সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

Author: জয়ন্ত দাস

জয়ন্ত দাস
লেখক পেশায় চিকিৎসক, ত্বক-বিশেষজ্ঞ। জনস্বাস্থ্য-আন্দোলনের কর্মী। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ক একটি দ্বিমাসিক পত্রিকার ও একই বিষয়ে একটি ওয়েব-পোর্টালের অন্যতম সম্পাদক। ইতিহাসের আগ্রহী পাঠক। প্রাবন্ধিক। তাঁর বিবর্তন বিষয়ক গ্রন্থ 'বিবর্তন - আদি যুদ্ধ আদি প্রেম' সদ্য প্রকাশিত হয়েছে।
ছুটতে ছুটতে দারিয়ানাসু তার থেকে দরজার দূরত্ব আরেকবার মনে মনে মেপে নেয়, আর মুখে ফুটে ওঠে মৃদু হাসি। নিশ্চিন্ত হবার হাসি, পেছনে ছোটা ঘোড়সওয়ারদের বোকা বানানোর হাসি। আরও পিছনে হৈহৈ করতে থাকা লোকগুলোকে এখন দেখা যাচ্ছে না, টিলার আড়ালে হারিয়ে গেছে। ঘোড়সওয়ারদেরও আগেই সে বোকা বানিয়ে দিতে পারত। হরিণের মতো ছুটতে পারে সে, কিন্তু পিঠের বোঝাটা ফেলে দিতে চায়নি। অবশ্য তাতে কিছু ক্ষতি হয়নি, আর দশবার শ্বাস নিতে-না-নিতেই সে পৌঁছে যাবে গোল দরজার পাশের ফাঁকটায়। ব্যাস, তারপর একটা ছোট্ট লাফ, তারপর দু’পলকে দরজার ফাঁকটুকু বুজে যাবে। হাঃ হাঃ হাঃ, ঘোড়সওয়ারগুলো বুঝতেই পারবে না কোথায় ভ্যানিস হল তাদের শিকার, ছাউনিতে গিয়ে আষাঢ়ে গল্প ফাঁদবে অন্যদের কাছে, বলবে ভুতুড়ে মানুষের কথা, যাদের দেখা যায় কিন্তু ধরতে গেলেই হাওয়া হয়ে যায়।
ফরাসী বিজ্ঞানী জাঁ ব্যাপতিস্ত ল্যামার্ক। তিনি ডারউইনের অনেক আগে বিবর্তনের একটি সুসংহত তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। তখন ১৮০৯ সাল, পাশ্চাত্যে রেনেসাঁ শেষ হয়ে প্রথম শিল্পবিপ্লবের সময়। ভারত তথা কলকাতায় পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের একেবারে গোড়ার যুগ চলছে, হিন্দু কলেজ স্থাপিত হবে এর আট বছর পরে। আর কলকাতার মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হবে তারও ১৮ বছর পরে। সেই সময়ে জীববিজ্ঞানে অনেক কিছু অজানা ছিল, বিবর্তনের প্রমাণ তেমন যোগাড় হয়নি। জীববিজ্ঞানের সেই প্রাথমিক যুগে ল্যামার্ক বলেছিলেন, জীবের দেহে বিভিন্ন রসের প্রাকৃতিক প্রবণতা থেকে জটিল ও উন্নত জীব সৃষ্টি হয়। আর পরিবেশের সঙ্গে জীবের মানিয়ে নেবার জন্য দরকার প্রয়োজনীয় অভিযোজন।
ডা. দিলীপ মহলানবিশ ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৮ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করে তিনি ব্রিটেনে যান ও সেখানে চাকরি করতে করতে শিশুরোগ চিকিৎসার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে এসে কলকাতার জন হপকিন্স সেন্টার ফর মেডিকেল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এ যোগ দেন, এবং ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ডা. মহলানবিশ আফগানিস্তান, মিশর এবং ইয়েমেনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কলেরা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীতে ১৯৭০-র দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত কাজ করেছিলেন। ১৯৮০-র দশকে তিনি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শদাতা ছিলেন।
একটি প্রশ্ন বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই শোনা যায়: আধুনিক মানুষের বিবর্তন কি আদৌ হচ্ছে? অনেকে মনে করেন, বিবর্তন হচ্ছে, এবং এর ফলে কোনও এক ভবিষ্যতের দিনে আমরা এক শুঁটকো মানুষকে পাব, যাদের মাথা বিরাট হবে আর হাত-পা হবে চিমড়ে। বিবর্তন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রাণীকে বেশি খাপ খাওয়ানোর মত করে তৈরি করে। মানুষের মস্তিষ্কের কাজ বাড়ছে আর দৈহিক কাজ কমছে, অতএব এমনটাই হওয়া যৌক্তিক বলে তাঁদের মনে হয়। সমস্যা হল, ভাল করে অঙ্ক কষতে কিংবা ইংরাজি বলতে পারলে ভাল চাকরি মেলে ঠিকই, কিন্তু বুদ্ধি জিনিসটা কেবল আকাদেমিক পাণ্ডিত্যের জন্য কাজে লাগে এমন নয়; ফুটবলারের গোল করতে বা পর্বতারোহীর শৃঙ্গ আরোহণ করতে বুদ্ধি কম কাজে লাগে না। তার ওপরে ভাল রোজগার করলে তার অনেক সন্তান হবে ও ‘বড় মাথার’ বংশগত প্রবণতা পরের প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়বে, অভিজ্ঞতা এমন দেখায় না।