সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

লেখক: শিবাশীষ বসু

লেখক একজন মুক্তমনা ইতিহাস অন্বেষক। নিরপেক্ষ এবং বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিকোণ থেকে ঐতিহাসিক ঘটনা বিশেষত গৌরবময় উনবিংশ শতাব্দীর বিশ্লেষণে আগ্রহী।
১৯৩৫ সাল। ফ্যাসিবাদী ইতালির এবং নাৎসি জার্মানির রণহুঙ্কার যেন তখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই ১৯৩৪ সালের ২রা আগস্ট প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের মৃত্যুর পর হিটলার নিজেই প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর উভয় পদই দখল করে নিয়েছেন এবং নিজেকে ফ্যুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর মাস খানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে ইহুদিদের উপর জার্মান নিপীড়ন। সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য পূরণে মুসোলিনির প্রথম প্রয়াস হল আবিসিনিয়া দখল করা। ইতালিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় স্থান অনুসন্ধান, খাদ্য সংস্থান, শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ, ও উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী বিপণনের উপযুক্ত বাজার ইত্যাদির জন্য আবিসিনিয়া তথা ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা দখল করার জন্য ইতালি সচেষ্ট ছিল।
১৯৩৫ সালের ২রা আগস্ট কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের সপ্তম কংগ্রেস অধিবেশনে পেশ করা ‘যুক্তফ্রন্ট থিসিস’-এ প্রখ্যাত বুলগেরিয়ান কমিউনিস্ট নেতা জর্জি ডিমিট্রভ ‘দি ক্লাস ক্যারেক্টার অফ ফ্যাসিজম’ প্রবন্ধে জার্মান নাৎসিবাদকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছিলেন, “The most reactionary variety of fascism is the German type of fascism. It has the effrontery to call itself National Socialism, though it has nothing in common with socialism. German fascism is not only bourgeois nationalism, it is fiendish chauvinism. It is a government system of political gangsterism, a system of provocation and torture practised upon the working class and the revolutionary elements of the peasantry, the petty bourgeoisie and the intelligentsia. It is medieval barbarity and bestiality, it is unbridled aggression in relation to other nations.” (“সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ধরনের ফ্যাসিবাদ হল জার্মান ফ্যাসিবাদ। এর নিজেকে জাতীয় সমাজতন্ত্র বলে অভিহিত করার ধৃষ্টতা রয়েছে, যদিও সমাজতন্ত্রের সঙ্গে এর কোনওই মিল নেই। হিটলারের ফ্যাসিবাদ শুধুমাত্র বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ নয়, এ হল পাশবিক জাতিদম্ভ। এ হল রাজনৈতিক দস্যুতার এক শাসনব্যবস্থা, শ্রমিকশ্রেণি, কৃষক, পেটি-বুর্জোয়া ও বুদ্ধিজীবীদের বিপ্লবী অংশের বিরুদ্ধে প্ররোচনা ও নির্যাতনের ব্যবস্থা। এ হল মধ্যযুগীয় বর্বরতা ও পাশবিকতা, অন্যান্য জাতিদের সম্পর্কে বল্গাহীন আক্রমণ।”)
বিশ শতকের শুরুতে জাতীয় কংগ্রেস সম্বন্ধে মোহভঙ্গের বেদনা যখন রাজনীতি সচেতন বাঙালী তরুণ-যুবসমাজকে হতোদ্যম করে তুলছে ঠিক সেই সময় কয়েকটি আন্তর্জাতিক ঘটনা হতাশ যুবসমাজের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। প্রথম ঘটনাটি হল, প্রবল পরাক্রান্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বোয়ার যুদ্ধে বারংবার অশিক্ষিত কৃষকদের কাছে পর্যুদস্ত হওয়া। দ্বিতীয়টি — ১৯০২ সালে জাপানের সঙ্গে ইংল্যান্ডের সন্ধি স্থাপন এবং ১৯০৩-০৪ সালের রুশ-জাপান যুদ্ধে জাপানের অবিশ্বাস্য জয়। এবং তৃতীয় ঘটনাটি, ১৯০৫ সালের জানুয়ারী মাসে রাশিয়ার শ্রমিক বিপ্লব, যা দমন করতে জারের পুলিশ 'ব্লাডি সানডে'র মত ঘটনা ঘটিয়েও থামাতে পারে নি, জার বাধ্য হন ডুমা বা সংসদীয় ব্যবস্থার প্রচলন করতে।