সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

লেখক: দেবাশিস্‌ ভট্টাচার্য

দেবাশিস্‌ ভট্টাচার্য
লেখক “ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি”-র সাধারণ সম্পাদক। বিগত আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুক্তিবাদী চিন্তা ও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে উপস্থিত রয়েছেন। ধর্মান্ধতা-অলৌকিকতা-কুসংস্কার ও ওই ধরনের নানা বিষয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ করেছেন, তদন্ত করেছেন, লেখালিখি করেছেন। তাঁর লেখনী বিশেষভাবে সক্রিয় থেকেছে বিজ্ঞানের ভেক ধরা অবিজ্ঞান ও অযুক্তির মুখোশ খুলতে।
আর্থার সি ক্লার্কের সেই দুর্দান্ত গল্পটা বোধহয় আপনার পড়া আছে, তাই না - ‘দ্য নাইন বিলিয়ন নেমস অফ গড’? সেই যে, সত্যজিৎ রায় যার এক অনবদ্য বাংলা অনুবাদ করেছিলেন, তার নাম ছিল - ‘ঈশ্বরের ন’ লক্ষ কোটি নাম’? মনে পড়ছে না? আচ্ছা, একটু ধরিয়ে দিচ্ছি। তিব্বতের এক বৌদ্ধ গুম্ফার প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসীরা এক পশ্চিমা কোম্পানির কাছে একটি মস্ত কম্পিউটারের বরাত দিয়েছেন। তাঁদের বিশ্বাস, তাঁদের আরাধ্য ঈশ্বরের আছে নয় লক্ষ কোটি নাম, এবং সেই সব কটি নাম যদি তাঁদের ভাষায় সম্পূর্ণভাবে লিখে ফেলা যায়, তাহলেই জগতের সমাপ্তি। জগতের অস্তিত্ব তো ঈশ্বরের নাম জপ করার জন্যেই, কাজেই সে কাজ একবার সমাধা হলে আর জগতের দরকার কি?
আমরা সবাই ছোটবেলায় বিদেশি লোক-কাহিনীর সেই ছোট্ট জঙ্গলবাসী মেয়ে রেড রাইডিং হুড-এর কথা পড়েছি, যাকে ধরে খাবে বলে বনের এক নেকড়ে চাদর মুড়ি দিয়ে তার ঠাকুমার রূপ ধরে তার কুঁড়েঘরে ঢুকে পড়েছিল। ছোট্ট মেয়ে যখন জিজ্ঞেস করল, ও ঠাকুমা, তোমার দাঁতগুলো অত বড় বড় কেন গো, নেকড়ে তার উত্তরে বলেছিল, কেন হে, তোমাকে কড়মড়িয়ে চিবিয়ে খাবার পক্ষে সে তো ভালই হবে! ওই ছোট্ট মেয়ের পক্ষে মর্মান্তিক উত্তরই বটে। তবে কিনা, ঋষি অ্যারিস্টোটল ঘটনাটা জানতে পারলে হয়ত খুশি হয়ে নেকড়ে বাবাজির পিঠ চাপড়ে দিতেন, কারণ, সে অন্তত তার বড় বড় দাঁতগুলোর অস্তিত্বের একটা ‘উদ্দেশ্যমূলক কারণ’-এর কথা স্বীকার করেছে, জীবনকে অর্থহীন বলে মেনে নেয় নি। জগত-সংসারের মধ্যে অর্থ সরবরাহকারী এই রকম ‘উদ্দেশ্যমূলক কারণ’-কে অ্যারিস্টোটল যে নাম দিয়েছিলেন, আজকের দর্শনবেত্তারা ইংরিজিতে তার তর্জমা দাঁড় করিয়েছেন ‘ফাইনাল কজ’ --- বাংলায় হয়ত ‘পরমকারণ’-ও বলা চলতে পারে। অ্যারিস্টোটল বলতেন, সমস্ত ঘটনার পেছনে আমরা যে ‘কারণ’ খুঁজি, সেই ‘কারণ’ আসলে চার রকমের ............