সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং স্থান

সত্যেন্দ্রনাথ বসু এ’যুগের এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তাঁর প্রতিভার বহুমুখী স্ফুলিঙ্গ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। সত্যেন্দ্রনাথ শুধু বিজ্ঞানের উপাসক ছিলেন না, তিনি ঐতিহাসিক, সাহিত্যিক, সমালোচক, ভাষাবিদ, সঙ্গীতশাস্ত্রজ্ঞ। জ্ঞানের প্রায় সমস্ত রাজপথেই ছিল তার অবাধ বিচরণ। সত্যেন্দ্রনাথের প্রিয় বন্ধু দিলীপকুমার রায় তাঁর স্মৃতিচারণে শুনিয়েছেন সে কথা। “সংস্কৃতজ্ঞদের সঙ্গে সংস্কৃত, ঐতিহাসিকদের সঙ্গে ইতিহাস, প্রত্নতত্ত্ববিদের সঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব, গীতজ্ঞদের সঙ্গে সঙ্গীত, কবিদের সঙ্গে কাব্য-কোনো আলোচনাতেই ও পেছপা হত না। এমন সব মন্তব্য করত যে বিশেষজ্ঞরা খুশি না হয়ে পারতেন না। অন্তত সঙ্গীত ও সাহিত্য নিয়ে আমি এবং ওর আরও নানা বন্ধু ওর সঙ্গে বহুবারই আলোচনা করে বিশেষ লাভবান হয়েছি একথা হলপ করে বলতে পারি।"
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় একজন বহুমাত্রিক মানুষ। একাধারে বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক, শিক্ষক, শিল্পোদ্যোগী, সাহিত্যিক ও সাহিত্যবোদ্ধা — তাঁর জীবনের প্রত্যেক দিক নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা সম্ভব। তাঁর প্রথম পরিচয় অবশ্যই শিক্ষক ও বিজ্ঞানী, একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে তিনি দীর্ঘদিন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রফুল্লচন্দ্রের সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তাঁর গবেষণাকে কোন চোখে দেখতেন, রাজিন্দর সিং ও অর্ণব রায়চৌধুরির এক প্রবন্ধে তার পরিচয় পাওয়া যাবে। রসায়নে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের গবেষণা সম্পর্কে লেখার যোগ্যতা আমার নেই, এই লেখাতে আমরা শুধুমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাব্রতী প্রশাসক প্রফুল্লচন্দ্রকে সংক্ষেপে চেনার চেষ্টা করব; হয়তো তার সঙ্গে তাঁর চরিত্রের অন্য দিকগুলিরও কিছু পরিচয় পাওয়া যাবে।
ব্যারানভ চলে গেলেন। আলাস্কার সৈকতে সাগরের ঢেউ আগের মতোই ভাঙতে লাগল। স্প্রুসের ডাল থেকে খসে পড়া পাতা মাটিতে মিশে পরের প্রজন্মের চারাদের লালনে ব্যাস্ত থাকল। বাতাস আগের মতোই জলীয় বাস্প বয়ে নিয়ে গিয়ে জন্ম দিতে লাগল অন্ধ কুয়াশার। আর আলাস্কার আদিবাসী মানুষেরা বিশ্বাস করল যে আগের ছন্দেই চলতে থাকবে জীবন। ততদিনে রুশদের সঙ্গে অ্যালিউট আর লিঙ্গিতদের একটা তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ বিনিময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বানিজ্যিক বিনিময়ের বাইরে স্থাপিত হয়েছে সামাজিক সম্পর্ক। রুশদের সঙ্গে আদিবাসীদের মিশ্রণের ফলে জন্ম নিয়েছে এক মিশ্র প্রজাতির যার নাম ‘ক্রেওল’, সামাজিক অবস্থানে যারা যথেষ্ট সম্মানজনক স্থান পেয়েছে। শুধু প্রবল নাড়াচাড়া পড়ে গিয়েছে প্রশাসনের অন্দরমহলে।
আমেরিকার ‘ওয়েস্ট কোস্ট’-এর উত্তর কোণের ওয়াশিংটন রাজ্যের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে কলম্বিয়া নদী যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরে এসে মিশছে, সেখান থেকে উত্তর দিকে ব্রিটিশ কলম্বিয়া ছুঁয়ে কেউ যদি আলাস্কার দক্ষিণ পূর্ব উপকূল ধরে সিটকা পেড়িয়ে ইয়াকুতাত নদীর অববাহিকা অব্দি পৌঁছে যায়, তবে তার পায়ের তলায় থাকবে এমন এক ভূভাগ যার বিচিত্র চরিত্র তাকে অবাক তো করবেই, বিভ্রান্তও করবে যথেষ্ট। অশান্ত সমুদ্রের প্রায় পাড় থেকেই উঠে গেছে উঁচু পাহাড় যাদের কারোর কারোর উচ্চতা ৩ থেকে ৪ হাজার ফিট। সেই উচ্চতাতেই তাদের মাথায় বরফের টুপি। স্থলভূমির এই পাহাড়ি চরিত্র বিস্তৃত হয়েছে সংলগ্ন সমুদ্রের তলদেশে। জলের নিচে থাকা পাহাড় সমুদ্রের ওপরে বিভিন্ন উচ্চতায় মাথা বের করে তৈরি করেছে অসংখ্য ছোটো বড়ো দ্বীপ।
অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৮৫১-১৯১৫)। জন্মেছিলেন ঢাকা বিক্রমপুরের লোহাজাং থানার ব্রাহ্মণগা গ্রামে। বিক্রমপুর ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। বিক্রমপুর-এ জন্মেছেন পণ্ডিত শীলভদ্র, অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান, জগদীশ চন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাশ, বিনয় - বাদল - দীনেশ প্রমুখ। অঘোরনাথের পিতা রামচরণ চট্টোপাধ্যায় সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে সুপণ্ডিত ছিলেন। ছেলেবেলায় পড়াশুনা ঢাকার পোগোজ স্কুলে, সেখান থেকে পাশ করে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। এখানে সাড়ে তিন বছর পড়েছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন প্রচুর পড়াশুনা করে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি লাভ করেন এবং স্কটল্যান্ড-এর এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বি এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। বি এস সি পরীক্ষায় তিনি শীর্ষস্থান অধিকার করেন। এর পর ১৮৭৫-এ ডি এস সি ডিগ্রি পান। গবেষনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পেয়েছিলেন হোপ পুরস্কার এবং Baxter scholarship।