সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

নারী – বুদ্ধ ও সংঘ

নারী – বুদ্ধ ও সংঘ

সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়

আগস্ট ১১, ২০২০ ১৫৬৭ 8

আজকের প্রসঙ্গ খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকীয় সমাজে নারীর অবস্থান ও তার বিবর্তন। বিষয়ে প্রবেশের আগে, মূল তথ্যসূত্র আর তার অসুবিধা সংক্রান্ত দু-চার কথা। ভারতীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী বুদ্ধশিক্ষা ও বাণী প্রাথমিক ভাবে ছিল মৌখিক। পরে এগুলি যাঁরা লিপিবদ্ধ করেন, তাঁরা নিজেরাও ছিলেন গুরুস্থানীয় শিক্ষক। ফলে সেই আদি শিক্ষকের বাণীর শব্দ ও ভাব, সামান্য হলেও পাল্টেছিল, তাঁদের নিজ বোধ অনুযায়ী। আর এই পরিবর্তন ভিক্ষুদের অনুকূলে যতটা হয়েছিল গৃহী উপাসকদের জন্য ততটা নয়, পুরুষের জন্য যতটা, নারীর জন্য ততটা নয়। তবুও সাধারণ ভাবে বৌদ্ধ ধর্মগ্ৰন্থ, জাতক, মিলিন্দপনহ্ এবং বিশেষ ভাবে বিনয়পিটক (ভিক্ষুণী খণ্ডক ও ভিক্ষুণী বিভঙ্গ) ও থেরিগাথা এ বিষয়ে অনেকটাই আলোকপাত করে।

ধর্মের মূল প্রথিত থাকে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার মধ্যে। বৌদ্ধ সাহিত্যে যে সমাজচিত্র বর্ণিত তা ছিল পিতৃতান্ত্রিক। এই পরিকাঠামোয় নারীর অবস্থা কেমন ছিল তা বুঝতে গেলে, সমাজস্থ নারীদের একটা শ্রেণীবিভাগ হয়তো দরকার।

প্রথম চিত্রটি কন্যা ও গৃহবধূর। মেয়েরা সকলেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করবে এটাই স্বাভাবিক ছিল। বধূর কর্তব্য ছিল সেবামূলক। বুদ্ধের নিজের মত অনুযায়ীও সেই স্ত্রীই উত্তম যে তার পরিজন ও স্বামীর সব চাহিদা পূরণে সক্ষম। হয়তো এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই আদর্শ গৃহবধূ মিগারমাতা বিশাখা তাঁর কাছে সমাদৃত হয়েছেন। প্রজ্ঞামতী বিশাখা ‘উপাসিকা’র মর্যাদা পেয়েছেন। বুদ্ধের সাথে তাঁর বারংবার কথোপকথন, এটাই ইঙ্গিত করে। কিন্তু শ্বশুরকূল ও স্বামীর প্রতি সব কর্তব্য পালনের পরেও বধূ যে তার প্রাপ্য মর্যাদা পেত না,এমনকি নিগৃহীতা হতো, তার অনেক প্রমাণ আছে। কোনো কারণ ছাড়াই, স্বামী যে তাকে বাতিল ও বহিষ্কার করতে পারতো, ইশিদাসি রচিত থেরিগাথা তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।

দ্বিতীয় স্তরে আলোচ্য, নগরশোভিনী বা বারাঙ্গনাগণ। আপাতদৃষ্টিতে তারা গৃহবধূর থেকে কিছুটা বেশি স্বাধীনতা ভোগ করত। তাদের নিজস্ব রোজগার ছিল এবং ঐ অর্থ নিজেদের ইচ্ছামত খরচ করার স্বাধীনতা ছিল। নিজস্ব সিদ্ধান্তের জোরও ছিল কারুর কারুর। বৈশালীর আম্রপালির গৃহে বুদ্ধ আতিথ্য স্বীকার করতে, প্রতিশ্রুত হয়েছিলেন। লিচ্ছবি নায়কগণ আম্রপালিকে প্রস্তাব দেন ঐ নিমন্ত্রণ তাদের সপক্ষে বাতিল করার। বহু অর্থের বিনিময়েও আম্রপালি তাতে রাজি হয়নি। তবে এই স্বাধীনতা ছিল খণ্ডিত ও বহু যন্ত্রণার বিনিময়ে প্রাপ্ত। আম্রপালি কেন বারাঙ্গনা হতে বাধ্য হয়েছিল সে গল্প আমাদের জানা। আরো একটি দৃষ্টান্ত, রাজগৃহের শালবতী। সন্তানসম্ভবা হয়ে সে আত্মগোপন করে এবং প্রসবের পর, সম্ভবত সেই সন্তানকে ত্যাগ করে, সে নিজ পেশায় ফেরে। কারণ তার পেশায় ‘লোকে সন্তানবতীকে পছন্দ করেনা।’

পরের স্তরে কায়িক পরিশ্রমকারী কিছু নারীর উল্লেখ করা যায়। যেমন শ্মশান ঘাটে কাজে রত এক নারী, দলবদ্ধ বাজীকর নারী, কিছু পেশাদার গায়িকা নর্তকী এবং দাসীরা। তবে দাসী বাদে, বাকিরা ছিল সংখ্যায় নগণ্য।

সামগ্রিক ভাবে, এই বদ্ধ জীবনযাপনের পটভূমিতে, আবির্ভাব ঘটে বুদ্ধ ও বৌদ্ধ ধর্মের। নারীজীবনে এক চতুর্থ মাত্রা যুক্ত হয়, ভিক্ষুণী সংক্রান্ত ধারণার মাধ্যমে। ভিক্ষুণীর সৃষ্টি, সংঘ প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত তার অগ্ৰগতি, ও নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির ভালোমন্দ, সম্মান-অসম্মান,এইগুলি আলোচ্য।

বৌদ্ধ সংঘে নারীদের প্রবেশের ঘটনাটি বুদ্ধদেবের বোধিলাভের ও ধর্মচক্র প্রবর্তনের পাঁচ বছর পর ঘটে। তাঁর পালিকা মাতা গোতমির নেতৃত্বে শাক্য রমণীদের একটি বড়ো দল, অশেষ পথকষ্ট সহ্য করে, সংঘে যোগ দেবার মানসে তাঁর কাছে আসেন। গোতমির ও তার সঙ্গিনীদের ক্লান্ত ধূলিধূসর চেহারা, বুদ্ধের যোগ্য সহচর আনন্দকে ব্যথিত করে। কিন্তু বুদ্ধদেব যে সংঘে নারী সদস্য গ্ৰহণের বিরোধী, তা তিনি জানতেন। জানতেন গোতমি নিজেও। যাইহোক, এই অবস্থায়, আনন্দ বুদ্ধদেব কে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি যে ধর্মসম্প্রদায় স্থাপন করেছেন, সেখানে ভিক্ষুণী হয়ে কি কোনও নারী সোতাপত্তিফল, সকৃদাগামিফল, অনাগামীফল ও অর্হৎফল পেতে পারেন?” বুদ্ধদেব বলেন, “অবশ্যই পারেন।” তখন আনন্দ তাঁকে অনুরোধ করেন, যে গোতমি বুদ্ধদেব কে মায়ের যত্নে প্রতিপালন করেছেন, তাঁর অনুরোধ রক্ষা করতে। তিনবার অস্বীকার করার পর, বুদ্ধদেব অনুমতি দিতে বাধ্য হন। (এই ঘটনা কি যুক্তিবোধের সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার দ্বন্দ্বের নমুনা, যাতে বুদ্ধের প্রজ্ঞা, যুক্তিকে মেনে নিয়েছিল?!) তবে এই শর্তও দেন যে, নারীকে আটটি নিয়ম পালনের অঙ্গীকার করে সংঘে প্রবেশ করতে হবে। এটাই অষ্টগুরুধর্ম। আনন্দ গোতমিকে নিয়মগুলি জানালে, গোতমি বাধ্য হয়ে এতেই সম্মত হন। আনন্দ যখন বুদ্ধদেবকে এই সাক্ষাৎকারের বিবরণ দেন, তখন তিনি বলেছিলেন “আনন্দ, নারীদের যদি ঘরের জীবন ত্যাগ করে তথাগতের মত ও পন্থা অনুসারে ঘরছাড়া দশায় যাবার অনুমতি না দেওয়া হতো, তাহলে সদ্ধম্ম ও সৎবিধি হাজার বছর অটুট থাকত। কিন্তু যেহেতু তাদের সেই অনুমতি দেওয়া হয়ে গেছে, সেহেতু তা এখন পাঁচশো বছর অটুট থাকবে!” ভাবতে অবাক লাগে, যে বুদ্ধ এই কথা বলেন, তিনিই গণিকাগৃহে অন্নগ্ৰহণ করেন, ধর্ষিতা নারীকে পুনরায় সম্মানের আসনে বসান, সর্বোপরি মৃত্যুমুহূর্তে তাঁর কন্ঠে ধ্বনিত হয় শাশ্বত বাণী– “বয়ধম্মাসংখারা অপ্পমাদেন সম্পাদেথ” (সমুদয় সৃষ্ট বস্তুই ধ্বংসশীল)। বাস্তবে, মানব বা মহামানব, কেউই একমাত্রিক নন!

এই আটটি গুরুধর্ম ছিল—

১.ভিক্ষুণী যতো বয়োজ্যেষ্ঠ বা প্রজ্ঞাবতীই হোন না কেন, একদিন-দীক্ষিত ভিক্ষুর সামনেও তাঁকে উঠে দাঁড়াতে হবে ও অভিবাদন জানাতে হবে।
২.অর্ধমাসিক ভাবে যে ধর্মীয় উপাচারগুলি পালিত হয়, তার জন্য ভিক্ষুণীরা ভিক্ষুদের অনুমতি ও উপস্থিতি প্রার্থনা করবে। তাঁদের অনুমোদন ব্যতীত উপসোথ আচার পালন করা যাবেনা।
৩.ভিক্ষুদের অনুপস্থিতিতে ভিক্ষুণী একা কোনো স্থানে বর্ষাবাস অতিবাহিত করতে পারবেনা।
৪.বর্ষাকাল কেটে যাওয়ার পর ভিক্ষুণীকে উভয় সংঘের সামনে জানাতে হবে, ঐ সময়কালে সে কি দেখেছে, কি শুনেছে,কি অনুভব করেছে (পভরন আচার)
৫.কোনো অপরাধ করলে ভিক্ষুণী কে অর্ধ মাস যাবৎ শাস্তিমূলক ‘মানত্তা’ আচার পালন করতে হবে।
৬.দুই বৎসর যাবৎ এই নিয়মগুলি কঠোর ভাবে পালন করলে, তবে সে উপসম্পদা লাভের জন্য প্রার্থনা জানাতে পারবে। একে বলা হয়, ‘ছ ধম্ম’।
৭.ভিক্ষুণী কখনোই ভিক্ষুকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারবে না।
৮.ভিক্ষুসংঘ পরিচালনায় ভিক্ষুণীদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ হলেও, বিপরীতটা অনুমোদিত হবে।

এই আটটি বিধির সবগুলিই বুদ্ধ প্রবর্তিত করেছিলেন কিনা, বা পরে এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন করেন কিনা, এসব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যেমন প্রথম গুরুধর্ম পালনের সুযোগে, ছয়জন ভিক্ষু ভিক্ষুণীদের সাথে অসদাচরণ (উরুপ্রদর্শন) করলে, বুদ্ধ নির্দেশ দেন, এই ধরনের ভিক্ষুদের সম্মান দেখানোর দরকার নেই। চতুর্থ বিধির ক্ষেত্রেও, পরে বলা হয়, পভরন আচার ভিক্ষুণী সংঘের সদস্যাদের সামনে পালন করলেই হবে। ষষ্ঠ বিধিটি আরো বিতর্কিত। কারণ গোতমি সরাসরি উপসম্পদা প্রাপ্ত হয়েছিলেন। দুই বছর প্রশিক্ষণকালের কথা সেই মুহূর্তে অন্তত, অবান্তর। সম্ভবত বুদ্ধদেব প্রয়োজন পরিস্থিতি অনুসারে নিয়ম নবীকরণ করতেন। দীঘনিকায়ের ষোড়শ সুত্ত, তাইই বলে। তাছাড়া এটা ভুললেও চলেনা যে সংঘে প্রবেশেচ্ছু নারীকে তার অতীত, শিক্ষা, ধর্ম ভাবনা, সংঘে যোগ দেবার কারণ, ইত্যাদি প্রশ্নও জিজ্ঞাসা করা হতোনা। প্রশিক্ষণের দু’বছরে তাকে যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা হতো।

তারপর আসতো পরীক্ষার পালা।

দু’বছর নিষ্ঠার সাথে ‘ছ ধম্ম’ পালনের পর ইচ্ছুক নারী উপসম্পদা লাভের প্রার্থনা জানাতেন। তখন তাকে ২৬টি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হতো। প্রথম ১৬টি তার শারীরিক অবস্থা, অর্থাৎ রোগ ব্যাধি বিষয়ক (কুষ্ঠ মৃগী ইত্যাদি)। পরের ১০টি প্রশ্ন ছিল এইরকম—১.তুমি কি মানুষ? ২.তুমি কি নারী? ৩.তুমি কি মুক্ত নারী? ৪.তুমি কি ঋণমুক্ত? ৫.তুমি কি রাজকার্যে নিযুক্ত? ৬.তুমি কি তোমার পিতামাতার অনুমতি লাভ করেছ? ৭.তোমার কি কুড়ি বছর বয়স হয়েছে? ৮.তোমাকে কি ভিক্ষাপাত্র ও ভিক্ষুণী বস্ত্র দেওয়া হয়েছে? ৯.তোমার নাম কি? ১০.তোমার প্রস্তাবকের নাম কি?

এই প্রশ্নগুলির অনেকগুলিই সংঘে প্রবেশের সময় করাই সঙ্গত ছিল বলে সাধারণ বিবেচনায় মনে হয়। দু’বছর বাদে, এগুলি করার কারণ কি এটা হতে পারে যে ঐ সময়কালের মধ্যে অনেকে পূর্ব জীবনে ফিরেও যেত??

যাইহোক, শেষ দশটি প্রশ্নের কার্যকারণ সম্ভবত এই রকম—১ও২, তার মানবত্বের বোধে উত্তরণ ভাবনাকে নিশ্চিত করত। ৩, ৪ ,৫, প্রশ্ন করা হতো এই কারণে যে, দাসত্বে বা ঋণে আবদ্ধ, বা রাজসম্পত্তি হিসেবে বিবেচিতদের সংঘে প্রবেশাধিকার দেওয়া হতোনা। (উল্লেখ্য যে, গর্ভবতী ও মাতৃদুগ্ধ পানকারী শিশুর মাতা, প্রথম স্তরেই প্রবেশাধিকার পেতেন না)। ৬ এর প্রশ্নে স্বামীর অনুমতির উল্লেখ না থাকা তাৎপর্য পূর্ণ। ৭ এর প্রশ্ন প্রাপ্তবয়স্কতাকে সূচিত করতো। ৮ এর প্রশ্ন হয়তো তার ঘরছাড়া দশার দ্যোতক ছিল। ৯ এর প্রশ্ন তার সংঘ জীবনের নামকে বোঝায় আর শেষ প্রশ্ন সংঘের নিয়মকানুনের সাথে যুক্ত।

সব উত্তর সন্তোষজনক হলে, তাকে নবীনা ভিক্ষুণীদের গুণাগুণ বিচারের দায়িত্ব দেওয়া হতো। এটাও ছিল এক প্রকার পরীক্ষা। এতেও উত্তীর্ণ হলে, সে উপসম্পদা পাবার যোগ্য বলে বিবেচিত হতো। তারপর, আনুষ্ঠানিক ভাবে সে তা লাভ করতো।

সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আলোচনার পর, এখন প্রশ্ন যে, অষ্টগুরুধর্মের অসম্মানজনক শর্ত , পদে পদে ভিক্ষুকে মান্যতা দেওয়া, অজস্র প্রশ্নোত্তরের সম্মুখীন হওয়া, ভিক্ষুণী জীবনের শারীরিক ক্লেশ—এই সবকিছু জেনেও বহু নারী কেন ভিক্ষুণী জীবনকে বেছে নিত? মনে রাখতে হবে, এই সব নিয়ম পালনের ক্ষেত্রে, রাজরানী গোতমি, যশোধরা, ক্ষেমা, শ্যামাবতী, বারবিলাসিনী আম্রপালি , অডচকাশি, ধনী বনিককন্যা ইশিদিসি, মুক্তিপ্রাপ্ত দাসী খুজ্জুত্তরা, অন্যান্য অনেক সাধারণ সংসারী রমণী…সকলেই ছিলেন সমান। নিয়ম সবার জন্যই ছিল এক।

উত্তর এটাই, সংঘজীবন যাপনের সুযোগ আনয়নকারী বৌদ্ধধর্ম নারীর নিজস্ব জগতে একাধারে মুক্তি ও আত্মপরিচয়ের (self identity) বার্তা বয়ে এনেছিল। সেই জগত এক নীরব অসংগঠিত নেতৃবিহীন আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। নারী সংঘে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, প্রবেশ করেছিল, এবং নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ছেড়েছিল। সে হয়ে উঠেছিল সম্মানীয়া, ধর্ম প্রচারিকা, কবি, কখনো বা রাজনীতি অভিজ্ঞা। তাই বৌদ্ধ ধারণার অশুভ পুরুষ শক্তি ‘মার’ যখন তাকে হেয় করে বলে যে– সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও যে “জ্ঞান” লাভ করা ভিক্ষুর জন্য কঠিন তা দুই-আঙুলের চেতনা-সম্বল নারী কীভাবে লাভ করবে?! (Two-finger consciousness বলতে বোঝান হয়েছে, যে নারী বাল্যকাল থেকে দু’ আঙুলে টিপে পরীক্ষা করে দেখতে অভ্যস্ত ভাত সিদ্ধ হয়েছে কিনা, তার শিক্ষাচেতনা ঐ ভাতের হাঁড়িতেই শুরু ও শেষ।)
তখন তার উত্তরে সে স্বস্পর্ধায় জানায় , “নারীর প্রকৃতিই নারীকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়, তাই যে বিষ আমাকে সেবন করানো হয়েছিল তা বিশোধিত হয়েছে।” সুতরাং দিনগত পাপক্ষয়ের গ্লানি থেকে মুক্তির উপায় নারী খুঁজে পেয়েছিল, যা তাদের অনেককেই আধ্যাত্মিক জগতের চিরমুক্তির বোধে উত্তীর্ণ করেছিল।

পূর্ণে পূর্ণ কর প্রাণ পূর্ণিমার চন্দ্রসম
পূর্ণ প্রজ্ঞালোকে দূর করো তুমি অজ্ঞতার তম।
থেরি পূর্ণা।

সার্বিকভাবে এই আধ্যাত্মিক চেতনা যদি সকলের না এসেও থাকে, প্রত্যেকে যার যার নিজের মতো করে, জগতের আনন্দ যজ্ঞে সামিল হতে যে পেরেছিল, তাতে সন্দেহ নেই। আর এখানেই বুদ্ধ তাদের ঈশ্বর হয়ে উঠেছিলেন, উভয়ের স্বার্থকতা এক বিন্দুতে এসে মিলেছিল।

“আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর
তোমার প্রেম হতো যে মিছে!”

তথ্যসূত্র

১. Women under primitive Buddhism, by I. B. Horner
২. বৌদ্ধধর্ম ও নারী, লেখিকা নীহারকণা মুখোপাধ্যায়
৩. The rise of Buddhism as experienced by women. By Uma Chakraborty.

মন্তব্য তালিকা - “নারী – বুদ্ধ ও সংঘ”

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।