সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সম্পাদকীয়

এপ্রিল ১৪, ২০২৩

শুভ নববর্ষ।

আজকে বাংলাদেশে পালিত হবে পয়লা বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। আবার আগামীকাল পশ্চিমবঙ্গে আড়ম্বরের সঙ্গে নববর্ষের সূচনা হবে।

এদিকের বাঙালি পেট পুজো করবেন মাছ, মাংস মিষ্টি দিয়ে। অবধারিতভাবে বাংলাদেশেও মানুষের পাতে থাকবে ভাতের সঙ্গে মাছ, বিশেষ করে শুঁটকি দিয়ে পান্তা ভাত। ৪০o সেলসিয়াসে এই খাবারের বিকল্প নেই। অবশ্য কড়ি গুনতে পারলে আকালের ইলিশ মাছও থাকতে পারে পান্তা ভাতের সঙ্গে।

এসব ছোটোখাটো পার্থক্য থাকুক, তবে বৈশাখ মাসে পয়লা বৈশাখ এবং ২৫শে বৈশাখ হল বাঙালির প্রাণের উৎসব। ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব, তাতে যোগ দেবেন সব ধর্মের সব অঞ্চলের বেবাক মানুষ।

বাংলা নববর্ষের আগে আসে চৈত্র সংক্রান্তি। চলে বিভিন্ন দোকান ও শিল্পশালা ধোয়া মোছা, পুরোনো জিনিসপত্র স্বল্পমূল্যে বিক্রিবাটা। চৈত্র সংক্রান্তির দিন গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা হয় গ্রামে গ্রামান্তরে। তারপরে নতুন বছরের প্রথম দিনে বিভিন্ন ব্যবসায়ী শুরু করেন হালখাতা খোলা, কোলাকুলি, মিষ্টি বিতরণ।

চলে আনন্দ, মেলা, যাত্রা, শোভাযাত্রা।

১লা বৈশাখ দুই বাংলাতেই রাস্তা জুড়ে চলবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রতি বছর বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে আয়োজিত বর্ষবরণ উৎসব। বিগত শতাব্দীর শেষ ভাগে বাংলাদেশের ঢাকা শহরে এই শোভাযাত্রা শুরু হয়,  একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব হিসাবে সারা দেশে এটি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের প্রতীকী শিল্প বহন করা হয়। বিভিন্ন রঙ-এর মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনে ২০১৬ সালের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ জাতিসংঘ সংস্থা ইউনেস্কোর “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য”র তালিকায় স্থান লাভ করে।

২০১৭ সাল থেকে বাংলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে শুরু হয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। এখন তা ছড়িয়ে গেছে শহরে, মফস্বলে।

খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, এই বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে বাংলাদেশে শুরু হয়েছে বিবাদ। শোভাযাত্রা বন্ধে ০৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে আইনি নোটিশ দিয়েছেন বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী। নোটিশে বলা হয়েছে, মঙ্গল শব্দটি ধর্ম সংশ্লিষ্ট শব্দ। মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পাখি, মাছ ও প্রাণীর ভাস্কর্য প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলিম জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হচ্ছে যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২-ক এর সরাসরি লঙ্ঘন।

অনুভূতির দোহাই দিয়ে এই শোভাযাত্রা যাতে বন্ধ না হয় এই আশাই করব দুই বাংলার মানুষ। আশা করব নতুন বছরে আমরা তর্ক করব, বিতর্ক হবে জমিয়ে। তবে তার সঙ্গেই থাকবে মিলনের সুর। যখন পৃথিবীতে কোনো গোষ্ঠীবদ্ধ ধর্ম ছিল না, তখনও মানুষ ছিল দুই বাংলা জুড়ে। সেই মানুষের মিলনোৎসব হয়ে উঠুক ১লা বৈশাখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।