সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

লেখক: সুচেতনা মুখোপাধ্যায়

বর্তমানে শিক্ষকতার পেশায় নিযুক্ত লেখক ও প্রাবন্ধিক সুচেতনা মুখোপাধ্যায় অতীতের প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। নারীর ইতিহাস ও সমাজে তাদের অবদান নিয়ে চর্চা করেন। তার রচিত একটি গ্রন্থ ‘আলোর মেয়েদের গল্প’। নিয়মিত লেখালেখি, নারী আন্দোলন ও সামাজিক কাজে যুক্ত থাকা তার আগ্রহের বিষয়।
দুঙ্গারপুরের রাস্পাতাল গাঁও, দলিত ভীলদের আর পাঁচটা গ্রামের মতোই ভীষণ রকম গরিব। দিন আনা দিন খাওয়া কিষান, পশুপালক, ছোটখাটো ফেরিওয়ালা, ভূমিহীন মজদুর আর মুচি-কামার-ছুতোর মিস্ত্রীদের মতো কারিগরেরা দুঙ্গারপুরের মহারাওয়াল (রাজা) লক্ষ্মণ সিংহের চরম স্বৈরাচারী অপশাসনে নিয়ত তটস্থ থাকতেন। ইংরেজ সরকারের হুকুমবরদার এই রাজাটিকে বাস্তবিকই আরেকজন ‘হীরক রাজা’ বলাই যায়। ইংরেজ মদতপুষ্ট মহারাওয়ালদের দৈনন্দিন বহুতর অত্যাচারে বহুকাল ধরেই ভীলদের যাতনার শেষ ছিল না। তবে আদিবাসী ও নিম্নবর্ণজাত হওয়ার ‘অপরাধে’ সমকালীন রাজা লক্ষ্মণ সিংহ ভীলদের পড়াশুনো করার অধিকারকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। বই-খাতা-কলমকে তিনি যেমন নেহাতই 'উচ্চবর্ণের বিশেষাধিকার' মনে করতেন, তেমনই ভীলদের ছেলেপুলেরা পড়ালেখা শিখে জ্ঞানবুদ্ধি হাসিল করলে তাঁর অন্যায় রাজপাটকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে বলেও মনে মনে ভারি ডরাতেন রাজামশাই।
১৬১৩ সাল..., শান্ত শরৎ বাতাস বইছে আরব সাগরময়। এমনই এক দিনে সুরাটের পর্তুগিজ বণিকরা, পশ্চিম উপকূল আর লোহিত সাগরের মধ্যে নিত্য যাতায়াত করা, 'রহিমি' নামের সুবিশাল জাহাজটিকে আটক করলেন। জাহাজে ভরা 'নীল' রঞ্জকের ভাণ্ডারের লোভে বহুদিন ধরে তক্কে তক্কে থাকলেও, হিন্দুস্তানের জাহাঁপনার মায়ের জাহাজের পথ আটকানো ছিল এক প্রবল স্পর্ধার বিষয়। হ্যাঁ, 'রহিমি' নামের ১৫৩ ফুট লম্বা-৪২ ফুট চওড়া আর হাজার টন ওজনের মহাজাহাজটি ছিল বাদশাহ আকবরের অন্যতমা স্ত্রী তথা সম্রাট জাহাঙ্গীরের মা, মরিয়ম-উস-জামানির নিজস্ব জাহাজ। এই জাহাজটি সহ আরও অনেকগুলি জাহাজের মাধ্যমে মরিয়ম পশ্চিমে নীলের ব্যবসা আর মক্কাগামী হজযাত্রীদের আনা-নেওয়ার ব্যাপক লাভজনক ব্যবসা চালাতেন দীর্ঘদিন ধরে।
আদিগন্ত বিস্তৃত সিকিম হিমালয়ের দুর্গম দক্ষিণ কোলে ছোট্ট গ্রাম সাংমু। ১৯০২ সালের কোন এক ভোরে আচুং লেপচার বাড়িতে জন্ম নিলো এক কন্যা। একটু বড় হতেই আঙিনায় প্রাচীন পিয়ার গাছটির আশপাশে খেলে বেড়ায় সে। ফুটফুটে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে হেলেন। আচুং তাঁর সাত সন্তানকেই আধুনিক ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। তাই গ্রাম ছেড়ে সপরিবারে উন্নততর জীবনের খোঁজে তিনি বাসা বাঁধলেন দার্জিলিংয়ের কার্শিয়াং শহরে। হেলেন তখন বেশ ছোট্ট। শহরের স্কটস্‌ মিশনারি স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে ভর্তি করা হলো হেলেনকে। কিন্তু স্কুলের গণ্ডিবদ্ধ পঠন-পাঠন আর কঠোর শৃঙ্খলা মোটেই ভালো লাগতো না শিশুটির। তাই কষ্টেসৃষ্টে কয়েক বছর পড়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাড়ির প্রবল অমত সত্ত্বেও বিলাতি স্কুল ছেড়ে দিল হেলেন।