সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

ফিরে দেখা

ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধে যে কয়েকজন ভারতীয় পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা রসায়ন শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করলেও দেশীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ভারতীয় ঐতিহ্যকে সমগ্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ (১৮৭৭ সাধারণ অব্দ - ১৯৭১ সাধারণ অব্দ ৪ঠা এপ্রিল) ছিলেন অন্যতম। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ও ভেষজ ঔষধ প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতি হিসাবে, তাঁর দ্বারা ঢাকায় ‘সাধনা ঔষধালয়’ স্থাপিত হয় (১৯১৪ সাধারণ অব্দতে)। ভারতীয় জাতীয়তাবাদ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণা মূলক গ্রন্থ প্রকাশ, পত্র-পত্রিকায় প্রচার এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুত প্রণালীতে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন।
২০২১ সালে মহা ধুমধাম সহযোগে পালিত হল আমাদের দেশ ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি, তাকে আমরা লাভ করেছি লক্ষ লক্ষ মানুষের শোণিতের বিনিময়ে। বহু ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের আত্মত্যাগের এই অর্জন। আমাদের দুর্ভাগ্য এই অসংখ্য মানুষের অধিকাংশই দেশবাসী কর্তৃক বিস্মৃত। তাঁদের জীবন, তাঁদের সংগ্রাম আলোচনার বাইরেই থেকে যায়। এমনই এক মানুষ, চট্টগ্রামের সুবোধ রায়, প্রখ্যাত বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্য সেনের সুযোগ্য শিষ্য। তাঁর স্বাধীনতা পূর্ব জীবন ও সংগ্রামে আলোকপাত করার উদ্দেশ্যেই এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধের অবতারণা। বিপ্লবী সুবোধ রায়ের স্বাধীনতা পরবর্তী জীবনের আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে সম্ভবপর না। এই কারণে এই বিশ্লেষণ তাঁর স্বাধীনতা পূর্ববর্তী কার্যকলাপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
রাজ্যের রাজধানী রাঁচির কাছেই গুমলা। পাহাড় জঙ্গলে ঘেরা এই অঞ্চল আদিবাসীদের বাসভূমি। আদিবাসীদের মধ্যে ওঁরাও সম্প্রদায়ের সংখ্যাধিক্য। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে এই অঞ্চলের 'চিংড়ি নাভাটোলি' গ্রাম থেকে ওঁরাও সম্প্রদায়ের মধ্যে এক নব জাগরণ আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। গ্রামের পঁচিশ বছরের তরতাজা যুবক 'যাত্রা ওঁরাও' ছিলেন এই জাগরণের হোতা। ১৯১৪ সালে যাত্রা ওঁরাও ঘোষণা করেন, তাঁদের দেবতা 'ধর্মেশ'- এর কাছ থেকে তিনি 'ওঁরাও' রাজ প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ পেয়েছেন। যাত্রা বলেন ওঁরাওদের ধর্মের কলুষতা থেকে মুক্ত করতে হবে। মদ্যপান, পশুবলি, ভূত বা আত্মায় বিশ্বাস, অপদেবতা সন্দেহে নিধন বন্ধ। যাত্রা কৃচ্ছতাসাধন, নিরামিষ ভক্ষণ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের জন‍্য আহবান জানান। এই আন্দোলন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। আর এই আন্দোলনের সঙ্গে অচিরেই যুক্ত হল জীবন ও জীবিকার প্রশ্নগুলি।
বিশ শতক সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য সময়। এই সময়ে একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ছিল উত্তাল তেমনি তার প্রভাব বিভিন্ন দেশ গুলির আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও দেখতে পাওয়া যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে জার সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘটে, সোভিয়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। এই ঘটনা একদিকে যেমন বিশ্বের সর্বহারার শ্রেণী আন্দোলনে নতুন জোয়ার নিয়ে এল, তেমনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একাধিপত্যেও বেশ কিছুটা ঘা লাগল। রাশিয়ার বিপ্লব ভারতবর্ষের মতো পরাধীন দেশ গুলির চোখে ঔপনিবেশিক শক্তির করাল ছায়া থেকে মুক্তির এক নতুন স্বপ্ন বুনে দিচ্ছিল । দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ধনতন্ত্রের সংকট প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে শেষ হল না, বিশ্বশান্তিও বেশি দিন স্থায়ী হল না। এ