সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বাংলা ভাষার গঠন প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর পক্ষের এফিডেবিট 

বাংলা ভাষার গঠন প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর পক্ষের এফিডেবিট 

অশোক মুখোপাধ্যায়

অক্টোবর ৫, ২০২২ ৬০৬ 3

 (১)

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ২০২-তম জন্মদিনে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ নানা প্রসঙ্গে ঘুরে ঘুরে অনেকের সঙ্গেই আমার বাংলা ভাষার প্রশ্ন নিয়ে কথা হচ্ছিল। কিছুটা ফেসবুকে, অনেকটা চলভাষে—মুখে কানে মুখে . . . বিষয় ছিল; বিদ্যাসাগর সত্যিই বাংলার ভাষার বিকাশের জন্য কতটা কী করেছেন, তা নিয়ে।

উপলক্ষ—একটা অভিযোগ।

সেই অভিযোগটা আজকাল বাংলার আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে; বাতাসে বা মাটিতে নয়। কেন না, যাঁদের সেই অভিযোগ, তাঁরা অবশ্য উচ্চতর আকাশেই এক ফুলের বাগান রচেছেন। মাটিতে তাঁদের পক্ষে পা রাখা কঠিন। কিংবা ফেসবুকের মাটিতে ঘুরছে বলেও বলা চলে। অভিযোগটা হল: বিদ্যাসাগর সেকাল অবধি চলে আসা কৃত্তিবাস, ভারতচন্দ্র, কালীপ্রসন্ন সিংহ, প্যারীচাঁদ মিত্র প্রমুখর হাতে সুগঠিত কথ্য বাংলার বদলে এক সংস্কৃতগন্ধী সাধু বাংলা কৃত্রিম ভাবে গঠন করে একাধিক পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে সেই যে বাঙালির হাতে তুলে দিয়ে দিয়ে গেলেন, তাতে এক সর্বনাশ হল।

সর্বনাশ? বলেন কী? বিদ্যাসাগরের ভাষা নির্মাণে বাঙালির সর্বনাশ? সাংঘাতিক অভিযোগ তো!

হ্যাঁ, বাদী পক্ষের বক্তব্য হল, এতে এক মহাসর্বনাশ হয়ে গেছে। বাঙালির সেই সজীব সুসমৃদ্ধ কথ্য ভাষার বোলচাল গেছে চিরকালের জন্য হারিয়ে। আরবি, ফারসি, উর্দু, তুর্কি ও বিভিন্ন জেলার স্থানীয় শব্দপুঞ্জ দিয়ে নির্মিত সেই সাবেক বাংলার সুদিন চলে গেল। বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই অস্তমিত হল। সাধু গদ্য বাংলার তৎসম কণ্টকিত বচনই বাংলা ভাষার এক এবং একমাত্র প্রামাণ্য বয়ান হয়ে উঠল।

খুব সূক্ষ্মভাবে দেখলে, বাদীপক্ষের আরও অভিযোগ, হিন্দু বাঙালির বোলচাল সংখ্যাগুরু বাঙালি মুসলিমদের উপরেও চাপিয়ে দেওয়া হল। অন্যদিকে মুসলিম বোলচাল ধীরে ধীরে বাংলার গদ্য-লালিত্যে দুয়োরানির স্ট্যাটাস পেতে থাকল এবং কালে দিনে কার্যত সম্পূর্ণ মুছেই গেল।

সুতরাং রবীন্দ্রনাথ যতই বলুন, বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষার যথার্থ শিল্পী ছিলেন, বাস্তবে তিনি ছিলেন সমকালে প্রচলিত বাংলা লোকপ্রিয় সর্বজনীন গদ্যের এক নীরব কিন্তু সফল বুলডোজার। সাধারণ মানুষ অনেকেই দেরিতে বুঝেছেন, যখন বুঝেছেন, তখন আর কিছু করার ছিল না। ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।

 (২)

একথা ঠিক যে বিদ্যাসাগর যখন সংস্কৃত কলেজ থেকে পাশ করে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে চাকরি করতে ঢুকছেন, তখন বাংলা ভাষায় বেশ কিছু সংবাদপত্র নিয়মিত প্রকাশ হতে শুরু করেছিল। রামমোহন বা মৃত্যুঞ্জয় তর্কালঙ্কারের হাত ধরে সেই গদ্য তখন গুটি গুটি পায়ে তার কিশোরবেলা অতিক্রম করছে। পুরনো বাংলা পদ্য সাহিত্য থেকে শব্দ ও ক্রিয়াপদ গঠনের কলাকৌশল নিয়েই তার অভিযাত্রা। তখনও দাঁড়ি ছাড়া আর কোনো যতিচিহ্ন তেমন একটা ব্যবহার শুরু হয়নি। বানানে শৈথিল্য এখনকার শীলিত পাঠকের চোখে সহজেই ধরা পড়বে। ভাষা-দুনিয়ার নিয়মই বোধ হয় এই। যে কোনো ভাষার লিখিত রূপ যখন পদ্যস্তর অতিক্রম করে গদ্যস্তরে প্রবেশ করে, অনেকদিন পর্যন্ত পদ্যরূপ গদ্য বাগ্‌ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে। বাক্যে কর্তা, কর্ম, ক্রিয়া, বিশেষণ, অব্যয়, ইত্যাদির অবস্থান অনিশ্চিত থাকে।

কিন্তু যে কথাটা এখানে প্রথমেই বলা দরকার, বাংলা গদ্যশৈলীর আধুনিক শরীর নির্মাণের প্রথম সার্থক বাস্তুকার ঈশ্বরচন্দ্র নন, অক্ষয়কুমার দত্ত। কবিগুরু যখন এই শিরোপা ঈশ্বরচন্দ্রে নিবেদন করছেন (১৮৯৪-৯৫), তখন তাঁর জানারই কথা অক্ষয় দত্তের অবদান কোথায় এবং কতটা। সম্ভবত, দত্তর সঙ্গে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীর্ঘকালীন দ্বন্দ্ব, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদনা করা কালীন মতবিরোধ ও বিতর্ক, তার বহু ক্ষেত্রেই মালিকের পরিবর্তে কর্মচারীর জয়লাভ, দত্তর বিজ্ঞানমনস্ক লেখক হিসাবে ক্রমশ প্রসারমান পরিচিতি, অক্ষয় দত্তর হাত ধরে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন আর তিনি ছেড়ে দেবার অল্প দিনের মধ্যেই পত্রিকাটির কার্যত স্বর্গপ্রাপ্তি, এবং সর্বোপরি, রবীন্দ্রনাথের উপরে তাঁর পিতৃদেবের প্রায়-দৈব প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলি মিলিয়ে তিনি সারা জীবন প্রায় অক্ষয় দত্ত সম্পর্কে নীরব থেকেছেন। ব্রাহ্মঘরের এই কুলাঙ্গারকে দেবেন্দ্রনাথ এবং রবীন্দ্রনাথ বোধ হয় কখনই ক্ষমা করতে পারেননি। ফলে কৃতিত্ব স্বীকৃতির ক্ষেত্রে কুণ্ঠা এসে হয়ত তাঁর কণ্ঠকে নিরত বা নিরস্ত করেছে।

ঈশ্বরচন্দ্রের “বেতাল পঞ্চবিংশতি” (১৮৪৭) প্রকাশের বেশ কয়েক বছর আগেই অক্ষয়কুমার দত্তর “ভূগোল” (১৮৪৩) বইটি প্রকাশিত হয়ে গেছে। সেটির পাতা উল্টালেই ধরা পড়বে, কৈশোর উত্তীর্ণ এক সুগঠিত বাংলা গদ্যের আবির্ভাব ঘটেছে। ঈশ্বরচন্দ্র যখন বাংলা গদ্য রচনায় হাত দিলেন তিনি এই ধারাতেই কো-পাইলট হয়ে বসলেন। দুই বন্ধুর অক্ষয় অন্তরঙ্গতা এবং প্রায় সার্বিক মতৈক্য এই কাজে এক প্রবল শক্তি সঞ্চার করল এবং আমাদের স্বীকার করা উচিত, প্রথাগত শিক্ষাপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্র ঈশ্বরের তুলনায় স্কুল শিক্ষা অসমাপ্ত রেখে পেটের দায়ে চাকরি করতে আসা অক্ষয়ের অবদান স্বভাবতই একটু বেশি বলে গণ্য হওয়া উচিত।

এবার থেকে দুই বন্ধুতে মিলে বাংলা গদ্যের যে ধারায় বিকাশ ঘটাতে শুরু করলেন, তা নিঃসন্দেহে সংস্কৃত প্রেরিত। আজ আমাদের যাই মনে হোক, সেদিন বোধ হয় এর অন্যথা হওয়ার ছিল না। বিদ্যাসাগর না হয় সংস্কৃত কলেজের গ্র্যাজুয়েট হিসাবে সংস্কৃতর দিকে একটু বেশি ঝুঁকে ছিলেন। কিন্তু অক্ষয় দত্তের সেরকম কোনো প্রাক্‌-অনুভাবন (orientation) ছিল না, তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচলিত পত্রপত্রিকার বাংলা থেকেই নিজের জন্য এক বাংলাপথ তৈরি করে নিলেন। এবং ঘটনাচক্রে তা বিদ্যাসাগরীয় রীতির সঙ্গে প্রায় হুবহু মিলে গেল।

প্রায় বলছি, কেন না, বিদ্যাসাগর যখন ভবিষ্যৎকাল বোঝাতেন, তিনি লিখতেন — করিবেক, যাইবেক, হইবেক, ইত্যাদি। অক্ষয় দত্ত অনুরূপ ক্ষেত্রে ‘ক’ বাদ দিয়েই লিখতেন —করিবে, যাইবে, হইবে, ইত্যাদি। এই মিলে যাওয়াটা নিশ্চয়ই নিছক সমাপতন নয়। ব্যক্তি চিন্তা ও সামাজিক চাহিদার মেলবন্ধন এবং যোগফল। ইতিহাসের তৎকালীন নির্ধারণ।

এই কথায় যদি কারও আপত্তি থাকে, তাঁকে প্রায় সমকালে আর এক স্বল্প পরিচিত রেনেশাঁস ব্যক্তিত্ব রাজেন্দ্রলাল মিত্রর বাংলা ভাষা নির্মিতির দিকেও দৃষ্টিপাত করতে অনুরোধ করব। একই ছবি চোখে পড়বে। তাছাড়া, বিদ্যাসাগর বা অক্ষয় দত্ত — কারওই সংস্কৃতর প্রতি ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক কোনো ভাবাবেগ বা আকর্ষণ ছিল না। সংস্কৃত ছিল তাঁদের কাছে একটা হাতে গরম শব্দ ও শব্দগঠনের বিপুল সম্ভারযুক্ত একটি খনি। সংস্কৃত ধর্মীয় সাহিত্যের প্রতি যাঁদের ছিল এক অফুরান বীতরাগ, তাঁদের এই আকর ভাণ্ডারের দিকে আকর্ষণের মধ্যে হিন্দুয়ানি বা অন্য কোনো দুর্বলতা খোঁজার মানে হয় না। যদিও আইন করে খোঁজা নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন ওঠে না।

এর মধ্যে কি সজ্ঞানে বা অজ্ঞাতে মুসলিম ঐতিহ্য থেকে আহৃত ভাষা সম্পর্কে কোনো বিকর্ষণ কাজ করেছিল? বিদ্যাসাগরীয় ভাষা কি মুসলমান জনসাধারণের পক্ষে অস্বস্তিকর, গ্রহণ অযোগ্য, হিন্দুয়ানি-সম্পৃক্ত ছিল? আজকাল অনেক বিদ্যাসাগর সমালোচক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এরকম একটা ইঙ্গিত প্রায়শই করতে চাইছেন।

তাঁরা সম্ভবত ভুলেই থাকতে চান, মধ্যোত্তর বাংলায় মুসলমান শাসকদের উদ্যোগেই সংস্কৃত সাহিত্য থেকে বাংলা অনুবাদের কাজ শুরু হয়েছিল এবং সেটা নৈতিক, সামাজিক ও আর্থিক প্রণোদনা লাভ করেছিল। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির তরফে এরকম উদ্যোগের কথা ভাবাই যেত না। ফলে মুসলিম সমাজের কাছে সংস্কৃত কখনই হিন্দুয়ানির সমার্থক বা সমাপতিত ছিল না। সেটা ছিল তাঁদের চোখে প্রাচীন ভারতের জ্ঞানবিজ্ঞান সাহিত্যের অনুশীলন ও সৃজন মাধ্যম। এই কারণেই বিদ্যাসাগর, দত্তরা যে তৎসম কণ্টকিত/সুরভিত বাংলা গদ্যের সুষমা মণ্ডিত কাঠামো তৈরি করে গেলেন, তা হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে আপামর শিক্ষিত বাঙালির কাছে সমাদৃত হয়েছিল।

সেই জন্যই আমরা দেখি, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে যখন মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলম ধরলেন, তখন যেমন তাঁরা সেই বাংলা ভাষায় স্বচ্ছন্দ বিচরণ করতে পেরেছেন, মীর মোসারফ হোসেন বা কিছুদিন পরে যখন রোকেয়া সাখাওয়াত এসে বাংলার সাহিত্যাকাশে উদিত হলেন, তাঁরাও সেই একই ভাষায় কলম চালনা করতে পেরেছেন। তাঁরা যখন মুসলিম ঘরের কিছু কিছু আরবি, ফারসি, উর্দু শব্দ তাঁদের রচনায় ব্যবহার করেছেন, স্বচ্ছন্দে করতে পেরেছেন, কারক বিভক্তি জনিত কোনো অসুবিধাই বোধ করেননি। পর্দাপ্রথা লিখতে গিয়ে যেমন অস্বস্তি হয়নি, ফজরের নামাজ লিখতেও তাঁদের আটকায়নি।

আবার সেই সাধুভাষার অনুশীলন চলতে চলতেই, তারই বিকাশ পথ অনুসরণ করেই, উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে এক সময় কথ্যভাষার চল এসে গেল। অর্থাৎ, দত্ত-সাগরদের সংস্কৃতগন্ধী ভাষার জন্য কথ্য বাংলা গদ্যের উদ্গম কোথাও আটকাল না। অনায়াসে প্রস্ফুটিত হল। রেশমের গুটি থেকে রঙিন প্রজাপতির উদ্বর্তনের মতন। তবে মনে রাখা ভালো, সেই সাধু গদ্যের এক প্রবল আকর্ষণী ক্ষমতা তার পরেও বহুকাল পর্যন্ত বজায় ছিল; ১৯৭০-এর আশপাশ পর্যন্ত।

এর পরে সেই সব কথায় আসব।

(৩)

বিদ্যাসাগর, দত্তদের বহু চর্চিত, বহুকাল অনুসৃত সাধু বাংলা গদ্যের কি বিকল্প ছিল না? ছিল। খুব ভালো রকমই ছিল। তাঁদের কিছু কাল আগে থেকে শুরু করে এক সঙ্গে এবং পরেও কথ্য বাংলা গদ্য রচিত হয়েছে। কালীপ্রসন্ন সিংহর নকশা কিংবা প্যারীচাঁদ মিত্রর ‘আলালের ঘরে দুলাল’ জাতীয় রচনা তো ছিলই। দীনবন্ধু মিত্র এবং মধুসূদন দত্ত তাঁদের রচিত অনেক নাটকেই চলিত ভাষার সংলাপ ব্যবহার করেছেন।

সেই সাধু ভাষার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলেননি? বলেছেন। শিবনাথ শাস্ত্রী এবং হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তাঁরা দুজনেই ঈশ্বরচন্দ্র এবং অক্ষয়কুমারের সাধু বাংলা এবং সংস্কৃত তৎসম শব্দ বহুল গদ্য প্রচলনের বিরুদ্ধে খুব স্পষ্ট ভাষায় অনেক কথা বলেছেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়েরও বিদ্যাসাগরের সংস্কৃতায়িত গদ্যের প্রতি বিরূপ ধারণা ছিল এবং তিনি তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রকাশও করেছেন, যাকে অনেকেই বিদ্যাসাগরের নিন্দাবাক্য হিসাবে দেখে থাকেন।

তাঁদের সেই কথাগুলি কি ভুল? একেবারেই নয়। অত্যন্ত সঠিক কথাই বলেছিলেন তাঁরা তিনজনে। শুধু একটাই সমস্যা ছিল। দেশ, কাল, সমাজ এবং ইতিহাসের বাস্তবিক প্রয়োজন ও সম্ভাবনা না বুঝে এ ছিল তাঁদের নির্বিশেষ (absolute) সত্য উচ্চারণ। যা কালানুগ নয়; সেই কারণেই ব্যবহারযোগ্য নয়, উপযোগিতাহীন। যে কোনো দেশকাল নিরপেক্ষ শাশ্বত সত্য নির্মাণের এই এক বড় সমস্যা। সত্য হলেও তা কারও কোনো কাজে লাগে না। কাজে লাগে যা বিশেষ দেশ ও কালের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে বিশেষ এবং আপেক্ষিক সত্য। সেই অর্থে ক্ষণস্থায়ী, স্বল্পকালীন সত্য। আজ সত্য হলেও যা আগামী দিনে সত্য নাও থাকতে পারে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া সাখাওয়াত, মোহিতলাল মজুমদারদের নিশ্চয়ই সেদিন কেউ কোনোভাবে বাধ্য করেনি সাধু বাংলা গদ্যে ও পদ্যে হাল টানতে বা বৈঠা বাইতে। যেমন, স্বামী বিবেকানন্দকেও সম্ভবত কেউ বাধা দেয়নি, ওহে মহাশয়, আপনি কেন বিশুদ্ধ সাধু গদ্য পরিত্যাগ পূর্বক কলকেতার সিমলের কথ্য বাচনে লিখিতেছেন! অথবা, অচিরেই যখন রবীন্দ্রনাথ চলতি ভাষায় কলমচালনা শুরু করলেন, মোহিতলাল তাঁর কাব্যে আরবি-ফারসি শব্দ আমদানি করলেন, কেউ গেল গেল রব তোলেনি। আর নজরুল এসে যেভাবে ঢাক পেটানো সংস্কৃত, আরবি মিশ্র ভাষায় লিখতে আরম্ভ করলেন তার তো কোনো জবাবই হয় না। তাঁকেও কেউ বলেছে বলে শুনিনি — তুমি কিন্তু প্রাতঃস্মরণীয় বিদ্যাসাগরের গুরুগম্ভীর তৎসম শোভিত ভাষার অবমাননা করছ (অক্ষয় দত্তের নাম তত দিনে বাঙালি ভুলেই গেছে, তাঁর দৌহিত্র সত্যেন্দ্রনাথ দত্তর সাময়িক প্রয়াস সত্ত্বেও)!

কেন না, এমনটাই ছিল গদ্য ভাষা ব্যবহারের বিবর্তন পথের স্বাভাবিক গতিবিধি ও পরিণতি। তার ডায়লেকটিক্স!! তার মোচনের মোচন (negation of negation)! একদিন যে সাধু গদ্য বাগ্‌ধারা পুরনো সতের-আঠার শতকের বাংলা পদ্যের বাক-নৈপুণ্যকে মোচন করে এগিয়ে গেল, পরে আর এক কথ্য ঢঙের বাক্‌-শিল্প এসে তাকেও মোচন করতে চাইল। আরও উন্নততর পর্যায়ে। শুধু গদ্য সাহিত্যে নয়, কাব্যজগতেও। আজ (তিরিশ – চল্লিশ বছর আগে থেকে ধরে) বিদ্যাসাগর অক্ষয় দত্তর গদ্য ভাষা আমাদের কাছে ধূসর স্মৃতিমাত্র। কিছু লোক পাগলামি করে তা নিয়ে বঙ্কিম হইচই না বাধালে আমরা এত দিনে ভুলেই যেতাম, এরকম গদ্য ভাষাও এককালে আমাদের ছিল।

তাই দেখবেন, এবার যে কথ্যভাষা উঠে এল, তা কিন্তু হুতোমি বা আলালি মৌখিক ভাষা নয়। কিংবা কৃত্তিবাসী বা ভারতচন্দ্রীয় ভাষাতেও সে ফিরে গেল না। করিতেছে আর কর্ছে হল না। করছে হল। বলিতেছে বল্ল হল না, হল বলল। ছিল আবার আছিল হয়নি, ছিলই থেকে গেছে।

এদিকে যে নজরুল কাব্য ভাষায় অমন বাঁধ ভাঙা জোরালো শব্দ, ছন্দ নিয়ে এলেন, মধ্যপ্রাচ্যকে কথায় গানে সুরে বাঙালির আত্মীয় করে তুললেন, তাঁর আবার অনেকগুলি উষ্ণ কবিতা ও গান রচিত হল একেবারে বিশুদ্ধ সাধু ভাষায়। “শিকল পরা ছল” কিংবা “কারার ঐ লৌহকপাট” নিপাট কথ্য ভাষায় লেখা, আর ওদিকে “বিদ্রোহী”, “ধূমকেতু”, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” একেবারে কঠোর সাধু ভাষায় রচিত। বিস্ময়, অপার বিস্ময়। বিদ্দেসাগরি বাংলার কী সময়োত্তর আবেদন! মুসলমান সমাজের তরফে তা কি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল? উলটে, এক বিদ্রোহী কবিতাই অন্তত তিন চারটি পত্রিকায় (প্রায় সবই মুসলমান সাহিত্যিক ও লেখকদের দ্বারা সম্পাদিত) পর পর প্রকাশিত হয়েছিল। অবশ্য, “কাণ্ডারী হুঁশিয়ার” গানে “খুন” শব্দ থাকায় কবিগুরু কিঞ্চিৎ মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন বলে কথিত আছে। “হুঁশিয়ার” শব্দে তাঁর কোনো আপত্তি ছিল না বলেই জানি।

এবারে বলি, বাংলায় ভাবগম্ভীর প্রবন্ধ সাহিত্য ও গুরুভাবযুক্ত কথাসাহিত্য সৃষ্টির জন্য উনিশ শতকে বিদ্যাসাগর-দত্তর ভাষার সত্যিই কোনো কার্যকর বিকল্প ছিল না। তাঁরা দুজনেই সচেতনভাবে অথবা মনের অগোচরে বুঝেছিলেন, তত্ত্বকথা লিখবার জন্য যে গদ্য ভাষার প্রয়োজন, তা প্রচলিত কথ্যভাষার বাগধারায় কুলিয়ে উঠবে না। কারণ, তখন অবধি চলিতভাষার যতটুকু সামর্থ্য বিকশিত হয়েছিল, তাতে গভীরতর ও উচ্চতর জ্ঞানের ভাব বহনের ক্ষমতা (gnosiological capacity)-র যথেষ্ট অভাব ছিল। ছিল বলেই সমালোচনা করা সত্ত্বেও শিবনাথ শাস্ত্রী এবং হরপ্রসাদ শাস্ত্রী — দুজনেই নিজেদের যাবতীয় রচনা সাধু ভাষায় লিখেছেন। এমনকি, হরপ্রসাদ তাঁর প্রায় কোনো গল্প উপন্যাসই কথ্য ভাষায় লেখেননি। লেখা সম্ভব ছিল না বলেই লেখেননি।

আর বঙ্কিমচন্দ্র?

সেকালে যদি কেউ সারা জীবন দত্ত ও বিদ্যাসাগরের ভাষার অনুকৃতি করে থাকেন তিনি হলেন বঙ্কিমচন্দ্র। বিদ্যাসাগরের গদ্যের অত নিন্দাটিন্দা করেও তিনি নিজে কিন্তু চলিত ভাষায়, এমনকি কমলাকান্তের দপ্তরও লিখতে পারেননি। কিংবা একটা সামাজিক বা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ। অন্যান্য উপন্যাস রচনা তো অনেক দূরের কথা। সুতরাং তাঁর সমস্ত আপত্তি স্রেফ নৈতিক কারণেই গ্রাহ্য নয়।

বিপরীত পক্ষে, গুরুভাব সমৃদ্ধ রচনার জন্য সাধু ভাষার এক বিরাট আবেদন ছিল। ছিল বলেই ১৯৫০-এর দিকে মার্ক্সীয় পণ্ডিত সরোজ আচার্য যখন “মার্ক্সীয় দর্শন” রচনা করেছিলেন, সেটা লিখেছিলেন প্রায় উনিশ শতকের সাধু ভাষায়। বইটা এককালে বামপন্থী কর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। আমি যখন ১৯৭০ সালের শেষ দিকে কলেজে ঢুকে রাজনীতিতে হাতে কাস্তে নিতে যাই, বইটা পড়ে ভালো লেগেছিল তো বটেই। কিন্তু কারও কাছে এর সেই সাধুগদ্যের সম্পর্কে একটাও বিরূপ মন্তব্য শুনিনি। আবার ১৯৬০-এর দশকে মার্ক্সবাদী লেখক, সম্পাদক ও কবি সরোজ দত্ত যখন রমাঁ রলাঁর এক বিখ্যাত গ্রন্থ অনুবাদ করে লিখলেন “শিল্পীর নবজন্ম”, তিনিও তা লিখবার জন্য বেছে নিলেন একেবারে সেই আদি অকৃত্রিম বিদ্যাসাগরীয় সাধু বাংলা গদ্য। যদ্দুর জানি, এঁদের কারওই সংস্কৃতর প্রতি কোনো অন্ধ আবেগ ছিল না, কিংবা কোনো সুপ্ত মুসলমান বিদ্বেষও কাজ করেনি। স্রেফ বিষয়বস্তু অনুযায়ী রচনার মধ্যে একটা ভারিক্কি চাল ফুটিয়ে তোলার স্বার্থেই বোধ হয় তাঁরা এটা করেছিলেন। বামপন্থী কর্মীদের মধ্যে এই বইটিও বেশ জনপ্রিয়। এখনও এর পুনর্মুদ্রণ হয়ে চলেছে।

এবার একটু কাঁটাতার সীমান্তের ওপারে উঁকি দেওয়া যাক। বাংলাদেশেও এরকম গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটেছে, যারা বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ উত্থাপন করতে বাজারে নেমেছে। ইসলামি মৌলবাদের আলোকে বিদ্যাসাগরের বিরুদ্ধে আয়ুবীয় যুক্তিগুলির পুনর্প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে যে গর্ববোধ বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের ভিত্তি, এবং ইসলামের বিরুদ্ধে একটি বিশাল মাপের প্রতিষেধক, তাকে অনেকটাই দুর্বল করে দেওয়া যায়। সুতরাং ওদেশেরও গভীর বৃন্ত থেকে দু একটা ফুটন্ত সকালের খোঁজ পাই কিনা দেখি।

পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৪ সালে মওলানা ভাসানী যখন একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা শুরু করলেন, তাঁর নাম দিলেন “দৈনিক ইত্তেফাক” (রোজানা ইত্তেফাকও নয়, দৈনিক সম্প্রীতিও নয়)। কী করে পারলেন? পত্রিকাটা অন্তত চল্লিশ বছর ধরে একটানা প্রকাশিত হয়েছে সাধু বাংলা গদ্যে। সকলেই জানেন, ভাসানীর আপনজন ছিলেন গাঁয়ে গঞ্জের গরিব চাষাভুসো সাধারণ মানুষ। বেশির ভাগ পাঠকই মুসলমান। তিনি কী করে এবং কেন (একটি মুসলিম সংখ্যাগুরু দেশে) বিদ্যাসাগরীয় সংস্কৃত প্লাবিত ভাষাকে পত্রিকার বাচন-মাধ্যম করলেন? এই দিক থেকে চিন্তা করলেই আধুনিক, থুরি, উত্তর আধুনিক, উত্তর উপনিবেশবাদী চিন্তাশীলগণ চাইলে বিদ্যাসাগরের ভাষার উপযোগিতা বুঝতে সক্ষম হবেন। আপন অভিযোগের অন্তঃসারশূন্যতাও ধরতে পারবেন।

অবশ্য পারতেই হবে, এমন নয়। 

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলা ভাষার ভিত্তিতে বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয়ে এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করল। ১৯৭২ সালে রচিত হল তার সংবিধান — প্রথমে ইংরেজিতে। তার পর যখন তার অনুবাদ হল, দেখা গেল, পুরো সংবিধানটি লিখিত হয়েছে একশ বছর আগেকার সেই সাধু বাংলা গদ্যে। নিশ্চয়ই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূত তাদের বশংবদ বিদ্যাসাগর আর তাঁর বন্ধু দত্তর প্রেতাত্মাকে দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নেয়নি। বাংলাদেশের যে বুদ্ধিজীবীরা সংবিধান রচনা করেছিলেন, তাঁরা নিজেরাই মনে করেছিলেন, সংবিধানের মতো একটা ঐতিহাসিক দলিলে ভাবগাম্ভীর্য আনতে হলে সাধু বাংলার কোনো বিকল্প নেই।

শুধু ১৮৭০-এ নয়, ১৯৭০-এর দশকেও।

কেন না, তখনও কলকাতায় বা ঢাকায় উত্তর উপনিবেশবাদের শুভ পদার্পণ ঘটেনি।

(৪)

বহু উদাহরণ দিলাম। এরকম আরও অসংখ্য উদাহরণের সাহায্যে দেখানো যায়, বিদ্যাসাগরীয় সাধু ভাষার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলির কোনো সারবত্তা নেই। সামান্যতমও নয়। এই সমস্ত অভিযোগ কোনো সাধারণ মানুষের তরফে কখনও ওঠেনি, উঠেছে জ্ঞানবান কিছু পণ্ডিত ব্যক্তির তরফে এবং তা খুব বেশি দিনের নয়। যে ভাষার নির্মাণে একজন “ব্রাহ্মণ” সন্তান এবং একজন “শূদ্র” সন্তান এক সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে বাস্তুকারের ভূমিকা পালন করেছেন এবং শূদ্র চরিত্রের ভূমিকাই যেখানে অগ্রগণ্য—সেখানে ঈশ্বরচন্দ্রের ভাষা কেবল মাত্র উচ্চবর্গের এলিটদের সহায়ক এবং নিম্নবর্গের মানুষের পক্ষে প্রতিবন্ধক ছিল, সমকালিক ইতিহাসের চোখে যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে কোনো ভাবেই এটা দাঁড়ায় না।

বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সমাজের কাছেও যে সেই সাধু বাংলার প্রতি কোনো অ্যালার্জি ছিল না, তা আশা করি বিভিন্ন স্থান ও কাল থেকে সংগৃহীত আগের বহু দৃষ্টান্ত সহযোগে আমি দেখাতে পেরেছি। যাঁরা বিদ্যাসাগরের সমালোচনা করেন, তাঁরা বেছে বেছে এই সমস্ত উদাহরণকে খুব যত্নের সঙ্গে বাদ দিয়ে বা এড়িয়ে চলেন। কারণ তাঁদের কাছে তাঁদের মতবাদের আলোকে এর একটারও কোনো ব্যাখ্যা নেই।

এতে কি তবে প্রশ্নগুলির মীমাংসা হয়ে গেল? না, আমার আগের মন্তব্যের প্রকরণ থেকেই বোঝা যাবে, এর নিষ্পত্তি সহজে হওয়ার নয়। যাঁরা বিদ্যাসাগরের ভাষায় সামান্যও অস্বস্তি অনুভব করেন না, তাঁরা এই সব আপত্তির কোনো মাথামুণ্ডু খুঁজে পান না। তাঁরা অনেকে জানতে চান, এই সব অদ্ভুতুড়ে অভিযোগ উঠছে কেন এবং কীভাবে? এসবের ল্যাবরেটরি কোথায়? কারা সেটা চালান? ইত্যাদি।

আমার মতো যাঁরা ১৯৫০-৬০-এর দশকে পশ্চিম বাংলার স্কুলে লেখাপড়া করেছেন, তাঁরা আপন অভিজ্ঞতাতেই জানেন, (সরকারি/বেসরকারি) বাংলা পাঠ্যবইয়ের তের আনা পাঠই ছিল সাধু ভাষায় রচিত। সে গল্পই হোক, প্রবন্ধই হোক, কিংবা কবিতা। আনা তিনেকের মতো অংশ থাকত চলতি ভাষার পাঠ। তাতে প্রচুর তৎসম শব্দ আমাদের পড়তে হয়েছে। সে আমলের বাংলা ব্যাকরণের আদলেও ছিল সংস্কৃত সন্ধি-কারক-সমাসের বিপুল চাপ এবং ছাপ। আমার মতো অগণিত ছাত্র ছিল সেইসব স্কুলে, যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান, যারা বস্তি বা কলোনিতে গায়ে গা লাগিয়ে বাস করতাম। আমাদের বাড়িতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাবা মায়েরা খুব একটা লেখাপড়া জানতেন না। আমাদের স্কুলের পাঠে সাহায্য করতে তাঁরা ছিলেন প্রায় অপারগ। প্রাইভেট টিউশন, কোচিং সেন্টার, ইত্যাদির তখন চলও ছিল না, আবার বাড়িতে পয়সাও ছিল না ব্যবস্থা করার মতন। স্কুলের শিক্ষকরাই ছিলেন ভরসা।

আমার মনে পড়ছে না, আমাদের মধ্যে কারও (পদবী নির্বিশেষে) তৎসম শব্দের ভিড়ে বাংলা ভাষা শিক্ষায় কোনো অসুবিধা হয়েছে বলে। কিংবা চলিত ভাষায় লিখতে। হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে বানানে ভুল হত, বাক্যে গুরুচণ্ডালী দোষ ঘটত (বহুকাল আগেই অবশ্য সেই দোষের মোচন ঘটেছে), প্রত্যয় নিয়ে বেশ খানিকটা ধোঁয়াশা থাকত। সেই বাল্যবেলায় আমরা অনেকেই পাড়ার জলসায় কবিতা আবৃত্তি করতাম, তাতেও সাধু ভাষার (“নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ”) এবং চলিত ভাষার (“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে”) দুরকম কবিতাই থাকত, আবৃত্তি করতে গিয়ে মঞ্চে উঠে কদাচ কাউকে ঝামেলায় ফেলেছে বলে তো মনে পড়ে না। গানের কথাতেও দুরকম ভাষাই ছিল, তাতেও গান শুনতে বা করতে কারও কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। এরকম অভিজ্ঞতা নিয়ে যাঁরা বড় হয়েছেন (যদি না তাতে সন্দেহ জেগে থাকে) তাঁরা বিদ্যাসাগর, দত্তর ভাষা নিয়ে এই সব অভিযোগের তাল পাবেন না, এটা স্বাভাবিক।

১৯৮০-র দশকের শেষ দিক থেকে এই সমস্ত গুনগুনানি আমাদের কানে আসতে লাগল, সাধুভাষা নাকি খুব কঠিন, এতে নাকি কোমলমতি বালক-বালিকাদের মাথা ঘুরে যায়, তারা নাকি সমাজের আপামর জনগণের মুখের কথা ধরতে পারে না, জনগণও তাদের সঙ্গে বাক্‌সংযোগ করতে পারে না, সব মিলিয়ে নাকি সে এক দুস্তর ব্যবধান তৈরি হয়ে যাচ্ছে!

আমি মনে করতেই পারছি না, ইস্কুলে সাধু ভাষায় বাংলা শেখার ফলে বাজারে গিয়ে দোকানদারদের “চাউল ক্রয় করিব”, অথবা মাছ বাজারে গিয়ে “রোহিত মৎস্য মূল্য কত” — এরকম বলতাম বলে। বা বাজারে দোকানে কথা বলতে বা কাউকে কিছু বোঝাতে অসুবিধা হয়েছে বলে। বাড়িতে আমরা অক্লেশে পূর্ববঙ্গীয় ভাষায় কথা বলতাম (এখনও সুযোগ পেলেই বলে থাকি)। বাড়িতে পশ্চিমবঙ্গীয় বন্ধু এলে একই সঙ্গে তার সঙ্গে এদেশি ভাষায় আর বাবা মার সঙ্গে বাঙাল ভাষায় কথা বলতে আমাদের এতটুকুও অসুবিধা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। হ্যাঁ, কিছু শব্দের উচ্চারণে আমাদের বাঙাল টোন (ক্যাবল < কেবল, কল্যানি < কোল্যানি, প্রভৃতি) প্রকাশ পেত বহুকাল। তা নিয়ে বন্ধুবান্ধবরা হাসাহাসিও করত। কিন্তু তাঁর পেছনে বিদ্যাসাগর এবং অক্ষয় দত্তের এত বড় যে একটা কারসাজি আছে, আগে জানতেই পারিনি।

আমরা বহু দিন পর্যন্ত সুকুমার রায়ের লেখার ভক্ত ছিলাম। আমি এখনও, এই সত্তরের শুষ্কতার যুগেও পাগলা দাশুর গল্প পড়তে গিয়ে দিব্যি মজা পাই। সাধু ভাষায় লেখা বলে রস পেতে, বুঝতে বা সংলাপ মুখস্থ করতে অসুবিধা হয়েছে বলে কখনও টেরই পাইনি। এখন শুনছি, সেসব নাকি দারুণ কঠিন নিরস বাক্যজঙ্গল ছিল!! আমাদের আনন্দ পাওয়া উচিতই হয়নি! আমি হয়ত মুখুজ্জে বামুন ঘরের ছেলে বলে আনন্দ পেতাম, কিন্তু আমার বন্ধু সজল দাস সুকুমার রায়ের লেখা গল্প পড়ে যে বিরক্ত হয়েছে তা আমরা কেউ টেরটিও পাইনি!!

বাস্তব সত্যটা এই, অক্ষয় দত্ত – বিদ্যাসাগরের আমলে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনের সেই আদিপর্বে একটা সর্বমান্য বা প্রমিত বাংলা গদ্যভাষার জন্মদান ইতিহাসের সামাজিক দাবি ছিল। দুজনেই বুঝেছিলেন — দত্ত আগে, পেছনে বিদ্যাসাগর — যে বাংলা ভাষায় উপযুক্ত চিন্তাশীল ভাবসমৃদ্ধ রচনা সৃষ্টির জন্য সংস্কৃত ভাষার শব্দ ভাণ্ডারকে কাজে লাগাতে হবে। তার ধাতুরূপ, শব্দরূপকেও ব্যবহার করতে হবে নানা রকম নতুন শব্দ ও পরিভাষা সৃষ্টির জন্য।

এটা বিশেষ কোনো জেলার আঞ্চলিক ভাষা হবে না। আবার সমস্ত অঞ্চলের সকল বাংলা ভাষিকের জন্য এর দরজা খোলা থাকবে। এই ভাষার ব্যাকরণ এমন হবে যে নতুন শব্দ সংযোজনে কোনো সমস্যা থাকবে না। যেহেতু মৌখিক ভাষা আর লিখিত ভাষা কোনো ভাষাতেই এক হয় না, তাই, বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক ভাষাগত ভিন্নতা সত্ত্বেও কারও কাছেই তা অপরিচিত মনে হবে না। এই সব হিসাব নিকাশ সামনে রেখেই অক্ষয় দত্ত এবং বিদ্যাসাগর এই নবীন বাংলা গদ্যের শিলান্যাস করলেন, তার পর তিরিশ বছর ধরে এর ইমারত নির্মাণ করে চললেন। আমাদের আজকের দিনের ব্যবহৃত কথ্য ভাষা, যাতে সেই ভাষার কিছু শব্দ সামগ্রী ছাড়া আর প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই, সেই উনিশ শতকের সাধু ভাষারই সার্থক উত্তরাধিকারী; ঠিক মতো বুঝলে।

(৫)

ইতিমধ্যে, এই বঙ্গ প্রদেশে সম্প্রতি একদল বুদ্ধিজীবীর আগমন ঘটেছে, যাঁরা এই সমস্ত অসুবিধা বাংলার দু’শো বছরের ইতিহাস ঘেঁটে, ব্যাপক প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালিয়ে খুঁজে খুঁজে (আসলে খুটে খুটে) বের করেছেন। নিজেদের ভাষার বিকাশের ইতিহাস বেমালুম ভুলে গিয়ে চারপাশের মানুষজনদের ভাষাকৃতি অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করে এক একটা অভিযোগ বের করেছেন এবং পাতে দেবার আয়োজন করেছেন।

কেন? কারণ তাঁদের এই সব অভিযোগ রচনার পেছনে আছে একটা দার্শনিক বিদ্যাপীঠ—যা এই দিকেই তার ছাত্রদের ঠেলতে থাকবে। যেমন আমাদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি (মার্ক্সবাদ, বস্তুবাদ, যুক্তিবাদ ইত্যাদির সমন্বয়ে গঠিত) বারবার অনুরূপ প্রশ্নে বিদ্যাসাগর, অক্ষয় দত্তর পেছনেই দাঁড় করিয়ে দেবে। অভিযোগগুলি যারা ভাগ বণ্টন করে থাকেন, তাঁরা সকলেই যে সেই দর্শনের সচেতন ভক্ত তা হয়ত নয়। কথাগুলির আপাত জৌলুসের কাছে তাঁরা হয়ত অসতর্কভাবে বাঁধা পড়ে যান।

এই উত্তর আধুনিক দার্শনিক বিদ্যাপীঠের মতে, ইউরোপে কোনো নবজাগরণটাগরণ বলে কিছু হয়নি। রেনেশাঁসের নামে যা কিছু বলা হয় তা অতিকথন ছাড়া কিছু নয়। ইউরোপের লুটেরা ব্যবসায়ীরা সারা দুনিয়া জুড়ে যে লুটপাট চালিয়েছিল, অন্য দেশে উপনিবেশ বানিয়ে সেখানকার মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদকে শুষে নিয়েছিল, তারাই তাদের সেই লুটপাটের কাহিনিকে আড়াল করার জন্য রেনেসাঁস-টেনেসাঁস বলে, গালভরা নাম দিয়ে নিজেদের ভূমিকাকে গরিমায়িত করেছিল। কোপারনিকাস উত্তর যে আধুনিক বিজ্ঞান, তাও ইউরোপীয় এলিট সমাজের একটা উদ্ভাবন, তার মধ্যে সার্বজনিক বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ, প্রযুক্তি বলে কিছু নেই। এই স্কুলের কেউ কেউ এমনও বলেছেন, নিউটনের প্রিন্সিপিয়া নাকি নারীসদৃশ প্রকৃতির উপর পুরুষরূপী সমাজের ধর্ষণ ম্যানুয়্যাল। সেই ধ্বংসাত্মক বিজ্ঞানেরই উপরের চাকচিক্য দেখিয়ে, রেল, টেলিগ্রাফ, বিজলি বাত্তি এনে আমাদের মতো উপনিবেশের মানুষকে বোঝানো হত, ওরা অগ্রগণ্য (superior), আমরা পশ্চাদপদ (inferior)। এইভাবে ওরা ওদের আধিপত্য (hegemony) আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। আমরাও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দালালদের (যথা, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, অক্ষয় দত্ত, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, মাইকেল মধুসূদন প্রমুখ) হাত ধরে সেই হেজিমনি স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছি!

পাঠক! কষ্ট হবে জেনেও বলছি, এই অবধি যা বলা হল, তার সবটা যদি আপনি হজম করে নিতে পারেন, বাকি সবই আপনার কাছে জলভাত হয়ে যাবে। ইউরোপে যখন হয়নি, তখন বাংলাতেও নবজাগরণ বলে কিছু হতে পারে না। এটা উপরের মূলতত্ত্বের একটা অনিবার্য উপসিদ্ধান্ত। বাংলার নবজাগরণও অতএব একটা অতিকথন। অনেক দিনের বানানো মিথ। ভারতচন্দ্রের ভাষা মাইকেলের ভাষার তুলনায় অনেক উন্নত ছিল, শুভঙ্করের আর্যার কাছে নিউটনের ক্যালকুলাস দাঁড়ায় না, ইত্যাদি। বিদ্যাসাগর, অক্ষয় দত্ত, জগদীশ বসু, প্রফুল্লচন্দ্রের মাধ্যমে এই ঔপনিবেশিক শাসকরা আমাদের তাঁতশিল্প এবং আমাদের বাক্‌শিল্পকে ধ্বংস করেছে শুধু নয়, তাকে রেনেশাঁসের নামে যুক্তিগ্রাহ্য করে তুলেছে। এমনতরো আরও কত কিছু!

ফলে এটা একটা সামগ্রিক দর্শনের পাঠাংশ। আপনি যদি একবার শেক্সপিয়র বা নিউটনকে ইউরোপীয় বণিকদের হিংস্র লুণ্ঠনের সাহিত্য-বিজ্ঞানরূপী পলেস্তারা বলে ভাবতে বা চালাতে পারেন, তাহলে বিদ্যাসাগর, অক্ষয় দত্ত, জগদীশ বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায় কোন ছার! সবাইকেই ছারখার করে ফেলতে কোনো সমস্যা নেই। তার মধ্যে আবার বিশেষ করে দুজনকে এঁরা চাঁদমারি লক্ষ্য বানিয়েছেন — রামমোহন রায় আর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই দুজনকে একবার পেড়ে ফেলতে পারলে উনিশ শতকের সমস্ত সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক অর্জন এক ধাক্কায় আস্তাকুঁড়ে ফেলে দেওয়া যাবে। আর প্রাচীন ভারতের দেশজ জ্ঞানের জয়ঢাক বাজাতে আর কোনো অসুবিধা থাকবে না! বেতের বোনা ধামা আর তাঁতে বোনা মসলিন দেখিয়ে নিউটন, আইনস্টাইন সবাইকে কুপোকাত করে ফেলা যাবে। ওঁরা বানিয়ে দেখান তো দেখি একটি সবজি রাখার ঝুড়ি!! ছোঃ

আমরা যারা এখনও শেক্সপিয়র বা নিউটনকে ইউরোপীয় বণিকদের হিংস্র লুণ্ঠনের থেকে আলাদা করে ইতিহাসের ক্যানভাসে ফেলে বিচার করি, পশ্চিমের সাহিত্য, বিজ্ঞান ইত্যাদির বিকাশকে কিঞ্চিত সম্মান জানাই, তারা আবার ঔপনিবেশিক শাসনের ধ্বংসলীলা অত্যাচার থেকে বিদ্যাসাগরদের কাজকর্মকে আলাদা করে দেখতে সক্ষম হই। বিদ্যাসাগরের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে সখ্যভাব সত্ত্বেও বিদ্যাসাগরীয় স্কুলে পড়েই যে প্রফুল্লচন্দ্র এডিনবরায় গিয়ে ভারতে ইংরেজ শাসনের ভয়ঙ্কর কুফল নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করতে পারেন — এটা আমরা মনে রাখি। তখন আমরা কোনটা ওদের নিপীড়ন আর কোনটা আমাদের অর্জন, তা আলাদা করে বিচার ও মূল্যায়ন করতে সক্ষম হই। ১৮৭০-এর দশকেই যে ইংরেজ শাসককে বাংলা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের উদ্দেশ্যে Vernacular Press Act আনতে হয়, তারও অর্থ আমরা এই সূত্রেই উদ্ধার করতে পারি। সেই কাছাকাছি সময়েই ইলবার্ট বিলের শ্বেতাঙ্গ বিরোধিতার কারণও হয়ত ধরে ফেলা সম্ভব হয়। ফলে, বিদ্যাসাগরের শিক্ষাসংস্কার থেকে ক্ষুদিরামের ফাঁসির দূরত্ব যে সময়ের মাপে পঞ্চাশ বছরের বেশি নয় — এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য ধরতে আমাদের অসুবিধা হয় না। বিদ্যাসাগর, অক্ষয় দত্তদের নির্মিত সংস্কৃতঘন ভাষার পথরেখা ধরে চলতে চলতেই যে কথ্য বাচনের জন্ম হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে অচিরেই এদেশে সাহিত্যে একটা নোবেল পুরস্কার ঢোকে (যার আর কোনো দ্বিতীয় নজির তৈরি হল না এতদিনে), তারও মর্ম খানিক অনুমান করা যায়। এই উত্তর-আধুনিক দর্শন, তারই এক শাখা উত্তর-উপনিবেশ তত্ত্ব (সেও সেই ইউরোপ থেকেই পাওয়া, আসলে এক প্রকারের ঔপনিবেশিক তত্ত্বই) বিদ্যাসাগরের (ও অন্যান্যদের) মধ্যে, বাংলার নবজাগরণের মধ্যে সমস্যাই খালি দেখতে পায়, অর্জন কিছুই দেখতে পারে না। দেখার লেন্সটাই নেই বলে। আর আমি কে যে আমার কথায় তাঁরা লেন্স বদলাবেন!

সুতরাং এই সব অভিযোগ চলতেই থাকবে। অল্প কিছু মানুষের মধ্যে এর একটা ভালোমন্দ আছে। অন্যদিকে আমরা যারা সহজ সরলভাবে ইতিহাসকে দেখায় অভ্যস্ত, কোদালকে কোদাল এবং পেনসিলকে পেনসিল বলতে শিক্ষাপ্রাপ্ত, তাঁদের পক্ষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং অক্ষয়কুমার দত্তের কাছে আমাদের ভাষাশিক্ষা জ্ঞানের বর্তমান অর্জনের জন্য গর্ব অনুভব, কৃতজ্ঞতাবোধ এবং ঋণস্বীকার একটা স্বাভাবিক ও জরুরি কর্তব্য। প্রতি বছর এবং সারা বছর এই সব কথা আমাদের পুনরুচ্চারণ করে যেতে হবে।

১. এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, ১৯৭০-এর আশেপাশে যে মূর্তিভাঙার আন্দোলন হয়েছিল, তার সঙ্গে এই দার্শনিক মতবাদের কোনো সম্পর্ক নেই বা ছিল না। সরোজ দত্তদের সেই আন্দোলনে ইউরোপীয় নবজাগরণের পরিঘটনাকে অস্বীকার করা হয়নি, তাঁরা মার্ক্সবাদী ছিলেন, ইউরোপের সঙ্গে তুলনা করে বলতেন, বাংলা দেশে বা ভারতে সেরকম কিছু ঘটেনি।

তথ্য সংযোগ:

ডঃ সফিউদ্দিন আহমদ (২০১০), বাংলা গদ্যের জনক বিদ্যাসাগর; বাংলাপ্রকাশ, ঢাকা। [এই চমৎকার বইটির আশ্চর্য সীমাবদ্ধতা হল, এতে অক্ষয়কুমার দত্তর অবদান সম্পর্কে আলোচনা প্রায় নেই বললেই চলে]

মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম (২০২২), “রবীন্দ্রনাথের উপেক্ষার আড়ালে অক্ষয়কুমার”; জিজ্ঞাসা, বর্ষ ৩৭ ১ম-৪র্থ সংখ্যা; ২০২০-২০২১। [এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকার বাইরে বিজ্ঞান চিন্তার বিকাশে অক্ষয় দত্তর ভাষার অবদান বিষয়েও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে]

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৯৬), “বিদ্যাসাগর চরিত”; চারিত্রপূজা, রবীন্দ্ররচনাবলী, ৪র্থ খণ্ড; বিশ্বভারতী, কলকাতা।

অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৯১), বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর; ডে’জ পাবলিশিং, কলকাতা।

সুকুমার সেন (১৯৭৬), বাংলা সাহিত্যে গদ্য; ইস্টার্ন পাবলিশার্স, কলকাতা।

অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় (১৯৬৭), বাংলা গদ্যরীতির ইতিহাস; ক্লাসিক প্রেস, কলকাতা।

প্রমথনাথ বিশী ও বিজিতকুমার দত্ত (সম্পাদিত ১৯৬৫), বাংলা গদের পদাঙ্ক; মিত্র ও ঘোষ, কলকাতা।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৯৬৯), “বাঙ্গালা ভাষা”; বঙ্কিম রচনাবলী, ২য় খণ্ড; সাহিত্য সংসদ, কলকাতা।

সজনীকান্ত দাস ও গোরীশঙ্কর ভট্টাচার্য (১৯৫৯), বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস; মিত্রালয়, কলকাতা।

জহরলাল বসু (১৯৩৬), বাঙ্গালা গদ্যসাহিত্যের ইতিহাস; স্বপ্রকাশিত, কলকাতা।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (২০০৩), উনিশ শতকের বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশনা, ঢাকা।

মন্তব্য তালিকা - “বাংলা ভাষার গঠন প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর পক্ষের এফিডেবিট ”

  1. অনেক দিন ধরে যে কথাগুলো মনের মধ্যে পাক খাচ্ছিল কিন্তু গুছিয়ে একটা প্রবন্ধের আকারে প্রকাশ করতে পারছিলাম না সেগুলোর প্রায় সবই এখানে বলা হয়ে গেছে দেখছি।
    এই সুলিখিত প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ অশোকদা।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।