সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

ধর্মের চোরাগলিতে আবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের বিপ্লববাদের প্রথম পর্যায় : দ্বিতীয় পর্ব

ধর্মের চোরাগলিতে আবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের বিপ্লববাদের প্রথম পর্যায় : দ্বিতীয় পর্ব

শিবাশীষ বসু

জুন ২৫, ২০২২ ৬৩৭ 5

(চার)

.

‘প্রসঙ্গ : সাম্প্রদায়িকতা ও ভারতের ইতিহাস’ প্রবন্ধে ঐতিহাসিক গৌতম নিয়োগী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। মন্তব্যটির উল্লেখ না করে থাকতে পারছি না — “জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময় সাধারণ মানুষকে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনে সামিল করার জন্য অনেক সময়েই জাতীয়তাবাদী নেতারা ধর্মচেতনায় সুড়সুড়ি দিতেন। এতে তাঁদের উদ্দেশ্য অনেকাংশে সফল হলেও সাম্প্রদায়িক সংহতি বিনষ্ট হল।” এই মনোভাবটি হিন্দু ও মুসলমান — উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের ক্ষেত্রেই সত্যি। অরবিন্দ ঘোষ এর একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

অরবিন্দ তরুণ বয়স থেকেই বঙ্কিমে মুগ্ধ, যৌবনে তিলকের গুণমুগ্ধ, যাঁরা জাতীয়তাবাদ বলতে মূলত হিন্দু জাতীয়তাবাদই বুঝতেন, তাই অরবিন্দ পরিচালিত রাজনৈতিক ডাকাতি, গুপ্তসমিতির ধর্ম ও আধ্যাত্মিক ভাবের চর্চা প্রভৃতি অনেক কিছুতেই দেবী চৌধুরানী ও আনন্দমঠ-এর প্রভাব সুস্পষ্ট। তিলক সম্বন্ধে অরবিন্দ নিজে লিখেছেন, “Mr. Tilak’s career has counted three peripds each of which had an imprisonment for its culminatiing point. … The second period brought in a wider conception and a profounder effort. For now it was to reawaken not only the political mind, but the soul of the people by linking its future to its past ; it worked by a more strenuous and popular propaganda which reached its height in the organisation of the Shivaji and the Ganapati festivals. His seperation from the social reform leader, Agarkar, had opened the way for the peculiar role which he has played as a trusted and accredited leader of conservative and religious India in the paths of democratic politics. It was this position which enabled him to effect the union of the new political spirit with the tradition and sentiment of the historic past and of both with the ineradicable religious temperament of the people of which these festivals were the symbol. … What was done then by Mr. Tilak in Maharashtra has been initiated for all India by the swadeshi movement. To bring on the mass of the people, to found the greatness of the future on the greatness of the past, to infuse Indian politics with Indian religious fervour and spirituality, are the indispensable conditions for a great and powerful political awakening in India. … Mr. Tilak was the first to bring it into the actual field of practical politics.” এই জাতীয়তাবাদের ধারণার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, ‘ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া’ প্রবন্ধে — “The general opinion of the majority of the present-day nationalists in India is that we have come to a final completeness of our social and spiritual ideals, the task of the constuctive work of society having been done several thousand years before we were born, and that now we are free to employ all our activities in the political direction. We never dream of blaming our social inadequacy as the origin of our present helplessness, for we have accepted as the creed of our nationalism that this social system has been perfected for all time to come by our ancestors, who had the superhuman vision of all eternity and supernatural power for making infinite provision for future ages. Therefore, for all our miseries and shortcomings, we hold responsible the historical surprises that burst upon us from outside. This is the reason why we think that our one task is to build a political miracle of freedom upon the quicksand of social slavery.” 

অরবিন্দ ঘোষ

অরবিন্দের রাষ্ট্র চিন্তার জাজ্জ্বল্যমান উদাহরণ ‘ভবাণী মন্দির’ শিরোনামের পুস্তিকাটি। সম্ভবত ১৯০৫ সালের শেষের দিকে অথবা ১৯০৬ সালের গোড়ার দিকে এই পুস্তিকাখানি প্রকাশিত হয়। গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী বারীন ঘোষের মন্তব্য উদ্ধৃত করে জানিয়েছেন, “The pamphlet was 15 to 16 pages, and in it there was a scheme for the establishment of a temple to Bhawani, to be erected in some inaccessible hilly region of India. Though the region was not mentioned, the site had been selected near the Sone River in the Kimur Range. In this temple devotees were to receive initiation both spiritually and politically for the deliverance of India from foreign rule. The scheme undoubtedly owed its origin to Anandamath of Bankim Chandra Chatterjee. The pamphlet opened an invocation of Bhawani, and in most stirring and appealing language called for initiates to this cult in the new spirit of Nationalism. But the appeal was more in the nature of a spiritual than a political one, as the failure of the first attempt (1902-1904) at the formation of a secret society clearly proved that without spiritual background, the movement was not likely to have the moral stamina required for the facing of death ungrudgingly, not giving moral tone to terrorist activities.” মোদ্দা কথা, মৃত্যুভয় অতিক্রম করাই ‘ভবানী মন্দির’এর মূল উদ্দেশ্য ছিল। পদ্ধতিটা ছিল জেহাদিদের মতোই, যদিও উদ্দেশ্য ছিল মহৎ। অরবিন্দ যে স্বরাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পাশ্চাত্য স্বাধীনতার আদর্শের অনুকরণ নয় — তা হল ‘স্বদেশী স্বরাজ’। তাঁর দৃষ্টিতে স্বরাজের লক্ষ্য নিছক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের হাত থেকে রাজনৈতিক অধিকার লাভ নয় — তা হল, ভারতবর্ষের গৌরবময় সত্যযুগের অতীতে প্রত্যাবর্তন, পৃথিবীর মধ্যে শিক্ষক ও পথপ্রদর্শকের স্থান গ্রহণ এবং রাজনীতিকে বৈদান্তিক আদর্শে রূপদান করা হল স্বরাজের প্রকৃত তাৎপর্য। “The idral of unqualified Swaraj has a charm for the national mind which is irresistible if it is put before it in the national way by minds imbued with Indian feeling and free from the gross taint of Western materialism. Swaraj as a sort of European ideal, political liberty for the sake of political self-assertion, will not awaken India.Swaraj as the fulfillment of the ancient life of India under modern conditions, the return of the Satyayuga of national greatness, the resumption by her of her great role of teacher and guide, self-liberation of the people for the final fulfillment of the Vedandic ideal in politics, this is the true Swaraj for India.” রবীন্দ্রনাথের জীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের ভাষায়, “দেশবিদেশের বিপ্লবের ইতিহাস ও কার্যপদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়েও বঙ্কিমের রোমান্সের অনুকরণে পরিচালিত গুপ্তসমিতিকে তিনি বাস্তব পথের দিশা দেবার চেষ্টা করেননি — গীতা-র ‘মা ফলেষু কদাচন’ বচনের নির্বেদাত্মক অশুভ ব্যাখ্যা তাদের সর্বনাশকে তরান্বিত করেছিল।” ভাগবদ গীতার নিষ্কাম কর্মের তত্ত্ব এক আজব ধরণের বীরত্ব প্রকাশে সহায়তা করেছিল — যোগ্য গঠনমূলক বিপ্লবী কর্মসূচির পরিবর্তে তা ছিল শহিদ হওয়ার জন্যেই শহিদ হওয়ার পরিকল্পনা। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে, বাংলায় বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের আদি প্রাণপুরুষ অরবিন্দের কোনও ব্যাপক পরিকল্পনা ছিল বলে মনে হয় না। আরেক ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী এই প্রসঙ্গে লিখেছেন, “নিজে মিস্টিক স্বভাবের ছিলেন বলে তিনি বিশ্বাস করতেন মা (দেশমাতা ও কালী অবশ্যই সমার্থক) প্রয়োজনে সব যুগিয়ে দেবেন।” অরবিন্দের নিজের বক্তব্য, “The Mother asks us for no schemes, no plans, no methods. She herself will provide the schemes, the plans, the methods better than any we can devise.” কয়েকবছর পরেও অনন্ত সিংহ জানাচ্ছেন, “আমাদের কর্মপদ্ধতি সংক্ষিপ্ত ও সুস্পষ্ট। অস্ত্র যোগাড় কর — ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধিদের হত্যা কর — তারপর গুলিতে কিম্বা ফাঁসিকাষ্ঠে মৃত্যুবরণ কর — ব্যস। চরম স্বার্থত্যাগ ও মৃত্যুবরণ করে দেশকে মরণপণ সংগ্রামের জন্য জাগিয়ে তুলব — এই ছিল সে দিনের প্রতিজ্ঞা !” গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরীর মতে, “আমরা দেখিয়াছি, দেখিতেছি অরবিন্দ এই বঙ্কিম প্রদর্শিত জাতীয়তাকেই সজ্ঞানে ১৮৯৪ খৃঃ হইতেই অনুসরণ করিতেছেন। ব্রাহ্ম অথবা মুসলমানের তিনি ধার ধারেন না, … এক হাতে গীতা আর এক হাতে তলোয়ার দিয়া তিনি অন্ধকারের গুপ্ত-সমিতিতে তিনি হেমচন্দ্র কানুনগোকে ইতিপূর্বে বরোদা হইতে বাংলাদেশ আসিয়া নিজে দীক্ষা পর্য্যন্ত দিয়াছেন।” এই প্রসঙ্গে প্রখ্যাত বিপ্লবী হেমচন্দ্র যিনি বাংলায় বোমার জনক বলে খ্যাত তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, “যাই হোক সেদিন সন্ধ্যেবেলা আমার দীক্ষা আরম্ভ হল। আমি তলোয়ার ও গীতা হাতে নিলাম। সেই সংস্কৃত মন্ত্র অর্থাৎ ‘সত্যপাঠ’ পড়বার হুকুম হল। সংস্কৃত লেখাটি না পড়ে, আমি যা বলেছিলাম, যতদূর মনে পড়ে, তা হচ্ছে ‘ভারতের অধীনতা মোচনের জন্য সব করবো।’ ‘ক’-বাবু কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন, তার উত্তরে যা বলেছিলাম, তাতে বুঝি সন্তুষ্ট হয়ে তিনি আমার সংস্কৃত মন্ত্র পাঠের দায় থেকে অব্যহতি দিয়েছিলেন।” এই ‘ক’-বাবুটি হলেন অরবিন্দ ঘোষ। চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের নেতা অনন্ত সেন সেখানকার গুপ্ত সমিতির অভিজ্ঞতা বর্ণন করেছেন একই ভাষায় — “এখন ১৯১৮ সালে ফিরে যাচ্ছি, যখন সবেমাত্র অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নিয়েছি। আমাদের প্রাত্যহিক রুটিন ছিল ধরাবাঁধা — সূর্যোদয়ের পূর্বে ঘুম থেকে উঠে মা কালীর কাছে প্রার্থনা, প্রয়োজন মতো ব্যায়াম, ভাগবদ্গীতা থেকে খানিকটা অংশ পাঠ, তারপর নিজের মনের ভাব বিশ্লেষণ করে প্রাত্যহিক ডায়েরী লেখা …।” 


ঐতিহাসিক সুমিত সরকার জানিয়েছেন, “পুলিনবিহারী দাস প্রতিষ্ঠিত ঢাকা অনুশীলন সমিতি গোড়া থেকেই তার কাজকর্ম কেন্দ্রীভূত করেছিল শরীরচর্চা আর হিন্দুত্বের আচারে আবিল শপথের মাধ্যমে।” কলকাতা অনুশীলন সমিতির সভ্যপদ নেওয়ার আগেও দীক্ষা বা প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করতে হত। এই প্রতিজ্ঞা আবার বিভিন্নভাগে ভাগ করা ছিল। নুতন সভ্যদের মধ্যে যারা যোগ্যতার পরিচয় দিত তাদের জন্যে উচ্চতর পর্যায়ের প্রতিজ্ঞার ব্যবস্থা ছিল। এই প্রতিজ্ঞাগুলির অধিকাংশই আবার সংস্কৃত মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে নিতে হত। কেমন ছিল সেই দীক্ষাগ্রহণের রূপ, তা দেখা যাক।


“যে সভ্যকে দীক্ষা দান করা হইত তাহাকে একবেলা হবিষ্যান্ন আহার করিয়া ও একবেলা উপবাসী থাকিয়া পরের দিন স্নান ও শুভ্রবস্ত্র পরিধান করিয়া দীক্ষাগ্রহণ করিতে হইত। দীক্ষাগুরু ধুপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুস্প-চন্দনাদি সাজাইয়া বেদ ও উপনিষদের মন্ত্রপাঠ করিয়া যজ্ঞ করিতেন। যজ্ঞের পর শিষ্য ‘প্রত্যালীঢ়াসন’এ উপবিষ্ট হইত এবং দীক্ষাগুরু শিষ্যের মাথার উপর গীতা ও তাহার উপর তরবারি স্থাপন করে দক্ষিনদিকে দাঁড়াইতেন। শিষ্য দুই হস্তে প্রতিজ্ঞাপত্র ধারণ করিয়া এবং যজ্ঞাগ্নী সম্মুখে তাহা পাঠ করিয়া শপথগ্রহণ করিত। তাহার পর শিস্য যজ্ঞাগ্নি ও দীক্ষাগুরুকে প্রণাম করিয়া অনুষ্ঠান শেষ করিত।” 


হেমচন্দ্র, বাংলার প্রথম বিপ্লবী প্রজন্মের মধ্যে যিনি অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব, বিদেশ যাত্রা করেছিলেন সামরিক বিদ্যা শেখবার জন্য। সে শিক্ষা তিনি পেলেন প্যারিসবাসী এক রুশ দেশত্যাগীর কাছ থেকে এবং সবচেয়ে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল সঙ্গে পেলেন কিছু রাজনৈতিক শিক্ষাও। যার ফল হিসেবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন দেশপ্রেমের সাথে ধর্ম মিশিয়ে ফেললে তার কি ভয়ানক পরিণতি হতে পারে। হেমচন্দ্র লিখেছেন, “ধর্মকে স্বদেশ উদ্ধারের একমাত্র পন্থা বলে গ্রহণ করলে যে দুটি ঘোর সমস্যা ইংরেজদের কবল থেকে ভারত উদ্ধারের পথে হিমাচলসদৃশ অলঙ্ঘনীয় অন্তরায় না হয়ে যায় না, সে দুটি, ‘ক’-বাবু ও অন্য নেতাদের চিন্তার বিষয়ীভুত হয় নি, একথা জোর করে বলতে না পারলেও, এর গুরুত্ব যে তারা উপলব্ধি করতে পারেন নি, একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে। প্রথম, হিন্দু-মুসলমান সমস্যা ; দ্বিতীয়, অভিজাত-ইতর অর্থাৎ হিন্দুর উচ্চ নীচ জাত সমস্যা।” হেমচন্দ্র প্রবল আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “হিন্দুধর্মের মধ্যে দিয়ে ভারত উদ্ধারের মানে যে হিন্দুধর্মের তরফে ভারত উদ্ধার, এ সহজ কথা মুসলমান ভায়াদের বুঝিয়ে দিতে হয় না। পরন্তু এ তাঁদের আঁতে যে কি রকম ঘা দেয়, তা বলা বাহুল্য মাত্র। এতে মুসলমানগণ এ আন্দোলনে যে কেবল যোগ দিতে বিরত থাকতে পারেন, তা নয়, তাঁরা ইংরেজদের অপেক্ষাও হিন্দুদের প্রবল শত্রু না হয়ে পারেন না।” গিরিজাশঙ্করবাবুর মতে, অরবিন্দের গুপ্ত-সমিতিতে মা কালীও আছেন — এবং শ্রী-গীতাও আছেন। এতে মুসলমান ভ্রাতগণ যদি বলেন যে, ‘এ ব্যবস্থায় দেশ-উদ্ধারের জন্য আমরা যাই-ই বা কি করিয়া, আর থাকি-ই বা কোন মুখে? আমাদেরও তো একটা পৃথক ধর্ম্ম ও তার অনুশাসন আছে?’ এ কথার জবাব তো চরমপন্থীদের ও গুপ্ত-সমিতির দেওয়াই কর্তব্য।” এবং সবচেয়ে যেটা দুর্ভাগ্যজনক তা হল, ঐতিহাসিক সুমিত সরকারের মতে, “While the Extremist intelligentsia — whether in Bengal or in other provinces — failed to link up nationalist slogans with the immediate economic grievances of the peasantry (attempting usually a short-cut to mass contact through religious appeals which often proved disastrous in so far as the Muslims were concerned) …” 


একই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন জাতীয়তাবাদী নেতা মৌলনা আজাদও। তিনি লিখেছিলেন,”সে সময় শুধু মধ্যবিত্ত হিন্দুদের ভিতর থেকেই বিপ্লবী কর্মী সংগ্রহ করা হতো। বিপ্লবী দলে যোগদান করবার পরে আমি দেখতে পাই, সব বিপ্লবী দলই মুসলমানদের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করে।” 

(পাঁচ)


ডগলাস কিংসফোর্ড দ্বারা একের পর এক বিচারের প্রহসনে চরমপন্থী বিপ্লবীরা তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানায় সই করলেন। বারীন ঘোষের নেতৃত্বে মুরারিপুকুর রোডের একটি বাগানে গুপ্ত সমিতি গড়ে উঠলো। হেমচন্দ্র কানুনগো তখনও বিস্ফোরক বিদ্যা শিখে ইউরোপ থেকে ফিরে না এলেও উল্লাসকর দত্ত বোমা তৈরিতে সাফল্য লাভ করলেন। কিন্তু তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে গিয়ে দেওঘরের নিকটবর্তী দিঘিরিয়া পাহাড়ে নিহত হলেন প্রফুল্ল চক্রবর্তী। ১৯০৮ সালের জানুয়ারি মাসে হেমচন্দ্র বিস্ফোরক বিদ্যায় শিক্ষালাভ করে দেশে ফিরে এলেন। আরম্ভ হল চরমপন্থী বিপ্লবীদের ব্যক্তিহত্যার রাজনীতি। ইতিমধ্যে ৬ই ডিসেম্বর মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে রেললাইনের নিচে ডিনামাইট পুঁতে ছোটলাট অ্যান্ড্রু ফ্রেজারের ট্রেন উড়িয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হল। ঢাকার জেলাশাসক অ্যালেনকে হত্যারও প্রচেষ্টা হল। ১০ই ডিসেম্বর কিংসফোর্ডের মজঃফরপুরের জেলা জজ হিসেবে বদলির আদেশ প্রচারিত হল সংবাদপত্রে। ওই দিনই বইয়ের মধ্যে বোমা পুরে কিংসফোর্ডকে পাঠানো হলে, বইটি না খোলায় উনি বেঁচে গেলেন। অতঃপর তিনি মুজঃফরপুরে বদলি হলে তাঁকে হত্যার জন্য বোমা ও পিস্তল সহ প্রেরণ করা হল দুই কিশোর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি-কে। ১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল কিংসফোর্ডকে উদ্দেশ্য করে তাঁদের নিক্ষিপ্ত বোমার আঘাতে প্রাণ দিলেন দুইজন নিরীহ ইংরেজ রমণী মিসেস এবং মিস কেনেডি। ঘটনাটির সবচেয়ে বড়ো আয়রনি হল, এঁরা দুজন ছিলেন কংগ্রেসি আন্দোলনের অন্যতম সমর্থক এবং ১৮৯১ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনের সভাপতি প্রিঙ্গল কেনেডির পত্নী ও কন্যা ! বোমা নিক্ষেপের পর দুই বিপ্লবী বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন, ১লা মে ট্রেনে সহযাত্রী দারোগা নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায় মোকামা ঘাট স্টেশনে প্রফুল্ল চাকিকে গ্রেপ্তার করতে উদ্যত হলে তিনি আত্মহত্যা করলেন। একই দিনে ওয়াইনি স্টেশনের কাছে গ্রেপ্তার হলেন ক্ষুদিরাম। এর কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়ে পুলিশ অরবিন্দ, বারীন সহ প্রায় সমস্ত বিপ্লবীকেই গ্রেপ্তার করলো এবং অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করলো। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হল বারীন্দ্রকুমার ঘোষের আচরণ। সামনে পুলিশ দেখেই তাঁর মনে গীতার বৈরাগ্য উদয় হল — “হঠাৎ আমাকে লইয়া তাহারা সেইখানে উপস্থিত হইল যেখানে জিনিসপত্র পোঁতা ছিল। দেখিলাম মাটি খোড়া, আমার এত সাধের গোপন করা বোমা, রিভলভার সবই উষার আলোয় ট্যাঙ্কের মধ্য হইতে উঁকি মারিতেছে। … অভিমানে আমার চক্ষে জল ভরিয়া আসিল, রাগে ফুলিয়া ফুলিয়া অন্তরাত্মা বলিতে লাগিল, ‘ঠাকুর। সব ভেঙে দিলে, সব ভেঙ্গে দিলে? তবে নেও, আমিও রিক্ত হয়ে সব দেব।’ সেই রাগে যেখানে যাহা ছিল আমি দেখাইয়া দিলাম।” কেবল তাই নয়, বাহাদুরি দেখাতে গিয়ে দেশবাসীকে বিপ্লবমন্ত্রে দীক্ষা দেওয়ার সমস্ত ঘটনা, মায় বিপ্লবী দলের সদস্যদের নামধাম সহযোগে এমন বিবৃতি দিলেন তিনি, যে বাকি সদস্যরাও গ্রেপ্তার হলেন ! তাঁর প্ররোচনায় উল্লাসকর দত্ত ও উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকারোক্তি দিলেন। হেমচন্দ্র কানুনগো লিখেছেন, “বারীনের স্বীকারোক্তিতে এই রকম ভাবের কথা ছিল যে, বারীনই বাংলাদেশের বৈপ্লবিক গুপ্ত সমিতির একমাত্র প্রবর্ত্তক নেতা, আর উপেন, উল্লাস প্রভৃতি তার সহকারী মাত্র ছিল। কিন্তু উপেন ও উল্লাস বলেছিল, তিন জনেই নেতা। … নেতা বলে জাহির হওয়ার প্রবৃত্তিটা কত মজ্জাগত, তা এতে একটু বোঝা যায়। … তখনও গ্রেপ্তার হয় নি এমন অনেক লোকের নাম উল্লেখ করেছিল – যাদের সন্ধান পাওয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব হত না।” মাণিকতলা বাগানে বোমা আবিস্কারের পর ব্যাপক ধরপাকড়ের সময় ৩০শে মে যুগান্তর পত্রিকায় ক্ষীরোদ গঙ্গোপাধ্যায় লিখলেন ‘অকাল বোধন’ কবিতাটি, যা সেই সময় বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। 


“না হইতে মা গো বোধন তোমার
ভেঙেছে রাক্ষস মঙ্গল-ঘট,
জাগো রণচণ্ডী ! জাগো মা আমার !
আবার পূজিব চরণ-তট।
অগুরু চন্দন ধূলায় ধূসর
ভূমিতে লুটায় চামর চাঁচর
মঙ্গলশিখা গিয়াছে নিভিয়া
হল না বুঝি মা পূজন তোমার?
ভেঙেছে রাক্ষস মঙ্গল-ঘট।
এ গঙ্গাজল রয়েছে পড়িয়া !
জবা বিল্বদল গেল শুকাইয়া,
পূজার সময় যায় যে বহিয়া —
জাগে মা আমার ! সময় নিকট।
দৈত্য-তেজ নাহি করি পরাভব
বিজয়-শঙ্খ কেন মা নীরব?
হুঙ্কারে বিনাশ প্রচণ্ড দানব,
অট্ট অট্ট হাসে হাস মা বিকট।
এস রণচণ্ডী ! এস রণসাজে,
এস মা, নাচিয়া সন্তানের মাঝে ;
মহাশক্তি হৃদে করিয়া প্রচার,
শিখাও জননী ! সমর উৎকট।
নরমুণ্ড ছিঁড়ে পরাইব গলে,
সর্ব্বাঙ্গেতে তোমায় সাজাব কঙ্কালে
রক্তাম্বুধি আজ করিয়া মন্থন
তুলিয়া আনিব ‘ম্বাধীনতা’ ধন।
জাগো রণচণ্ডী ! জাগো মা আমার !
আবার পূজিব চরণ-তট। ” 

এদিকে ক্ষুদিরামের বিচারপর্ব সমাধা করে ১১ই আগস্ট তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়ে গেল। জেলের মধ্যে বিশ্বাসঘাতক রাজসাক্ষী নরেন গোঁসাইকে হত্যা করে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত হলেন কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। 

(ছয়)

১৯০৭ সালের গোড়াতেই যুগান্তর ও বন্দে মাতরম পত্রিকায় তরুণ-যুবকদের উদ্দেশ্যে সরাসরি সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেওয়া হয়েছিল, সুতরাং ঘটনাপ্রবাহ কোন পথে চলছে রবীন্দ্রনাথ তা বুঝতে পেরে ১৯০৮ সালের ৬ই মে অত্যন্ত ব্যথিতচিত্তে নির্ঝরিণী সরকারকে লিখলেন, “নিজের, বা পরিবারের বা দেশের কাজে ধৰ্ম্মকে লঙ্ঘন করিলে ঈশ্বর ক্ষমা করেন না। যদি মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যও পাপকে আশ্রয় করি তবে তাহার প্রায়শ্চিত্ত করিতেই হইবে। বিধাতার এই নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা বৃথা। দেশের যে দুর্গতি-দুঃখ আমরা আজ পর্য্যন্ত ভোগ করিয়া আসিতেছি তাহার গভীর কারণ আমাদের জাতির অভ্যন্তরে নিহিত হইয়া রহিয়াছে — গুপ্ত চক্রান্তের দ্বারা নরনারী হত্যা করিয়া আমরা সে কারণ দূর করিতে পারিব না আমাদের পাপের বোঝা কেবল বাড়িয়াই চলিবে। এই ব্যাপারে যে সকল অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক ও বিচলিতবুদ্ধি যুবক দণ্ডনীয় হইয়াছে তাহাদের জন্য হৃদয় ব্যথিত না হইয়া থাকিতে পারেনা — কিন্তু মনে রাখিতে হইবে এই দণ্ড আমাদের সকলের দণ্ড — ঈশ্বর আমাদিগকে এই বেদনা দিলেন — কারণ, বেদনা ব্যতীত পাপ দূর হইতেই পারেনা — সহিষ্ণুতার সহিত এ সমস্তই আমাদিগকে বহন করিতে হইবে — এবং ধৰ্ম্মের প্রশস্ততর পথকেই অবলম্বন করিতে হইবে। পাপের পথে পথ-সংক্ষেপ হয় বলিয়া আমরা ভ্ৰম করি সেইজন্যই অধৈৰ্য্য হইয়া আমরা সেইদিকে ধাবিত হই কিন্তু তাড়াতাড়ি করিতে গিয়াই সফলতাকে বিসর্জন দিই। আজ আমাদের পথ পূর্বের অপেক্ষা অনেক বাড়িয়া গেল — এখন আবার আমাদিগকে অনেক দুঃখ অনেক বাধা অনেক বিলম্বের মধ্য দিয়া যাইতে হইবে। ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে মাথা নত করিয়া পুনর্বার আমাদিগকে যাত্রা করিতে হইবে — যত কষ্ট হউক, যত দূরপথ হউক অবিচলিত চিত্তে যেন ধৰ্ম্মেরই অনুসরণ করি। সমস্ত দুর্ঘটনা সমস্ত চিত্তক্ষোভের মধ্যে ঈশ্বর যেন আমাদিগকে সেই শুভবুদ্ধি দান করেন।” 


রথীন্দ্রনাথ যথার্থই বলেছেন, “এরপর স্বদেশী আন্দোলন ক্রমশ যখন সন্ত্রাসবাদের চোরাগলির দিকে পা বাড়াল, বাবা বুঝলেন তাঁর পথ স্বতন্ত্র।” 


দিনকয়েক পরে ২৫শে মে চৈতন্য লাইব্রেরির উদ্যোগে মিনার্ভা থিয়েটারে পাঠ করা ‘পথ ও পাথেয়’ শীর্ষক প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ এই সন্ত্রাসবাদের তীব্র বিরোধিতা করে বললেন, “বাংলাদেশে কিছুকাল হইতে যাহা ঘটিয়া উঠিতেছে তাহার সংঘটনে আমাদের কোন্‌ বাঙালির কতটা অংশ আছে তাহার সূক্ষ্ম বিচার না করিয়া এ কথা নিশ্চয় বলা যায় যে, কায় বা মন বা বাক্যে ইহাকে আমরা প্রত্যেকেই কোনো-না-কোনো প্রকারে খাদ্য জোগাইয়াছি। অতএব যে চিত্তদাহ কেবল পরিমিত স্থান লইয়া বদ্ধ থাকে নাই, প্রকৃতিভেদে যাহার উত্তেজনা আমরা প্রত্যেকে নানাপ্রকারে অনুভব ও প্রকাশ করিয়াছি, তাহারই একটা কেন্দ্রক্ষিপ্ত পরিণাম যদি এইপ্রকার গুপ্ত বিপ্লবের অদ্ভুত আয়োজন হয় তবে ইহার দায় এবং দুঃখ বাঙালিমাত্রকেই স্বীকার করিতে হইবে। জ্বর যখন সমস্ত শরীরকে অধিকার করিয়াই হইয়াছিল তখন হাতের তেলো, কপালের চেয়ে ঠাণ্ডা ছিল বলিয়াই মৃত্যুকালে নিজেকে সাধু ও কপালটাকেই যত নষ্টের গোড়া বলিয়া নিষ্কৃতি পাইবে না। আমরা কী করিব, কী করিতে চাই, সে কথা স্পষ্ট করিয়া ভাবি নাই ; এই জানি আমাদের মনে আগুন জ্বলিয়াছিল। সেই আগুন স্বভাবধর্মবশত ছড়াইয়া পড়িতেই ভিজা কাঠ ধোঁয়াইতে থাকিল, শুকনা কাঠ জ্বলিতে লাগিল এবং ঘরের কোণে কোন্‌খানে কেরোসিন ছিল সে আপনাকে ধারণ করিতে না পারিয়া টিনের শাসন বিদীর্ণ করিয়া একটা বিভীষিকা করিয়া তুলিল। … ব্যাপারটা দুই পক্ষকে লইয়া — অথচ দুই পক্ষের মধ্যে আপসে বোঝাপড়ার সম্বন্ধ অত্যন্ত ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে। এক দিকে প্রজার বেদনাকে উপেক্ষা করিয়া বল একান্ত প্রবল মূর্তি ধরিতেছে, অন্য দিকে দুর্বলের নিরাশ মনোরথ সফলতার কোনো পথ না পাইয়া প্রতিদিন মরিয়া হইয়া উঠিতেছে ; এ অবস্থায় সমস্যাটি ছোটো নহে। কারণ, আমরা এই দুই পক্ষের ব্যাপারে কেবল এক পক্ষকে লইয়া যেটুকু চেষ্টা করিতে পারি তাহাই আমাদের একমাত্র সম্বল। … এখন আমাদের দেশের লোককে অকপট হিতৈষণা হইতে এই কথা স্পষ্ট করিয়া বলিতে হইবে, গবর্মেন্টের শাসননীতি যে পন্থাই অবলম্বন করুক এবং ভারতবর্ষীয় ইংরেজের ব্যক্তিগত ব্যবহার আমাদের চিত্তকে যেমনই মথিত করিতে থাক্‌, আমাদের পক্ষে আত্মবিস্মৃত হইয়া আত্মহত্যা করা তাহার প্রতিকার নহে। … যে কাল পড়িয়াছে এখন ধর্মের দোহাই দেওয়া মিথ্যা। কারণ রাষ্ট্রনীতিতে ধর্ম-নীতির স্থান আছে এ কথা যে ব্যক্তি সম্পূর্ণবিশ্বাসে প্রকাশ করে, লোকে তাহাকে হয় কাণ্ডজ্ঞানহীন নয় নীতিবায়ুগ্রস্ত বলিয়া অবজ্ঞা করে। … অতএব দেশের যে-সকল লোক গুপ্তপন্থাকেই রাষ্ট্রহিতসাধনের একমাত্র পন্থা বলিয়া স্থির করিয়াছে তাহাদিগকে গালি দিয়াও কোনো ফল হইবে না এবং তাহাদিগকে ধর্মোপদেশ দিতে গেলেও তাহারা হাসিয়া উড়াইয়া দিবে। আমরা যে যুগে বর্তমান এ যুগে ধর্ম যখন রাষ্ট্রীয় স্বার্থের নিকট প্রকাশ্যভাবে কুণ্ঠিত তখন এরূপ ধর্মভ্রংশতার যে দুঃখ তাহা সমস্ত মানুষকেই নানা আকারে বহন করিতেই হইবে ; রাজা ও প্রজা, প্রবল ও দুর্বল, ধনী ও শ্রমী কেহ তাহা হইতে নিষ্কৃতি পাইবে না। রাজাও প্রয়োজনের জন্য প্রজাকে দুর্নীতির দ্বারা আঘাত করিবে এবং প্রজাও প্রয়োজনের জন্য রাজাকেও দুর্নীতির দ্বারাই আঘাত করিতে চেষ্টা করিবে, এবং যে-সকল তৃতীয় পক্ষের লোক এই-সমস্ত ব্যাপারে প্রত্যক্ষভাবে লিপ্ত নহে তাহাদিগকেও এই অধর্মসংঘর্ষের অগ্নিদাহ সহ্য করিতে হইবে। … অধৈর্য বা অজ্ঞান-বশত স্বাভাবিক পন্থাকে অবিশ্বাস করিয়া অসামান্য কিছু-একটাকে ঘটাইয়া তুলিবার ইচ্ছা অত্যন্ত বেশি প্রবল হইয়া উঠিলে মানুষের ধর্মবুদ্ধি নষ্ট হয় ; তখন সকল উপকরণকেই উপকরণ, সকল উপায়কেই উপায় বলিয়া মনে হয়। তখন ছোটো ছোটো বালকদিগকেও এই উন্মত্ত ইচ্ছার নিকট নির্মমভাবে বলি দিতে মনে কোনো দ্বিধা উপস্থিত হয় না। আমরা মহাভারতের সোমক রাজার ন্যায় অসামান্য উপায়ে সিদ্ধিলাভের প্রলোভনে আমাদের অতিসুকুমার ছোটো ছেলেটিকেই যজ্ঞের অগ্নিতে সমর্পণ করিয়া বসিয়াছি — এই নির্বিচার নিষ্ঠুরতার পাপ চিত্রগুপ্তের দৃষ্টি এড়ায় নাই — তাহার প্রায়শ্চিত্ত আরম্ভ হইয়াছে, বালকদের জন্য বেদনায় সমস্ত দেশের হৃদয় বিদীর্ণ হইতেছে। … দুঃখ আরো কত সহ্য করিতে হইবে জানি না। দুঃখ সহ্য করা তত কঠিন নহে, কিন্তু দুর্মতিকে সম্বরণ করা অত্যন্ত দুরূহ। অন্যায়কে অত্যাচারকে একবার যদি কর্মসাধনের সহায় বলিয়া গণ্য করি তবে অন্তঃকরণকে বিকৃতি হইতে রক্ষা করিবার সমস্ত স্বাভাবিক শক্তি চলিয়া যায় ; ন্যায়ধর্মের ধ্রুব কেন্দ্রকে একবার ছাড়িলেই বুদ্ধির নষ্টতা ঘটে, কর্মের স্থিরতা থাকে না, তখন বিশ্বব্যাপী ধর্মব্যবস্থার সঙ্গে আবার আমাদের ভ্রষ্ট জীবনের সামঞ্জস্য ঘটাইবার জন্য প্রচণ্ড সংঘাত অনিবার্য হইয়া উঠে। … সেই প্রক্রিয়া কিছুদিন হইতে আমাদের দেশে চলিতেছে এ কথা নম্রহৃদয়ে দুঃখের সহিত আমাদিগকে স্বীকার করিতেই হইবে। এই আলোচনা আমাদের পক্ষে একান্ত অপ্রিয়, তাই বলিয়া নীরবে ইহাকে গোপন করিয়া অথবা অত্যুক্তি দ্বারা ইহাকে ঢাকা দিয়া অনিষ্টকে সাংঘাতিক হইয়া উঠিতে দেওয়া আমাদের কাহারো পক্ষে কর্তব্য নহে।” এই কথা বলবার সময় নিঃসন্দেহে তাঁর অপ্রাপ্তবয়স্ক তরুণ ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্লর কথা মনে পড়েছিল। স্বভাবতই রবীন্দ্রনাথের এই ভাষণ চরমপন্থী বিপ্লববাদীদের খুশি করতে পারে নি — ‘বন্দে মাতরম’-এ প্রকাশিত অন্ততঃপক্ষে চারটে প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের মতের তুমুল বিরোধিতা করা হয়। এইসব কথা বলবার জন্য রবীন্দ্রনাথকে একালেও প্রবল সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল, এখনও হয়, কিন্তু আমরা দেখবো রবীন্দ্রনাথের আগে পরে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কেউ প্রকাশ্যে, কেউ ব্যক্তিগত পরিসরে সন্ত্রাসবাদের বরং বলা যায় ব্যক্তিহত্যার রাজনীতির মুক্তকন্ঠে নিন্দা করে গেছেন।


আত্মজীবনীতে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে গিয়েছিলেন, “With anarchism no one can have any sympathy. Murder is murder, no matter by what name the deed is sought to be palliated, or by what motives excused.” পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড ভ্রমণের সময়ে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে সুরেন্দ্রনাথ পুনরায় বলেন, “Let there be no misconception about my attitude. I do not stand here in justification of those anarchial developments which have unfortunately taken place in Bengal. I express the sense of the better mind of Bengal, and, I may add, of all India, when I say that we all deplore those anarchial incidents. My Indian colleagues and myself have condemned them in our columns with the utmost emphasis that we could comnand.” চরমপন্থী নেতা বলে খ্যাত বাল গঙ্গাধর তিলক ১৯১৫ সালের জুন মাসে মন্তব্য করেছিলেন, “… I have no hesitation in saying that the acts of violance which have been committed in the different parts of India are not only repugnant to me, but have, in my opinion, actually unfortunately retarded, to a great extent, the cause of our political progress. Whether looked at from individual, or public point of view, they deserve, as I have said on many occassions, to be equally condemned.” সশস্ত্র বিপ্লবীদের সম্বন্ধে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বক্তব্য ছিল, “এদের অনেককে আমি অত্যন্ত ভালবাসি, কিন্তু এদের কাজ দেশের পক্ষে একেবারে ভয়ানক মারাত্মক। এই অ্যাক্টিভিটিতে সমস্ত দেশ অন্ততঃ পঁচিশ বছর পেছিয়ে যাবে। তা ছাড়া এর মস্ত দোষ এই যে, স্বরাজ পাবার পরেও এ জিনিস যাবে না, তখন আরও স্পর্ধিত হয়ে উঠবে, সামান্য মতভেদে একেবারে ‘সিভিল ওয়ার’ বেধে যাবে। খুনোখুনি রক্তারক্তি আমি অন্তরের সঙ্গে ঘৃণা করি, …।” এমনকি জানলে সত্যিই অবাক লাগে, স্বয়ং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৫ সালে ফরাসী মনিষী রোমাঁ রোলাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনায় মত প্রকাশ করেছিলেন, “সন্ত্রাসবাদকে তিনি সুস্থ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বলে মনে করেন না।” 

(সাত)

১৯শে অক্টোবর ১৯০৮, আলিপুরের অ্যাডিশনাল সেশনস জজ বীচক্রফটের কোর্টে অরবিন্দ, বারীন, উল্লাসকর হেমচন্দ্র সহ মোট ৩৬ জনের বিচার আরম্ভ হল। দীর্ঘ শুনানির পর ৬ই মে ১৯০৯ রায় দেওয়া হল –  অরবিন্দ সহ ১৭ জন মুক্তিলাভ করলেন, বারীন ও উল্লাসকরের ফাঁসির হুকুম হল, ১০ জনের হল যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড। ১৩ই মে হাইকোর্টে আপীল করা হল, আপীলে বারীন ও উল্লাসকরের মৃত্যুদণ্ড রদ হয়ে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরে পরিণত হল, হেমচন্দ্র কানুনগো ও উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের যাবজ্জীবন বহাল থাকলেও অন্যান্য অনেকেরই দণ্ড হ্রাস হয়েছিল। জেল ফেরত অরবিন্দ ঘোষ মতে ও কর্মে সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষে পরিণত হলেন। রাজনৈতিক জীবনে বরাবরই তিনি বঙ্কিমচন্দ্রের প্রভাবে রাজনীতি ও ধর্মের অশুভ সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন, এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যোগ সাধনাকে রাজনীতির সঙ্গে মিশ্রিত করে ভণ্ডামী। প্রায়ই অরবিন্দ ও বারীন তথাকথিত ‘নির্দেশ’ এবং ‘দর্শন’ পেতেন ! জেল থেকে মুক্ত হয়ে অরবিন্দ প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়ে ধর্মীয় সাপ্তাহিকী সম্পাদনা করা আরম্ভ করলেন এবং কিছুকালের মধ্যেই ‘নির্দেশ’ পেয়ে প্রথমে ফরাসী অধিকৃত চন্দননগর এবং পরে পণ্ডিচেরিতে উপস্থিত হলেন, যেখানে তাঁর তথাকথিত দিব্যজীবনের প্রকাশ পেল। দীর্ঘদিন বিপ্লবীরা বিশ্বাস করতেন “নিশ্চয়ই কোন দৈব-শক্তি আমাদের পেছনে কাজ করছে … শ্রীঅরবিন্দের গভীর সাধনার ফল আমাদের ওপর কাজ করছে।”

এইভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটলো বাংলায় হিংসাশ্রয়ী বিপ্লবের প্রথম পর্বের। 

হেমচন্দ্র কানুনগো

আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই প্রসঙ্গে শোনাই। প্রচলিত মিথ বলে, চিত্তরঞ্জন বিনা পারিশ্রমিকে আলিপুর বোমার মামলাটি লড়েছিলেন। কিন্তু এই মামলায় যাবজ্জীবন দ্বীপান্তরের সাজা পাওয়া বোমা-বিশারদ বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর লেখা ‘বাংলায় বিপ্লবী প্রচেষ্টা’ বই অন্য কথা বলে। হেমচন্দ্র  লিখেছেন, “অরবিন্দবাবুকে সমর্থন করবার প্রথমে ভার নিয়েছিলেন মিঃ ব্যোমকেশ। তিনি আইনের মারপেঁচে আমাদের মোকর্দ্দমা হাইকোর্টে তুলে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেছিলেন। বিফল হল। কম ফিতে হাইকোর্ট ছেড়ে নিম্ন আদালতে আটকে থাকতে রাজি হলেন না। তখন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনকে ধরা হল। তিনি এককালীন অগ্রিম ছ’হাজার টাকা এবং মোকর্দ্দমা শেষ করতে ১২ হাজার টাকা দাবী করেছিলেন। তখন অরবিন্দ বাবুর ভগিনী শ্রদ্ধেয়া কুমারী সরোজিনী ঘোষ তাঁর দাদার জন্য চাঁদা সংগ্রহের ‘ফান্ড’ খুলেছিলেন। তাতে সে যাবৎ লব্ধ টাকা পূর্ব্বোক্ত ব্যারিস্টার সাহেবকে বিদায় দিতে ব্যয়িত হয়ে গেছল। অথচ সেই দিনই ছ’হাজার টাকা চাই। কারণ, পরদিন মোকর্দ্দমা চলবার কথা ছিল। শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুক্ত কৃষ্ণকুমার মিত্র মহাশয়ের মুখে পরে শুনেছি, একজন সহৃদয় মাড়োয়ারী ভদ্রলোককে বলা মাত্রই ছ’হাজার টাকা তক্ষুণি দিয়েছিলেন।” ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন যে কেবলমাত্র অরবিন্দের হয়েই এই মামলায় লড়েছিলেন সে কথা অরবিন্দের ভাই বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষের আত্মজীবনীতেও আছে। বারীন লিখছেন, “অরবিন্দের পক্ষে ব্যোমকেশ চক্রবর্তী ও কে এন চৌধুরী উকিল নীরোদচন্দ্র চ্যাটার্জ্জিকে বাহন বা সহযোগী করিয়া দণ্ডায়মান ; মোকদ্দমা কিন্তু দু’পা হাঁটিতেই পট পরিবর্ত্তন হইয়া উক্ত ব্যারিস্টারদ্বয়ের স্থান গ্রহণ করিলেন দেশবন্ধু দাশ। বাকি বড় ও চুণাপুঁটিগুলির পক্ষে হইলেন ব্যারিস্টারের মধ্যে পি মিত্র, ই পি ঘোষ, এস রায়, জে এন রায়, আর সি ব্যানার্জ্জি, আর এন রায় …।” 


(সমাপ্ত)

তথ্যসূত্র :

১) ইতিহাসচর্চা : জাতীয়তাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা – গৌতম চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত

২) বাল গঙ্গাধর তিলক : হিজ রাইটিংস এ্যান্ড স্পিচেস – অরবিন্দ ঘোষ সংকলিত

৩) ন্যাশনালিজম – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৪) শ্রীঅরবিন্দ ও বাংলায় স্বদেশী যুগ – গিরিজাশঙ্কর রায়চৌধুরী

৫) বন্দেমাতরম এ্যান্ড ইন্ডিয়ান ন্যাশনালিজম – হরিদাস মুখার্জী উমা মুখার্জী

৬) রবি জীবনী পঞ্চম খণ্ড – প্রশান্তকুমার পাল

৭) স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেস – অমলেশ ত্রিপাঠী

৮) ইন্ডিয়া’জ ফাইট ফর ফ্রীডম – হরিদাস মুখার্জী উমা মুখার্জী

৯) অগ্নিগর্ভ চট্টগ্রাম – অনন্ত সিংহ

১০) বাংলায় বিপ্লব প্রচেষ্টা – হেমচন্দ্র কানুনগো

১১) আধুনিক ভারত : ১৮৮৫-১৯৪৭ – সুমিত সরকার

১২) ভারতের বৈপ্লবিক সংগ্রামের ইতিহাস – সুপ্রকাশ রায়

১৩) মডার্ন ইন্ডিয়া : ১৮৮৫-১৯৪৭ – সুমিত সরকার

১৪) ভারত স্বাধীন হল – মৌলনা আবুল কালাম আজাদ

১৫) বারীন্দ্রের আত্মকাহিনী : ধর-পাকড়ের যুগ – বারীন্দ্রকুমার ঘোষ

১৬) মাতৃ-মন্ত্র – কালীচরণ ঘোষ

১৭) চিঠিপত্র সপ্তম খণ্ড – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৮) পিতৃস্মৃতি – রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৯) রবীন্দ্র রচনাবলী দশম খণ্ড – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

২০) এ নেশন ইন মেকিং – সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

২১) বাল গঙ্গাধর তিলক : এ স্টাডি – ডি পি কর্মকার

২২) স্বদেশ ও সাহিত্য – শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

২৩) রম্যাঁ রলাঁ : ভারতবর্ষ দিন-পঞ্জী – অবন্তীকুমার সান্যাল অনূদিত

মন্তব্য তালিকা - “ধর্মের চোরাগলিতে আবদ্ধ ছিল বাংলাদেশের বিপ্লববাদের প্রথম পর্যায় : দ্বিতীয় পর্ব”

  1. ভিষন তথ্যপূর্ণ একটি প্রতিবেদন। বাঙালি যে চিরকালই আত্মঘাতী এক জাতী এই লেখা মর্মে মর্মে বুঝিয়ে দেয়। আমরা এখনো তার অনুসরণ করে চলেছি। ঋষি অরবিন্দের ঋষি হওয়ার ভন্ডামি আমি অনেক বই পড়েছি। দোলের সমস্ত বন্ধুদের ফাঁসিয়ে নিজে কেমন মুচলেকা দিয়ে একেবারে ঋষি হয়ে গেলেন ! এ কথা সত্যি, সে সময়ে কোন মুসলিমকে কেউ ই সংযুক্ত করার চিন্তা নেয় নি। জাতিগত বিভেদ তৈরি হয়েছিল তার অনেক আগে থেকেই। একমাত্র সুভাষচন্দ্র বোস এই ভেদাভেদের কুফল ভালো বুঝেছিলেন। সুচতুর ইংরেজ এই ভেদাভেদ কে অস্ত্র করে ভারতের জনগণকে দু’ভাগে ভাগ করে দিল।
    প্রকৃত রাজনৈতিক জ্ঞানের অভাবে, অকালে ঝরে গেছিল বহু প্রাণ! কেবলমাত্র হুজুগে! এদের চিন্তাধারা যাই থাকুক, তবুও এরা আমাদের কাছে নমস্য।

    1. সঠিক লিখেছেন। সুভাষচন্দ্রই সম্ভবত সকলকে নিয়ে চলতে পেরেছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ পথে।

  2. ভাই শিবাশিষ আমি অকপটে জানতে চাই যে, এই লেখা একদম আমার মনের চিন্তা গুলির হুবহু প্রতিফলন। ভীষন সুন্দর ভাবে আপনি বিস্তারিত বর্ণনা সাজিয়েছেন। তবে সামান্য কয়েকটি বিষয়ে দ্বিমত অনুভব করি। যেমন, – ১/ অনন্ত সিং ইনি আন্দামান থেকে ফেরার পর নিজের একটি রাজনৈতিক দল খুলেছিলেন যা অনেকটাই নকশাল পন্থী ঘেঁষা ছিল। এবং তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা চুটিয়ে ব্যাংক ডাকাতি, অলংকাের দোকান লুট ইত্যাদি চালিয়ে গেছেন।
    ২/ গীতা নামক বইটি হল জেহাদি কর্মকাণ্ডের মূল। পরে বঙ্কিমের আনন্দমঠ, তিলকের শিবাজী পুজো, অরবিন্দের মতলব সবই হল এর শাখা প্রশাখা। হেম কানুনগো এঁর লেখায় উল্লেখিত অলৌকিক শক্তি ধারী ধর্মগুরু খোঁজার হাস্যকর বিবরন একটু উল্লেখ করলে পারতেন। আর রবীন্দ্রনাথ মূলত একজন কবি মানুষ। তাঁর রাজনীতি চিন্তা কম বয়সে একরকম ,পরিনত বয়সে আর একরকম বিবর্তিত হয়েছে। এই বিষয়টি আপনি খুব সুন্দর উপস্থাপিত করেছেন।
    ৩/ আপনি উল্লেখ করেছেন যে সুভাষ বোস রমা রোলার কাছে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন। অথচ তিনি স্বয়ং এবং তাঁর দাদা শরৎ বোস সর্বদা চট্টগ্রাম বিপ্লবী আন্দোলনের সমর্থন জানিয়ে গেছেন। এমনকি শরৎ বোস একবার অনন্ত সিং দের পক্ষে মামলার কারণে চট্টগ্রামে গিয়ে সুটকেস ভর্তি করে রিভলবার, গুলি সহ টাকা সূর্য সেনের উদ্দ্যেশ্যে দিয়ে এসেছিলেন।
    যাই হোক আপনাকে অন্তর থেকে অভিনন্দন জানাই এই অসাধারন লেখাটির জন্য।

    1. অনেক ধন্যবাদ দাদা। যতদূর জানি অনন্ত সিংহ সাতের দশকে একটা নকশালপন্থী দল খুলেছিলেন।

    2. বেশ ভালো লিখেছেন। গীতা সম্পর্কে আপনার মতামত পড়লাম। আদেও কোনদিন পড়েছেন বা পড়লেও বুঝেছেন কিনা সে নিয়ে সন্দেহ আছে যথেষ্ট। যাই হোক আপনাদের যত বাহাদুরি তো এক জায়গাতেই দেখাতে পারেন। কোরআন বাইবেল বা এরকম অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে এরকম প্রকাশ্য বিশ্লেষণের অপেক্ষায় রইলাম (যদি সেটা করার সাহস থাকে)। কমেন্টটি ডিলিট করতে পারেন। সেটা আপনার অক্ষমতার পরিচয় ভেবে নেব।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।