সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বুদ্ধ, অবতারবাদ ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম

বুদ্ধ, অবতারবাদ ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম

কণাদ সিনহা

আগস্ট ১৪, ২০২১ ১৮৭১ 28

বিষ্ণুর দশাবতারের জনপ্রিয় তালিকায় নবম অবতার হিসেবে বুদ্ধদেবের উল্লেখ প্রায়শই পাওয়া যায়। অথচ বুদ্ধদেবের নিজের দর্শন আবার ‘নাস্তিক দর্শন’গুলির একটি। নাস্তিক বুদ্ধ কী করে অবতার হতে পারেন? বৌদ্ধধর্মের উৎপত্তির আগের ধর্মবিশ্বাসের সাথে বুদ্ধের কী সম্পর্ক? পরবর্তীকালের কোন ধর্মবিশ্বাস কী উদ্দেশ্যে বুদ্ধকে অবতারে পরিণত করল? প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরও জানা। শুধু উত্তর খুঁজতে হবে ধর্মের ইতিহাসের বিবর্তনে, ধর্মীয় বিশ্বাসে নয়। এই ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। তাই আমরা ধাপে ধাপে তাকে বোঝার চেষ্টা করি।

বৌদ্ধধর্মের আবির্ভাব ঘটে খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। এই সময় প্রচলিত বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিরুদ্ধে অনেকগুলি প্রতিবাদী ধর্মমতের উত্থান ঘটে। তার মধ্যে সম্পূর্ণ বস্তুবাদী নাস্তিক্যবাদী চার্বাক-লোকায়ত মতবাদ ছিল, যারা প্রত্যক্ষ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎ ছাড়া কিছুই মানত না। সঞ্জয় বেটঠলিপুত্তের মত অজ্ঞেয়বাদী চিন্তাবিদেরা ছিলেন, যাঁরা মনে করতেন ঈশ্বর, আত্মা, পরলোক ইত্যাদি আছে না নেই তা জানা মানুষের জ্ঞানের অসাধ্য। আবার বৌদ্ধ, জৈন, আজীবিক ইত্যাদি ধর্ম ছিল, যারা হয় নিরীশ্বরবাদী বা ঈশ্বর বিষয়ে নীরব, কিন্তু দেহাতীত চেতনা, পরলোক, জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসী। এদের মধ্যে নিয়তিবাদী আজীবিকরা মনে করতেন মানুষের জন্মান্তর ও কাজকর্ম পূর্বনির্ধারিত, তাই ন্যায়-অন্যায় পাপ-পুণ্য বলে কিছু নেই। কিন্তু জৈন ও বৌদ্ধরা মনে করতেন মানুষের নৈতিক জীবনযাপন করা উচিত, কারণ মানুষ জন্ম-জন্মান্তরে কর্মফল ভোগ করে। তাছাড়া, তাঁরা এও মনে করতেন যে মানুষ তাঁর কৃতকর্মের জোরেই জন্ম-মৃত্যুর চক্রকে অতিক্রম করে মোক্ষ বা নির্বাণলাভ করতে পারে। জৈনদের মতে এই মোক্ষলাভের উপায় সম্পূর্ণ ত্যাগ, সবরকম আসক্তি ও কর্ম থেকে নিবৃত্তি। বুদ্ধ মনে করতেন বাসনা জয় করাই জরুরী, সবরকম কর্মত্যাগ বাস্তবে নিষ্প্রয়োজন। দেহের উপর নির্যাতন করে পুর্ণ ত্যাগ ও প্রবল ভোগবিলাসের মধ্যবর্তী ‘মধ্যম পন্থা’ই দু:খময় জগতে দু:খনিবারণের উপায়। অর্থাৎ এই ধর্মে ব্যক্তিগত নৈতিকতাই ছিল মুখ্য। ঈশ্বর সংক্রান্ত আলোচনা ছিল অপ্রাসঙ্গিক।

বৌদ্ধধর্ম ও অন্যান্য প্রতিবাদী ধর্মগুলোর উত্থানের আগে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস কী ছিল? হিন্দুধর্ম বলে কোনো শব্দ সে যুগে ছিল না। ‘সনাতন ধর্ম’ বলে যে শব্দের আজকাল খুব প্রচলন হয়েছে তাও ছিল না। সে সময়ের প্রধান ধর্মের ভিত্তি ছিল বৈদিক সাহিত্য। তাই একে আমরা ‘বৈদিক ধর্ম’ বলতে পারি। বৈদিক ধর্ম গোড়ায় ছিল খুব সরল। যাযাবর পশুচারণজীবী আর্যরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও তাদের অতীত কিংবদন্তির নায়কদের দেবতা হিসেবে উপাসনা করতেন। উপাসনা অর্থাৎ অগ্নিকুণ্ডে দেবতাদের উদ্দেশ্যে পশুবলির মাংস, খাদ্য, ও পানীয় নিবেদন করে তাঁদের স্তব-স্তুতি করে তাঁদের কাছে নিজেদের চাহিদা, প্রার্থনা, দাবী-দাওয়া নিবেদন করা। মূর্তিপূজার ধারণা ছিল না। যাযাবর জাতির ধর্মে কোনো স্থায়ী উপাসনাগৃহ ছিল না। যে কোনো জায়গায় যজ্ঞকুণ্ড তৈরী করা যেত। কিন্তু খ্রীষ্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের শুরু থেকে, যখন বৈদিক আর্যরা ক্রমশ: গঙ্গা-যমুনা দোয়াবের উর্বর সমভূমিতে সরে এল, কৃষিভিত্তিক স্থায়ী বসতি, বা জনপদের বিকাশ ঘটতে শুরু করল। কৃষিজমি ও বৃহত্তরভাবে জনপদের ভৌগোলিক সীমা রক্ষা করতে শাসকের প্রয়োজন হল। সেই শাসক চাইলেন নিজের শাসনক্ষমতাকে বংশানুক্রমিক করে তুলতে। কিন্তু অন্যেরা তা মেনে নেবে কেন? এ কাজে রাজার সহায়ক হল পুরোহিতশ্রেণী। তাঁরা বললেন একশ্রেণীর মানুষ বংশানুক্রমিকভাবে শাসন করতে দৈবনির্দিষ্ট — তারা ‘রাজন্য’ বা ক্ষত্রিয়। শাসকরাও পুরোহিতদের পৃষ্ঠপোষকতা দিলেন। পুরোহিত পদও হয়ে উঠল বংশানুক্রমিক বিশেষজ্ঞের পদ। শেষ পর্যন্ত সমাজকে তাঁরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র এই চারভাগে ভাগ করলেন। ধর্মাচরণের নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণরূপে চলে গেল ব্রাহ্মণদের হাতে। তাঁরা যাগযজ্ঞের অনেক জটিল নিয়ম তৈরী করলেন। আর্যরা এদেশে আসার আগে প্রচলিত ধর্মবিশ্বাস, বিশেষত: কৃষি ও উর্বরতা সংক্রান্ত রীতিনীতি ও জাদুবিদ্যার কিছু কিছু গ্রহণ করলেন — যদিও মূর্তিপূজা, দেবীপূজা এগুলি ব্রাত্যই থাকল। অনার্য জনগোষ্ঠীগুলির কোনো কোনো পুরোহিতও ব্রাহ্মণদের অন্তর্ভুক্ত হলেন। এই জটিল ধর্মের নিয়মকানুন বিশেষজ্ঞ ছাড়া কেউ ভালভাবে পালন করতে পারতেন না। তাই এই ধর্মে ব্রাহ্মণদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা হল। এজন্যই একে আমরা ব্রাহ্মণ্যধর্মও বলি। ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরাও ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দিয়ে তাঁদের দিয়েই যজ্ঞ করাতেন। শূদ্র ও বর্ণব্যবস্থার বাইরে থাকা অস্পৃশ্য মানুষদের এই ধর্মে কোনো অধিকারই ছিল না। মেয়েদেরও অধিকার ছিল খুব সীমিত। খুব কম মেয়েই শিক্ষার সুযোগ পেতেন। যজ্ঞে তাঁদের ভূমিকা ছিল মূলত: স্বামীর সহধর্মিণী হিসেবে। তাই ব্রাহ্মণ ছাড়া সমাজের প্রায় বেশীরভাগ মানুষই এই ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। যাঁদের ধর্মাচরণের অধিকার ছিল তাঁরাও সবাই এই ধর্ম নিয়ে খুশী ছিলেন না।  অনেক শিক্ষিত ক্ষত্রিয়ের মনেই প্রশ্ন জন্মায় ধর্মাচরণে কেন শুধু ব্রাহ্মণেরই প্রাধান্য থাকবে। অনেক জ্ঞানী ব্রাহ্মণও প্রশ্ন তোলেন যজ্ঞ করে সত্যিই কি ফল পাওয়া যায়?  দেবতারা কি সত্যি আছেন না তাঁরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক? যদি তাই হয় তাহলে এই প্রাকৃতিক শক্তিগুলি এল কোথা থেকে? তাদের স্রষ্টা কে?  বহু দেবদেবীর উর্ধ্বে কি রয়েছেন এক অনাদি অনন্ত ঈশ্বর? উপনিষদের দার্শনিকরা তাঁর নাম দিলেন ব্রহ্ম। ব্রহ্মই একমাত্র সত্য। মানুষের দেহের মধ্যেও রয়েছে সেই ব্রহ্মেরই অংশ — আত্মা। আসলে আপাত বিভিন্নতার মধ্যে জগতে সব একই ব্রহ্মের বহু রূপ, এই উপলব্ধি আত্মাকে পুনরায় ব্রহ্মের সাথে লীন করে দেয়। এই উপলব্ধিতে পৌঁছানো পর্যন্ত বারবার আত্মার জন্মান্তর ঘটে কর্মফল অনুযায়ী। এই ঈশ্বরবাদী দর্শনের নাম বেদান্ত। এখানে বৈদিক যাগযজ্ঞকে অস্বীকার না করেও আত্মজ্ঞান অর্জনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মীমাংসা দর্শন ব্রহ্ম বা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে সামাজিক সুস্থিতি রক্ষার জন্য ও কর্মফল অর্জনের জন্য যাগযজ্ঞের উপর জোর দিয়েছে। অর্থাৎ বেদে বিশ্বাসী হয়েও মীমাংসা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী। বেদান্ত আবার ঈশ্বরবাদী কিন্তু যাগযজ্ঞের যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দিহান। তবুও উভয়েই আস্তিক ধর্ম কারণ উভয়েই বেদকে অস্বীকার করে না। বৌদ্ধ ও অন্যান্য প্রতিবাদী ধর্মগুলি বেদকে অস্বীকার করে। অর্থাৎ সে যুগে দুরকম ধর্মবিশ্বাস ছিল — বেদপন্থী ও বেদবিরোধী। নাস্তিকতা বলতে ঈশ্বর বা পরলোকে অবিশ্বাস নয়, বোঝাত বেদে অবিশ্বাস।

বৈদিকধর্ম নিয়ে সমাজে বহু স্তরে অসন্তোষ ছিল। উপনিষদের ঈশ্বরবাদী দর্শনও তার পুরো সমাধান করতে পারেনি, কারণ সংস্কৃত ভাষায় আত্মা ও ব্রহ্ম নিয়ে জটিল তাত্ত্বিক আলোচনা সাধারণ মানুষের বোধশক্তির বাইরে ছিল। ক্ষত্রিয় পরিবার থেকে আসা মহাবীর ও বুদ্ধ সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় সময়োপযোগী ধর্মপ্রচার করে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করলেন। মৌর্য সম্রাটরা, অশোক সহ, সব ধর্মকেই পৃষ্ঠপোষকতা দিলেও পাল্লা ভারী ছিল হয়তো প্রতিবাদী ধর্মগুলির দিকেই। মৌর্য সাম্রাজ্য ভেঙে গিয়ে যখন দেশের নানা অঞ্চলে নানা রাজশক্তি, যার মধ্যে অনেকগুলি আবার এসেছে ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে থেকে, তখন বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে শুরু হয় এই রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভের ও জনপ্রিয়তা লাভের লড়াই। এই লড়াইয়ে টিকে থাকতে গেলে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে চলবে না এটা ব্রাহ্মণরাও বোঝেন। তাই আমূল পরিবর্তন ঘটে ব্রাহ্মণ্যধর্মের। উপনিষদের দর্শনকে সহজবোধ্য করে তুলতে তাকে মিলিয়ে দেওয়া হয় বৈদিক যুগের আগে থেকে প্রচলিত অনার্য মূর্তিপূজার সাথে। ব্রাহ্মণরা অনার্য জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন দেবতাকে বেদের কোনো দেবতার সঙ্গে এক করে দেখেন, এবং এই নতুন দেবতাকে সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে তুলে ধরে তাঁর মূর্তিপূজা শুরু করেন। এরকম অনেকগুলি নতুন ধর্মমত গড়ে ওঠে। গুপ্তযুগে এই নতুন ধর্মমতগুলি তাদের প্রধান দেবতাদের নিয়ে প্রচলিত কাহিনী-কিংবদন্তিগুলি একত্রিত করে নতুন নতুন ধর্মগ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থগুলির নাম পুরাণ। এই ধর্মগুলিকে একসাথে তাই পৌরাণিক ধর্ম বলা হয়। বর্তমান হিন্দুধর্মের কাঠামো গড়ে উঠেছে মূলত: এই পৌরাণিক ধর্মগুলিকে ভিত্তি করে। এই পৌরাণিক ধর্মগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ভাগবতধর্ম যার প্রধান দেবতাকে বলা হত ভগবান। এই ভগবানের ধারণা গড়ে ওঠে তিনজন দেবতার ধারণাকে এক করে। উত্তরভারতের একটি একেশ্বরবাদী অনার্য জনগোষ্ঠীর সর্বোচ্চ দেবতা নারায়ণ ও বেদের একজন অপ্রধান দেবতা বিষ্ণুকে এক করে এই ধর্মের প্রধান দেবতা বলে ভাবা হয়। এদিকে মথুরা অঞ্চলের ক্ষত্রিয় জনগোষ্ঠী বৃষ্ণিরা তাঁদের ঐতিহাসিক বীরেদের দেবতা হিসেবে উপাসনা করতেন, যাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন বাসুদেব কৃষ্ণ। এই উপাসনা মৌর্যযুগের আগে থেকে চলে আসছে। পাণিনির ব্যাকরণে ও মেগাস্থিনিসের বিবরণে এর উল্লেখ আছে। ভাগবতধর্ম এই কৃষ্ণকে বিষ্ণুর সাথে এক করে দেখল, যার বড় অস্ত্র হল অবতারবাদ। কৃষ্ণের বাণী হিসেবে প্রচলিত মহাভারতের অংশ ভগবদ্গীতায় কৃষ্ণ বলেছেন যে দুর্বৃত্তদের বিনাশ ও সাধুদের রক্ষা করে ধর্মসংস্থাপন করতে তিনি বারবার জন্মান। এখান থেকেই ভাগবতধর্মে অবতারবাদের সূত্রপাত।  বিষ্ণু পৃথিবীকে রক্ষা করতে বারবার জন্ম নেন, যার মধ্যে কৃষ্ণও একজন অবতার। কোনো কোনো পুরাণে কৃষ্ণ স্বয়ং বিষ্ণু, তাঁর দাদা বলরাম অবতার। এই তত্ত্বকে কেন্দ্র করে ভাগবতধর্ম বিষ্ণুকেন্দ্রিক বৈষ্ণবধর্মে রূপান্তরিত হয়। রামায়ণ ও মহাভারত, যেগুলি আগে ধর্মগ্রন্থ ছিল না, সেগুলি ব্রাহ্মণদের হাতে পরিমার্জিত হয়। রামায়ণের নায়ক রাম বিষ্ণুর অবতারে পরিণত হন। তাঁকে একজন আদর্শ ক্ষত্রিয় রাজা হিসেবে তুলে ধরা হয় যিনি বর্ণব্যবস্থানির্ভর ব্রাহ্মণ্য সমাজের অন্যতম রক্ষক। মহাভারতেও নতুন কিছু অংশের সংযোজন হয়, যেখানে ব্রাহ্মণের পৃষ্ঠপোষকতা ও বর্ণব্যবস্থা রক্ষা করাকেই রাজার প্রাথমিক কর্তব্য হিসেবে তুলে ধরা হয়। গীতার প্রথম ছটি অধ্যায়ে বেদান্ত ও সাংখ্যদর্শনের আদর্শ ও নিস্কাম কর্মের অনুশীলনের কথা বলা হলেও পরের অধ্যায়গুলিতে কৃষ্ণভক্তির উপর জোর দেওয়া হয়, এবং কৃষ্ণকেই সর্বোচ্চ দেবতা হিসেবে তুলে ধরা হয়। রাজধর্ম বৈষ্ণবধর্মের একটা বড় অংশ এবং ক্রমশ: রাজাদের মধ্যে এটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। রাজৈশ্বর্যের দেবী শ্রী ও পৃথিবীস্বরূপা রাজ্যের দেবী ভূ কে একত্রে বিষ্ণুর স্ত্রী হিসেবে গৃহীত লক্ষ্মীর দুই রূপ হিসেবে বৈষ্ণবধর্মে গ্রহণ করে নেওয়া হয়। রাজা হয়ে ওঠেন বিষ্ণুর প্রতিভূ। ভূদেবীর উদ্ধারকর্তা ও রক্ষাকর্তা হিসেবে বিষ্ণুর বরাহ অবতার বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গুপ্তযুগ থেকে। মধ্যপ্রদেশের উদয়গিরিতে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের নির্মিত বরাহমূর্তি এর অন্যতম নিদর্শন।

কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে অবতারতত্ত্ব সৃষ্টি হয় আমরা দেখলাম। মৌর্যপরবর্তীযুগে এর সূচনা। গুপ্ত ও গুপ্তপরবর্তীযুগের বৈষ্ণব পুরাণগুলিতে এই তত্ত্ব সংগঠিত রূপ পায়। সম্ভবত: মৌর্যপরবর্তীযুগে রচিত হরিবংশে যে দশ অবতারের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের চেনা তালিকা থেকে অনেকটাই আলাদা। গুপ্তযুগের পুরাণগুলিতে বিষ্ণুর অবতারের সংখ্যা এবং নাম কোনটাই স্থির নয়, এক এক পুরাণে এক একরকম। বরাহ, রাম, এবং কৃষ্ণের (বা বলরামের) পাশাপাশি সেখানে স্থান পেয়েছে বৈদিক বিষ্ণুর তিন পায়ে বিশ্ব প্রদক্ষিণ করে আসার কাহিনী কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বামন অবতারের কিংবদন্তি, ভক্তের রক্ষাকর্তা হিসেবে বিষ্ণুকে তুলে ধরা নৃসিংহ অবতারের কথা, এবং ব্রাহ্মণ্য রাজধর্ম পালনে ব্যর্থ রাজাদের শাস্তিপ্রদানকারী, মহাভারত-রামায়ণের ব্রাহ্মণায়ন ঘটানো ভার্গব ব্রাহ্মণদের নিজস্ব নায়ক পরশুরামের গল্প। বিদেশী যে সমস্ত কাহিনী ভারতে প্রবেশ করে পরিণত হয়েছিল বৈদিক দেবতা প্রজাপতি বা তাঁর পৌরাণিক রূপ ব্রহ্মার কাহিনীতে, যেমন মেসোপটেমিয়া থেকে আসা মহাপ্রলযের ও মৎস্যরূপী দেবতার কাহিনী, তাও এখন বিষ্ণুর অবতার-কাহিনী হিসেবে বর্ণিত হল। এ ছাড়াও এল একটি নতুন ধারনা– মিলেনারিয়ানিজম।

মৌর্যপরবর্তী যুগের একটা বড় বৈশিষ্ট্য পূর্বে হান সাম্রাজ্যাধীন চীন থেকে পশ্চিমে রোমান সাম্রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত দূরপাল্লার বাণিজ্য, যে বাণিজ্যপথে ভারতের ভূমিকা ছিল অন্যতম। এই বাণিজ্যের সুবাদে বহু ধর্ম ও সংস্কৃতি একে অন্যের সংস্পর্শে আসে ও প্রভাবিত করে। ভারতীয় ধর্মগুলির পাশাপাশি গ্রীক-রোমান ধর্ম, বিভিন্ন মধ্য এশীয় ধর্ম, জরথুষ্ট্রবাদ, কনফুসীয় মতবাদ, ইহুদীধর্ম, নবজাত খ্রীষ্টধর্ম একে অন্যের সংস্পর্শে আসে। ইহুদী ধর্ম থেকে খ্রীষ্টধর্মের বিকাশের পিছনে তাই যেমন প্রাচ্যের ধর্মচিন্তার প্রভাব থাকতে পারে, তেমনি এই সময়ে সৃষ্ট মহাযান বৌদ্ধধর্মের পরম করুণাময় মানবহিতে আত্মবলিদানকারী বোধিসত্ত্বের ধারণার পিছনে খ্রীষ্টের রূপকল্পের প্রভাবও নাকচ করা যায় না। যিশুর শিষ্য টমাস ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন এবং ঐতিহাসিক পার্থীয় রাজা গন্ডফার্নেসকে ধর্মান্তরিত করেন বলে জানা যায়।

ভারতীয় ধর্মচিন্তায় সেমিটিক ধর্মের অন্যতম প্রভাব মিলেনারিয়ানিজম, অর্থাৎ সৃষ্টির শেষে মানবকল্যাণের জন্য এক মুক্তিদাতার আগমন। ইহুদীধর্মে তাঁর নাম বলা নেই। খ্রীষ্টধর্মে দ্বিতীয়বার আগমন ঘটবে যিশুরই। (পরবর্তীকালে ইসলামের কোনো কোনো শাখায় মহদির ধারণাও মিলেনারিয়ান।) বৌদ্ধধর্মে এই মিলেনারিয়ান চরিত্রটির নাম মৈত্রেয়। পৌরাণিক বৈষ্ণবধর্ম মিলেনারিয়ান ধারণাকে গ্রহণ করে এবং বিষ্ণুর শেষ তথা ভবিষ্যৎ অবতার কল্কির কথা বলে। আর এই সুযোগে বৌদ্ধধর্মের বিরুদ্ধে আক্রমণও শানিয়ে নেয়। পুরাণমতে বর্তমান যুগ কলিযুগ। পাপে পরিপূর্ণ। মানুষ এই পাপ থেকে রেহাই চায়। কল্কি অবতারে বিষ্ণু এসে কলিযুগ শেষ করে সত্যযুগ ফিরিয়ে আনবেন। কিন্তু কবে আসবেন কল্কি? যবে পাপের মাত্রা চরম হবে। যতদিন মানুষ কিছুটা ধর্মপথে থাকবে, বেদ মেনে চলবে, ততদিন পাপ চরমে যাবে না, কল্কিও আসবেন না, কলিযুগও শেষ হবে না। তাই মানুষকে ভুল বুঝিয়ে প্রকৃত ধর্মের পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বিষ্ণুর নবম অবতার হিসেবে জন্ম বুদ্ধের। অর্থাৎ বুদ্ধ বিষ্ণুর অবতার, কিন্তু বৌদ্ধধর্ম ভ্রান্ত। এই হল বৈষ্ণব পুরাণে বুদ্ধ অবতারের কাহিনী। ঠিক যেমন অশ্বঘোষের বুদ্ধচরিতে গীতার শ্লোক উদ্ধৃত হয়েছে বুদ্ধকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট মারের উক্তি হিসেবে।  বৌদ্ধ জাতক কাহিনী দসরথ জাতকে আবার রাম বুদ্ধের এক পূর্ববর্তী জন্মের রূপ, অর্থাৎ বুদ্ধের শিক্ষা রামের শিক্ষার আরো পরিণত রূপ। একে অন্যের ধর্মের প্রধান চরিত্রদের মহত্ত্ব স্বীকার করেও নিজেদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের এই রাজনীতি ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ উভয়পক্ষই করেছে।

কিন্তু রাজনীতিকে ছাপিয়ে গেছে মানুষের ভক্তি ও বিশ্বাস। তাই ঈশ্বরবাদে অনাগ্রহী বুদ্ধ মহাযান ও বজ্রযান বৌদ্ধধর্মে নিজেই দেবতায় পরিণত হয়েছেন। উপনিষদের জ্ঞানতত্ত্বের মতই আদি বৌদ্ধধর্মের নৈতিক অনুশাসনকেও শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি দিতে হয়েছে লৌকিক ধর্মের পূজার্চনা, মূর্তিপূজার ঐতিহ্যকে। আবার ব্রাহ্মণ্য বৈষ্ণব পুরাণকারেরা বুদ্ধকে ভ্রমসৃষ্টিকারী বিপথে চালনকারী অবতার হিসেবে দেখালেও বহু বৈষ্ণব ভক্তের কাছে বিষ্ণুর সব অবতারই সমান সম্মানার্হ। তাই দ্বাদশ শতকে জয়দেব যখন দশাবতারের স্তোত্র লিখলেন, তখন কল্কির পথ পরিস্কার করতে আসা বিভ্রমসৃষ্টিকারী প্রবঞ্চক নন, বুদ্ধকে স্মরণ করা হল তাঁর অহিংসার আদর্শ, দয়া ও করুণার প্রেরণায় করা বেদবিরোধী দার্শনিকের ভূমিকাতেই:

“নিন্দসি যজ্ঞবিধের’হহ শ্রুতিজাতম।

 সদয়হৃদয়দর্শিত-পশুঘাতম।।

কেশবধৃত বুদ্ধশরীর জয় জগদীশ হরে।”

গ্রন্থসূচী:

বৈদিক ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য Frits Staal,  Discovering the Vedas.

উপনিষদগুলি পড়ে দেখতে চাইলে Patrick Olivelle (ed. and tr.),  Upanisads.

বুদ্ধের উপদেশগুলি সম্পর্কে ধারণা পেতে Rupert Gethin (ed. and tr.), Sayings of the Buddha.

নাস্তিক্যবাদী ধর্মগুলি নিয়ে জানতে সুকুমারী ভট্টাচার্য, বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য; D.P. Chattopadhyaya, Lokayata.

বিভিন্ন প্রতিবাদী ধর্মমত নিয়ে আলোচনার জন্য A.L. Basham, The Wonder that was India, Vol. 1; Upinder Singh, History of Ancient and Early Medieval India; নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ভারতীয় ধর্মের ইতিহাস; নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, ধর্ম ও সংস্কৃতি: প্রাচীন ভারতীয় প্রেক্ষাপট.

পৌরাণিক বৈষ্ণবধর্ম নিয়ে আলোচনার জন্য, R.G. Bhandarkar, Vaishnavism, Shaivism, and other Minor Religious Systems; Suvira Jaiswal, Origin and Development of Vaishnavism.

গুপ্তযুগে ধর্মীয় পরিবর্তন এবং বরাহ ও বুদ্ধ অবতারের কাহিনীর জন্য Kunal Chakrabarti and Kanad Sinha, eds., State Power and Legitimacy: The Gupta Kingdom’ বইতে Kanad Sinha, ‘Puranic Vaisnavism and the Guptas: a Study of Kingship, Legitimacy and Religion’ ও Wendy Doniger O’Flaherty, ‘Image of the Heretic in the Gupta Puranas’. শেষোক্ত প্রবন্ধে বুদ্ধ অবতারের কাহিনী বিস্তারিতভাবে পাবেন।

মন্তব্য তালিকা - “বুদ্ধ, অবতারবাদ ও ব্রাহ্মণ্যধর্ম”

    1. পড়ে খুব ভালো লাগলো স্যার, আপনার রেকর্ডেড ক্লাসগুলো আমার এবং আমাদের প্রাচীন ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস বিভাগের জন্য মূল্যবান সম্পদ। আপনার এই আলোচনা প্রসঙ্গ আমরা ক্লাসেও টুকরো টুকরো শুনেছি… বিশেষ করে বৌদ্ধ ও বৈষ্ণব ধর্মের পারস্পরিক প্রভাবের উপর। এরকম লেখা আরো চাই

  1. অত্যন্ত সুন্দর আলোচনা। এত সাবলীল লেখা যে পড়ে মনে হলো আরো একটু বড় লেখা হলে আরও বেশি জানতে পারতাম। লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

  2. খুবই মনোগ্রাহী আলোচনা।অনেক ভাবনা ও অনুসন্ধিৎসার দ্বার খুলে দিল।এরকম আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

  3. এত সচ্ছন্দে ও সাবলীল ভাষায় অবতার তত্ত্বের ব্যাখ্যা…ভালো লাগলো পড়তে।
    নির্বান কি,সে বিষয়ে বুদ্ধদেব কিছু বলে জাননি।এদিকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বেশ রসালো ভাসায় বোধিসত্ত্ব ও নির্বান কে উপস্থাপিত করেছেন।
    এই বিষয়টি নিয়ে, আপনার সময়মতো, কিছু লেখার অনুরোধ রইল।

  4. অত্যন্ত মনোজ্ঞ লেখা। ধন্যবাদ।
    বাংলার বা বাঙালির ধর্মাচরণ এর কলানুক্রমিক পর্যালোচনা পেলে বড় ভাল হত। বাঙলা এই অঞ্চলের ইতিহাস কেন যেন খুব স্বল্প আলোচিত।

  5. লেখা খুব ভালো। তথ্য সব সঠিক নয়। ইতিহাস এই ভাবে ই ঢলে গেছে ক্রমশ ঢালুর দিকে, যে যেমন করে তৈরি করেছেন। তর্ক হতেই পারে কিন্তু সমাধান খুঁজে পাওয়া কষ্টকর।

  6. Prof Ajoy kr Chakraborty মহাশয় এর মন্তব্য পূর্ণ সমর্থন করে ও বলতে চাই লেখাটি অনেক অনেক তথ্য সমৃদ্ধ। তবে শঙ্করাচার্যের বেদান্ত এর ভাষ্যের প্রভাব বিস্তার এর কোনো কথা নেই। লেখক কে আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও প্রণাম জানাই।🙏

  7. সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল এই রচনাটির সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষা। আর আমার কাছে নতুন চিন্তার উপাদান এল খ্রিস্ট ধর্মের প্রভাবের বিষয়টি। মহাযানী বৌদ্ধ মতের ” করুণা”র ধারণা হয়ত এই খ্রিস্টানধর্মের মানবতার চিন্তা থেকে প্রভাবিত- লেখক এই চিন্তাটি উষ্কে দিয়েছেন। এখন দেখার এই প্রভাবটি সময়কাল অনুসারী কী না?

  8. বেদে দেবতা শব্দের উল্লেখ নেই। আছে দেব এবং ৩৩ সংখ্যক। দু এক জায়গায় দেবতা উল্লেখ আছে, সাত নকলে আসল খাস্তা তত্ত্বানুসারে।
    বিশ্ব শব্দে বিশ (২০) ব বোঝায়। এই ব কর্কট ক্রান্তি, মকর ক্রান্তি এবং নিরক্ষ বৃত্তের এক অংশ বোঝায়।
    পরিধি এবং ব্যাসের অনুপাত ২২:৭, প্রথমে পরিধি ২০ ধরা হোয়েছিল, এর থেকে পৃথিবীর নাম বিশ্ব রেখে দেয়া হয়েছে।
    দেবতা শব্দের ব অন্তস্থ, উচ্চারণ “ও”, অর্থাৎ দেওতা অর্থাৎ তাপ দেয়। সূর্য যেমন তাপ দেয়, আকাশের অসংখ্য নক্ষত্রেরও নিশ্চিত তাপ দেয়ার ক্ষমতা আছে। তাই ৩৩ কোটি দেবতার কল্পনা।

  9. স্যার কে আমার প্রণাম জানিএ একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি স্যার আর্যরা কি সত্যিই বিদেশি ছিল ? আর্যরা কি বাইরে থেকেই ভারতবর্ষে প্রবেশ করেছিল ?

  10. অধ্যাপক অজয় চক্রবর্তী আশা করি আমার কথাটিতে আহত হবেন না।
    আপনি জানিয়েছেন, তথ্য সব সঠিক নয়। অন্তত দুয়েকটি উদাহরণ, ও আপনার মতে সঠিক তথ্য দিলে, মন্তব্যটি আমাদের ঋদ্ধ করত।
    আগাম ধন্যবাদ রইল, অধ্যাপক চক্রবর্তী।

  11. ধন্যবাদ সুন্দর তথ্যবহুল লিখাটির জন্য। ধর্মের অবতারবাদ ও বৈদিক ধর্মের বেশ কিছু দিক জানা গেল।
    ব্রেকেটে ইসলামের নামে একটি মাত্র কথা সংযোজিত হয়েছে ঈমাম মাহদী প্রসঙ্গ টেনে। ইসলামে কোরান শতভাগ বিশুদ্ধ। হাদিস বেশিরভাগ সঠিক তবে অনেক দূর্বল, জঈফ, জাল হাদিসও আছে। ঈমাম মাহদী আসবেন ইহা কোরানে উল্লেখ নেই আর হাদিসে উল্লেখ আছে কিন্তু সহিহ নয়। দূর্বলতা আছে সোর্সের। তাই ঈমাম মাহদীর ইস্যু দুনিয়ার বেশির ভাগ মুসলমানদের কাছে মূল্যায়ন নেই। যে সকল মুসলমানদের ঈমান দূর্বল, অন্তরে তাকওয়া নেই তারা এই সব ঘটনা নিয়ে সিরিয়াস হয়। ইসলামের আকিদার সহিত ঈমাম মাহদীর কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ ইহা মূল্যহীন ইস্যু।
    উমাইয়াদের শাসনাকালে ঈমাম মাহদীর কেচ্ছা হাদিসগ্রন্থে ঢুকিয়েছে। খৃষ্টপাদ্রীগন কেন এই কেচ্ছা বানিয়ে ঢুকালো তার ইতিহাস আছে। বিস্তারিত এখানে বলা সম্ভব নয়। তাই কিছু সংযোজন করার পূর্বে যাচাই করার অনুরোধ রইল।

  12. আসলে হিন্দু ধর্ম নিয়ে আলোচনার নামে খুব ছেলেখেলা চলে। কারণ কোনো ফতোয়া জারি হবেনা , বা ব্লাসফেমি তে ফাসিয়ে খুন হবেনা। ইসলাম ধৰ্ম ও কোরানের অথেন্টিসিটি নিয়ে একটা সারগর্ভ বাংলা ইতিহাস ভিত্তিক রচনা আশা করছি।

    1. কাটুয়া মোল্লা ‌‌ আপনি লিখুন না। ইসলাম ও কোরআন এর ওপর আপনার বিশেষ দখল আছে বলেই মনে হচ্ছে।

  13. অত্যন্ত জটিল বিষয়কে, স্বল্প পরিসরে সরল করে সুন্দর আলোচনা। ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।