সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সাংস্কৃতিক ইতিহাস

ভারতের আটটি শাস্ত্রীয় নৃত্যের অন্যতম হল মণিপুরি নৃত্য। মণিপুরি নৃত্যের জন্মস্থান উত্তর-ভারতের মণিপুর রাজ্যে যা কুয়াশাচ্ছন্ন পর্বতমালা, পাহাড় থেকে ঝরে পড়া ঝর্ণাধারা, সুবিস্তৃত সবুজ জঙ্গলে ভরা অণুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সজ্জিত। যে মণিপুর ১৮২৮ সালে রাজা গম্ভীর সিং-এর আমলে বর্মার আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল— সেই মণিপুরকে পরে দেশ স্বাধীন হলে ১৯৪৭ সালে রাজা বোধচন্দ্র সিং তাঁর রাজ্যকে স্বাধীন হিসাবে ঘোষণা করেন। অবশ্য দু’ বছর পর ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসাবে মণিপুরকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য এবং তারও পরে ১৯৭২ সালে পূর্ণরাজ্যের অধিকার পেয়েছিল।
বিশ্বসংস্কৃতির আঙ্গিনায় ভারতীয় সংস্কৃতি এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। প্রাচীনকাল থেকেই এই ভারতীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় সম্পদ যে সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, নৃ্ত্যকলা তা আর আলাদা করে উল্লেখের আপেক্ষা রাখে না। তবে এসবের মধ্যে নৃত্যকলাকেই সংস্কৃতির প্রাচীন ধারা হিসাবে মেনে নেওয়া হয়। এই নৃ্ত্যকলা প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় জনজীবনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে এসেছে। ভরতনাট্যম, কত্থক, কুচিপুড়ি, মণিপুরি, ওড়িশি, মোহিনীঅট্টম, কথাকলি — এই সাতটি শাস্ত্রীয় নৃ্ত্য ছাড়াও বর্তমানে অসমের সত্রীয়া নৃ্ত্যকেও শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ভারতের এই সাতটি শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যই আজ বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত। আর ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃ্ত্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত যে কত্থক নৃ্ত্যকলা তাতে সন্দেহ নেই। ভারতীয় সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক কত্থক তার আপন তালের ঝংকারে আপন ঠাটের মহিমায় সদা উজ্জ্বল!
কর্ণাটকের ভীমা নদীর তীরে কলবুর্গি (গুলবর্গা) জেলায় সন্নতি গ্ৰামে চন্দ্রলাম্বা পরমেশ্বরী মন্দির কমপ্লেক্স। বহু পুরোনো অনেকগুলো দেবী মন্দিরের সমষ্টি। এদের মধ্যেই ছিল এক কালী মন্দির। ১৯৮৬ সালে তার ছাদ ভেঙে পড়ে। মেঝে ফেটে যায়। ভাঙাচোরা অবশেষ পরিষ্কার করতে করতে বেরিয়ে আসে কিছু শিলালেখ- সম্রাট অশোকের। দেখা যায় কালীমূর্তির বেদীটি ছিল আসলে অশোকের শিলালেখ। এখান থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা আভাস পান এই মন্দিরের আশেপাশে ঐযুগের আরো বৌদ্ধ পুরাবস্তু থাকার। আরো খোঁড়াখুঁড়ির পর আরো প্রত্নসম্পদ পাওয়া যায়, এবং ইঙ্গিত পাওয়া যায় কাছেই কোনো বড়মাপের বৌদ্ধ স্তূপের অবশেষ আছে।
আজ থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগে এক রাজপুত্র মতান্তরে ধনাঢ্য ও সমাজে প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান জরা, মরণ ও দুঃখ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে তাঁর সম্পদ ও রাজসুখ ছেড়ে গৃহত্যাগী হয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন এবং দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার পর গৃহ থেকে বহু দূরে অধুনা গয়ার কাছে বুদ্ধগয়ায় এক অশ্বত্থ বৃক্ষের নীচে বোধিজ্ঞান লাভ করে বুদ্ধ হলেন। এরপরে তাঁর পরিনির্বাণ পর্যন্ত আগামী পঁয়তাল্লিশ বছর বহুজনের হিত ও সুখের জন্য এই বোধিজ্ঞান তিনি তাঁর হাজার হাজার অনুগামী ও শিষ্যদের মধ্যে প্রচারের মাধ্যমে এক ধর্মীয়, দার্শনিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিপ্লবের সূচনা করে নিজেকে ভগবান রূপে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই পর্যন্ত প্রায় আমরা সকলেই জানি।