সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

লেখক: সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়
লেখিকা ইতিহাসের শিক্ষিকা। বই পড়া আর পশুপাখির সঙ্গ ভালোবাসেন। বাড়ি হাওড়ার আন্দুল।
আমাদের প্রাচীন সাহিত্যগুলি পাঠ করলে বোঝা যায় যে সন্তানের জন্মদান মানব মানবী উভয়ের ক্ষেত্রেই ছিল একটি ধর্মীয় ও সামাজিক কর্তব্য। প্রায় ৩.৫ হাজার বছর আগের ঋগ্বেদ-এর স্তোত্রে বলা হয়েছে, বংশধারাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নরনারীর দৈহিক মিলন আবশ্যিক কর্তব্য। বিবাহের উদ্দেশ্য ছিল কুলরক্ষা অর্থাৎ সন্তান উৎপাদন। ঋগ্বেদ দশম মন্ডল-এর সূর্যা বিবাহ স্তোত্রে প্রজাপতিকে আহ্বান করা হয়েছিল এই বলে যে, সন্তান উৎপাদনের দ্বারা আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। প্রায় ২ হাজার বছর আগের মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে, নারীর জন্ম সন্তান উৎপাদনের জন্য ও পুরুষের বংশগতি রক্ষা করার জন্য। স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নৈতিক ও ব্যবহারিক আদর্শ এটাই।
ভারতীয় চিন্তাধারায় মহাপুরুষ বা সাধকদের সংসার আশ্রমের সঙ্গিনী রা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাব্যে উপেক্ষিতা। এমনই এক নারী বুদ্ধপত্নী যশোধরা। মাতা মায়াদেবী(যিনি সিদ্ধার্থের জন্মের অনতিবিলম্বে মারা যান) ব্যতীত, একাধারে বুদ্ধের পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনের সাথে জড়িত দুই নারী হলেন তাঁর বিমাতা তথা পালিকামাতা গৌতমী ও পত্নী যশোধরা। এই দুজনের মধ্যে, অপেক্ষাকৃত কম উল্লেখিত আবার যশোধরা, অন্তত প্রাচীন পালি ধর্মীয় সাহিত্যে। কিন্তু সেই খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতক থেকে, যত সময় এগিয়েছে, যশোধরা/গোপা/বিম্বা ততই জনপ্রিয় হয়েছেন, লৌকিক জীবনে। বিভিন্ন বৌদ্ধ সাহিত্যে তিনি যেমন চিত্রিত হয়েছেন পুণ্যবতী সাধিকা হিসাবে, তেমনি এক দুখিনী অথচ তেজস্বিনী নারী হিসাবেও। এই লেখার বিষয় ও উদ্দেশ্য, তাঁর সেই চিরন্তন মানবী সত্ত্বার অন্বেষণ।