সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বইয়ের খবর

কাকে বলে ইতিহাস? প্রশ্ন অতি সহজ এবং প্রাথমিক। কিন্তু উত্তর? না, এর উত্তর প্রদান করা সহজ নয় মোটেই। যুগে যুগে দেবী ক্লিও-এর সেবকরা প্রচেষ্টা করেছেন এই মোক্ষম প্রশ্নের একটি সর্বজনগ্রাহ্য সরল উত্তর খোঁজা। যে বিষয়ের জন্য তাঁরা পুরো জীবন উৎসর্গ করছেন, তার মূলগত চরিত্র কী, সন্ধান করেছেন বহু ঐতিহাসিক। বোঝার প্রচেষ্টা করেছেন তার বৃহত্তর উদ্দেশ্য। নির্ণয় করতে প্রয়াসী হয়েছেন, তা কি ব্যক্তির কাহিনী বলে, না সমাজের? তাতে নৈতিক বিচারের স্থান আছে না নেই? তার কি কোনো বৃহত্তর অর্থ আর ছন্দ আছে না তা একেবারেই খামখেয়ালী এক প্রবাহ যার ‘নাইকো মানে নাইকো সুর’? গত শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসবেত্তা অধ্যাপক ই.এইচ. কার-এর ‘হোয়াট ইজ হিস্ট্রি?’ (‘What is History?’) ছিল এইপ্রকারই এক উত্তর সন্ধানের প্রচেষ্টা।
ইউরোপে সস্তা বই নিয়ে জোরদার চর্চা শুরু হয় গত শতকের সত্তরের সময় থেকে। পিটার বার্কের লেখা ‘পপুলার কালচার অফ আর্লি মডার্ন ইউরোপ’ (প্রথম প্রকাশ ১৯৭৮) সেখানকার সংস্কৃতি চর্চার জগতে মৌলিক পরিবর্তন এনেছিল, এতে কোন সংশয় নেই। প্রায় একই সময়ে চলতে থাকে ফরাসি বিপ্লব নিয়ে নতুন ভাবনাচিন্তা;১ আমেরিকার গবেষকরাও তখন অনেকটা আগ্রহী হয়েছিলেন সাধারণের সাংস্কৃতিক ইতিহাস নিয়ে। কারণ নয়া বাজার অর্থনীতিতে সংস্কৃতি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করছিল। স্বাভাবিকভাবেই এতদিনের প্রচলিত ইতিহাস চর্চার বাইরের বিভিন্ন দিকগুলি একে একে ইতিহাসের বিষয়বস্তু হিসেবে উঠে আসতে থাকে। এদের মধ্যে একটি বিষয় ছিল ‘জনপ্রিয় ছাপা’ চর্চা। এখন প্রশ্ন হল ‘জনপ্রিয় ছাপা’ কথাটির অর্থ কী? আমরা দুইভাবে এর উত্তর পেতে পারি। প্রথমত, পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ছাপার যুগের প্রায় শুরুর থেকেই এমন ধরনের বই প্রকাশিত হয়, তাকে ঠিক বই বলা কঠিন — বরং আমরা অনুপুস্তিকা বলতে পারি। বাংলার ক্ষেত্রে যেমন তার নাম বললে আমরা সহজেই বুঝি – ‘বটতলার ছাপা’।
আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগে কলেজে পড়াতে গিয়ে পাঞ্জাবের কৃষির অর্থনৈতিক বিবর্তন আলোচনার একটি বিষয়বস্তু ছিল। সেখানে কী করে গ্রামাঞ্চলে ক্যানেলের জল গেল, বন্ধ্যা মরুভূমি আধুনিক কৃষিযোগ্য ভূমিতে পরিণত হলো, দূর দূর থেকে কৃষকরা ছুটে এলো এবং সেই জমি চাষ করে বহু সোনার ফসল ফলালো—এগুলো আলোচনার বিষয় ছিল। এই অর্থনৈতিক প্রাচুর্যের পাশাপাশি আরেকটা ছবি মনে পড়ে যেটা ক্লাসে বলতাম। কৃষি ঋণটা একটা ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে গেল যার ফলে অনেক কৃষক ঘটিবাটি, নিজের জমিজায়গা বন্ধক রেখে অথবা বেচে দিয়ে অন্য জায়গায় চলে গেল বা সেনাবাহিনীতে নাম লিখিয়ে হংকং, মালয় এমনকী ফ্রান্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেল। যুদ্ধ শেষ হলো ১৯১৮-এ। যখন তারা ফিরে এলো তখন চাকরি চলে গেছে, বরখাস্ত হয়ে গেছে সেনাবাহিনী থেকে, ফলে তারা বিক্ষুব্ধ।