সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

রাজনৈতিক ইতিহাস

‘হর্ষের হর্ষ উবে গেল’। লিখেছিলেন রবিকীর্তি। বাদামি চালুক্য বংশের প্রবল পরাক্রমশালী শাসক দ্বিতীয় পুলকেশীর সভাকবি রবিকীর্তি। কর্ণাটকের আইহোলের মেগুতি পাহাড়ের ওপর এক জৈন মন্দির আছে। সেই মন্দিরের দেওয়ালে খোদাই করা এক লেখতে, যে লেখর পোশাকি নাম 'আইহোলে লেখ'। হর্ষ কে? তাঁর হর্ষ উবে গিয়েছিল কেন? এমন হেঁয়ালি কেন রচনা করেছিলেন রবিকীর্তি? এইসব প্রশ্ন নিশ্চই আসছে আপনাদের মনে। দোষের কিছু নেই। আমারও এসেছিল। পরে বইপত্র ঘেঁটে বুঝেছিলাম যে হেঁয়ালি রচনা করেননি রবিকীর্তি। রসিকতা করেছিলেন। বিদ্রুপ করেছিলেন থানেশ্বরের (প্রাচীন নাম স্থানিশ্বর) পুষ্যভূতি বংশের চতুর্থ প্রজন্মের রাজা প্রবলপ্রতাপান্বিত হর্ষবর্ধনকে। বাপরে বাপ! কী সাহস! হর্ষবর্ধনকে নিয়ে রসিকতা! কেন এহেন রসিকতা করেছিলেন রবিকীর্তি হর্ষবর্ধনকে নিয়ে? সাহস পেয়েছিলেন কী করে? হুম, তাহলে তো একটু কষ্ট করে জানতে হবে আইহোলে লেখর প্রেক্ষাপট।
আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার পরিমণ্ডলে স্বাধীনতা-পূর্ব পশ্চিম ভারতের ভিল ও গরাসিয়া আদিবাসীদের একী আন্দোলন সম্বন্ধে খুবই কমই উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়।১ ‘একী’ কথাটির অর্থ একতা। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে বর্তমান রাজস্থান ও গুজরাতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের আদিবাসীরা দীর্ঘদিনের নির্যাতনের প্রতিবাদে মোতিলাল তেজাবতের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের শপথ নিয়েছিলেন বলে নিজেদের আন্দোলনকে তাঁরা ‘একী’ নামে অভিহিত করেছিলেন। তৎকালীন রাজপুতানা এজেন্সির মেবাড় ও তার পার্শ্ববর্তী দেশীয় রাজ্যগুলির শাসকদের সাধারণ প্রজাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অমানবিক করের বোঝা থেকে মুক্তি, বেগার শ্রমের অবসান ও অরণ্যের জমি থেকে উপজাত দ্রব্যের উপর অধিকার ছিল এই আন্দোলনের মুখ্য দাবি। এই সময় বর্তমান রাজস্থান ও গুজরাতে অবস্থিত মেবাড়, সিরোহি, দুঙ্গরপর, দাঁতা, পালনপুর, ইডর প্রমুখ দেশীয় রাজ্যগুলিতে পৃথক পৃথক কর ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। একী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম দাবি ছিল একই কর ব্যবস্থার প্রচলন। পশ্চিম ভারতের ভিল আদিবাসীরা মূলত উদয়পুর শহরের দক্ষিণে অবস্থিত ভোমট ও দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত মগরা নামের দুটি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করতেন। সেই কারণে এই আন্দোলন ‘ভোমট ভিল’ আন্দোলন নামেও পরিচিত।
মাস আষ্টেক আগে দিল্লি থেকে একা ফিরছি। ট্রেনে। নিউ দিল্লি ষ্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে দেখি আমার কুপে পাঁচটা ছেলে-মেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। ছয় নম্বর সিটটা আমার। দেখে মনে মনে একটু আশঙ্কিতই হলাম। একুশ বাইশ বছরের এতগুলো বাচ্চা ছেলে-মেয়ে। হুল্লোড়ের চোটে আমার জার্নিটা মাটি না হয়! ট্রেন ছাড়তেই একটু গুছিয়ে বসে আলাপ করে জানলাম, এরা সবাই ইউপিএসসি-র প্রস্তুতির জন্য দিল্লির কোনও এক কোচিং সেন্টারে পড়াশুনো করে, কয়েকদিনের জন্য বাড়ি ফিরছে। ট্রেন গতি নিয়েছে। ওরা নিজেদের মধ্যে মশগুল দেখে আমিও একটা বই খুলে আরাম করে বসলাম। আমার এখনও মনে আছে, বইটা ছিল ‘মুঘল রিলেশনস উইথ পার্সিয়া’। কয়েকটা পাতা এগিয়েছি সবে। চোখ তুলে দেখি ওরা আমার বইটার দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে কথা বলছে।