সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সম্পাদকীয়

অক্টোবর ১৮, ২০২০

‘ইতিহাস তথ্য ও তর্ক’ ওয়েব পত্রিকা ও শারদোৎসব

শারদোৎসব এসে পড়েছে। তবে এবছরটা তো অন্যরকম। বিশ্বজুড়ে ভয়ংকর অতিমারী কোভিডের দাপটে সব কিছু ওলটপালট হয়ে গেছে। পশ্চিম বঙ্গে পরীক্ষিত কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিন লক্ষ, মৃত্যু পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তবুও অনেক নাগরিক এই উৎসবের আনন্দে সামিল হবেন। পুজোর সময়ে জনসমাগম ঘটলে আক্রান্তের হার দ্রুত গতিতে বাড়তে পারে। একই সময়ে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়লে সকলকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে।  তাই সাবধানে থাকুন।

এই ব্যতিক্রমী সময়ে ‘ইতিহাস তথ্য ও তর্ক’ বাংলা ওয়েব পত্রিকার দুই মাস পূর্ণ হল। ওয়েব পত্রিকাটি বর্তমানে ইতিহাসে আগ্রহী পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে, ইতিহাস বিষয়ক আকাদেমিক বিদ্বানদের এই পত্রিকা নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে।

এই একমাসে বিভিন্ন বিষয়ে নটি নতুন লেখা এসেছে। আলোক বিজ্ঞানের ইতিহাস: সাহা, বোস ও রামন, বুদ্ধ ও যীশুর প্রাচীনতম রূপের সন্ধানে, একটি দিন, মহেঞ্জোদারোর কঙ্কাল কথা, ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসচর্চা, চর্যাপদে সমাজচিত্র, একটি উত্তরণের ইতিকথা, সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস, আম্বেদকার ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ

এর থেকে ছটি লেখা নিয়ে এবারের সম্পাদকীয়তে আমরা আলোচনা করব।

মানব ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলির মধ্যে একটি। বিপ্লবের দু’শো বছর উৎযাপনের কালে কেবল ফরাসি বা ইংরেজি নয়, বাংলা ভাষাতেও বেশ কিছু মূল্যবান লেখাপত্র হয়েছে। অধ্যাপক সুভাষরঞ্জন চক্রবর্তী সেই ধারাকে এগিয়ে দিয়েছেন সমসাময়িক গবেষণাগুলির সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে। তার ‘ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসচর্চা‘ প্রবন্ধে বিপ্লবের শুরুর কাল থেকে গত শতকের ৮০-এর দশক পর্যন্ত বহু আলোচিত লেখাগুলি স্থান পেয়েছে। তবে প্রধানত গুরুত্ব পেয়েছে বিপ্লবের আলোকে মার্কসবাদী ও শোধনবাদী ব্যাখ্যার।

অধ্যাপক সুভাষরঞ্জন চক্রবর্তীকে বাংলার ইতিহাস পাঠকদের কাছে আলাদা করে পরিচয় করাতে যাওয়া অপ্রয়োজনীয়। ক্লাসরুম থেকে ছাপার অক্ষর এমনকি ভিজুয়াল মিডিয়া – সমস্ত মাধ্যমেই তিনি বাংলা ভাষায় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন বারবার।

গান্ধী, নেহরু ও আম্বেদকার। বিগত শতকের তিন মহীরুহ। নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে অতীতের পুনর্নির্মাণ এবং সে বিষয়ে জাতীয়তাবাদের বিভিন্ন বয়ানের মধ্যে তুলনা, আম্বেদকারের প্রেক্ষিতে অন্যান্যদের মনোভাব, বর্ণহিন্দু সমাজের চোখে আম্বেদকারে অবস্থান, তাকে নিয়ে অন্যান্যদের অসন্তুষ্টি অসামান্যভাবে আলোচিত হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুনাল চট্টোপাধ্যায়ের ‘আম্বেদকার ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ প্রবন্ধে। কুনাল চট্টোপাধ্যায় তথ্যনিষ্ঠ তীক্ষ যুক্তিজালে, স্বকীয় প্রখর দ্বন্দ্বমূলক চিন্তাধারায় স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে দলিত ও বর্ণহিন্দুদের অবস্থান, এদের চিন্তাধারার অবশ্যম্ভাবী পার্থক্য পর্যালোচনা করেছেন। এই অসামান্য প্রবন্ধটি পড়লে নিজের চিন্তাভাবনা যেন পূর্ণতা পায়। ধন্যবাদ কুনাল চট্টোপাধ্যায়কে।

পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে রবীন্দ্রনাথের উত্তরণ, পুরুষের গড়া পুরুষ-অনুশাসন থেকে তার উত্তরণ নিয়ে লিখেছেন নবজাগরণ নিয়ে দীর্ঘদিন চর্চাকারী শিবাশিস বসু ‘একটি উত্তরণের ইতিকথা। এ উত্তরণ রবীন্দ্রনাথের । ১৮৫৬ সালে বিধবা বিবাহ আইনসম্মত হয়েছে। ১৮৯৯ সালে বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হলে তার বিধবা পত্নী ষোলো বছরে সাহানা দেবীকে পুনর্বিবাহ দিতে তার পরিবার সচেষ্ট ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের ভূমিকা সেখানে ছিল বিধবা তরুণীর বিয়ে ভাঙানোতে। অথচ ১৯১০ সালে সেই রবীন্দ্রনাথ নিজেই উদ্যোগী হয়ে পুত্র রথীন্দ্রনাথের সাথে  বিধবা প্রতিমা দেবীর বিবাহ সম্পন্ন করেন। এই উত্তরণ বাঙালির ইতিহাসেরই অঙ্গ। শিবাশীষ বসুকে অভিনন্দন জানাই।

প্রাচীন মহেঞ্জোদারো আবিষ্কার ও তার খননের সময়ে ওই অঞ্চলে কিছু কঙ্কাল পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে প্রাপ্ত কঙ্কালে হিসেব, তাদের প্রাপ্তিস্থানের বর্ণনা, বর্তমানে তাদের অবস্থান ইত্যাদি জানতে পারবেন ‘মহেঞ্জোদারোর কঙ্কাল কথা প্রবন্ধটিতে। এটি লিখেছেন এই গ্রুপের নিয়মিত লেখক তুষার মুখোপাধ্যায়। এই কঙ্কালগুলি কাদের, কেন এভাবে ছড়িয়ে ছিল সেই প্রাচীন শহরের ধ্বংসস্তূপে? সে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হয়েছে অনেক জল্পনা। সেই জল্পনায় আছে প্রাচীন অপরাধের ইঙ্গিত।

বাংলায় পদার্থ বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসের একটি অধ্যায় নিয়ে এই লেখাটি ফিরে দেখেছে সত্যেন বোস, মেঘনাদ সাহা ও সি ভি রামন এর বিজ্ঞানচর্চাকে। কলকাতায় বসে এই তিন বিজ্ঞানী বিশ্ববিজ্ঞানের গতির সঙ্গে পথ হেঁটেছিলেন, তাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। সেই ইতিহাস এখানে উঠে এসেছে স্বাদু কাহিনীর মতো অনবদ্য উপস্থাপণে নাকি উপস্থাপনে?। আলোক বিজ্ঞানের ইতিহাস: সাহা, বোস ও রামন লেখাটি লিখেছেন বিজ্ঞান গবেষক ও রাজনৈতিক কর্মী মলয় তিওয়ারী

বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে ডাঃ  জয়ন্ত দাসেরসাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসার ইতিহাস। তিনি জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত। কিন্তু তার উৎসাহ আছে ইতিহাসেও। সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসাবিদ্যা কাকে বলে? কোথায় প্রথম সাক্ষ্যনির্ভর চিকিৎসা শুরু হয়? সিগারেট স্মোকিংয়ের সাথে ক্যান্সারের কোন যোগ আছে? পৃথিবীর প্রথম কন্ট্রোলড ড্রাগ ট্রায়াল কোথায় হয়েছে? আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে? তার সাথে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসের কী সম্পর্ক? শরীরের রক্তমোক্ষণ কি কোন সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি? চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসের না জানা এই সব বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ডাঃ দাসকে ধন্যবাদ।

সম্পাদকমণ্ডলীর তরফ থেকে সকল লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাই। আবারও অনুরোধ করি সাবধানতার সাথে শারদোৎসব পালন করুন।

আগামী মাসে আবার আমরা সচেষ্ট হবে নানা স্বাদের প্রবন্ধ নিয়ে আসতে।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।