদের একটু-আধটু জিনোম। এই জ্ঞাতি ভাই'দের মধ্যে সবচেয়ে কাছের জ্ঞাতি ভাই ছিলেন নিয়েন্ডারথালরা। থাকতেন মূলত আজকের ইউরোপে। তারপর একদিন সেখানে হাজির হলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। আর তাঁদের সাথে যুঝে উঠতে না পেরে আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে নিয়েন্ডারথালরা চিরতরে বিদায় নিলেন ধরাধাম থেকে।
১৯১৫ সালের জুন মাস থেকে ১৯১৯ এর মে পর্যন্ত একটি খেতাব কে ঘিরে রবীন্দ্রনাথ এর জীবনে প্রাপ্তি প্রতিবাদ ও পরিত্যাগের যে আবর্ত সৃষ্টি হয় তার ইতিহাস বিচিত্র ও জটিল। এই একটি প্রতিবাদ পত্রে মিশে গেছে কবির আন্তর্জাতিক চেতনা, স্বাদেশীকতাবোধ, মডারেট রাজনীতির দৈন্যতার প্রতি তাঁর নীরব ধিক্কার।
স্কুল-কলেজ জীবনের অনেক বন্ধুই আজ আমেরিকাতে সেটলড্। কেউ কেউ ‘জিআরই’ দিয়ে 'হায়ার স্ট্যাডিজ' করতে গিয়ে ওখানেই থেকে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার চাকরিসূত্রে চলে গিয়েছে মার্কিন মুলুকে। হোয়াটসঅ্যাপ'এর কল্যাণে এই সব প্রবাসী বন্ধুদের সাথে ভালোই যোগাযোগ আছে। হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ কল, হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কল সবই তো 'ফ্রি'। অতএব প্রবাসী বন্ধুবান্ধবদের ভালোমন্দের খোঁজ রাখতে অসুবিধে কি। তা বেশ ভালোই আছে মার্কিন মুলুকের 'দেশি' বন্ধুরা।
২০০৯ সালের ৫ই জুলাই। অল ইংল্যান্ড ক্লাবের ঘাসের কোর্টে চলছে উইম্বলডনের মেন্স সিঙ্গলসের ফাইনাল ম্যাচ। গ্র্যান্ড স্ল্যাম ইতিহাসের দ্বিতীয় দীর্ঘতম ম্যাচ এটা। ঘটনাচক্রে আমি মাঠে উপস্থিত। ৪ ঘন্টা ১৭ মিনিটের রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে জয়ী আমার সবচেয়ে পছন্দের প্লেয়ার রজার ফেডেরার। দীর্ঘতম ফিফথ সেট শেষ হতেই লেগেছে ৯৫ মিনিট। চোখের সামনে ইতিহাস সৃষ্টি হতে দেখে আনন্দে উত্তেজনায় তখন মাঠে বসে থরথর করে কাঁপছি। পুরো গ্যালারি জুড়ে চলছে মেক্সিকান ওয়েভ। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গলাব্যথা হয়ে গেছে। সঙ্গী পুষ্পেন্দুরও একই অবস্থা। হঠাৎ পকেটের ফোনটা বেজে উঠলো। বের করে দেখি গ্যাব্রিয়েল। প্যারিস থেকে। ও
নাৎসি জার্মানির ইতিহাসে একজন মাত্র ভারতীয়কে হত্যা করা হয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে তার কথা আমরা ভুলে গেছি। এম মাধবন। কেরালার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয়েছিল মাধবনের। পরবর্তীকালে পন্ডিচেরিতে যাবার আগে তিনি মাহে যুব লীগের সদস্য ছিলেন। পন্ডিচেরিতে গিয়ে তিনি হরিজন সেবক সংঘে যোগ দেন। এই সংগঠনটি গান্ধীজি তৈরি করেছিলেন নিপীড়িত মানুষের শিক্ষা ও মন্দিরে প্রবেশাধিকারের জন্য।
ভারতের স্বদেশী আন্দোলন নিয়ে—বিশেষত শিক্ষার উপরে তার প্রভাব নিয়ে অনেক কিছু লিখেছেন বহু জ্ঞানী গুণী। আমি একটি বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্ভব কেমন করে স্বদেশী যুগের প্রভাবে হল, সে বিষয়ে দু চার কথা বলতে উদ্যোগী হয়েছি। এই ধৃষ্টতা যে ঐতিহসিক না হয়েও আমি করেছি, তার কারণ হল, এর জন্মসূত্র থেকে এর সঙ্গে আমার পরিবারের ঘনিষ্ঠ যোগ। সেই পরিবার হল অধুনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের আচার্য্য পরিবার। তিন পুরুষ ধরে এই পরিবারের সদস্য বঙ্গীয় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ এবং পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে প্রত্যক্ষভাবে ব্রতী হয়েছিলেন—বর্তমান প্রজন্মেও আমরা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থেকেছি।
বিশদ পড়ুন
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। ওয়েস্টার্ন ফ্রন্টের কুখ্যাত ট্রেঞ্চ ওয়ার। ট্রেঞ্চযুদ্ধ শুরুর পরে মারা পড়েছে দু’দলের অজস্র সৈনিক। কাঁটাতারের বেড়ার পেছনে পরিখা কেটে বসে আসে শত্রু। অনবরত চলছে গুলি, বারবার একদিক থেকে গ্রেনেড পড়ছে অন্যদিকের ট্রেঞ্চের সেনাদের মাঝখানে। কিছুদিন পরে শুরু হবে গ্যাসযুদ্ধ, পোকামাকড়ের মত মরবে ট্রেঞ্চের সেনারা।
বিশদ পড়ুন
পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারী জন্মসূত্রে পরিযায়ী। বাধ্যত বাস্তুহারা হওয়া মেয়েদের জন্য অপেক্ষা করে মানবাধিকারের প্রতিটি প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চনা। বিশ্বব্যাপী নারী অভিবাসনের ঘটনা ঘটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পরিবেশ সঙ্কট, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার বাতাবরণে এবং অপহৃতা ,নির্যাতিতা হয়ে নারী এক পুরুষ হতে অন্য পুরুষের হাত বদল হয় পণ্যের ন্যায়। তাদের শরীর পুরুষের আগ্রাসনের শিকারে পরিণত হতে বাধ্য হয়।১ সাম্প্রতিক টালমাটাল বিশ্বে সমগ্র উৎপাটিত মানুষের অর্ধেকেরও বেশি নারী সম্প্রদায়। ২০০১ এর জনগণনা মতে, ৩০৯ মিলিয়ন অভিবাসনকারীর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ২১৮ মিলিয়ন ও পুরুষ ৯১ মিলিয়ন। সারা বিশ্বে বাস্তুহারা রমণীদের ক্রমশ সংখ্যাবৃদ্ধি জাতিসংঘের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে।২ উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালে উদ্বাস্তু মেয়েদের সামগ্রিক উন্নতি বিধানে প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা বিশ্ব-সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় মেক্সিকোতে। এবং সালটিকে আন্তর্জাতিক নারী বর্ষ রূপে চিহ্নিত করা হয় ও সমগ্র বিশ্বের নারী সমতার ওপর গুরুত্ব আরোপিত হয়। আর এক্ষেত্রে উদ্বাস্তু মেয়েদের বিষয়টি সর্বাধিক প্রাধান্য পায়।৩
বিশদ পড়ুন
রাভি নদীর পাড়ে হরপ্পা শহরের পত্তন আনুমানিক ৩৫০০ সাধারণ পূর্বাব্দে। নেহাতই একটি জন সাধারণ জন বসতি হিসাবে। এই বসতিটিই ক্রমে শহরের বিবর্তিত হয়ে উন্নতির চরমে ওঠে এবং অবশেষে পরিত্যক্ত হয় ১৩০০ সাধারণ পূর্বাব্দে। এই সাধারণ বসতি থেকে শহরে বদলে যাবার ইতিহাস কম বেশি জানা গেলেও এর অন্তিম পরিণতির কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ ও প্রকৃত ইতিহাস এখনো অজানার পর্যায়ে থেকে গেছে। কিছুটা অনুমান করতে পারলেও অজানা বলা হল কারণ একেবারে শেষ সময়েও, শহরে অর্থনৈতিক অবনতির লক্ষণ দেখা দিলেও, চরম দারিদ্র দেখা যায়নি। বা সহজ কথায় শহর পরিত্যাগ করার মত দুরবস্থায় শহরবাসীরা পড়েনি বলেই অনুমান।
বিশদ পড়ুন
১৯০৫ খৃষ্টাব্দ চির স্মরণীয়। বিশেষত বাঙালীর কাছে, বরণীয়। শুধু বাঙালীর কাছেই নয়, সারা ভারতে সবার কাছেই এই বছরটা মনে রাখার মত। এই বছরই প্রথম ঢেউ উঠেছিল ভারতের জাতীয় জীবনে—মরা গাঙে বান ডেকেছে, জয় মা! বলে ভাসা তরী—গেয়ে উঠেছিল বাঙালী। ধন্য সে ইতিহাস, লেখা আছে সোনার অক্ষরে। সেই বৃত্তান্তই আদ্যোপান্ত বলতে চাই আপনাদের। সেই সময় ভারতের রাজধানী ছিল কলকাতা। লর্ড কার্জন এলেন ব্রিটিশ শাসনকর্তা হয়ে। তিনি বঙ্গভঙ্গের বিধান আনলেন। বাংলার বুকের ওপর বসে তিনি বাংলাকে কেটে দু’টুকরো করলেন। পূর্ব ও পশ্চিম—দু’ভাগে ভাগ করে দিলেন বাংলাকে। পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ।
বিশদ পড়ুন
আর্থার সি ক্লার্কের সেই দুর্দান্ত গল্পটা বোধহয় আপনার পড়া আছে, তাই না - ‘দ্য নাইন বিলিয়ন নেমস অফ গড’? সেই যে, সত্যজিৎ রায় যার এক অনবদ্য বাংলা অনুবাদ করেছিলেন, তার নাম ছিল - ‘ঈশ্বরের ন’ লক্ষ কোটি নাম’? মনে পড়ছে না? আচ্ছা, একটু ধরিয়ে দিচ্ছি। তিব্বতের এক বৌদ্ধ গুম্ফার প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসীরা এক পশ্চিমা কোম্পানির কাছে একটি মস্ত কম্পিউটারের বরাত দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস, তাঁদের আরাধ্য ঈশ্বরের আছে নয় লক্ষ কোটি নাম, এবং সেই সব কটি নাম যদি তাঁদের ভাষায় সম্পূর্ণভাবে লিখে ফেলা যায়, তাহলেই জগতের সমাপ্তি। জগতের অস্তিত্ব তো ঈশ্বরের নাম জপ করার জন্যেই, কাজেই সে কাজ একবার সমাধা হলে আর জগতের দরকার কি?
বিশদ পড়ুন
ভারতের বহুত্ববাদী ও সমন্বয়ী ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রকাশ আমরা দেখতে পাই ভক্তি এবং সুফি আন্দোলনের মধ্যে। এই দুটি আন্দোলনই বেশ কয়েক শতাব্দী জুড়ে সৃষ্টিশীল কবি, চিন্তানায়ক এবং আম জনতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং উভয়েরই একটি সর্বভারতীয় চরিত্র ছিল। ভক্তি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল তামিলনাড়ুতে। সাধারণ অব্দের ষষ্ঠ থেকে দশম শতাব্দীর মধ্যে তামিল ভক্তি আন্দোলন দুটি ধারায় অগ্রসর হয়। একটি ছিল নায়ান্মারদের ধারা, যাঁরা ছিলেন শৈব। আরেকটি ছিল আলোয়ারদের ধারা, যাঁরা ছিলেন বৈষ্ণব। এইসময় থেকে তামিল জনজীবনে প্রধান দেবতা হয়ে ওঠেন শিব ও বিষ্ণু এবং বিষ্ণুর দুই অবতার রাম ও কৃষ্ণ।
বিশদ পড়ুন
আগস্ট, ২০২১
উনিশশো ত্রিশের দশকের সূচনা থেকেই অবিভক্ত বাঙলায় মার্কসবাদী বুদ্ধিজীবীগণ শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে কমিউনিজমের প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করতে থাকে। ইতোপূর্বে বিশের দশক থেকেই প্রধানত রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের প্রেরণায় কাজী নজরুল ইসলাম (যাঁর নিজস্ব মনন-সমৃদ্ধ সাম্যবাদে আস্থা বিষয়ে নতুন করে বলার নেই) নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (যিনি বাংলাভাষায় প্রথম ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাস অনুবাদ করেন), শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় (বাংলা কথাসাহিত্যে শ্রমিক শ্রেণী যার জন্য প্রথম সম্মানজনক স্থান করে নিতে পেরেছিল) প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকগণ সাম্যবাদ বা মার্কসবাদী মতাদর্শের মূল নির্যাসকে তাদের সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন।
যখন মানুষ কোন রোগের প্রাদুর্ভাবে উদ্ভ্রান্ত হয়ে পরে, জানে না তার চিকিৎসাবিধি তখন সে বিশ্বাস করে বিভিন্ন কুসংস্কারে। এই বিষয়ে দেশ, ধর্ম, জাতিতে পার্থক্য থাকে না। আবার যখন মানুষ স্বাস্থ্যবিধি শিখল, এন্টিবায়োটিক ও প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হল এবং বিজ্ঞানশিক্ষা পেল স্বাভাবিকভাবেই তখন তার আস্থা এল আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ‘জনযুদ্ধ’-এর নীতি গ্রহণ করে কমিউনিস্ট পার্টি (সি-পি-আই) ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রাম সাময়িকভাবে মুলতুবি রেখেছিল। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে গণসংগ্রাম ও গণ-আন্দোলনের ব্যাপারে পুনরায় তারা আগ্রহী হয়ে ওঠে। কিন্তু ইতিমধ্যে জাতীয় কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুতর রূপান্তর ঘটে গিয়েছিল। জাতীয় কংগ্রেস আর সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী গণ-আন্দোলনে উৎসাহী নয়। বরঞ্চ তাদের লক্ষ্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে যত-দ্রুত-সম্ভব ‘ক্ষমতা হস্তান্তর’। তবে গণ-আবেগ বিপরীত কথা বলছিল এবং তা ফেটে পড়েছিল আজাদ হিন্দ ফৌজের বন্দিদের বিচারকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৫-এর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ছিল এই আন্দোলনের তুঙ্গবিন্দু। কলকাতার ছাত্রসমাজ ও শ্রমিকশ্রেণির একাংশ এই আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল। হিন্দু-মুসলমান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল কলকাতার রাস্তায়। সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী এই জাতীয় আবেগ যে অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হানাহানির পঙ্কিল আবর্তে নিমজ্জিত হবে তখনও তা ছিল কল্পনার অতীত।
সুলতানি যুগের সূচনার ফলে ভারতের বাস্তুশিল্পে অনেক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন হয়। ভারতে বড় আকারের সেতু নির্মাণ শুরু হয়। তার আগে ম্যাসনরি ব্রিজের উদাহরণ ভারতে খুব বেশি টিকে নেই। ম্যাসনরি ব্রিজ মানে ইট, পাথর দিয়ে গাঁথুনি দিয়ে তৈরি সেতু। একেবারে টিকে নেই তা নয়, একটা রয়েছে - আর সেখান থেকে অনুমান করা যায় এরকম সেতু একাধিক ছিল, কিন্তু হিন্দু শিল্পে সেতু নির্মাণ যেহেতু প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ (true arch) ব্যবহার করে হত না তাই তাদের স্থায়িত্ব প্রকৃত খিলানের সেতুর তুলনায় কম হত - তাই খুব বেশি টিকে নেই। ভারতবর্ষে সুলতানি যুগের আগে ট্রু আর্চের প্রযুক্তি ছিল না। প্রাচীন ও আদিমধ্য যুগের হিন্দু মন্দিরে যে আর্চ জাতীয় তোরণ বা প্রবেশদ্বার আমরা দেখি সেগুলো প্রকৃত খিলান বা ট্রু আর্চ নয়। সেগুলো কর্বেল আর্চ (corbel arch)। কর্বেল আর্চের ইটগুলো আনুভূমিক হয়, ট্রু আর্চের ইটগুলো অর্ধচন্দ্রাকারে সাজানো - এমনভাবে যাতে ইটগুলি থেকে সরলরেখা টানলে তারা একটি বিন্দুতে এসে মিলিত হয়।
সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যে প্রগতিশীল চেতনার, ফ্যাসিবিরোধী সংগ্রামের, মার্ক্সবাদী ভাবধারার কবি, যার মৃত্যুর ৭৫ তম বছর এই বছর। স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখা কিশোর কবি প্রয়াত হন ১৯৪৭-এর ১৩ মে, টিবি রোগের শিকার হয়ে। অসুস্থ হয়েছিলেন আরও কয়েক বছর আগেই। বার বার তাঁকে যেতে হতো ১০ রডন স্ট্রিটে কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত 'রেড এইড কিওর হোম' বা যাদবপুরের টিবি হাসপাতালে। এই হাসপাতালের লেডি মেরি হার্বার্ট ব্লকের এক নম্বর বেডে শুয়েই দুরারোগ্য ক্ষয়রোগের করাল গ্রাসে শেষবার ধরা দেন।
এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাতে রাজ-উদ্যানে জন্মগ্রহণ করেন শাক্যবংশের এক রাজকুমার। এমন কত রাজবংশে কত রাজকুমারই তো জন্মান! বড় হয়ে ওঠেন, হয়তো রাজত্ব করেন এবং প্রকৃতির নিয়মে শেষ অবধি দেহরক্ষা করেন। ইতিহাস বইয়ের পাতায় রয়েছে এমন কত শত রাজপুত্র ও রাজাদের বৃত্তান্ত! ইতিহাসের ছাত্ররা বাদে কেউই তাঁদের কথা বিশেষরূপে মনে রাখে না। কালস্রোতে ভেসে যায় তাঁদের নাম, ধূসর হয়ে যায় তাঁদের স্মৃতি। হারিয়ে যান তাঁরা বিস্মৃতির অতলে।
বিশদ পড়ুন
বিষ্ণুর দশাবতারের জনপ্রিয় তালিকায় নবম অবতার হিসেবে বুদ্ধদেবের উল্লেখ প্রায়শই পাওয়া যায়। অথচ বুদ্ধদেবের নিজের দর্শন আবার 'নাস্তিক দর্শন'গুলির একটি। নাস্তিক বুদ্ধ কী করে অবতার হতে পারেন? বৌদ্ধধর্মের উৎপত্তির আগের ধর্মবিশ্বাসের সাথে বুদ্ধের কী সম্পর্ক? পরবর্তীকালের কোন ধর্মবিশ্বাস কী উদ্দেশ্যে বুদ্ধকে অবতারে পরিণত করল? প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরও জানা। শুধু উত্তর খুঁজতে হবে ধর্মের ইতিহাসের বিবর্তনে, ধর্মীয় বিশ্বাসে নয়। এই ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। তাই আমরা ধাপে ধাপে তাকে বোঝার চেষ্টা করি।
বিশদ পড়ুন
বেশ একটা গুগলি দিয়ে লেখাটা শুরু করা যেত। সেটা এই রকম, বলুন তো স্টেটসম্যান পত্রিকা, হিটলারের আত্মজীবনী ‘মাইন কাম্ফ’ ও ওল্ড মঙ্ক কোম্পানির মধ্যে মিল কী? হয়তো শিরোনাম দেখে আগেই খানিকটা আন্দাজ করতে পেরেছেন; উত্তরটা হল, এদের তিনটেরই নাম লেখার ক্ষেত্রে একই অক্ষরছাঁদ (Typeface) ব্যবহার করা হয়। এই লেখাটিতে সেই অক্ষরছাঁদ (পরিভাষার পিণ্ডি চটকে অনেক জায়গাতেই লিপি, অক্ষর বা হরফ বলেও উল্লেখ করে ফেলেছি, যা আসলে একই) এবং তার ইতিহাস নিয়ে কিছু আলোচনা হবে।
বিশদ পড়ুন
ইতিহাস, প্রাগিতিহাস ও প্রত্নতত্ত্বের ধূসর অস্পষ্ট অংশগুলিকে ভালোভাবে জানা বোঝার জন্য বিজ্ঞানের নানা ধারার সাহায্য অনেকদিন ধরেই নেওয়া হয়ে থাকে। নৃতত্ত্ব, জাতিগোষ্ঠীর পরিযানকে বোঝার ক্ষেত্রে শারীরস্থান বিষয়ক (অ্যানাটমি) বিদ্যার ব্যবহারও বেশ অনেকদিনের ব্যাপার। চুলের রঙ ও ধরন, চামড়ার রঙ, চোখের রঙ, নাকের গড়ন, মাথার খুলির গড়ন – ইত্যাদি নৃতাত্ত্বিক আলোচনায় দীর্ঘদিন ধরেই গুরুত্ব পেয়ে এসেছে।
বিশদ পড়ুন
হাসবোধকে মানুষের সংস্কৃতির অঙ্গ করে তোলার কাজে সৃজনশীল প্রচেষ্টা হিসেবে এই মঞ্চে কাজ করার অঙ্গীকার করেছি।
বিশদ পড়ুন
জুলাই, ২০২১
একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও আমরা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কথা শুনে থাকি। এ যেন আদিম পৃথিবীর উত্তরাধিকার। মানুষের শিক্ষা ও সভ্যতার পথে ইতিহাসের প্রশ্নচিহ্ন। আজ থেকে চারশত বছর আগে এক পরমতসহিষ্ণু ভারতীয় রাজপুত্র নিজের মুক্তচিন্তার জন্য তৎকালীন অসহিষ্ণুতার বলি হয়েছিলেন। তিনি শাহজাদা সুলতান মুহম্মদ দারাশুকো। পিতামহ সম্রাট জাহাঙ্গীরের দেয়া নাম। শাহজাহান ও মমতাজমহলের এই জ্যেষ্ঠপুত্রটি আর দশজন মধ্যযুগীয় শাহজাদার মতো একদমই ছিলেন না। যে হাতে তরবারি শোভা পাবার কথা, সে হাতে থাকতো লেখনী। রাজনীতির কূটচালের পরিবর্তে তিনি মগ্ন থাকতেন সাধুসঙ্গে, অতীন্দ্রিয়বাদী আলোচনায়। সুফি মতবাদ আর বেদান্ত দর্শন চর্চায় দিন কাটতো তাঁর। ধর্মীয় সহাবস্থানের সূত্রটির অনুসন্ধানে জীবনব্যাপী বহু প্রচেষ্টায় নিরত ছিলেন তিনি। সেই খোঁজের ফলাফল রয়েছে তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থে।
নীল কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে নদীয়ার চাষি হাজি মোল্লা বলেছিলেন- ‘ভিক্ষা করে খাব তবু নীল বুনব নি’। দিনু মণ্ডল বলেছিলেন- ‘আমার গলা কেটে ফেললেও নীল বুনব না’। নীলকর সাহেবদের মধ্যে এই নদীয়ার নিরক্ষর, সহজ, সরল চাষিদের ঠকানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই। নীল বিদ্রোহের সময় জেলার হিন্দু মুসলমান চাষিরা একজোট হয়ে সিপাহী বিদ্রোহের নিভে যাওয়া মশাল নতুন করে জ্বালিয়েছিলেন। জেলার মালিয়াপোতার খ্রিস্টান চাষিরাও একজোট হয়েছিল নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে। ১৮০০ থেকে ১৮৬০ এর মধ্যে মোট তিনটি ধাপে বিদ্রোহ করে সারা বাংলার নীলচাষীদের জাগিয়ে তুলেছিল। জেলার গ্রাম্য নিরক্ষর চাষিরা দেখিয়ে দিয়েছিল তারা ইতিহাস পড়তে না জানলেও ইতিহাস গড়তে জানে। পরাধীন ভারতের অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, রানাঘাট, কৃষ্ণনগর মহকুমা নিয়ে তখন বিরাট নদীয়া জেলা।১
স্কুবা ডাইভিং করার উদ্দেশ্য বলতে আমরা বুঝি গভীর জলের তলায় 'মেরিন লাইফ'এর সাথে সময় কাটানো। স্কুবা ডাইভারের সারা শরীর ঢাকা থাকবে অদ্ভুত এক পোশাকে, পিঠে থাকবে অক্সিজেন সিলিন্ডার, সেখান থেকে নল দিয়ে অক্সিজেন আসবে মুখে, পায়ে থাকবে সুইমফিন আর তাই নিয়ে স্কুবা ডাইভার অতল জলের তলায় ধীরে ধীরে সাঁতরাতে থাকবে নাম না জানা গুল্ম, মাছ ও আরও কত কি প্রাণী আর উদ্ভিদের মধ্যে দিয়ে। স্কুবা ডাইভিং বললেই এই ছবিটা আমাদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।
ভারতের ইতিহাসচর্চায় মৌর্য সাম্রাজ্যের এবং গুপ্ত সাম্রাজ্যের মধ্যবর্তী সময়ের ভারত অপেক্ষাকৃত অবহেলিত। অথচ সেই সময়কার অর্থাৎ সাধারণ পূর্বাব্দের দ্বিতীয় শতকের প্রথম ভাগ থেকে সাধারণ অব্দের তৃতীয় শতকের অন্তিম ভাগের মধ্যবর্তী সময়ের ভারতের ইতিহাস একটু খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে সেই সময় ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিমণ্ডলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল যার প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। সেই সময়েই তদানীন্তন ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে মধ্য এশিয়া থেকে আসে একের পর এক জাতিগোষ্ঠী; দাক্ষিণাত্যে উত্থান হয় প্রথম দক্ষিণ ভারত কেন্দ্রিক রাজশক্তির; শিল্প, ব্যবসা ও বাণিজ্যে ঘটে প্রভূত বিকাশ; মুদ্রা হয়ে ওঠে অর্থনৈতিক লেনদেনের প্রধান ভিত্তি; প্রাচীন ভারতের নগরায়ণ প্রক্রিয়া লাভ করে সর্বোচ্চ গতিবেগ।
ভারতীয় চিন্তাধারায় মহাপুরুষ বা সাধকদের সংসার আশ্রমের সঙ্গিনী রা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাব্যে উপেক্ষিতা। এমনই এক নারী বুদ্ধপত্নী যশোধরা। মাতা মায়াদেবী(যিনি সিদ্ধার্থের জন্মের অনতিবিলম্বে মারা যান) ব্যতীত, একাধারে বুদ্ধের পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনের সাথে জড়িত দুই নারী হলেন তাঁর বিমাতা তথা পালিকামাতা গৌতমী ও পত্নী যশোধরা। এই দুজনের মধ্যে, অপেক্ষাকৃত কম উল্লেখিত আবার যশোধরা, অন্তত প্রাচীন পালি ধর্মীয় সাহিত্যে। কিন্তু সেই খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতক থেকে, যত সময় এগিয়েছে, যশোধরা/গোপা/বিম্বা ততই জনপ্রিয় হয়েছেন, লৌকিক জীবনে। বিভিন্ন বৌদ্ধ সাহিত্যে তিনি যেমন চিত্রিত হয়েছেন পুণ্যবতী সাধিকা হিসাবে, তেমনি এক দুখিনী অথচ তেজস্বিনী নারী হিসাবেও। এই লেখার বিষয় ও উদ্দেশ্য, তাঁর সেই চিরন্তন মানবী সত্ত্বার অন্বেষণ।
সময়টা উনিশ শতকের তৃতীয় পাদ। অধুনা বাংলাদেশের ঢাকা-বিক্রমপুর অঞ্চল যখন স্ত্রী শিক্ষা ও বিধবাবিবাহের প্রসার এবং বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও কুলীনপ্রথা বিলুপ্তির লক্ষ্যে তোলপাড় করে তুলছিলেন দুর্গামোহন দাস, তখন অন্য যে কয়েকজন সমমনা সমাজ সংস্কারক নিঃশর্তভাবে তাঁর এই আদর্শবাদী ও সাহসী কাজের সর্বক্ষণের সহযোদ্ধা ছিলেন, তাঁদের একজন হলেন দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিশদ পড়ুন
ইয়াওয়াল? কোথায় এই ইয়াওয়াল? কি এমন রাজকার্য করল এই ইয়াওয়াল? ইয়াওয়াল হল মহারাষ্ট্রের জলগাওঁ জেলার এক জায়গা - খুবই ছোটখাটো এক নগণ্য জায়গা। তাই ইয়াওয়ালের নাম আপনার না শোনারই কথা। তবে ভুসাওয়ালের নাম আপনি হয়তো শুনেছেন। আর আপনি যদি নিয়মিত গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস বা মুম্বাই মেল'এ চড়ে থাকেন তাহলে আপনাকে ভুসাওয়ালের পরিচয় দেওয়ার দরকার নেই। হাওড়া-মুম্বাই রেলপথের এই হেভিওয়েট স্টেশনে সব ট্রেন'কেই সেলাম ঠোকার জন্য দাঁড়াতে হয়। এই ভুসাওয়াল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে হল ইয়াওয়াল।
বিশদ পড়ুন
অধ্যাপিকা সুকুমারী ভট্টাচার্যকে আমি প্রথম কাছ থেকে দেখি ১৯৭১ সালে — যখন আমি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হই। তার বহু আগে থেকে তাঁর নাম জানি, তাঁর পাণ্ডিত্যের খ্যাতি চারিদিকে তখন ছড়িয়ে গেছে। সেই প্রথম দেখার পর সুদীর্ঘ দিন তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পেয়েছি, তাঁর অপরিমিত স্নেহভাণ্ডারে নিতান্ত অযোগ্য হয়েও ভাগ বসিয়েছি। দিদি চলে গেছেন কত বছর হয়ে গেছে, কিন্তু আজও অনেক কথা মনে পড়ে, যা হয়তো আর কখনও বলার সুযোগ পাব না, তাই সেই পুরানো কথাই কিছু কিছু বলতে বসেছি।
বিশদ পড়ুন
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন যুগে ইতিহাস লেখকদের যখন প্রায় কোন সন্ধানই পাওয়া যায় না, তখন মধ্যযুগের কাশ্মীরের চার সংস্কৃত ইতিবৃত্তকার – কল্হণ (দ্বাদশ শতাব্দী সাধারণাব্দ), জোনরাজ (১৩৮৯? - ১৪৫৯ সাধারণাব্দ), শ্রীবর (পঞ্চদশ - ষোড়শ শতাব্দী সাধারণাব্দ) ও শুকের (ষোড়শ শতাব্দী সাধারণাব্দ) লেখা ‘রাজতরঙ্গিণী’ নামে পরিচিত অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক ইতিবৃত্ত গ্রন্থমালা আমাদের বিস্মিত করে। শুধু তাই নয়, এই চার ইতিবৃত্তকারদের জীবন মধ্যযুগের কাশ্মীরের রাজশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার কারণে তাঁদের লেখা ইতিবৃত্ত প্রামাণিকতার নিরিখেও মূল্যবান। সপ্তদশ শতকে লিপিবদ্ধ ‘রাজতরঙ্গিণী’ গ্রন্থমালার শারদা পাণ্ডুলিপিগুলি আজও মধ্যযুগের কাশ্মীরের চার প্রতিভাশালী সংস্কৃত কবির ইতিবৃত্ত রচনার দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।১
বিশদ পড়ুন
তমসা..., রুইসারাগাড এবং ‘হর কি দুন’ নালার মিলিত প্রবাহধারা তমসা। গাড়োয়াল হিমালয়ের জনপ্রিয় ট্রেকরুট ‘হর কি দুন’র যাত্রাপথের নিত্যসঙ্গী তমসা। তমসা কেবল নদীমাত্র নয়। ভারতের নৃতাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের প্রাকৃতিক মহাফেজখানাও বটে। মহাকাব্য মহাভারতের গৌরবগাথা সর্বাঙ্গে জড়িয়ে যেন শীতঘুমে রত তমসা উপত্যকা। ভণিতা অনেক হলো, এবার বরং একটা গল্প বলি।
বিশদ পড়ুন
দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসের সম্ভবত এক যুগসন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে আমরা চলেছি। অতিমারীর বর্তমান প্রকোপের যখন অবসান হবে, তখন এই উপমহাদেশের প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের আর্থিক অগ্রগতির পথের মধ্যে যে ভিন্নতা ও ব্যবধান ইতিমধ্যেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করেছে, তার প্রকৃত স্বরূপ হয়ত সম্পূর্ণ প্রকাশিত হবে। সমকালীন ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির অর্থনীতির অতি-সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলির ঐতিহাসিক পৃষ্ঠভূমি অন্বেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেই তথ্যই হদিস দেবে এই বিপুল ভূভাগের আসন্ন রাজনৈতিক আর সামাজিক পরিবর্তনের প্রকৃতির। ‘ইতিহাস আড্ডা’র মুখবই ও পোর্টালের পাতায় দক্ষিণ এশিয়ার, বিশেষত ভারত ও বাংলাদেশের, সাম্প্রতিকতম আর্থিক পরিবর্তনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে পাঠকদের সামনে নিয়মিতভাবে উপস্থিত করার জন্য আমরা প্রতিবদ্ধ থাকব।
বিশদ পড়ুন
জুন, ২০২১
কোনও কোনও বই একবার পড়ে মন ভরে না। আবার ফিরে পড়তে ইচ্ছে করে সময় সুযোগ হলে। লকডাউনের গৃহবন্দী দশায় গত কিছুদিন ধরে আবার পড়লাম রামচন্দ্র গুহ’র লেখা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের এক বিপুল কলেবরের বই - 'ইন্ডিয়া আফটার গান্ধী'। সেই পাঠের সূত্রে মনে আসা কথাগুলো আপনাদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাক।
রবীন্দ্রনাথ কবি, লেখক, চিত্রশিল্পী, গায়ক, অভিনেতা ইত্যাদি ছিলেন, তার ওপরে ছিলেন বড় মাপের একজন চিন্তাবিদ। শিক্ষাবিদ হিসেবে তাঁর স্থানও আমাদের কাছে অপরিচিত নয়। যে দিকটা আমরা কম জানি তা হল, গ্রাম-সংগঠনের জন্য তিনি জীবনের একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন। তাঁর প্রবন্ধগুলির এক বিরাট অংশ শিক্ষা ও পল্লী-উন্নয়ন নিয়ে লেখা। বিশ্বভারতী নিয়ে তিনি যখন লিখেছেন, সেখানেও এই দুটো বিষয় ঘুরে ফিরে এসেছে। তাঁর সমস্ত উন্নয়ন চিন্তার কেন্দ্রে ছিল শিক্ষা, এ-কথা বলাই যায়। এসবের বাইরেও রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা ও ক্ষমতা বিভিন্ন দিকে তার শাখাবিস্তার করেছিল।
রুটি তো আপনি নিশ্চই খান। হাতে গড়া রুটি না খেলেও, রুটির বিভিন্ন জ্ঞাতিভাই যেমন পাঁউ রুটি, বান রুটি, লুচি, পরোটা, পিৎজা - এইগুলো নিশ্চই হাজির থাকে আপনার প্লেটে। পরিজ আর স্টুও তো খান মাঝেমাঝে। আর বিয়ার? না না বলতে হবে না। আমি জানি যে পল পোগবা'র মত আপনিও বিয়ার অপছন্দ করেন। শুধু বন্ধুবান্ধবদের কথা রাখতে গিয়ে মাঝে মধ্যে নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও .........
নিয়েণ্ডারথালদের অনেক কথাই জানা গেছে। বিশেষ করে গত এক দেড় বছরে নিয়েণ্ডারথালদের নিয়ে গবেষণায় জোয়ার এসেছে। ফলে অনেক নতুন কথা জানা গেছে। তারই সাথে স্বাভাবিকভাবেই আগেকার অনেক ধারণা বাতিল হয়ে গেছে। তুলনায় ডেনিসোভানদের বিষয়ে আমাদের জানার পরিমাণ একেবারেই অতি সামান্য ছিল এতকাল। কিন্তু সদ্য সদ্য একটি নতুন প্রত্ন ক্ষেত্রের নতুন করে যাচাই করা আর বিশেষ করে জেনেটিক তথ্যের নিত্য নতুন আবিষ্কার আমাদের খানিকটা হলেও চমক দেবে।
শীতের রাতের নীরবতা খান খান করে সহসাই বেজে উঠল বাড়ির সদর দরজার ডোরবেলটা। ঘুমের জড়তা নিয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসেন খান সাহেব। ঘুম ভেঙ্গে যায় তাঁর স্ত্রীরও। একরাশ বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতেতাঁর দিকে তাকিয়ে থাকেন তাঁর স্ত্রী। বালিশের পাশে রাখা মোবাইলের বোতাম টিপে দেখেন ৩.০৪। এই মাঝ রাতে আবার কে এলো? তবে কি জরুরী কোনও খবর আছে তাঁর জন্য? ব্ল্যাঙ্কেটটা চাদরের মতো গায়ে জড়িয়ে বিছানা থেকে নামলেন খান সাহেব। দোতলা থেকে একতলায় নামতে নামতে দারোয়ানের নাম ধরে ডাকতে থাকেন। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই গায়ে কম্বল জড়িয়ে হাজির হয় মাঙ্কিক্যাপ পরা মোটা গোঁফওলা দারোয়ান।
ভালো করিয়া বাজাও গো দোতারা সুন্দরী কমলা নাচে, সুন্দরী কমলা চরণে নূপুর রিনিঝিনি করিয়া বাজে রে... নাচতে জানুক বা না জানুক উপরের গানের কলি কয়টি জানে না এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। বাংলার নাচের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এ গানটি প্রাচীন কোন অজানা স্বভাবকবি রচনা করেছিলেন যা লোকমুখে আজো কমলার নৃত্যের কথা বলে। কখনো কি ভেবেছেন কে এই কমলা?
বিশদ পড়ুন
কাশ্মীর উপত্যকায় মানুষের সভ্যতার ইতিহাস অন্তত পাঁচ হাজার বছরের পুরনো। আমাদের এই লেখার মূল জোর তার এক সামান্য অংশ, বিশ শতকের সাতটি দশকের ওপর। এই সত্তর বছরের ইতিহাস কাশ্মীরের মাটি ও ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের কাছেই শুধু নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও যে পরিমাণ বিতর্ক নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, সম্ভবত জেরুজালেম ছাড়া পৃথিবীর ইতিহাসে ভূখণ্ড বিতর্ক নিয়ে তার অন্য কোনও তুলনা পাওয়া যাবে না। ইতিহাসের সেই বিতর্কিত পর্বে প্রবেশ করার আগে পূর্ববর্তী সময়ের কাশ্মীরের ইতিহাসকে একবার দ্রুত দেখে নেওয়া যাক।
বিশদ পড়ুন
বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস নিয়ে উৎসাহী। দেখতে চান বৌদ্ধ ধর্মের সাথে জড়িত সমস্ত প্রাচীন স্থাপত্য, ভাস্কর্য ইত্যাদি। কিন্তু মাথায় চিন্তা কি করে তা সম্ভব হবে। বৌদ্ধ ধর্ম তো এক আন্তর্জাতিক ধর্ম। ছড়িয়ে পড়েছিল দেশে-বিদেশে। এর সঙ্গে জড়িত প্রাচীন স্থাপত্য, ভাস্কর্য দেখতে হলে যে ভূপর্যটক হতে হবে। ঘুরতে হবে সুদূর প্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়া। এমনকি যেতে হতে পারে ইউরোপের রাশিয়ায়। প্রচুর সময় এবং অর্থ - দু'এরই প্রয়োজন।
বিশদ পড়ুন
বাংলাদেশের নাটোরের লালপুর উপজেলার চামটিয়া গ্রামের এক পুকুরে পাওয়া গেল পুরনো পাথরের দেবীমূর্তি। রাজশাহীর বরেন্দ্র যাদুঘর কর্তৃপক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, এটি গঙ্গার মূর্তি, এবং মূর্তিটি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। মূর্তিটি নিয়ে আরও গভীর বিশ্লেষণ করা বাকি আছে। তবে মূর্তিটি দৃশ্যগত ভাবে গুপ্তযুগের শেষের দিককার মধ্যভারতের বিভিন্ন ভাস্কর্যের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। দৃশ্যকল্প অনেকটাই ঐযুগের গঙ্গামূর্তির মত- যদিও গঙ্গার কিছু লক্ষণ যেমন ঘট আর মকর স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান নয়। আনুমানিক ভাবে, মূর্তিটির দৈর্ঘ্য তিন ফুট, প্রস্থ দেড় ফুট। ওজন প্রায় ১৪৫ কেজি।
বিশদ পড়ুন
ভারতে একসময়ে নাস্তিক্যবাদ চর্চা করা হয়েছে, তখন যুক্তিবাদ ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে। সেই সময়ে এই দেশে এই নাস্তিক সম্প্রদায়গুলি শক্তিশালী ছিল। ২০১২ সালে ডিসেম্বর মাসে পিউ রিসার্চ সেন্টার বিশ্বব্যাপী ২৩০টি দেশে গবেষণা করে কিছু তথ্য প্রকাশ করে। ওই মুহূর্তে সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৬.৩% মানুষ কোন প্রচলিত ধর্মে আস্থা রাখেননি। এদের মধ্যে আছেন সেকুলার হিউম্যানিস্ট। এরা মনে করেন কোন ধরণের ঈশ্বরের সহায়তা ছাড়াই মানুষ নিজে ন্যায়পরায়ণ থাকতে পারে। আছেন ফ্রি থিঙ্কার, এরা সবরকম ধর্মমতকে ত্যাগ করেছেন। আছেন স্পিরিচুয়াল-রা। এরা সংগঠিত ধর্মে আস্থা রাখেন না তবে আধ্যাত্মিক উন্নতির পক্ষে। আর আছেন ধর্ম বিরোধীরা, এরা মনে করেন মানুষের ভালো থাকার জন্য কোন ধর্মের প্রয়োজন নেই।
বিশদ পড়ুন
নির্বাচনোত্তর পশ্চিমবঙ্গে ১৫-মে থেকে আবার অতিমারি নিয়ন্ত্রণে লকডাউন শুরু হয়েছে। একদিকে অতিমারির দাপট, অন্যদিকে তার প্রতিরোধে আংশিক বা পুরো লকডাউন এই রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলছে। একদিকে কোভিড-১৯ এর দাপটে মৃত্যু মিছিল, অন্যদিকে দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষের বাঁচার আপ্রাণ প্রচেষ্টা। তারমধ্যে টিকাকরণ প্রক্রিয়াও গতি হারিয়েছে। শোকগ্রস্ত মানুষ হাহাকার নিয়ে বেঁচে আছেন। অনেকের বাড়ির একমাত্র রোজগেরে মানুষ অতিমারিতে প্রাণ হারিয়েছেন। যারা শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন দীর্ঘ অন্তরীণ অবস্থায় থেকে তাদেরও অনেকে মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত। আপামর ছাত্র-ছাত্রীরা জানে না ওদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে।
বিশদ পড়ুন
অংকে আমার ভীষণ ভয়। তাও বাবা, মা, স্কুল শিক্ষক আর গৃহ শিক্ষকের যৌথ প্রচেষ্টায় যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে একটু হলেও শিখেছি। আর এই শেখার পিছনে একটা অনুপ্রেরণা আর একটা ভয় কাজ করেছিল। অনুপ্রেরণা ছিলেন আর্যভট্ট। যিনি শূন্য আবিষ্কার করেছিলেন, তাঁর দেশের লোক হয়ে অংক শিখবো না, তা কি হয়? তাই যতটা নিজের জন্য ততটাই আর্যভট্টের মান রক্ষার জন্য কিছুটা হলেও অংক শিখে নিয়েছি। আর ভয়ের ব্যাপারটা? অংক না শিখলে নাকি জীবনযুদ্ধে হেরে যেতে হয়! এমনকি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে - যা হয়েছিল নিয়েণ্ডারথালদের সাথে।
বিশদ পড়ুন
মে, ২০২১
এসেছি রাজস্থান ভ্রমণে - কর্নেল টড আর অবন ঠাকুরের রাজকাহিনী অর্থাৎ রাজপুত রাজাদের দেশভক্তি, শৌর্য-বীর্য, দেশের জন্য আত্মত্যাগ, আরও কতসব ঘটনা মিলিয়ে মিশিয়ে তৈরি এক বিশাল কোলাজ দর্শন করতে।
১৯১১ সালের ৩১ শে মে থেকে ১ জুন পর্যন্ত, এক দল শ্বেতাঙ্গ গ্রীনউড, ওকলাহোমা আক্রমণ করে। গ্রীনউড ছিল দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় অধ্যুষিত অঞ্চল। সেদিন দাঙ্গাকারীরা আনুমানিক ৩০০ কৃষ্ণাঙ্গ মানুষকে হত্যা করেছিল এবং ১০,০০০ মানুষকে গৃহচ্যুত করেছিল। ওরা অন্ততপক্ষে ১,২৫৬টি আবাসন, গীর্জা, স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে ফেলে। "ব্ল্যাক ওয়াল স্ট্রিট" নামে পরিচিত আশেপাশের প্রায় ৪০টি ব্লক ধ্বংস করে দেয়। টুলসার গণহত্যার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে সেই নিরীহ মানুষদের স্মরণ করছি।
অন্নদামঙ্গলের পথ ধরে চলুন যাই, ঈশ্বরী পাটনীর দেশ থেকে ঘুরে আসি। দেখে আসি, সত্যই কি ঈশ্বরী পাটনীর খেয়া ঘাট এখনো আছে? কিম্বা কেমন যত্নে রেখেছে আজকের বাংলার মানুষ, কাব্যে উল্লিখিত 'গাঙ্গিনী' নামের অতীতের সেই সুন্দর নদীটিকে।
প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে গ্রীক সাহিত্যের মত সমপ্রেম বা সমকামের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায় না। রামায়ণ এবং মহাভারত থেকে অল্প কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে হয়তো। সুলতানি যুগে ভারতীয় সাহিত্যে কিছু বিবর্তন দেখা যায় এবং বেশ কিছু সাহিত্যে সমপ্রেম বা সমকামের উদাহরণও দেখতে পাওয়া যায়। সুলতানি যুগের শুরু হয় ১১৯২ সালে মহম্মদ ঘোরির দিল্লীজয়ের পর থেকে। মহম্মদ ঘোরির মৃত্যুর পর পাঁচটি রাজবংশ দিল্লীতে রাজত্ব করে- মামলুক বা ‘দাস’বংশ (১২০৬-১২৯০), খলজি (১২৯০-১৩২০), তুঘলক (১৩২০-১৪১৪), সৈয়দ (১৪১৪-১৪৫১) ও লোদি (১৪৫১-১৫২৬)। আমাদের আলোচনার শুরু রাজরাজড়াদের দিয়ে নয়, ভারতবর্ষের অন্যতম সেরা কবিদের একজন- আমীর খুসরোকে নিয়ে।
আরম্ভ করা যাক শান্তিনিকেতনের আদি যুগের একটি কাহিনী দিয়ে। ব্রহ্মাচর্যাশ্রমের প্রথম দিকের ছাত্ররা সকলেই দেখেছেন লিকলিকে রোগা, দন্তহীন, গালে-টোপ-খাওয়া এক বৃদ্ধকে। আশ্রমের রূপ ও বিকাশ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ নিজে যাঁর সম্বন্ধে লিখেছিলেন, "আশ্রমের রক্ষী ছিল বৃদ্ধ দ্বারী সর্দার, ঋজু দীর্ঘ প্রাণসার দেহ। হাতে তার লম্বা পাকাবাঁশের লাঠি, প্রথম বয়সের দস্যুবৃত্তির শেষ নিদর্শন।"১ কেবলমাত্র রক্ষীর কাজই নয়, খাটো ধুতির উপর চামড়ার কোমরবন্ধ পরে খালি গায়ে লাঠি হাতে তিনি শান্তিনিকেতন আর বোলপুর যাতায়াত করতেন দিনে দু’বার করে। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর ডাকহরকরাও। সবাই তাঁকে সর্দার বলে ডাকতেন। তাঁর জীবনের গল্প শুনিয়েছেন সুধীরঞ্জন দাস। সে গল্পের কতোটা ইতিহাস আর কতোটাই বা কিংবদন্তি, তা বোধহয় আজ আর কেউ বলতে পারবেন না।
মানুষ এসেছে তো আফ্রিকা থেকে। তাহলে মানুষের সবচেয়ে পুরনো কবর আফ্রিকাতেই পাওয়া উচিৎ। যুক্তি তো তাই বলে। কিন্তু প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ তা বলে না। এখনও পর্যন্ত মানুষের সবচেয়ে পুরনো কবর পাওয়া গিয়েছে ইস্রায়েল'এ - মাউন্ট কারমেলের সখুল গুহায় এবং নাজারেথের কাছে খাফজিহ গুহায়। এগুলোর বয়স ৯০ হাজার বছর থেকে ১৩০ হাজার বছরের মধ্যে। ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে এ এক কুহেলিকা। অনেকে অবশ্য বলেন যে আফ্রিকাতে ঠিকঠাকভাবে খোঁজাখুঁজি করা হয়নি বলেই ওখানে মানুষের পুরনো কবর পাওয়া যায়নি। আবার শুকনো ইজরায়েলে গুহার ভেতরে ফসিল পাবার সম্ভাবনাও হয়তো বেশি।
বিশদ পড়ুন
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নাম শুনেছেন তো! সেই কোম্পানি যারা প্রায় গোটা ভারতীয় উপমহাদেশকে কব্জা করে রেখেছিল একশো বছর; সেই কোম্পানি গোটা পৃথিবী জুড়ে যার সাম্রাজ্য ছিল- সেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্মই নাকি হয়েছিল আমাদের এই বাংলার কোন এক অখ্যাত অঞ্চলের রাজধানী আর হাট-বাজারকে সাক্ষী করেই! কী, বিশ্বাস হচ্ছে না তো?
বিশদ পড়ুন
"মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা। তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালবাসা।" রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার পাওয়া উপলক্ষে ১৯১৩ সালে বাঙালি এবং বাংলা ভাষার প্রতি গভীর প্রেম ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে এই গানটি রচনা করেছিলেন অতুল প্রসাদ সেন। তিনি হয়তো কখনো কল্পনাও করেননি তার রচনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি দেশ প্রথমে ভাষা আন্দোলন ও তারপর মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। ভাষাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে যুক্ত হওয়া ও পরে স্বাধীনতা পাওয়ার দৃষ্টান্ত মানব সভ্যতার ইতিহাসে কমই আছে। বাঙালিরা এর অন্যতম পথিকৃৎ। হবে নাই বা কেন? মাতৃভাষার চেয়ে সুমধুর আর কি হতে পারে? তবে যাইহোক, বাংলা ভাষার আজকের যে রূপ আমরা দেখতে পাই তার বহুলাংশই আধুনিক কালে সৃষ্টি। বিদেশি সাহেব ও দেশীয় পণ্ডিতের কখনো সচেতন, কখনো অতিসচেতন, আবার কখনো অসচেতন কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই আজকের বাংলা ভাষার উৎপত্তি হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
এপ্রিল, ২০২১
রাত্রিবেলা ঘুম ভেঙেছে অন্ধকারে সিংহের জ্বলজ্বলে চোখের দিকে তাকিয়ে। সেই সিংহ আবার কোন এক প্রাচীন তৃণভূমিতে বাইসনের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। শেষমুহূর্তে বুঝতে পারলাম আমি সিংহের মুখগহ্বরে যাব না। আসলে অন্ধকার গুহায় প্রায় জীবন্ত পশুর ছবি দেখে আমি এক ঘোরে আছি।
কড়ি এক ধরণের মৃত সামুদ্রিক শামুকের (বৈজ্ঞানিক নাম: সাইপ্রিয়া মনেটা) খোল, যা মূলত ভারত মহাসাগরে পাওয়া যায়। এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশে মধ্যযুগে কড়ি বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হত। সাধারণাব্দের ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপ এবং আফ্রিকার মধ্যে যে দাস ব্যবসা চলত, তার একটা বড় অংশ হত কড়ির মাধ্যমে। প্রায় দুই সহস্রাব্দ ধরে কড়ি বাংলায় বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ, বাংলা বা তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে কড়ি পাওয়া যায় না, মালদ্বীপ থেকে ভারত মহাসাগরের সমুদ্রপথে কড়ি বাংলায় আমদানি করা হত। চতুর্দশ শতকের মরক্কোর পর্যটক ইবন বতুতা মালদ্বীপ ভ্রমণের সময় দেখেছেন, মালদ্বীপের অধিবাসীরা কড়ির বিনিময়ে বাংলা থেকে আমদানি করা চাল কিনতেন। ষোড়শ শতকের শেষদিক থেকে পর্তুগিজ বণিকরা ভারত মহাসাগরে বাণিজ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করার পর মুখ্যত পর্তুগিজরাই বাংলায় কড়ি আমদানি করত।
প্রথম নজরে চার্লস ডারউইনকে কোনোদিক থেকেই এক বিপ্লবীর ভাবমূর্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায় না। তাঁর চাইতে ন’বছরের ছোট কার্ল মার্ক্সের সঙ্গে তুলনা করলে ডারউইনকে নেহাতই ছাপোষা, তদানীন্তন ইউরোপীয় উচ্চবিত্ত পরিবারের এক সাধারণ সদস্য বলে মনে হবার কথা। যৌবনেও তাঁকে আর পাঁচজনের চাইতে অন্যরকম বা প্রতিভাবান বলেও মনে হয়নি। ডারউইনের বাবা ভাবতেন ছেলেটা কুঁড়ের হদ্দ, তার ওপরে জীবনে কোনও লক্ষ্য নেই। প্রথমে ডাক্তারি পড়ার বৃথা চেষ্টা করার পরে পাদ্রী হবার জন্য কিছুদিন পড়াশুনা করেন ডারউইন, তারপর সে পাঠও ছেড়ে দেন। ছোটবেলা থেকে ডারউইনের প্রকৃতি নিয়ে আগ্রহ ছিল বটে, কিন্তু সেটা তখনকার ইংল্যান্ডের অবস্থাপন্ন ঘরের ছেলেদের নেশা ছিল।
পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাসের যে চরিত্রগুলি আজকের দিনে সর্বজনবিদিত, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন তুতানখামুন। তুতানখামুন ছিলেন প্রাচীন মিশরের এক ফারাও। সিংহাসনে বসার আগে তাঁর নাম ছিল তুতেনখামেন। সিংহাসনে বসে তিনি প্রাচীন মিশরীয় দেবতা 'আমুন'এর নামানুকরণে নিজের নাম পরিবর্তন করে রাখেন তুতানখামুন। তবে এই নাম পরিবর্তন কোন কাজে আসেনি। মাত্র ১০ বছর রাজত্ব করার আনুমানিক ১৩২৪ সাধারণ পূর্বাব্দে মারা যান তুতানখামুন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯।
বাংলাদেশে বসবাসকারী আদিবাসী জনগোষ্টীর মধ্যে ‘চাকমা’ বা ‘চাঙমা’ সমাজ নানাকারণে বিশিষ্টতার দাবিদার। সাহিত্য-শিল্পকলা-শিক্ষা-সংস্কৃতিতে অগ্রগামী এই জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের আদিবাসী নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠও বটে। বাংলাদেশে প্রধানত পাহাড়ি চাদর আবৃত পার্বত্য চট্রগ্রামেই তাদের মূল আবাস। এছাড়াও ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরামের দক্ষিণাংশে, অরুণাচল, মিকির হিলসেও চাকমারা বাস করে। মিজোরামে ‘চাকমা অটোনোমাস ডিষ্ট্রিক কাউন্সিল’ নামে একটি এলাকাও আছে। মায়ানমারের আরাকানে, বাংলাদেশের কক্সবাজারের টেকনাফে ‘দৈংতাক’ নামে চাকমাদের আর একটা শাখা বসবাস করে, যারা সেখানে বাংলাদেশী চাকমাদের মতো নিজেদের ‘চাঙমা’ বলে।
সম্প্রতি ফ্রান্সে একটি ব্রোঞ্জ যুগের পাথর পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলেছেন যে, এটি সম্ভবত ইউরোপের প্রাচীনতম ত্রিমাত্রিক মানচিত্র। সেন্ট বেলেক নাম পরিচিত পাথরটি সম্ভবত ১৯০০ - ১৬৫০ সাধারণ পূর্বাব্দের। পাথরটি পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু বহু আগে। পল দ্য শ্যাটলার ১৯০০ সালে ব্রিটানির এক প্রাগৈতিহাসিক সমাধিক্ষেত্রে এটি খুঁজে পান। তিনি ছিলেন আঞ্চলিক ক্ষেত্র সমীক্ষক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ। তারপরে সকলে এর কথা ভুলে যায়। ২০১৪ সালে শ্যাটলাররের বাড়ির একটি পরিখার মধ্যে ভূগর্ভস্থ ঘরে এটি আবার পাওয়া গেল।
বিশদ পড়ুন
বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ, কোরআন, বাইবেল, আবেস্তা বা তালমুদ ইত্যাদির নাম শুনলেই ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে, ভক্তির আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। তেমনি বিপ্লব বা রেভোল্যুশন শব্দগুলি কানে গেলে বোধ করি বহু মানুষের; যার মধ্যে ইতিহাসবিদ, সমাজবিদ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যেমন আছেন তেমনি সাধারণ মানুষও আছেন, রক্ত গরম হয়ে ওঠে, মুষ্টিবদ্ধ হয় হাত। আচ্ছা, এই বিপ্লবী বা ভক্ত কোন দলের মধ্যেই কি কোন বিজ্ঞানীকে কল্পনা করতে পারেন? বিজ্ঞানের বিষয়গুলির মধ্যে এমন কোন শব্দ কল্পনা করতে পারেন যা বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞান শিক্ষিত ব্যক্তিদের ওপর এমন প্রভাব ফেলতে পারে?
বিশদ পড়ুন
যখন খুব ছোট ছিলাম, ঠাকুমা-দিদিমার কাছে আরাকানের মগদের ঘুমপাড়ানি গল্প শুনতাম। একটু বড় হওয়ার পর, কৈশোরে যখন পা দিচ্ছি, এই মগদের ওপরে লেখা বেশ কয়েকটা গল্পের বইও পড়েছিলাম। ভয়ঙ্কর জলদস্যু ছিলেন এই মগেরা। তাঁদের ভয়ে তঠস্থ হয়ে থাকতো বঙ্গোপসাগর পারাপারকারী জাহাজের লোকজন আর সমুদ্রকুলবর্তী বসতির বাসিন্দারা - সাধারণ অব্দের ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতকে।
বিশদ পড়ুন
বঙ্গ জীবন এই মুহূর্তে নির্বাচনকেন্দ্রিক। খবরের কাগজে নির্বাচন ছাড়া আর কোন কথা নেই। তবে একদিন এই নির্বাচনও শেষ হবে। যেমন করে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এসেছে ও গেছে একের পরে এক নির্বাচন। থেকে যাবে আমার ভারতবর্ষ। তার মানুষ। সেই মানুষের ইতিহাসচর্চা থেমে যাবে না। সেই মানুষ কেমনভাবে দেখবেন ইতিহাসকে? আর এখানেই ‘ইতিহাস আড্ডা’ তার সামান্য ক্ষমতা নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কারণ সামাজিক নীতি নির্ধারণে ইতিহাসের ভূমিকা থাকে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েই বিভিন্ন দল তাদের নীতি নির্ধারণ করেন।
বিশদ পড়ুন
মার্চ, ২০২১
সুরসিক সাহিত্যিক, সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত, অনুবাদক, বৈয়াকরণ রাজশেখর বসুর নাম আমরা শিক্ষিত বাঙালি মাত্রেই জানি। তাঁরই কনিষ্ঠতম সহোদর ভারতের প্রথম মনঃসমীক্ষক গিরীন্দ্রশেখর বসুর ক্ষেত্রে তা বলা যাবে না। গিরীন্দ্রশেখরও সংস্কৃত ভাষায় সুপণ্ডিত ছিলেন। সাহিত্যকর্ম হিসেবে ছোটোদের জন্য লেখা তাঁর ‘লালকালো’ বইটিও কম উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু তাঁর যে প্রধান কর্মক্ষেত্র ও গবেষণার বিষয় সেই মনঃসমীক্ষণ কখনই এদেশে খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। সিগমুন্ড ফ্রয়েডের তত্ত্ব নিয়ে ইউরোপে যত হৈ চৈ হয়েছে, তার পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত রূপ নিয়ে বিদ্যাজগতের লোক এবং নারীবাদীরা যত আলোচনা করেছেন, আমাদের দেশে নানা কারণে ততটা গুরুত্ব পায়নি এই তত্ত্ব। কিন্তু গিরীন্দ্রশেখর এদেশে ফ্রয়েডের তত্ত্বকে সরাসরি প্রয়োগ করার চেষ্টা করেননি। তিনি মনঃসমীক্ষাকে গুরুত্ব দিলেও দেশজ পরিপ্রেক্ষিতটিকে মাথায় রেখে তার এক স্বাধীন, স্বতন্ত্র রূপ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। সেটাই সবচেয়ে আগ্রহোদ্দীপক।
ইজরায়েলের মরুভূমির গুহায় ওই দেশের প্রত্নতাত্ত্বিকরা আবার ডেড সী স্ক্রোল আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছে। ডেড সী স্ক্রোল হল পাকানো চামড়ায় পুরনো দিনের লেখা। এগুলি পাওয়া গেছে ডেড সী-র পাশে এক গুহায়। সম্ভত দুই হাজার বছর আগে রোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ‘বার কোচবা’ ইহুদি বিদ্রোহের সময় এই স্ক্রোলগুলি এখানে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। ১৯৪০ সালে প্রথম পর্বে ডেড সী-র স্ক্রোল আবিষ্কৃত হয়। এগুলি হিব্রু বাইবেলের দ্বিতীয় প্রাচীনতম টিঁকে থাকা পাণ্ডুলিপি বলে মনে করা হয়। তরপর এতদিন বাদে আবার সেই ডেড সী-র স্ক্রোল আবিষ্কৃত হল।
জন্মলগ্ন থেকেই আমার দেশ বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণা। এ দেশে দুঃখের অনলে দগ্ধ হবার হোমযজ্ঞ যেমন আছে, তেমনই আনন্দ ধারায় শীতল স্নানের সপ্তনদী-সংস্কার আছে। এ মাটিতে যুদ্ধ হানাহানির ক্ষতবিক্ষত দাগ যেমন আছে, তেমনি এ মাটিতে সুপ্রাচীন কালের শিক্ষা ও সংস্কৃতির সুনিপুণ পদচিহ্ন আছে। আর সেই প্রাচীন সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে রয়েছে ভারতীয় নৃত্য। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন নৃত্যকলা হল ভরতনাট্যম নৃত্যকলা। কালক্রমে এই প্রাচীন নৃত্যকলা রূপে, রঙে পরিবর্তিত হলেও তার সুরের নদীতে বয়ে চলেছে বিশুদ্ধ আধ্যাত্মিকতা। তবে এর ইতিহাস বলে শুধু আধ্যাত্মিকতাই নয়, এ নদীতে বয়ে চলেছে অধ্যবসায়, অশ্রুধারা, সামাজিক ব্যাধির দুর্গন্ধ আর সংগ্রাম।
মাত্র এগারো বছরের একটি ছেলে তার মা বাবার সাথে মরুভূমিতে হাঁটতে গিয়ে খুঁজে পেয়েছে বাইবেলের যুগের একটি ছোট্ট সিরামিক মূর্তি। স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢাকা এক মহিলা, তার স্তন অনাবৃত, আর বাহু দুটি ভাজ করা আছে স্তনের নিচে। তীক্ষ্ণ নাসা এই নারী মূর্তিটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের পুরনো। যীশু তখনও জন্মান নি। সে হলো ওল্ড টেস্টামেন্টের যুগ। ৭ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৬ সেন্টিমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট স্ট্যাচুটি সম্ভবত একটি ছাঁচে ঢেলে তৈরি করা হয়েছিল।
গত আড়াই বছর ঝাড়খন্ডের রাঁচী শহর এক কুহকিনীর মায়ায় বেঁধেছিল। চোখ জুড়ানো মন ভুলানো ছোটনাগপুরের পাহাড় জঙ্গল তো আছেই। আর আছে নোমাডিক, সেমি নোমাডিক আদিম মানুষের চারণভূমি। খ্রীস্টপূর্ব দশ হাজার বছর বা তারও আগের মানুষের চিহ্ন ঝাড়খন্ড জুড়ে। যাদের কথা কেউ উচ্চারণ করতেও ভয় পায় - সেই "অসুর" তারা এখনো কিছু ঘর আছে ঝাড়খন্ডে - তবে বেশীদিন থাকবে না। তাদের কথা কিছু যে না জানলেই নয়।
সম্প্রতি মিশর থেকে একটি প্রাচীন প্যাপিরাস পাওয়া গেছে যাতে মমিকে সুগন্ধি মলম দিয়ে লেপে দেবার পদ্ধতির বিস্তৃত বর্ণনা আছে। এটি প্রাচীন মিশরের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ের আপাতত জ্ঞাত সবচাইতে প্রাচীন নির্দেশাবলী।
বিশদ পড়ুন
'মায়ের আগুনে চোখ'- এমনই নাকি বলা হত বারুদ এর আবিষ্কর্তা চীন দেশের মান্দারিন ভাষায় কামানকে! না, চীনা ভাষায় নয়। আমরা এখন সাক্ষী থাকছি যে কামানের গায়ের লিপির তার ভাষা ফারসি। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার, অসম্পূর্ণ পাঠোদ্ধারেও যেটুকু দেখা যাচ্ছে তাতেই কামানের গায়ে লেখা একই শব্দ - 'মায়ের আগুনে চোখ', Mother's hot eye!
বিশদ পড়ুন
ফেব্রুয়ারি, ২০২১
পম্পেই'এর কথা আমরা অনেক শুনেছি। অনেকেই হয়তো পড়েছি এডওয়ার্ড বুলবের-লিট্টন'এর লেখা "The Last Days of Pompeii" বইটাও। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের এই সমৃদ্ধ নগরী রাতারাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ৭৯ সাধারণ অব্দে - মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে।
প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে তৈরি হয়েছিল ভারতের স্বাধীন সরকার। তথ্যটা চমকে ওঠার মতোই আর সেটা কখনও কখনও ইতিহাস বইয়ের পাতায় ভুল করে জায়গা পেয়ে গেলেও এক লাইনের বেশি নেয়নি। তবে হ্যাঁ, আজাদ হিন্দ সরকারের মতন এই সরকারও তৈরি হয়েছিল ভারতের মাটিতে নয়, বিদেশে। কাবুলে তৈরি হয় এই সরকার।
বিগত প্রায় দুই সহস্রাব্দ যাবৎ ভারতীয় উপমহাদেশে ন্যায় চর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভাষা ও তথ্যের বিনির্মাণ। আশ্চর্যজনকভাবে এই বিনির্মাণ প্রাচীন বা মধ্যযুগে ইতিহাস চর্চায় কখনও প্রযুক্ত হয় নি। স্বল্প ব্যতিক্রমী বিদ্বানদের বাদ দিলে আধুনিক যুগের পূর্বে এই উপমহাদেশে তথ্য ভিত্তিক ইতিহাস রচনার সেরকম কোনও প্রয়াস দেখা যায়নি। যুক্তিসম্মত অনুসন্ধান ও তথ্যের তুলনাত্মক আলোচনার ভিত্তিতে ইতিহাসের পুনর্নির্মাণের পরিবর্তে কল্পিত ইতিহাসের নির্মাণের ধারা আজও এখানে জনমানসকে গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
আজ থেকে ত্রিশ হাজার বছর আগে নিয়েণ্ডারথাল মানব ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গেছে। সত্যি কি ওরা ‘নিশ্চিহ্ন’ হয়ে গেছে? নিয়েণ্ডারথাল মানবের জিনের একটা টুকরো এখনও রয়ে গেছে আমাদের জিনে, মানুষের জিনোমে। অর্ধেক ভারতীয়দের জিনোমে নাকি এই বিশেষ ডিএনএ-খণ্ড তথা জিনটি রয়ে গেছে। এটি আছে আমাদের ১২ নম্বর ক্রোমোজোমের মধ্যে। এতদিন পরে তার খোঁজ পড়ল।
শেষ কুড়ি বছরে জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা আধুনিক মানুষের বিবর্তন ও প্রব্রজন নিয়ে বহু নতুন তথ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে প্রাগিতিহাস ও ইতিহাস রচনায় অভূতপূর্ব দিকনির্দেশ করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘জিনবিদ্যা’ বা জেনেটিক্স। জিনবিদ্যাভিত্তিক গবেষণা ইতিহাস লেখাতে এনেছে যুগান্তর। জিনবিদ্যার সাহায্যে আমাদের দেহের ডিএনএ বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করা যায়, সত্তর হাজার বছর আগে একবার আধুনিক মানুষ প্রচন্ড ঠাণ্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়ায় বেরিয়ে পড়েছিল পূর্ব আফ্রিকা থেকে। ওই পরিযানের ফলে আধুনিক মানুষের যে দল আফ্রিকার বাইরে এসেছিল, আজকে আফ্রিকার বাইরে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তাদেরই উত্তরসূরী (চিত্র ১)।
১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ রায়কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যখন সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রীতে ভূষিত করে, সে সভায় তিনি বলেন “এখন এই উপমহাদেশে এমন একটা সময় এসেছে যেখানে চলচ্চিত্র পাঠ একাডেমিক স্তরে কেবলমাত্র চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নয়, চলচ্চিত্রবিদ্যার জন্য, যেমনভাবে আমরা সাহিত্য নিয়ে পড়ি, তেমনভাবে সিনেমা নিয়ে যেন পড়তে পারে। এই রকম ভাবনা থেকেই ইউ.জি.সি., যারা আমাদের পড়াশোনার বিষয়গুলি পরিচালনা করে তারা নবম পরিকল্পনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফিল্ম স্টাডিজ’ শুরু করেন। এই পঠনের সূচনায় যে তিনজন প্রধান অধ্যাপক ছিলেন, তাদের মধ্যে আমি একজন। যাদবপুরে এরকম দুটো বিষয় শুরু হয়েছিল, যার একটি হল ‘কম্পারেটিভ লিটারেচার’ বা ‘তুলনামূলক সাহিত্য’ - বুদ্ধদেব বসুর নেতৃত্বে এবং দ্বিতীয়টি হল ‘ফিল্ম স্টাডিজ’ বা ‘চলচ্চিত্রবিদ্যা’।
বিশদ পড়ুন
বারো থেকে ষোল লক্ষ বছর আগের উত্তর আমেরিকার উলি ম্যামথের দাঁত পাওয়া গেছে। এটা অবশ্য কোন খবর নয়। এরকম দাঁত আগেও পাওয়া গেছে। খবর হল, সেই ম্যামথের দাঁতের সফল ডিএনএ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। আগে দশ লক্ষ বছর যেন ছিল এক লক্ষণরেখা, যেন সেই সময়ের আগের কোন প্রাণীর ডিএনএ বিশ্লেষণ সম্ভব নয়, সম্ভব হয়ও নি।
বিশদ পড়ুন
প্রাচীন ভারতের যে ক'টি সাহিত্য কীর্তির নাম আমরা এক নিঃশ্বাসে উচ্চারণ করি তার মধ্যে একটি হলো শূদ্রক বিরচিত মৃচ্ছকটিক। কোনো সাহিত্যকীর্তি যখন ইতিহাসের আলোকে বিচার্য হয় তখন যে যে ক্ষেত্রগুলির আলোচনা অপরিহার্য হয়ে পড়ে সেগুলি হল— নাম পরিচিতি, লেখকপরিচিতি, ভাষা ও স্থান পরিচিতি, রচনার মধ্যে যদি কোন ঐতিহাসিক চরিত্র/ঘটনা থাকে তবে তার সনাক্তকরণ ইত্যাদি। এসবের পরে আসে রচনাটি সাহিত্যের কোন আঙ্গিকের অন্তর্ভুক্ত, সেটি পূর্বের কোন রচনার ছায়াবলম্বনে রচিত কিনা, প্রক্ষিপ্ত অংশ আছে কিনা এবং সর্বোপরি যা থাকে তা হল বর্ণিত কাহিনীর অনুসরণ। একে-একে বিষয় গুলি আলোচনা করা যায়।
বিশদ পড়ুন
টমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬)-এর নাম আমরা সবাই শুনেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। সে দেশের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি একজন। তার চেয়েও বড় কথা, তিনি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা (ডিক্লারেশন অফ ইন্ডিপেন্ডেন্স, 1776) রচয়িতা। এই ঘোষণায় বলা হয়েছিল, সব মানুষকে সমান করে সৃষ্টি করা হয়েছে; সৃষ্টিকর্তা তাদের সবাইকে এমন কিছু অধিকার দিয়েছেন যা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া যায় না— যার মধ্যে পড়ে জীবন, মুক্তি ও সুখের সন্ধানের অধিকার।
বিশদ পড়ুন
আমাদের পূর্বজদের খাদ্য কী ছিল? আজ থেকে চার হাজার বছর আগে উত্তর-পশ্চিম ভারতবর্ষে মানুষ কী খেতে পছন্দ করত? হরপ্পীয়রা কী শাকাহারি ছিল, নাকি সঙ্গে মাছ মাংস চলত? কীভাবে সে কথা জানা যেতে পারা যায়?
বিশদ পড়ুন
‘ইসলাম’ শব্দের একটি অর্থ হল আত্মসমর্পণ। এই যে নিজেকে সমর্পণ তা হবে নিঃসংশয় অর্থাৎ এতে কোনও সংশয় থাকবে না। নিশ্চিন্ত ও সংশয়শূন্য চিত্তে আল্লাহ-র প্রতি নিজেকে সমর্পিত করেন একজন মোমিন বা বিশুদ্ধ মুসলমান।
বিশদ পড়ুন
সম্প্রতি প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে ইজরয়েলের টাইবরিয়াসে সী অফ গালিলির দক্ষিণে একটি মসজিদের ভগ্নাবশেষ পাওয়া গেছে। হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক কাতিয়া সিট্রিন সিল্ভারম্যান বলছেন, এটি তৈরি হয়েছিল ৬৭০ সাধারণ অব্দে। একেবারে প্রাথমিক পর্বের মসজিদের গঠন ইত্যাদি বুঝতে এই মসজিদ সহায়তা করবে বলে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করছেন।
বিশদ পড়ুন
জানুয়ারি, ২০২১
‘Liberté, égalité, fraternité’। ‘সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতা’—ফরাসী বিপ্লবের বাণী। ফরাসী বিপ্লবের সশস্ত্র রক্ষাকর্তার ভূমিকায় নেপোলিয়ন বোনাপার্ত প্রথম পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। ১৮৯১ সালে বিপ্লবের অগ্নিবর্ষী সময়ে চরমপন্থী জ্যাকোবিন ক্লাবে যোগ দেন গোলন্দাজ বাহিনীর এই যুবক লেফটেন্যান্ট। পরের কয়েক বছর ধরে সেনাবাহিনীর মধ্যে নেপোলিয়নের দ্রুত পদোন্নতি হতে থাকল। আস্তে আস্তে তিনি সেনাবাহিনীর মধ্যে রাজতন্ত্র বিরোধী মিলিটারি সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হয়ে দাঁড়ালেন।
ঠিক কুড়ি বছর আগে ২০০১ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসে রিখটার স্কেলে ৭.৭ মাপের এক ভূমিকম্পে গুজরাটের মাটি কেঁপে উঠেছিল। তার এপিসেন্টার ছিল ভুজ শহর। আর ঠিক দু’বছর আগে ২০১৯ সালে সেই ভুজ-এর ১০০ কিলোমিটার দূরে ভূমির তলায় পাওয়া গেল প্রাক-হরপ্পীয় সভ্যতার এক নিদর্শন।
"তুমি যে হাসপাতালে সেটা শুনে খুব প্রীত হলাম। আমৃত্যু যেন যন্ত্রণা ভোগ কর সেই কামনা করি, নির্বোধ!" চিঠিটার নীচে স্বাক্ষর করেছিলেন 'একজন ইংলিশম্যান' । ১৯১৩ সালের জুনে এমিলি উইল্ডিং ডেভিডসন যখন হাসপাতালের মৃত্যু শয্যায়, তখন তাঁর কাছে এই চিঠি আসে। এমিলি ডেভিডসন, ইংল্যান্ডে নারীদের ভোটাধিকারের আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী। কয়েকদিন আগে তিনি এপসমের রাজকীয়, সম্ভ্রান্ত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ভোটাধিকার চেয়ে বিক্ষোভ করতে গিয়েছিলেন। ঘোড়ার লাথিতে আহত হন। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেই জ্ঞান আর ফেরেনি। ৮ই জুন মারা যান তিনি। মৃত্যুশয্যায় শুয়েও গালাগালি ভরা যে ধরণের চিঠি তিনি পেয়েছিলেন, তা থেকে স্পষ্ট, কীরকম ঘৃণা, বিদ্বেষ এবং হুমকির সম্মুখীন হতেন ভোটাধিকারের আন্দোলনের নারীরা।
হিন্দুধর্মের একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী লক্ষ্মী। তাঁর মন্দির বিশেষ নেই, কিন্তু হিন্দু সংস্কৃতিতে তাঁর উপস্থিতি সর্বব্যাপী। শুধু হিন্দু নয় বৌদ্ধ সংস্কৃতিতেও। তাঁর প্রাচীনতম রূপগুলি কিন্তু বৌদ্ধ শিল্পকলায়ই দেখা যায়। চলুন, এই কাহিনী শুরু করা যাক ভারতের স্থাপত্যশিল্পের একদম শুরুর যুগ থেকে। ভারতের দুটি প্রাচীনতম স্থাপত্য যাদের নিদর্শন এখনও বেশ ভালভাবে টিকে আছে- তারা হল সাঁচী আর ভরহুত। লক্ষ্মীরও প্রাচীনতম রূপ এই দুই জায়গাতেই। চলুন ক্রমানুসারে দেখি।
“বলতে পারো বড়মানুষ মোটর কেন চড়বে? / গরীব কেন সেই মোটরের তলায় চাপা পড়বে?” গরীব লোকের প্রাণের দাম চিরকালই কম। তারাই সামাজিক হিংস্রতার শিকার হয়। আর সেটা শুধু এদেশে নয়, সব দেশে। একালে নয়, প্রাচীন কালেও। ১১০০ সাল থেকে ১৫০০ সাল। এই সময়ের মধ্যে চালু ছিল কেমব্রিজের তিনটি কবরখানা। সেই কবরখানার কঙ্কালের অবশেষ খুঁড়ে আমাদের জানা সেই কথাটাই আবার প্রমাণ হল।
মনীষীদের জন্ম বা মৃত্যু দিনে আজকাল কিছু বলা বা লেখার দস্তুর চালু হয়েছে। সেই দস্তুর মেনেই এই রচনিকা। হয়ত কিছু কথা বিনিময়ের উপলক্ষ তৈরি করা যাবে। তবে এ ঠিক ইতিহাসের সমস্ত ব্যাকরণ মেনে লেখা নয়। এই লেখার সঙ্গে কেউ মন্তব্য-শিল্পের মিল পেলে তাকে দোষ দেওয়া যাবে না। তথ্য যুক্তি আর আবেগের রসায়নে সুভাষ বসুকে চেনায় এবং চেনানোয় আমাদের অনেক অপরাধ স্খালনের একটা সাবধানি সংক্ষিপ্ত প্রচেষ্টা হিসাবেই আপাতত কিবোর্ডে হাত রেখেছি।
বিশদ পড়ুন
[২০২১ সাল নেতাজী সুভাষচন্দ্রের জন্মের ১২৫ তম বার্ষিকী। এই উপলক্ষ্যে বাংলা ও দেশজুড়ে তাঁকে নিয়ে নতুন করে চর্চার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে চর্চার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে তাঁর রহস্যময় অন্তর্ধান ও তাঁকে নিয়ে গড়ে ওঠা নানা মিথ ও রহস্য কাহিনী। আই. এন. এ. র বীরত্বপূর্ণ লড়াই বা মহানিষ্ক্রমণ নিয়ে কিছু চর্চার বাইরে তাঁর রাজনীতির বিভিন্ন পর্বকে ইতিহাসের পটে রেখে সামগ্রিক আলোচনা বেশ কম। কয়েকটি পরস্পর সম্পর্কিত লেখায় আমরা সেই চর্চার দিকে জোর দিতে চাই। বর্তমান নিবন্ধটিতে তার সূচনা। এখানে আলোচিত হয়েছে বিশ শতকের বিশের দশকে তরুণ সুভাষচন্দ্র যখন আই. সি. এস. এর চাকরী ছেড়ে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, তখনকার রাজনৈতিক ইতিহাস। এই পর্বে সুভাষ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অনুগামী।]
বিশদ পড়ুন
ইন্দোনেশিয়ায় সুলাওসি অঞ্চলে এক গুহায় পাওয়া গেছে আধুনিক মানুষের আঁকা পৃথিবীর প্রাচীনতম পশু চিত্র ও জ্ঞাত রূপক চিত্র। এই চিত্র আঁকা হয়েছে কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ হাজার বছর আগে। ওখানে বন্য শূকর ও বন্যা গবাদির স্থানীয় কোন প্রজাতির কিছু গুহাচিত্র আঁকা হয়েছে। এগুলি মানুষের একেবারে প্রাথমিক সৃজনশীলতার উদাহরণ। প্রকৃতপক্ষে বন্য শূকরকের একটি বিশাল চিত্রকর্ম এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত পৃথিবীর প্রাচীনতম মনুষ্যকৃত রূপক শিল্পের উদাহরণ বলা যায়।
বিশদ পড়ুন
কার্তিক বা কার্তিকেয় দেবতা দেবসেনাপতি, যুদ্ধের দেবতা, মহাযোগী, বিদ্যার পৃষ্ঠপোষক, তস্করের উপাস্য, বন্ধ্যানারীদের সন্তান উৎপাদনের দেবতা ইত্যাদি বিভিন্নভাবে হিন্দুধর্মে পূজিত হন। তবে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ঋগ্বেদে (আনু. রচনাকাল: ১২০০ - ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) ‘কার্তিকেয়’ নামে কোনো দেবতার উল্লেখ নেই। পরবর্তী বৈদিক যুগের (আনু. ১০০০ - ৬০০ খ্রি. পূ.) ছান্দোগ্য উপনিষদ ও সামবিধান গ্রন্থে ‘স্কন্দ’ নামে এক দেবতার উল্লেখ রয়েছে।
বিশদ পড়ুন
প্রথমেই আলোচ্য, শিশুপালগড়ের সাথে মহাভারতের শিশুপালের কোনও সম্পর্ক নেই। শিশুপালগড় ভুবনেশ্বর থেকে আট কিলোমিটার দুরের এক পরিত্যক্ত প্রত্নশহর বা দূর্গশহর। এই প্রত্নশহরটির নামাকরণ হয়েছে পাশের একটি ছোট গ্রাম, শিশুপাল গ্রাম তার নামে। এমন নামাকরণের কারণ, এর আসল নাম আজ আর কারও জানা নেই, তবে কিছুটা আন্দাজ করা যায়। সম্ভবত এর নাম ছিল কলিঙ্গনগর, অথবা তোশালী। আন্দাজের সূত্র, কাছাকাছি এলাকায় পাওয়া দুটি শিলালিপি।
বিশদ পড়ুন
তুতো-ভাই ফ্রান্সিস গ্যালটন বই লিখলেন, ‘হেরেডিটারি জিনিয়াস’, অর্থাৎ ‘বংশগত প্রতিভা’। তুতো-দাদা চার্লস ডারউইন সেটা পড়ে ভাইকে চিঠি লিখলেন, “এক অর্থে তুমি একজনের মত বদল করাতে পেরেছ। আমি চিরকাল বিশ্বাস করতাম যে নেহাত কয়েকজন বোকা ছাড়া মানুষের বুদ্ধির দৌড়ে তেমন ফারাক নেই, তফাৎ যেটুকু তা উৎসাহ আর পরিশ্রমে ফারাকের জন্য হয়।”
বিশদ পড়ুন
৭৯ সাধারণ অব্দে ইতালির নেপলসের কাছে ভিসুভিয়াস পর্বতের অগ্ন্যুৎপাতের কথা সকলেই জানি। ওই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে লাভার সঙ্গে ছাই, পাথর ইত্যাদি নির্গত হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর থেকে নির্গত পদার্থের পরিমাণ ছিল ৩ ঘন কিমি। আর সেই ছাই ও পাথরে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল পম্পেই শহর। আজও সেই শহরে গেলে দেখা যায় প্রস্তরীভূত মানুষের দেহ। খুঁজে পাওয়া যায় ওই সময়ের ইতালির ইতিহাসের কিছু উপাদান।
বিশদ পড়ুন
গায়ের লোম থেকে টপ টপ করে জল ঝরছে। ঝুপ্পুস ভিজে সবাই। জল পড়েই চলেছে কদিন ধরে। ঠান্ডা লাগার ভয়, সর্দিকাশি হ্যাঁচ্চোর বোধ নেই কারো। বাজ পড়ল দূরে কোথাও। দুদিন আগের শিকার বুনো শূকরটা কিছু আছে। আর এক কাঁদি কলা আরো কিছু ফলপাকড়। থম মারা আকাশ আর দমচাপা গরম দেখেই আন্দাজ হয়েছিল কদিন বেরোনো যাবে না। খাবার মজুত। বাচ্চারা ঘুমিয়ে আছে। জোয়ান ছেলে মেয়েদের সময় কাটছে না। পাথরের মেঝেতে টুকরো পাথর ঘষে চলেছে কেউ কেউ - ক্রমশ ছুঁচলো হয়ে উঠছে তার অগ্রভাগ। রাশি রাশি বর্শার ফলার মতো প্রস্তর অস্ত্র নির্মিত হয়ে জমা থাকে গুহার কোণে। ক্ষুধা নিবৃত্তি--প্রস্তর। আত্মরক্ষা--প্রস্তর।
বিশদ পড়ুন
না, ব্যাপারটার সাথে খাওয়াদাওয়া বা নামী কোনও রেস্তোরাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। ‘খাইবার’ একটা জাহাজের নাম। ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীর এক যোদ্ধা ক্রুজার এইচ.এম.আই.এস খাইবার। প্রখ্যাত নাট্যকার উৎপল দত্ত “কল্লোল” নামে একটা নাটক লিখেছিলেন। সেই নাটক মঞ্চেও আলোড়ন ফেলেছিল প্রবলভাবে। ১৯৪৬-এর নৌবিদ্রোহের উপর লেখা এই নাটক প্রবল বিতর্ক তোলে। প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেয় জাতীয় নেতাদের ভূমিকাকে। ষাটের দশকের গণ আন্দোলনে উত্তপ্ত বাংলায় এই নাটক হয়ে দাঁড়ায় সরকার বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম অস্ত্র। ভারতের স্বাধীনতা ঝুটা না সত্যি এই প্রশ্ন তোলার সাথে সাথে ‘কল্লোল’ প্রশ্ন তোলে ভারতের রাষ্ট্রচরিত্র নিয়েও। এই নাটক রচনা ও পরিচালনার কারণে উৎপল দত্তকে রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়তে হয়। জেল খাটতে হয় স্বাধীন ভারতবর্ষে।
বিশদ পড়ুন
বিগত শতকের ঠিক এই সময়টা; বিশ্ব তখন রণক্লান্ত, সাধারণের অর্থনৈতিক অবস্থা অচল, বিশেষত প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে পরিস্থিতি ভয়ংকর। ভারতবর্ষ সহ নানা দেশ তখন লড়ছে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায়। কিছুদিন পরেই ফ্যাসিস্ট শক্তি ক্রমশ গ্রাস করবে ইউরোপের পশ্চিমা আকাশ। শুরু হবে চরম অর্থনৈতিক মন্দা। পুরনো সাম্রাজ্যবাদ জায়গা করে দেবে নতুন সাম্রাজ্যবাদকে। শতকের মাঝেই থাকবে আরও ভয়াবহ এক যুদ্ধ।
বিশদ পড়ুন
ডিসেম্বর, ২০২০
ওয়াল্টার ক্লেমেন্ট নোয়েল, আফ্রিকান বংশজাত যুবক। দাঁতের ডাক্তারি পড়তে গ্রেনাডা থেকে শিকাগো এসেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই নোয়েলের শারীরিক সমস্যা ছিল অনেক। ১৯০৪ সালে বছর কুড়ির নোয়েল শ্বাসকষ্ট-জনিত সমস্যা নিয়ে শিকাগোর প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালে ডা. জেমস হেরিকের অধীনে ভর্তি হলেন। তার দেখাশোনার ভার পেলেন একেবারে শিক্ষানবিশ এক যুবক ডাক্তার, আর্নেস্ট আয়রন। নোয়েলের রক্ত নিয়ে ডা. আয়রন তার অণুবীক্ষণে দেখলেন, রক্তের লোহিতকণিকাগুলো স্বাভাবিক বর্তুলাকার নয়, কেমন লম্বাটে। লোহিতকণিকাগুলোর এই ভিন্নতা দেখে সঙ্গে সঙ্গে ডা. জেমস হেরিকের সঙ্গে কথা বললেন ডা. আয়রন।
১৮৯০-এর ২৮ নভেম্বর সাবিত্রীবাই ফুলে তাঁর বিগত পঞ্চাশ বছরের বন্ধু ও সহকর্মী, স্বামী ও শিক্ষক মহাত্মা জ্যোতিরাও ফুলের শেষযাত্রা ও শেষকৃত্যের লোকাচার নিজের হাতে সম্পন্ন করেন — নিজেই এগিয়ে এসে জলভরা ঘট হাতে শেষযাত্রায় সামনে থাকেন ও চিতায় আগুন দেওয়ার কাজ নিজ হাতেই করেন। ২০০৮ সালে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং’ কর্তৃক প্রকাশিত পুস্তকে এই ঘটনাকে “ভারতের বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম কোনও নারীর হস্তে শেষকৃত্যের লোকাচার সম্পন্ন হল” বলে বর্ণনা করা হয়েছে।১ ব্রাহ্মণ্যবাদী বিধানে শেষকৃত্যের অধিকার কেবলমাত্র পুরুষ উত্তরাধিকারীর ওপরই অর্পিত। সাবিত্রীবাই এই পিতৃতান্ত্রিক বিধান অমান্য করেছিলেন।
সাম্প্রতিক কালে মহাভারত মহাকাব্যের ঘটনাবলী ও চরিত্রগুলির ঐতিহাসিকতা, প্রাচীনতা, প্রামাণ্যতা ইত্যাদি নিয়ে সুবিপুল আলোচনা চলছে সারা ভারত জুড়ে। স্বাভাবিকভাবেই একটি প্রশ্ন উঠবে, কি ধরনের আলোচনা? একটি উদাহরণ দেওয়া যাক।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানালোচনার গোড়াপত্তন করেছিলেন ইউরোপীয়রা। সূচনাটি হয়েছিল ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট মে লিখিত গণিত গ্রন্থ থেকে। কিন্তু অধিকাংশ ইউরোপীয় লেখকদের ভাষা ছিল কৃত্রিম ও জটিল। ভাষার ওই কৃত্রিমতা দুর করে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানকে দেশীয় সাজে সজ্জিত করলেন অক্ষয়কুমার দত্ত। অবশেষে বাঙলা সাময়িক-পত্রে প্রথম শ্রেণীর বৈজ্ঞানিক আলোচনা সর্বপ্রথম পাওয়া গেল 'বিদ্যাদর্শন' পত্রিকায়। ১৮৪২ সালের জুন মাসে। পত্রিকাটির অন্যতম পরিচালক ছিলেন অক্ষয়কুমার দত্ত, যাঁকে বলা যেতে পারে পাশ্চাত্য বিজ্ঞানকে দেশীয় সাজে সজ্জিত করবার পথিকৃৎ।
বিশ শতকের ছয়ের দশকে বাংলায় ইঞ্জিন চালিত সেচ-যন্ত্রের প্রচলন শুরু হয়। এর পূর্ব পর্যন্ত সনাতন পদ্ধতিতেই সেচ কার্য পরিচালিত হতো। সে সনাতন সেচ পদ্ধতি কতটা প্রাচীন অথবা বাংলার কৃষিতে সেচের প্রয়োজন ছিল কি না- তা ইতিহাস গ্রন্থসমূহে উল্লিখিত হয়নি। তবে বাংলার সনাতন সেচ প্রযুক্তি সম্ভবত ফোকলোর চর্চায় প্রথম আলোচিত হয়েছে। সম্ভবত বাংলাদেশে সর্বপ্রথম অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল জলিল ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে ‘লোকবিজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি’ গ্রন্থ রচনা করেন। একই সালে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয় বরুণকুমার চক্রবর্তী রচিত ‘লোক প্রযুক্তি’।
সাধনপদ্ধতি হিসাবে কীর্তনের প্রয়োগ সম্ভবতঃ ভক্তিধর্মের উত্থানের একদম গোড়ার দিক থেকেই। বৌদ্ধ সহজিয়া সাধনাতেও সমবেতভাবে আধ্যাত্মিক গান গাওয়ার প্রচলন ছিল (উদাঃ চর্যাগীতি)। বাংলায় বিভিন্ন আকর গ্রন্থে (চৈতন্যমঙ্গল, চৈতন্য চরিতামৃত) ‘সংকীর্তনদাতা’ বা ‘সংকীর্তনপ্রবর্তক’ হিসাবে শ্রীচৈতন্যের নাম পাওয়া যায়। অর্থাৎ, একভাবে মনে করা হয়, তিনি উপাসনার বিশেষ পদ্ধতি হিসেবে কীর্তনের প্রচলন করেন। জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গলে দেখি, শ্রীচৈতন্য বলছেন-
বিশদ পড়ুন
বাদামি স্থাপত্যশৈলী যা শুরু হয়েছিল আইহোলেতে এবং আরও উন্নত হয়েছিল বাদামিতে, তার সম্পূর্ণ বিকশিত রূপ হল পাট্টাদাকাল।
বিশদ পড়ুন
সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় একটি স্মৃতিচারণায় বলেছেন, লন্ডন থেকে কলকাতায় ফিরছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক। বিমানে ওঠার আগেই কি মনে হল, তিনি ফোন করলেন কলকাতায় এক ছাত্রকে। ফোনে বললেন, বিমানবন্দরে পৌঁছেই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চান। সেই বিমান পৌঁছনোর সময় বুঝে জনাকয়েক ছাত্র হাজির হলেন। ১৯৬৪ সালের জুলাই–আগস্ট মাসের কথা। কলকাতায় সেদিন ভ্যাপসা গরম। বিমান আসতে দেরি হল পাক্কা দুই ঘন্টা। প্রবীণ অধ্যাপক এলেন বিমানের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায়, এলেন গুমোট কলকাতায়। জেনে নিলেন, ছাত্ররা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। সোজা গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্রামের নামগন্ধও নিলেন না। ছাত্রদের শোনালেন লন্ডনে ২১ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল জিওগ্রাফিকাল ইউনিয়নের (আইজিইউ) দ্বাদশ সম্মেলনের নানা অভিজ্ঞতা।
বিশদ পড়ুন
কিশোর বয়সে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘তুমি সন্ধ্যার মেঘ’ উপন্যাস পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেখানেই প্রথম পরিচয় ঘটে বঙ্গাধিপ জাতবর্মা ও তাঁর পিতা বজ্রবর্মার সাথে। পরবর্তীতে যখন আরও পড়াশুনার সুযোগ এলো, দেখলাম প্রাচীন বাংলার ইতিহাস গৌড়েশ্বর শশাঙ্ককে দিয়ে শুরু হয়ে পাল-সেন যুগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে ! তবে কি জাতবর্মা – বীরশ্রী শুধুই ঔপন্যাসিকের কল্পনা? বইপত্র ঘাঁটতে শুরু করি। ক্রমশ জেনে আশ্চর্য হলাম, পাল, সেন রাজন্যদের বাদ দিয়েও চন্দ্র, বর্ম, খড়্গ, মল্ল, দেব, রাত কত কত রাজবংশের উত্থান পতনের সাক্ষী ছিল এ বাংলা।
বিশদ পড়ুন
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বাংলার লোকগীতিকাগুলি একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছে। ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য বাংলা গীতিকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করে দেখিয়েছেন - ক) নাথ গীতিকা, খ) মৈমনসিংহ গীতিকা, গ) পূর্ববঙ্গ গীতিকা। জনপ্রিয়তার রাজপথে নাথ সাহিত্যকে পিছনে ফেলে মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা সহস্র যোজন এগিয়ে গেছে। মৈমনসিংহ গীতিকা ও পূর্ববঙ্গ গীতিকাতে জাতি সম্প্রদায়হীন মানব প্রেমের মহিমা এবং লোকজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বাস্তব জীবনের সুখ দুঃখের কথা বর্ণিত আছে। আর আছে শতাব্দী- প্রাচীন মাটি, জল, বাতাস, বন-জঙ্গল আর ইতিহাসের গন্ধ।
বিশদ পড়ুন
নভেম্বর, ২০২০
প্রাচীন ভারতের ভাষাচিন্তার কথা উঠলেই যাঁর নাম সবার প্রথমে মাথায় আসে তিনি হলেন পাণিনি। তাঁর সময়কালটি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে তাঁর লেখা অষ্টাধ্যায়ী সেকালে যেমন প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছিল, তেমনি একালেও বিভিন্ন ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক ভাষাচর্চায় তা প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাণিনির আগেই শব্দ উৎস সন্ধান করে যাস্ক লিখেছিলেন তাঁর নিরুক্ত। অন্যান্য নিরুক্তকারদের রচনা আমরা পাই নি। পাণিনির পরে ভারতীয় ব্যাকরণ চর্চায় যে দুই বিখ্যাত ভাষাচিন্তকের নাম আমরা পাই তাঁরা হলেন খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর কাত্যায়ন এবং খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতকের পতঞ্জলি।
‘না, না, না, ট্যাক্স না দিলে কোনও মতেই ছাড়া যাবে এগুলোকে’ ব’লে উঠেন হেডেন। হেডেন (পুরো নাম: Edward long Hedden ১৮২৮-১৮৯৩) তখন ন্যু ইয়র্ক জাহাজঘাটার ‘কন্ট্রোলার অব দ্য পোর্ট অব ন্যু ইয়র্ক' পদে কর্মরত ছিলেন। বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যর উপর ট্যাক্স সংগ্রহ করাই ছিল তাঁর কাজ। ‘আরে ট্যাক্স তো আনাজের উপর ধার্য করেছেন সরকার। ফলের উপর আবার কিসের ট্যাক্স?’ প্রশ্ন করেন আনাজ ও ফল ব্যবসায়ী জন নিক্স। ঝানু ব্যবসায়ী নিক্স যে কিছু খবর রাখেন না তা নয়। ন্যু ইয়র্ক শহরের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান তখন। স্বাভাবিক ভাবেই জনসংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে আনাজ ও ফলের চাহিদা। কিন্তু আনাজ বা ফলের সেই চাহিদার তুলনায় আনাজের জোগান কোথায়? শহরে আনাজ বা ফলের ঘাটতি দেখেই না ১৮৩৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন ‘জন নিক্স অ্যান্ড কো. ফ্রুট কমিশন’। বারমুডা, কিউবা, ফ্লোরিডা প্রভৃতি অঞ্চল থেকে জাহাজে করে আনাজ আর ফল আমদানি করে বেশ দু’পয়সা কামিয়েও ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। ন্যু ইয়র্ক শহরে নিক্স অ্যান্ড কো.-এর ভালোই পসার তখন। শুধু নিক্সই নন, নিক্সের মতো আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী সস্তায় আনাজ আমদানি করে ভালোই পসার জমিয়েছেন শহরে। আর এটা যে কেবল ন্যু ইয়র্ক শহরের চিত্র তা নয়। দেশের বিভিন্ন শহরে আনাজ আমদানির ব্যবসা করে লক্ষ্মী লাভ করেছেন বেশ কিছু ব্যবসায়ী। এই ব্যবসাদারদের দাপটে আবার প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে পারছেন না দেশি চাষিরা। লাভ তো পরের কথা, দেশের মাটিতে আনাজ উৎপাদন করতে যা ব্যয় করতে হচ্ছে তাঁদের, সেই টাকাটাই ফেরত পাচ্ছেন না তাঁরা। দেশের মাটিতে আনাজ চাষ আর লাভজনক নয় দেখে আনাজ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কিছু চাষি। কেউ কেউ পড়েছেন বিরাট লোকসানের মুখে। দেশি আনাজ বনাম বিদেশি আনাজের দ্বন্দ্ব তখন জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হতে শুরু করেছে। বিষয়টা নিয়ে সরগরম হতে শুরু করেছে রাজনীতির আঙিনা। সরকারও পড়েছেন চিন্তায়। দেশি চাষিদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হলে তার প্রভাব পড়বে ভোট ব্যাঙ্কে। আর ঝুঁকি নেননি সরকার। দেশি চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় আনলেন নতুন আইন। ৩ মার্চ ১৮৮৩, ইউএস-এর প্রেসিডেন্ট (১৮৮১-১৮৮৫) চেস্টার আর্থার (পুরো নাম : Chester Alan Arthur ১৮২৯-১৮৮৬) সই করলেন নতুন আইন ‘ট্যারিফ অ্যাক্ট অব ১৮৮৩’তে। সেই আইন মোতাবেক, সমস্ত আমদানিকৃত আনাজের উপর বসল ১০% কর। তবে ছাড় দেওয়া হলো ফলের ক্ষেত্রে। ফল আমদানিতে নতুন কোনও ট্যাক্স চাপানো হলো না।
যে সকল গানের বাণী বাংলা ভাষায় রচিত, সে সকল গানের সাধারণ নাম 'বাংলা গান'। এই সংজ্ঞানুসারে বাংলা গানের প্রাথমিকভাবে দুটি উপাদান পাওয়া যায়। এর একটি হলো বাংলা ভাষায় রচিত গানের বাণী। অপরটি হলো- সুর ও ছন্দ। এই বিচারে বলা যায়, বাণীই সুর ও ছন্দের সুসমন্বয়ে গান হয়ে ওঠে। অবশ্য সঙ্গীতজ্ঞরা বলেন যথার্থ গান হতে হলে- একটি স্থায়ী ও কমপক্ষে একটি অন্তরা থাকতেই হয়। এর কম হলে সেটা গানের ছটা হতে পারে, গান হয়ে উঠবে না।
রাজা রামমোহন রায়ের ইংল্যান্ড যাত্রার প্রায় ৬৫ বছর আগে, নদীয়ার মানুষ মির্জা শেখ ইতিসামুদ্দীন প্রথম বিলেত যাত্রা করেন। ১৮৩১ সালে দিল্লির বাদশাহের হয়ে দূতকার্য করতে ইংল্যান্ড যান রাজা রামমোহন রায়। কিন্তু আমরা জানি কি, তারও প্রায় ৬৫ বছর আগে দিল্লির বাদশাহের দূত হয়ে নদীয়ার মানুষ ইতিসামুদ্দীন ইংল্যান্ড যান ওই একই কাজে? দুজনেরই কাজ ও গুরুত্ব ছিল একই। কিন্তু, দুর্ভাগ্য, ইতিসামুদ্দীনের কথা মানুষ মনে রাখেননি; মনে রাখেননি তার লেখা অমূল্য ভ্রমণ বৃত্তান্তকেও!
ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে ধর্ম এবং রাজনীতির সম্পর্ক সমসাময়িক ভারতে খুবই প্রাসঙ্গিক। অন্তত স্বাধীন ভারতের রাষ্ট্রের যে রূপ আমরা দেখতে অভ্যস্ত ছিলাম, তা গত কয়েক বছরে কিছুটা হলেও বদলেছে। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বহু দেশই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি সাংবিধানিক অর্থে ব্যবহার করলেও রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং ধর্মের সম্পর্ক কিন্তু ইতিহাসগত ভাবেই স্বীকৃত। আলোচ্য প্রবন্ধটি সেই আন্তঃসম্পর্ককেই মূল বিষয় ধরে রচিত। তবে এ ক্ষেত্রে স্থান ও সময় প্রাচীন কালে নিহিত। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, গুপ্ত যুগে মধ্য ভারতের বিদিশা নগরীই এই প্রবন্ধে আলোচিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে উদয়গিরির বরাহ অবতার মূর্তিটিকে। শিল্প ও স্থাপত্যের নিরিখে মূর্তিটি নতুন ভাবে বর্ণনার দাবি রাখে না। তবে রাজনৈতিক ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রেও মূর্তিটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য. প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা কীভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক আধিপত্য স্থাপন এবং একটি অঞ্চলকে সুসংহত করার চেষ্টা করে। সেই আলোচনার কেন্দ্রেই রয়েছে এই মূর্তিটি।
আমরা সবাই ছোটবেলায় বিদেশি লোক-কাহিনীর সেই ছোট্ট জঙ্গলবাসী মেয়ে রেড রাইডিং হুড-এর কথা পড়েছি, যাকে ধরে খাবে বলে বনের এক নেকড়ে চাদর মুড়ি দিয়ে তার ঠাকুমার রূপ ধরে তার কুঁড়েঘরে ঢুকে পড়েছিল। ছোট্ট মেয়ে যখন জিজ্ঞেস করল, ও ঠাকুমা, তোমার দাঁতগুলো অত বড় বড় কেন গো, নেকড়ে তার উত্তরে বলেছিল, কেন হে, তোমাকে কড়মড়িয়ে চিবিয়ে খাবার পক্ষে সে তো ভালই হবে! ওই ছোট্ট মেয়ের পক্ষে মর্মান্তিক উত্তরই বটে। তবে কিনা, ঋষি অ্যারিস্টোটল ঘটনাটা জানতে পারলে হয়ত খুশি হয়ে নেকড়ে বাবাজির পিঠ চাপড়ে দিতেন, কারণ, সে অন্তত তার বড় বড় দাঁতগুলোর অস্তিত্বের একটা ‘উদ্দেশ্যমূলক কারণ’-এর কথা স্বীকার করেছে, জীবনকে অর্থহীন বলে মেনে নেয় নি। জগত-সংসারের মধ্যে অর্থ সরবরাহকারী এই রকম ‘উদ্দেশ্যমূলক কারণ’-কে অ্যারিস্টোটল যে নাম দিয়েছিলেন, আজকের দর্শনবেত্তারা ইংরিজিতে তার তর্জমা দাঁড় করিয়েছেন ‘ফাইনাল কজ’ --- বাংলায় হয়ত ‘পরমকারণ’-ও বলা চলতে পারে। অ্যারিস্টোটল বলতেন, সমস্ত ঘটনার পেছনে আমরা যে ‘কারণ’ খুঁজি, সেই ‘কারণ’ আসলে চার রকমের ............
বিশদ পড়ুন
আমাদের এক স্কুলশিক্ষক বন্ধু সংশয়িত প্রশ্ন করেছিলেন একদিন— “ভাবলে অবাক লাগে, বিদ্যাসাগর বর্ণপরিচয় লিখেছিলেন বলেই বাঙালি শিশুর অ-আ-ক-খ লিখতে শেখা শুরু হয়েছিল। তার আগে তাহলে শিশুদের অক্ষরজ্ঞান হত কীভাবে?” এ প্রশ্ন কেবল তাঁর নয়, অনেক পরিণতমনস্ক মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্মিত কৌতূহল রয়েছে, দেখেছি আমি। বাঙালির কাছে সত্য-মিথ্যা নানা অতিমানবিক মিথের সমাহার ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় নামক মানুষটি সম্পর্কে এই আর একটি মিথ হল— বাংলা বর্ণশিক্ষার বইয়ের জনক তিনি।
বিশদ পড়ুন
১৯৪৪-এর অক্টোবর মাসে বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’ নাটক প্রথম মঞ্চস্থ হয় কলকাতার শ্রীরঙ্গম থিয়েটারে। তারপর গণনাট্য সংঘের এই নাটকটি ভারতের নানা জায়গায় ‘ভয়েস অফ বেঙ্গল’-এর অঙ্গ হিসেবে মঞ্চস্থ হয়ে কীভাবে সাড়া ফেলে দিয়েছিল, সে কথা ইতিহাসে লেখা আছে উজ্জ্বল অক্ষরে। কিন্তু যা হয়তো সেভাবে লেখা নেই, তা হলো ‘নবান্ন’ নাটকের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনে পঞ্চাশের মন্বন্তরের অভিঘাত। যেমন ধরুন, সে সময়ে আশুতোষ কলেজের ছাত্রী ১৮/১৯ বছরের তৃপ্তি মিত্র কীভাবে দেখেছিলেন মন্বন্তরকে, ‘নবান্ন’-এ ছোট বউ বিনোদিনীর ভূমিকায় অভিনয়ের সময় কীভাবে উৎসারিত হতো তাঁর সেই দেখা—এগুলোর কথা আমাদের অজানাই রয়ে গেছে অনেকাংশে।
বিশদ পড়ুন
অক্টোবর, ২০২০
অনেক উচ্চাশা এবং স্বপ্ন নিয়ে ইংরেজ বণিক জব চার্নক এদেশে আসেন ১৬৫৮ সালে, ছোটবেলায় ইতিহাস বইয়ে একথা আমরা সবাই পড়েছিলাম। বহুদিন তিনি ভারতের মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক সাধারণ কর্মচারী হিসাবে। ১৬৮৬/৯০ সালে শুরু হয় কোম্পানির সঙ্গে মুঘলদের ধুন্ধুমার লড়াই। প্রাণ হাতে নিয়ে কোম্পানির লোকজন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি তে পলায়ন করে। কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়া তো ইংরেজদের রক্তে নেই। তাই ইতিহাসে দেখতে পাই আবার সেই মুঘলদেরই খুশি করে কোম্পানির কুঠি তৈরি হয় সুতানুটিতে ১৬৯০ সালের ২৪ শে আগস্ট। চার্নক তখন কোম্পানির সর্বেসর্বা। তবে ব্যক্তিগত ভাবে চার্নক আদৌ খারাপ লোক ছিলেন না। নইলে কি সতীদাহের চিতা থেকে এদেশীয় মেয়েকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন, নিজেরও তো প্রাণ সংশয় হতে পারত, ধর্ম- উন্মাদ ব্যক্তিদের হাতে। শুধু উদ্ধার করাই নয়, হিন্দুরা যখন সেই মেয়েকে ঘরে নিয়ে যেতে অস্বীকার করে তখন তাকে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করে নাম দেন 'মারিয়া', এবং একেই বিয়ে করেন। এতবড় ঔদার্য তখন দেখানো সহজ কথা ছিল না।
“বোধায় জাতোঽস্মি জগদ্ধিতার্থমন্ত্যা ভবোৎপত্তিরিয়ং মমেতি। চতুর্দিশং সিংহগতির্বিলোক্য বাণীং চ ভব্যার্থকরীমুবাচ।।” - অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিত, ১.১৫ [অনুবাদ: ‘আমি বোধির জন্য ও জগতের হিতকামনায় জন্মগ্রহণ করেছি, সংসারে এই আমার শেষ উৎপত্তি’, সিংহগতি বোধিসত্ত্ব চতুর্দিক নিরীক্ষণ করে এই ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করলেন।(রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুবাদ অবলম্বনে)]
সহসাই হাসির কলরোলে ভরে উঠল কারাগারের ছোট্ট ঘরটা। উপস্থিত শ্রোতার হোহো করে হেসে উঠেছেন তখন। দমফাটা হাসির দমকে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়িয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। হাসির লহরি যেন থামতেই চায় না আর। ঠোঁটে হাল্কা হাসি ঝুলিয়ে বন্দি কিন্তু তখনও রসিয়ে রসিয়ে বলে চলেছেন তাঁর কাহিনী। শ্রোতার শশব্যস্ত হয়ে হাসি চেপে চুপ করে গেলেন, পাছে গল্পের পরের অংশটা যদি শুনতে না পান তাঁরা। বন্দি বলে চলেছেন তাঁর কাহিনীর পরের অংশ। বিচিত্র সেই কাহিনী শুনে কখনও শ্রোতাদের চোখ একেবারে ছানাবড়া, তো কখনও টানটান উত্তেজনায় নিষ্পলক দু’চোখ, ঘরে পিন পড়ার নিস্তব্ধতা তখন।
দুর্গাপূজার শুরু ঠিক কবে থেকে, তাঁর নিশ্চিত মীমাংসা করা খুব কঠিন। চতুর্থ শতকের মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর অংশই শ্রী শ্রী চণ্ডী বা সপ্তশতী চণ্ডীতে বলা হয়েছে, মেধা মুনির নির্দেশে ভিল রাজা সুরত প্রথম কাত্যায়নী দেবীর পূজা করেন। পৌরাণিক এই কাহিনীর কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া সম্ভব নয়। আবার, পঞ্চদশ শতাব্দীর কৃত্তিবাস ওঝার রামায়ণ বলছে, বনবাসকালে রাবণের সঙ্গে যুদ্ধে বিজয় কামনায় রামচন্দ্র দুর্গার প্রচলিত কাহিনী, সেখানে একটি নীলপদ্ম কম পড়ায় রামচন্দ্র নিজের চোখ উৎসর্গ করতে চান, ইত্যাদি। কিন্তু, রামের দুর্গাপূজার কাহিনী কেবলই বাঙলা রামায়ণেই। সংস্কৃত, হিন্দি বা অন্য কোনও ভাষার রামায়ণেই তার উল্লেখ নেই।
শারদোৎসব এসে পড়েছে। তবে এবছরটা তো অন্যরকম। বিশ্বজুড়ে ভয়ংকর অতিমারী কোভিডের দাপটে সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। পশ্চিম বঙ্গে পরীক্ষিত কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ, মৃত্যু পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবুও অনেক নাগরিক এই উৎসবের আনন্দে সামিল হবেন। পুজোর সময়ে জনসমাগম ঘটলে আক্রান্তের হার দ্রুত গতিতে বাড়তে পারে। একই সময়ে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়লে সকলকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। তাই সাবধানে থাকুন।
ঊনবিংশ শতকের শেষ ও বিংশ শতকের গোড়ায় বিজ্ঞানবিশ্বে এক বৈপ্লবিক আলোড়ন শুরু হয়েছিল। সনাতনী ধ্যানধারণা ভেঙে পড়ছিল। নতুন বোধ তৈরি হচ্ছিল। নিউটনীয় যান্ত্রিকতার যুগ থেকে অপেক্ষবাদ ও কোয়ান্টাম বীক্ষার যুগে উত্তরণের সেই পর্বে তাত্ত্বিক প্রতীতি ও পরীক্ষামূলক প্রমাণের কাজে যারা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম তিন বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বোস ও চন্দ্রশেখর বেঙ্কট রামন। আধুনিকতার সেই চেতনা প্রবাহে অগ্রদূত হয়ে ১৯২০’র দশকে সামনে আসেন তাঁরা, এবং দেশীয় জ্ঞানচর্চার ধারায় সঞ্চারিত করেন বিশ্বলোকের সাড়া।
বিশদ পড়ুন
বুদ্ধ আর যীশুর একটা জায়গায় মিল আছে। দুজনেই নূতন ধর্মের প্রবর্তক, তবে সেটা নয়, অন্য একটা সাদৃশ্যের কথা আমরা বলব। সেটা হল, দুজনেরই প্রথম প্রতিকৃতি পাওয়া গেছে তাঁদের মৃত্যুর কয়েক শতাব্দী পর থেকে। তাঁরা বাস্তবে কেমন দেখতে ছিলেন সেটা জানার পক্ষে একটা বড় অন্তরায় এটা। ওঁদেরকে যারা জীবিত অবস্থায় দেখে গেছে তারাও এই পৃথিবীতে ছিল না যখন ওনাদের প্রথম মূর্তি বা ছবি তৈরী হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
নাগরিক জীবন ক্রমশ হয়ে উঠেছে পাপসঙ্কুল। ধনী নগরবাসীর ইন্দ্রিয়াসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে; অপর দিকে গরীব মানুষ দুই বেলার খাদ্যের জন্য সারাদিন পরিশ্রম করে দু’মুঠ খুদকুঁড়া সংগ্রহ করতে পারে না। আমার দুর্ভাগ্যের বর্ণনা করি। পূর্বজীবনে ছিলাম এক বণিক। ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে প্রাচীন জনপদ সৌনাগড়াতে বেসাতি করতাম। ছিল মূল্যবান পাথরের ব্যবসা। স্বর্ণকাররা আমার থেকে পাথর কিনে অলঙ্কার তৈরি করত।
বিশদ পড়ুন
মহেঞ্জোদারো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কঙ্কালগুলো নানা জল্পনা কল্পনার জনক। জল্পনা-কল্পনার প্রেরণা হল এই কঙ্কালগুলো নিয়ে প্রকৃত তথ্যের প্রচারের অভাব। এই কঙ্কালগুলোর সম্বন্ধে সব তথ্য, একত্রে এক জায়গায় পাওয়া কঠিন। এই লেখায়, এই কঙ্কালগুলো নিয়ে যাঁরা সরাসরি কাজ করেছেন শুধু তাঁদের লেখা তথ্যকেই স্থান দেওয়া হল। চেষ্টা রইল সমস্ত জল্পনা কল্পনার অবসান হোক।
বিশদ পড়ুন
ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসচর্চা প্রায় ফরাসি বিপ্লবের পরেই শুরু হয়েছিল। ১৭৮৯ সালের ২৭ জুন আর্থার ইয়ং লিখেছিলেন যে, ‘সমস্ত ব্যাপারটাই মিটে গেছে এবং বিপ্লব সমাপ্ত হয়েছে।’ ইয়ং দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সে ভ্রমণ করেছিলেন এবং তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন।১ এডমন্ড বার্ক তার ‘রিফ্লেকশন্স অন দ্য ফ্রেঞ্চ রিভোলিউশন’ গ্রন্থে বিপ্লবকে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখেছিলেন।২ মিশলের ‘ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস’ ১৭৯৪ সালে রোবসপিয়েরের মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। নেপোলিয়নের দাবি ছিল যে তিনি বিপ্লবকে ১৭৯৯ সালে সমাপ্ত করেছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের চরিত্র, কারণসমূ্‌হ, তাৎপর্য, বিভিন্ন কুশীলবের ভূমিকা, বিপ্লবের প্রভাব ইত্যাদি সমস্ত দিক দিয়েই ঐতিহাসিকরা দুশো বছরের বেশি সময় ধরে পর্যালোচনা করেছেন এবং নিজেদের অনুভূতি, মতাদর্শ ও সময়ানুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
বিশদ পড়ুন
বাঙালিমাত্রই চর্যাপদ নামটির সঙ্গে পরিচিত। বিষয়বস্তুর সঙ্গেও অল্পবিস্তর। এই চর্যাপদ তথা চর্যাগীতি, তার রচনাকার, রচনাকাল, লিপি, ভাষা, ছন্দ, সুর, বিষয়বস্তু, বহিরঙ্গের অর্থ, অন্তরঙ্গের অর্থ, বৌদ্ধ সাধন তত্ত্ব, দর্শন, কাব্যরস, সমাজজীবন - সবকিছু নিয়ে একটি জটিল বিষয়। এর সবকটি দিককে লেখায় আনা আমার সাধ্যাতীত। আমি চর্যাপদে উল্লিখিত সমাজচিত্র (তা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হলেও) সম্পর্কে কিছু আলোচনার চেষ্টা করবো মাত্র।
বিশদ পড়ুন
সেপ্টেম্বর, ২০২০
বহুদিন আগেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া কাব্যগ্রন্থে 'সবলা' শীর্ষক কবিতায়, ২৩শে আগস্ট ১৯২৮ সালে। "নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার হে বিধাতা? নত করি' মাথা পথপ্রান্তে কেন রব জাগি ক্লান্তধৈর্য প্রত্যাশার পূরণের লাগি
পূর্ববর্তী অধ্যায়ের লিংক: সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস (তৃতীয় অধ্যায়) ম্যাচো ম্যানস সিগারেট বনাম স্যার হিল ও স্যার ডল ওয়েন ম্যাকলারেন, ৫২ বছর। মৃত্যুর কারণ ফুসফুসের ক্যানসার। এরিক লসন, ৭২বছর। মৃত্যুর কারণ ফুসফুসের ক্রনিক রোগ। ডেভিড ম্যাকলীন, ৭৩ বছর। মৃত্যুর কারণ ফুসফুসের ক্রনিক রোগ ও ফুসফুসের ক্যানসার। একটি আমেরিকান সিগারেট কোম্পানি ১৯২৪ সালে মহিলাদের জন্য একটি সিগারেট … Continue reading "সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস (চতুর্থ এবং শেষ অধ্যায়)"
পূর্ববর্তী অধ্যায়ের লিংক: সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস (দ্বিতীয় অধ্যায়) অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির হারিয়ে যাওয়া দাদা আচ্ছা, এমন যদি হয় যে রোগীকে অপারেশন টেবিলে তোলা হল, অজ্ঞান করা হল, চামড়া কাটা হল, কিন্তু তারপরে আসল অপারেশন না করে কাটা চামড়া জুড়ে দেওয়া হল? রোগীকে বলাও হল না তাঁর অপারেশন হয়নি? আজকালকার দিন হলে নির্ঘাত খবরের কাগজে “ডাক্তার না কশাই” … Continue reading "সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস (তৃতীয় অধ্যায়)"
পূর্ববর্তী অধ্যায়ের লিংক:সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস (প্রথম অধ্যায়) ওয়াশিংটনের মৃত্যু জর্জ ওয়াশিংটন। আমেরিকার স্বাধীনতা-যুদ্ধের বীর। আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট। ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি লম্বা পেটানো শরীর। সাতষট্টি বছর বয়সেও তাঁর স্বাস্থ্য খুব ভাল ছিল। ছোটবেলায় গুটিবসন্ত হয়েছিল, কাবু করতে পারেনি। পরে প্রথমে যক্ষ্মা ও তারপর ম্যালেরিয়া সামলে নিয়েছিলেন দিব্যি। প্রবাদপ্রতিম জেনারেল – এক যুদ্ধে চারটে গুলি তাঁর … Continue reading "সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস (দ্বিতীয় অধ্যায়)"
সে বড় সুখের সময় নয়, অন্তত ব্রিটেনের পক্ষে। ফ্রান্সে তখন নেপোলিয়ানের রাজত্ব। তিনি ব্রিটেন আক্রমণের ছক কষছেন। ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর সামনে ইংরেজ সেনাবাহিনী দাঁড়াতে পারবে না। ব্রিটেনের একমাত্র আশা, যদি বিভিন্ন বন্দরেই ফরাসী আর তাদের সঙ্গে থাকা স্প্যানিশ নৌবহরকে আটকে দেওয়া যায়। কিন্তু তাই বা হবে কী করে? ফরাসী নৌবহরকে বোতলবন্দী করে রাখতে গেলে ইংরেজদের জাহাজগুলোকে পাঠাতে হয় দূরে। কিন্তু কিছুদিন দূরে থাকবার পরেই নৌসেনা আর নাবিকরা অসুস্থ হয়ে পড়ে—মাড়ি ফুলে গিয়ে রক্ত বেরোয়, দাঁত পড়ে যায়, হাঁটু ফোলে, পা দুটো যায় দুর্বল হয়ে, চামড়ায় লাল-লাল দাগ হয়ে যায়। কোনও কাজেই লাগতে পারে না তারা।
ইতিহাস কেবল তথ্যের ভাণ্ডার নয়, অতীতের ঘটনাবলীর বিবরণ নয়। এক নির্দিষ্ট সময়ের ঘটনাবলীর তথ্যনিষ্ঠ বিবরণ বিশ্লেষণ করে ইতিহাস। আবার ইতিহাসের ছায়ায় আমরা অনুধাবন করি আজকের ঘটনাক্রম। অতীতের সাথে মিলিয়ে নিই বর্তমানকে। একটা সময়ে ইতিহাস লেখা হয়েছে পরাক্রমশালী রাজন্যের প্রশ্রয়ে। তাদের আশীর্বাদধন্য ঐতিহাসিকেরা পোষকের বিরুদ্ধে গিয়ে সম্পূর্ণ আখ্যান লিপিবদ্ধ করতে পারতেন না, হয়তো বিজয়ীপক্ষে থাকায় তাঁরা তা চাইতেনও না।
বিশদ পড়ুন
আমার প্রবন্ধের এই আপাত নিরীহ শিরোনামটি কিন্তু বস্তুত রীতিমতো বিপত্তিপূর্ণ। তার কারণ এক্ষেত্রে প্রথম প্রশ্ন হল, একটি মাত্র ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অস্তিত্বই কি ইতিহাসে দেখা যায়, আর যদি তা-ই হয় সেক্ষেত্রে সেই জাতীয়তাবাদ কি গোটা ভারতবর্ষ জুড়েই বিরাজমান ছিল। বর্তমান সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনাটিতে আমি এ বিষয়ে কয়েকটি মূল বিষয়কেই শুধু ছুঁয়ে যেতে পারি। সুতরাং একেবারে গোড়াতেই বলা যাক যে আম্বেদকরের সঙ্গে যখন গান্ধী-নেহরুর তুলনা করার কথা বলা হয় তখন তার মধ্যে কী ধরনের সমস্যা জড়িত থাকে।
বিশদ পড়ুন
ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস লেখা যখন শুরু হয়, সবার মনেই যে নামটি প্রথম আসে তা হল ঋগ্বেদ। বেদ মানে জ্ঞান, কিন্তু সেই জ্ঞান আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকেন্দ্রীক নয়। তাই এমন একটি সাহিত্যের আলোচনা করাতে চাই, যার জ্ঞান আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত।
বিশদ পড়ুন
ইংরেজ আমলের অবিভক্ত নদীয়া জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হলে কৃষ্ণনগরের রাজা ও স্থানীয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের তৎপরতায় মাউন্ট ব্যাটেন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হলেন। রাতারাতি রেডক্লিফ লাইন পরিবর্তন করে নদীয়ার কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট মহকুমাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হল। আর মেহেরপুর,কুষ্ঠিয়া,চুয়াডাঙ্গাকে পূর্ব পাকিস্তানের (অধুনা বাংলাদেশের) অন্তর্ভুক্ত করা হল। নদীয়া জেলার মাটির মতো সংস্কৃতিও দুই ভাগ হয়ে দুই বাংলাতে রয়ে গেল।
বিশদ পড়ুন
বর্তমান বিহারের নালন্দা জেলায় অবস্থিত, প্রাচীন মগধের দুই প্রধান নগর রাজগৃহ ও পাটলিপুত্রকে সংযোগকারী রাজপথের ধারে অবস্থিত নালন্দার বৌদ্ধ মহাবিহারের গৌরবের ইতিহাস বিগত কয়েক দশক যাবৎ ভারতের প্রায় সব বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত। কিভাবে পঞ্চম শতকের শুরুতে গুপ্ত বংশের সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থাপিত পূর্ব ভারতের বৌদ্ধশাস্ত্রের, বিশেষতঃ মহাযান ধর্মশাস্ত্র ও বৌদ্ধ মূর্তিনির্মাণশাস্ত্র চর্চার এই মহান বিদ্যাপীঠের পঠন-পাঠনের সমাপ্তি ঘটল, এই প্রশ্নের উত্তরে, বোধহয় প্রায় সবাই বলবেন, ‘নালন্দা মুসলিম আক্রমণকারী বখতিয়ার খলজি ধ্বংস করেছিল।‘ এই বিশ্বাস জনমানসে অত্যন্ত ব্যাপক, এবং এর কারণ সম্ভবতঃ বিংশ শতক থেকে বহু আধুনিক বিদ্বানদের রচনায় এই বিশ্বাসের অভিব্যক্তি। এই বিদ্বানদের অনেকেই আবার নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ১১৯৩, ১১৯৭, ১১৯৮, ১২০০ ১২০২, ১২০৫ বা ১২০৬ সাধারণাব্দের মধ্যে কোন একটি বর্ষকে এই ‘ঘটনা’র সম্ভাব্য তারিখ বলে চয়ন করেছেন।[১]
বিশদ পড়ুন
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরের এক শীতল ও সিক্ত সন্ধ্যায় ইংল্যান্ডের সোয়াস-এ, বিশিষ্ট লেখক গুলাম মুর্শিদ মন্তব্য করেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ মুসলিম সমাজ সম্পর্কে তেমন কিছু লেখেননি। প্রয়াত অধ্যাপক ধ্রুব গুপ্ত অবশ্য এই মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে জানিয়েছিলেন, মুসলিম সমাজের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক কেবলমাত্র পরিমাণগত দিক থেকে বিচার করা ঠিক নয়। বরং এই বিষয়ে বিশ্বকবির আলোচনাগুলির গুণগত মূল্যায়ন করতে পারলে তা আরও অর্থবহ হবে। রবীন্দ্রনাথের মুসলিম সমাজের উপর আলোচনায় যে অন্তর্দৃষ্টির গভীরতা লক্ষ্য করা যায়, তা এমনকি ইসলাম সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পর্যন্ত বিস্মিত করে। প্রকৃতপক্ষে এই কারণেই আমি উত্সাহিত হয়েছি এই রকম কম আলোচিত ভূখণ্ডে ঐতিহাসিক গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যেতে।
বিশদ পড়ুন
অবহেলিত এক প্রত্নক্ষেত্র আনুলিয়া- দেবলগড়। পাওয়া গিয়েছে গুপ্তযুগের থেকে শুরু করে সুলতানি আমলের বিভিন্ন প্রত্নপ্রমাণ। অপেক্ষা এখন উৎখননের।
বিশদ পড়ুন
আগস্ট, ২০২০
ছাত্রজীবনে সুলতানি যুগের ইতিহাসের ওপর বাংলা পাঠ্যবই বলতে মিহির কুমার রায়, অসিত কুমার সেন- এদের লেখাই ছিল প্রধানত। অনিরুদ্ধ রায় ২০০৫ সালে লিখলেন ‘মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসঃ সুলতানী আমল’। ইংরেজি বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত নাম ছিল সতীশ চন্দ্রের ‘মধ্য ভারতঃ প্রথম খণ্ড (১২০৬-১৫২৬)’। এই বইগুলিতে সুলতানি যুগের ইতিহাস নিয়ে যে তথ্যের উল্লেখ ছিল তার প্রথম পরিবর্তন আসে পিটার জ্যাকসনের লেখায়। সত্যি বলতে, ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত তার বইটি (The Delhi Sultanate: A Political and Military History) আমাদের বাংলা বইয়ে পড়া অনেক ধারণাকে পাল্টে দিয়েছিল।
মানভূম, মল্লভূম, বরাভূম - বাংলার এক উপেক্ষিত প্রান্তদেশ। পুরুলিয়া জেলার রুক্ষ লালমাটি আর শুষ্ক পাহাড় টিলা কতশত ভুলে যাওয়া ইতিহাসকে যে আঁচল চাপা দিয়ে রেখেছে তার কোনো লেখাজোখা নেই। ভাদু-টুসু-ছৌ এর দেশ পুরুলিয়া, বৌদ্ধ-জৈন-লৌকিক ধর্মের বহু বিবর্তনের সাক্ষী সে। তবে আজ শুধু জৈন কথা।
আমাদের কথা কয়েকজন বন্ধু একত্রিত হয়ে ঠিক করেছিলাম বাংলায় ইতিহাসের ফেসবুক গ্রুপ তৈরী করতে হবে। মঞ্চের মূল অভিমুখ থাকবে নিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক তথ্য নির্ভর ইতিহাস আলোচনার দিকে। সেখানে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ইতিহাস নিয়ে মৌলিক চর্চা হবে আবার ইতিহাসের আড্ডাও চলবে। ‘ইতিহাস তথ্য ও তর্ক’ গ্রুপ দুই বাংলার অজস্র শুভানুধ্যায়ীর প্রশ্রয়ে বিরাটাকারে ডালপালা মেলেছে। বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ সেখানে … Continue reading "মতবিনিময়"
ক্যাতিন, এক ছোট্ট গ্রাম্য বনাঞ্চল, রাশিয়ার স্মলেন্সক থেকে আনুমানিক ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বন-জঙ্গলের এই ছোট্ট জায়গাটির নাম দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে জড়িত। এ জায়গাটির সাথে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার পোলিশ সৈনিক, সেনাকর্মকর্তা আর বুদ্ধিজীবী গণহত্যার ঘটনা, যার জন্য দায়ী করা হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের এন. কে. ভি. ডি.-কে। এই এন. কে. ভি. ডি. বা ‘পিউপিলস কমেসারিয়েত অফ ইন্টারনাল এফেয়ারস’ সোভিয়েত গুপ্ত পুলিশ হিসাবেও পরিচিত।
জালিয়ান‌ওয়ালাবাগ হত্যা কাণ্ড সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি জানি। রবীন্দ্রনাথ নাইটহুড ত্যাগ করেছিলেন জানা। পুরনো ব‌ই নিয়ে কাজ করতে করতে স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি নজরে এলো। ১৯১৯ সালের ৩ জুন স্টেটসম্যান পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের চিঠিটি প্রকাশিত হয়। স্টেটসম্যান তখন ছিল ইংরেজ মালিকানাধীন কাগজ। জালিয়ান‌ওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল। আর রবীন্দ্রনাথ নাইটহুড ত্যাগ করেছিলেন মে মাসের ৩১ তারিখে চিঠি দিয়ে।
কারণটা ছিল ব্যাংকে গচ্ছিত ববি ফিশারের অর্থ। পরিমাণটা নেহাত কম ছিল না। ১৪০ মিলিয়ান আইস্ল্যান্ডিক ক্রোনার। অর্থাৎ দু’ মিলিয়ান আমেরিকান ডলারের বেশি। তাই তিনি মারা যাওয়ার পরেই তাঁর সেই সম্পত্তির স্বত্ব নিয়ে টানাপোড়েন আরম্ভ হতে বেশি সময় লাগলো না। প্রথমে মার্কিন সরকার আইসল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রকের কাছে সুদ সমেত ফিশারের বকেয়া ট্যাক্স আদায় করার জন্যে দাবী করে বসলো। এদিকে আমেরিকা থেকে ববি ফিশারের প্রয়াত দিদি জোয়ানের স্বামী রাসেল টার্গ তার দুই ছেলে আলেক্সজান্ডার আর নিকোলাসকে নিয়ে হাজির হলেন রেইকিয়াভিকে। রক্তের সম্পর্কে জীবিত আত্মীয় হিসাবে তাঁরাও ববি ফিশারের সঞ্চিত অর্থের উপর নিজেদের দাবী জানালেন।
বিশদ পড়ুন
প্রতিদিন ক্যামেরা হাতে দেশ বিদেশের প্রচুর সাংবাদিক তখন জড়ো হচ্ছেন উশিকু ডিটেনশন ক্যাম্পে। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ কোনো অবস্থাতেই ববি ফিশারের সাথে তাঁদের দেখা করার অনুমতি দিতে রাজি নন। প্রথমে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় তারপর গায়ের জোরে সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো কারারক্ষীরা। কোনোক্রমে একজন স্থানীয় রিপোর্টার ভিতরে ঢুকে অনেক দূর থেকে ববি ফিশারকে দেখতে পেলেন। চিৎকার করে ববি ফিশার জানালেন তাঁকে একটা জানলা বিহীন ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঢোকে না সেই কুঠুরিতে। অনেক উপরে একটা ছোট ঘুলঘুলি ছাড়া কিছু নেই। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে আশেপাশের সেলগুলো থেকে তীব্র কটু তামাকের গন্ধ তাঁকে অস্থির করে তুলছে।
বিশদ পড়ুন
প্রথাগত দাবা খেলার তুলনায় এই ম্যাচটা ছিল অনেকটাই আলাদা। প্রাথমিক নিয়ম অনুযায়ী এটা ছিল অত্যন্ত দ্রুত গতির খেলা। তাই সাংবাদিকরা এর নাম দিয়েছিলেন ব্লিৎস গেম। ববি ফিশারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্তরে দীর্ঘ কুড়ি বছর বাদে এটাই ছিল প্রথম টুর্নামেন্ট। এমনিতেই ববি ফিশার কোনোদিনই চাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশি সময় নিতেন না কিন্তু দেখা গেলো এবারে তাঁর গতি যেন অনেক বেশি দ্রুত। তুলনায় বরিস স্প্যাসকি সামান্য বেশি সময় নিতেন। তবে তিনিও জিনিয়াস ছিলেন।
বিশদ পড়ুন
এই ঘটনার পিছনে জিটা রাজ্যাক্স্যানি নামে হাঙ্গেরির এক তরুণী দাবাড়ুর বিরাট অবদান আছে। ববি ফিশার যে বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন সেই বছরই অর্থাৎ ১৯৭২ সালে জন্ম হয়েছিলো তার। মাত্র সতেরো বছর বয়সে হাঙ্গেরির জাতীয় যুব চেস চ্যাম্পিয়ান হওয়া ছাড়াও খুব ছোটবেলা থেকেই জিটা রাজ্যাক্স্যানি ছিলেন ববি ফিশারের অন্ধ ভক্ত। এই জিটা রাজ্যাক্স্যানি ১৯৯১ সালের শেষ দিকে দেখা করার অনুমতি চেয়ে ববি ফিশারের ঠিকানায় বেশ কয়েকটা চিঠি পাঠান। প্রথম দিকে কোনো সাড়া না মিললেও ১৯৯২ সালের জানুয়ারি মাসে ববি ফিশারের কাছে থেকে জবাব পেলেন তিনি।
বিশদ পড়ুন
১৯৭২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের খেতাব জয়ের পর থেকে ববি ফিশার বাস্তবিক অর্থে কোনো অফিসিয়াল চেস টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন না। ১৯৭৫ সালে খেতাব রক্ষার লড়াইয়ে ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন তাঁর খেতাব বাজেয়াপ্ত করলেও তিনি লিখিত ভাবে কোনো প্রতিবাদ জানাননি। ১৯৭৭ সালে তিনি একবার ম্যাসাচুসেটস গিয়েছিলেন। সেখানে 'ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'-র বিখ্যাত কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড গ্রিনব্ল্যাট কৃত্রিম মেধার সাহায্যে এক বিশেষ ধরণের চেস খেলার প্রোগ্রামিং তৈরী করে ববি ফিশারকে খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গ্রিনব্ল্যাটের দাবি ছিল যে তার কম্পিউটার পৃথিবীর যে কোনো গ্র্যান্ডমাস্টারকে রুখে দিতে সক্ষম। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো তিনবার খেলে তিনবারই জিতলেন ফিশার।
বিশদ পড়ুন
এমনিতে ভারতবর্ষে দাবার ইতিহাস যথেষ্ট পুরনো। ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই ভারতে সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে দাবা খেলার প্রচলন শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল ‘চতুরঙ্গ’। পরে ভারত থেকে খেলাটা আমদানি হয় পারস্য বা আধুনিক ইরানে। সেখানে আবার খেলাটার নাম দেওয়া হয় ‘শতরঞ্জ’। পরে ইরান দখল করার পর আরবরা এই খেলাটার সাথে পরিচিত হয়। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাটরাও ‘শতরঞ্জ’ খেলতে উৎসাহী ছিলেন। তবে তখন খেলাটা সীমাবদ্ধ ছিল দরবারের আমির ওমরাহ আর ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এরপর মুঘল ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই দাবা খেলা চলে আসে দক্ষিণ ইউরোপে। তারপর ইউরোপ থেকেই এই খেলাটা মূলত আজকের আধুনিক দাবার রূপ নেয়। দাবা খেলায়‘ চেকমেট’ শব্দটা খুব সম্ভব ইরানে প্রচলিত ‘শাহ মাত’ কথাটা থেকেই এেছে ।
বিশদ পড়ুন
শ্রীরামচন্দ্র নিয়ে বিস্তর হইচইয়ের বাজারে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো গ্রুপট্রুপ খুলে তামাম বাঙালি জাতির বাপ-চোদ্দপুরুষ উদ্ধার চলছে - দেশের প্রথমসারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাদীপ্ত কিছু ছাত্র সে প্রকল্পের মুখ্য হোতা - কলকাতার মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করা বেহারি তরুণ ডাক্তার জানাচ্ছেন, কলকাতায় পড়তে আসার সময় তাঁর মা পইপই করে বাঙালিদের থেকে, বিশেষত বাঙালি মেয়েদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।
বিশদ পড়ুন
একটা দেশের ইতিহাস জানার জন্য তার প্রযুক্তির ইতিহাস এবং সংস্কৃতির ইতিহাস জানা প্রয়োজন। সেই ইতিহাসের খোঁজেই আমাদের এই যাত্রা, সময়ের বিপরীতক্রমে একটি যাত্রা। আসুন বসুন আমার টাইম মেশিনে, চলুন প্রাচীনতম হিন্দু মন্দিরের খোঁজে।
বিশদ পড়ুন
মাত্র সত্তর হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে মানুষ (Homo sapiens) মাইগ্রেট করেছে; একদিন পৌঁছে গেছে ইউরেশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে। আগে ওরা থাকত আফ্রিকাতে। এই সত্তর হাজার বছর ধরে পৃথিবীতে মানুষের জয়যাত্রা চলছে। তবে মহাকালের মানদণ্ডে সত্তর হাজার বছর অতি নগণ্য সময়। পৃথিবী কবে তৈরি হল? মানুষের জয়যাত্রার সত্তর হাজার বছর আমাদের এই নীল গ্রহের ইতিহাসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কবে এসেছে প্রথম প্রাণের স্পন্দন? তা, পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪৫৪ কোটি বছর হয়ে গেল।
বিশদ পড়ুন
১৯৭০ সালের নভেম্বর আর ডিসেম্বর মাসে স্পেনে ইন্টারজোনাল টুর্নামেন্টের আসর বসে | এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্যে পয়েন্টের বিচারে সারা পৃথিবীর দাবা খেলিয়ে দেশগুলোর সেরা চব্বিশজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হলো | এইবার কিন্তু আমেরিকা থেকে ববি ফিশার অংশ নিলেন | শুধু তাই নয় সাড়ে আঠেরো পয়েন্ট পেয়ে তালিকায় সবার শীর্ষে রইলেন তিনি | নিয়মমতো এই টুর্নামেন্টের প্রথম ছয় জন সুযোগ পেলেন ১৯৭১ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে | সাথে পূর্ববর্তী মানে ১৯৬৮ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের দুই ফাইনালিস্টের সুযোগ পাওয়ার কথা | কিন্তু যেহেতু বরিস স্প্যাসকি আগেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়ে গেছেন তাই এইবার রানার্স আপ ভিক্টর করশনয় আর তৃতীয় স্থান অধিকারী মিখায়েল তাল-এর নাম নথিভুক্ত করা হলো | মোট আটজনকে নিয়ে মে মাসে শুরু হলো ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট | নক আউট প্রতিযোগিতার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিফাইনালে ববি ফিশার প্রতিপক্ষদের দাঁড়াতেই দিলেন না | দশ রাউন্ডের দুটো ম্যাচেই সরাসরি প্রথম ছটা করে গেম জিতে সবাইকে চমকে দিলেন তিনি | শেষে সেই বছরের সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর মাস জুড়ে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস-এ আয়োজিত ফাইনালে দুবারের প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান টাইগ্রেন পেট্রোসিয়ানকে হেলায় হারালেন ববি ফিশার | সেখানে নয় রাউন্ড খেলায় ফিশার জেতেন পাঁচটা | পেট্রোসিয়ান মাত্র একটা | তিনটে গেম ড্র হয়েছিল | ১৯৭১ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ান হিসাবে ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক চেস ফেডারেশন ববি ফিশারকে সেই সময় দাবায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান বরিস স্প্যাসকির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জার হিসাবে মনোনীত করে | এছাড়াও ১৯৭০ আর ৭১ সালে পরপর কুড়িটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতে পয়েন্টের হিসাবে ইন্টারন্যাশনাল চেস ফেডারেশনের তালিকায় একেবারে শীর্ষে উঠে আসেন ববি ফিশার |
বিশদ পড়ুন
সময়টা ছিল ২০০৪ সালের জুলাই মাসের প্রায় শেষ দিক। হোয়াইট হাউসে ফরাসি দূতাবাসের মারফত একটা চিঠি এসে পৌঁছালো সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নামে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত সচিবরাই উত্তর দিয়ে থাকেন এই ধরনের চিঠিপত্রের। এটাই দস্তুর। কিন্তু প্রেরকের নামটা দেখে চিঠিটা পাঠিয়ে দেওয়া হলো খোদ প্রেসিডেন্টের কাছে। চিঠিটা পড়লেন তিনি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্য। মার্কিন প্রশাসনের নির্দেশে জাপানে টোকিওর কাছে উশিকু শহরের ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক একজন বিশেষ বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে সনির্বন্ধ অনুরোধ করেছেন প্রেরক।
বিশদ পড়ুন
শুধুমাত্র ইতিহাস নিয়ে একটা বাংলা ওয়েব পত্রিকা প্রকাশকরবার প্রবল ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের অনেকের মধ্যে কাজ করছিল।
বিশদ পড়ুন
পৃথিবীর পরিবেশ যে এক গভীর সংকটের সম্মুখীন, এবং এর জন্য মানবজাতি যে প্রধানত দায়ী, এবিষয়ে সন্দেহ নেই। তথাকথিত সভ্যতার প্রয়োজন মেটাতে আমরা প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় করে চলেছি, দূষণের মাত্রা উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছি, জীববৈচিত্র্যের ক্রমাবনতি ঘটিয়ে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে পদে পদে বিঘ্নিত করে আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎকেই অনিশ্চিত করে তুলছি।
বিশদ পড়ুন
করোনা ভাইরাসের কার্যকরী ওষুধ যেদিন বেরোবে, সেদিন আমাদের আতঙ্ক কমবে ঠিকই, কিন্তু রোগ ছড়ানো কমবে না। রোগ হওয়া আটকাতে চাই করোনা-র টীকা। টীকার ইতিহাস থেকে মনে হয়, প্রথমেই খুব ভাল টীকা আবিষ্কার হবার সম্ভাবনা কম। প্রথম ধাপে যে টীকা আবিষ্কার হল, তা দিয়ে কিছু কাজ হল, পরে আরেকটি উন্নত টীকা এল, তাতে আরও ভাল কাজ হল, এমনটাই সম্ভব। ভাইরাসঘটিত একটি রোগ পোলিও এখন নির্মূলের মুখে—সেখানে প্রথমে ইঞ্জেকশন দেওয়া টীকা ছিল, পরে মুখে খাবার টীকা দিয়ে রোগ নির্মূলের কাজ প্রায় পুরোটা হয়েছে। এখন আবার নির্মূলীকরণের শেষ পর্যায়ে ইঞ্জেকশন টীকা দিতে হচ্ছে। আর আমরা তো জানি, গুটিবসন্ত নির্মূল হয়েছে জেনারের ভ্যাক্সিনে, কিন্তু তার সলতে পাকানোর কাজ করেছে ভারত-চীনের আবিষ্কার ভ্যারিওলেশন। ইউরোপে প্রায় এক’শ বছরের ভ্যারিওলেশনের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, উল্লেখযোগ্য সাফল্য সত্ত্বেও তা সমস্ত জনসাধারণকে দেবার কথা ভাবা হয়নি। ভারতেও সবাই পাননি, আর সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ভারতে কতজন মানুষ ভ্যারিওলেশন পেয়েছিল? কে তাদের এই টীকা দেবার ব্যবস্থা করেছিল? ভ্যাক্সিন আসার আগে ও পরে বৃটিশ সরকার এ নিয়ে কেমন মনোভাব দেখিয়েছিল?
বিশদ পড়ুন
সাম্প্রতিক খবরের কাগজ পড়লে দেখা যাবে ইউরোপ আর আমেরিকা থেকে নতুন ওষুধ, নতুন পদ্ধতিতে করোনা টেস্টিং আর নতুন টীকা আবিষ্কারের দাবি সবথেকে বেশি উঠছে, চীন পিছিয়ে নেই। আর আমাদের দেশ থেকে পুরনো ওষুধ, যেমন ক্লোরোকুইন, এজিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি বা বিসিজি টীকা করোনা-তে কার্যকর, দিয়ে করোনা আটকায়, এইসব প্রমাণ করা পরীক্ষা ও সমীক্ষা প্রকাশিত হচ্ছে। গঙ্গাজল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি মন্ত্রক পরীক্ষা করতে বলেছিলেন, আমাদের উচ্চতম মেডিক্যাল গবেষণা কেন্দ্র (ICMR) সেটা নাকচ করেছেন।
বিশদ পড়ুন
করোনা ভাইরাসের ভ্যাক্সিন কিংবা ওষুধ আবিষ্কার প্রায় হয়েই গেল বলে নিত্যনতুন খবরের বিরাম নেই। সমস্যা হল, করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার উপযোগী রসদ, অর্থাৎ নির্দিষ্টভাবে ভাইরাসকে মারার উপযুক্ত অ্যান্টিবডি ও এই নির্দিষ্ট ভাইরাস মারার জন্যই প্রস্তুত রক্তকণিকা আমাদের দেহে তৈরি হয়ে নেই।
বিশদ পড়ুন
আমরা এখন একটা সারা পৃথিবীব্যাপী মাহামারীর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। মহামারীর কারণ একটি ভাইরাস। রোগটার নাম কোভিড-১৯, আর ভাইরাসটির নাম নভেল করোনা ভাইরাস, বা সার্স-কভ-২। এই ভাইরাসের উপযুক্ত ওষুধ নেই, টীকা নেই, তাই আমাদের আতঙ্কের সীমাও নেই।
বিশদ পড়ুন
সভ্যতার উন্মেষে কৃষির ভূমিকা প্রধান। আর কৃষির বিস্তারে লাঙলের ভূমিকা প্রধানতম। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এ কথা বাংলা অঞ্চলেও সমানভাবে প্রযোজ্য। শুধু তাই নয়, নিকট অতীত পর্যন্ত কৃষি ছিল মানুষের সার্বিক জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ভূমি-কর্ষণ যন্ত্র হিসাবে লাঙলের আবিষ্কার এবং লাঙলের সংযুক্ত প্রযুক্তিগত বিবর্তনের ইতিহাস বাংলার আর্থ-সামাজিক ইতিহাস অনুধাবনের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
বিশদ পড়ুন
নবদ্বীপ। নবদ্বীপ ধাম। ধাম কথার অর্থ গৃহ, বাসস্থান যেমন, তেমনি তীর্থস্থানও বটে। পূর্ব রেলেওয়ের হাওড়া-কাটোয়া রেললাইনের ওপর এই স্থান গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান হিসেবে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে তীর্থক্ষেত্র।
বিশদ পড়ুন
আজকের প্রসঙ্গ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকীয় সমাজে নারীর অবস্থান ও তার বিবর্তন। বিষয়ে প্রবেশের আগে, মূল তথ্যসূত্র আর তার অসুবিধা সংক্রান্ত দু-চার কথা। ভারতীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী বুদ্ধশিক্ষা ও বাণী প্রাথমিক ভাবে ছিল মৌখিক। পরে এগুলি যাঁরা লিপিবদ্ধ করেন, তাঁরা নিজেরাও ছিলেন গুরুস্থানীয় শিক্ষক।
বিশদ পড়ুন
ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবনা মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক, বিশেষত যদি আবার সে মানুষটি নাস্তিক হয়, এবং আমাদের মত কোনও একটি দেশের বাসিন্দা হয়। তার চারদিকের মানুষেরা, যাদের মধ্যে কেউ কেউ ঘটনাচক্রে হয়ত নাস্তিকের খুব কাছের লোক, তারা থেকে থেকে ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে, বিবাহ-শ্রাদ্ধশান্তি-উপনয়নে একসাথে জড়ো হয়, পরমানন্দে খাওয়া দাওয়া গল্পগুজব করে, অনায়াসে অন্য ধর্মের লোকেদের নিয়ে সন্দেহ, তাচ্ছিল্য আর ঘৃণায় ভরপুর ইঙ্গিত ও রসিকতার বিনিময় করে।
বিশদ পড়ুন
ইদানীং ঔপনিবেশিক গবেষণার সহায়তায় উপনিবেশীয় শাসনের সময়ে কীভাবে ‘মূল কেন্দ্র’-এর (metropole) স্বার্থে উপনিবেশগুলিকে শোষণ করা হয়েছে সেই বিবরণ, বিশ্লেষণের পাশাপাশি ঔপনিবেশিক শাসকরা কীভাবে নিজেদের প্রয়োজনে উপনিবেশগুলির সাবেক চেহারাকে ভেঙ্গেচুরে নতুন রূপ দিয়েছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এমনকি ইতিহাস-চিন্তাতেও পরিব্যক্তি ঘটিয়েছে তার বয়ান তৈরি হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
অধুনা প্রয়াত বিশিষ্ট ভূগোলবিদ্ সুনীল মুন্সী, যাঁর আরেক ভাই বিখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ নীহার মুন্সী, একদিন ‘কালান্তর’ পত্রিকা দফতরে গল্পচ্ছলে বলছিলেন, “স্বাধীনতার কয়েক বছর আগের কথা। আমরা তখন ছাত্র ফেডারেশনের কর্মী। বোম্বের পার্টি (সিপিআই) অফিসে গিয়েছি।
বিশদ পড়ুন
ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির মধ্যযুগীয় ঐতিহ্য নিয়ে বাঙালী হিন্দু মুসলমান সমাজ ব্রিটিশ আমলে প্রবেশ করে। এই উপমহাদেশে আধুনিকতার সূত্রপাত হয়েছিল ঊনবিংশ শতকের প্রথম দিকে, ব্রিটিশ রাজত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর।
বিশদ পড়ুন
একসময় মনে করা হত একটি উৎস থেকেই ধান বর্তমানের সব ডোমেস্টিকেটেড বা পূর্ণচাষযোগ্য ধানের বিবর্তন ঘটেছে। কিন্তু সেই ধারণা আজ পরিত্যক্ত। বর্তমানে প্রাপ্ত ধানগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়ে আজকের ধানে পরিণত হয়েছে।
বিশদ পড়ুন
ঊনবিংশ শতকের পূর্বে ঋগ্বেদ তথা অন্য তিনটি বেদের প্রাচীনতম অংশ বলে পরিজ্ঞাত সংহিতা পর্যায়ের গ্রন্থগুলির কোন আধুনিক ভাষায় অনুবাদের চিন্তন কখনও করা হয় নি। তার মুখ্য কারণ সম্ভবতঃ উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত বা পুরাণের মত ভারতের ব্রাহ্মণদের কাছে বেদসংহিতাগুলির প্রচারের কোন প্রয়োজন ছিল না।
বিশদ পড়ুন
রাশিয়ায় প্রায় পাঁচশো বছর ধরে, তৃতীয় ইভানের (১৪৪০-১৫০৫ সাল) আমল থেকেই চালু ছিল জারের শাসন। রাশিয়ান সম্রাটরাই জার নামে পরিচিত ছিলেন। দেশের অধিকাংশ ভূমি এবং সম্পদ জার, তাঁর পরিবার ও অনুচরদের হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। আর কোটি কোটি জনসাধারণ বাস করত উপযুক্ত শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান খাদ্য বিশ্রামবিহীন অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে। ইউরোপের অন্যান্য দেশের স্বৈরতন্ত্রগুলির চেয়েও রাশিয়ার অবস্থা ছিল খারাপ।
বিশদ পড়ুন
প্রাচীন ভারতের সাথে রোমানদের ব্যবসা-বাণিজ্যের শুরু হয়েছিল সাধারণ পূর্বাব্দের প্রথম শতকের শেষ দিকে। সম্রাট অগাস্টাস রোমের সিংহাসনে বসার পর (৩১ সাধারণ পূর্বাব্দ), ভারত তথা প্রাচ্য থেকে দুর্লভ এবং চমকপ্রদ পণ্য আমদানি করার বাণিজ্য-নীতি গ্রহণ করেন যার ফলে ইন্দো-রোমান বাণিজ্য বিকশিত হতে শুরু করে। দক্ষিণ ভারত এবং দাক্ষিণাত্যে প্রত্নতাত্বিক খননকার্য করে এই ইন্দো-রোমান বাণিজ্যের প্রচুর প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে -- রোমান স্বর্ণমুদ্রা, রোমান মৃৎপাত্রের ভগ্নাবশেষ, রোমান দুই-হাতলযুক্ত পানপাত্রের ভগ্নাবশেষ, গ্লাস, ধাতব পদার্থ ইত্যাদি।
বিশদ পড়ুন
২০০৯ সালে ইতালীয় বিজ্ঞানী ম্যাসিমো ভিডালে (Massimo Vidale) একটি আমন্ত্রণ পান একজন প্রত্নতত্ত্বের সংগ্রাহকের কাছ থেকে। চোরাই পথে, মেহেরগড় থেকেসংগ্রহ করা একটি প্রত্ন সামগ্রীর আসল না নকল তা যাচাই করতে হবে, আর বলতে হবে সেটি আদতেই হরপ্পা-সভ্যতার আমলের কি না।
বিশদ পড়ুন