সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

লেখক: কুণালকান্তি সিংহ রায়

ইতিহাসের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, দুই বন্ধু মিলে ‘অঙ্গাঙ্গি’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন কান্দি থেকে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ভাস্কর্য শিল্পে, বিশেষত শৈব ভাস্কর্যগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিগ্রহ হল উমা-মহেশ্বরের মূর্তি। মূর্তিশাস্ত্রের পরিভাষায় উমা-মহেশ্বরের ভাস্কর্যটি হল, দেবী উমা এবং দেবাদিদেব মহাদেবের (মহেশ্বর বা শিব) ঐশ্বরিক দাম্পত্য জীবনের অলোকসামান্য রূপের একটি ক্লাসিক প্রতিচ্ছবি। মৎস্যপুরাণ, ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণুধর্মোত্তর উপপুরাণ, অপরাজিতপৃচ্ছা, রূপমণ্ডন প্রভৃতি শিল্পশাস্ত্রের লিখিত বিধিকে মান্যতা দিয়ে ভারতীয় শিল্পীরা উমা-মহেশ্বরের মূর্তি সৃজনের জন্য অনন্ত যৌবনের অধিকারী এক দম্পতির উষ্ণ আলিঙ্গনকে অপরূপভাবে চিত্রায়িত করেছেন কঠিন প্রস্তর ও ধাতুতে অথবা গুহার কন্দরে-কন্দরে। প্রকৃতপক্ষে উমা-মহেশ্বর ভাস্কর্যের মধ্যে জগৎ-মাতা উমার সাথে বিশ্বপিতা শিবের মিলনের এক অপূর্ব মণিকাঞ্চনযোগ দৃশ্যমান। প্রখ্যাত গবেষক ড. এ.এল. শ্রীবাস্তব এই প্রসঙ্গে লিখেছেন যে, পুরুষ ও প্রকৃতির এই মিলন ক্রমশ বংশবৃদ্ধির অভিমুখে নিয়ে যায় এবং সৃষ্টির চক্রকে তার সঠিক আবর্তনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।১ সেই কারণে ভারতীয় ঐতিহ্যে উমা এবং শিবকে সার্বজনীন পিতামাতা হিসাবে গণ্য করা হয়, যার অবিস্মরণীয় অভিব্যক্তি ঘটেছে মহাকবি কালিদাসের রঘুবংশম্ নাটকের (১.১) অসামান্য সূচনায়: “জগতঃ পিতরৌ বন্দে পার্বতী পরমেশ্বরৌ।”
সুদূর প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্ম-সংস্কৃতি, পৌরাণিক সাহিত্য ও শিল্পকলায় মনুষ্যরূপী সর্পের উপস্থিতি ও কার্যকলাপের একটি প্রাণবন্ত ইতিহাস রয়েছে। আদিতে সর্প উপাসনার মূলে ছিল মানুষের ভীতি। পরবর্তীকালে উর্বরাশক্তির সঙ্গে সংযুক্ত হলে সর্পপূজা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। মনে রাখা দরকার, সাপ মানুষের শত্রু নয়। বস্তুতপক্ষে এই অদ্ভুতদেহী সরীসৃপ প্রাণীটি একাধারে বাস্তুতন্ত্র, কৃষিক্ষেত্র ও মানব সমাজের লোককাহিনির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। হিন্দু, জৈন ও বৌদ্ধ—এই তিন ধর্মাবলম্বীর মানুষই যে অতীতে নাগোপাসনা করতেন তার উল্লেখ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও শিল্পকলায় পাওয়া যায়।