সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

নিয়েন্ডারথালের গুহা

নিয়েন্ডারথালের গুহা

সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১ ৬২৩ 1

আমরা হলাম গিয়ে ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’। আজ আমরা একা হলেও একসময় আমাদের বেশ কয়েকজন জ্ঞাতি ভাই ছিল এই পৃথিবীতে। আজ অবশ্য তাঁরা আর টিকে নেই। শুধু আমাদের জিনোমে রয়ে গিয়েছে তাঁদের একটু-আধটু জিনোম। এই জ্ঞাতি ভাই’দের মধ্যে সবচেয়ে কাছের জ্ঞাতি ভাই ছিলেন নিয়েন্ডারথালরা। থাকতেন মূলত আজকের ইউরোপে। তারপর একদিন সেখানে হাজির হলেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। আর তাঁদের সাথে যুঝে উঠতে না পেরে আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে নিয়েন্ডারথালরা চিরতরে বিদায় নিলেন ধরাধাম থেকে।

পৃথিবী থেকে মুছে গেলেও আমাদের মন থেকে মুছে যাননি নিয়েন্ডারথালরা। আমাদের জিনোমের দুই শতাংশ জিনোম যাঁদের কাছ থেকে এসেছে, তাঁদের কি অত সহজে ভোলা যায়! তাই আমাদেরই বেশ কয়েকজন বন্ধুবান্ধব আজও পুরো ইউরোপ জুড়ে তন্ন তন্ন করে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন যদি নিয়েন্ডারথালদের কোন নতুন নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়, জানা যায় তাঁদের সম্পর্কে কোন অজানা তথ্য। আর সম্প্রতি তাঁদের কয়েকজন দু’হাত তুলে লাফিয়ে চিৎকার করে বলে উঠেছেন ‘ইউরেকা’! আহ্লাদে হয়ে উঠেছেন ডগমগ।

নিয়েন্ডারথালদের নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন তাঁদের মনে একটা প্রশ্ন ছিল যে নিয়েন্ডারথালরা কি সমুদ্রজাত খাবার-দাবার খেতেন? এর উত্তর পাওয়া সহজ ছিল না। কারণ নিয়েন্ডারথালদের সময়ের তুলনায় আজকের সমুদ্রতল বেশ কিছুটা ওপরে উঠে এসেছে আর তখনকার সমুদ্রতট চলে গিয়েছে জলের তলায়। ফলে সেই সময়   নিয়েন্ডারথালরা যদিও সমুদ্রতটে বসবাস করে থাকেন বা সমুদ্র থেকে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে থাকেন, তার সমস্ত নিদর্শনের সলিলস্বমাধি হয়ে গিয়েছে বহুকাল আগে।

কিন্তু মনপ্রাণ দিয়ে খুঁজলে সব কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়। এইক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন নিয়েন্ডারথালদের সমুদ্রজাত খাবার খাওয়ার অকাট্য প্রমাণ। আর এই প্রমাণ তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন ‘রক অব জিব্রাল্টার’এর গুহাগুলোতে। ‘রক অব জিব্রাল্টার’এর গুহাগুলো সেযুগেও সমুদ্রের ধারেকাছে ছিল। তাই হয়ে উঠেছিল নিয়েন্ডারথালদের বাসস্থান। কিন্তু পাহাড়ের ওপরে হওয়ায়  পরবর্তীকালে সমুদ্রের জলে তলিয়ে যায়নি। তাই টিকে গিয়েছে নিয়েন্ডারথালদের জীবনযাপনের নিদর্শন।

‘রক অব জিব্রাল্টার’এর বিভিন্ন গুহার মধ্যে নিয়েন্ডারথালদের সবচেয়ে বেশি নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে ‘ভ্যানগার্ড গুহা’তে। গবেষকরা ২০১২ সাল থেকে এই ভ্যানগার্ড গুহায় খোঁড়াখুঁড়ি, খোঁজাখুঁজি করে চলেছেন। এইরকমই খোঁজাখুঁজি করতে করতে গতমাসে, জিব্রাল্টার ন্যাশনাল মিউজিয়াম’এর বিবর্ধনমূলক জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্লাইভ ফিনলেসন’এর নেতৃত্বে একদল গবেষক এইখানে খুঁজে পেয়েছেন আলিবাবার এক গুহাকক্ষ যার মুখ মাটি চাপা পড়ে বন্ধ ছিল প্রায় ৪০ হাজার বছর। প্রফেসর ফিনলেসন’এর মতে তাঁদের এই আবিস্কার অনেকটা তুতেনখামেনের সমাধি খুঁজে পাওয়ার মত কারণ গত ৪০ হাজার বছরে এই গুহাকক্ষে মানুষ তো দূরের কথা, কোন পশুপাখিরও পা পড়েনি। সূর্যের আলোরও প্রবেশাধিকার ছিল না সেখানে।

তা বলে তুতেনখামেনের সমাধির সাথে তুলনা? আবেগের আতিশয্যে কি এই তুলনা করলেন প্রফেসর ফিনলেসন? না কি যথার্থতা আছে এই তুলনার? এখনও পর্যন্ত কি খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা ওই গুহাকক্ষে? আর কি খুঁজে পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন তাঁরা? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ক্লিক করুন নিচে দেওয়া লিংকে।

– শান্তনু ভৌমিক

https://www.theguardian.com/world/2021/sep/28/gibraltar-cave-chamber-discovery-could-shed-light-on-neanderthals-culture

মন্তব্য তালিকা - “নিয়েন্ডারথালের গুহা”

  1. তর্কের বিষয় উস্কে দিলেন আপনি l নিয়ান্ডার্থল মানুষ কবে কোথায় কীভাবে এসেছিল জানালে ভালো হয় l তাই কি আমাদের কিছু কিছু মানুষের লাল- চোখ মুখের আদল, অনেকটা ইউরোপিয়ানদের মত ? কি জানি হয়তো বা আপনার কথাই সত্যি l

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।