সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

কোম্পানি বনাম পার্লামেন্ট – ‘নাবুব’ বিতর্ক ও ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট

কোম্পানি বনাম পার্লামেন্ট – ‘নাবুব’ বিতর্ক ও ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট

অর্কপ্রভ সেনগুপ্ত

মে ২৭, ২০২৩ ২৪২ 3

সময়টা অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ। দোয়াত থেকে চলকে পড়ে যাওয়া কালির মতো ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্রে ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লাল রং। ১৭৫৭ সালেই পলাশীর প্রান্তরে বণিকের মানদণ্ড বাংলায় দেখা দিয়েছে শাসকের রাজদন্ড রূপে। আর সেই রাজদন্ডকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছেন ১৭৬৫ সালে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হিন্দুস্থানের মহামহিম বাদশাহ, সুলতান-ই-আজম দ্বিতীয় শাহ আলম স্বয়ং। মহামান্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লাভ করেছে বাংলা-বিহার-ওড়িশার দেওয়ানী। ইউরোপের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যে এতদিন পাল্লা ভারি ছিল ভারতের দিকেই। এমন কোনও পণ্য ইউরোপীয়দের কাছে ছিল না, যার ভারতে বিপুল চাহিদা ছিল। কিন্তু ভারতে পাওয়া যায় বা উৎপাদিত হয় এমন দ্রব্যাদির (যেমন – মশলা, মসলিন ও হিরে) চাহিদা ছিল ইউরোপে আকাশ ছোঁয়া। বাণিজ্যের ভারসাম্য দীর্ঘকাল ছিল ভারতের দিকেই হেলে। ভারত থেকে ইউরোপ নিয়ে যেত মশলা, বস্ত্র,দুর্মূল্য রত্ন – আর তার পরিবর্তে ভারত লাভ করত রাশি রাশি সোনা ও রূপো। এই সমীকরণ রোমান আমল থেকেই চলে আসছিল।

কিন্তু ভারতে কোম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা এই দীর্ঘকালের প্রবণতাকে ঘুরিয়ে দিল উল্টো দিকে। ভারতের সম্পদ যথাসম্ভব নিংড়ে নিয়ে যাওয়াই হয়ে দাঁড়ালো কোম্পানির ধ্যানজ্ঞান। এই কাজে বৈধ-অবৈধ কোনও পন্থাই তারা বাকি রাখল না। ১৭৭০ সালে বাংলার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা ( কিছু মতে আরও অধিক) যখন দুর্ভিক্ষের ফলে মৃত্যুবরণ করল, তখন এই বিশাল মৃতের স্তূপের নৈতিক দায়িত্ব লন্ডনে কোম্পানির লিডন হল স্ট্রিটের সদর দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিদের আর বোর্ড মেম্বারদের রাতের ঘুম বিন্দুমাত্র নষ্ট করেনি। এই নিয়ে তাঁরা বিন্দুমাত্র মাথাও ঘামাতেন না, যদি এই ব্যপক লোকক্ষয়ের ফলে বাংলার রাজস্ব হ্রাস পেয়ে তাঁদের মুনাফায় টান না পড়ত। তাঁদের এই নির্লজ্জ, নৈতিকতাহীন দিনে ডাকাতি বর্ণনা করা যায় এমন কোনও শব্দ ইংরেজি অভিধানে ছিল না। তাই ভারত থেকেই ইংরেজি ভাষাতে প্রবেশ করল একটি নতুন শব্দ – ‘লুট’ (Loot)।

একথা মনে হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক, যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তার কর্মচারীদের কার্যকলাপ ইংল্যান্ডের জনতা ও সরকার খুবই ইতিবাচক ভাবে দেখেছিলেন। পরবর্তীকালে ভারতে যখন ব্রিটিশ শাসন জাঁকিয়ে বসল এবং কোম্পানির হাত থেকে ভারতের শাসনভার ক্রমে চলে গেল ব্রিটিশ রাষ্ট্রের হাতে, তখন ইতিহাসের ভাষ্যকে সেই ভাবেই নির্মাণ করার প্রচেষ্টা হয়েছিল। রবার্ট ক্লাইভের মতো চরিত্র সেই ইতিহাসে উঠে এসেছিলেন সচেতন সাম্রাজ্য নির্মাতা হিসেবে, যাঁদের দূরদর্শিতা ছিল সুদূরপ্রসারী ও যাঁদের কাজের প্রেরণা ছিল রাজা ও স্বদেশ ( King and Country)। আমরা, ভারতীয়রা, যখন স্কুল স্তরে ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিস্তারের ইতিহাস পাঠ করি, আমরাও কিন্তু কার্যত এই ভাষ্য মেনে নিই। ক্লাইভ বা হেস্টিংস – আমাদের কাছে ভারতে ভাগ্যপরীক্ষা করতে আসা কোনও বেসরকারী কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ধরা দেন না। ধরা দেন সামগ্রিক ভাবে ব্রিটিশ রাষ্ট্রেরই প্রতিভূ হিসেবে। আমরা কার্যত ধরেই নিই, কোম্পানির সকল পদক্ষেপেই তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রের সম্মতি ছিল এবং সমসাময়িক ব্রিটিশ জনমতও ভারতে কোম্পানির শাসনের পক্ষেই ছিল। বাস্তব ইতিহাস, খুব স্বাভাবিক ভাবেই, এতো সোজাসাপ্টা নয়।

১৭৭০-এর দশকে ব্রিটেনের একটি অন্যতম জনপ্রিয় নাটক ছিল স্যামুয়েল ফুটের ‘দ্য নাবুব’ (The Nabob)। ১৭৭৩ সালে ডাবলিনের থিয়েটার রয়্যাল-এ এটি প্রথম মঞ্চস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা অসম্ভব লোকপ্রিয় হয়ে ওঠে। ‘লুট’-এর মতোই ‘নাবুব’ কথাটিও (‘নবাব’-থেকে) ইংরেজি ভাষায় সদ্য ভারত থেকে রপ্তানি হয়েছে। ভারত লুঠ করে রাতারাতি বিশাল সম্পদের অধিকারী হয়ে গিয়েছিলেন যে সব কোম্পানির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা, তাঁদেরকেই শ্লেষ দিয়ে বলা হতো ‘নাবুব’। এই নাটক যে ‘নাবুব’-এর চরিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে, তার নাম হলো স্যার ম্যাথু মাইট। নাটকে দেখানো হয়েছে, এই মাইট মহাশয় বাল্যকালে ছিলেন অতি বখাটে ও অভদ্র। দেশে থাকলে তাঁর ভবিষ্যৎ অন্ধকার ছিল। কিন্তু তিনি ভাগ্যপরীক্ষার জন্য কোম্পানির চাকরি নিয়ে ভারতে যান এবং তারপর দেশে ফিরে, নাটকের ভাষায় ভারত থেকে নিয়ে আসা ‘the spoils of ruined provinces’-এর জোরে ব্রিটিশ উচ্চ সমাজে জাঁকিয়ে বসেন। মাইট প্রভূত অর্থের অধিকারী, টাকার গরমে তার মাটিতে পা পড়ে না। তার বিদ্যাবুদ্ধি আদতে কিছুই নেই, কিন্তু নিজেকে সে বিশাল বড়ো ঐতিহাসিক অ্যান্টিকের বোদ্ধা মনে করে। যোগ্যতা না থাকলেও অর্থের বলে মাইটের জন্য ব্রিটেনের নামীদামী ক্লাব আর সোসাইটির দ্বার উন্মুক্ত। কিন্তু এইটুকুতে মাইট খুশি নয়, সে চায় পার্লামেন্টের সদস্য হতে। তার নজর আর্থিক ভাবে দরিদ্র কিন্তু সৎ চরিত্রের অধিকারী জনৈক স্যার জন ওল্ডহ্যামের আসনটির দিকে। নাটকে দেখানো হয়, এমন কোনও হীন কাজ নেই, যা মাইট করতে পারে না। সে ব্রিটেনে নিজের হারেম বানানোর আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে, নিজের নামে নির্মাণ করতে চায় একটা স্মারক স্তম্ভ, যা পাহারা দেবে বাংলা থেকে নিয়ে আসা তিন ‘ব্ল্যাক নেটিভ’। মাইট গোপনে ওল্ডহ্যামের সকল ঋণ কিনে নেয়, যাতে ওল্ডহ্যাম তার কাছে মাথা নত করতে বাধ্য হয়। সে ওল্ডহ্যামের দুই মেয়েকে কলকাতায় পাঠানোর ফন্দি করে। নাটকে ওল্ডহ্যাম বনাম মাইটের দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত ভাইয়ের সাহায্যে ওল্ডহ্যামই বিজয়ী হন। লেডি ওল্ডহ্যাম কিন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন না। মাইট শুধু একজন ব্যক্তি নয়, ভারতীয়দের লুঠ করে সেই সম্পদ নিয়ে ব্রিটনে ঢুকছে হাজার হাজার মাইট। তারা বিষিয়ে দিচ্ছে দেশের নৈতিকতা। লেডি ওল্ডহ্যাম হাহুতাশ করেন – ‘With the wealth of the East, we have too imported the worst of its vices.’।

কোম্পানির ভারতে শাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে ব্রিটিশ নাগরিকদের জনমত ঠিক কি ছিল, তা চমৎকার বোঝা যায় ‘দ্য নাবুব’-এর কাহিনী থেকে। কোনও সাম্রাজ্য বিস্তারের গর্ব বা নতুন দেশে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার অস্মিতা নয় – সাধারণ জনতা থেকে লন্ডনের পার্লামেন্ট, সকলের কাছে কোম্পানির কার্যকলাপ জন্ম দিয়েছিল এক নৈতিক আতঙ্ক (‘Moral Panic’)-এর অনুভূতির। পূর্বে আলোচিত নাটকের ম্যাথু মাইট-এর চরিত্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল রবার্ট ক্লাইভেরই আদলে। অর্থাৎ দূরদর্শী সাম্রাজ্য নির্মাতা নয়, তাঁকে তৎকালীন ব্রিটিশ নাটকে দেখানো হয়েছিল একজন নীতিহীন, রুচিহীন ব্যক্তি হিসেবে যার লোভী হাত থেকে ‘…a plain English gentleman, or an innocent Indian one..’-কেউই সুরক্ষিত নয়। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে হোরাস ওয়ালপোল হাহুতাশ করে লেখেন – ‘What is England now ? – A sink of Indian wealth, filled by nabobs…A gambling, robbing, wrangling, railing nation without principles, genius. Character or allies.’

প্রধান সমস্যা ছিল দুটো। একটা হলো, এই ভারত ফেরত ‘নাবুব’-দের ব্রিটিশ রাজনীতিতে ক্রমবর্ধমান প্রভাব। এই সময় অর্থ দিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আসন কেনা একটি সাধারণ ব্যাপার ছিল। কিন্তু তাতে একটা আব্রু পূর্বে রাখা হতো। নিজের কেন্দ্রে গিয়ে প্রার্থী স্থানীয় নির্বাচকদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন, পুরনো নির্বাচিত প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপ জমাতেন। এগুলোকে ধরা হতো সাধারণ ভদ্রতা। কিন্তু ‘নাবুব’রা ব্রিটিশ উচ্চশ্রেণীর এই ‘আব্রু’-র ধার ধারতেন না। তাঁরা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রকাশ্যে টাকা ছড়িয়েই পার্লামেন্টের আসন ক্রয় করতেন। প্রথম প্রথম একটা দুটো আসন যখন এঁরা ক্রয় করছিলেন, ব্রিটিশ শাসক শ্রেণী তেমন কিছু চিন্তিত হয়নি। কিন্তু যখন দেখা গেল পার্লামেন্টে মোট ৫৫৮-টি আসনের মধ্যে ‘নাবুব’-দের আসন সংখ্যা ৪৫ এবং ক্রমবর্ধমান, তখন ব্রিটিশ সরকারের টনক নড়ল। তাঁরা ক্রমে উপলব্ধি করলেন কোম্পানি ফ্র্যাঙ্কেস্টাইনের মতো একটি দানব হয়ে দাঁড়িয়েছে। পার্লামেন্টের অনুমতিক্রমে কোম্পানির ভারতে বাণিজ্য করার কথা। কিন্তু দেখা যাচ্ছিল উল্টে কোম্পানির ‘নাবুব’-রাই পার্লামেন্টে ক্রমশঃ তাদের প্রভাব বিস্তার করছে। কোম্পানি রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি রাষ্ট্র হিসেবে নিজের প্রভাব বিস্তার করছে গড়ে তুলছে সাম্রাজ্যের মধ্যে সমান্তরাল আরেকটি সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্য পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ নয়, দায়বদ্ধ নয় ব্রিটিশ জনতার কাছেও। তাদের দায়বদ্ধতা একমাত্র নিজেদের মুনাফা এবং কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের নিকট। এই মতামত ক্রমশ ব্রিটিশ শাসক গোষ্ঠীর মধ্যে সুদৃঢ় হতে লাগল, নাটকের ম্যাথু মাইটের মতো এই ভুঁইফোড় কোম্পানির ‘নাবুব’রা ভারতীয় শাসন ও সমাজব্যবস্থার নিকৃষ্টতম প্রবণতাগুলিকে ইংল্যান্ডে ক্রমশ বহন করে নিয়ে আসছে। ব্রিটিশ মধ্যবিত্ত জনতার মধ্যেও এই ভীতি তৈরি হলো, গৌরবময় বিপ্লবের পর ইংল্যান্ড তার রাজনীতি থেকে একচ্ছত্র ক্ষমতা ও স্বৈরতন্ত্রের যে ধারণাকে নির্বাসন দিয়েছিল, স্বেচ্ছাচারের মাধ্যমে ভারত শাসনে অভ্যস্ত এই ‘নাবুব’ গোষ্ঠী সেই ঐতিহ্য আবার ফেরত নিয়ে আসছে।

দ্বিতীয় সমস্যা ছিল নৈতিক। ব্রিটিশ জনতা ও শাসক শ্রেণী নিজেদের একটি সভ্যতা বিস্তারের শক্তি বলে মনে করতে অভ্যস্থ ছিল। সভ্যতার সংজ্ঞা তাঁদের কাছে ছিল – যারা ঈশ্বর প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে মানব সমাজকে সমৃদ্ধ করতে পারে তারাই সভ্য। আফ্রিকা বা উত্তর আমেরিকার আদি বাসিন্দাদের ঠিক এই কারণেই ব্রিটিশরা সভ্য মনে করত না। যুক্তি ছিল, বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তারা সেই সম্পদকে কাজে লাগায়নি, গড়ে তুলতে পারেনি কোনও উন্নত নগরভিত্তিক সভ্যতা। সুতরাং তাদের সম্পদ, জমি কেড়ে নিয়ে ইংল্যান্ডের উপনিবেশ গড়ে তোলার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। বরং যেহেতু এই কাজের মাধ্যমে মানবসভ্যতা প্রসারিত হবে, তাই দৈবের এতে বিলক্ষণ সম্মতি আছে। নিঃসন্দেহে বিচিত্র এই যুক্তি, বিবেককে স্তব্ধ করতে বিচিত্র আত্ম-প্রবঞ্চনাময় এক মানসিক কসরত। কিন্তু এতকাল এই যুক্তির মাধ্যমেই উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকায় উপনিবেশ বিস্তারকে সাধারণ ইংরেজ জনতার কাছে গ্রহণযোগ্য করা হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকায় স্পেনের অ্যাজটেক ও ইনকা সাম্রাজ্যের বিজয় ও সেখানকার স্পেনীয় ঔপনিবেশিক শোষণকে ইংরেজ লেখকরা এতকাল কড়া ভাষায় নিন্দা করেছেন এই যুক্তি দিয়েই যে ওই দুটি আমেরিন্ডিয়ান রাজ্যে নগরকেন্দ্রিক উন্নত সভ্যতা ছিল, অতএব সেখানে সাম্রাজ্য বিস্তারের কোনও অধিকার স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের ছিল না। ভারতে কোম্পানির সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও যথেচ্ছ লুঠ-তরাজ ও অপশাসনের ফলে উপনিবেশ বিস্তারের স্বপক্ষে এইসকল  নৈতিক কসরত মুখ থুবড়ে পড়ল। ব্রিটিশ সভ্যতার মাপকাঠিতে স্পষ্টতই ভারতীয় সভ্যতা ছিল উত্তর আমেরিকা ও আফ্রিকার জনজাতিদের সভ্যতার থেকে বহুগুণ উন্নত। ভারতীয়দের ‘সভ্য’ করার জন্য উপনিবেশ বিস্তারের প্রয়োজন, এই যুক্তি দেওয়া কঠিন। আর কোম্পানির লুঠ-তরাজকে মহাবীরত্বের কাজ বলে দেশবাসীর কাছে ব্যাখ্যা করা আরও কঠিন। সুতরাং, যে রাজনৈতিক প্রশ্ন উঠে এলো, তা হলো, কোম্পানি ভারতে যে এক বিশাল সাম্রাজ্য জয় করেছে সত্যি, তার নৈতিক ভিত্তি কি হবে ?

কোম্পানির কাছে এর উত্তর তৈরি ছিল। ক্লাইভ স্বয়ং এই বিতর্কে মাঠে নামেন। তিনি বলেন ভারতীয়দের যত সভ্য ভাবা হচ্ছে, তারা তা আদৌ নয়। স্বৈরাচারই তাদের শাসন করার একমাত্র উপায়। ব্রিটিশ আইনের শাসনের মতো নীতি ভারতে চলে না, তাঁর ভাষায় – ‘Indostan was always an absolute despotic government. The inhabitants, especially in Bengal, in inferior stations are servile, mean, submissive and humble’। এইরকম দেশে গৌরবময় বিপ্লবের আদর্শ প্রয়োগ করার কথা বলা হাস্যকর। নগ্ন পেশিশক্তিই শাসনের একমাত্র উপায়। তিনি উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, ভারত বিজয়ের জন্য দেশের কোম্পানির প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ। এই কাজের ফলে ইংল্যান্ড ও ভারতের বাণিজ্যিক ভারসাম্য চিরতরে পাল্টে গেছে। দেশে বন্যার মতো ভারত থেকে নিয়ে আসা সম্পদ প্রবেশ করার ফলে ইংল্যান্ডের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ ছিল, এই সব নীতি নৈতিকতা আদতে বাজে কথা। আসল বিষয় হল, পার্লামেন্টে ইংল্যান্ডের পুরনো অভিজাত শ্রেণী তাঁর মতো ভারত ফেরত স্ব-নির্মিত প্রভাবশালীদের কাছে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত। এই ভীতি থেকেই তাঁর মতো কোম্পানির ব্যক্তিদের, যাঁদের মাথায় করে রাখা উচিৎ, তাঁদের নৈতিকতার দায়ে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। ক্লাইভের এই অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য ছিল না। ভারতের অবাধ লুন্ঠন কিছু মানুষকে সত্যিই নৈতিক ভাবে বিচলিত করেছিল।

কিন্তু যে রক্ষণশীল অভিজাতরা কোম্পানির বিরুদ্ধে জনমত গঠনে সবথেকে অধিক ভূমিকা নিচ্ছিলেন, তাঁদের মূল আপত্তির কারণ ছিল নৈতিকতা নয়, ছিল ক্লাইভের মতো ভারত ফেরত নব্য ধনীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি। জনমতের লড়াইয়ে তাঁরাই ক্রমশ জিততে লাগলেন। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে একটি প্রবল জনপ্রিয় এবং বহুল পঠিত ইস্তেহারের বয়ান ছিল এইরূপ – ‘Lacks and crowes [lakhs and crores] of rupees, sacks of diamonds, Indians tortured to disclose their treasure; cities, towns and villages ransacked and destroyed, jaghires and provinces purloined; Nabobs dethroned, and murdered, have found the delights and constituted and the religions of the Directors and their servants.’ আশঙ্কা করা হয়েছিল অচিরেই এই কোম্পানির রক্তললুপ লুঠেরারা হয়ে উঠবে – ‘subversive of the Liberties of Englishmen, and creative of a set of tyrants.’

জনমত ক্রমশঃ কোম্পানির কার্যকলাপে হস্তক্ষেপের পক্ষে জমাট বেঁধে উঠলেও, একজায়গায় সরকারের হাত ছিল বাঁধা। অষ্টাদশ শতকের ব্রিটেনে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার ছিল আইনের চোখে পবিত্রতম অধিকার। কোম্পানির অধিকৃত ভারতীয় অঞ্চল যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সেখানে সরকার এই অধিকারকে অগ্রাহ্য করে হস্তক্ষেপ করতে পারত না। ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের কট্টর সমর্থকরা কোম্পানির পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন এবং নৈতিকতার অজুহাত দিয়ে একটি বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপে সরকারী হস্তক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করতে থাকেন। রাজা তৃতীয় জর্জ স্বয়ং কোম্পানির অধিকারকে সমর্থন করেন। এঁরা পার্লামেন্টের কোনও রকম হস্তক্ষেপেরই পক্ষে ছিলেন না। অন্যদিকে বেকফোর্ড, ব্যারে এবং নুজেন্টের মতো পার্লামেন্টের সদস্যরা কোম্পানির অধিকৃত স্থানের উপর প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পক্ষে জরালো সওয়াল করতে থাকেন। এমনকি প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ, যিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের অন্যতম সমর্থক ছিলেন, তিনি অবধি কোম্পানির বিরুদ্ধে কলম ধরেন। স্মিথ লেখেন ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্য করার যে অধিকার, তা ব্রিটিশ অর্থনীতির মুক্ত বাণিজ্যের নীতিকে লঙ্ঘন করে এবং মত দেন,’’Such exclusive companies are nuisance in may respects; always more or less inconvenient to the countries in which they are established and destructive to those which have misfortune to fall under their government’’ এই দুই যুযুধান পক্ষকে খুশি করে ভারতে কোম্পানির শাসনের প্রশ্নের একটা সন্তোষজনক সমাধান বের করা ছিল অতীব কঠিন কাজ। এই কাজটি করতেই প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থ অতি সন্তর্পণে অগ্রসর হলেন। তিনি নিজে কোম্পানির হাত থেকে শাসনের ক্ষমতা পুরোপুরি সরিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতি ছিলেন,কিন্তু জানতেন পার্লামেন্টের কোম্পানির সমর্থকরা তা হতে দেবে না। তাই তিনি এমন একটি সুযোগ খুঁজতে লাগলেন, যার মাধ্যমে কোম্পানিকে আপোষের টেবিলে বসতে বাধ্য করা সম্ভব হবে। 

সাধারণ পরিস্থিতিতে কোম্পানিকে ভারতে তাদের স্বর্ণখনি নিয়ে বিন্দুমাত্র আপোষের জায়গায় আনা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ভারতে যুদ্ধের পর যুদ্ধ লড়তে গিয়ে টাকা খরচ হচ্ছিল জলের মতো। বাংলার মানুষকে অতি উচ্চ হারে রাজস্ব আদায়ের আখ মাড়াই-এর কলে পিষেও সেই টাকা তোলা সম্ভব ছিল না। ১৭৭০-এর দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কোম্পানির কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থা। যে ডিভিডেন্ট শেয়ারহোল্ডারদের দিতে কোম্পানি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, তা এই সব কারণে আর দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছিল না। বোর্ডের সদস্যরা জানতেন, একটা সমাধানসূত্র খুঁজে না পেলে, ‘মহামান্য’ কোম্পানি বাহাদুরকে লিডন হল স্ট্রিটের অফিসে অচিরেই লালবাতি জ্বালতে হবে। তাঁরা তাই নিরুপায় হয়ে ১৭৭২ সালে সরকারের কাছে প্রায় দশ লক্ষ পাউন্ড অর্থ ঋণ প্রার্থনা করলেন।   

এই সুযোগ লর্ড নর্থ ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন না। ঋণ প্রদান নিয়ে কোম্পানির সঙ্গে দরাদরির সূত্র ধরে সরকার তার কাজকর্মে হস্তক্ষেপ করার অধিকার আদায় করে নেয়। যেহেতু কোম্পানি নিজেই এই ঋণের আবেদন করেছিল, তাই সরকার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে জোর করে হস্তক্ষেপ করছে, এই ভাষ্য আর প্রচার করা সম্ভব ছিল না। কোম্পানির বিগত সকল কাজকর্মের মূল্যায়নের জন্য পার্লেমেন্ট একটি সিলেক্ট কমিটি ও একটি সিক্রেট কমিটি তৈরি করে। কোম্পানির দলিল খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে এই কমিটিদ্বয় যে রিপোর্ট দেয়, তাতে স্পষ্ট হয়ে যায় এতকাল অবধি কোম্পানির বিরোধীরা যে সকল অভিযোগ করছিলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। সরকারের আর হস্তক্ষেপ করতে কোনও বাধা ছিল না। তবে লর্ড নর্থ এক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি কোম্পানির হাত থেকে শাসনভার একেবারে কেড়ে নিলেন না। ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্টে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারত শাসন সংক্রান্ত যে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাশ হয়, তাতে শুধু এই বক্তব্য রাখা হয় যে এরপর থেকে কোম্পানির বোর্ড অফ ডাইরেক্টর্স ভারত থেকে আসা সকল সামরিক, অর্থনৈতিক ও শাসন সংক্রান্ত নথি পার্লামেন্টের কাছে পাঠাতে বাধ্য থাকবে। এর পাশাপাশি ভারতে কোম্পানির শাসনকে একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো প্রদান করা হয়। বাংলার গভর্নরকে গভর্নর-জেনারেল পদ প্রদান করা হয় এবং বলা হয় যুদ্ধ ও শান্তি সংক্রান্ত বিষয়ে বোম্বে ও মাদ্রাজ-এর গভর্নররা তাঁর আদেশ মেনে চলতে বাধ্য থাকবে। গভর্নর-জেনারেলকে সাহায্য করার জন্য গঠিত হয় একটি চার সদস্যের কাউন্সিল। নিরপেক্ষ বিচারের জন্য কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি সুপ্রিম কোর্ট।  শেষ অবধি, বিষয়টি যা দাঁড়াল তা হল, বোম্বে ও মাদ্রাজের গভর্নর সহ, ভারতের কোম্পানির শাসনকাঠামো পরিচালনার দায় থাকবে বাংলার গভর্নর-জেনারেল এবং তাঁর কাউন্সিলের, গভর্নর-জেনারেল আর কাউন্সিল দায়বদ্ধ থাকবে লন্ডনের কোম্পানির বোর্ড অফ ডাইরেক্টর্স-এর কাছে, এই বোর্ড অফ ডাইরেক্টর্স অন্তিমে দায়বদ্ধ থাকবে ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ও মন্ত্রীসভার কাছে।

এইভাবে লর্ড নর্থ কোম্পানি শাসিত অঞ্চলের উপর প্রত্যক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা এবং কোম্পানির হাতেই সকল ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া, এই দুই অবস্থানের মাঝামাঝি একটি অবস্থান গ্রহণ করলেন। তাঁর আশা ছিল কোম্পানির শাসন নিয়ে যে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তার এর মাধ্যমে একটা স্থায়ী সমাধান করা যাবে। কিন্তু এটি ছিল নিতান্তই দুরাশা। এই মধ্যপন্থা যুযুধান দুইপক্ষের কাউকেই খুশি করতে পারেনি। পুনরায় সংঘাত অনিবার্য হয়ে পড়ে। ভারত শাসনকে ঘিরে কোম্পানি এবং ক্রাউনের এই ক্ষমতার ও অধিকারের টানাপোড়েন এরপর থেকে ১৮৫৮ সাধারণ অব্দ পর্যন্ত আমরা বারে বারে প্রত্যক্ষ করতে পারব। ১৭৮৪ সাধারণ অব্দের পিটের ভারত শাসন আইন, ১৭৯৩-এর রেগুলেটিং অ্যাক্ট, ১৮১৩-এর চার্টার অ্যাক্ট, ১৮৩৩-এর সেন্ট হেলেনা অ্যাক্ট ছিল এই দীর্ঘ লড়াইয়ের একেকটা ধাপ, যে লড়াইয়ে ক্রমশঃ কোম্পানি পিছু হঠতে থাকে। ‘নাবুব’-রা অনেক প্রচেষ্টা করেছিল এই প্রক্রিয়াকে প্রতিহত করতে। কিন্তু শেষে পর্যন্ত তারা জিততে পারেনি।

১৮৫৭-৫৮-এর মহাবিদ্রোহের পর ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান হয়। প্রত্যক্ষ ভাবে রানী ভিক্টোরিয়ার শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে এই টানাপোড়েনের ইতি ঘটে। কিন্তু এই সংঘাতের ইতিহাস ছিল অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। বিশেষ করে অষ্টাদশ শতকের শেষে এবং উনিশ শতকের শুরুতে এই টানাপোড়েনের সঙ্গে ভারত সাম্রাজ্য কোনদিকে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে উদ্ভূত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মতাদর্শিক বিতর্কও জুড়ে গেছিল। যদিও সেই প্রসঙ্গ আলোচনা করার পরিসর এই প্রবন্ধে অনুপস্থিত, তবু একথা বলা যথেষ্ট হবে ভারতের বর্তমান নির্মাণে এই সকল বিতর্ক এবং তাদের ফলাফল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। একথা বিস্মৃত হলে চলবে না যে, এই সমগ্র প্রক্রিয়াই শুরু হয়েছিল অষ্টাদশ শতকের ছয় ও সাতের দশকে কোম্পানির কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক এবং তা থেকে উদ্ভূত ১৭৭৩-এর রেগুলেটিং অ্যাক্টের মধ্য দিয়ে। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব সেই বিচারে অপরিসীম। আর.পি মাসানি মন্তব্য করেছেন – ‘The Act formally committed the British nation to a scheme of empire and subjected the company’s dominions in India to parliamentary control.’ স্পিয়ারের কথাতেও এই আইনের গুরুত্ব সম্পর্কে একই ইঙ্গিত মেলে – ‘The importance of Regulating Act is that it marks the first assertation of parliamentary control over the company and registers the first concern of parliament for the welfare of the people of India.’

কোম্পানি শাসনকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডে প্রায় এক শতক ধরে চলতে থাকা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক রাজনৈতিক ও আদর্শিক সংঘাতে আগ্রহ ভারতের ইতিহাস পাঠকদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম। তাঁদের মধ্যে কিছু উৎসাহ তৈরি করার জন্যই এই প্রবন্ধের অবতারণা। যদি সেই আগ্রহ গঠনের কাজে তা কিছুমাত্র সফল হয়, তাহলেই এই সংক্ষিপ্ত লেখাটি সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।               

তথ্যসূত্র –

  1. James, Lawrence, Raj : The Making of British India, Abacus, 1998
  2. Subramanian, Lakshmi, History of India, 1707-1857, Orient BlackSwan, 2010
  3. Bandyopadhyay, Sekhar, From Plassey to Partition and After : A History of Modern India, Orient BlackSwan, 2014
  4. মল্লিক, সমর কুমার, আধুনিক ভারতের দেড়শো বছর (১৭০৭ – ১৮৫৭), ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিশার্স, সেপ্টেম্বর, ২০১৪-২০১৫
এম.ফিল গবেষক, ইতিহাস বিভাগ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য তালিকা - “কোম্পানি বনাম পার্লামেন্ট – ‘নাবুব’ বিতর্ক ও ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট”

  1. অসাধারণ! একজন সাধারণ পাঠক হিসেবে পড়ছি আর মনে উদয় হচ্ছে বর্তমানে এদেশে ও রাজ্যে যে স্বাধীনতা ও তার ফসল সংবিধান এবং সংস্কৃতির শত্রুদের উত্থান ঘটেছে তার পূর্বাভাষ বা প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে নিকট অতীতের স্বাধীনতার উত্তরসূরী শাসক দলগুলি এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ধনিক শ্রেণী।হলে আজকের ‘নাবুব’রা এত সহজে ক্ষমতায় আসত না।জানি কাঁচা মন্তব্য তবু না লিখে পারলাম না।
    ভালো থাকবেন।

  2. কোম্পানির ভারত জয়ে আপামর ইংরেজ জনতা তথা তাদের শাসক খুশি ও সুখী হয়েছিলো এমন মনে করাটাই ছিলো স্বাভাবিক। তবে একথাও জানতাম যে পলাশী যুদ্ধের বিজায়ী নায়ক রবার্ট ক্লাইভ শেষে আত্মহত্যা করেছিলেন। কারণটা স্পষ্ট করে জানা ছিলো না। ভারত ফেরতদের “নবাবী” নিয়ে ইংরেজ সমাজে এমন ইতিহাস পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। ধন্যবাদ।

  3. খুবই ভালো লাগলো। এত সুন্দর সাবলীল ভঙ্গিতে আপনি এত বিশদে লিখেছেন যে কুর্ণিশ করতেই হবে। এই রকম তথ্য সমৃদ্ধ তরতরে লেখা আরো লিখবেন নিশ্চয়ই।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।