সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পুনর্জাগরণে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ও সাধনা ঔষধালয়ের অবদান: একটি স্বদেশী ঔষধ শিল্প গঠনের ইতিহাস

আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পুনর্জাগরণে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ও সাধনা ঔষধালয়ের অবদান: একটি স্বদেশী ঔষধ শিল্প গঠনের ইতিহাস

বিপ্লব রায়

এপ্রিল ৬, ২০২২ ৮৭৩ 1

ভূমিকাঃ

ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধ ও বিংশ শতকের প্রথমার্ধে যে কয়েকজন ভারতীয় পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা রসায়ন শাস্ত্রে পাণ্ডিত্য অর্জন করলেও দেশীয় জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ভারতীয় ঐতিহ্যকে সমগ্র বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন, তাঁদের মধ্যে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ (১৮৭৭ সাধারণ অব্দ – ১৯৭১ সাধারণ অব্দ ৪ঠা এপ্রিল) ছিলেন অন্যতম। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ও ভেষজ ঔষধ প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতি হিসাবে, তাঁর দ্বারা ঢাকায় ‘সাধনা ঔষধালয়’ স্থাপিত হয় (১৯১৪ সাধারণ অব্দতে)। ভারতীয় জাতীয়তাবাদ দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণা মূলক গ্রন্থ প্রকাশ, পত্র-পত্রিকায় প্রচার এবং আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুত প্রণালীতে আধুনিকীকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিলেন। রসায়নবিদ যোগেশচন্দ্র ঘোষ আয়ুর্বেদ চিকিৎসা বিদ্যাকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান হিসাবে গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের সমর্থন পেয়েছিলেন। যার ফলে আয়ুর্বেদের আধুনিকীকরণ বিষয়টি জনগণ স্বচ্ছন্দে গ্রহণ করে, তেমনি বিশ্বের দরবারে ভেষজ ঔষধের গুণগতমান ও উপযোগিতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ ঔপনিবেশিক পর্বে আয়ুর্বেদের প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে তিনি সমগ্র জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল, স্বল্প মূল্যে বিশুদ্ধ আয়ুর্বেদিক ঔষধ উৎপাদন করে স্বদেশী শিল্পের বিকাশ করা। এবং এ ক্ষেত্রে তিনি ‘সাধনা ঔষধালয়’ প্রতিষ্ঠা করে সম্পূর্ণ সফল হয়েছিলেন। বর্তমান প্রবন্ধে, রসায়নবিদ যোগেশচন্দ্র ঘোষ কর্তৃক ‘আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনের ইতিহাস’ সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি আলোচ্য প্রবন্ধটিতে বঙ্গভঙ্গ ও জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অনুপ্রেরণা, সাধনা ঔষধালয়ে নির্মিত ঔষধ, দেশভাগ ও সাধনা ঔষধালয়, স্বাধীনতা লাভের পরবর্তী পর্বে সাধনা ঔষধালয়, বংশ পরম্পরায় আয়ুর্বেদ চর্চা বিষয়ে অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গভঙ্গ ও জাতীয় আন্দোলনের প্রভাব :

বাংলায় লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নিলে, বাঙালিরা গর্জে ওঠে। যার ফল স্বরূপ স্বদেশী ও বয়কট আন্দোলন শুরু হয়। বিদেশী দ্রব্য বর্জনের পাশাপাশি দেশীয় জিনিসের ব্যবহার শুরু হয়। এই সময় বাঙালি উদ্যোগপতিরা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বদেশী শিল্প গড়তে এগিয়ে আসেন। আর এই পর্বে শুরু হয় বাঙালি শিল্প সংস্থাপনের প্রক্রিয়া। যোগেশচন্দ্র ঘোষও স্কুল ও কলেজ এ পড়াকালীন জাতীয়তাবাদ ও স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছিলেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাঁর পরবর্তী জীবন ও কাজকর্মে। তিনি ১৮৮৭ সাধারণ অব্দতে পূর্ববঙ্গে ফরিদপুর (মতান্তরে শরীয়তপুর) জেলার গোসাইরহাট উপজেলার জলছত্র গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল, পূর্ণচন্দ্র ঘোষ। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রামের স্কুলে শুরু হয়। পরবর্তী কালে তিনি ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জুবিলী স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৯০২ সাধারণ অব্দতে ১৫ বছর বয়সে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করে, জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯০৪ সাধারণ অব্দতে জগন্নাথ কলেজ থেকে এফ.এ. পাশ করে, কোচবিহার কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯০৬ সাধারণ অব্দতে বি.এ. পাশ করে, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। এখানে প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাঁকে দেশজ সম্পদ ব্যবহার করে নিজের জ্ঞান বাড়াতে উৎসাহ দিয়েছিলেন। এর ফলে বিদেশী ওষুধের পরিবর্তে তিনি দেশীয় গাছ-গাছড়ার মাধ্যমে চিকিৎসা করার বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ রসায়নবিদ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ১৯১৪ সাধারণ অব্দতে ঢাকার ৭১ নম্বর, দীননাথ সেন রোডে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাধনা ঔষধালয়’। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক অমিত ভট্টাচার্য তার ‘ঔপনিবেশিক বাংলার স্বদেশী অর্থনৈতিক চিন্তা’ প্রবন্ধে বলেন, যোগেশচন্দ্র ঘোষ ঔষধ তৈরির কাজে হাত দেবার আগে কুড়ি বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ঔষধ সংক্রান্ত বিষয়ে নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তিনি একটি জাতীয় আয়ুর্বেদিক শিল্প গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা অনুভব করেছিলেন। যার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ভারতে বিদেশী ঔষধ বিক্রির প্রবণতা যেমন কমে যাবে, তেমনি বিপুল অর্থ বিদেশে চলে যাওয়া বন্ধ হবে। তাঁর স্বদেশী চিন্তাভাবনার মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মনোভাবও বিদ্যমান ছিল। অপরদিকে অধ্যাপক ব্রহ্মানন্দ গুপ্ত বলেন, “The success of Sakti Pharmacy inspired a Chemistry teacher at Bhagalpur College in Bihar, Jogesh Chandra Ghosh, to start another pharmaceutical industry, Sadhana Ayusadhalaya. এ প্রসঙ্গে যোগেশচন্দ্র ঘোষ তাঁর ‘আয়ুর্বেদীয়গৃহ চিকিৎসা’ গ্রন্থে বলেন,“আয়ুর্বেদের এই পুনর্ভ্যুদয়ের যুগ কোন কোন ঔষধালয়ে যথাশাস্ত্র ঔষধ প্রস্তুত করা হইতেছে…….। কিন্তু আমি চিকিৎসক ও রাসায়নিকের দৃষ্টিতে সাধনা ঔষধালয়ের ঔষধ প্রস্তুত কার্য্য স্বয়ং তত্ত্বাবধান করি, ইহা ‘বহুজনহিতায়’ উল্লেখ করা প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করি। ভারতবর্ষের সর্বত্র ব্রাঞ্চ ঔষধালয় স্থাপন ব্যতীত ভারতবর্ষের বাহিরেও ‘সাধনা ঔষধালয়ের’ এজেন্সি স্থাপন করিতে সমর্থ হইয়াছি, ইহাও এস্থলে উল্লেখ করা প্রয়োজন বলিয়া মনে করি। কেননা, ভারতবর্ষের বাহিরে ‘সাধনা ঔষধালয়ই’ সর্ব প্রথম আয়ুর্বেদের প্রচার করিতে সমর্থ হইয়াছে বলিয়া আমি দেশবাসীর নিকট সহানুভূতি এবং উৎসাহ প্রার্থনা করি। দক্ষিণ আফ্রিকা, ইটালি, ফ্রান্স, জার্মানি প্রভৃতি দেশে সাধনা ঔষধালয়ের ব্রাঞ্চ স্থাপন করিতে হইলেদেশের নিকট আমার যতখানি সহানুভূতি ও উৎসাহের প্রয়োজন, ততখানি লাভ করিতে পারিলে ঐ সব দেশেও সাধনা ঔষধালয়ের ব্রাঞ্চ স্থাপন করিব”

ঢাকায় ৭১ নম্বর, দীননাথ সেন রোডে (সূত্রাপুর) প্রতিষ্ঠিত প্রথম সাধনা ঔষধালয়ের কারখনা (চিত্র দুটি আন্তর্জাল থেকে সংগৃহীত)

ঢাকায় যোগেশচন্দ্র ঘোষ প্রতিষ্ঠিত ওষুধ কারখানা নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, চিকিৎসক নীলরতন সরকারের মতো অনেকে দেখতে গিয়েছিলেন। ‘সাধনা’র জ্বরের ওষুধের অন্যতম ক্রেতা ছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ওষুধ খেয়ে ফল পেয়ে, যোগেশচন্দ্র ঘোষের ছেলে ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষকে ধন্যবাদ দিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। যোগেশচন্দ্র ঘোষের প্রশংসা করে একসময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু লিখেছিলেন,“আমি ঢাকার সাধনা ঔষধালয় পরিদর্শন করিয়াছি এবং তাহাদের ঔষধ সুসংরক্ষণ, প্রস্তুত প্রণালী ও সৌষ্ঠবযুক্ত কার্য্য সম্পাদন ব্যবস্থা দেখিয়া মুগ্ধ হইয়াছি। সাধনার প্রস্তুত ঔষধাবলীর শাস্ত্রীয়তা ও অকৃত্রিমতা সম্বন্ধে আমি সম্পূর্ণ রূপে নিঃসন্দেহ হইয়াছি। অধ্যক্ষ মহাশয়ের জনহিতৈষণার মনোভাবও বিশেষ প্রশংসার যোগ্য। এই প্রতিষ্ঠানের কর্মপ্রচেষ্ঠাকে সমর্থন করিলে আয়ুর্বেদকেই সমর্থন করা হইবে। সত্যাসত্যই আয়ুর্বেদানুসারী বলিয়া সাধনার প্রস্তুত ঔষধাবলীর ব্যবহারের দ্বারা যে কেবল রোগ আরোগ্যের পক্ষে বাঞ্ছিত লাভই হইবে তাহা নয়, পরন্তু ঔষধগুলির এই প্রকার ফল প্রসূশক্তি আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসকগণের জনপ্রিয়তাকেও বহুল পরিমাণে বর্দ্ধিত করিবে। ঢাকার এই সর্বপ্রধান ঔষধালয়ের কর্তৃপক্ষ যেরূপ নিষ্ঠা ও সফলতার সহিত আয়ুর্বেদের সেবা করিতেছেন, তাহাতে আমি তাহাদিগকে অভিনন্দিত না করিয়া পারিলাম না”

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অনুপ্রেরণা :

যোগেশচন্দ্র ঘোষের কলেজ জীবন থেকে রসায়ন শাস্ত্রে পারদর্শী হয়ে ওঠার প্রবল নেশা ছিল। রসায়নচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের থেকে মনের মতো শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। সে সময় তাঁকে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় আয়ুর্বেদ শাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করার বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন। পাশাপাশি দুর্গত মানুষদের সেবা করার ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ শাস্ত্র যথেষ্ঠ সহায়ক হতে পারে। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের থেকে যে উপদেশ তিনি পেয়েছিলেন, তা সর্বদা স্মরণে রেখেছিলেন। তাই ভাগলপুর কলেজে থাকাকালীন তিনি চার বছর আয়ুর্বেদ শাস্ত্র নিয়ে পড়াশুনা করেছিলেন। এর ফলে তাঁর কাছে নতুন দৃষ্টি- নতুন পথ খুলে গিয়েছিল। তিনি ১৯০৮ সাধারণ অব্দতে এম এ পাশ করে উচ্চ শিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে গিয়ে এফ সি এস এবং আমেরিকা থেকে এম সি এস ডিগ্রি লাভ করেন। সচ্ছল জীবন ছেড়ে দেশে ফিরে ভাগলপুর কলেজে যুক্ত হন। চার বছর রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যাপনা করার পর, চলে আসেন ঢাকার জগন্নাথ কলেজে। জগন্নাথ কলেজে ১৯১২ সাধারণ অব্দতে থেকে ১৯৪৮ সাধারণ অব্দতে পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। অবসরের আগে দুই বছর ঐ কলেজে অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। তিনি রয়্যাল সোসাইটির অব কেমিস্ট্রির ফেলো এবং আমেরিকা কেমিক্যাল সোসাইটির আজীবন সদস্য হয়েছিলেন। জগ্ননাথ কলেজ থেকে অবসর গ্রহণের পর আয়ুর্বেদ ওষুধের উৎকর্ষ সাধন ও জনপ্রিয় করে তুলতে যোগেশচন্দ্র গবেষণাগারে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন। মানুষকে স্বল্প মূল্যে রোগ থেকে মুক্তি দিতে তিনি দেশীয় ভেষজ গাছ-গাছড়া থেকে ওষুধ তৈরির দিকে মনোযোগ দিয়ে ছিলেন। শুধু রোগী দেখার সময় ছাড়া খুব একটা জনসমক্ষে আসতেন না। সেই সময় বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির কারণ ও লক্ষণ, আয়ুর্বেদ চিকিৎসার অন্তনিহিত তত্ত্ব, আয়ুর্বেদিক ওষুধের ব্যবহার পদ্ধতি এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে নানান মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলি হল – ‘অগ্নিমান্দ্য ও কোষ্ঠবদ্ধতা’, ‘আরগ্যের পথ’, ‘আয়ুর্বেদীয় গৃহ চিকিৎসা’, ‘আমরা কোন পথে?’, ‘চর্ম ও সাধারণ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান’, ‘চক্ষু কর্ণ নাসিকা ও মুখরোগের চিকিৎসা’, ‘আয়ুর্বেদ ইতিহাস’, ‘Simple Geography’, ‘Simple Arithmetic’, ‘Text Book of Inorganic Chemistry’.

যোগেশচন্দ্র ঘোষ তাঁর ‘আয়ুর্বেদীয়গৃহ চিকিৎসা’ গ্রন্থে বলেন, সাধনা ঔষধালয় আমার জীবনের প্রিয়তম প্রতিষ্ঠান অবশ্য সকলের ব্যবসায়ই সকলের প্রিয়তম হয় কিন্তু ব্যক্তিগত কল্যাণের ঊর্ধ্বে উঠিয়া দেশের বৃহত্তম কল্যাণ কামনায় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করিলে সেই প্রতিষ্ঠান দেশেরও প্রিয়তম হয়। আয়ুর্বেদকার আত্মতে জগৎ স্থাপন করিয়া দেহের সহিত জগতের সাদৃশ্য দেখাইয়াছেন। সুতরাং আত্মা যদি প্রিয় হয়, তবে দেশ প্রিয় হওয়া উচিত, জগৎ প্রিয় হওয়া উচিত। ভারতবর্ষের বাহিরে বিদেশে ‘সাধনা ঔষধালয়ে’র ব্রাঞ্চ স্থাপন করিবার জন্য যখন চেষ্টা করি, তখন আমি ইহা ভাবি যে, আমি আয়ুর্বেদের সেবক, ভারতবর্ষের গণশক্তির অংশ। দেশে নব জাগরণের যে সাড়া পড়িয়াছে, তাহা আমাকে ‘সাধনা ঔষধালয়ের’ বিস্তৃতি কার্যে প্রচুর পরিমাণ প্রেরণা দিয়া থাকে”১০ সাপ্তাহিক ‘শিশির’ পত্রিকার সম্পাদক শিশির কুমার মিত্র ‘আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র ঢাকায় সাধনা ঔষধালয়ে’ নিবন্ধে লিখেছিলেন, “স্যার প্রফুল্লচন্দ্র রায় কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় আসিয়াছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক ডাঃ ঘোষকে সঙ্গে লইয়া ঢাকার প্রসিদ্ধ সাধনা ঔষধালয় পরিদর্শন করিয়া গিয়াছেন। এই বিখ্যাত আয়ুর্বেদীয় ঔষধালয় তাহারই প্রাক্তন ছাত্র অধ্যাপক যোগেশচন্দ্র ঘোষ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রী এম.এ., এফ.সি.এস. (লন্ডন) কর্তৃক স্থাপিত হইয়া ভারতে ও ভারতের বাইরে আয়ুর্বেদের বিপুল প্রচার করিতেছেন। আচার্য্য রায় এই ঔষধালয়ের কারখানা চারিদিকে ঘুরিয়া যে সকল ঔষধ তৈয়ার হইতেছিল, সেগুলি সম্বন্ধে অধ্যক্ষকে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেন এবং আয়ুর্বেদের প্রণালী যথাযথ ভাবে অনুসরণ করিয়া ঔষধগুলি প্রস্তুত হইতেছে দেখিয়া, তিনি অতিশয় আনন্দ প্রকাশ করেন। আফিসের কাগজ পত্রে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ হইতে অসংখ্য অর্ডারের চিঠি দেখিয়া, বিশেষ ভাবে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন স্থান হইতে এই কারখানার ঔষধের জন্য অর্ডার আসিতেছে দেখিয়া, তিনি অধ্যক্ষকে অভিনন্দিত করেন”১১

একই সঙ্গে যোগেশচন্দ্র ঘোষ সম্পর্কে ‘The All-India Ayurvedic Directory: 1939-40’ গ্রন্থে লেখা হয় যে, “He started preparing Ayurvedic Medicines with pure ingredients, strictly following the Sastric Formulae and method of preparation and supplying them to the public at the cheapest price. Within a very short time this Sadhana Ausadhalaya became one of the biggest Ayurvedic concern in the world”.১২ অপরদিকে ‘Arya Vaidya Sala Golden Jubilee Souvenir’ গ্রন্থে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ সম্পর্কে লেখা হয় যে, “He decided to dedicate his services to Ayuveda and started his Sadhana Aushadhalaya with a view to developing the industrial side also of Ayurveda. He worked hard, and in a few years his Ausahadhalaya flourished and earned a high reputation. He is charitable by nature and helps all good causes. The services rendered by him to Ayurveda are great. He regularly contributes papers on Ayurveda and other subjects to periodcals”.১৩

সাধনা ঔষধালয়ে নির্মিত ভেষজ ঔষধ :

আয়ুর্বেদশাস্ত্রী যোগেশচন্দ্র ঘোষ জনকল্যাণ ও সৃষ্টিমূলক কাজ করার জন্য সবসময় উদ্যমী মানুষ ছিলেন। তাই ১৯১৪ সাধারণ অব্দতে পূর্ববঙ্গের ঢাকায় একটি ছোটখাট আয়ুর্বেদীয় গবেষণাগার হিসাবে ‘সাধনা ঔষধালয়’ প্রতিষ্ঠা করে কাজ শুরু করেছিলেন। তাঁর সক্রিয় তত্ত্বাবধানে এই সংস্থা নানা রকমের মূল্যবান ওষুধ তৈরি করতে শুরু করে। অসংখ্য মানুষ এখানকার ওষুধ সেবন করে চমৎকার ফল পেতে শুরু করলে, ওষুধের বিপুল চাহিদা ঐ ক্ষুদ্র কাঠামোতে মেটানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। ফলে অবিলম্বে দেখতে দেখতে একটি পূর্ণাঙ্গ কারখানা গঠন করা হয়। ১৯১৭ সাধারণ অব্দতে থেকে বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রপাতির সহায়তায় বাণিজ্যিকভাবে ঔষধ উৎপাদন শুরু হয়। সাধনা ঔষধালয়ের প্রত্যেকটি শাখায় অভিজ্ঞ কবিরাজ বা বৈদ্যের সহায়তায় বিনাপারিশ্রমিকে তিনি রোগের উপযুক্ত ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।১৪ রসায়নের শিক্ষক তথা গবেষক যোগেশচন্দ্র ঘোষের প্রচেষ্টায় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা বিদ্যা এবং ভেষজঔষধ প্রস্তুত প্রণালীতে আধুনিকীকরণের পাশাপাশি বাজারমুখি করে তোলা সম্ভব হয়।১৫ বিখ্যাত টুথপাউডার ‘সাধনাদশন’ থেকে শুরু করে ‘শ্রীগোপালতেল’ তাঁর নিজস্ব সৃষ্টি।১৬ যোগেশচন্দ্র ঘোষ তাঁর ‘আয়ুর্বেদীয় গৃহ চিকিৎসা’ গ্রন্থে বলেন, আয়ুর্বেদিক তেল, ঘৃ ও বটিকার মত মহৌষধ অতুলনীয়। আয়ুর্বেদের চবনপ্রাশ, মকরধ্বজ প্রভৃতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক একটি উজ্জ্বল রত্ন। এগুলি বিদেশে প্রচার করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। বিদেশী ওষুধ ভারতে বিক্রি হওয়ার ফলে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা লুট হয়ে যায়। এদেশের ডাক্তারদের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি মকরধ্বজ, চবনপ্রাশ, অশোক ঘৃত প্রভৃতি আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিদেশে গুরুত্বের সাথে প্রচার করে জন্মভূমিকে সমৃদ্ধশালী করে তুলতে পারেন।১৭ নিম্নে সাধনা ঔষধালয়ের কারখানায় নির্মিত ঔষধের তালিকা দেওয়া হল –

ঔষধের নামমূল্য উপকারিতা
মৃত সঞ্জীবনী (রেজিস্টার্ড)ছোট বোতল- ১৪০ আনা,        বড় বোতল- ৪৫০ আনা। জ্বর, রক্তল্পতা, অজীর্ন, অগ্নিমান্দ্য, সূতিকা এবং বাতের জন্য উপকারী।
    সারিবাদি সালসা (রেজিস্টার্ড) প্রতি শিশি – ৪০ আনা,       একত্রে ৩ শিশি – ২ টাকা।রক্ত পরিষ্কার ও রোগজীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে।
     শুক্র সঞ্জীবন( রেজিস্টার্ড)  ১ সের- ১৬ টাকা।ধাতু দৌর্বল্য, রক্তহীনতা, স্বপ্ন দোষ, প্রমেহ ও ধ্বজভঙ্গ প্রভৃতিতে কার্যকারী।
  অবলা বান্ধব যোগ ( রেজিস্টার্ড) ১৬ মাত্রা – ২ টাকা, ৫০ মাত্রা – ৫ টাকা। জরায়ু দোষ, প্রদর, বাধক এবং দুরারোগ্য স্ত্রী রোগের ক্ষেত্রে মহৌষধ।
      অর্শবটী( রেজিস্টার্ড) ৩০টি বটিকা সহ শিশি- ৪ টাকা।অর্শ রোগ নিরাময়ের মহৌষধ।
সর্বজ্বর বটী ( রেজিস্টার্ড) ১৬ বটী একত্রে- ১ আনা, ৫০ বটী- ২৪০ আনা, ১০০ বটী- ৫ টাকা।যে কোন জ্বর রোগের জন্য অব্যর্থ পরীক্ষিত ঔষধ।
 মকরধ্বজ (বিশুদ্ধ ও স্বর্ণ ঘটিত)(রেজিস্টার্ড) প্রতিতোলা – ৪ টাকা।সর্ব রোগ নাশক মহৌষধ।
   বিশুদ্ধ চ্যবনপ্রাশ (রেজিস্টার্ড)  প্রতি সের- ৩ টাকা।কফ, কাশি- সর্দি, যক্ষ্মা ও হৃদরোগের মহৌষধ।১৮

সাধনা ঔষধালয়ের ঠিকানায় চিঠি পাঠান হলে, বিনামূল্যে ক্যাটালগ পাঠান হত এবং রোগের বিবরণ সম্পর্কে জানালে যত্ন সরকারে তার ব্যবস্থা দেওয়া হত। এ প্রসঙ্গে ‘The All India Ayurvedic Directory: 1939-40’ গ্রন্থে বলা হয় যে, “There is a Research Department and Laboratory which are under the direct charge of the Adhyakha himself who is a reputed Indian chemist well versed in Eastern and Western Sciences. Experiments on Ayurvedic medicines are daily conducted under the guidance of the Adhyakha and thereby trying to bring the Ayurvedic Chemistry back to its original standard”.১৯

পত্র-পত্রিকায়প্রকাশিতসাধনাঔষধালয়েরবিজ্ঞাপন

দেশভাগ ও সাধনাঔষধালয়ঃ

অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষ ছিলেন, প্রকৃত দেশপ্রেমিক। ১৯৪৭ সাধারণ অব্দতে দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্থান থেকে বহু হিন্দু পরিবার ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ ফেলে ভারতবর্ষে চলে আসেন। অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষ দেশের মায়ায় বাধা পড়ে থেকে যান।২০ অপরদিকে ঢাকা (পূর্বপাকিস্থান) থেকে ভারতের সাধনা ঔষধালয়ের শাখাগুলিতে ওষুধপত্র পাঠান বন্ধ হয়ে যায়। এই মহাসঙ্কট থেকে বের হবার জন্য ১৯৪৭ সাধারণ অব্দতে কলকাতায় কাজ শুরু হয় এবং ১৯৫০ সাধারণ অব্দতে (মতান্তরে ১৯৪৮ সাধারণ অব্দতে) পশ্চিমবঙ্গের দমদমে তাঁর নিজের বাড়ীতে সাধনা ঔষধালয়ের দ্বিতীয় কারখানা স্থাপিত হয়। সেই সময় পূর্ব পাকিস্থানে প্রতিষ্ঠানটির ৯৯ টি শাখা সংস্থা ছিল।২১ ১৯৪৭ সাধারণ অব্দতে এপ্রিল মাসে ভারত সরকার পাকিস্থান থেকে আমদানি করা কিছু জিনিসের উপর শুল্ক চালু করেছিল। আয়ুর্বেদিক ঔষধের উপর শতকরা ৩৬ ভাগ, কোনটিতে দ্বিগুণ আকারে আমদানি শুল্ক ধার্য করা হয়েছিল। অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ আয়ুর্বেদিক ওষুধের উপর এমন শুল্ক ধার্য করার কুফল সম্পর্কে ভারতের জাতীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছিলেন। কারণ, সমগ্র ভারতে সাধনা ঔষধালয়ের ১২০টি শাখা ও ২০০০টি এজেন্সি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রতিষ্ঠানের ঔষধের উপর লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ নির্ভরশীল ছিল। সীমান্তের উভয় পাশে শুল্ক বিভাগের নানারকম তথ্য-তল্লাশি ও বিভিন্ন শুল্কের চাপে, এই স্বদেশী শিল্প প্রায় বন্ধ হতে চলেছিল। ফলে সস্তায় ‘আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা’ ও ভেষজ ঔষধ পাওয়ার সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যের দিক থেকেও অনিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ছিল। অন্যদিকে খাঁটি আয়ুর্বেদিক ওষুধের সরবরাহ বন্ধ হলে, তাঁর মূল্য অনেক বৃদ্ধি পাবে। এবং দেশের জনসাধারণ বিদেশী ওষুধের ব্যবহারের দিকে ঝুকে পড়লে, ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসার উন্নতিতে বাধা পড়বে।

আয়ুর্বেদিক ঔষধের উপর শুল্ক ধার্যের ফলে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দিয়ে ছিল, তার প্রতি লক্ষ রেখে পুনরায় যোগেশচন্দ্র ঘোষ ভারতের জাতীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। সেই সঙ্গে ভারত বিখ্যাত ‘নিখিল ভারত আয়ুর্বেদ মহাসম্মেলন’ এর নেতৃবৃন্দ মনীন্দ্র কুমার মুখোপাধ্যায় ও জি.ডি.সরস্বতীর সমর্থন লাভ করেছিলেন। ঢাকা হাইকোটের অন্যতম ব্যারিস্টার ডাঃ এস.কে. চক্রবর্তী তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার যোগেশচন্দ্রের যুক্তি ও বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে পূর্ব পাকিস্থান থেকে আয়ুর্বেদিক ঔষধ আমদানির উপর থেকে শুল্ক তুলে নেয়।২২

স্বাধীন উত্তর পর্বে সাধনা ঔষধালয়ঃ

অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষের দক্ষ পরিচালনায় ঢাকার পর কলকাতার দমদমে (৩৬, সাধনা ঔষধালয় রোড, সাধনা নগর (দক্ষিণদাড়ি), কলকাতা- ৪৮) সংস্থার দ্বিতীয় কারখানা সম্প্রসারিত হয়। কলকাতার কারখানাটি পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর সুযোগ্য সন্তান ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষ এর উপর ছিল। ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষ কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম বি বি এস উপাধি অর্জন করেছিলেন। পাশাপাশি আয়ুর্বেদ শাস্ত্র চর্চার জন্য আয়ুর্বেদাচার্য্য উপাধি লাভ করেন। ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে সাধনা ঔষধালয়কে দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষের অবদান ছিল অসামান্য। পিতা-পুত্রের মিলিত প্রচেষ্টা ও সক্রিয় সহযোগিতায় ‘সাধনা ঔষধালয়’ এর (১৩৬৮ সাধারণ অব্দতে) দুটি কারখনাতে ৮০০ টির মত বিভিন্ন রকমের ঔষধ তৈরি হয়েছিল।২৩ অর্থাৎ আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবনে সাধনা ঔষধালয়ের গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

কলকাতায় ৩৬, সাধনা ঔষধালয় রোড, সাধনানগরে (দক্ষিণদাড়ি) প্রতিষ্ঠিত হয়,সাধনা ঔষধালয়ের দ্বিতীয় কারখানা এবং ৫৬, এস. কে. দেব রোড, পাতিপুকুরে নির্মিত হয়েছিল, সাধনা ঔষধালয়ের গবেষণাগার বিভাগ

১৯৪৮ সাধারণ অব্দতে (মতান্তরে ১৯৫০ সাধারণ অব্দতে) পশ্চিমবঙ্গে সাধনা ঔষধালয়ের প্রথম কারখানা দমদমের দক্ষিণ দাড়িতে তৈরি হয়। ১৯৫২ সাধারণ অব্দতে কারখানাটির রেজিস্ট্রি করা হয়। সাধনা ঔষধালয়ের নাম অনুসারে একটি রাস্তার নাম ‘সাধনা ঔষধালয় রোড’ রাখা হয়। কলকাতা ও তার পার্শবর্তী অঞ্চলে সাধনা ঔষধালয়ের আরও পাঁচটি কারখানা ছিল। পঞ্চাশের দশকে দক্ষিণ দাড়িতে এবং ষাটের দশকে লেক টাউন, তারপর টালিগঞ্জ, কাশীপুর ও বেলুড়ে কারখনা গড়ে ওঠে।২৪

১৯৭১ সাধারণ অব্দতে পূর্ব পাকিস্থানে (বর্তমান বাংলাদেশ) মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঢাকার সাধনা ঔষধালয়ের কর্মচারীরা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। কিন্তু অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ এখানে থেকে যান কারণ, প্রথমতঃ সমগ্র এলাকা জুড়ে ছিল সাধনা ঔষধালয়ের কারখানা। দ্বিতীয়ত: তিনি জীবনের অধিকাংশ সময় এখানে গবেষণা করে কাঠিয়ে ছিলেন এবং নিঃসঙ্গ সময়ে তাঁর একমাত্র সঙ্গী ছিলেন, কারখানার কর্মচারীরা। সমগ্র প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ও তাঁর দুজন দারোয়ান, সুরুজ মিয়া ও রামপাল ছিলেন।২৫ ১৯৭১ সাধারণ অব্দতে ৪ঠা এপ্রিল পাকিস্থানের সেনাবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়দান ও নাশকতাকর্মে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনে যোগেশচন্দ্র ঘোষকে গুলি করে হত্যা করে। পাশাপাশি সাধনা ঔষধালয়ের সমগ্র কারখানা ও অফিসের মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়।২৬ ১৯৭১ সাধারণ অব্দতে ১৬ই ডিসেম্বর মাসে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিষ্ঠা হলে, তাঁর পুত্র ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষসাধনা ঔষধালয়কে পুনরায় দাঁড় করান।২৭ ১৯৯১ সাধারণ অব্দতে ১৪ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য আত্মবলিদানের জন্য ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ উপলক্ষে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল।২৮

বংশ পরম্পরায় আয়ুর্বেদ চর্চা :

অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ বিবাহ করেন, কিরণবালা দেবীকে। তাঁদের একজন পুত্র সন্তান ও দুজন কন্যা ছিল। পুত্র নরেশচন্দ্র ঘোষ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য উভয় চিকিৎসা বিজ্ঞানে পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। তিনি প্রাদেশিক আয়ুর্বেদ সভা-সমিতিতে পৌরহিত্য করেছিলেন। ভারত বিভাজনের পর ভারতে অবস্থিত সাধনা ঔষধালয়ের শাখা-প্রশাখার দায়িত্ব নিয়ে ছিলেন। ১৯৫০-৬০ সাধারণ অব্দর মধ্যে ভারতের প্রায় প্রতিটি শহরে সাধনা ঔষধালয়ের শাখা খোলা হয়েছিল। বিহার ও আসামে এই সংস্থার ওষুধের যথেষ্ট চাহিদা ছিল। পাশাপাশি বিদেশেও ওষুধ রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছিল।২৯ ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের উন্নতির জন্য কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। যথাঃ আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাস, চিকিৎসা বিদ্যার ইতিহাস, আয়ুর্বেদ দর্শন, আয়ুর্বেদ সর্বস্ব প্রভৃতি।৩০ ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষ তাঁর ‘আয়ুর্বেদ দর্শন’ গ্রন্থে লিখেছিলেন, “আমার জীবনের পরম সৌভাগ্য পিতৃদেবের নিকটে চিকিৎসা বিদ্যা অধ্যায়নের সুযোগ পাইয়াছি আয়ুর্বেদ তাহার প্রতি একনিষ্টতা ও অনুরাগ আমার জীবনকে যেমন অনুপ্রাণিত করিয়াছে, তেমনি তাঁহার নিকট ভেষজ প্রস্তুতি হইতে আরম্ভ করিয়া আয়ুর্বেদের বিভিন্ন বিষয় অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের সঙ্গে কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগের দ্বারা আয়ুর্বেদের বৈশিষ্ট্য প্রত্যক্ষ করিতে পারিতেছি। আমার কর্মক্ষেত্র ‘সাধনা ঔষধালয়’।  এই প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র ভেষজ প্রস্ততুতকারক রূপে নহে সহস্র সহস্র রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিতে যাইয়া পত্রে ও সাক্ষাতে বহু জটিল রোগের পরিচয় পাইয়াছি চিকিৎসার এই সুযোগ আমার গবেষণাকার্যকে বহুলভাবে প্রসারিত করিয়াছে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার প্রতি বিশাল জনসাধারণের সুগভীর আস্থায়। আয়ুর্বেদের নবযুগ যে আসিয়াছে তাহা আমার দৃঢ় ধারনা হইয়াছে”৩১

ডাঃ নরেশ চন্দ্র ঘোষের দুই ছেলে ও এক মেয়ে ছিলেন। সকলে অবিবাহিত। বর্তমানে সাধনা ঔষধালয়ের উত্তরাধিকার সূত্রে রয়েছেন, শিলা ঘোষ। তিনি ব্যবসায়ী মনোভাব সম্পন্ন নন, ঈশ্বর চিন্তায় মগ্ন থাকেন। বর্তমান সমগ্র ভারতে ১৩০টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩০টির মত সাধনা ঔষধালয়ের দোকান রয়েছে। তবে সাধনার বেশীর ভাগ দোকান বছরের অধিকাংশ দিন বন্ধ থাকে এবং অনেক ঔষধ আর পাওয়া যায় না। সংস্থার ম্যানেজার কার্তিকচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০০৮ সাধারণ অব্দর ১৯ নভেম্বর থেকে ২০১২ সাধারণ অব্দ পর্যন্ত ওষুধ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। কারণ, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কারখানা ও ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের পাশাপাশি জি.এম.পি. বা ‘গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস’ এর শংসাপত্র দরকার ছিল। এই পর্বে উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ থাকলেও সংস্থার কর্মীদের তিন বছর বসিয়ে বেতন দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৫ সাধারণ অব্দতে সাধনা ঔষধালয়ের ব্যবসা কমে বাৎসরিক ৪ কোটির মতো লাভ হয়। বর্তমানে তা আরও কমে বার্ষিক ২ কোটি হয়েছে। এবং কারখানার শ্রমিক সংখ্যা কমতে কমতে দাঁড়িয়েছে ৩৮ জন। সংস্থার কিছু ওষুধ, চূর্ণ ও তেল জি.এম.পি পেলেও অন্যান্য ওষুধের জন্য যন্ত্রপাতি বদলানর চেষ্টা চলছে। ওষুধ তৈরির জন্য বিশুদ্ধ উপকরণ সংগ্রহ করতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।৩২ অর্থাৎ একবিংশ শতকের প্রথমার্ধে ‘সাধনা ঔষধালয়’কে বাঁচিয়ে রাখতে সংস্থা সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাছে।

উপসংহার :

উপরে আলোচিত বিষয়বস্তুর পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ দ্বারা বিংশ শতকে আয়ুর্বেদিক ঔষধ শিল্পের বিকাশ এবং আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষের অবদান স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের সমন্বয়ে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থায়, ঔষধ প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় আধুনিকীকরণ ঘটিয়ে তার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে তিনি সক্ষম হয়েছিলেন। ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের তাঁর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ সমগ্র জীবন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। এমনকি নিজের জীবন দিয়ে, সেই সত্যতা প্রমাণ করেছিলেন। পাশিপাশি তাঁর সুযোগ্য সন্তান ডাঃ নরেশচন্দ্র ঘোষ ‘সাধনা ঔষধালয়’কে ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠানটিকে স্বমহিমায় উজ্জ্বল রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।বাঙালি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘স্বদেশী ঔষধ শিল্প’ (‘সাধনা ঔষধালয়’) গঠনের ইতিহাস, আজও ১০৭ বছর পরে স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।

তথ্যসূত্র :

১) মৃণাল কান্তি দাস, “শরীর ও স্বাস্থ্য,” বিশ্বজিৎ দাস (সম্পাঃ) বর্তমান (মাসিক হেলথ ম্যাগাজিন),ধন্বন্তরি, পৃ-৭৭, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, ১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সাধারণ অব্দ; আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ম মার্চ, ২০২০ সাধারণ অব্দ,

https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/ayurvedic-medicine-company-sadhanaaushadhalaya-dhaka-has-become-extinct-now-1.1116280,১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ দেখা হয়েছে।

২) অমিত ভট্টাচার্য, “ঔপনিবেশিক বাংলার স্বদেশী অর্থনৈতিক চিন্তা,” দেবব্রত চট্টোপাধ্যায় (সম্পাঃ), বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধের শতবর্ষ, পুস্তক বিপনি, প্রথম প্রকাশ, পৃ-২৮৬, ২০০৬ সাধারণ অব্দতে।

৩) Brahmananda Gupta, “Indigenous Medicine in Nineteenth and Twentieth CentureBengal,” in Charles leslie C. (ed.) Asian Medical System: AComparative study, University of California Press,p.374, 1977.

৪) যোগেশচন্দ্র ঘোষ, “আয়ুর্বেদীয় গৃহ চিকিৎসা”, সাধনা ঔষধালয়, প্রথম প্রকাশ, ভূমিকা, পৃ- (৮-৯), ১৩৪১ বঙ্গাব্দ।

৫) আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ম মার্চ, ২০২০ সাধারণ অব্দ

https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/ayurvedic-medicine-company-sadhanaaushadhalaya-dhaka-has-become-extinct-now-1.1116280

৬) মৃণাল কান্তি দাস, “শরীর ও স্বাস্থ্য,”বিশ্বজিৎ দাস (সম্পাঃ) বর্তমান (মাসিক হেলথ ম্যাগাজিন), ধন্বন্তরি, পৃ-৭৭, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, ১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সাধারণ অব্দ।

৭) সত্যেন্দ্র কুমার বসু (সম্পাঃ), “মাসিক বাসুমতী,” সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, চারজন, পৃ- (২৯৯-৩০০), ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ।

৮) মৃণাল কান্তি দাস, “শরীর ও স্বাস্থ্য,” বিশ্বজিৎ দাস (সম্পাঃ) বর্তমান (মাসিক হেলথ ম্যাগাজিন), ধন্বন্তরি, পৃ-৭৭, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা,১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সাধারণ অব্দতে।

৯) হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, “বঙ্গসাহিত্যভিধান,” তৃতীয় খণ্ড (য-হ), ফার্মা.কে.এল.এম. প্রাইভেট লিমিটেড, প্রথমপ্রকাশ, পৃ- ২৬, ১৯৯২ সাধারণ অব্দতে; শোরীন্দ্রকুমার ঘোষ, “সাহিত্যসেবকমঞ্জুষা,” দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্যলোক, প্রথমপ্রকাশ, পৃ-(৪৮২-৪৮৩), ১৯৮৫ সাধারণ অব্দতে; সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু (সম্পাঃ), “সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান,” প্রথম খণ্ড, সাহিত্যসংসদ, প্রথমপ্রকাশ, পৃ- ৬১২, ১৯৭৬ সাধারণ অব্দতে।

১০) যোগেশচন্দ্র ঘোষ, প্রাগুক্ত, পৃ-৯।

১১) শিশির কুমার মিত্র (সম্পাঃ), “শিশির,” পৃ – ৫, ১০ ই বৈশাখ ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ।

১২) N.S. Mooss (ed.), “The All-India Ayurvedic Directory: 1939-40,” Part-V, Vaidya Sarathy Press, pp.304-305, 1941.

১৩) Kizhedath Vasudevan Nair (ed.), “The Golden Jubilee Soubenir of VaidyaratnamP.S.Varier’s Arya Vaidya Sala kottakkal”, Part-lll, The Golden Jubilee Celebration Committee: The Arya Vaidya Sala, p.18, 1954. 

১৪ )সত্যেন্দ্র কুমার বসু (সম্পাঃ), “মাসিক বাসুমতী,” সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, চারজন, পৃ-২৯৯, ৪০শ বর্ষ, ২য় খণ্ড, ২য় সংখ্যা, অগ্রহায়ণ ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ।

১৫) আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ম মার্চ, ২০২০ সাধারণ অব্দতে, https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/ayurvedic-medicine-company-sadhanaaushadhalaya-dhaka-has-become-extinct-now-1.1116280

১৬) মৃণাল কান্তি দাস, “শরীর ও স্বাস্থ্য,” বিশ্বজিৎ দাস (সম্পাঃ) বর্তমান (মাসিক হেলথ ম্যাগাজিন), ধন্বন্তরি, পৃ-৭৭, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, ১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সাধারণ অব্দ।

১৭) যোগেশচন্দ্র ঘোষ, প্রাগুক্ত, পৃ-৫।

১৮)সত্যচরণ সেন (সম্পাঃ), “আয়ুর্বিজ্ঞান সম্মিলনী”, বিজ্ঞাপন, ১ম বর্ষ, ৫ম সংখ্যা, কার্তিক ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ; মতিলাল রায় (সম্পাঃ), “প্রবর্ত্তক”, বিজ্ঞাপন (পৃ- ১৯), ২৩শ বর্ষ, ২য় খণ্ড, ১ম সংখ্যা, কার্তিক ১৩৪৫ বঙ্গাব্দ; রাধাগোবিন্দ নাথ (সম্পাঃ), “সাধনা”, বিজ্ঞাপন, ৫ম বর্ষ, ১১শ সংখ্যা, ফাল্গুন ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ; রামচন্দ্র মল্লিক (সম্পাঃ), “শ্রীদেশবন্ধু”, বিজ্ঞাপন, ১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, আশ্বিন ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ; রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় (সম্পাঃ), “প্রবাসী”, বিজ্ঞাপন, ৪০শ ভাগ, ২য় খণ্ড, ১ম সংখ্যা, কার্তিক ১৩৪৭ বঙ্গাব্দ।

১৯)) N.S. Mooss (ed.), op.cit, pp.304-305.

২০) মৃণাল কান্তি দাস, “শরীর ও স্বাস্থ্য,” বিশ্বজিৎ দাস (সম্পাঃ) বর্তমান (মাসিক হেলথ ম্যাগাজিন),ধন্বন্তরি, পৃ-৭৭,৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা,১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সাধারণ অব্দতে।

২১)সত্যেন্দ্র কুমার বসু (সম্পাঃ), “মাসিক বাসুমতী,” সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, চারজন, পৃ-৩০০, ৪০শ বর্ষ, ২য় খণ্ড, ২য় সংখ্যা, অগ্রহায়ণ ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ।

২২)আনন্দবাজার পত্রিকা, রবিরার (রবিবাসরীয়),পৃ- ৭, ১৪ই কার্তিক, ১৩৫৫ বঙ্গাব্দ; 

২৩) সত্যেন্দ্র কুমার বসু (সম্পাঃ), “মাসিক বাসুমতী,” সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, চারজন, পৃ-৩০০, ৪০শ বর্ষ, ২য় খণ্ড, ২য় সংখ্যা, অগ্রহায়ণ ১৩৬৮ বঙ্গাব্দ।

২৪)আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ম মার্চ, ২০২০ সাধারণ অব্দতে, https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/ayurvedic-medicine-company-sadhanaaushadhalaya-dhaka-has-become-extinct-now-1.1116280,১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ দেখা হয়েছে।

২৫) মৃণাল কান্তি দাস, “শরীর ও স্বাস্থ্য,” বিশ্বজিৎ দাস (সম্পাঃ) বর্তমান (মাসিক হেলথ ম্যাগাজিন), ধন্বন্তরি, পৃ-৭৭, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, ১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সাধারণ অব্দতে।

২৬) হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাঃ), “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র”, অষ্টম খণ্ড, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারঃ তথ্য মন্ত্রণালয়, পৃ-(৪৮৩-৪৮৪), ১৯৮৪ সাধারণ অব্দতে।  

২৭) মৃণাল কান্তি দাস, “শরীর ও স্বাস্থ্য,”বিশ্বজিৎ দাস (সম্পাঃ) বর্তমান (মাসিক হেলথ ম্যাগাজিন),ধন্বন্তরি, পৃ-৭৭, ৬ষ্ঠ বর্ষ, ৯ম সংখ্যা, ১৫ই জানুয়ারি ২০১৮ সাধারণ অব্দতে।

২৮) হাসান হাফিজুর রহমান (সম্পাঃ), প্রাগুক্ত ; বাংলাপিডিয়া, ঘোষ, যোগেশ চন্দ্রhttp://bn.banglapedia.org/index.php?title=ঘোষ,_যোগেশ_চন্দ্র&oldid=19925′, ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাধারণ অব্দ।

২৯)আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ম মার্চ, ২০২০ সাধারণ অব্দতে, https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/ayurvedic-medicine-company-sadhanaaushadhalaya-dhaka-has-become-extinct-now-1.1116280,১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ দেখা হয়েছে।

৩০)হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য, “বঙ্গসাহিত্যভিধান,” দ্বিতীয় খণ্ড (ত-ম), ফার্মা.কে.এল.এম. প্রাইভেট লিমিটেড,প্রথম প্রকাশ, পৃ- ১২৯, ১৯৯০ সাধারণ অব্দতে; শোরীন্দ্রকুমার ঘোষ, “সাহিত্য সেবক মঞ্জুষা,” প্রথম খণ্ড, সাহিত্যলোক, প্রথম প্রকাশ, পৃ-২৭৪, ১৯৮৩ সাধারণ অব্দতে।

৩১) নরেশচন্দ্র ঘোষ, “আয়ুর্বেদ দর্শন” সাধনা ঔষধালয়, প্রথম প্রকাশ, ভূমিকা, পৃ-(৫-৬), ১৩৮৪ বঙ্গাব্দ।

৩২)আনন্দবাজার পত্রিকা, ১ম মার্চ, ২০২০ সাধারণ অব্দতে, https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/ayurvedic-medicine-company-sadhanaaushadhalaya-dhaka-has-become-extinct-now-1.1116280,১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০২২ দেখা হয়েছে।

পিএইচডি গবেষক, ইতিহাস বিভাগ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট এডেড কলেজ টিচার, ইতিহাস বিভাগ, মেটিয়াব্রুজ কলেজ, কলকাতা।

মন্তব্য তালিকা - “আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পুনর্জাগরণে অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ ও সাধনা ঔষধালয়ের অবদান: একটি স্বদেশী ঔষধ শিল্প গঠনের ইতিহাস”

  1. আমি ভারতের অসম রাজ্য করিমগঞ্জ থেকে সাধনা ঔষধ বিক্রী করতে চাই। কেননা আগে আমাদের করিমগঞ্জে সাধনা ঔষধালয়ের যে ব্রাঞ্চ ছেলো ,সেখানে চিকিৎসা পদ্ধতি শিখেছি ।।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।