সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

ইতিহাসের বিদিশা

ইতিহাসের বিদিশা

জয়ন্ত ভট্টাচার্য

অক্টোবর ২, ২০২১ ১৩৫১ 4

উপোদ্ঘাত

“তেষাং দিক্ষু প্রথিতবিদিশালক্ষণাং রাজধানীং

গত্বা সদ্যঃ ফলমবিকলং কামুকত্বস্য লব্ধা।

তীরোপান্তস্তনিতসুভগং পাস্যসি স্বাদু যস্মাৎ

সভ্রূভঙ্গং মুখমিব পয়ো বেত্রবত্যাশ্চলোর্মি॥”

– কালিদাসের ‘মেঘদূত’, পূর্বমেঘ, ২৫

বিদিশা নাম, সারা ভুবনে বিখ্যাত, যখন যাবে রাজধানীতে,

তখনই পাবে, মেঘ, সকল উপচারে কামুকবৃত্তির পূর্ণফল।

তটের কলতানে রূপসী রমণীর ভুরুর ভঙ্গিমা যে দেয় এঁকে,

ঊর্মি-চঞ্চল বেত্রবতী সে-ই – করবে পান তার মধুর বারি॥

(বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদ)

মহাকবি কালিদাস, তাঁর খণ্ডকাব্য ‘মেঘদূতে’র পূর্বমেঘের পংক্তিদ্বয়ে (২৪-২৫) অমরত্ব প্রদান করেছেন প্রাচীন দশার্ণ জনপদ আর সেই জনপদের রাজধানী, বেত্রবতী (পালি ভাষায় বেত্তবতী, বর্তমান বেতোয়া) নদীর তীরে অবস্থিত বিদিশা নগরীকে। সপ্তম শতকের কবি বাণভট্টও তাঁর ‘কাদম্বরী’র কথামুখে উল্লেখ করেছেন বেত্রবতী নদীর তটবর্তী রাজা শূদ্রকের রাজধানী বিদিশা নগরীর কথা। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে বারবার উল্লিখিত হয়েছে পাটলিপুত্র ও উজ্জয়িনী নগরকে সংযোগকারী প্রাচীন বাণিজ্যপথের ধারে অবস্থিত বিদিশা বা বৈদিশ (প্রাকৃত বেদিস, পরবর্তীকালে বেসনগর) নগরের নাম। প্রাচীন ভারতের সাহিত্যে ভাস্বর বিদিশা নগরীর অতীতকথা  আজও অনেকাংশেই অজানা।

প্রাচীন ভারতে বর্তমান মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের পূর্ব মালব অঞ্চল দশার্ণ বা আকার জনপদ নামে পরিচিত ছিল। দশার্ণ জনপদের উল্লেখ ‘দসণ্ণকজাতক’, ‘মহানারদকস্সপজাতক’, মহাভারত, রামায়ণ, মৎস্যপুরাণ, বামনপুরাণ, ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ, বায়ুপুরাণ এবং মার্কণ্ডেয়পুরাণে পাওয়া যায়। সাধারণপূর্বাব্দের দ্বিতীয় শতক থেকে সাধারণাব্দের চতুর্থ শতকের মধ্যবর্তী কোন সময় লেখা সংস্কৃত বৌদ্ধ গ্রন্থ ‘মহাবস্তু’তে ১৬টি মহাজনপদের তালিকায় দশার্ণর উল্লেখ রয়েছে। সাধারণাব্দের ষষ্ঠ শতকে বরাহমিহির তাঁর ‘বৃহৎসংহিতা’ গ্রন্থে দশার্ণ জনপদের উল্লেখ করেছেন। সম্ভবত পৌরাণিক সাহিত্যে উল্লিখিত দশার্ণ (অর্থাৎ বর্তমান ধসান) নদীর নাম থেকে এই জনপদের নামের উদ্ভব।   

সাধারণাব্দের চতুর্থ শতকের পালি ভাষায় লেখা সিংহলের ইতিবৃত্ত ‘দীপবংস’ গ্রন্থে বেদিস্স নগরের উল্লেখ রয়েছে। সাধারণাব্দের পঞ্চম শতকে বুদ্ধঘোষ তাঁর পালি ভাষায় লেখা বিনয়পিটকের অট্‌ঠকথা (ব্যাখ্যা) ‘সমন্তপাসাদিকা’ গ্রন্থে বেদিস নগরের উল্লেখ করেছেন। সাধারণাব্দের ষষ্ঠ শতকের ‘বৃহৎসংহিতা’, মৎস্যপুরাণ, মার্কণ্ডেয়পুরাণ ও ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে বিদিশা বা বৈদিশ নগরের উল্লেখ রয়েছে। আদি মধ্যযুগে রচিত গরুড়পুরাণের প্রেতকাণ্ডের বর্ণনায় বৈদিশ (বিদিশা) এক সম্পদশালী নগর। নবম-দশম শতকের কবি রাজশেখরের ‘কাব্যমীমাংসা’ গ্রন্থেও বিদিশার উল্লেখ রয়েছে। বেশ কয়েকটি পুরাণে বিদিশা নদীর উল্লেখ রয়েছে। বিদিশা নদীই পরবর্তীকালে বেস নামে (বর্তমান নাম হলালি) পরিচিত হয় এবং এই নদীর নাম থেকেই সম্ভবত বিদিশা নগরীর নামের উৎপত্তি।  

অতীতের রূপরেখা

বিদিশার ঐতিহাসিক গুরুত্বের সুত্রপাত মৌর্য যুগে। সাধারণাব্দের পঞ্চম শতকের শেষে বা ষষ্ঠ শতকের শুরুতে পালি ভাষায় লেখা সিংহলের ইতিবৃত্ত ‘মহাবংস’ অনুসারে মৌর্য সম্রাট অশোক রাজা হবার পূর্বে প্রাদেশিক শাসক নিযুক্ত হয়ে উজ্জয়িনী আসার পথে তিনি বেদিস নগরে (অর্থাৎ বিদিশায়) কিছুদিন কাটান। এই সময় তিনি বিদিশার এক বণিকের পুত্রী দেবীকে বিবাহ করেন। অশোক ও দেবীর পুত্র ও কন্যা, মহিন্দ (মহেন্দ্র) ও সংঘমিত্তা (সংঘমিত্রা) সিংহলে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। কালিদাস, তাঁর ‘মালবিকাগ্নিমিত্র’ নাটকের পঞ্চমাঙ্কে নায়ক শুঙ্গবংশীয় রাজা পুষ্যমিত্রের পুত্র অগ্নিমিত্রকে বিদিশার রাজা বলে বর্ণনা করেছেন। মৌর্য ও শুঙ্গ রাজত্বকালের সমকালীন সাঁচী ও ভারহুতের স্তুপের দাতাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বেদিস অর্থাৎ বিদিশার নাগরিক। বিদিশায় প্রাপ্ত মুদ্রা থেকে শুঙ্গ রাজবংশের পর এখানে উজ্জয়িনীর শক ক্ষত্রপ ও পদ্মাবতীর নাগবংশীয় শাসকদের রাজত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এরপর, বিদিশা নিশ্চিতভাবে দীর্ঘদিন গুপ্ত রাজবংশের অধীনে ছিল। প্রাচীন বিদিশার সর্বশেষ শাসকবংশ সম্ভবত কলচুরি। কলচুরি শাসক কৃষ্ণরাজের (রাজত্বকাল আনু. ৫৫০-৫৭৫ সাধারণাব্দ) মুদ্রা বেসনগর উৎখননে পাওয়া গেছে। কলচুরি শাসক বুদ্ধরাজের (রাজত্বকাল আনু. ৬০০-৬২০ সাধারণাব্দ) মহারাষ্ট্রের নাশিক জেলার বড়নের থেকে প্রাপ্ত তিনটি তাম্রশাসন ৬১০ সাধারণাব্দে তাঁর বিদিশার বিজয়স্কন্ধাবার থেকে জারি করা হয়েছিল। খুব সম্ভবত কলচুরি শাসনের অবসানের পর আদি মধ্যযুগে প্রাচীন বিদিশা (অর্থাৎ বর্তমান বেসনগর) শহর পরিত্যক্ত হয়, এবং বেত্রবতী (বেতোয়া) নদীর বিপরীত তটে ভৈল্লস্বামী বা ভৈলস্বামী (ভিলসা বা ভেলসা, বর্তমানে  বিদিশা) শহর গড়ে উঠতে শুরু করে।

প্রাচীন বিদিশার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে শিল্প ও বাণিজ্যের নিবিড় যোগ ছিল। প্রাক-মৌর্য যুগে পালিভাষায় রচিত ‘সুত্তনিপাত’ গ্রন্থে জনৈক ব্রাহ্মণ বাভরির ১৬ জন শিষ্যের বুদ্ধকে দর্শন করতে যাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান (বর্তমান মহারাষ্ট্রের আওরঙ্গাবাদ জেলার পৈঠান) থেকে শ্রাবস্তী (বর্তমান উত্তরপ্রদেশের শ্রাবস্তী জেলার সাহেত-মাহেত) পর্যন্ত যে যাত্রাপথের বর্ণনা রয়েছে, সেই পথ, নিঃসন্দেহে প্রাচীন ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ ছিল। এই পথ ধরে প্রতিষ্ঠান থেকে মাহিষ্মতী, উজ্জয়িনী, বিদিশা, কৌশাম্বী, ও সাকেত হয়ে শ্রাবস্তী পৌঁছান যেত। এই বাণিজ্যপথের উপর বিদিশার অবস্থান, এই শহরের প্রাক-মৌর্য যুগ থেকে অর্থনৈতিক গুরুত্বের পরিচায়ক। উল্লেখ্য, সম্রাট অশোকের অন্যতম পত্নী দেবীর পিতাও ছিলেন বিদিশার জনৈক শ্রেষ্ঠী। দসণ্ণকজাতকে দশার্ণ জনপদে নির্মিত তীক্ষ্ণধার অসির উল্লেখ রয়েছে। সাঁচীস্তুপের দক্ষিণ তোরণে খোদিত শিলালেখ অনুযায়ী বেদিস (বিদিশা) নগরের হস্তিদন্ততক্ষণ শিল্পীরা এই তোরণ নির্মাণে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬২ সালে বিদিশা থেকে ব্রাহ্মী লিপিতে ‘কনম’ লেখা একটি মুদ্রা পাওয়া গেছে। এই মুদ্রাটি প্রাচীন বিদিশায় বণিক নিগমের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। খুব সম্ভবত আদি মধ্যযুগে বাণিজ্যের পরিস্থিতির অবনতির পরিণামে বিদিশার সমৃদ্ধির অবসান ঘটে।

আদি মধ্যযুগে বিদিশা শহরের অবসানের পর বেতোয়া নদীর অন্য তীরে গড়ে ওঠা ভিলসা শহরের নামের উৎস এখানকার স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা পূজিত সূর্যদেবতার রূপ ভৈল্লস্বামী বা ভৈলস্বামীর মন্দির। ভৈল্লস্বামীর মন্দিরের এখনও পর্যন্ত প্রাচীনতম উল্লেখ পাওয়া গেছে বিদিশা জেলার মহলঘাট থেকে প্রাপ্ত ৯৩৫ বিক্রমসম্বতের (৮৭৮ সাধারণাব্দ) একটি শিলালেখে। বর্তমানে গোয়ালিয়র সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত এই শিলালেখে হটিয়াক নামে এক বণিকের ভৈল্লস্বামী মন্দিরের জন্য দানের বিবরণ রয়েছে। ১২৩৪ সাধারণাব্দে দিল্লির সুলতান শামস-উদ্দিন ইলতুৎমিশের সেনাবাহিনি ভিলসা শহর অধিকার করে। এরপর ১২৯৩  সাধারণাব্দে আবার দিল্লির সুলতান আলা-উদ্দিন খলজির সেনা ভিলসা আক্রমণ করে। মুঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে ভিলসা ছিল মালবা সুবার রায়সেন সরকারের অন্তর্গত একটি মহাল। অষ্টাদশ শতকে ভিলসা গোয়ালিয়রের মারাঠা শাসক সিন্ধিয়াদের অধিকারভুক্ত হয়।

প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান

সাহিত্যে বহুল উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও প্রাচীন বিদিশা নগরীর প্রকৃত অবস্থান মধ্যযুগে বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে গেছিল। ১৮৭৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আলেকজান্ডার কানিংহাম ভিলসা (বর্তমান বিদিশা) শহর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে ৩ কিমি. দূরত্বে এখনকার অশোকনগর-বিদিশা মার্গের ধারে বেস ও বেতোয়া নদীর সঙ্গমস্থলের কাছে বেসনগরে প্রথম প্রাচীন বিদিশা নগরের অবশেষের সন্ধান পান। ১৮৭৭ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি দ্বিতীয়বার বেসনগর যান। এই সময় তিনি হেলিওদোরাসের স্থাপিত স্তম্ভটির সন্ধান পান। হেলিওদোরাসের স্থাপিত গরুড়স্তম্ভ গোলাপি আভাযুক্ত বাদামি বেলেপাথরে নির্মিত, এর স্তম্ভশীর্ষটি আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কানিংহাম যখন এই স্তম্ভটি আবিষ্কার করেন, তখন এই স্তম্ভটিকে স্থানীয় শৈব সম্প্রদায়ের অনুগামীরা ‘খাম্ব বাবা’ নামে উপাসনা করতেন, এক পূজারী সন্ন্যাসী স্তম্ভটির কাছেই বাস করতেন আর সমস্ত স্তম্ভটি  সিঁদুরের গাঢ় প্রলেপ দিয়ে ঢাকা ছিল। কানিংহাম বেসনগর প্রত্নক্ষেত্রে আরও চারটি বেলেপাথরের তৈরি স্তম্ভশীর্ষ খুঁজে পান, এর মধ্যে দুটির শীর্ষে ছিল তালপত্র, তৃতীয়টির শীর্ষে মকর (এই স্তম্ভশীর্ষটি বর্তমানে গোয়ালিয়রের গুজরী মহল প্রত্নশালায় সংরক্ষিত) ও চতুর্থটির শীর্ষে ছিল কল্পদ্রুম (এই স্তম্ভশীর্ষটি বর্তমানে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত)।

বিংশ শতকের প্রথম দশকের শেষে তৎকালীন গোয়ালিয়র রাজ্যের সরকারের প্রয়াসে বেসনগর প্রত্নক্ষেত্রে অনুসন্ধানের কাজ শুরু হয়। ১৯০৯ সালের জানুয়ারি মাসে গোয়ালিয়র রাজ্যের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার এইচ.এইচ. লেক হেলিওদোরাস স্তম্ভের নীচের অংশে উৎকীর্ণ ব্রাহ্মী লিপিতে রচিত দুটি লেখ আবিষ্কার করেন। তিনি ব্রিটিশ ভারত সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান জন মার্শালকে এই তথ্য জানান। মার্শালের নির্দেশে স্তম্ভের উপর থেকে সিঁদুরের প্রলেপ তুলে এই দুটি লেখের ছাপ তুলে নিয়ে গিয়ে পাঠোদ্ধার করা হয়।

হেলিওদোরাসের স্তম্ভের দুটি বিপরীত দিকে উৎকীর্ণ লেখ দুটি সংস্কৃত প্রভাবিত প্রাকৃত ভাষায় রচিত। প্রথম লেখটিতে হেলিওদোরাস জানিয়েছেন, তিনি তক্ষশিলার অধিবাসী, দিওনের পুত্র, এবং বিদিশায় ইন্দো-গ্রিক রাজা আন্তিয়ালকিদাসের দূত হয়ে এসেছেন। এই লেখে হেলিওদোরাস আরও জানিয়েছেন, তিনি বৈষ্ণব ভাগবত সম্প্রদায়ের অনুগামী এবং এই ‘গরুড়ধ্বজ’ তিনি বাসুদেবের উদ্দেশে উৎসর্গ করেছেন। রাজা কাশীপুত্র ভাগভদ্রের রাজত্বকালের চতুর্দশতম বর্ষে তিনি এই গরুড়স্তম্ভ স্থাপন করেছেন। দ্বিতীয় লেখটি সংক্ষিপ্ততর, মহাভারতের ‘সনৎসুজাত পর্বাধ্যায়ে’র একটি শ্লোকের প্রায় হুবহু পুনরাবৃত্তি। এই লেখে উল্লিখিত ইন্দো-গ্রিক শাসক আন্তিয়ালকিদাস নিকেফোরোস (রাজত্বকাল আনু. ১৩০-১২০ সাধারণপূর্বাব্দ) বর্তমান পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখওয়া ও পাঞ্জাব এলাকায় রাজত্ব করতেন। তাঁর রাজধানী ছিল তক্ষশিলা। হেলিওদোরাস উল্লিখিত বিদিশার শাসক কাশীপুত্র ভাগভদ্রকে অধিকাংশ আধুনিক বিদ্বানই শুঙ্গবংশীয় পঞ্চম রাজা ভদ্রক (রাজত্বকাল আনু. ১২৪-১২২ সাধারণপূর্বাব্দ) বা নবম রাজা ভাগবতের (রাজত্বকাল আনু. ৯৪-৮৩ সাধারণপূর্বাব্দ) সঙ্গে এক বলে মনে করেন।

গোয়ালিয়র রাজ্যের শাসকের নির্দেশে ১৯১০ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এইচ.এইচ. লেক ও তাঁর সহকর্মীরা বেসনগরে প্রথমবার উৎখনন করেন। এই উৎখননের সময় লেক ও তাঁর সহকর্মীরা এখানে গুপ্তযুগের পূর্বেকার কোন প্রত্নবস্তু খুঁজে পান নি। এরপর, ১৯১৩ সালে, গোয়ালিয়র রাজ্যের পুরাতত্ত্ব বিভাগ গঠিত হবার পর দেবদত্ত রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকরের নেতৃত্বাধীন প্রত্নতত্ত্ববিদদের দল দ্বিতীয়বার বেসনগরে খননকার্য শুরু করেন। ভাণ্ডারকরই প্রথম হেলিওদোরাস স্তম্ভের কাছে একটি অতি প্রাচীন বাসুদেব মন্দিরের অবশেষের সন্ধান পান। ‘খাম্ব বাবা’র পূজারীর গৃহের অঙ্গনে উৎখননের সময় সেখানে তিনি এই প্রাচীন মন্দিরের উপবৃত্তাকার ভিত্তিস্থল খুঁজে পান। এরপর, ১৯১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভাণ্ডারকরের নেতৃত্বাধীন দল আবার বেসনগরে খননকার্য চালান। এর বেশ কয়েক দশক পর, ১৯৬৩ সালের ২৫ নভেম্বর প্রত্নতাত্ত্বিক মহেশ্বরী দয়াল খরের নেতৃত্বে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের একটি দল তৃতীয়বার বেসনগরে খননকার্য শুরু করেন। এই উৎখননের কাজ ১৯৬৫ সালে সমাপ্ত হয়। প্রাচীন বাসুদেব মন্দিরের অবশেষের পূর্ণ উন্মোচন ছাড়া এই উৎখননের সবচেয়ে উল্লেখনীয় আবিষ্কার প্রাচীন বিদিশা শহরের নিরাপত্তার জন্য পশ্চিম দিক বরাবর আনুমানিক সাধারণপূর্বাব্দ দ্বিতীয় শতকে নির্মিত একটি দীর্ঘ প্রস্তর প্রাচীর (প্রাচীন বিদিশার অন্য তিন দিক বেস ও বেতোয়া নদীর দ্বারা সুরক্ষিত ছিল)। এই উৎখননের সময় জানা যায় উত্তর থেকে দক্ষিণে একটি সরলরেখা বরাবর হেলিওদোরাস স্তম্ভের মত আরও সাতটি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছিল। খরে বেসনগর প্রত্নক্ষেত্রে এই সাতটি স্তম্ভের সন্ধান না পেলেও, ঐ স্তম্ভগুলির জন্য নির্মিত খাত ও স্তম্ভগুলির অবশেষের সামান্য অংশ উৎখননের সময় খুঁজে পান। এর এক দশক বাদে, ১৯৭৫-১৯৭৭ সালে, প্রত্নতাত্ত্বিক খরের নেতৃত্বে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের একটি দল চতুর্থবার বেসনগরে উৎখনন চালায়। এই উৎখননের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, আগের খননকার্যে আবিষ্কৃত প্রাচীন বিদিশার পশ্চিম দিকের দীর্ঘ প্রাকারের সম্বন্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ। এই উৎখননের সময় একটি প্রাচীন শিবমন্দিরের অস্তিত্বের কথা জানতে পারা যায়। এই শিবমন্দিরটি সম্ভবত নবম-দশম শতক সাধারণাব্দ নাগাদ বিলুপ্ত হয়। 

বেসনগরে আবিষ্কৃত বাসুদেব মন্দিরটি এযাবৎ উৎখননে আবিষ্কৃত ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দেবমন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম। খরের মতে আনুমানিক সাধারণপূর্বাব্দের চতুর্থ-তৃতীয় শতকে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল। এই মন্দিরটি চুন ও সুরকি দিয়ে গাঁথা একটি ইটের বেদিকার উপর দুটি সমান্তরাল উপবৃত্তাকার দেয়ালযুক্ত। অভ্যন্তরের উপবৃত্তাকার প্রাকারের মধ্যে মন্দিরের গর্ভগৃহ অবস্থিত ছিল। বাইরের ও ভিতরের দুটি উপবৃত্তাকার প্রাকারের মধ্যে একটি প্রদক্ষিণ পথ ছিল। মন্দিরটির পূর্বদিকে একটি আয়তাকার সভামণ্ডপ ছিল, সভামণ্ডপের পূর্বদিকে মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার অবস্থিত ছিল। কাঠ, খড় ও মাটি দিয়ে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বেস নদীর বন্যায় প্রাচীন মন্দিরের ইটের তৈরী বেদিকা ছাড়া সমস্ত নষ্ট হয়ে গেলে সাধারণপূর্বাব্দের দ্বিতীয় শতক নাগাদ মন্দিরটি পুনর্নির্মিত হয়। প্রাচীন বেদিকার উপর মাটি ফেলে উঁচু করে একটি বৃহৎ ইটের চাতাল নির্মাণ করা হয়। এর উপর ইট দিয়ে দ্বিতীয় মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। চাতাল ও মন্দির নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত ইটের কিছু অবশেষ ছাড়া এই পুনর্নির্মিত মন্দিরের অস্তিত্বের বিশেষ কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নি। সম্ভবত পুনর্নির্মিত মন্দিরটিও বন্যায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। হেলিওদোরাস নির্মিত স্তম্ভ ও অন্য সাতটি লুপ্ত স্তম্ভ পুনর্নির্মিত মন্দিরটির সমকালীন, মন্দিরের পূর্বদিকে স্থাপন করা হয়েছিল। ভিলসা (বর্তমান বিদিশা) শহরের একটি সরু গলি থেকে এইচ.এইচ. লেক আবিষ্কৃত (বর্তমানে বিদিশা সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত) অষ্টভুজ ভগ্ন স্তম্ভটি সম্ভবত এই লুপ্ত সাতটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। এই ভগ্ন স্তম্ভের উপর উৎকীর্ণ প্রাকৃত লেখের পাঠোদ্ধার করে জানা গেছে, এই স্তম্ভটিও একটি গরুড়স্তম্ভ, মহারাজা ভাগবতের রাজত্বকালের দ্বাদশতম বর্ষে জনৈক গৌতমীপুত্র (দাতার নামের অংশ বিলুপ্ত) বাসুদেবের মন্দিরের প্রাঙ্গণে স্থাপন করেছিলেন।                 

বিংশ শতকের চারটি উৎখননে বেসনগর প্রত্নক্ষেত্র থেকে বহু সংখ্যক প্রত্নবস্তু উদ্ধার করা হয়েছে। ১৯৬৩-১৯৬৫ সালে উৎখননের সময় একবারে নীচের স্তরে কৃষ্ণ-লোহিত মৃৎপাত্র ও তার উপরের স্তরে উত্তর-ভারতীয় কৃষ্ণ চিক্কণ মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। এই প্রত্নক্ষেত্র থেকে আবিষ্কৃত পুরানিদর্শনগুলির মধ্যে একটি গুপ্তকালীন বিষ্ণু প্রতিমার ভগ্ন মস্তক উল্লেখনীয়। চতুর্থবার উৎখননের সময় এখান থেকে একটি শিব-পার্বতীর প্রতিমা ও একটি ক্ষুদ্রাকার দণ্ডায়মান বিষ্ণু প্রতিমা খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রথমবারের উৎখননে সাধারণপূর্বাব্দের প্রথম শতকের ব্রাহ্মী লিপিতে ‘নিকুম্ভ নাগস্য’ লেখা একটি পাথরের সিলমোহর এখান থেকে পাওয়া যায়। 

বেসনগরে বিভিন্ন বার উৎখননের সময় সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০ মুদ্রা পাওয়া গেছে। এই প্রত্নক্ষেত্রে প্রাপ্ত মুদ্রারাশির মধ্যে প্রাচীনতম মুদ্রাগুলির অধিকাংশই তামার তৈরি, বর্গাকার এবং মূলত অঙ্কচিহ্নিত। কেবল স্বল্প কিছু রুপোর অঙ্কচিহ্নিত মুদ্রা পাওয়া গেছে। এই মুদ্রাগুলি সাধারণপূর্বাব্দের পঞ্চম থেকে তৃতীয় শতকের মধ্যবর্তী সময়ের বলে অনুমান করা হয়। কিছুসংখ্যক ছাঁচে ঢালা তামার গোলাকার, এক পিঠে ব্রাহ্মী লিপিতে প্রাকৃত ভাষায় ‘বেদিস’ বা ‘বেদ্দিস’ লেখা, এবং অন্য পিঠে ‘চক্র’ চিহ্ন সমন্বিত বিদিশার নিজস্ব মুদ্রাও উৎখননে পাওয়া গেছে। এই মুদ্রাগুলি সাধারণপূর্বাব্দের তৃতীয় থেকে প্রথম শতকের মধ্যবর্তী কালপর্বের বলে অনুমান করা হয়। আনুমানিক সাধারণপূর্বাব্দ প্রথম শতকের বিদিশার স্থানীয় শাসক শিবগুপ্তের তামার মুদ্রা এখানে পাওয়া গেছে। এখান থেকে উজ্জয়িনীর শক ক্ষত্রপ হমুগম ও বলাক এবং পদ্মাবতীর নাগবংশীয় রাজা গণপতিনাগ, ভীমনাগ ও ভবনাগের কয়েকটি মুদ্রা পাওয়া গেছে। সাতবাহন রাজা গৌতমীপুত্র যজ্ঞশ্রী সাতকর্ণীর (রাজত্বকাল আনু. ১৫২-১৮১ সাধারণাব্দ) একটি মাত্র মুদ্রা এখানে পাওয়া গেছে। বিদিশায় প্রাপ্ত মুদ্রাগুলির মধ্যে আধুনিকতম কলচুরি রাজা কৃষ্ণরাজের মুদ্রা। এখানে প্রাপ্ত মুদ্রার নিরিখে প্রাচীন বিদিশা শহর সাধারণাব্দের সপ্তম শতক বা তার পূর্বেই পরিত্যক্ত হয়েছিল বলে অনুমিত হয়।

পরিশেষ

বর্তমানে আধুনিক বিদিশা শহর ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পরিবর্তিত হয়েছে, তাই অদূর ভবিষ্যতে প্রাচীন বিদিশা বা তার নিকটবর্তী কোনও প্রত্নক্ষেত্র থেকে নতুন কোনও প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য আবিষ্কারের সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। ইতিহাসের বিদিশা সম্পর্কে আর কিছু জানার কোনও পন্থা বোধ হয় আজ আর সুগম নয়।

তথ্যসূত্র:

১. Bhandrakar D.R., “Excavations at Besnagar” in J. Marshall ed. Archaeological Survey of India, Annual Report 1913-14. Calcutta: Superintendent, Government Printing, India, 1917, pp. 186-226.

২. Bhandrakar D.R., “Excavations at Besnagar” in J. Marshall ed. Archaeological Survey of India, Annual Report 1914-15. Calcutta: Superintendent, Government Printing, India, 1920, pp. 66-88.

৩. Bühler G., “Votive Inscriptions from the Sānchi Stūpas” in J. Burgess ed. Epigraphia Indica, Vol. II. Calcutta: Superintendent of Government Printing, India, 1894, p. 378.

৪. Chanda, R., Archaeology and Vaishnava Tradition, Memoirs of the Archaeological Survey of India, No. 5. Calcutta: Superintendent Government Printing, India, 1920, pp. 151-152.

৫. Chhabra B. and Gai G.S. ed., Inscriptions of the Early Gupta Kings, Corpus Inscriptionum Indicarum, Vol. III (revised). New Delhi: Director General, Archaeological Survey of India, 1981, pp.231-234.

৬. Cunningham A., The Bhilsa Topes; or Buddhist Monuments of Central India: Comprising A Brief Historical Sketch of the Rise, Progress, And Decline of Buddhism; with An Account of the Opening and Examination of the Various Groups of Topes Around Bhilsa.  London: Smith, Elder & Co, 1854.

৭. Cunningham A., Archeological Survey of India: Report of Tours in Bundelkhand and Malwa in 1874-75 and 1876-77, Vol. X. Calcutta: Office of the Superintendent of Government Printing, 1880, pp. 36-46.

৮. Dalal C.D. and Sastry R.A. ed., Kāvyamimāṁsā of Rājaśekhara. Baroda: Oriental Institute, 1934, p. 9.

৯. Geiger W. tr., The Mahāvaṃsa or the Great Chronicle of Ceylon. London: Pali Text Society, 1912, pp. 88-89.

১০. Ghosh A. ed., Indian Archaeology 1962-63 – A Review. New Delhi: Archaeological Survey of India, 1965, p. 63.

১১. Ghosh A. ed., Indian Archaeology 1963-64 – A Review. New Delhi: Archaeological Survey of India, 1967, pp. 16-17.

১২. Ghosh A. ed., Indian Archaeology 1964-65 – A Review. New Delhi: Archaeological Survey of India, 1969, pp. 19-20. 

১৩. Ghosh A. ed., Indian Archaeology 1965-66 – A Review. New Delhi: Archaeological Survey of India, 1973, pp.23-24.

১৪. Irwin J., “The Heliodorus Pillar in Besnagar” in B.K. Thapar ed. Puratattva: Bulletin of Indian Archaeological Society, No. 8 1975-1976. New Delhi: Indian Archaeological Society, 1978, pp. 166-178.

১৫. খরে, মহেশ্বরী দয়াল (১৯৮৫). বিদিশা. ভোপাল: মধ্যপ্রদেশ হিন্দী অকাদমী. 

১৬. Lahiri B., Indigenous States of Northen India (Circa 200 B.C. to 300 A.D.). Calcutta: University of Calcutta, 1974, pp. 78-81.

১৭. Lake H.H., “Besnagar” in The Journal of the Bombay Branch of the Royal Asiatic Society, Vol. XXIII. London: Kegan Paul, Trench, Trübner & Co., 1910, pp. 135-146.

১৮. Law B.C., Tribes in Ancient India. Poona: Bhandarkar Oriental Research Institute, 1943, pp. 375-377.

১৯. Law B.C., “Vidiśā in Ancient India” in The Journal of the Ganganatha Jha Research Institute, Vol. IX, Part I, November 1951. Allahabad: Ganganatha Jha Research Institute, 1951, pp. 1-10.

২০. Law, B.C., Historical Geography of Ancient India. Paris: Societe Asiatique de Paris, 1954, pp. 336-341.

২১. Mirashi V.V., Inscriptions of the Kalachuri-Chedi Era, Corpus Inscriptionum Indicarum, Vol.4, Part I. Ootacamund: Government Epigraphist for India, 1955, pp. 47-51.

২২. Narain, A.K., The Indo-Greeks. Oxford: Clarendon Press, 1957, pp. 118-120.

২৩. Oldenberg H. ed. & tr., The Dīpavaṃsa: An Ancient Buddhist Historical Record. London: Williams and Norgate, 1879, pp.42,63.

২৪. শর্মা বীরবল সংসোধিত, সমন্তপাসাদিকা নাম অট্ঠকথা (পঠমো ভাগ). নালন্দা: নব নালন্দা মহাবিহার, ১৯৯৪, পৃ. ৬১.

২৫. শীলভদ্র ভিক্ষু অনুদিত, সুত্ত নিপাত. কলিকাতা: মহাবোধি সোসাইটি, ১৯৪১, পৃ. ২০৪.

২৬. Sircar D.C., “Two Inscriptions from Bhilsa” in N.L. Rao and D.C. Sircar ed. Epigraphia Indica, Vol. XXX, 1953-54. Delhi: Manager of Publications, Government of India, 1958, pp. 210-219.

২৭. Sircar D.C. ed., Select Inscriptions Bearing on Indian History and Civilization, Vol. 1. Calcutta: University of Calcutta, 1965, pp. 88-89.

২৮. Thapar B.K., Indian Archaeology 1975-76 – A Review. New Delhi: Archaeological Survey of India, 1979, pp. 30-31.

২৯. Thapar B.K., Indian Archaeology 1976-77 – A Review. New Delhi: Archaeological Survey of India, 1980, pp.33-34.

৩০. Vogel J.P., “The Garuda Pillar of Besnagar” in Archaeological Survey of India, Annual Report 1908-09. Calcutta: Superintendent, Government Printing, India, 1912, pp. 126-129.

লেখক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদ্যার স্নাতক এবং বিগত তিন দশক ধরে বিমান প্রযুক্তিবিদ্যার সঙ্গে যুক্ত। ইতিহাসের আগ্রহী পাঠক। ইতিহাস নিয়ে লেখালেখির সূত্রপাত সাম্প্রতিক।

মন্তব্য তালিকা - “ইতিহাসের বিদিশা”

  1. লেখককে অনেক ধন্যবাদ। আমার অনুরোধ এই যে লেখক যদি বাংলায় আবিস্কৃত প্রত্নস্হলগুলি সম্পর্কে অনুরূপ বিবরণ লেখেন তাহলে খুব উপকৃত হবো।

    1. অশেষ কৃতজ্ঞতা। আমার ‘ইতিহাস তথ্য ও তর্ক’ ফেসবুক গোষ্ঠীতে প্রকাশিত বাংলার একটি প্রত্নস্থল নিয়ে এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন: https://m.facebook.com/groups/1803711656387813/permalink/3997587160333574/

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।