সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো লেখা

পেনি ইউনিভার্সিটি— নামটা কানে বেশ একটু অদ্ভুত শোনাচ্ছে বটে, কিন্তু অক্সফোর্ড শহরের কফির দোকানগুলোকে তখন এই নামেই ডাকে সেখানকার মানুষ। শব্দটা সপ্তদশ শতাব্দীর। সময়টা আন্দাজ ১৬৫০। অক্সফোর্ড শহরের রাস্তার ধারে খোলা হয়েছে ইংল্যান্ডের প্রথম কফিহাউস। মাত্র এক পেনির বিনিময়ে সেখানে মেলে ফায়ার প্লেসের ধারে সুগন্ধি গরম কফি, বিদগ্ধ আলোচনা আর জ্ঞানী-গুণী মানুষজনের সান্নিধ্য। অক্সফোর্ডের ছাত্র বা শিক্ষক না হয়েও সেখানকার জ্ঞানী-গুনী মানুষের সঙ্গে সমানে সমানে কথাবার্তা, আলোচনা, তর্ক বিতর্কের সুযোগ। সঙ্গে? কফি। পৃথিবীর অন্য প্রান্ত থেকে আসা চনমনে সুগন্ধি এক নতুন পানীয় যা মানুষের শরীর মন দুইই চাঙ্গা করে দেয়।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। এদেশে আধুনিক রসায়নচর্চার পথিকৃৎ। রসায়নবিদ হিসাবে যতটা তার চেয়েও বেশি ছিলেন সমাজসংস্কারক, শিল্পোদ্যোক্তা, ছাত্রবৎসল, শিক্ষাবিদ। সারা জীবনে প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন একটা অগোছালো, উদ্দেশ্যহীন, আত্মবিস্মৃত জাতিকে বলিষ্ঠ, স্বনির্ভর, আত্মসচেতন সত্তায় সংগঠিত করতে। জাতিটার নাম—বাঙালি। বিজ্ঞান বিষয়ক নানা প্রবন্ধ লিখেছেন পরম মমতায়। শিবনাথ শাস্ত্রী সম্পাদিত ছোটদের পত্রিকা 'মুকুল'-এ লিখেছেন 'পশুর কৌতুকপ্রিয়তা', 'প্রকৃতি' পত্রিকায় লিখেছেন 'প্রাণীদিগের দংশন কাহাকে বলে?'। বালক- বালিকাদের উপযোগী করে বাংলায় সচিত্র বই লিখলেন 'সরল প্রাণীবিজ্ঞান'। অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ ছড়িয়ে আছে সেকালের নানা সাময়িক পত্রে। সেই সংগ্রহ থেকে শোনাব দুটি গল্প।
আমার জন্ম বেলারুশে, ডাক্তারদের একটি পরিবারে। আমার বাবা-মা আমাদের রেখে যেতেন একজন আয়ার যত্নে, যিনি বেলারুশের গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলেন। আয়া বেলারুশের রূপকথার গল্প বলতেন, তাকে বিরক্ত করলে চিৎকার করতেন ‘পেরুন তোকে ধরে নিয়ে যাবে’! পেরুনকে (প্রাক-খ্রিস্টিয় পাগান স্লাভদের মূল দেবতা) তিনি স্বর্গে বসবাসকারী এবং ঝড়, বজ্রপাত আর বজ্রপাতের নিয়ন্ত্রক বলতেন। বিজ্ঞান পেরুন সম্পর্কে আমার ছেলেবেলার আয়ার চেয়ে সামান্য বেশি জানে। এমনকি আমরা যে কয়েকটি তথ্য সংগ্রহ করতে পেরেছি তা পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং তাঁর সঙ্গে যুক্ত পৌত্তলিক দেবতাদের সম্পর্কিত; যেমন বলি, মূর্তি, শপথ, নাম সংকীর্তন ইত্যাদি। (‘পেরুনের পুনরুত্থান, পূর্ব স্লাভিক পৌত্তলিকতার পুনর্গঠনের জন্য’ বইটির১ ভূমিকা, ২০০৪)