সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বাংলা গানের ধারা: ৫০০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ

বাংলা গানের ধারা: ৫০০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ

কামরুল হায়দার

নভেম্বর ২১, ২০২০ ১৮৬২ 2

যে সকল গানের বাণী বাংলা ভাষায় রচিত, সে সকল গানের সাধারণ নাম ‘বাংলা গান’। এই সংজ্ঞানুসারে বাংলা গানের প্রাথমিকভাবে দুটি উপাদান পাওয়া যায়। এর একটি হলো বাংলা ভাষায় রচিত গানের বাণী। অপরটি হলো- সুর ও ছন্দ। এই বিচারে বলা যায়, বাণীই সুর ও ছন্দের সুসমন্বয়ে গান হয়ে ওঠে। অবশ্য সঙ্গীতজ্ঞরা বলেন যথার্থ গান হতে হলে- একটি স্থায়ী ও কমপক্ষে একটি অন্তরা থাকতেই হয়। এর কম হলে সেটা গানের ছটা হতে পারে, গান হয়ে উঠবে না।

যে কোনো গানের আরও কিছু সহায়ক উপকরণের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এর অন্যতম উপকরণ হলো- বাদ্যযন্ত্র। পরিবেশিত গানকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করার প্রয়োজনে সুর যন্ত্র ও তালযন্ত্রের কথা ভাবতেই হয়। তাই বাংলা গানের আলোচনায় কিছু বাদ্যযন্ত্রের কথা অনিবার্যভাবে চলেই আসে। এ সব বাদ্যযন্ত্রের তালিকায় রয়েছে- একতারা, সারিন্দা, ঢোল, মন্দিরা ইত্যাদির মতো দেশী বাদ্যযন্ত্র। আবার বাংলার বাইরের বাদ্যযন্ত্র হিসেবে হারমোনিয়াম, তবলা, বেহালা ইত্যাদি। তাই নিঃসন্দেহে বাদ্যযন্ত্র বাংলা গানের ধারায় আপনা-আপনি চলে আসে। গীত-বাদ্যের এই সমারোহের বাইরে থেকে যায় নানা ধরনের নাচ। এর ভিতরে রয়েছে বাংলার আদিম নাচ থেকে শাস্ত্রীয় নাচ এবং ইউরোপীয় নাচ। এসব নাচের বাণী ফুটে ওঠে দেহভঙ্গিমা এবং নানা রূপ মুদ্রার সমন্বয়ে। নাচের ভাষা ইঙ্গিত ভাষা। এই ভাষা মানুষের মুখ নিঃসৃত প্রাকৃতিক ভাষায় প্রকাশ পায় না। তাই নাচকে বাংলা গানের ধারার বাইরেই রাখতে হয়।

বাংলা গানের উৎপত্তির কথা উপস্থাপন করতে গেলে, প্রথমেই চলে আসে বাংলাভাষার ইতিবৃত্তের বিষয়। প্রশ্ন জাগে উৎপত্তির বিচারে গান আগে না ভাষা আগে। কেউ কারো আগে নয়। উভয়ই সহোদরা। উভয়ই একই সাথে বিকশিত হয়েছে মানবসভ্যতার ক্রমবিবরণের ধারায়। ভাষা ও সঙ্গীতের ক্রমবিবর্তনের ধারা শুরু হয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। যখন আধুনিক মানুষ তথা হোমো স্যাপিয়েন্সদের আবির্ভাব ঘটেনি। তারও আগে থেকে হোমো গণের আদিম প্রজাতিদের মধ্যে ভাষা ও সঙ্গীতের উদ্ভব হয়েছিল। ধারণা করা হয় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বৎসর আগে প্রাইমেট বর্গের অন্তর্গত হোমিনিডি গোত্রের হোমো গণের অন্তর্গত Homo sapiens এর আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকার মরক্কোর জেবেল ইর্হৌদ (Jebel Irhoud)-তে। এরপর ধীরে ধীরে ধীরে এরা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। কালের ক্রমবিবর্তনের ধারায় মানুষের দৈহিক রূপ নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বিবর্তিত হয়েছে মানুষের সাংস্কৃতিক উপকরণের। এর ভিতরে রয়েছে, ভাষা, সঙ্গীত, পোশাক, আচরণ ইত্যাদি সবই।

ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে- ভারতবর্ষে আগত আর্য-অনার্যদের সংমিশ্রণে বাঙালি তার মিশ্র দৈহিক রূপ পেয়েছে। একই সাথে পেয়েছে তার ভাষা ও সঙ্গীত। বিবর্তনের ইতিহাসের পিছনের দীর্ঘ পথকে বাদ যদি শুধু বাংলা ভাষার সূচনালগ্নকে খোঁজার চেষ্টা করা যায়, তা হলে তা অসম্ভব একটি প্রচেষ্টা হবে মাত্র। কারণ যেকোনো প্রজাতির শিশুর জন্মের মতো ভাষা ও সঙ্গীত কোনো সুনির্দিষ্ট দিনে জন্মলাভ করেছে বলে দাবি করা যায় না। এক্ষেত্রে মোটা দাগে অনুমান করা যায় মাত্র।

ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে- প্রাকৃতজনের ভাষার সাথে সংস্কৃত ভাষার সংমিশ্রণে অন্যান্য ভারতীয় ভাষা থেকে বাংলা ভাষার আদিরূপ সৃষ্টি হয়েছিল ৫০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। এই অনুমানটা করা হয়ে থাকে বাংলা ভাষার আদি নমুনা ‘চর্যাগীতি’র রচনা কাল থেকে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে- ‘আমি বাঙ্গালা সাহিত্যের আরম্ভ ৬৫০ খ্রীঃ অঃ বলিয়া নির্দেশ করিয়াছি। নাথ-গীতিকার উদ্ভব বৌদ্ধযুগে। কিন্তু আমরা তাহা পাই নাই। আমরা বৌদ্ধযুগের একটি মাত্র বাঙ্গালা পুস্তক পাইয়াছি। ইহার নাম আশ্চর্যচর্যাচয়। [বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত – মাওলা ব্রাদার্স, জুলাই ১৯৯৮]

অবশ্য ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এই ধারণার সাথে সুনীতি চট্টোপাধ্যায় এবং সুকুমার সেন একমত হতে পারেন নি। তাঁদের মতে চর্যাগীতি রচিত হয়েছিল ৯০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। ‘নাথ-গীতিকা’র উদ্ভব অনুসারে যদি বাংলার আদি নমুনাকে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ ধরি, তাহলে বাংলার আদি দশাকে আমরা আরও আগে স্থাপন করতে পারি। কারণ, নিশ্চয়ই নাথ-গীতিকা এবং চর্যাপদের রচয়িতারা ভাষাটা তৈরি করে, সেই ভাষায় পদ রচনা করেছিলেন, এমনটা ভাবা সঙ্গত হবে না। তাই ধারণা করাই যায়, বাংলা ভাষার কাঠামো চর্যাগীতির আদলে প্রকাশ পেয়েছিল খ্রিস্টীয় ৫০০-৬০০ অব্দের দিকে। ৬৫০ খ্রিস্টাব্দের ভিতরে বাংলা লোকগানের আদিরূপ গড়ে উঠেছিল প্রোটো-অষ্ট্রালয়েড নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল এবং এর নিকটতম জ্ঞাতি বাঙালি নৃগোষ্ঠীর ভিতরে। অনুমান করা হয়, আদি বাঙালিদের ভিতরে ঝুমুর গানের বিকাশ ঘটেছিল এই সময়ের ভিতরে।

যে কোনো জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গীত-সংস্কৃতির ভিত্তি হলো লোকসঙ্গীত। আদিম জনগোষ্ঠীর কোনো কোনো গোত্রপ্রধান শক্তিশালী হয়ে সৃষ্টি করেছিল আদিম রাজতন্ত্রের। আদিম রাজশক্তি যখন বড় বড় ভূখণ্ডের শাসক হয়ে উঠলেন, তখন তাঁদের শক্তির প্রশাসনিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজধানী। রাজধানী-কেন্দ্রিক নগর-সংস্কৃতি পুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন সমকালীন নানা বিষয় এবং এর সাথে সম্পৃক্ত বহু গুণীজন। রাজপৃষ্ঠপোষকতায় সৃষ্টি হয়েছিল নগরকেন্দ্রিক ভাষা-সংস্কৃতির। সেকালের কবিরা রাজাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কিম্বা রাজার আদেশে কাব্য বা সঙ্গীত রচনা করতেন। এর ফলে লোকগানের সহজাত গুণ হরিয়ে নগরকেন্দ্রিক নতুন ধরনের ভাষা-সংস্কৃতির উদ্ভব হয়েছিল। এই সূত্রে সৃষ্টি হয়েছিল প্রমিত ধারার কৃত্রিম সাহিত্য ও সঙ্গীত। একে সাধারণভাবে বলতে পারি ‘নাগরিক সাহিত্য’ বা ‘নাগরিক সঙ্গীত’।

ভারতবর্ষের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মতই বাঙালির সুদূর অতীতের কালানুক্রমিক লিখিত ইতিহাস নেই। বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা গান এর সবই প্রাচীন কিছু নমুনা অনুসরণ করে গবেষকরা অনুমান নির্ভর ইতিহাস রচনা করেছেন। এসব প্রাচীন নমুনার বেশির ভাগই ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনি এবং বিদেশী ভূ-পর্যটকদের বিবরণ। ফলে বাংলার আদি রাজশক্তির সূচনা হয়েছিল কবে এবং এই সূত্রে প্রথম নাগরিক গান কবে লেখা হয়েছিল তার লিখিত কোনো প্রামাণিক দলিল আমাদের নেই।

একালের আমরা সবাই বাংলা ভাষা কিম্বা বাংলা গানের আদি নমুনা হিসেবে চর্যাগীতি বা চর্যাপদকে স্বীকার করে নিয়েছি। চর্যাপদ রচনার বহু পরে- একটি সংকলন হিসেবে পাওয়া গেছে নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থাগারে। পণ্ডিতরা নানা যুক্তি দিয়ে এই পদগুলোর রচনাকাল নিজেদের মতো করে ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু সবাই এ বিষয়ে পুরোপুরি একমত হতে পারেন নি। সবার মতামতকে মান্য করে আমরা একটি সাধারণ ‘সময়-মান’-কে যদি গ্রহণ করি, তাহলে বলা যায়- চর্যাপদের রচনাকাল ৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দের ভিতরে।

৬৫০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে রাজেন্দ্রলাল মিত্র নেপালে প্রাপ্ত সংস্কৃত ভাষায় রচিত বিভিন্ন বৌদ্ধপুথির একটি তালিকা প্রস্তুত করেন। এই তালিকাটির নাম ছিল- ‘Sanskrit Buddhist Literature in Nepal’। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের (২৬.৭.১৮৯১) মৃত্যুর পর তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বাংলা-বিহার-আসাম-উড়িষ্যা অঞ্চলের পুথি সংগ্রহের দায়িত্ব দেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে। এই সূত্রে তিনি ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপালে যান। এটি ছিল তাঁর তৃতীয় অনুসন্ধান-ভ্রমণ। এই ভ্রমণের সময় তিনি নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থাগারে কিছু নতুন পুথির সন্ধান পান। এই পুথিগুলো নিয়ে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা’– নামে একটি সংকলন প্রকাশিত হয় ১৩২৩ বঙ্গাব্দে (১৯১৬ খ্রিস্টাব্দ)। এই সংকলনের একটি গ্রন্থ ছিল ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’। বর্তমানে এই গ্রন্থটি সাধারণভাবে চর্যাগীতি বা চর্যাপদ নামে পরিচিত।

চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সব মিলিয়ে মোটা দাগে বলা যায়, এই পদগুলো রচিত হয়েছিল ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের ভিতরে। এই পদগুলোর সাথে রাগের নাম পাওয়া যায়। তাই স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া হয়- এগুলো সুরে নিবদ্ধ ছিল। এই সময়ের ভিতরে ভারতীয় শাস্ত্রীয় প্রাচীন দুটি ধারা – ধ্রুপদ ও খেয়াল-এর উদ্ভব হয় নি। সঙ্গীত-গবেষকদের মতে এই সময়ে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষ ধারা হিসেবে প্রবন্ধগান বিকশিত হয়েছিল। তাই ধরে নেওয়া যেতে পারে- চর্যাপদগুলো প্রবন্ধগান ছিল।

মূলত চর্যাপদগুলো ছিল- সেকালের ধর্মগুরুদের দ্বারা রচিত। এঁরা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, রাগাশ্রয়ী গান হিসেবে তাঁদের পদগুলোকে উপস্থাপন করেছিলেন। এই গানের বিষয় ছিল সহজিয়া বৌদ্ধমতের গুঢ়তত্ত্ব। সে তত্ত্বকে আবার উপস্থাপন করা হয়েছে- নানা ধরনের তত্ত্বীয় পরিভাষার মোড়কে। ফলে এসব সাধকদের রচিত পদগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে আলো-ছায়ার খেলা। অনেকটাই ‘দেখা না দেখায়’ মেশা। সেকালের গুরুপরম্পরায় প্রচলিত শিক্ষা অনুসরণে এই ধারার বিকাশ ঘটেছিল।

যদিও লোকগানের সৃষ্টি হয়েছিল বাঙলার সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আনন্দ-বেদনার সূত্রে। লোকমুখে প্রচলিত এসব গানের নমুনা পাওয়া যায় নি। যা পাওয়া গেছে, তা হলো চর্যাগীতির মতো নাগরিক গান। এ গান শাস্ত্রীয় আচার্যদের রচিত শিক্ষিত নাগরিকের গান। তার মূল্য রাজন্যবর্গের পণ্ডিতদের কাছে ছিল। তাই সমাদরে স্থানে পেয়েছিল রাজ-গ্রন্থাগারে। তাই বাংলার লোকগানের পরিবর্তে নাগরিক গান চর্যাগীতি হয়ে গেছে বাংলা গানের আদি নমুনা।

চর্যাগীতির বর্ণানুক্রমিক তালিকা:

১. অধরাতি ভর কমল বিকসউ [পদ সংখ্যা ২৭]
২. অপণে নাহিঁ মো কাহেরি সঙ্কা [পদ সংখ্যা ৩৭]
৩. অপণে রচি রচি ভবনির্বাণা [পদ সংখ্যা ২২]
৪. অলিএঁ কালিএঁ বাটা রুন্ধেলা [পদ সংখ্যা ৭]

৫. আইএ অণুঅনা এ জগ রে [পদ সংখ্যা ৪১]
৬. উষ্ণা উষ্ণা পাবত তহিঁ বসই সবরী বালী [পদ সংখ্যা ২৮]
৭. এক সে শুণ্ডিনিণী দুই ঘরে সান্ধঅ [পদ সংখ্যা ৩]
৮. এতকাল হাঁউ অচ্ছিলেঁসু মোহে  [পদ সংখ্যা ৩৫]
৯. এবংকার দৃঢ় বাখোড় মোড্ডিউ [পদ সংখ্যা ৯]
১০. কমল কুলিশ মাঝে ভই ম মিঅলী [পদ সংখ্যা ৪৭]
১১. করুণা পিহাড়ি খেলহুঁ নয় বল [পদ সংখ্যা ১২]
১২. করুণা মেহ নিরস্তর ফরিআ [পদ সংখ্যা ৩০]
১৩. কাঅ ণাবডহি খাণ্ঠি মণ কেডুআল [পদ সংখ্যা ৩৮]
১৪. কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল [পদ সংখ্যা ১]
১৫. কাহৈরি ঘিণি মেলি অচ্ছহুঁ কীস [পদ সংখ্যা ৬]
১৬. কুলিশ-ভর-নিদ বিআপিল [পদ সংখ্যা ৪৮]
১৭. গঅণত গঅণত তইলা বাডহী হেঞ্চে কুরাঢ়ী [পদ সংখ্যা ৫০]
১৮. গঙ্গা জউনা মাঝেঁ রে বহই নাই [পদ সংখ্যা ১৪]
১৯. চিঅ সহজে শূণ সংপুন্না [পদ সংখ্যা ৪২]
২০. জই তুম্ভে ভুসুকু অহেরি [পদ সংখ্যা ২৩]
২১. জইসে চান্দ উইআ হোই [পদ সংখ্যা ২৪]      
২২. জো মণগোএর আলাজালা [পদ সংখ্যা ৪০]
২৩. জহি মণ ইন্দিঅবণ হো ণঠা [পদ সংখ্যা ৩১]
২৪. টালত মোর ঘর নাহি পড়বেষী [পদ সংখ্যা ৩৩]
২৫. তিঅড্ডা চাপী জোইণি দে অঙ্কবালী [পদ সংখ্যা ৪]
২৬. তিশরণ ণাবী কিঅ অঠকমারী [পদ সংখ্যা ১৩]
২৭. তিণি ভূঅণ মই বাহিঅ হেলেঁ [পদ সংখ্যা ১৮]
২৮. তিনিএঁ পাটেঁ লাগেলি রে অণহ কসণ ঘণ গাজই [পদ সংখ্যা ১৬]
২৯. তুলা ধুণি ধুণি আঁসু রে আঁসূ [পদ সংখ্যা ২৬]
৩০. দুলি দুহি পিটা ধরণ ন জাই [পদ সংখ্যা ২]
৩১. ধামহু পইঠা বাজঠাবি কহেই [পদ সংখ্যা ২৫]
৩২. নগর বাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ [পদ সংখ্যা ১০]
৩৩. নাড়ি শক্তি দিঢ় ধরিঅ খদে [পদ সংখ্যা ১১]
৩৪. নাদ ন বিন্দু ন রবি ন সসিমণ্ডল [পদ সংখ্যা ৩২]
৩৫. নিসিঅ অন্ধারী মুসার চারা [পদ সংখ্যা ২১]
৩৬. পেখু সুঅণে অদশ জইসা [পদ সংখ্যা ৪৬]
৩৭. বাজ ণাব পাড়ী পউআঁ খালেঁ বাহিউ [পদ সংখ্যা ৪৯]
৩৮. ভব নিব্বাণে পড়হ মাদলা [পদ সংখ্যা ১৯]
৩৯. ভবণই গহণগম্ভীরা বেগেঁ বাহী [পদ সংখ্যা ৫]
৪০. ভাব ন হোই অভাব ণ জাই [পদ সংখ্যা ২৯]
৪১. মণ তরু পাঞ্চ ইন্দি তসু সাহা  [পদ সংখ্যা ৪৫]
৪২. সঅ সম্বেঅণ সরুঅ বিআরেঁতে [পদ সংখ্যা ১৫]
৪৩. সহজ মহাতরু ফরিঅএ তেলোএ [পদ সংখ্যা ৪৩]
৪৪. সুনে সুন মিলিত্তা জবেঁ [পদ সংখ্যা ৪৪]
৪৫. সুইণা হ অবিদারঅ রে [পদ সংখ্যা ৩৯]
৪৬. সুজ লাউ সসি লাগেলি তান্তী [পদ সংখ্যা ১৭]
৪৭. সুন বাহ তথতা পহারী [পদ সংখ্যা ৩৬]
৪৮. সুনকরুণরি অভিন চারেঁ কাঅবাক্ চিএ [পদ সংখ্যা ৩৪]
৪৯. সোণে ভরিলী করুণা নাবী [পদ সংখ্যা ৮]
৫০. হাঁউ নিরাসী খমণ ভতারে [পদ সংখ্যা ২০]

১২০০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ

মোটা দাগে ১২০০ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়কে বলা হয়, বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ। কিন্তু বাংলা ভাষার অন্ধযুগ নয়। বাংলা সাহিত্যের কোনো নমুনা না পাওয়ায় ঐতিহাসিকরা এ যুগকে সাহিত্যের অন্ধকার যুগ নামে অভিহিত করেছেন। কিন্তু এ যুগে মুসলিমদের আগ্রাসনের সাথে সাথে বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে আরবি, ফার্সি, তুর্কি প্রভৃতি ভাষার শব্দ যুক্ত হয়ে, বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছিল। এ যুগের সূচনা হয়েছিল মূলত ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে ইখতিয়ার উদ্দিন বখতিয়ার খলজির  নদীয়া আক্রমণের মধ্য দিয়ে। আর শাসকদের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার একটি অস্থির দশা চলেছিল প্রায় দেড় শ বছর। এর সমাপ্তি ঘটেছিল ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। বাংলা সাহিত্যের নমুনা না পাওয়ার কারণ হিসেব ঐতিহাসিকরা বঙ্গদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেছেন। কিন্তু নমুনা পাওয়া যায় না বলে, সে আমলের লোকেরা বাংলায় কথা বলতো না বা লোকগানের চর্চা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই।

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের প্রাক্কালে রাজা লক্ষ্মণসেনের (১১৭৯-১২০৬ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্বকালে, তাঁর রাজসভা যে বিশিষ্ট পাঁচজন বিশেষ সমাদর লাভ করেছিলেন, ঐতিহাসিকরা সাধারণভাবে তাঁদেরকে পঞ্চরত্ন নামে অভিহিত করে থাকেন। এই পঞ্চরত্নের একজন গীতগোবিন্দের রচয়িতা কবি জয়দেব। অন্য চারজন ছিলেন ধোয়ী, শরণ, গোবর্ধন আচার্য ও উমাপতি ধর। এঁরা সবাই সংস্কৃত ভাষায় কাব্য রচনা করেছিলেন। এঁদের ভিতরে বাংলা গান ও কবিতায় সবচেয়ে প্রভাব ফেলেছিল কবি জয়দেবের রচিত গীতগোবিন্দ। গীতগোবিন্দের মুখ্য বিষয় ছিল- রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলা। গ্রন্থটি ২৮৬টি শ্লোক এবং ২৪টি গীতের সমন্বয়ে ১২টি সর্গে গ্রন্থটি বিভাজিত। এই গ্রন্থের বর্ণিত বিষয়গুলোকে বারোটি ভিন্ন ভিন্ন নামে সর্গগুলির নামকরণ করা হয়েছে। যেমন- ‘সামোদ-দামোদর’, ‘অক্লেশ-কেশব’, ‘মুগ্ধ-মধুসূদন’, ‘স্নিগ্ধ-মধুসূদন’, ‘সাকাঙ্ক্ষ-পুণ্ডরীকাক্ষ’, ‘ধৃষ্ট-বৈকুণ্ঠ’, ‘নাগর-নারায়ণ’, ‘বিলক্ষ-লক্ষ্মীপতি’, ‘মুগ্ধ-মুকুন্দ’, ‘মুগ্ধ-মাধব’, ‘সানন্দ-গোবিন্দ’ এবং ‘সুপ্রীত-পীতাম্বর’। এই কাব্যের নায়ক-নায়িকা রাধা-কৃষ্ণ হলেও, এঁদের প্রতীকে জীবাত্মা-পরমাত্মার সম্পর্ক এবং নর-নারীর চিরন্তন প্রেমকে তুলে ধরা হয়েছে।

জয়দেবের জন্মস্থান নিয়ে বিতর্ক আছে। অনেকের মতে, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার অজয় নদের তীরবর্তী কেন্দুবিল্ব বা কেঁদুলি গ্রামে জয়দেব জন্মগ্রহণ করেন। কেউ কেউ তাঁকে মিথিলা বা উড়িষ্যার অধিবাসী বলেও মনে করেন। তাঁর রচিত গীতগোবিন্দ কাব্যের দ্বাদশ তথা অন্তিম সর্গের শেষ পদে, তিনি তাঁর পরিচয় জানিয়ে লিখেছেন − তাঁর পিতার নাম ভোজদেব এবং মাতার নাম বামাদেবী। তাঁর স্ত্রীর নাম পদ্মাবতী।

এর গীতগুলো কোনো না কোনো রাগের আশ্রয়ে তৈরি করা হয়েছিল। বাংলা কাব্য ও গানের ধারায়, আদি পদাবলি হিসেবে বিবেচিত চর্যাগীতির চেয়েও, মধ্যযুগীয় বাংলা গানে গীতগোবিন্দের প্রভাব পড়েছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এই গ্রন্থটি হয়ে উঠেছিল ধর্মগ্রন্থের মতো। এই গ্রন্থের পদগুলোর গীতরীতি কেমন ছিল, তা জানা যায় না। গ্রন্থটির শুধু যে বাংলা কাব্যসঙ্গীতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল তাই নয়। বঙ্গদেশের প্রতিবেশী রাজ্যের ভাষায় বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল। বিশেষ করে বাংলা-মৈথিলীর ভাষায় রচিত পদাবলিগুলোতে এবং বড়ুচণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে  জয়দেবের গীতগোবিন্দ বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল।

ব্রজভাষার ক্রমবিবর্তনের ধারা

গঙ্গা-যমুনা বিধৌত অববাহিকা অঞ্চলের প্রচলিত ভাষার সাধারণ নাম ব্রজভাষা। এক সময় ভারতের একটি বিশাল অংশ জুড়ে এই ভাষা কথ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল। এই বিচারে ব্রজভাষাকে ভারতের কোনো একটি প্রদেশের ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। বর্তমানে এর প্রমিত রূপ মথুরা, আগ্রা, আলিগড় তথা ধৌলপুর অঞ্চলে প্রচলিত আছে।

প্রাচীন ‘শূরসেন’ নামক জনপদের কেন্দ্র ছিল মথুরা, আর শৌরসেনী অপভ্রংশ ছিল এখানকার প্রচলিত ভাষা। ব্রজভাষা এই শৌরসেনী অপভ্রংশেরই উত্তরসূরি। বুলন্দ্‌শহর, বদাউন এবং নৈনিতালের তরাই ভূমিতে অবশ্য এই ভাষাতে খড়িবোলির যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। অপরদিকে এটোয়া, মৈনপুরী, বেরিলীর ব্রজভাষায় কনৌজী বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। আবার গুরগাঁও, ভরতপুর এবং গোয়ালিয়রের পশ্চিমোত্তর ভূভাগের ব্রজভাষায় বুন্দেলি এবং রাজস্থানীর কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে পড়ে। প্রসিদ্ধ হিন্দি ভাষা-বিজ্ঞানী ধীরেন্দ্র বর্মার মতে, পিলিভিট এবং এটোয়ার ভাষা কনৌজীর চেয়ে ব্রজভাষার বেশি কাছাকাছি। গিয়ারসন তাঁর Linguistic Survey of India নামক গ্রন্থে ব্রজভাষার পরিচয় দিয়েছেন ‘অন্তর্বেদি’র ভাষারূপে’।

ব্রজভাষা-অঞ্চলের উত্তরে বাঙ্গরু (হরিয়ানী) এবং খড়িবোলি, পূর্বে কনৌজী ও অবধি, দক্ষিণে বুন্দেলি এবং পশ্চিমে রাজস্থানী ভাষাসমূহ অবস্থিত। প্রায় ৩৮ হাজার বর্গমাইল জুড়ে এই ভাষার মানুষ বসবাস করে। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের হিসেব অনুসারে এই ভাষার জনসংখ্যা ছিল ৭৬ হাজার ১৮৯। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে এই ভাষার  জনসংখ্যা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ২৫ হাজার ৮৬৪। বর্তমানে হিন্দির চাপে এই ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

ব্রজভাষার সাহিত্যিক মর্যাদা প্রকৃতপক্ষে ১৩শ শতকের উত্তরার্ধেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এক সময় সমগ্র উত্তর ভারতে এই ভাষার চর্চা ছিল ব্যাপক। সে সময়ে বিভিন্ন ভাষাভাষীর সাধক-কবিরা মাতৃভাষার পরিবর্তে ব্রজভাষাতেই লিখতেন। বিশেষকরে মীরাবাঈ (১৪৯৮/১৫০৩-১৫৪৬ খ্রিস্টাব্দ), গুরু নানক (১৪৬৯-১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দ), কবি তুলসীদাস (১৫৩২-১৬২৩ খ্রিস্টাব্দ). কবির (১৩৯৯-১৫১৮ খ্রিস্টাব্দ) প্রমুখ ব্রজভাষা অথবা মিশ্র ব্রজভাষায় কাব্যসঙ্গীতের চর্চা করেছেন।

ধারণা করা হয়, ব্রজভাষার- প্রাচীনতম লেখক ছিলেন প্রসিদ্ধ গীতিকার গোপাল নায়ক। তিনি ছিলেন আমির খসরুর (১২৫৪-১৩২৫ খ্রিস্টাব্দ) সমসাময়িক। ব্রজভাষায় রচিত তাঁর কিছু কিছু ধ্রুপদ গান এখনও প্রচলিত আছে। উত্তর যুগের সংগীতসাধক বৈজু বাওরা এবং তানসেনও ব্রজভাষায় পদ রচনা করেছিলেন।

সন্ত কবিরকে (১৩৯৯-১৫১৮ খ্রিস্টাব্দ) ব্রজভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ লেখক হিসেবে অনেকে মনে করেন। উল্লেখ্য বারাণসীর এই ভক্ত কবি জাতে মুসলমান জোলা ছিলেন। কথিত আছে তিনি বিখ্যাত বৈষ্ণবাচার্য রামানন্দের (১৪০০-১৪৭০ খ্রিস্টাব্দ) কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। পরিণত বয়সে তাঁর অধ্যাত্ম ধ্যানধারণা নাথ, সুফি ও বৈষ্ণব ধর্মের সমন্বয়ে ভিন্ন ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। বৈষ্ণবীয় প্রেম ও ভক্তি, সুফি রহস্যবাদ ও নাথপন্থীদের  উপাসনার তাঁর আদর্শে তিনি নিজেকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তাঁর মাতৃভাষা ছিল ভোজপুরি। এই ভাষায় বেশ কিছু দোহা রচনা করলেও তাঁর অধিকাংশ রচনাতে পাওয়া যায়  মিশ্রভাষা। এই মিশ্রভাষাকে বলা হয় ‘সাধুক্কড় বোলী’। আধুনিক ভাষা-গবেষকরা অবশ্য, কবিরের এই ভাষাকে সরস ব্রজভাষা নামে অভিহিত করে থাকেন। এই সংকর ভাষায় রচিত গানে তিনি বহু ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পর্কিত আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর রচিত দোহাগুলি ‘বীজক’ (তিনভাগে বিভক্ত) এবং ‘বাণী’ আকারে সংকলিত হয়েছে। কবিরের বহু কবিতা, ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে শিখধর্মগ্রন্থ ‘আদিগ্রন্থ’-এ সংকলিত হয়েছে। উল্লেখ্য এই গ্রন্থের সংকলক ছিলেন পঞ্চম শিখগুরু অর্জুন।

কবিরের অনুগামী কবিদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন খ্রিস্টীয় ১৬শ শতকের কবি ধর্মদাস।  ধর্মদাস ব্রজভাষা ছাড়া ভোজপুরিতেও কবিতা লিখেছিলেন। ব্রজভাষার অন্যান্য কবিরা ছিলেন- রৈদাস বা রবিদাস, গুরু নানক এবং দাদু দয়াল (১৫৪৪-১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ)। রৈদাস ছিলেন রামানন্দের শিষ্য এবং রামভক্ত। গুরু নানক প্রধানত তাঁর লেখা পশ্চিমা হিন্দিতেই রচনা করেছিলেন, কিন্তু তাতে পাঞ্জাবি শব্দের মিশ্রণ ঘটেছে। কবিরের মত ও পথ অনুসরণকারী সুফিসাধক দাদু দয়াল গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন রাজস্থানের অম্বরে। এই সূত্রে রাজস্থানী ভাষায় তিনি ছিলেন সাবলীল। তারপরেও তিনি কাব্য রচনা করেছিলেন ব্রজভাষায়। তাঁর কবিতায় প্রাচীন খড়িবোলির (দিল্লি বোলি) মিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়। এই কারণে এঁর ভাষাকেও ‘সাধুক্কড় বোলী’ নামে অভিহিত করা হয়।

অন্যদিকে তুলসীদাসের (১৫৩২-১৬২৩ খ্রিস্টাব্দ) কবিতা অবধি সাহিত্যকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু তিনি কৃষ্ণবিষয়ক কাহিনি লিখেছিলেন ব্রজভাষায়। এই ভাষার কৃষ্ণলীলার অগ্রণী কবিরা ‘অষ্টছাপ’ নামে পরিচিত ছিলেন। উল্লেখ্য অষ্টছাপভুক্ত এই আটজন কবি হলেন― সুরদাস (১৪৮৪ বা ১৫০৩-১৫৬৩ খ্রিস্টাব্দ), নন্দদাস, কৃষ্ণদাস, পরমানন্দদাস, কুম্ভনদাস, চতুর্ভুজদাস (জন্ম ১৫১৬ খ্রিস্টাব্দ), ছিত স্বামী ও গোবিন্দ স্বামী। এঁদের গুরু বল্লভাচার্য (১৪৭৯-১৫৩১ খ্রিস্টাব্দ)  ছিলেন সাধক কবি। তাঁর অনুগামী ভক্তকবিদের রচিত কীর্তন গান এক সময় বৃন্দাবনের গোবিন্দ মন্দিরে গীত হতো। এঁদের মধ্যে বল্লভাচার্যের শিষ্য ছিলেন সুরদাস। শ্রীকৃষ্ণের বাল্যলীলা ও গোপীপ্রেমের ওপর তাঁর কয়েক হাজার পদ আছে। এগুলি ব্রজভাষার শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর ভিতর ‘সুরসাগর’, ‘সুর-সারাবলী’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া অনেকে মনে করেন ‘সাহিত্য লহরী’ নামক গ্রন্থটিরও রচয়িতা ছিলেন সুরদাস।

বল্লভাচার্যের পুত্র বিঠ্‌ঠলনাথের শিষ্য ছিলেন নন্দদাস। তাঁর রচিত প্রাপ্ত ১৬টি গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘রাসপঞ্চাধ্যায়ী এবং ‘ভঁওর-গীত’। অপর তিনজন কবি – পরমানন্দদাস (‘ধ্রুবচরিত’, ‘দানলীলা’), কৃষ্ণদাস (‘ভ্রমর-গীত’, ‘প্রেমতত্ত্ব নিরূপণ’) এবং চতুর্ভুজদাস (‘দ্বাদশ যশ’, ‘ভক্তি প্রতাপ’, ‘হিতজু কো মঙ্গল’) ব্রজভাষাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন। তবে এই তিন কবির খুব বেশি রচনা পাওয়া যায় নি। 

ব্রজভাষার অপরাপর শ্রেষ্ঠ কবিদের মধ্যে ছিলেন, গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের প্রধান গদাধর ভট্ট, ষড়্‌ গোস্বামী, ও গোপাল ভট্ট। এর বাইরে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন হিত হরিবংশ (১৫০৩ খ্রিস্টাব্দ)। তিনি প্রথমে ছিলেন শ্রীচৈতন্যপন্থী। কিন্তু পরে রাধাবল্লভীয় সম্প্রদায়ের প্রবর্তন করেন। তাঁর রচিত ৮৪টি পদের সংকলন ‘হিত চৌরাশী’ নামে পরিচিত।

ভক্তসাধিকা মীরাবাঈ গৌড়ীয় বৈষ্ণব জীব গোস্বামীর দ্বারা আংশিক প্রভাবিত ছিলেন। ধারণা করা হয় তিনি ছিলেন মেবাড়ের রানী এবং রাজপুত-প্রধানের কন্যা। তাঁর বেশিরভাগ রচনা ব্রজভাষায় রচিত হয়েছিল।

মোগল সম্রাট আকবরের (১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিস্টাব্দ) আমলেও সম্রাটের সহায়তায় ব্রজভাষা বিশেষভাবে চর্চিত হয়েছিল। কথিত আছে সম্রাট নিজেও কিছু ব্রজভাষায় কবিতা মুখে মুখে রচনা করেছিলেন। কারণ তিনি নিরক্ষর ছিলেন। তাঁর উৎসাহ ও আনুকূল্যে বহু কবি ও গায়ক ব্রজভাষা চর্চা করেছেন। তাঁর রাজসভাতে ব্রজভাষায় কাব্য রচনায় উৎসাহিত করা হতো। আকবরের রাজসভার ‘নবরত্ন’ কবিদের অন্যতম কবি অবদুর রহিম খান্‌-খানান্ (১৫৫৬-১৬২৭ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন সম্রাটের শিক্ষক বৈরাম খাঁর পুত্র। কবি অবদুর রহিমের কবিতাগুলির বেশিরভাগই ব্রজভাষায় লিখিত। এর বাইরে তিনি কিছু কবিতা অবধি ভাষায় লিখেছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর ভিতর উল্লেখযোগ্য ছিল- ‘রহিম দোহাবলী’, ‘মদনাষ্টক’, ‘শৃঙ্গার সোরঠ’ এবং ‘রাসপঞ্চাধ্যায়ী’। আকবরের রাজসভার অন্যান্য কবিদের ভিতরে নরহরি, বীরবল, টোডরমল, অলম, গঙ্গ (১৫৭৮-১৬১৭ খ্রিস্টাব্দ), মনোহর কবি, বলভদ্র মিশ্র, কেশবদাস। এর ভিতরে কবি কেশবদাস (১৫৬৫-১৬১৭ খ্রিস্টাব্দ) আলঙ্করিক কাব্যরীতির জন্য খ্যাতি লাভ করেছিলেন। এই কারণে তাঁকে  আলঙ্করিক কাব্যরীতির প্রবর্তক নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। তাঁর প্রধান কাব্যগুলো হলো ‘রসিক প্রিয়া’ (১৫৯১ খ্রিস্টাব্দ), ‘কবি প্রিয়া’ (১৬০১ খ্রিস্টাব্দ)। এই বিশেষ কাব্যধারাকে পরিচিত করে তুলেছেন সাহিত্য ইতিহাসকার রামচন্দ্র শুক্ল (১৮৮৪-১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ)।

খ্রিস্টীয় ১৭শ-১৮শ শতকের কবিদের কাব্যগুলো অতি অলঙ্কারে ভারাক্রান্ত ছিল। তাঁদের কবিতার বিষয় ছিল রস, অলংকার, নায়ক-নায়িকাভেদ, নায়িকার রূপবর্ণনা, ঋতুবর্ণন ইত্যাদি। এই রীতিধারার কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিলেন কবি বিহারীলাল (১৬০৩-৬৩ খ্রিস্টাব্দ)। উল্লেখ্য কবি বিহারীলাল ছিলেন অম্বররাজ জয়সিংহের সভাকবি। এই ধারার অপর কবি ভূষণ (১৬৩১-১৭১২ খ্রিস্টাব্দ) শিবাজীর আদর্শ ও স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্রজভাষায় বীরকাব্য রচনা করেছিলেন। রোমান্টিক কবিদের মধ্যে ছিলেন ঘনানন্দ (১৬৯৯-১৭৪০ খ্রিস্টাব্দ), দাদু-শিষ্য সুন্দরদাস (১৫৯৭-১৬৮৯ খ্রিস্টাব্দ), মলুকদাস (১৫৭৪-১৬৮২ খ্রিস্টাব্দ), অক্ষর অনন্য (১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দ)। তবে রীতিধারার শেষ শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন পদ্মাকর (১৭৫৩-১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দ)। ব্রজভাষায় গদ্যরচনায় সূত্রপাত হয়েছিল খ্রিস্টীয় ১৬শ শতকে। ‘চৌরাশি বৈষ্ণবোঁ কী বার্তা’, ‘দো সৌ বাত্তন বৈষ্ণবোঁ কী বার্তা’ এই জাতীয় গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য নমুনা হিসেবে উল্লেখ করা যায়।

উনিশ শতক থেকেই ব্রজভাষার ধারা ম্লান হয়ে যায়। ওই ভাষার স্থান দখল করে নেয় খড়িবোলি হিন্দুস্থানী। মধ্যযুগের বঙ্গদেশে মিশ্রিত বাংলায় যে সকল কবিতা রচিত হয়েছে, তাকে সাধারণভাবে ব্রজবুলি বলা হয়। এই ভাষায় রচিত পদে মৈথিলি ভাষার প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। বঙ্গদেশে ব্রজবুলির অন্যতম কবিদের ভিতরে ছিলেন গোবিন্দদাস, চণ্ডীদাস প্রমুখ।

মৈথিলি ভাষা ও বিদ্যাপতি

ভারতের বিহার রাজ্য ও নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় তরাই এলাকায় এই ভাষা প্রচলিত আছে। বাংলা, অসমীয়া ও ওড়িয়ার এবং হিন্দির সাথে ধ্বনিগত, শব্দগত এবং বাক্যবিন্যাসে অনেক মিল রয়েছে। ভারতের আদমশুমারিতে এটিকে হিন্দির একটি উপভাষা হিসেবে গণ্য করা হতো। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে এটি ভারতের একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পায়। প্রাচীন মৈথিলি লিপির সাথে বাংলা লিপির মিল ছিল। বর্তমানে মৈথিলি ভাষা দেবনাগরী লিপিতে লেখা হয়। মিথিলা শব্দ থেকে এই ভাষার নাম মৈথিলি গৃহীত হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার কোটি লোক মৈথিলি ভাষায় কথা বলেন। এ ভাষার সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যিক হলেন কবি বিদ্যাপতি।

মানুষের কথিত ভাষার ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষা পরিবারের অন্তর্গত ইন্দো-ইরানিয়ান ভাষা উপ-পরিবারের একটি শাখার নাম− ভারতীয়-আর্য ভাষা। এই শাখার উপশাখা পূর্বাঞ্চলীয় আর্য ভাষা। এই উপশাখার প্রধান ধারার ভাষা হলো সংস্কৃত। স্থানীয় প্রাকৃতজনের ভাষার (অনার্য ভাষা) সংমিশ্রণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা ধরনের মিশ্র ভাষার উদ্ভব হয়। এই সূত্রে বর্তমান ভারতের দক্ষিণ বিহারের মগধ অঞ্চলে যে ভাষার জন্ম হয়, তাকে সাধারণভাবে বলা হয় মাগধি প্রাকৃত। কালক্রমে এই ভাষা বিবর্তিত হয়ে নতুনভাবে বিকশিত হয়। একে সাধারণভাবে বলা হয় মাগধি অপভ্রংশ।

উল্লেখ্য, খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে, বিশিষ্ট বৈয়াকরণ পতঞ্জলি তাঁর ‘মহাভাষ্য’ গ্রন্থে প্রাচীন ভারতীয় প্রাকৃত ভাষাকে অপভ্রংশ নামে অভিহিত করেছিলেন। তিনি সংস্কৃত ভাষার বিচারে প্রাকৃতজনের ভাষাকে অধঃপতিত ভাষা হিসেবে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর মতে, অপভ্রংশ ছিলো শাস্ত্রহীনের ভাষা অশিষ্ট লোক-সাহিত্যের ভাষা। আধুনিক কালের ভাষাবিজ্ঞানীরা মাগধি প্রাকৃত ভাষার শেষ স্তরের নামকরণ করেছেন মাগধি অপভ্রংশ মাগধি অবহট্। পরে এই ভাষা অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ লাভ করে। এসকল ভাষার প্রকৃতি অনুসারে মাগধি অপভ্রংশকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো – পূর্বাঞ্চলীয় মাগধি এবং পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগধি।

পশ্চিমাঞ্চলীয় মাগধিকে সাধারণভাবে ‘বিহারি’  গোত্র নামে অভিহিত করা হয়। এই গোত্রের ১১টি ভাষার মধ্যে মৈথিলি একটি। বাকি ১০টি ভাষা হলো কুরমালি, পঞ্চপরগণিয়া, ভোজপুরি, মাগহি, মাঝি, মুসাসা, সাদরি, সাদরি ওরাওঁ, সরনামি, সূর্যপুরি।

এই ভাষায় রচিত সাহিত্যের সর্বপ্রাচীন নমুনা পাওয়া যায়, উমাপতি ওঝার ‘পারিজাত হরণ’ এবং জ্যোতিরীশ্বর ঠাকুরের ‘বর্ণরত্নাকর’। ধারণা করা হয় এ দুটি গ্রন্থ রচিত হয়েছিল খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। পঞ্চদশ শতকের দিকে বিদ্যাপতি এই ভাষায় কবিতা রচনা করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের অবসানকাল হিসেবে মোটা দাগে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দকে বিবেচনা করা হয়। এরপর শুরু হয় বিদ্যাপতির পদাবলি। গীতগোবিন্দ এবং সমকালীন অন্যান্য কবির ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত বিদ্যাপতি মৈথিলি ভাষায় কাব্য পদরচনা করেছিলেন। মূলত বিদ্যাপতির পদাবলির সূত্রে বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের নবতর ধারার সূত্রপাত হয়েছিল।

১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে ইলিয়াস শাহী রাজবংশের শাসনামলের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের অবসানের ক্ষেত্র তৈরি হয়। এই রাজবংশের শাসনামল শেষ হয়েছিল ১৪১৫ খ্রিস্টাব্দে। এই রাজবংশের প্রথম অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটেছিল রাজা গণেশের উত্থানের মধ্য দিয়ে। এরপর রাজা গণেশ ও তাঁর উত্তরাধিকারীদের শাসনকাল ১৪৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল। এরপর শুরু হয় ইলিয়াস শাহী রাজবংশ, দ্বিতীয় অধ্যায়। ১৪৮৭ খ্রিস্টাব্দে হাবসিদের ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে এই রাজবংশের শাসন চিরতরে লুপ্ত হয়ে যায়। হাবসি শাসন চলেছিল ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় হুসেন শাহী রাজবংশের শাসন আর শেষ হয়েছিল ১৫৩৮ খ্রিস্টাব্দে। ইলিয়াস শাহী রাজবংশের শুরু থেকে হুসেন শাহী রাজবংশের শুরু পর্যন্ত সময়কে মোটা দাগে ১৩৫০-১৫০০ খ্রিস্টাব্দ বিবেচনা করে, বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের অন্ধকার যুগোত্তর কালের প্রথম অধ্যায় নির্দেশিত করা যায়।

বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের ধারায় এই দেড়শ বছরের বৎসরের ভিতরে যে সকল নমুনা পাই, তার সবই বাংলা নাগরিক গান। এই সময়ে লোকগানের কোনো নমুনা পাওয়া যায় না। চর্যাগীতি এবং বাংলা সাহিত্যের অন্ধকারযুগের শেষে বাংলা সাহিত্য ও নাগরিক গানের নবতর ধারার সূচনাকাল ধরা হয়েছে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে। এই সময়ের পরে আমরা বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের নতুন ধারা বিকশিত হয়েছিল বিদ্যাপতির পদাবলি এবং বড়ুচণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের সূত্রে।

তথ্যসূত্র :
১. চর্যাগীতি পদাবলী – সুকুমার সেন, আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ১৯৯৫
২. চর্যাগীতি পরিক্রমা – দে’জ সংস্করণ, জানুয়ারি ২০০৫।
৩. চর্যাগীতিকোষ – নীলরতন সেন সম্পাদিত। সাহিত্যলোক। কলকাতা। জানুয়ারি ২০০১।
৪. বড়ুচণ্ডীদাসের কাব্য  – মুহম্মদ আব্দুল হাই ও আনোয়ার পাশা সম্পাদিত। স্টুডেন্ট ওয়েজ। আশ্বিন ১৩৮৮ সন।
৫. বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত – ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স। জুলাই ১৯৯৮
৬. বাংলা সাহিত্যের কথা – ডঃ মুহম্মদ শহীদউল্লাহ। মাওলা ব্রাদার্স।
৭. ভারতীয় সঙ্গীতকোষ – শ্রীবিমলাকান্ত রায়চৌধুরী। কথাশিল্পী প্রকাশ। বৈশাখ ১৩৭২
৮. সাধারণ ভাষা বিজ্ঞান বাংলা ভাষা  – ডঃ রামেশ্বর শ।
৯. হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান দোঁহা – হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, ১৩২৩ 
১০. http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Aryan_languages
১১. http://en.wikipedia.org/wiki/Magadhi_Prakrit  

মন্তব্য তালিকা - “বাংলা গানের ধারা: ৫০০-১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ”

  1. সুন্দর লেখা। সহজ সাবলীল ভাষায় নির্দিষ্ট বিষয়টির ওপর আলো ফেলা হয়েছে। নতুন কিছু দিক জানা গেল। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।