সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়

ডিসেম্বর ২৪, ২০২৩ ২০৬ 3

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় একজন বহুমাত্রিক মানুষ। একাধারে বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক, শিক্ষক, শিল্পোদ্যোগী, সাহিত্যিক ও সাহিত্যবোদ্ধা — তাঁর জীবনের প্রত্যেক দিক নিয়েই দীর্ঘ আলোচনা সম্ভব। তাঁর প্রথম পরিচয় অবশ্যই  শিক্ষক ও বিজ্ঞানী, একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে তিনি দীর্ঘদিন অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রফুল্লচন্দ্রের সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা তাঁর গবেষণাকে কোন চোখে দেখতেন, রাজিন্দর সিং ও অর্ণব রায়চৌধুরির এক প্রবন্ধে তার পরিচয় পাওয়া যাবে। রসায়নে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের গবেষণা সম্পর্কে লেখার যোগ্যতা আমার নেই, এই লেখাতে আমরা শুধুমাত্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাব্রতী প্রশাসক প্রফুল্লচন্দ্রকে সংক্ষেপে চেনার চেষ্টা করব; হয়তো তার সঙ্গে তাঁর চরিত্রের অন্য দিকগুলিরও কিছু পরিচয় পাওয়া যাবে।

খুব সংক্ষেপে প্রফুল্লচন্দ্রের জীবনের কথা শুনে নেওয়া যাক। তাঁর জন্ম পূর্ব বাংলার অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের যশোহর জেলার রাড়ুলি গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট। জমিদার বংশের সন্তান হলেও তাঁদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য বিশেষ ছিল না। সেই কারণেই তিনি কলকাতাতে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি না হয়ে বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটান ইন্সটিটিউশন অর্থাৎ বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজে পড়েছিলেন। এরপর ব্রিটেনে পড়াশোনার জন্য গিলক্রাইস্ট বৃত্তির পরীক্ষাতে উত্তীর্ণ হন, সেই বছর মাত্র দুজন ভারতীয় এই বৃত্তি পেয়েছিলেন। স্কটল্যান্ডের এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছর পড়ার পরে বিএসসি উত্তীর্ণ হয়ে সেখানেই গবেষণা শুরু করেন ও দু’বছর পর ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি পান। দেশে ফেরার কিছুদিন পর ১৮৮৯ সালের জুলাই মাসে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপকের চাকরি পান, সেখানে তাঁর সহকর্মী ছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র। ভারতে আধুনিক রসায়ন গবেষণা এবং আধুনিক রসায়ন শিল্প দুইই প্রফুল্লচন্দ্রের উদ্যোগে শুরু হয়। দেশের উন্নতির লক্ষ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বেঙ্গল কেমিক্যাল। ১৮৯৭ সালে পদোন্নতির পরে তাঁকে রাজশাহী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত করা হয়, কিন্তু গবেষণার স্বার্থে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়তে রাজি হননি। সে জন্য তিনি পদোন্নতিও ছেড়ে দিতে তৈরি ছিলেন। ১৯০৫ সালে তিনি পূর্ণ অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। ১৯১২ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কমপ্যানিয়ন অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার উপাধিতে ভূষিত করে। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর নিয়ে ১৯১৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে সেখান থেকে অবসর নেওয়ার পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমিরিটাস অধ্যাপক হিসাবে কাজ করেছিলেন। ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন তাঁর মৃত্যু হয়। আজীবন অকৃতদার এই মানুষটির সংসার বলতে ছিল তাঁর ছাত্রছাত্রীদল।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রফুল্লচন্দ্রের যোগাযোগের কথায় যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কয়েকটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন। ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম যুগের কাঠামোর সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কোনো মিল নেই। আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বর্তমান মাধ্যমিক বোর্ড বা উচ্চমাধ্যমিক কাউন্সিলের মতো শুধুমাত্র পরীক্ষাগ্রহণের প্রতিষ্ঠান; পড়ানো হত কলেজে। স্নাতকোত্তর অর্থাৎ মাস্টার্স ডিগ্রিও প্রেসিডেন্সি কলেজের মতোই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেই পড়ানো হত। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রথমবারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছিলেন ১৯০৬ সাল থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত, সেই সময়ে তাঁর উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষাক্রম শুরু হয়। প্রথমে যে সমস্ত বিভাগ চালু হয়েছিল, সবই ছিল আর্টস বিষয়ে, কারণ বিজ্ঞানের জন্য প্রয়োজন পরীক্ষাগার। তার জন্য বিদেশি সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে বিফল হয়ে আশুতোষ ভারতীয়দের সাহায্যপ্রার্থী হলেন। বিখ্যাত ব্যারিস্টার স্যার তারকনাথ পালিত বিজ্ঞান শিক্ষা চালু করার জন্য অর্থ ও অন্যান্য সম্পত্তিতে মোট সাড়ে চোদ্দ লক্ষ টাকা দান করেন; সেই অর্থে পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন বিভাগে দুটি অধ্যাপক পদ তৈরি হয়। অপর এক ব্যারিস্টার স্যার রাসবিহারী ঘোষ তিন কিস্তিতে মোট সাড়ে তেইশ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকাতে ওই দু’টি বিভাগ সহ আরো কয়েকটি বিষয়ে অধ্যাপক পদ তৈরি হয়। ৯২ নম্বর আপার সার্কুলার রোডে (বর্তমান নাম আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড) ছিল পালিতের বাগানবাড়ি; ৩৫ নম্বর বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে ছিল তাঁর বাসভবন। প্রসঙ্গত, এই সময় প্রফুল্লচন্দ্র ৯১ নম্বর আপার সার্কুলার রোডে থাকতেন, সেখানেই বেঙ্গল কেমিক্যালের গোড়াপত্তন হয়েছিল; সম্প্রতি সেখানে এক বহুতল উঠেছে। পালিতের দুই সম্পত্তিতে তৈরি হয় ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ সায়েন্স। এছাড়াও দানের তহবিল থেকে ল্যাবরেটরির খরচ, গবেষক নিয়োগ, এমনকি শিক্ষক ও গবেষকদের বিদেশে গবেষণার জন্যও সাহায্য দেওয়া হত। আজকের যুগের হিসাবে দু’জনের মোট দানের পরিমাণ দু’শো কোটি টাকার কম হবে না।

প্রফুল্লচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক হিসাবে পড়ানো ও পরীক্ষা নেওয়ার বাইরেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় সায়েন্স ডিগ্রি কমিশনের কথা। ১৮৭২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রির জন্য দুটি পাঠক্রম, এ ও বি চালু করে, এর মধ্যে দ্বিতীয়টি ছিল বিজ্ঞান। এরপর ১৮৯৮ সালে সরকার বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য তৈরি করে সায়েন্স ডিগ্রি কমিশন; তার সদস্য ছিলেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ফাদার লাফোঁ ও প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক আলেকজান্ডার পেডলার, জগদীশচন্দ্র ও প্রফুল্লচন্দ্র। কমিশনের সুপারিশে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ও ডিএসসি অর্থাৎ যথাক্রমে ব্যাচেলর ও ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি চালু হয়।

১৯০৬ সালে সায়েন্স ফ্যাকাল্টি বা বিজ্ঞান অনুষদের সদস্য হলেন প্রফুল্লচন্দ্র, এই প্রথম তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এরপর বিভিন্ন কমিটিতে তাঁর নাম দেখতে পাই। ১৯০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তেরোজনকে সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দেওয়া হয়, সেই তালিকার প্রথম নামটি ছিল বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নরের। তালিকার চারজন বাঙালির অন্যতম ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র; ততদিনে তিনি শিক্ষক ও গবেষক হিসাবে  বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছেন। তার আরও প্রমাণ যে ১৯০৯ সালে বাঙ্গালোরে টাটা গোষ্ঠীর নবনির্মিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের পরিচালন সমিতিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নির্বাচিত হন প্রফুল্লচন্দ্র। তিন বছর পরে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটির আড়াইশো বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়দের সম্মেলনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি নিযুক্ত হন। ১৯১৫ সালে তিনি হলেন বিজ্ঞান অনুষদের ডিন। অবশ্য তার আগেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নির্বাচিত হয়েছেন; এবার আসি সেই কথায়।

পালিত ও ঘোষের শর্ত মেনে তাঁদের দানের সদ্ব্যবহারের জন্য দুটি সমিতি হয়েছিল, সেখানে দুই দাতাই কয়েকজন ব্যক্তিকে মনোনীত করেছিলেন। রাসবিহারী ঘোষ তিনজন সদস্যকে মনোনীত করেন, তাঁরা হলেন আশুতোষ, প্রফুল্লচন্দ্র ও বিশ্ববিদালয়ের ফেলো মহেন্দ্রনাথ রায়। দুই দাতারই দানের শর্ত ছিল নিযুক্ত অধ্যাপকদের অবশ্যই ভারতীয় হতে হবে। পদার্থবিদ্যা বিভাগের পালিত অধ্যাপক হিসাবে যোগদানের জন্য জগদীশচন্দ্রকে অনুরোধ করেছিলেন আশুতোষ, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি নিজের গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা ভেবেছিলেন, কয়েক বছর পরেই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বসু বিজ্ঞান মন্দির।

রসায়নের অধ্যাপক হিসাবে আশুতোষ প্রথম থেকেই প্রফুল্লচন্দ্রের কথা ভেবেছিলেন। ১৯১২ সালে যখন পালিতের দান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেটে গৃহীত হয়, প্রফুল্লচন্দ্র তখন ব্রিটেনে। অন্যান্য আর্টস বিভাগে যখন অধ্যাপক নিয়োগ চলছিল, তখন প্রফুল্লচন্দ্র সেনেটের সভায় দুঃখ করেছিলেন যে বিজ্ঞানের অধ্যাপকের কোনও ব্যবস্থা হয়নি। আশুতোষ সেই কথা স্মরণ করিয়ে প্রফুল্লচন্দ্রকে চিঠি লিখে তাঁকে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান কলেজে রসায়ন বিভাগে পালিত অধ্যাপকের পদ গ্রহণ করার আমন্ত্রণ জানান। প্রফুল্লচন্দ্র সম্মতি জানিয়ে উত্তরে লেখেন, তাঁর বিশ্বাস বিজ্ঞান কলেজ থেকে তাঁর জীবন সফল হবে। কলেজে যোগ দেওয়া তাঁর শুধু কর্তব্য নয়, পরম আনন্দের বিষয়।  তিনি অনুভব করেছিলেন সেখানে তিনি গবেষণার ক্ষেত্রে অনেকটাই স্বাধীনতা পাবেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ সরকারি কলেজ; সেখানে বাধানিষেধ অনেক, গবেষণার জন্য সাহায্য বিশেষ জোটে না।

১৯১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এই সমস্ত নতুন পদের জন্য বিজ্ঞাপনে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, আবেদনের শেষ তারিখ ছিল পরের বছর ১৪ জানুয়ারি। দশ দিন পরে ২৪ জানুয়ারি পালিত গভর্নিং বোর্ডের সভা হয়, উপস্থিত ছিলেন আশুতোষ, রামেন্দ্রসুন্দ্রর ত্রিবেদী, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বা নিবন্ধক পল ইওহানেস ব্রুল, বিচারপতি বি কে মল্লিক, ডাক্তার নীলরতন সরকার, বাংলার অ্যাডভোকেট জেনারেল সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ ও রেভারেন্ড জে ওয়াট। বোর্ড সর্বসম্মতিক্রমে প্রফুল্লচন্দ্রকে রসায়ন ও চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামনকে পদার্থবিদ্যাতে পালিত অধ্যাপক নিয়োগের সুপারিশ করে। একই দিনে তার পরেই হয় ঘোষ ম্যানেজমেন্ট বোর্ডের সভা; সেখানে উপস্থিত ছিলেন আশুতোষ, প্রফুল্লচন্দ্র, রামেন্দ্রসুন্দর, ব্রুল, জ্ঞানরঞ্জন ব্যানার্জি, প্রেসিডেন্সি কলেজে শারীরবিদ্যার অধ্যাপক সুবোধচন্দ্র মহলানবীশ ও মহেন্দ্রনাথ রায়। সভা থেকে গণেশ প্রসাদ, প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র ও দেবেন্দ্রমোহন বসুকে যথাক্রমে ফলিত গণিত, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যাতে ঘোষ অধ্যাপক পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। উদ্ভিদবিদ্যার জন্য সেই মুহূর্তে কোনও নাম স্থির হয়নি, পরে শঙ্কর পুরুষোত্তমদাস আগরকারকে সেই পদে নিয়োগ করা হয়। প্রফুল্লচন্দ্র ও গণেশ প্রসাদ তখনই স্বনামধন্য, কিন্তু অন্যরাও প্রত্যেকেই পরবর্তীকালে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের মধ্যে স্থান করে নিয়েছিলেন ও আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছিলেন। সেনেটে ব্রিটিশ সদস্যদের অনেকের বাধা সত্ত্বেও ভোটাধিক্যে এই সমস্ত সুপারিশ অনুমোদিত হয়।

পালিত অধ্যাপকের প্রারম্ভিক বেতন নির্ধারিত হয় আটশো টাকা, অন্যদিকে ঘোষ অধ্যাপকদের মাইনে ছিল পাঁচশো থেকে ছ’শো টাকা। অবশ্য প্রফুল্লচন্দ্রের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ খরচ হয়নি, কারণ প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯১৬ সালে অবসর নিয়ে তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন, তখন তাঁর পেনশন ছিল সাতশো টাকা, বাকিটুকু পালিত তহবিলকে দিতে হয়েছিল। ষাট বছর বয়সের পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক পয়সাও মাইনে নিতেন না, পুরোটাই বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করে দিতেন। তার পরিমাণ ছিল মাসিক হাজার টাকা, সেখান থেকে অনেকেই গবেষক বৃত্তি পেয়েছেন, যাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ভারতের প্রথম মহিলা ডিএসসি অসীমা চট্টোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে নাগার্জুন পুরস্কার ও স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় স্মারক পুরস্কারের জন্য তিনি দশ হাজার টাকা করে দান করেছিলেন। সব মিলিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় দু’লক্ষ টাকা দান করেছিলেন। আক্ষরিক অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ই ছিল তাঁর ঘরবাড়ি, বিভাগের একটি ছোটো ঘরে তিনি বাকি জীবন কাটিয়েছেন, সেখানে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে।

পালিত অধ্যাপক হিসাবে প্রফুল্লচন্দ্র ছিলেন রসায়ন বিভাগের প্রধান এবং একই সঙ্গে বিজ্ঞান কলেজ পরিচালকমণ্ডলীর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এছাড়া সিন্ডিকেট ও বিজ্ঞান অনুষদের সদস্য হিসাবেও তিনি গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শিক্ষা শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ১৯১৬ সালে এক কমিটি হয়েছিল,  সদস্য ছিলেন আশুতোষ, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র, মহেন্দ্রনাথ ও ব্রুল। তাঁদের সুপারিশে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও ফলিত গণিত বিভাগে স্নাতকোত্তর পাঠদান শুরু হয়। রসায়ন বিভাগের পালিত অধ্যাপকের সহকারী হিসাবে যোগ দেন তাঁর স্নেহধন্য ‘বড়ো জ্ঞান’ ও ‘ছোটো জ্ঞান’, অর্থাৎ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ ও জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁরা গবেষণার পাশাপাশি পড়ানোর দায়িত্ব নেবেন।            একই সঙ্গে মিশ্র গণিত নিয়ে এমএসসি পাস দুই তরুণ গবেষককে পালিত অধ্যাপকের সহকারী হিসাবে পদার্থবিদ্যা বিভাগে পড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা হলেন মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েকজন পদার্থবিদ্যা নিয়ে উত্তীর্ণ ছাত্রও ছিলেন, যাঁদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তীকালের বিখ্যাত বিজ্ঞানী শিশিরকুমার মিত্র।

আশুতোষ কতখানি প্রফুল্লচন্দ্রের উপর নির্ভর করতেন তা সত্যেন্দ্রনাথ বর্ণিত একটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়। পালিত অধ্যাপক রামন সরকারি উচ্চপদে চাকরি করতেন, তিনি ১৯১৭ সালের আগে বিভাগে যোগ দিতে পারেননি। ঘোষ অধ্যাপক দেবেন্দ্রমোহন বসু দানের শর্ত অনুসারে বিদেশে গবেষণা করতে জার্মানি যান, কিন্তু তারপরেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়াতে সেদেশে আটকে পড়েন। ১৯১৯ সালের আগে তিনি দেশে ফেরেননি। একেবারে অপরীক্ষিত তরুণদের হাতে পড়ানোর ভার তুলে দেওয়ার বিরোধী ছিলেন অনেকেই, তাঁরা চাইছিলেন দুই অধ্যাপক যোগদান করা পর্যন্ত পদার্থবিদ্যার পাঠদান স্থগিত রাখা হোক। আশুতোষ বুঝলেন প্রফুল্লচন্দ্রের সমর্থন পেলে তাঁর পক্ষে অন্যদের রাজি করাতে সুবিধা হবে। প্রেসিডেন্সি কলেজের ১৯১৫ সালের সেই বিখ্যাত ব্যাচের মধ্যে ছিলেন জ্ঞানচন্দ্র, জ্ঞানেন্দ্রনাথ, মেঘনাদ ও সত্যেন্দ্রনাথ; তাঁরা ছিলেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। প্রথম দুজন প্রফুল্লচন্দ্রের প্রিয় ছাত্র, জ্ঞানচন্দ্রের থেকে প্রফুল্লচন্দ্র বাকিদের খবর নিলেন। পদার্থবিদ্যা বিভাগের সকল গবেষককেই তিনি চিনতেন, তাঁরা প্রায় সবাই প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর ছাত্র। শুধু তাই নয়, প্রফুল্লচন্দ্র প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রাবাস হিন্দু হস্টেলে প্রায়ই যেতেন এবং আবাসিকদের সঙ্গে বিকালে ময়দানে হাঁটতে যেতেন। এই সব কারণে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষকগোষ্ঠীর ক্ষমতা সম্পর্কে তাঁর স্বচ্ছ ধারণা ছিল। তিনি আশুতোষের মতে সম্মতি দিলেন, ফলে ১৯১৬ থেকেই পদার্থবিদ্যার পাঠক্রম চালু হল। ইতিহাস সাক্ষী দেয় সেই সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল। গণিতের ছাত্র মেঘনাদ, সত্যেন্দ্রনাথ বা পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশও মাস্টারমশায় বলতে সব সময়েই প্রফুল্লচন্দ্রকেই বুঝিয়েছেন।

প্রফুল্লচন্দ্রকে কেন্দ্র করে আগেই ভারতবর্ষের প্রথম রসায়ন গবেষক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছিল, তার কার্যকলাপের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াল বিজ্ঞান কলেজ। দুই ‘জ্ঞান’ ছাড়াও তাঁর ছাত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রিয়দারঞ্জন রায়, পুলিনবিহারী সরকার, জ্ঞানেন্দ্রনাথ রায়, যোগেন্দ্রচন্দ্র বর্ধন, প্রফুল্লকুমার বসু, গোপালচন্দ্র চক্রবর্তী, মনোমোহন সেন, বীরেশচন্দ্র গুহ প্রমুখ। এঁদের কেউ কেউ বিজ্ঞান কলেজে গবেষক হিসাবে নথিভুক্ত না হয়েও প্রফুল্লচন্দ্রের সঙ্গে সেখানে কাজ শুরু করেছিলেন। প্রথম দিকে অবশ্য গবেষণার বিশেষ সুযোগ ছিল না, কারণ অর্থাভাব। সরকার কোনও সময়েই বিজ্ঞান কলেজকে সুনজরে দেখেনি, ফলে সাহায্য না পাওয়া গেল বললেই চলে। প্রফুল্লচন্দ্র নিজে হিসেব করে দেখেছিলেন বিজ্ঞান কলেজে প্রথম যুগে সরকারি সাহায্য দুই শতাংশের বেশি ছিল না। এছাড়া সেই সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলতে থাকায় বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছিল না। তার মধ্যেই ১৯১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ক্লাস শুরু হল। প্রফুল্লচন্দ্র নিলেন অজৈব রসায়নের ভার, প্রফুল্লচন্দ্র মিত্র পড়াতে শুরু করলেন জৈব রসায়ন। প্রফুল্লচন্দ্র সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বৈদ্যুতিক পরিবাহিতা মাপার এক যন্ত্র নিয়ে বিজ্ঞান কলেজে রসায়ন গবেষণার সূত্রপাত করলেন। এই সময় রাসবিহারী ঘোষের দানের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়া যায়, ফলে সমস্যার কিছুটা সুরাহা হয়।

প্রফুল্লচন্দ্রের আত্মজীবনী বাংলা ও ইংরাজিতে যথাক্রমে ‘আত্মচরিত’ ও ‘লাইফ অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স অফ আ বেঙ্গলি কেমিস্ট’ নামে প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে প্রফুল্লচন্দ্র বিজ্ঞান কলেজ নিয়ে অল্প কথাই লিখেছেন, “আমি বিজ্ঞান কলেজের কথা আর বেশী কিছু বলিব না। ইহার শৈশব উত্তীর্ণ হইয়াছে। এখন সে কৈশোরে পদার্পণ করিয়াছে। আমার যুবক সহকর্মী অধ্যাপক রামন একাই একশ; এই বিজ্ঞান কলেজ যদি কেবলমাত্র একজন রামনকেই সৃষ্টি করিত, তাহা হইলেও ইহা সার্থক হইত…”। এই কথাগুলি রামনের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির আগে লেখা, এবং প্রফুল্লচন্দ্রের উদার চরিত্রের পরিচয় দেয়। একই সঙ্গে আমরা দেখতে পাই পদার্থবিদ্যার অত্যন্ত আধুনিক আবিষ্কারের তাৎপর্যও তিনি সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছিলেন। রামনও প্রফুল্লচন্দ্রের থেকে বিভিন্ন সময়ে সাহায্য ও উৎসাহ পেয়েছিলেন। নোবেল পুরস্কার জয়ের পরে কলকাতা পুরসভা রামনকে সম্বর্ধিত করেছিল, সেখানে ভাষণের সময় রামন আলাদা করে প্রফুল্লচন্দ্রের নাম উল্লেখ করে বলেছিলেন, “… I wish particularly to single out my distinguished friend, Sir Prafulla Chandra Ray … I have always thought it a great privilege to have as my colleague in the Palit Chair of Chemistry such a distinguished pioneer in scientific research and education in Bengal as Sir Prafulla Chandra Ray. It has been invariably my experience that I could count on his co-operation and sympathy in every matter concerning my scientific work.” শুধু রামন নয়, বিজ্ঞান কলেজের সব সহকর্মী ও ছাত্রছাত্রীকেই গবেষণার সু্যোগ করে দেওয়ার জন্য প্রফুল্লচন্দ্র চেষ্টা করেছিলেন। 

শিক্ষক প্রফুল্লচন্দ্রের ছাত্ররা অনেকেই বিজ্ঞান জগতে সুপরিচিত। পরবর্তীকালে শুধু গবেষণা নয়, দেশের বিজ্ঞান কাঠামো তৈরিতেও তাঁরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছেন। দু’জনের কথা আলাদা ভাবে বলি। জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ তড়িৎবিশ্লেষণ বিষয়ে কাজ করে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেন। নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী নার্নস্ট তাঁর বইতে জ্ঞানচন্দ্রের কাজের বিশেষ প্রশংসা করেছেন। এই মানুষটি সি ভি রামনের পরে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের অধিকর্তা হয়েছিলেন। তাঁর সময়েই এই প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে দ্রুত প্রসার ঘটে। এটি বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড়ো মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার ঠিক আগে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আগ্রহে তিনি দিল্লিতে সরবরাহ ও শিল্প বাণিজ্য সংস্থার অধিকর্তার পদে যোগ দেন। স্বাধীনতার পরে নবনির্মিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি বা আইআইটি খড়গপুরের প্রথম অধিকর্তা হন, এটিই দেশের প্রথম আইআইটি। এর পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের অনুরোধ তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যোগ দেন। সব শেষে প্রধানমন্ত্রী নেহরুর অনুরোধে ভারতের পরিকল্পনা পর্ষদে যোগ দেন ও আমৃত্যু সেখানে কাজ করেন। আমাদের দেশে পলিটেকনিক শিক্ষারও পরিকল্পনা তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত।

জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় কলয়েডের উপর কাজ করেছিলেন। তাঁর গবেষণার উপর ভিত্তি করে আর্নে টিজেলিয়াস আরও অনেক দূর এগিয়ে যান ও অবশেষে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। জ্ঞানেন্দ্রনাথের কাজের খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ দেখা যায় মৃত্তিকা বিজ্ঞানে। তিনি স্বাধীনতার আগে দিল্লিতে ইম্পিরিয়াল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা হিসেবে যোগ দেন। স্বাধীনতার পরে ইম্পিরিয়াল শব্দটি বদলে হয় ইন্ডিয়ান। তাঁর তত্ত্বাবধানে এই প্রতিষ্ঠান আরও অনেক বিস্তৃত হয়। এর পরে তিনি রুরকির সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা হয়েছিলেন।

মেঘনাদ বা প্রশান্তচন্দ্রের কথা নিশ্চয় আলাদাভাবে বলার প্রয়োজন নেই; সাহা ইন্সটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, সেন্ট্রাল গ্লাস এন্ড সেরামিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট, ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স-এর সঙ্গে মেঘনাদ ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের সঙ্গে প্রশান্তচন্দ্রের নাম জড়িয়ে আছে। প্রফুল্লচন্দ্রের ছাত্ররা যে দেশের বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আত্মনিয়োগ করেছিলেন, তার পিছনে ছিল তাঁর দেশপ্রেম ও বিজ্ঞান ও সমাজের পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে তাঁর স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী। তাঁর সুবিখ্যাত বিজ্ঞানের ইতিহাস গ্রন্থ ‘আ হিস্টরি অফ হিন্দু কেমিস্ট্রি’-তে তিনি প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানের অধোগতির কারণ হিসাবে শঙ্করাচার্যের মায়াবাদ এবং হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথাকে চিহ্নিত করেছিলেন। বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ এই নিবন্ধে নেই, শেষে উল্লিখিত সূত্রে সেই বিষয়ে কিছু কথা পাওয়া যাবে। তাঁর ছাত্র প্রিয়দারঞ্জন ও জ্ঞানেন্দ্রনাথের কথা থেকে জানা যায় যে তিনি কোনও বিষয়কে পড়ানোর সময় তাকে ইতিহাসের আলোকে আলোকিত করতেন।

প্রফুল্লচন্দ্রের দেশপ্রেমের কেন্দ্রে ছিল দেশের মানুষ, তাই বারবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিজ্ঞান কলেজে থাকাকালীনও তার অন্যথা হয়নি। ১৯২১ সালে খুলনার দুর্ভিক্ষের সেবাকার্যে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরের বছর পাবনা, রাজশাহী ইত্যাদি জেলাতে বন্যার সময় সাহায্য সমিতির সভাপতি তাঁকেই করা হয়। ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকাতে সংবাদ প্রকশিত হয়েছিল যে কোনো রাজনৈতিক নেতার পরিবর্তে প্রফুল্লচন্দ্রের নাম আছে বলেই মানুষ মুক্তহস্তে চাঁদা দিয়েছিল। বিজ্ঞান কলেজই হয়ে দাঁড়িয়েছিল সমিতির অফিস। সত্তরজন স্বেচ্ছাসেবী সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনবরত পরিশ্রম করতেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্রের ছাত্র ও সহকর্মীরা। সুভাষচন্দ্র বসু সহ আরও অনেকে ত্রাণকার্যে যোগ দিয়েছিলেন, মেঘনাদ হয়েছিলেন সমিতির সম্পাদক। ১৯৩১ সালে বন্যার সময়েও বিজ্ঞান কলেজ থেকেই ত্রাণকার্য পরিচালিত হয়েছিল, এবং প্রফুল্লচন্দ্র তাতে সাহায্য করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে বলি, তাঁর শিল্পোদ্যোগের পিছনেও ছিল সেই একই অনুপ্রেরণা। তিনি জানতেন যে ভারতীয়দের দুর্দশার অন্যতম কারণ হল চাষের উপর অতিনির্ভরতা। বিশ্লেষণ করে তিনি বোঝেন যে শিল্পোন্নতির এক প্রধান উপকরণ হল ইস্পাত ও সালফিউরিক অ্যাসিডের সহজলভ্যতা, দ্বিতীয়টি সরবরাহই ছিল বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠার কারণ। তাঁর ছাত্র মেঘনাদ সাহাও তাঁর মতের শরিক হয়েছিলেন, ভারী শিল্পের বিকাশের উদ্দেশ্যেই তিনি কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসুর সাহায্যে ১৯৩৮ সালে ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিটি তৈরি করেন।

বিজ্ঞান কলেজের ভিতরে দু’টি প্রতিষ্ঠান তৈরির পিছনে গুরুত্বপূর্ণ প্রফুল্লচন্দ্রের ভূমিকা ছিল। ১৯২২ সালে ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের মাদ্রাজ অধিবেশনে নীলরতন ধর ইন্ডিয়ান কেমিক্যাল সোসাইটি তৈরির প্রস্তাব করেন, জোরালো সমর্থন করেন মেঘনাদ সাহা। বস্তত তিন বছর আগেই লন্ডনে জ্ঞানচন্দ্র, জ্ঞানেন্দ্রনাথ ও শান্তিস্বরূপ ভাটনগর প্রফুল্লচন্দ্রকে সভাপতি করে এই রকম একটি সংস্থার কথা ভেবেছিলেন, তাঁরা নীলরতন ধরকে এই কথা জানিয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে সোসাইটি তৈরি হল, সভাপতি হিসাবে অবিসংবাদী নাম প্রফুল্লচন্দ্র। সেই সময় থেকে সোসাইটির জার্নাল নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। যখন সোসাইটির অফিসের জন্য স্থানের প্রয়োজন হয়, তখন এগিয়ে এলেন প্রফুল্লচন্দ্র। তাঁর দশ হাজার টাকা দানের পরিবর্তে যে অফিস স্থান বিশ্ববিদ্যালয় দেয় সেখানেই আজ পর্যন্ত সোসাইটির কাজ চলছে। তেমনি ১৯৩৫ সালে সাধারণের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনা প্রসারের উদ্দেশ্যে মেঘনাদ সাহা ও পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক বিধুভূষণ রায় ‘সায়েন্স অ্যান্ড কালচার’ পত্রিকা প্রকাশ করেন ও ইন্ডিয়ান সায়েন্স নিউজ অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেন। এই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হলেন প্রফুল্লচন্দ্র, নানা সময়ে তিনি আর্থিক সাহায্য করেছিলেন। আজও সেই পত্রিকা প্রকাশ করে চলেছে অ্যাসোসিয়েশন।

ছাত্রবৎসল প্রফুল্লচন্দ্রের কিছু পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। জ্ঞানচন্দ্র ও মেঘনাদকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন যে আইনস্টাইন, মাক্স প্লাঙ্ক, ফন লউ ও নার্ন্সট, এঁদের নোবেলজয়ী বললে বিশেষ কিছুই বলা হল না। তাঁরা যে জ্ঞানচন্দ্রের কাজের প্রশংসা করেছেন তাতে করে “আমার জীবনে আমি এ রকম বিমল সুখ কখনো সম্ভোগ করিতে পারি নাই।” ১৯২১ সাল নাগাদ জ্ঞানচন্দ্র, মেঘনাদ, সত্যেন্দ্রনাথ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ প্রমুখ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী অধ্যাপক পদে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাঁরা সবাই অস্থায়ী পদে ছিলেন, মাইনেও কম। আশুতোষ বিশ্ববিদ্যালয়ের রত্নদের ছাড়তে রাজি নন, কিন্তু তাঁদের চাকরি দেওয়া তাঁর ক্ষমতার বাইরে। পালিত গভর্নিং বডির সভাতে প্রফুল্লচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর তুমুল বাগবিতণ্ডা হয়। আশুতোষ প্রফুল্লচন্দ্রকেই তাঁর ছাত্রদের এই ইচ্ছার জন্য দায়ী করেন; প্রফুল্লচন্দ্র বলেন, “I stand in loco parentis (আমার ছেলেদের উন্নতির পথে কাঁটা দিতে পারি না)।”

শিক্ষা বিষয়ে তাঁর নির্দিষ্ট অভিমত ছিল, যদিও তা আলোচনার সুযোগ এই নিবন্ধে নেই। তিনি বিশ্বাস করতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ গবেষণা, শিক্ষাদান নয়। আমরা সবাই জানি তিনি বাঙালিকে ব্যাবসা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কলকাতা ও মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি ‘অজস্র গ্রাজুয়েট প্রসবের কারখানা’ বলে মনে করতেন। তাঁর অভিমত ছিল মাতৃভাষাই শিক্ষার বাহন হওয়া উচিত। অনেক সময়েই তিনি আশুতোষকে সমর্থন করেননি। জ্ঞানেন্দ্রনাথকে চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “আশুবাবুর সহিত বনিবনাও হইয়া চলা অসাধ্য হইয়া উঠিতেছে।” মেঘনাদকে এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন তাঁর ও দুই জ্ঞানের কার্যকলাপের সাহায্যে ‘বিলাতী মাটি স্পর্শ না করিলেও একটি বিলাতী ডিগ্রি’-র মোহ ঘোচানোর চেষ্টা করবেন; “দুঃখের বিষয় আশুবাবুর মত লোকও এই মোহাচ্ছন্ন।” দেশে বসেই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়াকে যাঁরা জীবনের মোক্ষ মনে করছেন তাঁরা হয়তো প্রফুল্লচন্দ্রের এই কথা স্মরণে রাখলে ভালো করবেন।  

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে প্রফুল্লচন্দ্র যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তার কিছু উদাহরণ আমরা দেখেছি। এক্ষেত্রেও তাঁর স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী ছিল। নানা লেখায় তিনি বারবার দেখিয়েছিলেন ব্রিটিশ সরকার কেমনভাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছে; কারণ হিসাবে তিনি বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীন কার্যকলাপ সরকারের না-পছন্দ। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যে এডিনবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি ‘ইন্ডিয়া বিফোর এন্ড আফটার দ্য মিউটিনি’ প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাতে যোগ দিয়ে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের শোষণের রূপ প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। তথ্য দিয়ে তিনি দেখান সুলতানি ও মোগল আমলে সাধারণ ভারতবাসীর অবস্থা ব্রিটিশ আমলের থেকে ভালো ছিল। মনে রাখতে হবে সেই সময় তিনি বিদেশি বৃত্তির সুযোগ নিয়ে পড়াশোনা করছিলেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ক্লাস শুরুর পরে সেই বিষয়ে সুপারিশের জন্য সরকার একতরফা ভাবে এক কমিটি তৈরি করেছিল, সভাপতি আশুতোষ। প্রফুল্লচন্দ্র ছিলেন অন্যতম সদস্য। কমিটি সুপারিশ করে উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট সেই সুপারিশে সিলমোহর দেওয়ার পরে সরকার তাতে সম্মতি দেয়। কিন্তু সম্মতি দিলেও সরকার তার নিজের দায়িত্ব পালন করেনি। কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়িত করার আর্থিক দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে চাপালেও পরীক্ষার ফি বৃদ্ধির জন্য সেনেটের প্রস্তাব সরকার মেনে নেয়নি। ১৯২১ সালে ভারত সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত দায়িত্ব বাংলার প্রাদেশিক সরকারকে হস্তান্তরিত করে। প্রাদেশিক সরকার সাহায্য তো করেইনি, বরঞ্চ শিক্ষামন্ত্রী প্রভাসচন্দ্র মিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান যে শিক্ষাবিস্তার করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় যে তাড়াহুড়ো করছে, তা অপরাধের সমান। অবস্থা এমনই হয় যে অধ্যাপকদের মাইনেও বন্ধ হয়ে যায়।

প্রাদেশিক সরকার বছরে শর্তসাপেক্ষে আড়াই লাখ টাকা দিতে সম্মত হয়। আশুতোষ তখন আবার উপাচার্য, শর্তগুলি বিবেচনার জন্য তাঁর সভাপতিত্বে এক কমিটি তৈরি হয় যার অন্যতম সদস্য হন প্রফুল্লচন্দ্র। কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় যে  প্রতি মাসে সরকারের কাছে হিসাব পাঠানো বা যে কোনও রকম শিক্ষা বিস্তারের জন্য সরকারের অর্থ দপ্তরের অনুমতি নেওয়ার মতো শর্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অপমানজনক ও স্বশাসনের বিরোধী। প্রফুল্লচন্দ্র নিজে দায়িত্ব নিয়ে ১৯২২ সালের ২ ডিসেম্বর সেনেট সভাতে এই রিপোর্ট পেশ করেন। তিনি বলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট খরচের মাত্র আট শতাংশ হল সরকারি সাহায্য। স্নাতকোত্তর বিভাগের জন্য জনগণের দান থেকে পাওয়া গেছে পঁয়তাল্লিশ লক্ষ টাকা, অথচ সরকার বছরে দেয় মাত্র বারো হাজার টাকা। তাঁর ভাষণের কয়েকটি অংশ উদ্ধৃত করা প্রয়োজন, কারণ তা বর্তমান যুগের পরিপ্রেক্ষিতেও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছিলেন, “A perusal of the Government letter leads us to the conclusion that the Government desires to utilise the present financial embarrassment of the University to obtain control over Its affairs in a manner not contemplated in the Indian Universities Act of 1904… While the Government of India had been putting off the claims of financial assistance for the post-graduate scheme on the score of want of funds, it could easily spare something, like ten crores of rupees or more for the construction of new Delhi… We have to anticipate orders for scientific apparatus at the Presidency College. If we have to order anything, as is contemplated in the new scheme, we shall have to wait in the antechamber, not only of the Minister but his advisors… In the evening of my life I thought I might hand down to our successors the lamp which we have been able to, light so very dimly, so that it might burn very brilliantly. That feeble light is about to be extinguished.” বিশ্ববিদ্যালয় সেনেট সরকারি শর্ত প্রত্যাখ্যান করে। আশুতোষ উপাচার্যের ভাষণ শেষ করেছিলেন যে উক্তি দিয়ে তা অমর হয়ে রয়েছে, “Freedom first, freedom second, freedom always; nothing else will satisfy me.” সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। বর্তমানে যখন সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কর্তৃপক্ষ সরকারের সমস্ত খামখেয়াল পূরণের প্রতিযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন, এবং মন্ত্রী ও সরকারি আমলারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজেদের জমিদারি ভাবতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, তখন প্রফুল্লচন্দ্র বা আশুতোষের মানুষদের বড় প্রয়োজন। 

তথ্যসূত্র

গ্রন্থ:

১.     প্রফুল্লচন্দ্র রায়, ‘আত্মচরিত’।

২.     Prafulla Chandra Ray, ‘Life and Experiences of a Bengali Chemist’.  

৩.    শ্যামল চক্রবর্তী, ‘ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র’।

৪.     গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় ও অনির্বাণ কুণ্ডু, ‘সোনাঝরা দিনগুলি’।

৫.     Gautam Gangopadhyay, Anirban Kundu and Rajinder Singh, ‘The Dazzling Dawn’.  

প্রবন্ধ:

১.     Arnab Rai Choudhuri and Rajinder Singh, “The FRS Nomination of Sir Prafulla C. Ray and the Correspondence of N. R. Dhar” in, ‘Notes and Records, The Royal Society Journal of History of Science, Vol. 72’; 2018, p. 57. 

২.     “আমার বিজ্ঞান চর্চার পুরাখণ্ড”, ‘সত্যেন্দ্রনাথ বসু, রচনা সংকলন’।

৩.    Tripurari Chakravarti, “The University and the Government” in ‘Hundred Years of the University of Calcutta’.

৪.     Pramathanath Banerjee, “Reform and Reorganization” in ‘Hundred Years of the University of Calcutta’.

৫. গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়, “বিজ্ঞানের ইতিহাস, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র এবং আধুনিক ভারতীয় বিজ্ঞান”, ‘বিজ্ঞানীর বিবেক’।

অন্যান্য:

১. ‘The Calcutta Municipal Gazette, C.V. Raman Birth Centenary Special Number’; 1988.

২. ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট, সিন্ডিকেট ও বিভিন্ন অনুষদের কার্যবিবরণী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক রিপোর্ট’।

গৌতম গঙ্গোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক। গবেষণার বিষয় নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা। বর্তমানে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদের কর্মসচিব। বিজ্ঞানের ইতিহাস দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে আগ্রহী। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে আছে মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসুর দুটি ছোট জীবনী, নিউক্লিয় বিজ্ঞানে নারীদের অবদান নিয়ে লেখা 'তেজস্ক্রিয় ভদ্রমহিলাগণ' এবং একটি প্রবন্ধ সংকলন 'বিজ্ঞানীর বিবেক'।

মন্তব্য তালিকা - “আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়”

  1. অসাধারণ তথ্য বহুল একটি লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় শ্রধ্যার্হ ও বাংলা তথা ভারতীয় বিজ্ঞানীদের অগ্ৰগণ্য প্রবাদ পুরুষ।তাঁর সংগ্ৰামের ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা একটি কালোত্তীর্ণ বিষয়।
    ঋদ্ধ হলাম।

  2. অসাধারণ সুন্দর ও তথ‍্যবহুল রচনা। আকারে বিশাল হওয়া সত্ত্বেও একটানে পড়ে ফেলা যায় এমনই মনোমুগ্ধকর লেখাটি।
    সমসাময়িক অন‍্যান‍্য বিজ্ঞানী গবেষক যাঁদের বিষয়ে আমরা একটু কম জানি বা যাঁরা একটু কম খ‍্যাতিমান যেমন দেবেন্দ্রমোহন বসু প্রভৃতি সম্পর্কেও এমন কিছু লেখা আশা করছি।

  3. বাঙালির বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাস সম্পর্কে আগ্রহী। আপনার লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। উপরন্তু, সহায়ক গ্রন্থগুলোর নাম দেয়া হয়েছে বলে লেখাটি অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। ধন্যবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।