সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

নতুন ধর্মের প্রচার পদ্ধতি: স্লাভ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনগোষ্ঠীর পৃথক অভিজ্ঞতা

নতুন ধর্মের প্রচার পদ্ধতি: স্লাভ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জনগোষ্ঠীর পৃথক অভিজ্ঞতা

অতীন দাস

জানুয়ারি ৭, ২০২৪ ৩১৯ 0

স্লাভদের গল্প

আমার জন্ম বেলারুশে, চিকিৎসক পরিবারে। বাবা-মা আমাদের রেখে যেতেন আয়ার যত্নে, যিনি বেলারুশের গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন। আয়া বেলারুশের রূপকথার গল্প বলতেন, তাকে বিরক্ত করলে চিৎকার করতেন ‘পেরুন তোকে ধরে নিয়ে যাবে’! পেরুনকে (প্রাক-খ্রিস্টিয় পাগান স্লাভদের মূল দেবতা) তিনি স্বর্গে বসবাসকারী এবং ঝড়, বজ্রপাতের নিয়ন্ত্রক বলতেন। বিজ্ঞান পেরুন সম্পর্কে আমার ছেলেবেলার আয়ার চেয়ে সামান্য বেশি জানে। আমরা যে কয়েকটি তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি তা পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং তার সঙ্গে যুক্ত পৌত্তলিক দেবতাদের সম্পর্কিত; যেমন বলি, মূর্তি, শপথ, নাম সংকীর্তন ইত্যাদি। (‘পেরুনের পুনরুত্থান, পূর্ব স্লাভিক পৌত্তলিকতার পুনর্গঠনের জন্য’ বইটির ভূমিকা, ২০০৪)

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গল্প

কয়েক জন সাধারণ মানুষের একটি সাধারণ দিনের বর্ণনা: সারাদিন ধানক্ষেতের হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শেষে জেষ্ঠবর্ম এসেছে বরাদ্দ খাবারের খোঁজে, কিন্তু সে তার পরিচিত শিবদাসকে দেখতে পেল না। তার গ্রাম বনপুরের ছেলে নারায়ণ দিল গোপন খবরটা। শিবদাস গিয়েছে বিদ্যাকে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে, আজ বিষ্ণু মন্দিরের পাশের মাঠে চারুমতি, মদনপ্রিয়ার নাচ আছে, গান গাইবে রতিমতি সঙ্গে বাজনায় মধুরসেনা। সুতরাং, হাতের কাজ দ্রুত শেষ করে সেখানে তাড়াতাড়ি উপস্থিত হওয়াটা বুদ্ধিমানের কর্তব্য। (ঘটনাটা কাল্পনিক, সব নাম, ধাম, কাজের বর্ণনা ৬১১ সালে আবিষ্কৃত কাম্বোডিয়ার প্রাচীনতম খমের লিপিতে সংস্কৃত ভাষার শিলালিপি থেকে প্রাপ্ত।)২,৩,৪

ভূমিকা

বৈদিক আর্যভাষীরা শুধুমাত্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিলেন না, তাঁদের ভাষা এবং ধর্মীয় আচরণ পদ্ধতিগুলি ভারতের বাইরেও ছিল। এদের নিকট সম্পর্ক যে ছিল ইরানিদের সঙ্গে; সেটা দুটি সভ্যতার ব্যবহৃত ভাষার শব্দের তুলনা থেকেও বোঝা যায়। ইরানের সঙ্গে বৈদিক সভ্যতার এই সাদৃশ্য কি ভৌগোলিকভাবে আরও কিছুটা এগিয়ে যেতে পারে? প্রাক-খ্রিস্টিয় স্লাভ জনগোষ্ঠীর পৌত্তলিকতা এবং তাতে বৈদিক প্রভাব এমন চর্চার বিষয়। আরও যেটা দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল এই জনগোষ্ঠীর ওপর খ্রিস্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত নিষ্ঠুরতা এবং হিংসা। অবশ্য বিরাট এলাকা জুড়ে থাকায় সর্বত্র ‘পাগান’ স্লাভদের একই অভিজ্ঞতা হয়নি, অনেক জায়গায় প্রাক-খ্রিস্টিয় স্লাভরা স্বেচ্ছায় বা তাঁদের শাসক রাজার প্ররোচনায় ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন। যেমন কিয়েভের প্রধান রাজপুত্র ভ্লাদিমির নানা ধর্মের খোঁজ নিয়ে অবশষে ৯৮৮ সালে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন, অবশ্য তাতে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের এক রাজকন্যাকে বিবাহ করার পথও তাঁর প্রশস্ত হয়েছিল। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় কিছু রাজাও এমন ঘটনা ঘটিয়েছিলেন।

বর্তমানের নিবন্ধটির উদ্দেশ্য হল ভারতের পশ্চিমদিকে খ্রিস্টধর্ম প্রচার, প্রভাব বিস্তার ও ধর্মান্তকরণের পদ্ধতির সঙ্গে পূর্বদিকে প্রায় একই সময় বা তারও আগের হিন্দু ধর্মের প্রসারের প্রক্রিয়াকে তুলনা করা নয়, বরং দুটিকে কেবল পাশাপাশি রাখা।  সমস্যা হল যে, এঁদের পূর্বজরা নিজেদের ধর্মকে ত্যাগ করার ফলে প্রাচীন ধর্মীয় গাথা/দেবতাদের মূর্তি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এমনকী সংগ্রহশালাতেও এসব দুর্লভ। বরুণ, সূর্য ইত্যাদি স্লাভ দেবতাদের মূর্তি বিরল।

স্লাভ মানুষ নিজস্ব ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন হাজার বছর আগে। একাদশ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় স্লাভদের পৌত্তলিক প্রাক-খ্রিস্টধর্মের দেবতারা সংস্কৃতি থেকে মুছে যান , তাঁদের গল্পকথা, মূর্তি, চিত্র সব মুছে ফেলা হয়। ফলে আধুনিক দুনিয়ায় স্লাভদের প্রাচীন ধর্মের সঙ্গে বৈদিক ধর্মের তুলনার খুব কম প্রামাণ্য রসদ আছে।

এখানে আর একটি বিপদের সম্ভবনা থেকে যায়। প্রমাণ আর কল্পনার মধ্যেকার যে ফাঁক, বিপদ হল, সেখানে প্রচুর আগাছা জন্মায়; যাদের বেশ কিছু বিষাক্ত। আধুনিককালে কিছু স্বঘোষিত গবেষক খাঁটি হিন্দুধর্ম ও তাঁর শ্রেষ্ঠত্বকে প্রমাণ করার জন্য বিশ্বব্যাপী বেদ তথা আর্য সভ্যতার প্রমাণ খুঁজে বেড়ান। বাস্তবে আর্যভাষীরা প্রবেশ করার আগে থেকেই উন্নততর সভ্যতা ভারতে বিদ্যমান ছিল (যোসেফ)।

বর্তমান সময়ের স্লাভিক জনগণকে পশ্চিম স্লাভিক (প্রধানত পোল, চেক এবং স্লোভাক), পূর্ব স্লাভিক (প্রধানত রুশ, বেলারুশিয়, ইউক্রেনিয়) এবং দক্ষিণ স্লাভিক (প্রধানত সার্ব, বুলগেরিয়, ক্রোয়াট, বসনিয়, ম্যাসিডোনিয়, স্লোভেনিয় এবং মন্টেনিগ্রিয়) শ্রেণীভুক্ত করা হয়েছে। উচ্চারণ এবং তাৎপর্য উভয় ক্ষেত্রেই স্লাভিক প্রাচীন, পৌত্তলিক দেবতাদের (পাগান) সঙ্গে হিন্দু দেবতাদের সম্ভাব্য বেশ কিছু মিল রয়েছে।

ভাষাগত সাদৃশ্যের কয়েকটি উদাহরণ-

সংস্কৃতরুশ (বাংলা হরফে)বাংলা অর্থ
ভগবগভগবান
নভসনেবোআকাশ
দ্বারডভেরদরজা
মাতৃমাতমাতা
ভ্রাতাব্রাটভ্রাতা
বিদভিদজানা, শেখা
লুবলুভজোরদার চাওয়া
স্লাদস্বাদস্বাদ

সারণি ১- কয়েকটি রুশ ও সংস্কৃত শব্দের তুলনা

সংখ্যাবাচক শব্দঃ দ্ভ (দ্বি-দুই), ত্রি (ত্রি-তিন), চিত্রিয়া (চতুর্‌-চার), প্যাত (পঞ্চ-পাঁচ), শ্যেস্ত (ষষ্ঠ-ছয়), দ্যেস্যত (দশ-দশ), স্ত (শত-শত), দ্ভিস্তি (দ্বিশতং-দুই শত)।

কয়েকটি স্লাভ ও বৈদিক দেবতার সম্ভাব্য সাদৃশ্য

ক) ভেলস – এই দেবতা বন, প্রকৃতি এবং জলের প্রভু, পৌরাণিক মতে তিনি গরু জেমুন এবং দেবতা রডের ছেলে। তিনি রাখাল এবং জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিংবদন্তি অনুসারে, ভেলস হলেন বজ্রের দেবতা যিনি দেবতা পেরুনের শত্রু। পুরোনো রুশ কবিতায়, ম্যাসিডোনিয়ার শহরের নাম হিসেবে ভেলস, গ্রিক ভেলেসা এবং আলবেনিয়ায় ভেলেস নাম পাওয়া যায়।

স্লাভিক দেবতা ভেলস বৈদিক বলের সঙ্গে সাদৃশ্য বহন করেন। বল সম্পর্কিত ঋগ্বেদের১০ কয়েকটি শ্লোক (মন্ডল, সূক্ত, ঋক) সহ উল্লেখ করা হল। যেমন, (২.১২.৩) হে মনুষ্যগণ! … যিনি বল কর্তৃক নিরুদ্ধ গোসমূহকে উদ্ধার করেছিলেন, যিনি মেঘদ্বয়ের মধ্যে অগ্নি উৎপাদন করেন এবং যুদ্ধকালে শত্রুগণকে বিনাশ করেন, তিনিই ইন্দ্র। (২.১১.২০) … সেরূপ ইন্দ্র অঙ্গিরাগণের সাহায্য লাভ করে বজ্র ঘূর্ণিত করছিলেন এবং বলকে বিনাশ করেছিলেন।১০

খ) রড – বিশ্বাস করা হয় যে, কথাটি এসেছে স্লাভিক ‘রডনো’ থেকে যার অর্থ জন্ম। রুদ্রের সঙ্গে আরও একটি ঐতিহাসিক সংযোগ হল যে রুদ্র এসেছে ‘রুদ’ থেকে যার অর্থ হল ‘কান্না’ (যেমন নবজাতক শিশু করে)।১১

গ) স্লাভিক যিভা, পোলিশ যাভা, সার্বো-ক্রোয়েশিয় জিভা, বুলগেরিয়ান ঝিভা ইত্যাদি নাম পরে এক অজানা দেবীর উপাধিতে পরিণত হয়েছিল। টোপোরভ প্রমুখ জিভাকে দেবী মোক্ষর সঙ্গে তুলনা করেছেন।

ঘ) স্লাভিক পুরাণে পেরুন হলেন সর্বোচ্চ দেবতা। তিনি আকাশ, বজ্র, বজ্রপাত, ঝড়, বৃষ্টি, আইন, যুদ্ধ, উর্বরতার দেবতা। তাঁর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বেদের দেবতা পর্জন্যর, যিনি হলেন বৃষ্টি, বজ্র, বজ্রপাতের দেবতা।১১

বৈদিক দেবতাদের সঙ্গে সাদৃশ্য বিষয়ে চর্চাটি যদিও চিত্তাকর্ষক, তবে স্লাভ মানুষেরা তাঁদের নিজস্ব দেবতা, ধর্ম নিয়ে স্বাভাবিক সামাজিক গতিতে এগিয়ে চলেছিলেন; এটা মেনে নিয়ে আমরা প্রসঙ্গান্তরে যাব।

স্লাভ জনগোষ্ঠীর ওপর খ্রিস্টধর্ম প্রচার পদ্ধতির নির্মমতার বর্ণনা

ঐতিহাসিক কাল থেকেই ধর্ম প্রচারে, বিশেষ করে ধর্মান্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রলোভন, হিংসা, কল্পিত ধর্মীয় নির্দেশ ইত্যাদি মূল অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আমরা স্লাভদের বিরাট অংশের ক্ষেত্রে কী ঘটেছিল তার আলোচনা করব।

১) স্লাভ জনতার ওপর খ্রিস্ট ধর্ম প্রচারের নামে নির্মম আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছিল। ১১৭২ সাধারণ অব্দে খ্রিস্টিয় পুরোহিত হেলমোল্ড বিশপের অনুরোধে ‘ক্রনিকা স্লাভোরাম’ বইটি১২ লেখেন যা মধ্যযুগের ইতিহাস চর্চায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৯০০ থেকে ১১০০ সাধারণ অব্দের মধ্যে স্লাভ জাতিকে খ্রিস্ট ধর্মের অনুগত করতে জার্মানরা যে অভিযান চালায় তাঁর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ এতে আছে— বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে আঘাত হানতে নিজেদের ‘ইশ্বর’কে ব্যবহার করা, তাঁর মুখে কল্পিত কথা বসানোর নির্লজ্জ উদাহরণ, লেখক পাদরি হেলমোল্ড মহাশয়ের নিজের দৃষ্টিভঙ্গি, তাঁর লেখা থেকে পরিষ্কার হবে। তিনি তাদের বনভূমির উপাসনালয়গুলি ধ্বংসের অনুমোদন দিয়েছিলেন। যদিও আতিথেয়তার জন্য তাদের প্রশংসা করেছিলেন,

একটি সৈন্যদলকে একত্রিত করে, তিনি ডেনস অঞ্চলে অগ্রসর হন এবং অনেক কঠিন যুদ্ধে তাদের প্রায় ধ্বংস করেন। যুদ্ধটি ওপর থেকে নির্দেশিত হয়েছিল, যদিও সংঘর্ষে এক লক্ষ পৌত্তলিক নিহত হয়েছিল, কখনও হয়তো বা একজন খ্রিস্টানকে নিহত হতে দেখা গিয়েছিল। উত্তরাঞ্চলের অধিবাসীদের সঙ্গে নিপীড়ন এইরকম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই ঘটেছিল। ‘প্রভু সত্তর বছর ধরে তাঁর দাসদের রক্তের প্রতিশোধ নিলেন।‘১২ (পৃষ্ঠা ৬৩)

সত্যিই মানুষের ওপর ঈশ্বরের বিচার লুকিয়ে আছে: ‘অতএব তিনি যাকে ইচ্ছা করুণা করেন . এবং তিনি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি কঠোর হন।’ কিন্তু তিনি, ‘ন্যায্য বিচারক, শক্তিশালী ও ধৈর্যশীল।’(পৃষ্ঠা ১৩)

কথিত আছে যে, সেই দিনগুলিতে তিনি হাজার হাজার পৌত্তলিককে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা দিয়েছিলেন। (পৃষ্ঠা ১০৬) 

‘পৌত্তলিক হত্যার মহান গণ-দীক্ষা প্রদান’-এর জন্য স্লাভদের প্রতি প্রয়োজনীয় ঘৃণা উস্কে দিতে নিম্নলিখিত ধরনের প্রচার করা হত: ম্যাগনোপলিসে খ্রিস্টকে স্বীকার করার কারণে বয়স্ক বিশপ জনকে রড দিয়ে মারধর করা হয়েছিল আর তারপর স্লাভদের একের পর এক শহরে তাঁকে নিয়ে উপহাস করা হয়েছিল। যেহেতু তাঁকে খ্রিস্টের পেশা থেকে ফিরিয়ে আনা যায়নি তাই তাঁর হাত-পা কেটে ফেলে তাঁর দেহ রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মাথা, বর্বররা কেটে ফেলে, একটি বর্শার ওপর স্থাপন করে এবং তাদের বিজয়ের প্রতীক হিসাবে তাদের দেবতা রেডিগাস্টকে অর্পণ করে।

স্লাভরা যখন বিজয় অর্জন করেছিল তখন তারা আগুন এবং তলোয়ার দিয়ে হামবুর্গের পুরো অঞ্চলকে ধ্বংস করে দেয়। এমনকি আমাদের ত্রাণকর্তাকে উপহাস করার জন্য পৌত্তলিকরা ক্রসগুলি বিকৃত করেছিল। (পৃষ্ঠা ৯৮-৯৯)

স্লাভদের ভবিষ্যতের জন্য গাছ, ঝরনা আর পাথরের দিয়ে শপথ করা নিষিদ্ধ ছিল এবং অভিযুক্তদের অপরাধের বিচারের জন্য যাজকের কাছে আনতে হয়েছিল। (পৃষ্ঠা ২২৪)

২) পোমেরেনিয়া মধ্য ইউরোপের বাল্টিক সাগরের দক্ষিণ তীরে পোল্যান্ড এবং জার্মানির মধ্যে বিভক্ত একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। এই অঞ্চলের ক্যাথলিক বিশপদের ভূমিকার বিষয়ে জি. ভাইজম্যান লিখিত একটি নিবন্ধের১৩ (২০০৪) উল্লেখ করা যায়, যেখানে পৌত্তলিক জনজাতির ওপর খ্রিস্টধর্মের প্রচারকদের ভূমিকা আলোচনা করা হয়েছে। যেমন রেইনবেম। তাঁর জন্ম ৯৬৫ সাধারণ অব্দের দিকে। সম্ভবত তিনি ম্যাগডেবার্গের ক্যাথিড্রাল স্কুলে শিক্ষিত হয়েছিলেন, যেটি স্লাভদের ধর্মান্তরিত করার জন্য মিশনারিদের প্রস্তুত করত। সম্ভবত ১,০০০ সাধারণ অব্দ নাগাদ তিনি গনিজনোতে বিশপ নিযুক্ত হন। তিনি মূর্তি, মন্দিরগুলিকে ধ্বংস করে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। …পবিত্র জল ছিটিয়ে অশুভ আত্মাদের দ্বারা অধ্যুষিত সমুদ্রকে পরিষ্কার করেছিলেন। স্থানীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতির জায়গায়, বিদ্যালয়গুলি ধীরে ধীরে প্রধান গির্জা প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা যাজকদের কাজ সহজ করেছিল।১৩

বাস্তব জগতে, যেমন পূর্বে বলা হয়েছে, এই সবের ‘পাথুরে প্রমাণ’ প্রায় কিছুই পাওয়া যায় না। তবে বিস্তারিত গবেষণা না হলেও দু’একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। বর্তমানে সুইডেনের পঞ্চম বৃহত্তম শহর উপসালাতে এক প্রাচীন মন্দির পাওয়া গেছে যেখানে আছে স্বর্ণখচিত এক মূর্তি যা স্লাভদের আরকোনাতে প্রাপ্ত মন্দিরের তিনটি মুখ বিশিষ্ট দেবতা ত্রিগলভ-এর মূর্তির মতো। সঙ্গে দ্বাদশ শতাব্দীর চার্চের নিচে দেখা গেছে ধ্বংসপ্রাপ্ত উপসালার পাগান মন্দিরের বর্গাকার নকশা। এসব থেকে প্রমাণিত হয় এখানে একসময় পাগান মন্দির ছিল। দক্ষিণ রাশিয়া, স্টেপ অঞ্চলেও পাথর কেটে বানানো মানুষের মূর্তি, হাতে শিং-য়ের পান করার পাত্র পাওয়া গেছে, কিয়েভের পেরুন-এর মূর্তির মতো।১৪

ধর্ম প্রচার, ধর্মান্তকরণ: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদাহরণ

কম্বুজদেশে (কম্বোডিয়া) নানা স্তরের কাজকর্ম, সাংস্কৃতিক বা বিনোদন সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষদের নাম এবং তাঁদের কাজের বিভাজনের উদাহরণ শিলালিপি থেকে পাঠোদ্ধার করা হয়েছে।

এই কারণেই আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদাহরণ দেব যেখানে হিন্দু সভ্যতার ব্যাপক বিস্তার হয়েছিল। এই অঞ্চলের থেকে অসংখ্য শিলালিপি পাওয়া যাওয়ায় দু হাজার বছরের ইতিহাস অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে, সেখানে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিন্দুদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সংঘর্ষ বা যুদ্ধ হয়নি। এই অঞ্চলের রাজাদের লড়াই হয়েছে রাজ্যের সীমানা, ব্যবসায়িক স্বার্থ ইত্যাদি বিষয়ে কিন্তু সে সব ধর্ম প্রচারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশগুলি

প্রাক-খ্রিস্টীয় যুগ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমানে এই অঞ্চল ১০টি দেশ (ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পূর্ব তিমুর, ফিলিপাইন এবং সিঙ্গাপুর, আর মূল ভূখণ্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড) নিয়ে গঠিত। (মারোয়াহ, ২০২০)১৫

ফলে অজস্র দ্বীপ ও মূল ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত সমগ্র অঞ্চলটি ছিল বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। ১২০০ সাধারণ অব্দ নাগাদ এখানকার অধিকাংশ স্থানে হিন্দু রাজত্ব স্থাপিত হয়। সংস্কৃত ভাষার মাধ্যমে বৈদিক হিন্দু ধর্ম ও তাঁর পৌরাণিক কাহিনিগুলিও ছড়িয়ে পরে।

রমেশ চন্দ্র মজুমদারের (১৯৪৪) মতে, ‘… দূরপ্রাচ্যের ধর্ম-বিশ্বাস, ভক্তি ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান প্রভৃতিতে ভারতীয় চিত্রেরই সম্পূর্ণ প্রতিফলন দেখা যায়। অবশ্য স্থানীয় বিশ্বাস ও আচার নিয়ম যে একেবারে লোপ পেয়েছিল তা নয়, কিন্তু উচ্চ ধরনের সুপরিকল্পিত নিয়মানুষ্ঠানের সংস্পর্শে এসে তাদের কতগুলি লোপ পেয়েছিল এবং কিছু এর সঙ্গে মিশে গিয়ে একে প্রভাবান্বিত করেছিল।’ (পৃষ্ঠা ১১৯)১৬

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে হিন্দুদের পূর্বে পৌঁছান অন্যান্য প্রভাব

মারোয়াহ (২০২০)১৫ তাঁর গবেষণায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান মাথায় রেখে চিহ্নিত করেছেন অঞ্চলটির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে প্রায় ১০০০টি কথ্যভাষা আছে। এই অঞ্চলে অভিবাসন দক্ষিণ চীন থেকে মূল ভূখণ্ডের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে উপজাতীয গোষ্ঠীর পরিযান দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। আজ থেকে ২০০০ বছরেরও বেশি আগে থেকে বিভিন্ন পরিযান ভিত্তিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। এখানে কনফুসিয়ান দর্শনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। ভিয়েতনাম বৌদ্ধ ধর্ম এবং তাওবাদ উভয় দ্বারাই ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের বাকি অংশে, মালয়-ইন্দোনেশিয়ান দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিম অঞ্চলে, ভারতীয় প্রভাব এবং সংস্কৃতিতে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা ছিল। হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের উপাদানই রাজাদের রাজ্য পরিচালনার পদ্ধতি এবং জনগণের উপরে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। (পৃষ্ঠা ৪- ৫)

এটাও জানা যায় যে মালয়, মিনাং, জাভানিজ, ক্যান্টনিজ, আরব, তামিলদের মতো বেশ কয়েকটি সম্প্রদায় (হিন্দু) অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল (আর মারোয়াহ, ২০২০)১৫। ফা-হিয়েন তাঁর ফো-কিউ-কি (অর্থাৎ বুদ্ধভূমির বিবরণ) গ্রন্থে যবদ্বীপে পঞ্চম শতাব্দীতে ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রাধান্য সম্পর্কে লিখেছিলেন।

ভারতীয় হিন্দুদের প্রভাব বিস্তারের পদ্ধতি

মালয় উপদ্বীপের ১৫০০ সাধারণ অব্দের আগেকার ইতিহাস বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন পল হুইটলি১৭ তাঁর দ্য গোল্ডেন খেরসো্নিজ গ্রন্থে (১৯৬১)।

ভারতীয় ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে দুই ধরনের ছিলেন। প্রথম দল হলেন অভিজাত বণিক, যাঁদের ভূমিকা ছিল বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসার সুযোগ সন্ধানকারীর। এটি সত্য যে এঁরা মাঝে মাঝে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অংশে বসতি স্থাপন করেছিলেন, তবে তাঁরা সংখ্যায় কম ছিলেন এবং তাঁদের নির্জন জীবন আশেপাশের জনসংখ্যাকে খুব সামান্যই প্রভাবিত করেছিল। আরেক দল ছিলেন ফেরিওয়ালা; এরা ছিলেন সাধারণত ভারতীয় সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষ, যারা বিকিকিনির জন্য সমগ্র ভারত মহাসাগর জুড়ে ভ্রমণ করতেন। দরিদ্র এবং অশিক্ষিত, এই মানুষেরা ভারতীয় আচার এবং নান্দনিক সংবেদনশীলতার মতো সূক্ষ্ম বিষয় প্রসারের মাধ্যম হতে পারেন না। অধিকন্তু, দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশাধিকার না থাকায়, এঁরা বন্দর এলাকায় ঘিঞ্জি দরিদ্র মহল্লায় সীমাবদ্ধ থাকতেন, এঁদের মালপত্র বেচাকেনার সময় ছাড়া স্থানীয় লোকদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ ছিল না।(পৃষ্ঠা ১৮৬-১৮৭)১৫

অনেক পরে ব্রিটিশ সাহেবরা ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করতেন, মালয় একজন অলস, চিনাম্যান একজন চোর এবং ভারতীয় একজন মাতাল, তবুও প্রত্যেকেই তার নিজের কাজের ক্ষেত্রে মজুরীতে সস্তা এবং দক্ষ, যদি সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করা হয়। (মারোয়াহ, ২০২০)১৫

ভারতীয়রা যেভাবে খুশী করতেন রাজন্যবর্গকে

সত্যিকারের ছবিটা নিশ্চয়ই এরকম কিছু ছিল: দুই-তিনটি ভারতীয় জাহাজ একসঙ্গে যাত্রা করে অবশেষে জাভা পৌঁছেছিল। নবাগতরা হয়তো দেশের প্রধানদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে, উপহার প্রদান করে, চিকিৎসা আর তাবিজ-কবজ প্রদানের মাধ্যমে অনুগ্রহ অর্জন করেছিল। শুরুতেই উপহার প্রদান, সমস্ত বাস্তব বা কাল্পনিক অসুস্থতা আর বিপদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বা নিরাময়মূলক ঔষধ বিতরণ করে সম্পর্ক পাতাতেন। অচেনা মানুষকে হতে হবে ধনী, একজন নিরাময়কারী এবং জাদুকর। একজন ভারতীয়র চেয়ে ভালো এই ধরনের পদ্ধতি আর কেউ ব্যবহার করতে পারে না। নিঃসন্দেহে রাজকীয় হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে এবং স্থানীয় কর্তা ব্যক্তিরা তাকে সাহায্য না করে পারবে না। (কোডেস, পৃ ২২)

রিচার্ড উইন্সটেড১৮ তাঁর প্রবন্ধে (১৯৩৫, পৃষ্ঠা ১৮) এটিকে কল্পনাপ্রসূত অভিব্যক্তি দিয়েছেন।

‘একটি জাহাজ বর্ষাকালে সোনা, টিন, হাতির দাঁত, কর্পূর এবং সেইসব বিরল ওষুধ, গন্ডার-শিং, পুঁতি এবং জাদুর তাবিজ বিনিময় করতে এসেছিল এখানে এবং সেখানে একজন যাত্রী যাদু প্রদর্শন করেছিল, যা প্রেম, লড়াই আর রোগভোগে কার্যকরী হয়েছিল। আরেকজন যোদ্ধা হিসেবে সম্মান পেয়েছিল। কিছু যাত্রী স্থানীয় পাত্রীদের বিবাহ করেছিল, পুরোহিতরা এসে সংস্কৃতে একটি নতুন আচার শিখিয়েছিলেন, যেটি পরবর্তীকালের আরবি ভাষার মতোই স্থানীয়দের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। প্রাত্যহিক কথাবার্তার জন্য নবাগতরা এখানকার ভাষা গ্রহণ করেছিল এবং তাদের নিজস্ব কথ্য প্রাকৃতের খুব কম শব্দই চালু করেছিল। সময়ের সঙ্গে কয়েকজন ভারতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইন্দোনেশীয় পরিবারগুলোতে বিয়ে করে এবং হিন্দু রাজত্বের ধারণা নিয়ে এসেছিল। ঠিক এভাবেই হাজার বছরেরও বেশি সময় পরে মুসলিম তামিলরা মালাক্কার সুলতান এবং বেন্দাহারদের (মালয়ের অতি প্রভাবশালী গোষ্ঠী- মালয় রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী ইত্যাদি যাদের স্থান ছিল সুলতানের পরেই) পরিবারে বিয়ে করেছিল। ভারত থেকে হিন্দুদের আগমন এবং পরবর্তী সময়ে মুসলমানদের আগমন প্রায় একই রকম।’

কেন ভারতীয়রা এই অঞ্চলে এসেছিল

হুইটলির বইয়ের (১৯৬১)১৭ ১৮৭ পাতার ফুটনোটটি উল্লেখ্য; এই ভারতীয়করণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি ধারণা হল, ৩০০ সাধারণ পূর্বাব্দে অশোকের কলিঙ্গ বিজয় বা ১০০ সাধারণ অব্দ নাগাদ কুষাণ আক্রমণের ফলশ্রুতিতে ভারত থেকে দলে দলে উদ্বাস্তু মানুষ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার চলে গেছিলেন। এই ধারণা ধোপে টেকে না, কারণ আমরা জানি যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয়দের কোনো ব্যাপক অভিবাসন হয়নি। জ্যাকোবি এবং অন্য কিছু পণ্ডিত দাবি করেছেন যে অর্থশাস্ত্রের একটি অনুচ্ছেদ (দ্বিতীয় খণ্ড, ১) বিশেষভাবে বিদেশি প্রদেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠাকে রাজকীয় বাধ্যবাধকতা হিসাবে নির্দেশ করেছে। এই লাইনগুলি নিঃসন্দেহে ভারতের মধ্যেই বিক্ষিপ্ত জনগোষ্ঠীর ভূমির বন্দোবস্তের জন্য নির্দেশিত, ভারতের বাইরে উপনিবেশ স্থাপনের জন্য নয়। হুইটলি এখানে পণ্ডিত ফিনোট (১৯১২) প্রদত্ত যুক্তিকে উল্লেখ করেছেন।

প্রথম হিন্দু রাজ্য ফু নানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শিলালিপি

ফু-নানের ওপর ভারতীয় সংস্কৃতির প্রভাবের সমস্ত প্রমাণের মধ্যে, দেশটিতে প্রাপ্ত তিনটি সংস্কৃত শিলালিপি অতুলনীয়। প্রথমটিতে দেবতা বিষ্ণুকে আহ্বান করে, তাঁকে ‘চক্রতীর্থস্বামী’ হিসাবে পূজা করা, দ্বিতীয়টিতে রাজকুমার গুণবর্মনের উল্লেখ এবং তৃতীয়টিতে বুদ্ধ, ধম্ম ও সংঘের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই সব প্রমাণ করে যে ষষ্ঠ শতাব্দীতে কম্বুজ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার আগে ফু-নান রাজ্যে ভারতীয় সংস্কৃতি স্বতন্ত্রভাবে স্থান তৈরি করেছিল। (শ্রীবাস্তব, পৃষ্ঠা ১৯)১৯

সংস্কৃতের প্রভাব বিস্তার

এই অঞ্চলে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস অর্থাৎ শিলালিপি, স্তম্ভলিপি, মন্দির গাত্রে খোদাই করা প্রচুর তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে আধুনিক কম্বোডিয়াতে, যেখানে আছে বিশ্ববিখ্যাত অ্যাঙ্কোর ওয়াট (মন্দির)। আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগের সংস্কৃত ভাষায় লিখিত শিলালিপি পাওয়া গেছে অ্যাঙ্কোর অঞ্চলে, যা সেই অঞ্চলে হিন্দুধর্ম পৌঁছে যাওয়ার অকাট্য প্রমাণ।

এই অঞ্চলে প্রাক-হিন্দু ধর্ম সমাজ কিন্তু আদৌ ‘অসভ্য’ বা ‘বর্বর’ ছিল না। ধান চাষ থেকে ধাতুর প্রাথমিক ব্যবহারের প্রচুর প্রমাণ এখানে পাওয়া গেছে। কিন্তু ছোটো ছোটো রাজত্বে বিভক্ত এই অঞ্চলে সেই অর্থে প্রতিষ্ঠিত কোনো ধর্ম ছিল না। ভারতের প্রাক-আর্য মানুষের মত অ্যানিমিসম – পাথর ও প্রকৃতি পূজা, পূর্ব-পুরুষদের পূজা ইত্যাদি চালু ছিল এখানেও।

শিলালিপির পাঠোদ্ধার এবং ভাষা সমস্যা

(১৮৬৩-১৯৩৫), খমের ইতিহাসের বিশ্ববিখ্যাত পণ্ডিত লুই ফিনত (১৮৬৪-১৯৩৫), সুমহান অ্যাঙ্কোর ওয়াটকে আধুনিক পৃথিবীর সামনে উপস্থিত করেন। সংস্কৃত ভাষায় অজস্র লেখ পাওয়া গেছে – দেবনাগরী বা নাগরী বর্ণমালা সপ্তম শতাব্দীতে বিকশিত ও নিয়মিত ব্যবহৃত হতে শুরু করে ১০০০ সাধারণ অব্দের মধ্যে। ভাষার লিখিত রূপের জন্য চাই বর্ণমালা। সংস্কৃতের কোন নিজস্ব স্থানীয় লিপি ছিল না বলে প্রথম শুরু থেকেই এটি বিভিন্ন লিপিতে লেখা হয়েছে। খমের লিপিটি প্রাচীন তামিল-ব্রাহ্মী লিপি থেকে উদ্ভূত পল্লব লিপি থেকে গৃহীত হয়েছিল, যা পঞ্চম ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে দক্ষিণ ভারত এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াযতেও ব্যবহৃত হত। ৬১১ সাধারণ অব্দের প্রাচীনতম খমের শিলালিপি পাওয়া গেছে কম্বোডিয়ার নম পেনের দক্ষিণে টাকেও প্রদেশের অ্যাঙ্কোর বোরেই জেলা থেকে। এই শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেছেন ফরাসি মহাপন্ডিত জর্জ কোডেস৪, বিদগ্ধ ভারততত্ত্ব বিশারদ সিলভা লেভি এবং খমের ইতিহাসের বিশ্বখ্যাত পন্ডিত হেনরি মুহত। তাঁরা তাঁদের গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশ করেছেন ফরাসি ভাষায়, যার অধিকাংশের ইংরেজি অনুবাদ হয়নি। যেগুলি হয়েছে, সেই সবও খমের > সংস্কৃত > ফরাসী > ইংরেজি ইত্যাদি পাঁচ হাত ঘুরে সামনে এসেছে, ফলে বিকৃতির সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে গেছে। অথচ শিক্ষিত ভারতীয়রা কিছুটা চেষ্টা করলেই বেশ কিছু শব্দের অর্থ সম্পর্কে ধারণা করতে পারবেন।  

     হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাবে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (যেমন রাজা, মন্ত্রী, প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ) স্থানীয় নামের পাশাপাশি সংস্কৃত নাম গ্রহণ করতেন। চতুর্থ শতাব্দীর একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। ফ্যান ফো-এর স্থলাভিষিক্ত হন ফ্যান হু-তা। ফ্যান হু-তা পরিচিত হন ভদ্রবর্মণ নামে, যিনি আধুনিক ভিয়েতনামের মাই সোন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন যা শিব ভদ্রেশ্বরকে উৎসর্গ করা হয়েছে। ভদ্রবর্মণের শিলালিপি হল প্রথম দলিল যা রাজদরবারে উপস্থিত নতুন ধর্মটির পরিচয় দেয়। শিলালিপিটি থেকে শিব-উমার ধর্মের আধিপত্য স্পষ্ট হলেও পক্ষপাতহীন ভাবে ত্রিমূর্তির অন্য দুই সদস্যকেও (অর্থাৎ ব্রহ্মা, বিষ্ণু) এখানে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। পরবর্তী কালে মাই সোনে-এ পাওয়া শিলালিপি দেখায় যে দেবতা ভদ্রেশ্বরকে একটি লিঙ্গ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে, স্পষ্টতই যা দূর ভারতের প্রাচীনতম পরিচিত রাজকীয় লিঙ্গ। (কোডেস পৃ ৪৮-৪৯)৪

চম্পা নগরীর (বর্তমান ভিয়েতনামের) বিশ্বখ্যাত হেরিটেজ সাইট, মাইসন মন্দির। রাজা ভদ্রবর্মণ (৩৮০-৪১৩ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক স্থাপিত শৈব মন্দির। (সূত্র- রমান বাবাকিন, আলামি স্টক ফটো)

কম্বোডিয়ার প্রাচীনতম শিলালিপি

আন্তন জাখারভ তাঁর গবেষণাপত্রে পুরোনো খমের শিলালিপির একটি ইংরেজি অনুবাদ এবং ভাষ্য দিয়েছেন। কম্বোডিয়ার প্রাচীনতম শিলালিপি প্রথম ১৯৪২এ জর্জ কোডেস দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। জাখারভ শিলালিপিটির সম্পূর্ণ অনুবাদ ২০১৬তে করেছিলেন, তিনি প্রাচীন খমেরের প্রচুর ব্যক্তিগত নাম এবং ডাকনামের ওপর আলোকপাত করেন। এই নামগুলি ছিল সেইসব ভৃত্য বা ‘দাস’ দলের যাঁদের বিভিন্ন দাতাদের দ্বারা বিভিন্ন দেবতাকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। অধিকাংশ নামের উৎস ছিল সংস্কৃত ; কিছু প্রাচীন খমের, অস্ট্রোনেশিয়ান এবং অস্ট্রোএশিয়াটিক নামও এখানে ছিল।

অ্যাঙ্কোর বোরেয়ি শিলালিপি কে ৬০০, নং ১০৫৪ ই (সূত্র- আন্তন জাখারভ)।

পাথরের পূর্ব মুখের লেখর অনুবাদ

কাজের পরিমাপ – দেবতার দাস .যাদের সাতজন নৃত্যরত মেয়ে, এগারোজন মহিলা গায়িকা, চারজন মহিলা এবং বাদক বিনা, কঞ্জন (খঞ্জন), বাইশ জন গৃহকর্মী মন্দির চত্বরের কাজের জন্য, ধান-ক্ষেতের জন্য ক্রীতদাস (শ্রে), একশত গরু, বিশটি জল মহিষ, কান্তোক-এ সতেরোটি ধান ক্ষেত, নারকেল গাছ সহ একটি পুকুর যুক্ত একটি ধানের ক্ষেত, একটি বাগান …।

নৃত্যরত মেয়েদের নাম হল চারুমতি, প্রিয়সেনা, অরুণামতি, মদনপ্রিয়া, সমরসেনা, বসন্তমল্লিকা। মহিলা গায়কদের নাম হল তন্বী, গুনাধারী, দায়িতাবতী, সারঙ্গী, পয়োধারী, রতিমতি, রতিবিন্দু, মনোবতী। কঞ্জনে মহিলা বাদক সখীপ্রিয়া এবং মধুরাসেনা। গার্হস্থ্য পুরুষ ভৃত্যদের নাম (বেশ কয়েকটি খমের নাম) কাঞ্চন, শিবদাস, সন্তোষ, প্রসাদ। ধানক্ষেতের কর্মীদের নাম হল (অধিকাংশ খমের নাম) জেষ্ঠবর্ম, দশমি,…। (জাখারভ, ২০১৯)

কিছু স্থানের নাম

পণ্ডিত লং সিয়াম, (১৯৯২) প্রাচীন কম্বুজদেশের শিলালিপিগুলি পরীক্ষা করেন, যা শত শত সংস্কৃত শব্দে ভরপুর। রইল তার কিছু উদাহরণ- বনপুর (‘জঙ্গলে ঘেরা শহর’), বীরপুর (বীরেদের শহর), শ্রেষ্ঠপুর, লিঙ্গাপুর, নাগপত্তন, মহেশ্বরালয় ইত্যাদি। শিবকে কেন্দ্র করে শিবলিঙ্গ, শিবপদ, শিবপুর), শিবগর্ভ এবং ব্রহ্মার নামে ব্রহ্মপুর ও ব্রহ্মপদ নামে জনপদ ছিল। আবার বিষ্ণু (বা হরি) ও শিব (বা হর) দুই জনকে নিয়ে একসঙ্গে তৈরি হল হরিহরালয়।

এছাড়াও নানা সংস্কৃত শব্দ থেকেও বিভিন্ন স্থানের নাম এসেছে; যেমন সুখালয়, মঙ্গলপুর, প্রশান্তগ্রাম, অমরালয়, অভয়পুর ইত্যাদি। অ্যাঙ্কোর বা তার আগের আমলে প্রতিষ্ঠিত রাজধানীগুলির নাম হল; ভবপুর (রাজা ভববর্মণের রাজধানী), শম্ভুপুর (মেকং নদীর তীরে), যশোধরাপুর (গরিমাযুক্ত সুন্দর শহর) ইত্যাদি।

এই সমস্ত নামগুলি প্রমাণ করে যে, সংস্কৃত শব্দকে খমের ভাষাতে গ্রহণ করা হয়েছিল, যা খমেরভাষী মানুষ বুঝতে পারতেন। প্রায় ১১০টি সংস্কৃত শব্দযুক্ত প্রশাসনিক এককও (গ্রাম, পুর, শহর, জেলা ইত্যাদি) শিলালিপিতে পাওয়া গেছে।

মন্দির নির্মাণে নিযুক্তদের ভৃত্য বা দাসদের নাম

কুন্থেয়া চম20 দেখিয়েছেন কোহ কের (তৎকালীন রাজধানী) দশম শতাব্দীতে জয়াবর্মন ১-এর অধীনে মাত্র দুই দশকের জন্য খমের রাজ্যের রাজধানী থাকলেও রাজকীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখানে বেশ কিছু বৃহৎ আকারের সামাজিক এবং ধর্মীয় নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছিল। মন্দির নির্মাণে নিযুক্ত ভৃত্য বা দাসদের নামেও ছিল ভারতীয় শব্দ; যেমন তীর্থ, নারায়ণ, পবিত্র, ধর্ম, সমভাব, ঈশানশিব, অমরভাব, বাসবপুর গ্রামের ব্রহ্মধর্ম্ম, উগ্রপুরা গ্রামের শিবপুত্র, ভবলক্ষ্মী ইত্যাদি।

এই উদাহরণ থেকে প্রমাণিত হয়, কেবলমাত্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মুষ্টিমেয় শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সংস্কৃত ভাষার ব্যবহার সীমাবদ্ধ থাকলেও এই ভাষায় লিখিত রামায়ণ, মহাভারত সহ হিন্দু পৌরাণিক কাহিনিগুলি এতটা জনপ্রিয় হয়েছিল যে সংস্কৃত ভাষা ঘেঁষা নামগুলি ঘরে ঘরে প্রবেশ করেছিল।

ভারত কী দিয়েছে

সিলভা লেভি লিখেছেন, ‘প্রজ্ঞার মাতা ভারত তার পৌরাণিক কাহিনি দিয়েছে তার প্রতিবেশীদের যারা সারা বিশ্বকে এটি শিখিয়েছে। আইন ও দর্শনের মাতা হিসেবে  ভারত এশিয়ার তিন-চতুর্থাংশকে একটি দেবতা, একটি ধর্ম, একটি মতবাদ, একটি শিল্প দিয়েছে। সে নিয়ে গেছে তার পবিত্র ভাষা, তার সাহিত্য, তার প্রতিষ্ঠানসমূহ, পরিচিত বিশ্বের সীমা হিসেবে ইন্দোনেশিয়ায় … দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয়দের আগমনের সঙ্গে আমেরিকায় ইউরোপীয়দের আগমনের তুলনা হতে পারে না। কারণ পৃথিবীর এই অংশে নবাগতরা অপরিচিত নতুন ভূমির আবিষ্কারক ছিল না’। (কোডেস, পৃ ১৪-১৫)

বিনা যুদ্ধে হিন্দু ধর্ম গৃহীত হয়েছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে

তাহলে কীভাবে ভারতীয় সংস্কৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূমিতে সঞ্চারিত হয়েছিল? সমগ্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া যথেষ্ট প্রাচীন একটি আর্থ-সামাজিক সংগঠনের উত্তরাধিকারী ছিল। দক্ষিণ-ভারতীয় বন্দরগুলির সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের মাধ্যমে, এখানকার শাসকরা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থানের বৈধতা দেওয়ার এবং সম্ভবত তাঁদের প্রজাদের নানা স্তরে বিন্যস্ত করার উপায় হিসাবে ভারতীয় চিন্তাধারার মূল্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাঁরা দরবারে নিয়মকানুন এবং আচার-অনুষ্ঠানে পারদর্শী ব্রাহ্মণদের ডেকে পাঠান। তুলনামূলকভাবে ছোট কিন্তু প্রভাবশালী এই গোষ্ঠীটিই জাদুকরী আচার প্রদর্শন, হিন্দু ধর্মীয় সূত্রের মাহাত্ম্য প্রতিষ্ঠা, শাসক পরিবারের জাঁকজমকপূর্ণ পৌরাণিক বংশতালিকা প্রস্তুত এবং ভারতীয় রাজ দরবারের সমতুল জটিল আনুষ্ঠানিকতার প্রচলন করে। এঁরাই রাজার দেবত্বের ধারণাকে জনমনে গেঁথে দিয়েছিলেন। গোটা দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় মূর্তি, মহাকাব্যিক চরিত্র ও কাহিনিকে জনপ্রিয় করে তোলার পিছনেও এঁদের অবদান ছিল । (হুইটলি, পৃষ্ঠা ১৮৬)১৭

হিন্দু ধর্মের অবসানের পর ইসলামের প্রবেশ

আজকের কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ডের মানুষের অধিকাংশ বৌদ্ধ। ভিয়েতনাম, লাওসে ধর্মবিশ্বাসীদের বহুলাংশ বৌদ্ধ। মালয়েশিয়াবাসী অধিকাংশ মুসলিম আর ইন্দোনেশিয়ার (৯৮ শতাংশ) মুসলিম জনসংখ্যা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এটা পরিষ্কার আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে হিন্দু প্রভাব মুক্ত হয় দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। উল্লেখযোগ্য হল; প্রথমত, এই বারের ধর্মান্তকরণও হয়েছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে, দ্বিতীয়ত, হিন্দু ধর্মের অবসান হলেও হিন্দু সংস্কৃত তথা তাঁর পৌরাণিক কাহিনি আজও টিকে আছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে। হিন্দু-মুসলমান সকলেই রামায়ণ এবং তাঁর কাহিনীগুলিকে সাংস্কৃতিক ভাবে গ্রহণ করেছেন, আত্মীকরণ করে মিশিয়েছেন নিজস্ব শিল্পরীতির সঙ্গে, তাই আজও এগুলি জনপ্রিয়। ইন্দোনেশিয়ার হিন্দু ‘প্রম্বানন’ মন্দির এরকমই প্রসিদ্ধ। সব ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষ এই উপস্থাপনায় অংশ নেন। ২৪০ জন অভিনেতা, নর্তক সহ এই ব্যালেটি গিনেস বুক দ্বারা স্বীকৃত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম কাল ধরে চলা মঞ্চ উপস্থাপনা হিসাবে ।২১,২২

সুতরাং, বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে দুটি ধর্ম প্রসারের পাশাপাশি রাখা উদাহরণ আমাদের শেখায় যে, মানুষের সংস্কৃতিতে নতুন ধর্মের প্রবেশ শরীরে ধাতু বা অগ্নি স্পর্শের মাধ্যমে না হয়ে হৃদয় ও মস্তিষ্কের পথে হওয়াটাই শ্রেয়।

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা শহরের মধ্যস্থলে অর্জুন বিজয় মূর্তি (সূত্র- উইকিমিডিয়া)

কম্বোডিয়ার সিয়াম রিপ অ্যাঙ্কোর শহরের ব্যস্ত রাজপথে বিষ্ণু স্কোয়ার (সূত্র- লেখক, ২০২৩)

তথ্যসূত্র

১। ক্লিয়েন এল. এস, পেরুনের পুনরুত্থান। পূর্ব স্লাভিক পৌত্তলিকতার পুনর্গঠনের জন্য, আর্কিওলজি, ইউরেশিয়া, সেন্ট পির্টাসবার্গ, রুশ ভাষায় প্রকাশিত, (যান্ত্রিক অনুবাদ), ২০০৪।

২। জাখারভ আন্তন‘, দি  অ্যাঙ্কোর বোরেয়ি ইন্সক্রিপ্সন, কে ৫৫৭/৬০০ ফ্রম কম্বোডিয়াঃ এন ইংলিশ ট্রান্সেলেশান এন্ড কমেন্টারি’, ভস্তক, সংখ্যা ১, পৃষ্ঠা ৬৬-৮০, ২০১৯।

৩। সিয়াম লং, খমের টোপোনিম অফ সান্সক্রিট অরিজিন (ইন ইন্সক্রিপশন অফ কাম্বোডিয়া ৬-১৪), আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়াম, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, পৃষ্ঠা ৭৯১-৮০০, চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৯২।

৪। কোডেস জর্জ, Les Etats hindouises d’Indochine et d’Indonesie (১৯৬৪), ইংরেজী অনুবাদ সুসান ব্রাউন, দি ইন্ডিয়ানাজড স্টেটস অফ সাউথইস্ট এশিয়া, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশানাল ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়া, ১৯৭৫।

৫। মর্গলেভিস্কি এইচ. ভি এবং কোনাট কে. জে, দি আর্লিয়েস্ট চার্চেস অফ কিয়েভ, স্পেক্যুলাম, ১১,৪, ১৯৩৬।

৬। সাংকৃত্যায়ন রাহুল – ঋগ্ববৈদিক আর্য, অনুবাদক মলয় চট্টোপাধ্যায়, চিরায়ত প্রকাশন, কলকাতা, ২০১৯।

৭। যোসেফ টনি, ‘আর্লি ইন্ডিয়ান্স’, ‘আদি ভারতীয়’ অনুবাদক সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী, মন্‌জুল পাবলিশিং হাউস, ভোপাল, ২০১৮।

৮। রুগ কলিন, https://vocab.chat/blog/russian-and-sanskrit.html

৯। আলেকজান্দ্রা কে, ভেলেস – ভূমি, জল এবং ভূগর্ভস্থের আকৃতি পরিবর্তনকারী স্লাভিক ঈশ্বর, স্লাভোরাম, ২০১৬।

১০। ঋগ্বেদ সংহিতা, হরফ প্রকাশনী, কলকাতা, ২০১৯।

১১। কাক সুভাষ, স্লাভস সর্চিং ফর দেয়ার গড, মিডিয়াম ডট কম, জুন ২০১৮। https://subhashkak.medium.com 

১২। হেলমোল্ড বোসাউ,ক্রনিকেল অফ দ্য স্লাভস, অনুবাদ ফ্রান্সিস জোসেফ তসকান, অক্টাগন বুকস, নিউ ইয়র্ক, ১৯৬৬। রেকর্ডস অফ সিভিলাইজেশান, সোর্স এন্ড স্টাডিস, নং ১২ হিসেবে প্রকাশিত।

১৩। ভাইজম্যান জি, পশ্চিম পোমেরেনিয়ায় ক্যাথলিক বিশপেরা, রক্লাওস্কি থিওলজিক্যাল রিভিউ, ১২(১)পৃষ্ঠা ১৩৯-১৫৬, ২০০৪ (গুগুল ট্রানন্সলেশান)।

১৪। পেটাজোনি রাফায়েল, এসেস অন হিস্ট্রি অফ রিলিজিয়ন, অধ্যায় ১৩, লিদেন, ১৯৫৪।

১৫। মারোয়াহ আর,ভারত-থাইল্যান্ড সম্পর্ক পুনর্নির্মাণ: একটি বহুপাক্ষিক এবং দ্বিপাক্ষিক দৃষ্টিকোণ, ওয়ার্ল্ড সায়েন্টিফিক, ২০২০। https://www.worldscientific.com/doi/pdf/10.1142/9789811212048_0001

১৬। মজুমদার রমেশ চন্দ্র, হিন্দু কলোনীস ইন দা ফার ইস্ট, জেনারেল প্রিন্টার্স এন্ড পাবলিশার্স, কলকাতা, ১৯৪৪; অনুবাদ- এস চৌধুরী- সুদূর প্রাচ্যে প্রাচীন হিন্দু উপনিবেশ, সম্বোধি পাবলিকেশানস প্রাইভেট লিমিটেড, কলিকাতা।

১৭। হুইটলি পল, দ্য গোল্ডেন খেরসোনিজ: ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের আগের মালয় উপদ্বীপের ঐতিহাসিক ভূগোলের অধ্যয়ন, ইউনিভার্সিটি অফ মালয়া প্রেস, কুয়ালালামপুর, ১৯৬১ বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ অধ্যায় ১২, পৃ ১৮৫।

পড়াশুনোর মধ্যে পড়াটা বেশি, শোনাটা কম, নিজেকে স্বশিক্ষিত বলেন। প্রথাগত শিক্ষা বিজ্ঞান শাখায় হলেও সমাজ সম্পর্কিত নানা বিষয়ে বহুদিন থেকে পড়ছেন। পেশাগত ভাবে শিক্ষকতা গ্রহণ করেছেন ত্রিশ বছর আগে।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।