সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সাংস্কৃতিক ইতিহাস

কারণটা ছিল ব্যাংকে গচ্ছিত ববি ফিশারের অর্থ। পরিমাণটা নেহাত কম ছিল না। ১৪০ মিলিয়ান আইস্ল্যান্ডিক ক্রোনার। অর্থাৎ দু’ মিলিয়ান আমেরিকান ডলারের বেশি। তাই তিনি মারা যাওয়ার পরেই তাঁর সেই সম্পত্তির স্বত্ব নিয়ে টানাপোড়েন আরম্ভ হতে বেশি সময় লাগলো না। প্রথমে মার্কিন সরকার আইসল্যান্ডের অর্থ মন্ত্রকের কাছে সুদ সমেত ফিশারের বকেয়া ট্যাক্স আদায় করার জন্যে দাবী করে বসলো। এদিকে আমেরিকা থেকে ববি ফিশারের প্রয়াত দিদি জোয়ানের স্বামী রাসেল টার্গ তার দুই ছেলে আলেক্সজান্ডার আর নিকোলাসকে নিয়ে হাজির হলেন রেইকিয়াভিকে। রক্তের সম্পর্কে জীবিত আত্মীয় হিসাবে তাঁরাও ববি ফিশারের সঞ্চিত অর্থের উপর নিজেদের দাবী জানালেন।
প্রতিদিন ক্যামেরা হাতে দেশ বিদেশের প্রচুর সাংবাদিক তখন জড়ো হচ্ছেন উশিকু ডিটেনশন ক্যাম্পে। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ কোনো অবস্থাতেই ববি ফিশারের সাথে তাঁদের দেখা করার অনুমতি দিতে রাজি নন। প্রথমে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় তারপর গায়ের জোরে সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো কারারক্ষীরা। কোনোক্রমে একজন স্থানীয় রিপোর্টার ভিতরে ঢুকে অনেক দূর থেকে ববি ফিশারকে দেখতে পেলেন। চিৎকার করে ববি ফিশার জানালেন তাঁকে একটা জানলা বিহীন ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঢোকে না সেই কুঠুরিতে। অনেক উপরে একটা ছোট ঘুলঘুলি ছাড়া কিছু নেই। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে আশেপাশের সেলগুলো থেকে তীব্র কটু তামাকের গন্ধ তাঁকে অস্থির করে তুলছে।
১৯৭২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের খেতাব জয়ের পর থেকে ববি ফিশার বাস্তবিক অর্থে কোনো অফিসিয়াল চেস টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন না। ১৯৭৫ সালে খেতাব রক্ষার লড়াইয়ে ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন তাঁর খেতাব বাজেয়াপ্ত করলেও তিনি লিখিত ভাবে কোনো প্রতিবাদ জানাননি। ১৯৭৭ সালে তিনি একবার ম্যাসাচুসেটস গিয়েছিলেন। সেখানে 'ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'-র বিখ্যাত কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড গ্রিনব্ল্যাট কৃত্রিম মেধার সাহায্যে এক বিশেষ ধরণের চেস খেলার প্রোগ্রামিং তৈরী করে ববি ফিশারকে খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গ্রিনব্ল্যাটের দাবি ছিল যে তার কম্পিউটার পৃথিবীর যে কোনো গ্র্যান্ডমাস্টারকে রুখে দিতে সক্ষম। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো তিনবার খেলে তিনবারই জিতলেন ফিশার।
এমনিতে ভারতবর্ষে দাবার ইতিহাস যথেষ্ট পুরনো। ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই ভারতে সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে দাবা খেলার প্রচলন শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল ‘চতুরঙ্গ’। পরে ভারত থেকে খেলাটা আমদানি হয় পারস্য বা আধুনিক ইরানে। সেখানে আবার খেলাটার নাম দেওয়া হয় ‘শতরঞ্জ’। পরে ইরান দখল করার পর আরবরা এই খেলাটার সাথে পরিচিত হয়। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাটরাও ‘শতরঞ্জ’ খেলতে উৎসাহী ছিলেন। তবে তখন খেলাটা সীমাবদ্ধ ছিল দরবারের আমির ওমরাহ আর ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এরপর মুঘল ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই দাবা খেলা চলে আসে দক্ষিণ ইউরোপে। তারপর ইউরোপ থেকেই এই খেলাটা মূলত আজকের আধুনিক দাবার রূপ নেয়। দাবা খেলায়‘ চেকমেট’ শব্দটা খুব সম্ভব ইরানে প্রচলিত ‘শাহ মাত’ কথাটা থেকেই এেছে ।