সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত – জেরিকো, কৃষির উদ্ভব ও স্বর্গ হতে পতন

হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত – জেরিকো, কৃষির উদ্ভব ও স্বর্গ হতে পতন

জয়ন্ত দাস

নভেম্বর ৪, ২০২৩ ৬০৪ 2

“তোমার নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি যাবজ্জীবন কঠোর পরিশ্রমে উহা ভোগ করিবে। উহাতে তোমার জন্য কন্টক ও কাঁটাগাছ জন্মিবে, এবং তুমি ভূমির তৃণ ভোজন করিবে। তুমি মুখে ঘর্ম তুলিয়া খাদ্য পাইবে যতকাল তুমি মাটিতে ফিরিয়া না যাইতেছ; তুমি তো তাহা হইতেই নির্মিত হইয়াছ; কেননা তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” জেনেসিস ৩:১৭-১৯, কিং জেমস বাইবেল।

অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, আব্রাহামিক ধর্মের ঈশ্বরের স্বর্গোদ্যান থেকে আদম-ইভকে বহিষ্কার হল মানবের শিকারি-সংগ্রাহকের জীবনযাত্রার শেষ হবার রূপক। ১০-১২ হাজার বছর আগে এই পরিবর্তন এলো, আর তারপর থেকে মানব প্রজাতির শাস্তি হল কৃষক হিসাবে কঠোর পরিশ্রম করে দিনের খাদ্য জোগাড় করা। বিবর্তনবাদীদের সঙ্গে বাইবেল-পন্থী সৃষ্টিতাত্ত্বিকদের সব বিষয়ে মতভেদ, কিন্তু এই একটা ব্যাপারে অনেক বিবর্তনবাদী সহমত—মানুষের পতনের শুরু কৃষির শুরু থেকেই। কৃষিকাজ নাকি মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভুল। তাই কি?

জেরিকোর কথা

৯০০০ সাধারণ পূর্বাব্দে জেরিকো শহরে পত্তন হয়। একে ‘বিশ্বের প্রথম শহর’ আখ্যা দেওয়া হয়।১,২ মেসোপটেমিয়ার প্রাচীনতম শহর এরিডু, উরুক এবং উর জেরিকো পত্তনের সাড়ে চার হাজার বছরের মধ্যে তৈরি হয়নি। এই উপমহাদেশে সিন্ধু সভ্যতার নানা কেন্দ্র শহর পদবাচ্য হয়ে উঠেছে প্রাচীন জেরিকোর অন্তত সাড়ে পাঁচ হাজার বছর পরে। মিশরে প্রথম শহর এসেছে প্রাচীন জেরিকোর ছয় হাজার বছর পরে।

জেরিকো বিশ্বের প্রাচীনতম বসতিগুলির মধ্যে একটি। তাকে শহর বলার একটা বড়ো কারণ হল তার চারদিক ঘিরে আছে বিশ্বের প্রাচীনতম সুরক্ষা প্রাচীর। এই শহরের মধ্যে এবং কাছাকাছি বেশ কয়েকটি ঝরনা ছিল, আর প্রাথমিকভাবে সেজন্যেই এখানে মানুষ থাকতে শুরু করে। ক্রমে জনসংখ্যা বাড়ে, আর এই ঝরনাগুলোর জল অনেক মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল।

প্রথম বসতি

মোটামুটি ১২ হাজার বছর আগে প্রাচীন প্রস্তর যুগের শেষ হয়ে নতুন প্রস্তর যুগ শুরু হয়। এই ঘটনাটা, বলা বাহুল্য, পৃথিবীর সর্বত্র একই সঙ্গে ঘটেনি। নতুন প্রস্তর যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল কৃষিকাজ আর পশুপালনের শুরু, এ ছাড়া পাথরের হাতিয়ারগুলো এই যুগে আর-একটু ভালো হয়। কৃষির ফলে মানুষের প্রায় তিন লক্ষ বছরের শিকারি-সংগ্রাহক যাযাবর জীবনের অবসান হতে শুরু করল।

জেরিকো অঞ্চলের জলবায়ু, পলিমাটি এবং ঝর্ণা তাকে প্রথমে সেখানকার শিকারি-সংগ্রাহকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছিল, প্রায় ১২ হাজার বছর আগে এখানে তাদের বসতি স্থাপন শুরু হয়। পরবর্তীকালে তাদের বংশধরেরা জেরিকো-র আশপাশে কৃষির বিকাশ ঘটান, ও এক সমৃদ্ধ জনগোষ্ঠী এখানে বাস করে। প্রাচীন জেরিকো-কে ইউনেসকো ‘সভ্যতার উদ্ভবস্থল’ (ক্র্যাডল অফ সিভিলাইজেশন) হিসেবে বর্ণনা করেছে। কৃষির উদ্ভবের আগে এর তুল্য কোনো বসতির কথা ভাবাই যেত না।

চিত্র-১

১২ হাজার বছর আগে, জেরিকো আর তার আশপাশের অঞ্চল ছিল ‘নাটুফিয়ান সংস্কৃতি’-র মানুষদের বিচরণক্ষেত্র। শেষ বরফ যুগের শীতল আবহাওয়া ও খরা, যা ‘ইয়ংগার ড্রাইয়াস’ নামে খ্যাত, সেটা ১১,৬০০ বছর আগে শেষ হয়। তখন এই অঞ্চলে সারা বছর ধরে মানুষের থাকার মতো অবস্থা আসে, এবং মানুষ এখানে স্থায়ী বসতি গড়তে শুরু করে। তেল এস-সুলতান পাহাড়ে বিশ্বের প্রাচীনতম স্থায়ী বসতিটি গড়ে ওঠে। এটা আজকের জেরিকো শহর থেকে ২ কিলোমিটার উত্তরদিকে। এই বসতি ৬০০ বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে বেড়েছিল, আর প্রায় ১০ হাজার বছর আগে এই শহরের আয়তন দাঁড়িয়েছিল ৪০ হাজার বর্গমিটার। তুলনা করার জন্য বলা যায়, বিধাননগরের আয়তন হল এর এক হাজার গুণ।

প্রাচীন জেরিকোর এক টেকসই কীর্তি হল তার প্রাচীর। শহর ঘিরে দু-মানুষের বেশি উঁচু ও এক মানুষ চওড়া পাথরের প্রাচীর বানানো হয়েছিল। প্রাচীরের ভেতরে একটা ২৮ ফুট উঁচু আর ৩০ ফুট চওড়া পাথরের টাওয়ার ছিল, আর টাওয়ারের ভেতরদিকে ২২টি ধাপের একটি সিঁড়ি ছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে শহরে বেশ জোরালো সামাজিক সংগঠন ছিল। অনুমিত জনসংখ্যা ছিল ৩০০ থেকে ৩০০০ এর মধ্যে। এরা গম, বার্লি এবং শুঁটিজাতীয় খাদ্যের চাষ করেছিল, এবং সম্ভবত ঝর্নার জল থেকে সেচ করতে জানত। তার পাশাপাশি এরা বন্য প্রাণী শিকার করেও খেত।

দ্বিতীয় বসতি

অজানা কারণে কয়েক শতাব্দী পরে এই প্রথমবারের বসতিটি পরিত্যক্ত হয়। আজ থেকে প্রায় ৯ হাজার বছর আগে বাইরের লোক এসে দ্বিতীয় বসতি গড়ে তোলে। এতে নানা নতুন উদ্ভিদের চাষ দেখা গেল, আর নতুন গৃহপালিত জীব হিসেবে এল ভেড়া। এদের বাড়িগুলো ছিল চারকোণা, কাদা-ইঁটের তৈরি। ঘরগুলোর মেঝেতে চুনের আস্তরণ ছিল। এরাই প্রথম ঘষার পাথর ও হাতুড়ি তৈরি করেছিল, এবং ধারালো পাথরের ব্লেডের তিরের ফলা, কাস্তের ফলা, কুঠার, চাঁছনি, ছেনি এসব বানিয়েছিল। এরা নরম চুনাপাথর থেকে থালা ও বাটি বানিয়েছিল। বানিয়েছিল শিল্পকর্মও।

চিত্র-২

এরা মৃতদের মাথার খুলি প্লাস্টার করে তার ওপরে মুখচোখ এঁকে সেটা রেখে দিত বা বাড়িতে কবর দিত, দেহের বাকি অংশ কবর দিত অন্যত্র। এই সৎকার-পদ্ধতি সত্যিই অদ্ভূত ছিল। মাথার খুলি থেকে চোয়ালের হাড় বাদ দিয়ে মৃতের মুখের বৈশিষ্ট্যগুলো প্লাস্টার দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হত ও লাল এবং কালো রঙে মুখের নানা অংশ আঁকা হত। অনেক ক্ষেত্রে চোখের জায়গায় ঝিনুকের খোলা লাগানো হত, আর চুল ও গোঁফ আটকানোও হত।

চিত্র-৩

এইবারে বসতি হাজারখানেক বছর চালু ছিল। তারপরের হাজার বছরে জেরিকো সম্ভবত পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে ছিল। কিন্তু আমরা আজ এই শহরের পরবর্তী ইতিহাসের বর্ণনায় যাব না, তার পুরোনো ইতিহাস-প্রাগিতিহাসে ফিরব।

কৃষির উত্থান—স্বর্গ হতে পতন?

দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, চীন, দুই আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু অঞ্চলে অন্তত সাতবার কৃষি আবিষ্কার ও তার সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রা বদলে ফেলার প্রক্রিয়াগুলো ঘটেছে। সব জায়গায় সেটা একভাবে ঘটেনি। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় কৃষির উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা সব চাইতে বেশি। ভূমধ্যসাগরের পূর্বদিকের এই অঞ্চলে হিমযুগের শেষের দিকে জলবায়ু ও বৃষ্টিপাত উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ ছিল, ভূমিও ছিল ঊর্বর। জেরিকো এই অঞ্চলেই অবস্থিত।

এই অঞ্চলে আজ থেকে ২৩ হাজার বছর আগে, জেরিকো-র জন্মের বহু বহু বছর আগে, বন্য বার্লির পূর্বসূরি দানাশস্য, শিম ও শুঁটি-জাতীয় উদ্ভিদ, বাদাম এবং ফলমূলের প্রাচুর্য হয়, ও গ্যাজেল, হরিণ, বুনো ছাগল ও ভেড়ার মতো তৃণভোজী জন্তুও বাড়ে। মনে রাখতে হবে, তখন নতুন প্রস্তর যুগের ‘কৃষিবিপ্লব’ আসতে ১০ হাজার বছরেরও বেশি বাকি, কিন্তু এই অঞ্চলে কৃষি-পশুপালনের শুরু যে সব উদ্ভিদ আর পশু দিয়ে তাদের পূর্বসূরিদের সঙ্গে মানুষ তখনই পরিচিত হয়ে গেছে, এবং তাদের সঙ্গে মানুষের একরকম সম্পর্ক গড়ে উঠছে। শুধু তাই নয়, শস্য ‘চাষ’ও যেন শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

এই সময়কালের সেরা-সংরক্ষিত স্থানগুলির মধ্যে একটি হল ওহালো-২। এটি বর্তমান ইজরায়েলের গ্যালিলি সাগরের ধারে। এখানে ২৩ হাজার বছর প্রাচীন, অর্থাৎ পুরোনো প্রস্তর যুগের শেষদিকের এক মনুষ্য-আবাসের প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষ পাওয়া গেছে। সেখানে বিশ থেকে চল্লিশ জন লোক অস্থায়ী কুঁড়েঘরে বাস করত। এখানে তাদের সংগ্রহ করা বন্য বার্লি এবং অন্যান্য গাছের বীজ, ময়দা তৈরির পেষাই-পাথর, বন্য শস্য কাটার পাথরের কাস্তে, আর শিকারের জন্য তিরের ফলা পাওয়া গেছে। এগুলো মানুষের সর্বপ্রথম শস্য চাষ প্রচেষ্টার প্রমাণ।  

এখানে বুনো বার্লিজাতীয় শস্যের পাশাপাশি শিকার ও সংগ্রহের প্রাচুর্য ঘটে। এই প্রাচুর্য সব চাইতে বেশি ছিল আজ থেকে ১৪ হাজার বছরের কিছু বেশি আগে—সেই সময়ের এখানকার মানুষের সংস্কৃতিকে নাটুফিয়ান সংস্কৃতির প্রথম যুগ (আর্লি নাটুফিয়ান) বলে। তারা মৃতদেহের জন্য কবর তৈরি করত, পুঁতির নেকলেস ও ব্রেসলেট এবং পাথরের খোদাই করা মূর্তি বানিয়েছিল, দূরদেশ থেকে কড়ি ও ঝিনুক এনেছিল। তারা আগেকার যে কোনো মানুষের চাইতে ভালো ছিল, এবং সম্ভবত পরেকার অনেক মানুষের চাইতেও ভালোই ছিল।

সেই শস্যশ্যামল ধরণীর কৃষক-শিকারি-সংগ্রাহকদের মধ্যে যদি কোনো কবি থেকে থাকেন, তিনি হয়তো বলে উঠেছিলেন, “অগর ফিরদৌস বর রু-এ জ়মিন অস্ত হামিন অস্ত-ও, হামিন অস্ত-ও, হামিন অস্ত।” অর্থাৎ, পৃথিবীতে স্বর্গ যদি কোথাও থাকে তবে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানে।

ম্লান হয়ে এল কণ্ঠে মন্দারমালিকা

একদিন স্বর্গ থেকে পতন ঘনিয়ে আসে। আজ থেকে ১২৮০০ বছর আগে বিশ্বের জলবায়ুর হঠাৎ অবনতি ঘটে। সম্ভবত উত্তর আমেরিকার একটি বিশাল হিমবাহী হ্রদ হঠাৎ আটলান্টিকে এসে পড়ে এবং আরও কিছু ঘটনা ঘটে। তার ফলে সমুদ্রে এতদিনের জলপ্রবাহ বদলে যায়। সারা বিশ্বেই আবহাওয়া-বিপর্যয় হয়, পৃথিবীতে হিমযুগের আবহাওয়া আরও কয়েকশো’ বছর ধরে টিকে থাকে। এই আবহাওয়ার যুগকে ‘ইয়ংগার ড্রাইয়াস’ বলে অভিহিত করা হয়। 

এই আবহাওয়া পরিবর্তন কৃষির অনুকূল ছিল না। নাটুফিয়ান সংস্কৃতির উত্তরসূরি মানুষদের একটা বড়ো অংশ পুরনো শিকারি-সংগ্রাহক যাযাবর জীবনে ফিরে যায়, আর তাদের কয়েকটা দল বেশি করে চাষাবাদের চেষ্টা করে। দ্বিতীয় দলের মানুষের কোনও কোনও গোষ্ঠী বর্তমান তুরস্ক, সিরিয়া, ইজরায়েল এবং জর্ডান অঞ্চলের নানা জায়গায় প্রথম কৃষি ব্যবস্থা তৈরি করে ও ডুমুর, বার্লি, গম, ছোলা এবং মসুর ডাল জাতীয় শস্যের চাষ শুরু হয়। এটাই সম্ভবত প্রথম সুসংহত কৃষি ব্যবস্থা, এবং নব্য প্রস্তর যুগের সূচনাও বটে। এই কৃষির অগ্রদূতদের একটা দলের বংশধরেরা পরে জেরিকো-কে গড়ে তোলে।

আজ থেকে ১১৬০০ বছর আগে হিমযুগ শেষ হয়ে হলোসিন যুগের সূচনায় জলবায়ু উষ্ণ ও স্থিতিশীল হয়। হিমযুগের শেষদিকে যে সব শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী চাষ করার প্রাথমিক চেষ্টা করেছিল তারা জলবায়ুর কারণে বিশেষ সফল হয়নি। হলোসিনের শুরুতে এই গোষ্ঠীগুলো ভোজ্য নানা উদ্ভিদ চাষের চেষ্টা করে। প্রথমদিকে সেই চাষ ছিল আংশিক সময়ের ও একেবারেই অদক্ষ পদ্ধতির। কিন্তু একবার শুরু হবার ফলে চাষের ওপর নির্ভরতা ক্রমে বৃদ্ধি পায়, এবং চাষের জন্য যত বেশি সময় দেওয়া হতে থাকে, চাষের গুরুত্ব তত বাড়তে থাকে, বাড়ে দক্ষতা, আর কৃষিশহর হিসেবে জেরিকো-র বাড়বাড়ন্ত হয়।

অনেক শতাব্দী ধরে কৃষিকাজ বিকশিত হয়। প্রথমদিকে চাষ ছিল শিকার ও সংগ্রহের পাশাপাশি আর-একটা খাদ্য জোগাড়ের কাজ। যে সব জায়গায় কৃষির অনুকূল পরিবেশ বেশ স্থায়ীভাবে ছিল, সেই সব জায়গায় কৃষিতে তুলনায় কম সময় ও পরিশ্রমে খাদ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল। সেই সব জায়গার মানবগোষ্ঠীগুলো সচেতনভাবে বা অচেতনভাবে বড়ো, বেশি পুষ্টিকর, সহজে বাড়ে ও বেশি ফসল দেয়, সহজে ফসল থেকে খাদ্য তৈরি করা যায়—এমন কিছু উদ্ভিদ প্রজাতিকে বাছাই করে গৃহপালিত করে। ফলে নিজের অজান্তেই তারা এই উদ্ভিদগুলোকে বংশ-পরম্পরায় বদলাতে শুরু করে।

এর ফলে বুনো উদ্ভিদ ক্রমে গৃহপালিত ফসলে পরিণত হল, এবং জঙ্গলের নানা অংশ মানুষের নানা গোষ্ঠীর খামারে পরিণত হল। এর ফলে কৃষিজ খাদ্য পরিমাণে বাড়ল ও চাষের ফসলের ওপর নির্ভর করা গেল। মানুষের সঙ্গে থাকা বন্য পশুগুলোও একইভাবে অন্যরকম ও গৃহপালিত হয়ে উঠল। তাদের মধ্যে যারা কম আক্রমণাত্মক, দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া ও বেশি মাংসের সংস্থান করা, বেশি দুধ-দেওয়া, মানুষ তাদের বেছে নিল। গৃহপালিত প্রাণী ও উদ্ভিদগুলো মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠল, আবার মানুষের জীবনও তাদের ওপর নির্ভর করতে শুরু করল। শিকারি-সংগ্রাহকদের আংশিক সময়ের কৃষক থেকে ধীরে ধীরে পূর্ণ-সময়ের কৃষকে পরিণত করার জন্য এইরকম নানা বিষয় দায়ী।

শিকারি-সংগ্রাহকরা পরিযায়ী, কিন্তু কৃষকরা তাদের ফসল ও পশুপালনকে ধরে রাখতে স্থায়ী গ্রামে বসতি স্থাপন করতে বাধ্য হল। এরই ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠল গ্রাম, আর তার পরে এল জেরিকোর মতো কেন্দ্র, যাকে আজকের ভাষায় ছোটো শহর বলা ছাড়া উপায় নেই।

শিকার-সংগ্রাহক জীবনে সম্পদ জমার কোনো সুযোগ ছিল না, কিন্তু চাষ মানেই ফসল আর সেই ফসল জমা করে রাখা ও তার সুরক্ষার ব্যবস্থা, এবং পশুপালন মানেই পালিত পশুদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ মানুষের ইতিহাসে এই প্রথম এলাকার দখল বা ঝরনার জলের মতো একান্তভাবে প্রাকৃতিক জিনিস ছাড়াও রক্ষা করে রাখার, আগলে রাখার মতো জিনিস এল — ফসল আর পশুসম্পদ।

তাই কৃষি-পশুপালনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রথম শক্তপোক্ত বাড়ি আর পাঁচিল বানানো শুরু করল। আদিম শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠীগুলোর চাইতে অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ একসঙ্গে হাত লাগিয়ে তৈরি করল বড়ো বাসস্থান—গ্রাম এবং তারপরে শহর। জেরিকো হল সুরক্ষিত শহরের প্রাচীনতম উদাহরণ।  

কেন কৃষিকাজ ছড়িয়ে পড়ে?

শিকারি-সংগ্রাহক জীবনের ‘স্বর্গোদ্যান’ থেকে মানুষকে বিদায় দেওয়া হল, শুরু হল কৃষক হিসাবে কঠোর পরিশ্রম করার দিন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের পতনের শুরু কৃষি থেকেই। কৃষিকাজ নাকি মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ ভুল। একদিন সমস্ত মানুষ শিকারি-সংগ্রাহক ছিল, কিন্তু মাত্র কয়েক হাজার বছরের মধ্যে তেমন গোষ্ঠী খুব বেশি আর নেই। প্রায় সব মানুষেরা কেন এমন খারাপ ভুলটা করল?

উদ্ভবের পরেই কৃষি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল। এর প্রধান কারণ ছিল জনসংখ্যা বৃদ্ধি। শিকারি-সংগ্রাহক মায়েরা সাধারণত তিন বছর বয়সে তাদের বাচ্চাদের দুধ ছাড়াত, ফলে তাদের তিন-চার বছর অন্তর সন্তান হত, গড়ে মোট ছয়-সাতটি সন্তান। সন্তানদের অর্ধেক কম বয়সে মারা যেত, শেষ পর্যন্ত গড়ে তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক হত। দুর্ঘটনা এবং অসুস্থতার জন্য অনেকে অকালে মারা যেত—সত্যিই তো আর ‘স্বর্গোদ্যান’ ছিল না সেই বিপদসঙ্কুল পৃথিবী! ফলে শিকারি-সংগ্রাহকদের জনসংখ্যা খুব ধীরে বাড়ত বা একেবারেই বাড়ত না।

উলটোদিকে কৃষক জীবনে মায়েরা সন্তানদের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে দুধ ছাড়াতে পারে, ফলে তাড়াতাড়ি পরের বাচ্চা পেটে আসতে পারে। এক সঙ্গে একাধিক বাচ্চাকে খাওয়ানোর মতো খাদ্যশস্য, পশুর দুধ ও অন্যান্য সহজপাচ্য খাদ্য কৃষিজীবনে পাওয়া সম্ভব। শিশুমৃত্যুর হার শিকারি-সংগ্রাহকদের সঙ্গে সমান হলেও, কৃষকদের বাচ্চা বেশি হয় ও বাচ্চারা কৃষির কাজে লাগে, ফলে কৃষকের জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ে। কৃষিকাজ শুরু হওয়ার পর কৃষিনির্ভর মানুষদের সংখ্যাবৃদ্ধি প্রায় সব সময়েই শিকারি-সংগ্রাহকদের চেয়ে বেশি ছিল। ফলে শিকারি-সংগ্রাহকরা হেরে যান।

না, তাদের সঙ্গে কৃষকদের যুদ্ধ বিশেষ হয়নি। যেসব শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী কৃষিকাজ শুরু করেননি, তাদের জনসংখ্যা কৃষিজীবী গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় ক্রমেই কমতে থাকে। এর জন্য কৃষি থেকে পরিবেশগত পরিবর্তনও কিছুটা দায়ী ছিল। ঊর্বর জমিতে সবার আগে কৃষি শুরু হয়। সেখানে ফলমূল সংগ্রহ ও পশুশিকার বেশি করা যেত, কিন্তু কৃষিতে ব্যবহৃত এলাকায় শিকারি-সংগ্রাহক জীবন চালানো কঠি। ফলে সেগুলো আস্তে আস্তে শিকারি-সংগ্রাহকদের হাতছাড়া হয়ে যায়। আবার, শিকারি-সংগ্রাহক জনগোষ্ঠীগুলো নিজেরাও বদলাতে থাকে, অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে তারা ক্রমে কৃষির শরণ নেয়। কৃষিকাজ ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষির সুবিধা ও সমস্যা

হয়তো আমাদের সুদূর পূর্বসূরিরা শিকার-সংগ্রহের বদলে কৃষি বেছে নিয়ে তেমন বোকার মতো কাজ করেনি। একই পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে আপনি এবং আমি সম্ভবত একই কাজ করতাম। তখন পরবর্তী সমস্যাগুলো জানার উপায় ছিল না। আমাদের সুদূর পূর্বসূরিরা অনাগত ভবিষ্যতের অন্যের শ্রমে অন্যের ঘাড়ে বসে থাকা মানুষের কথা জানত না, জমিদার-রাজা-বাদশা-ফারাও-পুরোহিতের শোষণচক্র জানত না। অবশ্য এসব জানলেও আমাদের সেই পূর্বসূরিদের অন্য কোনো উপায়ও ছিল না—হয় কৃষি, নয় ধীর বিলোপ—এর মাধ্যমেই তারা কৃষিকে বেছেছিল, সচেতনে বাছেনি।

কৃষকরা বেশি খাদ্য পেয়েছিল, তাদের খাদ্যে শক্তির পরিমাণ ছিল বেশি। শক্তি মাপা হয় ক্যালোরিতে। একজন পূর্ণবয়স্ক পরিশ্রমী মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০০ থেকে ৩০০০ ক্যালোরি শক্তি দরকার। লাঙ্গল উদ্ভাবনের আগেই নব্য প্রস্তরযুগের এক কৃষক-পরিবার গড়ে প্রতিদিন ১২ হাজারেরও বেশি ক্যালোরি উৎপাদন করতে পারত। এটা ছ’জনের পরিবারের খিদে মেটার জন্যে যথেষ্ট। কিন্তু এক শিকারি-সংগ্রাহক পরিবার দিনে গড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার ক্যালোরির বেশি জোগাড় করতে পারত না। আদি কৃষিকাজ খাদ্যে বেশি ক্যালোরি জুগিয়ে পরিবারের আকার দ্বিগুণ করতে দিয়েছিল।

কিন্তু কৃষিতে খাদ্যের ক্যালোরি বেড়েছিল মাত্র, অন্য পুষ্টিগুণ কমে গিয়েছিল, আর কৃষককে তার মূল্য চোকাতে হয়েছিল পুরোমাত্রায়। নব্য প্রস্তর যুগে একজন সাধারণ কৃষকের খাদ্য বলতে ছিল মূলত গম ও সামান্য কয়েক রকমের শস্য, যেমন রাই এবং বার্লি থেকে তৈরি রুটি। কালেভদ্রে তার সঙ্গে দু-একরকম ডাল, দুধের জিনিস, মাছ-মাংস ও সবজি বা ফল জুটত।

কৃষির মূল সুবিধা ও অসুবিধা হল মাত্র কয়েকটি প্রধান খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি। শিকারি-সংগ্রাহকরা খাদ্য হিসেবে সমস্ত সম্ভাব্য জিনিস কম-বেশি খেত, তাদের খাদ্যে বৈচিত্র্য অনেক। কৃষি এই বৈচিত্র্যকে লোপ করতে শুরু করে। নানা শ্বেতসার-সমৃদ্ধ খাদ্যশস্য, যাদের সহজে চাষ করা যায়, ফসল হয় প্রচুর, ক্যালোরি থাকে বেশি, এবং যাদের মাঠ থেকে কাটার পরে অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়, কৃষি কেবল এগুলোকেই বাড়াল। অন্য সব খাদ্য কৃষকের দুনিয়ায় লোপ পেতে লাগল।

খাদ্য হিসেবে এরা অসম্পূর্ণ। শিকারি-সংগ্রাহকদের খাদ্য বন্য উদ্ভিদের তুলনায় এদের মধ্যে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ কম। এই ধরনের খাদ্যশস্যগুলোর ওপরেই কেবল নির্ভর করার ফলে কৃষকের পুষ্টির ঘাটতি হতে লাগল। তাদের সহজেই কম ভিটামিন সি খেয়ে স্কার্ভি, কম ভিটামিন বি-৩ খেয়ে পেলেগ্রা, কম ভিটামিন বি-১ খেয়ে বেরিবেরি, কম আয়োডিন খেয়ে গলগণ্ড, কম আয়রন খেয়ে রক্তাল্পতা—এই সব রোগ হত।

এছাড়া চাষিরা খরা, বন্যা ইত্যাদি দুর্যোগে চরম বিপদে পড়ে। উদ্বৃত্তের বছরগুলিতে যথেষ্ট খাদ্য সঞ্চয় করে কৃষকরা খারাপ বছর বাঁচতে পারে, কিন্তু সেটা আবার খাদ্যের ওপরে কিছু মানুষের একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করার রাস্তা সাফ করে। জোসেফ যেমন জেনেসিসে ফারাওকে পরামর্শ দিয়েছিলেন—“সাতটি ভাল বছরে মিশরের ফসলের এক-পঞ্চমাংশ নেওয়ার জন্য জমির উপর তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করার ব্যবস্থা করুন। এই ভাল বছরগুলিতে তারা সমস্ত খাদ্য সংগ্রহ করুক…” (জেনেসিস ৪১:৩৩-৩৫)। ফারাও, বা রাজা-বাদশা-সামন্ত-জমিদার ও তার চেলারা ছাড়া বাকিদের খাদ্যের ওপর অধিকার ছিল না।

কৃষির প্রচলনের কয়েক হাজার বছর পরে কৃষিনির্ভর সমাজগুলোতে উদ্বৃত্তভোগী পরজীবী মানুষের উদ্ভব হতে থাকে। তারা শ্রমজীবী কৃষকদের শ্রমের ফলের একটা বড়ো অংশ আত্মসাৎ করতে শুরু করে। কৃষকদের জীবনের যে অবিরাম পরিশ্রম, নোংরা পরিবেশ, রোগ-মহামারি ও দুর্দশার চিত্র জড়িত, সেটা সম্ভবত আদি কৃষকদের চেয়ে পরবর্তী জমিদার-সামন্ত-রাজা-মহারাজাদের আমলে বেশি ছিল। নব্য প্রস্তরযুগের কৃষকেরা প্লেগ, গুটিবসন্ত, যক্ষ্ণা বা কলেরায় মরেনি, তারা ফারাওদের পিরামিড বা মোঘলদের তাজমহল নির্মাণ করতে গিয়ে দলে দলে প্রাণ দেয়নি।

শিকারি-সংগ্রাহক জীবন থেকে কৃষিতে মানুষের অবনতি ঘটেনি, কৃষি স্বর্গ থেকে মানুষকে বিতাড়িতও করেনি। শিকারি-সংগ্রাহক জীবনের একগুচ্ছ সমস্যার সমাধান করে কৃষি আর-একগুচ্ছ সমস্যার সামনে মানুষকে ফেলে দিয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক, কারণ মানুষের কল্পনা ছাড়া সুখের স্বর্গ কোথাও নেই। তবে সম্ভবত কৃষি মানুষের জন্য খুব দরকারি ছিল, নইলে মানুষ আর পাঁচটা বনের পশুর চাইতে আলাদা হত না।

জেরিকো মানুষের সেই পাশবিক জীবন থেকে আলাদা হবার এক প্রথম ও টেকসই প্রতীক।

চিত্র পরিচিতি

চিত্র-১ প্রাচীন জেরিকো-র ঘরবাড়ি-প্রাচীর।

চিত্র-২ জেরিকো-তে পাওয়া এক প্রাচীন পূর্বপুরুষ মূর্তির মস্তক। প্রায় ৯০০০ বছরের প্রাচীন। মানুষের মুখের গঠন নিয়ে প্রাচীনতম শিল্পের অন্যতম। এটি রকফেলার প্রত্নতাত্ত্বিক যাদুঘর, জেরুজালেম-এ রক্ষিত আছে। (চিত্রঋণ – উইকিমিডিয়া কমনস)  

চিত্র-৩ আজ থেকে ৮-৯ হাজার বছর আগেকার জেরিকোতে সংরক্ষিত ও সজ্জিত মৃত মানুষের খুলি।

তথ্যসূত্র

১. https://www.britannica.com/place/Jericho-West-Bank

২. https://www.worldhistory.org/article/951/early-jericho/

৩. https://whc.unesco.org/en/tentativelists/6545/

৪. https://www.worldhistory.org/article/951/early-jericho/

৫. Dani Nadel, “Ohalo II: A 23,000-Year-Old Fisher-Hunter-Gatherer’s Camp on the Shore of Fluctuating Lake Kinneret (Sea of Galilee)” in Yehouda Enzel and Ofer Bar-Yosef edited, ‘Quaternary of the Levant: Environments, Climate Change, and Humans, Part III – Archaeology of Human Evolution’; Published online by Cambridge University Press, 04 May 2017, pp. 291-294. 

৬. Valentina Caracuta et al, “Charred wood remains in the natufian sequence of el-Wad terrace (Israel): New insights into the climatic, environmental and cultural changes at the end of the Pleistocene” in ‘Quaternary Science Reviews, Volume 131, Part A’; 2016, pp. 20-32.

৭. Hans Renssen et al, “Multiple causes of the Younger Dryas cold period” in ‘Nature Geoscience, 8’; 2015, pp. 946–949.

লেখক চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য-আন্দোলনের কর্মী, প্রাবন্ধিক।

মন্তব্য তালিকা - “হামিন অস্ত-ও হামিন অস্ত – জেরিকো, কৃষির উদ্ভব ও স্বর্গ হতে পতন”

  1. কিছু কিছু লেখা আছে পড়লেই গায়ে কাঁটা দেয়। সম্ভবত তার কারণ সেখানে ঠিক সেই কথাগুলোই গুছিয়ে অনন‍্যসাধারণ ভঙ্গিতে প্রকাশ করা হয়েছে যা হয়তো আমার মনের মধ্যে ছিল কিন্তু বহু চেষ্টাতেও এতো সুন্দর করে গুছিয়ে বলতে পারছিলাম না। এ লেখাটি তেমনই একটা গায়ে কাঁটা জাগানো লেখা। অসাধারণ লাগল।

  2. খুবই ভালো লেখা। তবে কৃষকদের সাথে শিকারি-সংগ্রাহকদের সরাসরি সংঘর্ষ না হলেও পরোক্ষ সংঘাত তো ছিলোই। স্রেফ বর্ধিত জনসংখ্যার সুযোগ নিয়ে শিকারিদের সমতল থেকে বিতাড়িত করেছিল কৃষকরা। তবে পরবর্তী কালে ধাতু আর পাথরের জন্য কৃষকদের ঐ জঙ্গলে পাহাড়ে তাডিয়ে দেওয়া শিকারি-সংগ্রাহকদের সাহায্য নিতেই হয়েছিল। কারন পলিমাটি সমৃদ্ধ সমতলে খনিজ পদার্থ বা পাথর বা শক্তপোক্ত কাঠ কিছুই পাওয়া যেত না। ফলে শিকারি সংগ্রাহকদের একাংশ হযে যায় শিকারি-সংগ্রাহক-সরবরাহক। আরো পরে, বর্তমান কালে এই শিকারি-সংগ্রাহক-সরবরাহকারীদের পাহাড়-জঙ্গল থেকেও বিতাড়ন পর্ব শুরু হয়, এবং তা এখনো চলছে। কৃষকরা শপ্রথম ভুল করেছিল কৃষি কাজ শুরু করে। দ্বিতীয় ভুল শিল্প। এখন উন্নতি নামক বাঘের পিঠে সওয়ার কৃষকরা নিরূপায়। নামলেই মৃত্যু।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।