সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

প্রাগিতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব

আমাদের ছোটবেলা (১৯৬০-৬৫) ইতিহাসে পড়ানো হত “অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ কাহাকে বলে?” আমরা মুখস্থ করতাম,"আফ্রিকাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয়।" পরীক্ষার খাতায় উক্তিটির ব্যাখ্যায় লিখতে হত – “এই মহাদেশ সম্পর্কে মানুষ তেমন কিছু জানিত না। লিভিংষ্টোন এবং অন্যান্যদের দুঃসাহসিক অভিযানের ফলে এই মহাদেশের কথা মানুষ প্রথম জানিতে পারে।এই মহাদেশ সম্পর্কে মানুষ তেমন কিছু জানিত না, কারণ এই অঞ্চলে ছিল ভয়ঙ্কর জন্তু-ভর্তি গভীর অরণ্য, দুর্গম পর্বত, খরস্রোতা নদী, মরুভূমি, অস্বাস্থ্যকর জলবায়ু আর আদিম হিংস্র অধিবাসীরা বসবাস করিত। ফলে সভ্য লোক সেখানে যাইতে পারিত না। তাই উহাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ বলা হয়।”
বছর কয়েক আগে যখন অধ্যাপক সোয়ান্টে পেবোর অবশ্যপাঠ্য ‘আত্মজীবনী’ পড়ার সুযোগ আসে তখন দু’টি জিনিস মনে দাগ কেটেছিল। এক, গবেষণার ফলাফলকে নিরপেক্ষ ভাবে বিশ্লেষণ করার ব্যাপারে তাঁর নির্মোহ, প্রায়-ম্যানিয়াগ্রস্ত খুঁতখুঁতুনি। দুই, ল্যাবরেটরির প্রতিটি সাফল্যে নিজের ছাত্রছাত্রীদের মেধা ও পরিশ্রমের বিস্তারিত বর্ণনা। সেই জন্যে কয়েকদিন আগে নোবেল কমিটির “সোয়ান্টে পেবো অসাধ্যসাধন করেছেন....জন্ম দিয়েছেন একটি বিজ্ঞানের একটি নতুন বিষয় – প্যালিওজিনোমিক্স... ওঁর অনন্য আবিষ্কারগুলি থেকেই আজ আমরা জানতে পারছি কেমন করে বিবর্তনের পথে হেঁটে কি ভাবে আমরা সবাই 'মানুষ' হয়ে উঠলাম” ঘোষণা শুনে যখন আরেকজন বিজ্ঞানী বললেন, “পেবোকে তো চিনি।
যখন মানুষ আফ্রিকায় চামড়া পরছে, শিশুকে কবর দিচ্ছে, পাথরের ওপরে ক্রশহ্যাচ আঁকছে, তখন ইউরোপে ‘নিয়েণ্ডারথাল’রা কেমন আছে? তারা কেমন জীবন কাটাচ্ছে? আধুনিক মানুষ, ‘নিয়ান্ডারথাল’ ও ‘ডেনিসোভান’ উদ্ভূত হয়েছে একই পূর্বপুরুষ থেকে। ‘হোমো ইরেক্টাস’-এর যে মূল শাখাটি আফ্রিকাতে ছিল তাদের উত্তরসূরি হল ‘হোমো হাইডেলবার্গেনসিস’। ‘হোমো হাইডেলবার্গেনসিস’-রা পৃথিবীতে ছিল ৮ থেকে ৩ লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত। থাকত পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ইউরোপ, চীন, জাপানে। ওরা আগুনের প্রারম্ভিক ব্যবহার জানত, হাতে থাকত কাঠের বল্লম। ‘হোমো হাইডেলবার্গেনসিস’ থেকে উদ্ভূত তিন জ্ঞাতি ভাই আধুনিক মানুষ, ‘নিয়ান্ডারথাল’ ও ‘ডেনিসোভান’।