সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সূচনাপর্ব এবং বিশ শতকের কুড়ির দশকের বঙ্গ রাজনীতি

সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সূচনাপর্ব এবং বিশ শতকের কুড়ির দশকের বঙ্গ রাজনীতি

সৌভিক ঘোষাল

জানুয়ারি ২২, ২০২১ ১২৪২ 3

[২০২১ সাল নেতাজী সুভাষচন্দ্রের জন্মের ১২৫ তম বার্ষিকী। এই উপলক্ষ্যে বাংলা ও দেশজুড়ে তাঁকে নিয়ে নতুন করে চর্চার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সুভাষচন্দ্র সম্পর্কে চর্চার সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে তাঁর রহস্যময় অন্তর্ধান ও তাঁকে নিয়ে গড়ে ওঠা নানা মিথ ও রহস্য কাহিনী। আই. এন. এ. র বীরত্বপূর্ণ লড়াই বা মহানিষ্ক্রমণ নিয়ে কিছু চর্চার বাইরে তাঁর রাজনীতির বিভিন্ন পর্বকে ইতিহাসের পটে রেখে সামগ্রিক আলোচনা বেশ কম। কয়েকটি পরস্পর সম্পর্কিত লেখায় আমরা সেই চর্চার দিকে জোর দিতে চাই। বর্তমান নিবন্ধটিতে তার সূচনা। এখানে আলোচিত হয়েছে বিশ শতকের বিশের দশকে তরুণ সুভাষচন্দ্র যখন আই. সি. এস. এর চাকরী ছেড়ে দেশের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, তখনকার রাজনৈতিক ইতিহাস। এই পর্বে সুভাষ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অনুগামী।]

১৮৯৭ সালে যে বছরে সুভাষচন্দ্রের জন্ম হয়, সেই বছরেই ব্রিটেনে এবং তার বৃহত্তম উপনিবেশ ভারতে একযোগে মহা সমারোহে পালিত হচ্ছিল মহারাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনের পঞ্চাশ বছর। সংবাদপত্রের পাতায় একদিকে যখন এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভা সমাবেশ আর উৎসবের বর্ণনা থাকত, তখন অন্যপাতায় থাকত ভারতজোড়া এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের নানা খবর ও ছবি। কোলকাতা থেকে পাঠানো এক তথ্যভিত্তিক রিপোর্টে রয়টার জানিয়েছিল ভারত জুড়ে সেই সময় সাড়ে সতেরো লক্ষ মানুষ নানা ধরনের ত্রাণশিবিরে থাকতেন। ব্রিটেনের প্রধান মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট জানিয়েছিল, ১৮৯০ এর দশকে ভারতে দুর্ভিক্ষে মৃত মানুষের সংখ্যা এক কোটি নব্বই লক্ষ, অর্থাৎ ব্রিটেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। শুধু ১৮৯৭ সালে, সুভাষচন্দ্রের জন্ম বছরেই সরকারী মতে দুর্ভিক্ষে মৃত মানুষের সংখ্যা ছিল ৪৫ লক্ষ, আর বেসরকারি মতে সেই সংখ্যাটা ছিল এক কোটি ষাট লক্ষের কাছাকাছি।

সুভাষচন্দ্রের বড় হয়ে ওঠা কটক শহরে, যা তখন উড়িষ্যা বিভাগের প্রশাসনিক কেন্দ্র। উড়িষ্যা বিভাগ তখন ‘বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি’র অন্তর্গত। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গ ভঙ্গের ঘোষণা যখন সারা বাংলাকে উত্তাল করে দিচ্ছে সেই সময় আট বছরের বালক সুভাষচন্দ্র পড়ছেন ব্যাপটিস্ট মিশন পরিচালিত প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপিয়ান স্কুলে। সেখানে সুভাষের বেশিরভাগ সহপাঠীই শুধু ইউরোপীয় ছিলেন তাই নয়, পাঠ্যক্রমটিও ছিল লাতিন বা বাইবেল থেকে শুরু করে ইংরাজিতে পরিপূর্ণ। কোনও দেশীয় ভাষা সংস্কৃতি শিক্ষার জায়গা সেখানে ছিল না। স্কুলের ভেতর আর বাইরের এই দুই আলাদা জগতের কথা পরবর্তীকালে সুভাষচন্দ্র তাঁর স্মৃতিকথা অ্যান ইন্ডিয়ান পিলগ্রিমস এ জানিয়েছিলেন। ১৯১১ সালে চোদ্দ বছরের সুভাষ রাজা পঞ্চম জর্জের রাজ অভিষেকের ওপর এক প্রবন্ধ প্রতিযোগিতাতেও নাম লিখিয়েছিলেন। পরের বছরে, ১৯১২ সালে তাঁর বাবা, কটকের সরকারি উকিল জানকীনাথ বসু পেয়েছিলেন রায়বাহাদুর উপাধি।

অন্যদিকে ১৯১২ সালেই সুভাষের মানসজগতে বড় ধরনের বদল আসে স্বামী বিবেকানন্দের চিঠি আর বক্তৃতা খুঁটিয়ে পড়ার মধ্যে দিয়ে। ‘আত্মনো মোক্ষার্থোং জগদ্ধিতায়’ – নিজের মুক্তি ও জগতের সকল মানুষের সেবার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হবে – এই ভাবনায় তিনি অনুপ্রাণিত হন। সেই সঙ্গে এও তাঁর মনে হতে থাকে মানুষের সেবার সেরা পথ হল দেশের সেবা। তখন তাঁর বয়েস পনেরো বছর।

১৯১৩ সালের মার্চে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করে কলকাতায় চলে এলেন সুভাষ, দর্শন নিয়ে পড়াশুনো করতে ভর্তি হলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে। এই সময়ে অধ্যাত্মবাদের প্রতি তাঁর ভালোরকম আকর্ষণ ছিল। ১৯১৪ র গ্রীষ্মের ছুটিতে বাবা মাকে না জানিয়েই এক বন্ধুর সঙ্গে হৃষিকেশ, হরিদ্বার, মথুরা, বৃন্দাবন, কাশী, গয়ার মতো ভারতের প্রধান তীর্থক্ষেত্রগুলি ঘুরেছিলেন তিনি। কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলেও তাঁকে বেশি আকর্ষণ করেছিল অরবিন্দ ঘোষের লেখালেখি। ততদিনে অরবিন্দ সক্রিয় বিপ্লবী জীবন ছেড়ে অবশ্য পাড়ি দিয়েছেন ধর্মসাধনার পথে।

১৯১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্সির শিক্ষক ওটেন সাহেবের ছাত্রদের প্রতি দুর্ব্যবহার, ছাত্রদের তরফে ওটেন সাহেবকে মারধোর এবং ছাত্রনেতা হিসেবে সুভাষচন্দ্রের দোষী সাব্যস্ত হয়ে বরখাস্তের ঘটনাবলীগুলি ঘটে। এই ঘটনা সুভাষচন্দ্রের জীবনের মোড় বদলে বিরাট ভূমিকা নেয়। এক বছর বরখাস্ত থাকার পর সুভাষ নতুন করে ভর্তি হন স্কটিশ চার্চ কলেজে, সেখান থেকেই স্নাতকোত্তীর্ণ হন। ১৯১৯ এ ইংল্যান্ড যাত্রা করেন আই. সি. এস. পরীক্ষার প্রস্তুতির উদ্দেশ্যে। ২৫ অক্টোবর লন্ডন পৌঁছন, সেখান থেকে যান কেমব্রিজে, ভর্তি হন দর্শনের পাঠ্যক্রমে। তাঁর আই. সি. এস. এর প্রস্তুতিও চলতে থাকে। পাঠ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল ইংরাজি, সংস্কৃত, দর্শন, ব্রিটিশ আইন, রাষ্ট্রবিদ্যা, আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস, ইংলন্ডের ইতিহাস, অর্থনীতি ও ভূগোল।

সুভাষচন্দ্রের প্রথম ব্রিটেন বাস পর্বে তখন শুরু হয়ে গিয়েছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। লিবারাল এবং কনজারভেটিভ পার্টি তখন যৌথভাবে ব্রিটেনের ক্ষমতায় আসীন। গোটা পৃথিবীর মতো ১৯১৭ র রুশ বিপ্লবের ছায়া পড়ছে ব্রিটেনেও। সেখানে উত্থান ঘটছে লেবার পার্টির। খনি শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকরা একের পর এক ধর্মঘটে সামিল হচ্ছেন। আয়ারল্যান্ড, মিশর ও ভারতের মতো ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে শুরু হচ্ছে বিদ্রোহ। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই সময়পটে কেমব্রিজ বাস পর্বে তরুণ সুভাষের সময় কাটত বন্ধুদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ভারত ও বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে নানা ধরনের আলাপচারিতা ও রাজনীতি চর্চায়। বাংলার স্বদেশী আন্দোলন ছিল তার অনেকটা জুড়ে।

আই. সি. এস. এর প্রস্তুতির জন্য মাত্র আট মাস সময় পেয়েছিলেন সুভাষ কিন্তু অসামান্য মেধার পরিচয় দিয়ে তিনি কৃতিত্বের সাথে এই পরীক্ষায় শুধু উত্তীর্ণই হলেন না, লাভ করলেন চতুর্থ স্থান। ততদিনে দেশের কাজ করার জন্য তিনি শুধু উন্মুখই হয়ে ওঠেননি, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতা সম্পর্কে হয়ে উঠেছেন প্রবল বিদ্বিষ্ট। ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে চাকরি করা নিয়ে মনের ভেতরে প্রবল আপত্তি তৈরি হল তাঁর। বাবা জানকীনাথ ভীষণভাবেই চেয়েছিলেন সুভাষ আই. সি. এস. এর চাকরী করুন। নিজের মনের গতি ও বাবার আগ্রহের বিপরীত স্রোত তাঁকে এক প্রবল দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। দাদা শরৎচন্দ্র বসুর সঙ্গে অনেক পরামর্শ করে সুভাষচন্দ্র শেষপর্যন্ত ঠিক করলেন তিনি আই. সি. এস. এর চাকরী ছেড়ে দেশের কাজেই আত্মনিয়োগ করবেন। অত্যন্ত সফল এক ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন দাশও তখন ব্যারিস্টারি ছেড়ে সর্বক্ষণের রাজনৈতিক জীবন বেছে নিয়েছেন, হয়ে উঠেছেন জনগণের প্রিয় দেশবন্ধু। অসহযোগ আন্দোলনের উত্তাল পরিস্থিতিতে ব্রিটেনে থাকতে থাকতেই আই সি এস চাকরী ছেড়ে দেশের কাজে যোগ দিলেন সুভাষ। দেশে ফেরার আগেই পত্রযোগে পরিচিত হলেন সে সময়কার বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের সঙ্গে। প্রত্যক্ষ সাক্ষাতের আগে রাজনীতি ও কংগ্রেসের কাজ সম্পর্কে গভীর ও ব্যাপক আলোচনা পত্রযোগেই শুরু হল তাঁদের মধ্যে। ব্রিটেন থেকে যে জাহাজে দেশে ফেরেন সুভাষ, সেই জাহাজেই ফিরছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথও। ফেরার পথে কংগ্রেস, জাতীয় রাজনীতি নিয়ে সুভাষের অনেক কথা হয় কবিগুরুর সঙ্গেও। আর দেশের মাটিতে পা দিয়ে, বোম্বে বন্দরে নেমে সেদিনই সুভাষ দেখা করতে যান মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মত ও পথ নিয়ে অনেক কথা হয় দুজনের মধ্যে। গান্ধী সুভাষচন্দ্রকে পরামর্শ দেন বাংলার বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।

১৯১৯ সালে যে মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার এসেছিল, তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিকে যতটা সম্ভব নিষ্কণ্টক করা এবং ভারতীয় রাজনীতির অভিমুখকে প্রাদেশিক ও স্থানীয় দিকে ঠেলে দেওয়া। যুদ্ধকালীন বাস্তবতার কথা বলে ১৯১৯ এর মার্চেই পাশ হয়েছিল রাওলাট আইন, যা বিনা বিচারে ভারতীয়দের কারাবন্দী করে রাখার অধিকার দিয়েছিল প্রশাসনকে। এর প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে আয়োজিত এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় অন্তত ৩৭৯ জন নারী পুরুষকে, আহত হন ১২০০ র ও বেশি। এই সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জের দেওয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে তুরষ্ক দখল করা হলে গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতীয় মুসলিমরাও প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। গান্ধীজীর নেতৃত্বে একযোগে চলতে থাকে অসহযোগ ও খিলাফৎ আন্দোলন। এই আন্দোলন চলাকালেই আই. সি. এস. এর চাকরী ছেড়ে দেশে ফেরেন সুভাষ। দেশবন্ধু তাঁকে যুক্ত করে দেন বাংলার অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে। বাংলার প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির প্রচারের কাজে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লেখালেখির কাজে সুভাষচন্দ্রের দক্ষতার প্রকাশ ঘটে এই সূত্রে। একটি নবগঠিত ন্যাশানাল কলেজের প্রিন্সিপালও করা হয় তাঁকে। তবে জাতীয় শিক্ষা কর্মসূচী সেইসময় ততটা বিকশিত হতে পারেনি। বরং বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বিলিতি কাপড় পোড়ানোর আন্দোলন। ১৭ নভেম্বর ১৯২১ এ দেশব্যাপী এক সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয় কংগ্রেস, ব্রিটিশ রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স অব ওয়েলস এর ভারতে আগমন উপলক্ষ্যে। সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে কংগ্রেস ভলান্টিয়াররা এইদিন গোটা কলকাতাকে সেদিন স্তব্ধ করে দিতে সক্ষম হন। সরকার এর প্রতিক্রিয়ার সমস্ত ভলান্টিয়ার গোষ্ঠীকে বে আইনি বলে ঘোষণা করে। একে অগ্রাহ্য করে পাঁচ জনের ছোট ছোট দল তৈরি করে প্রকাশ্য রাস্তায় ভলান্টিয়াররা খাদির কাপড় বিক্রি করতে নামলেন। দেশবন্ধুর স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে গ্রেপ্তার করা হলে শহর জুড়ে বিক্ষোভ ধূমায়িত হয়ে ওঠে। ১০ ডিসেম্বর তারিখে সরকার দেশবন্ধু ও সুভাষচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করে। যে বাবা সুভাষচন্দ্রের আই সি এস এর চাকরী ছাড়ার সিদ্ধান্তকে তখন সমর্থন করতে পারেননি, সেই জানকীনাথই এর দুদিন পরে লিখলেন অপর পুত্র শরৎ বসুকে – “সুভাষের জন্য আমরা গর্বিত”। দীর্ঘ আট মাস জেলে চিত্তরঞ্জনের সঙ্গে থাকলেন সুভাষ, দেশবন্ধুকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেলেন। ১৯২২ এর ফেব্রুয়ারিতে চৌরিচৌরার একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেন গান্ধী, অন্য কারো সঙ্গে আলোচনা না করেই। জেলবন্দী চিত্তরঞ্জন ও সুভাষ এতে মারাত্মক ক্ষুব্ধ হলেন। চিত্তরঞ্জন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বসে মনে করলেন, গান্ধীজী এইভাবে আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার পর আইনসভা বয়কট করে যাওয়ার আর কোনও মানে হয় না। ধীরে ধীরে তাঁর ভাবনাচিন্তা গান্ধীর মত ও পথের চেয়ে খানিকটা অন্য খাতে বইতে শুরু করল কোনও কোনও প্রশ্নে। সেইসঙ্গে তাঁর নেতৃত্বে বাংলার রাজনীতিও সর্বভারতীয় গান্ধী নেতৃত্বাধীন রাজনীতির থেকে কিছু কিছু প্রশ্নে আলাদাভাবে এগোতে চাইলো।

বাংলায় ১৯২০ র দশকে এক নতুন ধরনের রাজনৈতিক ধারার উদ্ভব বিকাশ আমরা লক্ষ করি মূলত দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বেই। সুভাষচন্দ্র এই পর্বে তাঁর প্রধান সহযোগী। ঐতিহাসিক সব্যসাচী ভট্টাচার্য তাঁর দ্য ডিফাইনিং মোমেন্টস ইন বেঙ্গল (১৯২০-৪৭) নামের বিখ্যাত বইতে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বাংলার রাজনীতিতে সেই সময় এক নতুন প্রাদেশিক আবেগের জোয়ার দেখা দিয়েছিল। সব্যসাচীবাবু মনে করেছেন তা ভারতীয় জাতিয়তাবাদের সাথে সাংঘর্ষিক ছিল না সত্য, কিন্তু সর্বাংশে তার অনুগামী না হয়ে নিজস্ব পথে চলার চেষ্টা করেছিল। এই প্রাদেশিক চেতনার বিকাশ যে শুধু বাংলাতেই হয়েছিল তা নয়, ভারতের অন্যান্য কিছু অঞ্চলেও তা বিকাশ লাভ করেছিল। রাজনীতির আঙিনার বাইরে সাহিত্য সংস্কৃতির দিকপাল লেখকদের মধ্যেও এর প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। এই সম্পর্কে সে সময়ের প্রভাবশালী সাহিত্যিক, বিখ্যাত সবুজপত্র পত্রিকার সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর লেখালেখির সাক্ষ্য আমরা গ্রহণ করতে পারি।

এই বৈশিষ্ট্য সবচেয়ে তীক্ষ্ণ ও প্রভাবসঞ্চারীভাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল অবশ্যই চিত্তরঞ্জন দাশের মাধ্যমে। সেই সময় বাংলায় কংগ্রেসের পুরনো দিনের নেতৃত্ব উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখদের প্রভাব কমেছে এবং চিত্তরঞ্জন বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সামনে এসেছেন। নতুন ধরনের এক রাজনীতি চিত্তরঞ্জনের মধ্যে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। সে সময় নির্বাচনী রাজনীতির আত্মপ্রকাশের কারণে আম জনতাকে প্রভাবিত করার একটা তাগিদ উদ্ভূত হয়েছিল। প্রবীণ কংগ্রেসিদের মতো বিলেত ফেরৎ নামী ব্যারিস্টার হলেও চিত্তরঞ্জন রাজনীতির ভাষা হিসেবে ইংরেজির জায়গায় বাংলাকে স্থান করে দিলেন। পাশাপাশি বাংলার দুই প্রধান সম্প্রদায় হিন্দু মুসলিমের ঐক্যের জায়গাটিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিলেন।

মর্লে মিন্টো সংস্কারের মধ্য দিয়ে আসা পৃথক ধর্মভিত্তিক নির্বাচন এর সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তৈরি হওয়া উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে হিন্দু মহাসভার জন্ম হয়েছিল ১৯০৯ সালে। হিন্দু সমাজের ভেতর থেকে নানা উগ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছিল এবং মর্লে মিন্টো সংস্কারে ধর্মভিত্তিক নির্বাচনের প্রস্তাব এলে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণি, যারা ছিল মূলত উচ্চবর্ণ হিন্দু, তারাই বেশি সংখ্যায় সেসময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ছিলেন। এই ভদ্রলোক শ্রেণি তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয় থেকে কীভাবে অধিকার সংরক্ষণের প্রশ্নে এককাট্টা হয়েছিল, তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন জয়া চ্যাটার্জী তাঁর বেঙ্গল ডিভাইডেড বইতে।  অন্যদিকে চরম উগ্রবাদীরা মনে করেছিলেন হিন্দুদের একটি রাজনৈতিক সংগঠন দরকার এবং কংগ্রেস তা হতে পারে না। এই ভাবনা থেকেই হিন্দু মহাসভা জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু হিন্দু মহাসভা সে সময়ে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয়নি। ধর্মীয় উন্মাদনার মুখে দাঁড়িয়েও হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি সংক্রান্ত সঙ্কটের বাস্তব দিকগুলিকে বোঝবার ও তার ভিত্তিতে আন্তরিকভাবে কাছাকাছি আসার একটা আগ্রহ লক্ষ্য করা গিয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের মধ্য, আর এই এই গোটা প্রক্রিয়ার পুরোভাগে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। গোরা, ঘরে বাইরের মত উপন্যাসে বা অসংখ্য কবিতায় প্রবন্ধে হিন্দু সমাজের মধ্যেকার জরুরী আত্মসমালোচনার কাজটা শুরু করেছিলেন তিনি। মহাত্মা গান্ধীর জাতীয় রাজনীতিতে আবির্ভাবের পর, বিশেষত গণ আন্দোলনের পর্ব শুরু হলে ধর্মীয় উগ্রতার পরিবেশ অনেকটা কমে আসে। লক্ষনৌ চুক্তি (১৯১৬) র সূত্রে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সামনের সারির নেতারা প্রথমবারের জন্য কাছাকাছি আসেন এবং সম্প্রীতি ও সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হয়। সম্প্রীতির পরিবেশ আরো জোরালো হয় ১৯১৯ এ অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফৎ আন্দোলন একযোগে হাত মিলিয়ে চলতে শুরু করলে। সম্প্রীতির পরিবেশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জমিকে অনেকটাই কেড়ে নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং ১৯২২ সালে চৌরিচৌরার একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার আকস্মিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন গান্ধীজী। অচিরেই ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলনে শুরু হয় ভাঁটার পর্ব, হিন্দু মুসলিম ঐক্য ভেঙে পড়ে এবং এই পর্বেই ১৯২৫ এ জন্ম নেয় আর এস এস, নতুন করে বিকশিত হয় হিন্দু মহাসভা।

সাম্প্রদায়িক বিরোধকে আরো বাড়িয়ে তোলার কাজটা একদিকে হিন্দু মহাসভা, আর এস এর মতো সংগঠনগুলি করতে চাইছিল সাভারকর, হেডগাওয়ার প্রমুখদের নেতৃত্বে এবং মুসলিম লীগের একাংশের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। কংগ্রেসের অনেক নেতাও সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে যথেষ্ট বিপদজনক অবস্থান নিচ্ছিলেন। এই জটিল ও বিপদজনক সময়ে বাংলা তথা ভারতের রাজনীতিতে হিন্দু মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কাজটা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে করতে চেয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন দাশ ও তাঁর অনুগামীরা। কংগ্রেসের ভেতর থেকেই তাঁরা স্বরাজ্য দল বলে আলাদা একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে এই ব্যাপারে এগিয়ে ছিলেন। তরুণ সুভাষ ছিলেন এইসমস্ত উদ্যোগে দেশবন্ধুর অন্যতম সহযোগী।

স্বরাজ্য দল তৈরির প্রয়োজন চিত্তরঞ্জন অনুভব করেন গান্ধীর নেতৃত্বাধীন সর্বভারতীয় কংগ্রেসের বেশ কিছু রণকৌশলের বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে। অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেস আইনসভা বর্জন করে। অসহযোগ আন্দোলন ও খিলাফৎ আন্দোলন চলাকালে এই নীতি দেশবাসীকে আকৃষ্ট করতে পেরেছিল। কিন্তু চৌরিচৌরার ঘটনার পর গান্ধীজী অকস্মাৎ অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এক নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ জেলে থেকেই আন্দোলনের নতুন কর্মপদ্ধতির কথা চিন্তা করেন। তিনি ইতিপূর্বে কংগ্রেসে গৃহীত আইনসভা বর্জনের সিদ্ধান্ত পরিত্যাগ করে অবিলম্বে আইনসভায় যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাঁর মতে কংগ্রেসের উচিত নির্বাচনে যোগদান করে আইনসভার সব আসন ও সেই সঙ্গে অন্যান্য স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির নির্বাচিত আসনগুলি দখল করা। এভাবে সরকারি ক্ষমতা করায়ত্ত করে যথাসম্ভব গঠনমূলক কাজকর্মে ব্রতী হওয়া ও আইনসভায় অংশগ্রহণ করে নিরন্তর বাধাদানের মাধ্যমে সরকারি কাজকর্মে অচলাবস্থার সৃষ্টি করা ছিল তাঁর রাজনৈতিক রণকৌশল। চিত্তরঞ্জন দাশের এই নতুন পরিকল্পনা আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি নেতাদের অনেকেরই পছন্দ হয়। অনেকে আবার গান্ধীজীর অসহযোগ নীতি চালিয়ে যাবার পক্ষপাতী ছিলেন । এ নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যে দুটি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। যাঁরা চিত্তরঞ্জন দাশের নতুন পরিকল্পনার সমর্থক তাঁরা পরিবর্তনকামী নামে পরিচিত হলেন। মতিলাল নেহরু, মদনমোহন মালব্য, শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার, বিটলভাই প্যাটেল, এন.সি. কেলকার, হাকিম আজমল খাঁ, সত্যমূর্তি জয়াকর প্রমুখ এই মতের সমর্থক ছিলেন। অন্য যাঁরা এই মতের বিরোধী ছিলেন তাঁরা পরিবর্তন বিরোধী রূপে পরিচিত হলেন। চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী, ডক্টর রাজেন্দ্রপ্রসাদ, কে.আর. আয়েঙ্গার, ডক্টর আনসারি, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল প্রমুখ নেতা এই দলে ছিলেন।  ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের গয়া অধিবেশনে পরিবর্তনকামী গোষ্ঠী তাঁদের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তুমুল তর্কাতর্কি হয়। শেষে পরিবর্তনকামীরা তাঁদের প্রস্তাব অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হওয়ায় এই অধিবেশনের সভাপতি তথা নতুন পরিকল্পনার রূপকার দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ কংগ্রেস ত্যাগ করেন ও ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১লা জানুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে ‘স্বরাজ্য দল‘ গঠিত হয়। চিত্তরঞ্জন দাশ ও মতিলাল নেহরু যথাক্রমে এর সভাপতি ও সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে অবশ্য স্বরাজ্য দল কংগ্রেসের মঞ্চের মধ্যে থেকেই কাজ করে। স্বরাজ্য দলের সদস্যরা সারা ভারত পরিভ্রমণ করে স্বরাজ্য দলের নীতি ও কর্মসূচি জনসমক্ষে প্রচার করেন।

স্বরাজ্য দলের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি ছিল—

(১) নির্বাচনের মাধ্যমে আইনসভায় যোগদান করে সভার কাজকর্মে অবিরাম বাধাদান করে প্রশাসনিক অচলাবস্থা তৈরি।

(২) সরকারি বাজেট প্রত্যাখ্যান করে জাতীয় বাজেট গ্রহণে সরকারকে বাধ্য করা ।

(৩) নানা প্রকার বিল ও প্রস্তাব উত্থাপন করে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের অগ্রগতি ঘটাতে সাহায্য করা।

(৪) জাতীয় স্বার্থে নতুন অর্থনীতি রচনা করে বিদেশি অর্থনৈতিক শোষণ বন্ধ করা ।

(৫) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থেকে স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার লাভ করা প্রভৃতি ।

১৯২৩ সালে বাংলার আইনসভায় যে নির্বাচন হল, তাতে স্বরাজ্য দল হিন্দু মুসলমান দুই সম্প্রদায়েরই ভালোরকম সমর্থন পেলেন। আইনসভার ভেতরে তারা নানা বিষয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিলেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ভোটাভুটিতে সরকারকে হারিয়ে দিতে পারলেন। সুভাষচন্দ্র স্বরাজী ও কংগ্রেসি – উভয় পরিচয়েই কাজ করতে থাকলেন। তিনি আগে থেকেই সম্পাদনা করছিলেন বাংলার কথা নামে পত্রিকাটি। এর পাশাপাশি এই সময় থেকে তিনি একটি নতুন ইংরাজি পত্রিকার প্রকাশ শুরু করলেন, যার নাম ফরওয়ার্ড। বাংলার প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্বভারও এই সময় এসে পড়ল সুভাষের ওপর। এই নতুন দায়িত্ব পালনের সূত্রে তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় পাওয়া গেল। ১৯২৩ সালেই পাশ হল সংশোধিত কলকাতা মিউনিসিপ্যাল আইন। কলকাতা কর্পোরেশনের নির্বাচনের পথ প্রস্তুত হল। নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে স্বরাজ্য দল জিতল, মেয়র নির্বাচিত হলে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। ডেপুটি মেয়র হলেন হুসেন শহিদ সোহরাবর্দি। শরৎচন্দ্র বসু অল্ডারম্যান নির্বাচিত হলেন। সুভাষচন্দ্রকে দেশবন্ধু মিউনিসিপ্যাল প্রশাসনের প্রধান এক্সিকিউটিভ অফিসার নিয়োগ করলেন। বিশেষ উৎসাহের সঙ্গে নগর প্রশাসনের কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করলেন। বিশেষ মনযোগ দিলেন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দিকে। প্রতিটি অঞ্চলে তৈরি হল স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেট বলে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশের পরিকল্পনা করলেন সুভাষ, বছরের শেষ দিকে তার প্রথম সংখ্যা বেরোল। শহরের জল, আলো, রাস্তা সহ নগর পরিকাঠামো নির্মাণের কাজে বিশেষ গতি এল তার তদারকিতে। ভারতীয়রা যে সমধিক যোগ্যতায় প্রশাসন চালাতে পারে সেটা দেখানোর ক্ষেত্রে তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহ ছিল।

তবে এই সময়ে দেশবন্ধু ও তাঁর অনুগামীদের কার্যকলাপে তথা বাংলার প্রাদেশিক রাজনীতিতে সবচেয়ে বেশি জোর পড়ে হিন্দু মুসলিম ঐক্যের দিকটির ওপর। দেশবন্ধু, সুভাষ সহ স্বরাজ্য দলের নেতাদের  অভিমত ছিল যে, বঙ্গীয় আইন পরিষদে বলিষ্ঠ  গ্রুপ সৃষ্টিকারী মুসলিম সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা ব্যতিরেকে স্বরাজবাদীদের বাধাদানের নীতি সফল হবে না। বস্তুতপক্ষে চিত্তরঞ্জন ছিলেন রাজনৈতিক বাস্তববাদী এবং প্রচন্ড বিরোধিতার মুখেও তিনি নিজ অবস্থান থেকে কখনও বিচ্যুত হতেন না। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অতি প্রয়োজনীয় দিকটির বাস্তব সমাধানের উদ্দেশ্য তিনি সুভাষ ও অন্যান্যদের সহায়তা নিয়ে এক বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে বাংলার মুসলমানদের আস্থাভাজন হয়ে তাদেরকে নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করেন। এই চুক্তিটিই বেঙ্গল প্যাক্ট নামে পরিচিত। ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত স্বরাজ্য পরিষদ দলের এক সভায় চুক্তিটির শর্তাবলি গৃহীত হয়।

এ সভায় সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত হয় যে, প্রদেশে সত্যিকারের স্ব-নিয়ন্ত্রিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেই এ চুক্তি কার্যকর হবে। চুক্তিটি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির ১৯২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর তারিখের সভায় অনুমোদনও লাভ করে। চুক্তিটির বিভিন্ন শর্তের মধ্যে ছিল –

১.    বঙ্গীয়-আইন সভায় প্রতিনিধিত্ব পৃথক নির্বাচকমণ্ডলীর মাধ্যমে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।

২.    স্থানীয় পরিষদসমূহে প্রতিনিধিত্বের অনুপাত হবে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের শতকরা ৬০ ভাগ এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শতকরা  ৪০ ভাগ।

৩.    সরকারি চাকরির শতকরা পঞ্চান্ন ভাগ পদ পাবে মুসলমান সম্প্রদায় থেকে। যতদিন ঐ অনুপাতে না পৌঁছানো যায়, ততদিন মুসলমানরা পাবে শতকরা আশি ভাগ পদ এবং বাকি শতকরা কুড়ি ভাগ পাবে হিন্দুরা।

৪.    কোন সম্প্রদায়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ৭৫ শতাংশের সম্মতি ব্যতিরেকে এমন কোন আইন বা সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করা যাবে না, যা ঐ সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্বার্থের পরিপন্থী।

৫.    মসজিদের সামনে বাদ্যসহকারে শোভাযাত্রা করা যাবে না।

৬.    আইন সভায় খাদ্যের প্রয়োজনে গো-জবাই সংক্রান্ত কোন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে না এবং আইন সভার বাইরে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সমঝোতা আনার প্রচেষ্টা চালানো অব্যাহত থাকবে। এমনভাবে গরু জবাই করতে হবে যেন তা হিন্দুদের দৃষ্টিতে পড়ে তা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করে।  ধর্মীয় প্রয়োজনে গরু জবাইয়ের ব্যাপারে কোন হস্তক্ষেপ করা যাবে না।

দুঃখের বিষয় যে, বাংলায় কংগ্রেসের অনেক নেতা চুক্তিটির বিরোধিতা করে। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, বিপিনচন্দ্র পাল ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণির হিন্দুরা এটির বিপক্ষে অনমনীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। তাদের ভয় ছিল যে, চুক্তিটি হিন্দু সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক প্রভাব দুর্বল করে ফেলবে। তারা চিত্তরঞ্জন দাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে যে, তিনি হিন্দুদের অধিকার বিসর্জন দিয়েছেন। এমনকি অনেক মধ্যপন্থী হিন্দু নেতাও মনে করেন যে, চিত্তরঞ্জন মুসলমানদের আস্থা অর্জন করার চেষ্টায় অনেকটা ছাড় দিয়েছেন।

চিত্তরঞ্জন দাশ কিন্তু সকল বিরোধিতার মুখেও অটল থাকেন। চুক্তিটির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ব্যতীত স্বরাজ সম্ভবপর নয়। তিনি বাংলার বেশ কিছু তরুণ কংগ্রেস নেতার সমর্থন লাভ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত, কিরণশংকর রায়, সুভাষচন্দ্র বসু, অনিলবরণ রায়, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল এবং প্রতাপচন্দ্র গুহ উল্লেখযোগ্য। চিত্তরঞ্জনের পরিকল্পনার প্রতি তিনি বাংলার অধিকাংশ মুসলমান প্রাণঢালা সমর্থন দিয়েছিলেন। তাঁরা সর্বান্তকরণে চুক্তিটিকে স্বাগত জানান। বাংলার মুসলমানগণ অনুধাবন করেছিলেন যে, চুক্তিটির বাস্তবায়ন সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের মূলে আঘাত হানবে। মুসলিম গণমাধ্যমগুলি তাদের ন্যায্য দাবিসমূহ পূরণ করার মতো ঔদার্য প্রদর্শন করার জন্য চিত্তরঞ্জন ও সুভাষচন্দ্র সহ দেশবন্ধুর অনুগামী নেতাদের ধন্যবাদ জানায়।

কিন্তু ১৯২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের কোকনদ সেশনে চুক্তিটি বাতিল করা হলে তাদের মোহমুক্তি ঘটে। তাদের মতে, কোকনদ কংগ্রেস যে মস্ত ভুল করে সেটি ছিল কংগ্রেস আন্দোলনের ইতিহাসে জঘন্যতম ও এ ভুল হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের ক্ষেত্রে এবং কংগ্রেসের মুখ্য উদ্দেশ্যের প্রতি চরম আঘাত হেনেছে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস যে অবস্থান নিয়েছিল, চিত্তরঞ্জন দাশ তার সমালোচনা করে ঘোষণা করেন, “তোমরা সভার সিদ্ধান্তসমূহ থেকে বেঙ্গল প্যাক্টকে মুছে ফেলতে পার, কিন্তু ভারতের জাতীয় কংগ্রেস থেকে বাংলাকে বাদ দিতে পারবে না… এ রকম শিষ্টাচারহীন রীতিতে বাংলাকে মুছে ফেলা যাবে না। যারা চিৎকার করে বলে যে ‘বেঙ্গল প্যাক্টকে মুছে ফেল’ তাদের যুক্তি আমি বুঝতে পারি না… বাংলা কি অস্পৃশ্য? এ রকম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করার বাংলার অধিকারকে কি তোমরা অস্বীকার করবে? যদি তোমরা তাই কর, বাংলা তার নিজের ব্যবস্থা নিজেই গ্রহণ করতে পারবে। তোমরা অভিমত ব্যক্ত করার ব্যাপারে বাংলার অধিকারকে প্রত্যাখ্যান করতে পার না”। সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন অবাঙালি নেতৃত্বের সংঘাত আমরা পরবর্তীকালে তীব্র হতে দেখব। বাংলার নিজস্ব পরিস্থিতির বিশিষ্টতা যে সর্বভারতীয় পরিস্থিতির থেকে কোনও কোনও প্রশ্নে বিশেষ সংবেদনশীল ও তাকে সেভাবেই বিচার করা প্রয়োজন – বেঙ্গল প্যাক্ট কেন্দ্রিক ঘটনাবলী থেকেই সম্ভবত সুভাষ তা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বুঝতে শুরু করেন।

ভারতীয় কংগ্রেস প্রত্যাখ্যান করলেও চিত্তরঞ্জন তাঁর শক্তি ও উদ্দেশ্যের জনপ্রিয়তার বলে ১৯২৪ সালের জুন মাসে সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলনে চুক্তিটির বিধানসমূহের অনুমোদন লাভের আপ্রাণ চেষ্টা চালান। মাওলানা মহম্মদ আকরম খাঁ এই অধিবেশনের সভাপতি হন। অধিবেশনে প্রায় পনের হাজার প্রতিনিধি যোগ দেন। প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে চুক্তি অধিবেশনে গৃহীত হয়। সম্মেলনে চিত্তরঞ্জন দাশ বলেন – “হিন্দুরা যদি মুসলমানের মনে আস্থা সৃষ্টি করিতে না পারে, তবে হিন্দু-মুসলিম-ঐক্য আসিবে না। হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ব্যতীত আমাদের স্বরাজের দাবি চিরকাল কল্পনার বস্তুই থাকিয়া যাবে”। যদিও ভারতীয় কংগ্রেস কর্তৃক মেনে নিতে অস্বীকার করা হয়েছে, তবু ১৯২৪ সালের জুন মাসে সিরাজগঞ্জে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস সম্মেলন কর্তৃক তিনি চুক্তিটির শর্তাবলি সমর্থন করিয়ে নিতে সক্ষম হন।

সুভাষচন্দ্র কলকাতা কর্পোরেশনে এই চুক্তির শর্তাবলী এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কার্যকর করা শুরু করেন। তেত্রিশটি পদের মধ্যে পঁচিশটিই মুসলিমদের দেওয়া হল। রক্ষণশীল বাঙালি হিন্দুরা এর বিরোধিতা শুরু করল। সমালোচনার জবাবে সুভাষ বললেন যে অতীতে হিন্দুরা এইসব চাকরীর ক্ষেত্রে প্রায় এককাট্টা অধিকার কায়েম করে ফেলেছিল, এখন হিন্দুদের গাত্রদাহ হলেও কিছু করার নেই, মুসলিম, খ্রিস্টান ও অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত মানুষের ন্যায্য অধিকার কায়েমের পথেই এগোতে হবে। ( সূত্র – ১৭ জুলাই, ১৯২৪ অমৃতবাজার পত্রিকার রিপোর্ট।) চিত্তরঞ্জন দাশ ছাড়াও সুভাষ এই সব কাজের খোলাখুলি সমর্থন পেলেন মহাত্মা গান্ধীর কাছ থেকে। ইয়ং ইন্ডিয়া পত্রিকায় গান্ধী লিখলেন, “দেখতে পাচ্ছি কলকাতা কর্পোরেশনের এক্সিকিউটিভ অফিসারের দিকে বেশ ভালোরকম আক্রমণাত্মক সমালোচনা বর্ষিত হচ্ছে, কেননা তেত্রিশটি পদের পঁচিশটিই তিনি মুসলমানদের দিয়েছেন। প্রধান এক্সিকিউটিভ অফিসারের বক্তব্য আমি পড়েছি। এটা একটা প্রশংসনীয় কাজ হয়েছে বলতে হবে। হিন্দুরা যদি ভারতকে স্বাধীন করতে চায়, তবে তাদের মুসলমান ও অন্যান্য ভ্রাতৃসম সমাজের জন্য অনেকখানি আত্মত্যাগ করতে হবে।” (সূত্র – কালেক্টেড ওয়ার্কস অব মহাত্মা গান্ধী, ২৪ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা – ৪৭৯)। এই সমস্ত কাজ যখন বাংলার যৌথ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেই সময়েই ১৯২৪ সালের ২৫ অক্টোবর সুভাষচন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ ছিল সুভাষ বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের প্রধান সংগঠক। বলশেভিক প্রচারকদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগও আনা হল। প্রথমে তাঁকে রাখা হল আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হল বহরমপুর জেলে। কিন্তু কলকাতা থেকে দূরে রাখাই যথেষ্ট মনে না করে, বাংলা থেকেই তাকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। ১৯২৫ এর জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে তাঁকে পাঠানো হল বার্মার মান্দালয় জেলে, যেখানে ১৯০৮ থেকে ১৯১৪ সাল অবধি বন্দী ছিলেন বাল গঙ্গাধর তিলক। এই মান্দালয় জেলে বন্দী অবস্থাতেই ১৯২৫ এর ১৬ জুন তিনি পেলেন তাঁর নেতা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অকস্মাৎ মৃত্যুর খবর।

১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের অকাল মৃত্যুতে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি হয়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কয়েকজন অনুসারীও চুক্তিটি বর্জন করেন। অনেক বাঙালি মুসলমান রাজনৈতিক নেতা মর্মাহত হন এবং তাঁরা কংগ্রেস ও স্বরাজ্য উভয় দল থেকেই দূরে সরতে থাকেন। মুসলমানদের দলত্যাগের ফলে প্রদেশের উল্লেখযোগ্য কিছু মুসলমান নেতা মৌলভী আব্দুল করিম, মওলানা আব্দুর রউফ, খান বাহাদুর  আজিজুল হক, আব্দুল্লা হিল বাকি, মৌলভী আশরাফউদ্দীন, ড. এ সুরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক প্রমুখের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মুসলিম পার্টি গড়ে ওঠে। সুভাষচন্দ্র, কিরণ শংকর রায় প্রমুখরা কংগ্রেসেই থেকে যান। অনূর্ধ্ব তিরিশ সুভাষ তখনো রাজনৈতিকভাবে ততটা বিকশিত নন, ততটা প্রভাব সঞ্চারী নন, যার সাহায্যে বাংলার রাজনীতিতে সর্বাত্মক ঐক্য তিনি বজায় রাখতে সক্ষম হতেন। কিন্তু যে ধর্মীয় ঐক্যচিন্তা থেকে চিত্তরঞ্জন তাঁর স্বরাজ্য দলকে নিয়ে এগিয়েছিলেন তার পরিপূর্ণ বিকশিত রূপ পরবর্তীকালে আমরা দেখি নেতাজী সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজের মধ্যে।

দেশবন্ধুর মৃত্যুর পরও অনেকদিন জেলে ছিলেন সুভাষ। এই সময়ে তিনি প্রভূত পড়াশুনো করেন। আই. সি. এস. প্রস্তুতির সময়কার পড়াশুনোকেও তা ছাপিয়ে গেল। সুভাষ রচনাবলীতে সংকলিত নোটসমূহ ও বিভিন্ন চিঠিপত্রে এই অধ্যয়নের ব্যাপকতা ও গভীরতার সাক্ষ্য রয়েছে। শুধু স্বাধীনতা আন্দোলন বিষয়ে নয়, দেশগঠন ও পরিচালনা বিষয়ে তিনি এই সময়ে নিজস্ব দার্শনিক উপলব্ধি অর্জন করেন। বস্তুতপক্ষে জেলবন্দী জীবনের মধ্যেই গুরু দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে হারিয়ে সুভাষচন্দ্র বসু সেনাপতি থেকে নেতায় পরিণত হলেন।

আকর

১) শ্রী সুভাষচন্দ্র বসু সমগ্র রচনাবলী – নেতাজী রিসার্চ ব্যুরোর ও আনন্দ পাবলিশার্স

২) দেশনায়ক – সুগত বসু

৩) অ্যাগ্রেরিয়ান বেঙ্গল – সুগত বসু

৪) বেঙ্গল : ১৯২০ – ১৯৪৭ – পার্থ চট্টোপাধ্যায়

৫) পলাশি থেকে পার্টিশান – শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়

৬) ডিফাইনিং মোমেন্টস ইন বেঙ্গল – সব্যসাচী ভট্টাচার্য

৭) মুসলিম পলিটিক্স (১৯০৬-৪৭) অ্যান্ড আদার এসেস – হুমায়ুন কবির

৮) স্বদেশী মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল – সুমিত সরকার

৯) মর্ডান ইন্ডিয়া – সুমিত সরকার

১০) স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস – অমলেশ ত্রিপাঠী

মন্তব্য তালিকা - “সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সূচনাপর্ব এবং বিশ শতকের কুড়ির দশকের বঙ্গ রাজনীতি”

  1. সামগ্রিকভাবে তথ্যগুলো কালানুক্রমিকভাবে আছে। সেদিক থেকে ভালো। কিন্তু যারা কেবল “আমি সুভাষ বলছি” বা “সুভাষ ঘরে ফেরে নাই”-এর মতো বই পড়েছেন তারাও কমবেশি এসব তথ্য জানেন।
    সেসময়কার জনমানসে, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে, রবীন্দ্রনাথ বনাম গান্ধীর যৌক্তিক বিতর্কের মাঝে যে স্তরায়িত প্রসঙ্গগুলো ছিল (এর বাইরেও ছিল) সেগুলো আলোচনায় এলে অনালোকিত অঞ্চলে আলো পড়তো।
    সেটা পেলাম না।

  2. ‘আই সি এস চাকরি ছেড়েছেন সুভাষচন্দ্র’ তিনবার পড়লাম। তিনি চাকরি পেয়েছিলেন এটা জানা ছিল না। বাবার ইচ্ছায় পড়তে গিয়েছিলেন, দাদা শরৎ বসুর সঙ্গে পত্রে আই সি এস হ‌ওয়া বা ব্রিটিশদের নোকর হবার প্রবল অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন—এসব‌ই জানতাম। এক‌ই জাহাজে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সুভাষ দেশে ফিরেছেন এটাও জানা ছিল না। কত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা নেই। ভালো লাগলো।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।