সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সাংস্কৃতিক ইতিহাস

রাশিয়ায় ষোড়শ, এমনকি সপ্তদশ শতকেও বই বলতে হাতে লেখা বইয়ের কথাই ভাবা হতো। ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়ার গুটিকয়েক মানুষ অনেক দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে হাতে লেখা বই থেকে ছাপানো বই গ্রহণ করেছিলেন। দিনটা ১৫৬৪ সালের ১৯ এপ্রিল, মস্কো প্রেস হাউজ থেকে প্রথম বই প্রকাশ পায়, তাই এই দিনটিকেই রাশিয়ার মুদ্রণ যুগের সূচনার দিন বলে ধরে নেওয়া হয় (আর কিছুদিন পরেই রাশিয়ায় ছাপার ৪৬০ বছর পালন করা হবে)। প্রথম ছাপা এই বইটি ছিল ধর্ম বিষয়ক। এটি ছাপিয়েছিলেন সে যুগের বিখ্যাত দুই বন্ধু, ইভান ফ্যুদরফ ও পিটর মিসতিলভেস্‌, এদেরকে রাশিয়ার মুদ্রণ জগতের প্রতীক বলে মনে করা হয় এবং তাঁদের তুলনা করা যেতে পারে একমাত্র ফ্রান্সিস্ স্কারিনা’র সঙ্গে; যাকে পূর্ব ইউরোপের ছাপাখানার জনক বলা হয়। বলতে গেলে সেই সময় হাতে লেখা বইয়ের ব্যবসা এতটাই জমজমাট ও জনপ্রিয় ছিল যে, ছাপা বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়াটা খুব কঠিন ছিল।
আমার জন্ম বেলারুশে, ডাক্তারদের একটি পরিবারে। আমার বাবা-মা আমাদের রেখে যেতেন একজন আয়ার যত্নে, যিনি বেলারুশের গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন। আয়া বেলারুশের রূপকথার গল্প বলতেন, তাকে বিরক্ত করলে চিৎকার করতেন ‘পেরুন তোকে ধরে নিয়ে যাবে’! পেরুনকে (প্রাক-খ্রিস্টিয় পাগান স্লাভদের মূল দেবতা) তিনি স্বর্গে বসবাসকারী এবং ঝড়, বজ্রপাত আর বজ্রপাতের নিয়ন্ত্রক বলতেন। বিজ্ঞান পেরুন সম্পর্কে আমার ছেলেবেলার আয়ার চেয়ে সামান্য বেশি জানে। এমনকি আমরা যে কয়েকটি তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি তা পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং তাঁর সঙ্গে যুক্ত পৌত্তলিক দেবতাদের সম্পর্কিত; যেমন বলি, মূর্তি, শপথ, নাম সংকীর্তন ইত্যাদি। (‘পেরুনের পুনরুত্থান, পূর্ব স্লাভিক পৌত্তলিকতার পুনর্গঠনের জন্য’ বইটির১ ভূমিকা, ২০০৪)
সময়টা সাধারণাব্দের চতুর্থ শতকের শেষ, পঞ্চম শতকের শুরু। ইউরোপীয় ইতিহাসচর্চায় তখনও গ্রিকো-রোমান ধারারই রমরমা। প্রায় হাজার বছর আগে হেরোডোটাস চিন্তার যে নতুন রাজপথ খুলে দিয়েছিলেন, তাতে ইতিহাসের রথ চালিয়ে চলে গেছেন গ্রিকদের মধ্যে থুকিডিডিস, পলিবিয়াস আর রোমানদের মধ্যে লিভি, প্লুটার্ক আর তাসিতুসদের মতো রথী মহারথী। প্রায় হাজার বছর ধরে ইউরোপীয় ইতিহাস চিন্তার জগতে একাধিপত্য করে চলেছে গ্রিকো-রোমান ইতিহাস চর্চার এই রথ। হঠাৎ এই রথের পথরোধ করে দাঁড়ালেন কয়েকজন। এতদিন ইতিহাস আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মানুষ ও তার কাহিনী। সময়ের ধারণা ছিল চক্রাকার। মনে করা হত ইতিহাসের ঘটনাগুলি পূর্বেও ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। গ্রিকো-রোমান ধারায় ইতিহাস লেখার উদ্দেশ্যই তো ছিল ভবিষ্যতে যখন একই ঘটনা আবার ঘটবে, তখন মানুষ যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে আর ভুল সিদ্ধান্ত থেকে দূরে থাকে তা নিশ্চিত করা।
বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের অধিকাংশ, পাঞ্জাব প্রদেশের কিছু অংশ এবং পূর্ব আফগানিস্তানের একটি অংশ বহু প্রাচীনকাল থেকে গান্ধার নামে পরিচিত ছিল, ঋগ্বেদেও (১.১২৬.৭) গান্ধারের উল্লেখ আছে। ষষ্ঠ শতক সাধারণপূর্বাব্দের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে চতুর্থ শতক সাধারণপূর্বাব্দের শেষার্ধে আলেকজান্ডারের অভিযান পর্যন্ত গান্ধার (প্রাচীন পারসিক ভাষায় গন্দার) অঞ্চল আকিমিনীয় সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চতুর্থ শতক সাধারণপূর্বাব্দের শেষে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এই এলাকাকে তাঁর সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। প্রথম সহস্রাব্দ সাধারণপূর্বাব্দের মাঝামাঝি থেকে প্রাচীন গান্ধারের দুটি মুখ্য নগর ছিল পুষ্কলাবতী (বর্তমান চারসদ্দা) ও তক্ষশিলা।