সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বেদসংহিতার অনুবাদ – দুই শতকের ইতিবৃত্ত

বেদসংহিতার অনুবাদ – দুই শতকের ইতিবৃত্ত

জয়ন্ত ভট্টাচার্য

আগস্ট ১০, ২০২০ ১৫০৭ 9

ঊনবিংশ শতকের পূর্বে ঋগ্বেদ তথা অন্য তিনটি বেদের প্রাচীনতম অংশ বলে পরিজ্ঞাত সংহিতা পর্যায়ের গ্রন্থগুলির কোন আধুনিক ভাষায় অনুবাদের চিন্তন কখনও করা হয় নি। তার মুখ্য কারণ সম্ভবতঃ উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত বা পুরাণের মত ভারতের ব্রাহ্মণদের কাছে বেদসংহিতাগুলির প্রচারের কোন প্রয়োজন ছিল না। এই সংহিতা গ্রন্থগুলি খুব কম ক্ষেত্রে লিখিত রূপে সংরক্ষিত হত, এবং এই প্রাচীন গ্রন্থগুলির অধিকাংশ পাণ্ডুলিপি কিছু বিশিষ্ট ব্রাহ্মণ পরিবারের বাইরে কেউ দেখার বা পাঠ করার সুযোগ পেতেন না।

ঊনবিংশ শতকের সূচনায়, বেদের সংহিতাগুলির মধ্যে ঋগ্বেদের শাকল শাখার সংহিতা, সামবেদের কৌথুম শাখার সংহিতা, কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার সংহিতা, শুক্লযজুর্বেদের মাধ্যন্দিন শাখার সংহিতা ও অথর্ববেদের শৌনকীয় শাখার সংহিতার পাণ্ডুলিপি তুলনামূলকভাবে সহজলভ্য ছিল। কিন্তু, সামবেদের জৈমিনীয় শাখার সংহিতা, কৃষ্ণযজুর্বেদের কঠ ও মৈত্রায়ণী শাখার সংহিতা ও শুক্লযজুর্বেদের কাণ্ব শাখার সংহিতা তুলনামূলকভাবে অনেক দুর্লভ ছিল। ঋগ্বেদের বাষ্কল শাখার সংহিতার ষোড়শ শতকের পর আর কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি। ঋগ্বেদের আশ্বলায়ন শাখার, কৃষ্ণযজুর্বেদের কপিষ্ঠল-কঠ শাখার ও অথর্ববেদের পৈপ্পলাদ শাখার সংহিতার পাণ্ডুলিপি লোকচক্ষুর প্রায় অগোচরে ছিল। চারটি বেদের কয়েকটি শাখার সংহিতা গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি বেশ কয়েক শতক পূর্বেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।

প্রাচীন ও আদি মধ্যযুগের বেশ কয়েকজন বিদ্বান বেদসংহিতা গ্রন্থগুলির কয়েকটি সংস্কৃত ভাষ্য রচনা করেছিলেন। এই ভাষ্যগুলির মধ্যে, ঊনবিংশ শতকের সূচনায় সায়ণাচার্যের ঋগ্বেদের বাষ্কল শাখার সংহিতা, সামবেদের কৌথুম শাখার সংহিতা, কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয় শাখার সংহিতা, শুক্লযজুর্বেদের কাণ্ব শাখার সংহিতা ও অথর্ববেদের শৌনকীয় শাখার সংহিতার ভাষ্য বোধহয় সর্বাধিক খ্যাতি অর্জন করেছিল। মহীধরের রচিত শুক্লযজুর্বেদের মাধ্যন্দিন শাখার সংহিতার ভাষ্যও যথেষ্ট পরিচিত ছিল। বিংশ শতকে বেদসংহিতার অন্যান্য সংস্কৃত ভাষ্যগুলির পুনঃপ্রকাশ ঘটে।

১৭৬০ সালের সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসে ফরাসী সাহিত্যিক ও দার্শনিক ভলতেয়ারের হাতে ভারত থেকে আগত ফরাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর জনৈক সেনানায়ক ‘এজুরবেদম’ নামে বেদের একটি ফরাসী ‘অনুবাদ’ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি তুলে দেন এবং ভলতেয়ার এই অনুবাদটি পড়ে বেদ সম্পর্কে অভিভূত হয়ে পড়েন। ১৭৭৮ সালে এই ‘অনুবাদ’ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। আজ আমরা জানি, এই গ্রন্থের সঙ্গে, প্রকৃত বেদের কোনও সম্পর্ক নেই, এই ফরাসী গ্রন্থের রচয়িতা কোনও জেসুইট মিশনারী, খুব সম্ভবতঃ রবার্তো দ্য নোবিলি (১৫৭৭-১৬৫৬)। এক সুইস সৈনিক কর্নেল আন্তোনি পোলিয়ার জয়পুরের রাজা সওয়াই প্রতাপ সিংহের দরবার থেকে চারটি বেদের সংহিতার পাণ্ডুলিপি প্রথম সংগ্রহ করতে সক্ষম হন, এবং ১৭৮৯ সালে লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দেন। ইউরোপে এই প্রথম প্রকৃত বেদের পাণ্ডুলিপি পৌঁছায়। এরপর, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সংস্কৃতজ্ঞ বিদ্বান হেনরী টমাস কোলব্রুক (১৭৬৫-১৮৩৭) বেদের সংহিতা ও ব্রাহ্মণ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করে লন্ডনে পাঠান। এই সময় থেকেই বেদসংহিতার অনুবাদ করার চিন্তা ইউরোপে শুরু হয়। এর কয়েক দশকের মধ্যেই আধুনিক ভারতীয় বিদ্বানরাও বেদসংহিতার অনুবাদ করার প্রয়াস শুরু করেন।

১৮৩০ সালে জার্মান বিদ্বান ফ্রিডরিখ অগাস্ট রোজেন (১৮০৫-১৮৩৭) কোলব্রুকের সংগৃহীত পাণ্ডুলিপি থেকে ঋগ্বেদসংহিতার কয়েকটি সূক্ত লাতিন ভাষায় অনুবাদ করেন। সম্ভবতঃ এটিই বেদের প্রথম অন্য কোনও ভাষায় অনুবাদ। ১৮৩৮ সালে লন্ডন থেকে রোসেনের ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম অষ্টকের লাতিন অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এই অনুবাদের জন্য সায়ণাচার্যের ভাষ্য, নিঘন্টু ও নিরুক্তের সাহায্য নেওয়া হযেছিল বলে মনে হয়। এর পাঁচ বছর আগেই ১৮৩৩ সালে, এক স্কট মিশনারী জন স্টিভেনসন মুম্বই থেকে ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম মণ্ডলের ৩৫টি সূক্তের ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশ করেন। জন স্টিভেনসন এরপর ১৮৪২ সালে লন্ডন থেকে সামবেদসংহিতার একটি ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশ করেন। এই অনুবাদেরও মূল অবলম্বন ছিল সায়ণাচার্যের ভাষ্য। ১৮৪৭ সালে কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি সংস্কৃত ও অন্যান্য প্রাচীন ভারতীয় ভাষার পাণ্ডুলিপিগুলি ‘বিবলিওথিকা ইন্ডিকা’ গ্রন্থমালা হিসাবে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আর্থিক সাহায্যে ‘বিবলিওথিকা ইন্ডিকা’ গ্রন্থমালার প্রথম গ্রন্থ হিসাবে ১৮৪৮ সালে ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম অষ্টকের প্রথম দুটি অধ্যায়ের (অর্থাৎ, ৩২তম সূক্ত পর্যন্ত) মাধবাচার্যের (বেঙ্কটমাধব) ভাষ্য সমেত এডওয়ার্ড রোয়েরকৃত ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হয়। প্রায় একই সময়, আলেকজাঁদ্রে ল্যাংলয় (১৭৮৮-১৮৫৪) ১৮৪৮-১৮৫১ সালে পারী থেকে চার খণ্ডে ঋগ্বেদসংহিতার সম্পূর্ণ আটটি অষ্টকের ফরাসী অনুবাদ প্রকাশ করেন। ১৮৭২ সালে এই অনুবাদের একটি সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৮৪৮ সালে থিওডোর বেনফে (১৮০৯-১৮৮১) কৃত কৌথুমী সামবেদসংহিতার জার্মান ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৮৪৯ থেকে ১৮৭৫ সালের মধ্যে ফ্রিডরিখ মাক্স মুলার ঋগ্বেদসংহিতার সম্পূর্ণ দশটি মণ্ডল সায়ণভাষ্য সমেত দেবনাগরী লিপিতে প্রকাশ করেন। ১৮৫০-১৮৮৮ সালে ৬ খণ্ডে প্রকাশিত হয় ইংরেজ সংস্কৃতজ্ঞ হোরেস হেমান উইলসনের (১৭৮৬-১৮৬০) ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম সম্পূর্ণ আটটি অষ্টকের ইংরাজী অনুবাদ। উইলসনের স্বীকৃতি অনুযায়ী, এই অনুবাদ ছিল সম্পূর্ণতঃ সায়ণভাষ্য নির্ভর। জার্মান গণিতজ্ঞ ও ভাষাতত্ত্ববিদ হেরমান গুন্টার গ্রাসমান (১৮০৯-১৮৭৭) রচিত দুই খণ্ডে সম্পূর্ণ ঋগ্বেদসংহিতার জার্মান অনুবাদ ১৮৭৬-১৮৭৭ সালে লাইপজিগ থেকে প্রকাশিত হয়। ঊনবিংশ শতকের বেদের সংহিতার শেষ ইংরাজী অনুবাদক রাল্ফ টমাস হচকিন গ্রিফিথ (১৮২৬-১৯০৬)। তিনি ঋগ্বেদসংহিতা (১৮৮৯), সামবেদসংহিতা (১৮৯৩), অথর্ববেদসংহিতা (১৮৯৬) ও শুক্লযজুর্বেদসংহিতার (১৮৯৯) যে অনুবাদ প্রকাশ করেন, সেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সায়ণভাষ্য পরিত্যাগ করে ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বের প্রয়োগের প্রয়াস করা হয়েছে। উইলসন ও গ্রিফিথ ঋগ্বেদসংহিতার অনুবাদে মাক্স মুলারের সংস্করণের পাঠ অনুসরণ করেন। মার্কিন ভাষাতত্ত্ববিদ উইলিয়াম ডুইট হুইটনির (১৮২৭-১৮৯৪) রচিত শৌনকীয় অথর্ববেদসংহিতার ইংরাজী অনুবাদ, তাঁর জীবনাবসানের পর, ১৯০৫ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯১৪ সালে আর্থার বেরিডেল কীথ (১৮৭৯-১৯৪৪) কৃষ্ণযজুর্বেদের তৈত্তিরীয়সংহিতার ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশ করেন। জার্মান ভাষাতত্ত্ববিদ কার্ল ফ্রিডরিখ গেল্ডনার (১৮৫২-১৯২৯) বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে সায়ণভাষ্যের ভিত্তিতে সম্পূর্ণ ঋগ্বেদসংহিতার যে জার্মান অনুবাদ করেন, সেই অনুবাদ তাঁর জীবনাবসানের অনেক পর, ‘হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস’ থেকে ১৯৫১ সালে তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়।

১৮৭৭ সালে আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা দয়ানন্দ সরস্বতী (১৮২৪-১৮৮৩) তাঁর সহযোগীদের সঙ্গে ঋগ্বেদসংহিতার সংস্কৃত ভাষ্য ও হিন্দী অনুবাদ রচনা শুরু করেন এবং ১৮৮৩ সালে তাঁর জীবনাবসান পর্যন্ত তিনি ঋগ্বেদের সপ্তম মণ্ডলের ১৬১ সূক্তের দ্বিতীয় ঋক পর্যন্ত রচনা করতে পেরেছিলেন। ১৮৭৮-১৮৭৯ সালে তিনি শুক্লযজুর্বেদের সংস্কৃত ভাষ্য ও হিন্দী অনুবাদ রচনা করেন। ১৯৫৯ সালে দেবীচাঁদ ‘দ্য যজুর্বেদ’ নামে এই সংস্কৃত ভাষ্যের একটি ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশ করেন। ১৮৭৮ সালে লেখা ‘ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা’ নামে একটি গ্রন্থে তিনি তাঁর পরিকল্পিত চারটি বেদের ভাষ্যের বিশেষত্ব ব্যাখ্যা করেন। এই ব্যাখ্যার মাধ্যমে তিনি বেদের অনুবাদের ক্ষেত্রে একটি সম্পূর্ণ নতুন আধুনিক ধারার জন্ম দেন। ঊনবিংশ শতকের শেষ থেকে বিংশ শতকের সমাপ্তি পর্যন্ত বেশ কয়েকজন বিদ্বান তাঁর এই নতুন চিন্তাধারা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। দয়ানন্দ সরস্বতীর এই নতুন ধারার কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়:

১. দয়ানন্দ সরস্বতী বেদের তেত্রিশ দেবতার বহুত্ব স্বীকার না করে বেদান্ত অনুযায়ী, সমস্ত বৈদিক দেবতাদের এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর বলে ব্যাখ্যা করেছেন। সমস্ত দেবতাবাচক শব্দের অর্থ ‘পরমাত্মা’ বা ‘পরমেশ্বর’ করেছেন।
২. দয়ানন্দ সরস্বতী সায়ণাচার্য ভাষ্য বেদের একই শব্দের অর্থ নিজের চিন্তাধারা অনুযায়ী ব্যাখ্যা করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন অর্থ কল্পনা করে নিয়েছেন। একই ইন্দ্র শব্দের অর্থ বিভিন্ন সূক্তের ব্যাখ্যায় জীবাত্মা, বায়ু, সূর্য, রাজা বা বিদ্বান রাজায় পরিণত হয়েছে, বেদের মত গ্রন্থের কোনও শব্দের অর্থের ক্ষেত্রে এই রকম স্বাধীনতার কথা চিন্তা করা বেদের কোন প্রাচীন বা মধ্যযুগের ব্যাখ্যাকারদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
৩. ঋগ্বেদের শাকল্যকৃত বলে জ্ঞাত ‘পদপাঠ’ অতি প্রাচীন, প্রত্যেক সূক্তের প্রত্যেকটি ঋকের প্রত্যেক পদের সন্ধিবিচ্ছিন্ন স্বতন্ত্র রূপ ও সমাসবদ্ধ পদগুলির ব্যস্ত রূপ এই পদপাঠ থেকে জানা যায়। স্বাভাবিকভাবেই ঋগ্বেদের শব্দগুলির প্রকৃত অর্থ বোঝার জন্য শাকল্যের ‘পদপাঠ’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দয়ানন্দ সরস্বতী অনেক ক্ষেত্রে নিজের বাঞ্ছিত অর্থের প্রয়োজনে শাকল্যের ‘পদপাঠ’কে বর্জন করে নিজসৃষ্ট ‘পদপাঠ’ ব্যবহার করেছেন।
৪. ঋগ্বেদের কিছু সূক্তের ব্যাখ্যা করার জন্য প্রাচীন বা মধ্যযুগের ব্যাখ্যাকাররা ঐ সূক্তের ‘ইতিহাস’ অর্থাৎ ঐ সূক্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাচীন আখ্যানের সাহায্য নিয়েছেন। দয়ানন্দ সরস্বতী এই আখ্যানগুলির সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছেন।

বাংলা ভাষায় ঋগ্বেদসংহিতার অনুবাদের অগ্রদূত দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭-১৯০৫)। ১৮৪৮-১৮৭১ সাল পর্যন্ত ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় তাঁর ১২৪৮টি ঋকের বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় প্রথম সম্পূর্ণ ঋগ্বেদসংহিতার অনুবাদ করেন রমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪৮-১৯০৯)। ১৮৮৫ সালে তাঁর অনুবাদ প্রকাশ শুরু হয় এবং ১৮৮৭ সালে সম্পূর্ণ হয়। তাঁর লেখা ঋগ্বেদের আটটি অষ্টকের বঙ্গানুবাদ কলকাতা থেকে আটটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়। এই অনুবাদের কাজে তৎকালীন কয়েকজন বিদ্বান, যেমন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য, অলোকনাথ ন্যায়ভূষণ প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। তিনি অনুবাদ নিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরও পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। রমেশচন্দ্র দত্ত মূলতঃ সায়ণাচার্যের ভাষ্য অনুসরণ করেছেন, কিন্তু তাঁর পূর্ববর্তী বিভিন্ন ইউরোপীয় ভাষায় অনুবাদকদের মত তিনিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সায়ণাচার্যের ভাষ্য না গ্রহণ করে ব্যুৎপত্তিগত অর্থ গ্রহণ করেছেন। সত্যব্রত সামশ্রমী (১৮৪৬-১৯১১) কৌথুম শাখার সামবেদসংহিতা ও মাধ্যন্দিন শাখার শুক্লযজুর্বেদসংহিতার প্রথম বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেন। তিনিও মূলতঃ সায়ণাচার্যের ভাষ্য অনুসরণ করে অনুবাদ করেন।

শ্রীঅরবিন্দ ১৯১৬ সালে ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম, চতুর্থ, সপ্তম, নবম ও দশম মণ্ডলের কয়েকটি সূক্ত বাংলায় অনুবাদ করেন। তিনি ১৯১৪-১৯১৭ সালের মধ্যে ঋগ্বেদের কয়েকটি সূক্ত ইংরাজীতেও অনুবাদ করেন। শ্রীঅরবিন্দ ১৯১৪-১৯১৬ সাল পর্যন্ত ‘আর্য’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত ‘দ্য সিক্রেট অফ দ্য বেদ’ প্রবন্ধে ও ১৯১৬ সালে লেখা ‘বেদরহস্য’ নিবন্ধে তাঁর নিজের অনুবাদের ধারার ব্যাখ্যা করেন, এই ব্যাখ্যা প্রায় দয়ানন্দ সরস্বতীর সৃষ্ট নতুন ধারার অনুসারী। শ্রীঅরবিন্দের মতে:

১. সায়ণাচার্য, নিরুক্তকার যাস্ক এমনকি পূর্ববর্তী ব্রাহ্মণ গ্রন্থগুলিতেও বেদের সংহিতাগুলির সঠিক ব্যাখ্যা করা হয় নি, কারণ ঐ ব্যাখ্যাগুলি থেকে বেদের ভাষা ও চিন্তা উন্নত বলে মনে হয় না।
২. ঋগ্বেদের সূক্তগুলির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাচীন আখ্যায়িকাগুলি সবই কল্পনা, বেদের প্রাঞ্জল ব্যাখ্যার পরিপন্থী।
৩. ঋগ্বেদের একমাত্র সঠিক ব্যাখ্যা আধ্যাত্মিক, বেদান্তের মূল তত্ত্ব অনুযায়ী এর অর্থ করা উচিত। যেমন, ‘মরুদ্ গণ’ মানে ‘পঞ্চপ্রাণ’, অগ্নি মানে ‘তপোদেবতা’, বায়ু মানে ‘জীবনদেবতা’, সোম মানে ‘আনন্দদেবতা’।
৪. দয়ানন্দ সরস্বতী যেভাবে সংস্কৃত ভাষার বিভিন্ন শব্দের অর্থের সৃষ্টিশীল ও স্বাধীন ব্যবহার করেছেন, বেদের প্রকৃত অর্থ কেবল সেভাবেই বোঝা সম্ভব।

১৯২১ সাল থেকে দুর্গাদাস লাহিড়ী (১৮৫৮-১৯৩২) ৮ খণ্ডে ঋগ্বেদসংহিতা, ৯ খণ্ডে সামবেদসংহিতা, ৭ খণ্ডে কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয়সংহিতা, ২ খণ্ডে শুক্লযজুর্বেদীয় মাধ্যন্দিনসংহিতা ও ৫ খণ্ডে অথর্ববেদসংহিতার বাংলা লিপিতে মূল, সায়ণভাষ্য, বঙ্গানুবাদ এবং ‘মর্মানুসারী’ ব্যাখ্যা প্রকাশ করেন। এই ‘মর্মানুসারী’ ব্যাখ্যায়, প্রয়োজনে কল্পনার সাহায্য নিতেও তিনি দ্বিধাবোধ করেন নি। ১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর সামবেদসংহিতার দ্বিতীয় খণ্ডের সংস্কৃত ভূমিকায় তিনি যে বেদতত্ত্বের উল্লেখ করেছেন, তা তাঁর অনুবাদের ধারা বোঝার সহায়ক। তাঁর বেদতত্ত্ব শ্রীঅরবিন্দের প্রায় অনুরূপ। সাম্প্রতিককালে পরিতোষ ঠাকুরকৃত বেদের সংহিতাগুলির অনুবাদও ‘আধ্যাত্মিক’ ব্যাখ্যা অনুসারী।

১৯৩৩-১৯৫১ সালে নারায়ণ শ্রীপাদ সোনটক্কে ও চিন্তামণি গণেশ কাশীকরের সম্পাদনায় পাঁচ খণ্ডে পুণের বৈদিক সংশোধন মণ্ডল থেকে দেবনাগরী লিপিতে খিলসূক্ত ও সায়ণভাষ্য সমেত সম্পূর্ণ ঋগ্বেদসংহিতার একটি সমীক্ষাত্মক সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এরপর, বৈদিক সংশোধন মণ্ডল থেকে নারায়ণ শ্রীপাদ সোনটক্কে ও ত্রিবিক্রম নারায়ণ ধর্মাধিকারীর সম্পাদনায় পাঁচ খণ্ডে পদপাঠ এবং ভট্ট ভাস্কর ও সায়ণাচার্যের ভাষ্য সমেত কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয়সংহিতা প্রকাশিত হয়। এখান থেকে পাঁচ খণ্ডে পদপাঠ এবং আনন্দবোধ ও সায়ণাচার্যের ভাষ্য সমেত শুক্লযজুর্বেদীয় কাণ্বসংহিতাও প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণগুলি অনুবাদের প্রয়োজনে এখনও সম্ভবতঃ বিশেষ ব্যবহৃত হয় নি।

শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর (১৮৬৭-১৯৬৮) ‘তর্ক সে বেদকা অর্থ’ (১৯২৩) গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বেদসংহিতার শব্দগুলির তিন প্রকার অর্থ করা সম্ভব – আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক। তাঁর মতে, বেদসংহিতার ব্যাখ্যায় এই তিন প্রকার অর্থের উপযুক্তভাবে প্রয়োগ করা উচিত। পারডীর স্বাধ্যায় মণ্ডল থেকে তাঁর রচিত চার খণ্ডে ঋগ্বেদসংহিতার, এক খণ্ডে সামবেদসংহিতার, দুই খণ্ডে শুক্লযজুর্বেদসংহিতার ও চার খণ্ডে অথর্ববেদসংহিতার ‘সুবোধ ভাষ্য’ নামে অভিহিত হিন্দী অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই অনুবাদে তাঁর এই ভাবনার প্রতিফলন দেখা যায়। ১৯৫৪ সালে রামগোবিন্দ ত্রিবেদী কৃত সম্পূর্ণ ঋগ্বেদসংহিতার হিন্দী অনুবাদ প্রকাশিত হয়। তিনি কেবল সায়ণাচার্যের ভাষ্য অনুসরণ করে এই অনুবাদ করেন।

স্বামী জগদীশ্বরানন্দ (১৯০২-১৯৭৮) ১৯৫৮ সালে ঋগ্বেদসংহিতার বঙ্গানুবাদ প্রকাশ শুরু করেন। এরপর তিনি যজুর্বেদসংহিতা (১৯৭২) ও সামবেদসংহিতার বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেন। মূলতঃ সায়ণাচার্যের ভাষ্য অনুসরণ করলেও তিনি বেদের অন্যান্য প্রাচীন ভাষ্যকারদের ব্যাখ্যাও গ্রহণ করেছেন।

১৮৭৬-১৮৮১ পর্যন্ত ‘বেদার্থযত্ন’ নামে ঋগ্বেদসংহিতা পদপাঠ, ইংরাজী ও মারাঠী অনুবাদ সমেত পাঁচ খণ্ডে আংশিকভাবে (চতুর্থ মণ্ডল পর্যন্ত) মুম্বই থেকে প্রকাশিত হয়। অনুবাদক নিজের নাম প্রকাশ না করলেও, এই অনুবাদ শঙ্কর পাণ্ডুরঙ্গ পণ্ডিত (১৮৪০-১৮৯৪)-কৃত বলে অনুমান করা হয়। ১৯২৮ সালে পুণের বৈদিক বাঙ্ময় প্রসারক মণ্ডল থেকে সিদ্ধেশ্বরশাস্ত্রী বিষ্ণু চিত্রাব (১৮৯৪-১৯৮৪) রচিত সম্পূর্ণ ঋগ্বেদসংহিতার মারাঠী ভাষায় অনুবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৭২ সালে তাঁর রচিত অথর্ববেদসংহিতার মারাঠী অনুবাদ পুণের শ্রী অমৃতেশ্বর দেবস্থান থেকে প্রকাশিত হয়।

১৯৬০ সালে ইম্ফলের চূড়াচাঁদ প্রেস থেকে অতোম্বাপু শর্মা (১৮৮৯-১৯৬৩)-কৃত বাংলা লিপিতে মণিপুরী (মেইতেই) ভাষায় ঋগ্বেদসংহিতার প্রথম ২৫টি সূক্তের অনুবাদ প্রকাশিত হয়।

রুশ ভাষাতত্ত্ববিদ তাৎয়ানা এলিজারেনকোভা (১৯২৯-২০০৭) ১৯৭২ সালে ঋগ্বেদসংহিতার কয়েকটি সূক্ত রুশ ভাষায় অনুবাদ করেন। ১৯৮৯-১৯৯৯ সালে তাঁর সম্পূর্ণ ঋগ্বেদসংহিতার রুশ অনুবাদ তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়। ২০০৫-২০১০ সালে তাঁর সম্পূর্ণ অথর্ববেদসংহিতার রুশ অনুবাদ তিন খণ্ডে প্রকাশিত হয়। ভাষা ও লিখনশৈলীর যে বিশ্লেষণ পদ্ধতি অনুসরণ করে এই বেদসংহিতাদ্বয়ের অনুবাদ করা হয়েছে, ‘লাঙ্গুয়েজ অ্যান্ড স্টাইল অফ দ্য বেদিক ঋষিস’ (১৯৯৫) গ্রন্থে তিনি সেই বিশ্লেষণ পদ্ধতির বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে,
১. বেদসংহিতার সঙ্গে পরবর্তীকালের ব্রাহ্মণগ্রন্থে বর্ণিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ না থাকলেও বৈদিক ঋষিকুলের নিজস্ব প্রাচীনতর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে অবশ্যই যোগ ছিল, তাই সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অস্তিত্ব অগ্রাহ্য করে বেদসংহিতার ব্যাখ্যা সম্ভব নয়। ২. বেদসংহিতায় ঋষিরা দেবতাদের সঙ্গে সংযোগের উদ্দেশ্যে ‘দেবভাষা’র প্রয়োগ করেছেন, এই ভাষা সমসাময়িক কথোপকথনের ভাষা নয়। বেদসংহিতার ঋষিদের শব্দচয়ন ও ছন্দের প্রয়োগ, তাঁদের উচ্চারিত ‘বাকে’র পবিত্রতা সম্পর্কে পারম্পরিক ভাবনার দ্যোতক।
৩. বেদসংহিতার অনেক শব্দ একাধিক অর্থবহনকারী। বেদসংহিতায় ঋষিরা তাঁদের ঐতিহ্যগত বিশ্বভাবনা অনুযায়ী ঐ শব্দগুলিকে বিভিন্ন ঋকে প্রয়োগ করেছেন।

২০১৪ সালে তিন খণ্ডে ঋগ্বেদসংহিতার একটি নতুন ইংরাজী অনুবাদ ‘অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। স্টিফানি জ্যামিসন ও জোয়েল ব্রেরেটন-কৃত এই অনুবাদে আবার একটি নতুন ধারার সূচনা ঘটেছে। এই অনুবাদে দুটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়ার প্রয়াস করা হয়েছে, ঋগ্বেদের শব্দগুলির প্রত্ন-ইন্দো-ইরানীয় ভাষায় সম্ভাব্য ব্যুৎপত্তিগত অর্থের ভিত্তিতে ব্যাখ্যা এবং বৈদিক জনগোষ্ঠীর বস্তুগত সংস্কৃতির সম্বন্ধে প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের প্রয়োগ। এই প্রয়াস কতটা সার্থক হয়েছে, এ বিষয়ে বিতর্ক চলছে।

একবিংশ শতকের প্রায় সূচনালগ্ন থেকে আলেকজান্ডার লুবোৎস্কী ও আর্লো গ্রিফিথস অথর্ববেদের পৈপ্পলাদ শাখার সংহিতার কয়েকটি কাণ্ডের ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু, এই বেদসংহিতার এখনও সম্পূর্ণ ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশিত হয় নি।

তথ্যসূত্র:

১. অনির্বাণ (১৯৬১). বেদ-মীমাংসা, প্রথম খণ্ড. Calcutta: Sanskrit College. পৃ.১-৩৬
২. Aurobindo, Sri (1998)[1916]. “The Secret of the Veda” in The Complete Works of Sri Aurobindo, Vol. 15. Pondicherry: Sri Aurobindo Ashram Press. pp. 3-247.
৩. Aurobindo, Sri (2017)[1916]. “বেদরহস্য” in The Complete Works of Sri Aurobindo, Vol. 9. Pondicherry: Sri Aurobindo Ashram Press. pp. 341-346.
৪. Aurobindo, Sri (2017)[1916]. “ঋগ্বেদ” in The Complete Works of Sri Aurobindo, Vol. 9. Pondicherry: Sri Aurobindo Ashram Press. pp. 347-376.
৫. বসু, যোগীরাজ (১৯৫৭). বেদের পরিচয়. কলিকাতা: ফার্মা কে.এল. মুখোপাধ্যায়
৬. চৌবে, ব্রজবিহারী (১৯৯৬) সংস্কৃত বাঙ্ময় কা বৃহদ্ ইতিহাস, প্রথম বেদখণ্ড. লখনঊ, উত্তর প্রদেশ সংস্কৃত সংস্থান
৭. Elizarenkova, T. Ya. (1995). Language and Style of the Vedic Rsis. Albany, New York: State University of New York Press.
৮. Gonda, J. (1975). Vedic Literature (Saṃhitās and Brāhmaṇas). A History of Indian Literature, Vol. I, Fasc 1. Wiesbaden: Otto Harrassowitz. pp.55-63.
৯. Gopal, R. (1983). The History and Principles of Vedic Interpretation. New Delhi: Concept Publishing Company. pp.141-167.
১০. জগদীশ্বরানন্দ, স্বামী (১৯৫৮).ঋগ্বেদ, প্রথম খণ্ড. বেলুড়: শ্রীরামকৃষ্ণ ধর্মচক্র. পৃ.১-৮৪.
১১. Jamison, S.W. and Brereton, J.P. (2014). The Rigveda: The Earliest Religious Poetry of India. New York: Oxford University Press. pp.19-22, 75-83.
১২. Rocher, L. (1984). Ezourvedam: A French Veda of the Eighteenth Century. Philadelphia: John Benjamins Publishing Company.
১৩. সাতবলেকর, শ্রীপাদ দামোদর (১৯২৩) তর্কসে বেদকা অর্থ. ঔন্ধ: শ্রীপাদ দামোদর সাতবলেকর.
১৪. সরস্বতী, দয়ানন্দ (২০১০)[১৮৭৮].ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা. দিল্লী: আর্ষ সাহিত্য প্রচার ট্রাস্ট
১৫. Wilson, H.H. (1866)[1850]. Ṛig-Veda Sanhitá: A Collection of Ancient Hindu Hymns, Constituting the first Ashtaka, or Book of the Ṛig-Veda. 2nd edition. London: N. Trübner and Co. pp.v-li.

লেখক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতক এবং বিগত তিন দশক ধরে বিমান প্রযুক্তিবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত। ইতিহাসের আগ্রহী পাঠক। ইতিহাস নিয়ে লেখালেখির সূত্রপাত সাম্প্রতিক।

মন্তব্য তালিকা - “বেদসংহিতার অনুবাদ – দুই শতকের ইতিবৃত্ত”

  1. বেদের সার সম্পর্কে একটি ভাল বিশ্লেষনমুলক লেখার প্রয়োজন আছে যা সাধারন মানুষের বোধগম্য হয়।

  2. উইলসন, গ্রিফিথ ও রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদের মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা দিলে কার অনুবাদকে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করা উচিত হবে ?

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।