সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

চৈতন্যের জন্মস্থান: নবদ্বীপ না কি মায়াপুর

চৈতন্যের জন্মস্থান: নবদ্বীপ না কি মায়াপুর

সুব্রত পাল

আগস্ট ১১, ২০২০ ৩০৬০ 9

নবদ্বীপ। নবদ্বীপ ধাম। ধাম কথার অর্থ গৃহ, বাসস্থান যেমন, তেমনি তীর্থস্থানও বটে। পূর্ব রেলেওয়ের হাওড়া-কাটোয়া রেললাইনের ওপর এই স্থান গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান হিসেবে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে তীর্থক্ষেত্র। কৃষ্ণনগর মহকুমার অন্তর্গত নদিয়া জেলার শেষ প্রান্ত নবদ্বীপ শহর। শহরের একেবারে গা-ঘেঁষে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বর্ধমান জেলা। পূর্ব দিকে উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত ভাগীরথী নদী শহরকে জেলার বৃহত্তর বাকি অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। নৌকোয় ভাগীরথী পেরোলে ওপারে স্বরূপগঞ্জ গ্রাম। স্বরূপগঞ্জ গ্রামের উত্তর দিক দিয়ে জলঙ্গি নদী পশ্চিমবাহিনী হয়ে নবদ্বীপের ভাগীরথীতে পড়েছে। জলঙ্গির উত্তর পাড়ে মায়াপুর। শতবর্ষের কিছু আগেও এই মুসলিম কৃষিজীবী অধ্যুষিত গ্রামটির নাম ছিল মিঞাপুর। বৈষ্ণব ধর্মে পণ্ডিত এক উচ্চপদস্থ আমলা স্থানটিকে মায়াপুর নামে সরকারি নথিভুক্ত করে সেখানেই চৈতন্যের জন্মস্থান বলে প্রচার করে বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন। তারপর ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু বিতর্কের নিরসন হয়নি। উপরন্তু সেখানে নানা মঠ-মন্দিরের সঙ্গে বিরাট ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও ঐশ্বর্যশালী বিদেশি ভক্তকূল অধ্যুষিত ‘ইসকন’ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়ে এই জায়গা এখন পশ্চিমবঙ্গ তথা বিশ্বের পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে মায়াপুরের চৈতন্য-জন্মস্থান ভাবমূর্তিটি উজ্জ্বল করার প্রয়াসও প্রবলতর হয়েছে।

প্রকৃত জন্মস্থান

১৪৮৬ সাধারণাব্দে, অর্থাৎ আজ থেকে পাঁচশো চৌত্রিশ বছর আগে চৈতন্যের জন্ম হয়। তাঁর জন্মস্থানের নামটি যে নবদ্বীপ, ষোড়শ শতকে, ১৫৩৩-এ তাঁর মৃত্যু অথবা অন্তর্ধানের অব্যবহিত পর থেকে রচিত হওয়া সংস্কৃত এবং বাংলা চরিতগ্রন্থগুলোই তার প্রমাণ। সেইসব গ্রন্থে ‘মায়াপুর’ নামের কোনো অস্তিত্বই নেই। ত্রয়োদশ শতক থেকে নবদ্বীপ ছাড়াও স্থানটি নোদীয়াহ্ বা নদীয়া নগরী নামে পরিচিত ছিল (সরকারি কাজে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই স্থান ‘নদীয়া’ নামেই উল্লেখিত হত)। তবে গঙ্গা তথা ভাগীরথী নদী তখন নবদ্বীপের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক দিয়ে খানিকটা ত্রিভুজের আকারে প্রবাহিত হত এবং জলঙ্গি নদীও (তখনকার অলকানন্দা) নগরের দক্ষিণ দিকে অনেক দূরে গিয়ে ভাগীরথীতে মিলত। ফলে এখনকার মায়াপুর-স্বরূপগঞ্জ অঞ্চল সহ নবদ্বীপ— নদীর পূর্ব দিকে একটাই টানা ভূখণ্ডরূপে অবস্থিত ছিল। গবেষকদের অনুমান আঠারো শতকের মাঝামাঝি থেকে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলপ্লাবনে নগরের পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে নদীপথ পরিবর্তিত হয়ে গিয়ে দুটি অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। জলঙ্গি ও ভাগীরথীর মিলনস্থলও ক্রমশ সরে এসে সমগ্র নবদ্বীপকে ত্রিধাবিভক্ত করে। সেই সঙ্গে নগরের উত্তরাংশ, যে স্থানে চৈতন্যের বাসগৃহ ছিল, তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়।[১]

নবদ্বীপে চৈতন্য তাঁর অনুগামীদের নিয়ে খোল-খঞ্জনি বাজিয়ে হরিনাম সংকীর্তন করতেন। সেখানে জাতি-ধর্ম বিচার ছিল না।[২] তাঁর প্রচারে নবদ্বীপবাসীদের ঘরে ঘরে হরিনাম ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় নবদ্বীপের মুসলমান প্রশাসক চাঁদ কাজি নবদ্বীপের চৈতন্যবিরোধী শাস্ত্রগর্বী ‘পাষণ্ডী’দের প্ররোচনায় সংকীর্তনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।[৩] চৈতন্য তাঁর দলবল নিয়ে কাজির বিরুদ্ধে বিশাল মশাল-মিছিল করে কাজির বাড়ীঘর-বাগান ভেঙে তছনছ করে তাঁকে নিজের বশ্যতা স্বীকার করান এবং অনুগামীদের মনোবল বাড়াতে কীর্তন সহ গোটা নবদ্বীপ পরিক্রমা করেন। প্রায় সমসাময়িক কবি বৃন্দাবনদাসের ‘চৈতন্যভাগবত’-এ তার বিস্তৃত বিবরণ আছে। তা থেকে সেই সময়ের নবদ্বীপের একটা সামগ্রিক চিত্র ফুটে ওঠে। বিবরণ অনুযায়ী, চৈতন্য নিজের বাড়ির কাছের গঙ্গার ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে শোভাযাত্রা নিয়ে নাচতে নাচতে পর পর কয়েকটি ঘাট পেরিয়ে গঙ্গানগর নামে স্থান থেকে কিছু দূরে গিয়ে নবদ্বীপের প্রান্তবর্তী সিমুলিয়া নগরে পৌঁছোন। সিমুলিয়ায় ছিল কাজির বাড়ি এবং মুসলমান অধিবাসীদের বাস। সিমুলিয়ার বর্তমান নাম বামুনপুকুর। এখানে এখনও চাঁদ কাজির সমাধি রয়েছে। এর কাছাকাছি দক্ষিণ দিকে মিঞাপুর গ্রামটি অবস্থিত ছিল। যেটি এখন মায়াপুরে রূপান্তরিত।[৪]

আমার এসব কথার উদ্দেশ্য একটাই, প্রায় পাঁচশো বছর আগে লেখা বিবরণ থেকে এটা স্পষ্ট যে চৈতন্যের জন্মভিটেটি ছিল তৎকালীন নবদ্বীপের পশ্চিম ভাগে প্রবাহিত গঙ্গা-তীরবর্তী। নদী থেকে দূরে পূর্ব ভাগের সিমুলিয়া নগরের (বর্তমান বামুনপুকুর) পাশে মিঞাপুরে (বর্তমান মায়াপুর) নয়। তবে তার পাথুরে প্রমাণ উদ্ধারের জন্যে বর্তমান নবদ্বীপের উত্তর-পশ্চিম দিকের গঙ্গানদীর ছেড়ে-যাওয়া খাত সহ সম্ভাব্য অঞ্চলে ব্যাপক খননকার্যের প্রয়োজন রয়েছে।

মায়াপুরের মানস জন্ম

আঠারো শতকের পঞ্চাশ-ষাটের দশকে বৃন্দাবনবাসী নরহরি চক্রবর্তী ওরফে ঘনশ্যাম দাস ‘ভক্তিরত্নাকর’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাতে নবদ্বীপকে ন’টি দ্বীপের সমষ্টি বলে উল্লেখ করেন। তিনি ‘নব’ শব্দকে ‘নয়’ অর্থে ধরে ন’টি দ্বীপের নামকরণ করেন যথাক্রমে সীমন্তদ্বীপ, অন্তর্দ্বীপ, গোদ্রুমদ্বীপ, মধ্যদ্বীপ, কোলদ্বীপ, ঋতুদ্বীপ, জহ্নুদ্বীপ, মোদদ্রুমদ্বীপ ও রুদ্রদ্বীপ। শুধু তাই নয়, এর পর তিনি লিখেছেন,
“নবদ্বীপ মধ্যে মায়াপুর নামে স্থান।/যথা জন্মিলেন গৌরচন্দ্র ভগবান।।”

আগেই লিখেছি, ষোলো শতকের প্রথমার্ধ থেকে রচিত হওয়া চৈতন্যজীবনী এবং বিভিন্ন কাব্য-সাহিত্যে মায়াপুর নামে কোনো স্থানের উল্লেখ নেই। সেইসব পূঁথিতে নবদ্বীপকে একটিমাত্র দ্বীপ হিসেবেই বর্ণনা করা হয়েছে। এসবের রচয়িতাদের মধ্যে মুরারী গুপ্ত, কবিকর্ণপুর, বৃন্দাবনদাস প্রমুখ কয়েক জন নবদ্বীপেই বাস করতেন। কবিকর্ণপুর ‘ চৈতন্যচরিত মহাকাব্যম ’ গ্রন্থে নবদ্বীপকে ‘নবীন দ্বীপং’ বলে উল্লেখ করেছেন। যার অর্থ নতুন দ্বীপ।

অন্যদিকে নরহরির প্রথম জীবন কেটেছিল মুর্শিদাবাদে। পরবর্তী জীবনে তিনি বৃন্দাবনে বসে ভক্তিরত্নাকরসহ বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেন। জীবদ্দশায় কোনো একসময়ে তিনি সম্ভবত নবদ্বীপে এসেছিলেন। নগরের পশ্চিম প্রান্ত দিয়ে প্রবাহিত গঙ্গা ততদিনে পূর্ব দিক দিয়ে বইতে শুরু করেছে। ভক্তিরত্নাকর গ্রন্থে নরহরি কথিত নয়টি দ্বীপের প্রথম চারটি গঙ্গার পূর্ব তীরে, পরবর্তী পাঁচটি পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এবং এগুলো সবই ‘মায়াপুর’-কে বেষ্টন করে পদ্মের পাপড়ির আকারে সজ্জিত। অর্থাৎ তাঁর বর্ণনা অনুসারে দ্বীপের সংখ্যা দাঁড়ায় দশ।

নবদ্বীপ সম্পর্কে নরহরির নয়-দ্বীপের ব্যাখ্যা গবেষকরা কেউই মেনে নেননি। তাঁরা নরহরির বর্ণনাকে ঐতিহাসিক বাস্তবতার অপব্যাখ্যা বলেই মনে করেছেন। ড. ক্ষুদিরাম দাস লিখেছেন, “নবদ্বীপ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির লৌকিক নাম-পরিচয় বর্জন করে তিনি কাল্পনিক নতুন নামকরণের প্রয়াস নিয়েছেন এবং প্রতিটি অঞ্চলের সঙ্গে একটি করে উদ্ভট অলৌকিক কাহিনি যোগ করে দিয়েছেন।”[৫]

কান্তিচন্দ্র রাঢ়ীর ‘নবদ্বীপ মহিমা’ বইয়ের মন্তব্য, “নরহরি চক্রবর্তী মহাশয় (শ্রীকৃষ্ণের) বৃন্দাবনলীলার অনুসরণ করিয়া নবদ্বীপ নামের ব্যাখ্যা করিয়াছেন…অতএব এই ব্যাখ্যা ভৌগোলিক ব্যাখ্যা বলিয়া গৃহীত হইতে পারে না।’’ এই বৃন্দাবনলীলা অনুসরণেই তিনি চৈতন্যের জন্মভূমিকে ‘যোগপীঠ মায়াপুর’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। যেহেতু তাঁর আধ্যাত্মিক চেতনায় অবতার-জন্মভূমি মাত্রেই মায়াপুর।[৬]

মিঞাপুর হল মায়াপুর

কিন্তু নরহরি চক্রবর্তীর এই আধ্যাত্মিক কল্পনা গ্রন্থের পাতা থেকে বাস্তবের মাটিতে নেমে এল কীভাবে? এবারে সেই কাহিনি বলি। আঠারো শতক থেকে চলে আসি ঊনিশ শতকের শেষ প্রান্তে। বৈষ্ণবশাস্ত্রে সুপণ্ডিত কেদারনাথ দত্ত তখন নদিয়ার অন্যতম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। নবদ্বীপে বৈষ্ণবগুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল তাঁর। কিন্তু ততদিনে চৈতন্যের মানবতাবাদী ভক্তিবাদ ব্রাহ্মণ্য আচারসর্বস্বতার নীচে চাপা পড়ে গিয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের অবতার রূপে তিনি ব্রাহ্মণদের করায়ত্ত হয়েছেন। চৈতন্যের মতবাদে যে কোনো জাতি-বর্ণ, এমনকী মহিলাদেরও কানে মন্ত্র দিয়ে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষিত করবার অধিকার একসময়ে স্বীকৃত হয়েছিল। মেদিনীপুরের সদগোপ জাতীয় শ্যামানন্দ বা খেতুরির কায়স্থজাতীয় নরোত্তম দত্ত, অদ্বৈত-পত্নী সীতাদেবী, নিত্যানন্দের পত্নী জাহ্নবী দেবী, শ্রীনিবাসের কন্যা হেমলতা ব্রাহ্মণদেরও দীক্ষা দিয়েছেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মে ধীরে ধীরে সে চিত্রটি বদলে গিয়ে সেখানে ব্রাহ্মণ গুরু-গোঁসাইদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অব্রাহ্মণ গুরু-গোঁসাইরা ক্রমশ অপাঙক্তেয় হয়ে তাঁদের অনুগামীদের মাধ্যমে জাত-বৈষ্ণব সমাজের জন্ম দিয়েছেন। ফলে জাতিতে কায়স্থ কেদারনাথ নবদ্বীপের ব্রাহ্মণসমাজের কাছে গুরুত্ব পাবেন না সেটাই স্বাভাবিক। উপরন্তু নানা ভাবে অপদস্থ হয়েছিলেন।

অপমানিত কেদারনাথ প্রতিশোধ নিতে চৈতন্যক্ষেত্রটিকেই স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করলেন। পণ্ডিত হিসেবে ভক্তিরত্নাকরের আধ্যাত্মিক তত্ত্বের কথা তাঁর আগেই জানা ছিল। তাকে হাতিয়ার করে, চৈতন্যের জন্মস্থান হিসেবে নরহরির মায়াপুর তত্ত্বের প্রচারে নামলেন। বিশিষ্টজনদের সভা ডেকে, স্বপ্নাদেশ এবং কিছু অলৌকিক সংকেত বর্ণনার মাধ্যমে তিনি ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের মুসলিম কৃষিজীবী অধ্যুষিত মিঞাপুর গ্রামটিকে মায়াপুর নামে অভিহিত করলেন। উচ্চপদের ক্ষমতাবলে সরকারি নথিতেও মিঞাপুর মায়াপুরে পরিণত হল। চাকরি ছেড়ে কেদারনাথ দত্ত ভক্তিবিনোদ ঠাকুর নামে দীক্ষিত হয়ে চাষিদের কাছ থেকে জমি কিনে সেখানেই অস্থায়ী মন্দির গড়ে চৈতন্যের ‘সেবাপুজো’ শুরু করলেন। ১৯১৪ সাধারণাব্দে তিনি মারা যান। চার বছর পর ১৯১৮-তে তাঁর পুত্র বিমলাপ্রসাদ দত্ত (সাধন-নাম ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী) সেই জায়গায় চৈতন্য মঠ তৈরি করানোর পর কেদারনাথের উদ্দেশ্য অনেকটাই সফল হল। ১৯২৯-এ ‘শ্রীমায়াপুর’ নামে ডাকঘর হল। এর পর ১৯৩৪-এ চৈতন্য জন্মস্থান হিসেবে নির্মিত হল ‘ যোগপীঠ ’ মন্দির। সেখানে নিম গাছের নীচে মূর্তিরূপে শচীদেবীর কোলে শিশু নিমাই দোল খেতে লাগলেন। নরহরি চক্রবর্তীর গ্রন্থবদ্ধ আধ্যাত্মিক ভাবনা পুরোপুরি বাস্তবে রূপায়িত হল।[৭] তবে ইসকন প্রতিষ্ঠার পরের ঘটনা সম্ভবত কেদারনাথের সুদূর উচ্চাকাঙ্ক্ষাতেও ছিল না।

এবার ইসকন কথা

১৯৩২-এ, এই কাহিনিতে প্রবেশ অভয়চরণ দে-র। ধনবান, মেধাবী, দর্শনের কৃতী ছাত্র। তিনি ভক্তিসিদ্ধান্তের কাছে দীক্ষা নিলেন। দীক্ষান্তে তাঁর নতুন নাম হল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী। ১৯৬৫ সাধারণাব্দে তিনি আমেরিকা যান। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে ১৯৬৬-তে ইসকন (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনসাসনেস) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০-এ দেশে ফিরে, তার দু’বছর পর ১৯৭২-এ মায়াপুরে ইসকন-এর প্রধান কেন্দ্রটির ভিত্তিস্থাপন করেন। তৈরি হয় চন্দ্রোদয় মন্দির। এই মন্দির স্থাপনের পর থেকেই মূলত এই অঞ্চলে বিদেশিদের আগমন ও যাতায়াত শুরু হয়েছিল। ক্রমে তাঁদের এবং অভিনব ঐশ্বর্যময় মন্দিরের আকর্ষণে ধীরে ধীরে মায়াপুরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

পরবর্তী আটচল্লিশ বছর ধরে মায়াপুর-ইসকনের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি হল অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে প্রকৃত নবদ্বীপের ইতিহাস-ভূগোল গুলিয়ে দিয়ে নরহরি চক্রবর্তী কথিত ভ্রান্ত কাল্পনিক ইতিহাসকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। প্রধানত প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বের ভক্তকূল সমাবৃত, প্রভূত ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও অর্থবলে বলীয়ান ইসকন কর্তৃপক্ষ সুনিপুণ ভাবেই এই কাজটি করে চলেছে।

এই কর্মসূচির অন্যতম হল ‘নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা’। নরহরি চক্রবর্তীর ‘নবদ্বীপ’ অর্থে নয়টি দ্বীপের তত্ত্বকে শিরোধার্য করে চৈতন্যের জন্মতিথি দোলপূর্ণিমার সময় ইসকনের চন্দ্রোদয় মন্দির থেকে শুরু হয়েছিল এই পরিক্রমা। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে সপ্তাহ দুয়েক ধরে তথাকথিত ‘দ্বীপ’গুলোতে ভ্রমণ। সব মিলিয়ে প্রায় বাহাত্তর কিলোমিটার পথ। ক্রমশ সুসংগঠিত প্রচার ও আয়োজনে ইসকনের ভক্তকুলে প্রবল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই পরিক্রমা। ভিনরাজ্যসহ শতাধিক দেশ থেকে আসা শত শত মানুষের বর্ণিল উপস্থিতি ও খোল-খঞ্জনি কিংবা কোনো বিদেশি বাদ্যের সঙ্গতে গাওয়া হরিনাম-সংকীর্তনে এই সময় মুখরিত থাকে মায়াপুর-নবদ্বীপসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল। শ্বেতাঙ্গ (কতিপয় কৃষ্ণাঙ্গসহ), ভারতীয় অবাঙালি ও বাঙালি— দেশ এবং অঞ্চলভেদে পরিক্রমার মিছিল হয় নানা ধরনের। তাঁদের বিশ্রাম, রাত্রিবাস, খাদ্য ও আপ্যায়নের ব্যবস্থাও বিভিন্নরকম। ইসকনের দোলযাত্রা উৎসবে এই পরিক্রমাই এখন প্রধানতম অনুষ্ঠান বলা যায়।

ইসকনের এই নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমা তথা নয়-দ্বীপ ভ্রমণের বিপুল আড়ম্বর ও জনসমাগমে আকৃষ্ট হয়ে বর্তমানে নবদ্বীপের বহু মঠ, মন্দির, আখড়া, আশ্রমও বহিরাগত ভক্তদের নিয়ে নয়-দ্বীপ পরিক্রমণ শুরু করেছে। ইসকনের মতো অত আগে থেকে না হলেও কোথাও সাত দিন, কোথাও তিন দিন, নিদেনপক্ষে এক দিনের অল্প কিছু ‘দ্বীপ’ ছুঁয়ে পরিক্রমার আয়োজন করা হচ্ছে। ভিনদেশি বা শ্বেতাঙ্গ ভক্ত সমাগমে এখন অবশ্য নবদ্বীপের চৈতন্য সারস্বত মঠ, দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠ বা কেশবজি গৌড়ীয় মঠ প্রভৃতি ধনাঢ্য মন্দিরগুলোও ইসকনের থেকে খুব কম যায় না। আবার অন্যদিকে নবদ্বীপ এবং সংলগ্ন অঞ্চলের বেশ কিছু মন্দিরকে ইসকন ইতিমধ্যেই অধিগ্রহণ করেছে। কোনো কোনো মন্দিরে অর্থপ্রদান দ্বারা সহযোগীর ভূমিকা পালন করে চলেছে। কাজেই সেই মন্দিরগুলোও নয়-দ্বীপ পরিক্রমায় নিরুৎসাহিত থাকবে না তা বলাই বাহুল্য।

এখানে বলে রাখা যায়, দোলযাত্রায় নবদ্বীপ-মায়াপুরের এই পরিক্রমা-বাহুল্যে অনুপ্রাণিত নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজও বৃন্দাবনের পঞ্চকোশী পরিক্রমার মতো এক পরিক্রমা মার্গ তৈরি করেছেন। মহাপ্রভুর মন্দিরকে মধ্যে রেখে তিরিশটি স্থান-চিহ্নিত এই মার্গ অবশ্য পুরোটাই নবদ্বীপ শহরকেন্দ্রিক। ১৪২২ বঙ্গাব্দের দোল পূর্ণিমায় সূচনা হলেও এই পরিক্রমা কেবল দোলেই নয়, অন্য সময়েও অনুষ্ঠিত হয়। নয়-দ্বীপ পরিক্রমার থেকে তাই এর স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু ইসকনসহ আর সমস্ত মঠ-মন্দিরের নবদ্বীপ মণ্ডল পরিক্রমার নামে তথাকথিত নয়টি দ্বীপ পরিভ্রমণ আসলে নরহরি চক্রবর্তী কল্পিত ও কেদারনাথ দত্ত প্রচারিত ভ্রান্ত ইতিহাসকেই মান্যতা দিয়ে তাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে চলেছে।

মায়াপুর অঞ্চলের বৃহদংশ আজ ইসকন অথবা তার ভক্তদের দখলে। এ নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে মার-দাঙ্গাও কম হয়নি। কিন্তু অর্থ, ক্ষমতা এবং জৌলুসের নীচে ক্রমে গরিবগুর্বোরা চাপা পড়ে গিয়েছেন এবং যাচ্ছেন। মায়াপুর জুড়ে এখন ধনবান দেশি-বিদেশি ভক্তদের হরেক কিসিমের সুরম্য বাড়িঘর। চন্দ্রোদয় মন্দির-চত্বরে কয়েক বছর ধরে কয়েকশো কোটি টাকার সু-উচ্চ চোখধাঁধানো মন্দির নির্মাণের বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। যার ব্যাপ্তি ও অভিনবত্বের গুণগানে ইতিমধ্যেই মুখর বাংলা তথা ভারতের সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। তারা মায়াপুরকে ইসকনের বয়ান অনুযায়ী চৈতন্যের জন্মস্থান বলেই প্রচার করে যাচ্ছে। ইন্টারনেটেও এই প্রচারে খামতি নেই। এমনকী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের বিজ্ঞাপনেও মায়াপুর এখন ‘শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান’।

নবদ্বীপের ভৌগোলিক-ইতিহাসের বিলোপ সংকেত

বিশ্বখ্যাত ফোর্ড কোম্পানির বর্তমান কর্ণধার স্বয়ং উপস্থিত থেকেছেন নির্মীয়মান মন্দিরশীর্ষে সোনার পাতে মোড়া বিশালাকার চক্র স্থাপনের সময়। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসনিক সহায়তায় মায়াপুর এবং তথাকথিত ‘দ্বীপ’সহ অন্যান্য এলাকার প্রায় সাড়ে সাতশো একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠতে চলেছে ‘শ্রীচৈতন্য কালচারাল ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার’ নামে ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম সেন্টার। এই সেন্টারের অধীনে থাকবে বিশ্বের পঁয়তাল্লিশটি বিশেষ রাষ্ট্রের ‘স্পিরিচ্যুয়াল এম্ব্যাসি’ বা আধ্যাত্মিক দূতাবাস নামে অত্যাধুনিক পর্যটনকেন্দ্র। প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের থাকার বন্দোবস্ত থাকবে সেখানে। প্রতিটি দূতাবাসের নির্মাণ, খাওয়াদাওয়া থেকে যাবতীয় খুঁটিনাটি হবে সেইসব দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। যাতে পর্যটকরা নিজের দেশে থাকার অনুভূতি লাভ করতে পারেন সেখানে। তিন হাজার কোটি টাকা এই প্রকল্পের জন্যে ব্যয় হতে পারে বলে ইসকনের তরফে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে।

এর পর আর লেখা বাহুল্য যে, আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ-চৈতন্যের নামে প্রচারিত মায়াপুরের এই প্রতিষ্ঠানটি অচিরেই হয়ে উঠবে এক সুবৃহৎ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র। যা ধীরে ধীরে নবদ্বীপের ভৌগোলিক ইতিহাসের এ যাবৎকালের যাবতীয় তথ্যকে আঁধার-চাপা দিয়ে, চৈতন্য-জন্মের প্রকৃত স্থান নির্ণয়ের আরব্ধ গবেষণার সমস্ত সম্ভাবনার পথকে রুদ্ধ করে দেবে।

পাদটীকা [১]:

ক। “১৭৬০-৬২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বর্তমান শহর নবদ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণে গঙ্গা-জলঙ্গী মিলিত হয়ে নবদ্বীপের পূর্বদিকের জলঙ্গীর পুরানো খাত দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হতে থাকে। এই সময় নবদ্বীপের পশ্চিমে এবং পূর্বে গঙ্গার অবস্থান দেখা যায়। এরপর থেকেই নবদ্বীপের পশ্চিমে প্রবাহিত গঙ্গার ধারা ক্ষীণ ও ম্রিয়মান হতে থাকে”। (কথামুখ, শান্তিরঞ্জন দেব, শ্রীচৈতন্যদেব ও সমকালীন নবদ্বীপ)।
খ। “১৭৫৩ খৃঃ অব্দ হইতে ১৭৬৩ খৃঃ অব্দের মধ্যে (নবদ্বীপের) পূর্ব্বদিকে ভাগীরথী প্রবাহিত হইতে আরম্ভ হয়। অনেককাল নবদ্বীপের উভয় দিকেই ভাগীরথী প্রবাহিত থাকেন, তাহা রেনেল সাহেবের ১৭৮০ খৃষ্টাব্দের নক্সা দৃষ্টে জানা যায়। ক্রমে পশ্চিমের ধারা স্রোতোহীন হইয়া পূর্ব্বের ধারা প্রবল হইয়া পড়ে।…নবদ্বীপের উত্তরে ব্রাহ্মণপল্লী ছিল—প্রথমেই সেই পল্লীতে ভাঙ্গন ধরে অর্থাৎ দেয়াড় পড়ে।…আমরা সর্ব্বপ্রথমে ১১৮৭ সাল বা ১৭৮০ খৃষ্টাব্দে নবদ্বীপের উত্তরে ভাঙ্গন দেখিতে পাই। উহার পরেই বৈদিক পল্লী ছিল, ঐ পল্লীতেই গৌরাঙ্গের গৃহ ছিল”। (নবদ্বীপতত্ত্ব, কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী, শ্রীচৈতন্যদেব ও সমকালীন নবদ্বীপ, পরিশিষ্ট-৩)
গ। “বৈদিক পল্লী অর্থাৎ চৈতন্যদেবের ভদ্রাসন গঙ্গা কবলিত হয় ১৭৭৭-৮২-এর মধ্যে। কারণ পুরানো দলিলপত্র থেকে জানা যায় যে, ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে বৈদিক পল্লী গঙ্গা কবলিত হওয়ায় মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র বৈদিক ব্রাহ্মণদের নবদ্বীপের দক্ষিণে দেয়ারা অঞ্চলে তাঁদের বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন”।(কথামুখ, শান্তিরঞ্জন দেব, শ্রীচৈতন্যদেব ও সমকালীন নবদ্বীপ)
ঘ। “উক্ত রাজার (মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়)…ব্রহ্মত্র দলিলে নবদ্বীপ বুড়াশিবতলা নিবাসী জনৈক বৈদিক সম্প্রদায়ী ব্রাহ্মণকে ভূমিদান-সময় এরূপ উল্লেখ করিয়াছেন— ‘বৈদিক পল্লীতে গৌরাঙ্গ প্রভুর স্নানের ঘাটের নিকট তোমার বাড়ী গঙ্গাগর্ভে পতিত হওয়ায় নদীয়ার চিনাডাঙ্গায় তোমার বাসের অধিকার দেওয়া গেল’। (শ্রীগৌরাঙ্গদেবের জন্মস্থান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু)

পাদটীকা [২]:

চৈতন্যের প্রচারিত ধর্মে ভাগবতপুরাণের গুরুত্ব রয়েছে। এই পুরাণে জাতপাতবিরোধী ভক্তিতত্ত্বের অনুশীলন করা হয়েছে। চৈতন্যচরিত-এ আছে—
“নীচজাতি হৈলে নহে ভজনে অযোগ্য।।
যেই ভজে সেই বড় অভক্ত হীন ছাড়।
কৃষ্ণভজনে নাহি জাতিকুলাদি বিচার”।।

চৈতন্য গবেষক রমাকান্ত চক্রবর্তী লিখেছেন—“চৈতন্য সামাজিক বিপ্লবের কথা বলেননি। পারিবারিক জীবনে তিনি নিজেও ব্রাহ্মণের কৃত্য ও আচার মেনে চলেছেন। ভক্তিতে জাতবিচার নেই,– এই ছিল তাঁর প্রধান কথা।” তিনি লিখেছেন— “তাঁর চারশো নব্বই জন অন্তরঙ্গ পরিকরের মধ্যে দুশো ঊনচল্লিশ জনই ছিলেন ব্রাহ্মণ; সাঁইত্রিশ জন ছিলেন বৈদ্য, ঊনত্রিশ জন ছিলেন কায়স্থ, দু’জন ছিলেন মুসলমান। মুসলমানদের মধ্যে এক জন ছিলেন নবদ্বীপের এক দর্জি; আর ছিলেন যবন হরিদাস, যাঁকে আলিঙ্গন করতে বৈদিক ব্রাহ্মণ চৈতন্যের কখনো সংকোচ হয়নি।”

পাদটীকা [৩]:

“…হেনকালে পাষণ্ডী হিন্দু পাঁচ সাত আইল।।
আসি কহে হিন্দুর ধর্ম্ম ভাঙ্গিল নিমাই।
যে কীর্ত্তন প্রবর্ত্তাইল কভু শুনি নাই।।
মঙ্গলচণ্ডী বিষহরী করি জাগরণ।
তাতে বাদ্য নৃত্য গীত যোগ্য আচরণ।।
…………………………………………
হিন্দু শাস্ত্রে ঈশ্বরনাম মহামন্ত্র জানি।
সর্ব্বলোক শুনিলে মন্ত্রের বীর্য্য হয় হানি।।
গ্রামের ঠাকুর তুমি সভে তোমার জন।
নিমাই বোলাইয়া তারে করহ বর্জ্জন”।।
(আদিলীলা, চৈতন্যচরিতামৃত)

পাদটীকা [৪]:

“গঙ্গার তীরে তীরে পথ আছে নদীয়ায়।
আগে আগে সেই পথে যায় গৌর রায়।।
আপনার ঘাটে আগে বহু নৃত্য করি।
তবে মাধাইর ঘাটে গেলা গৌরহরি।।
বারকোনা ঘাটে নগরিয়া ঘাটে গিয়া।
গঙ্গার নগর দিয়া গেলা সিমুলিয়া।।
…………………………………
নদীয়ার একান্তে নগর সিমুলিয়া।
নাচিতে নাচিতে প্রভু উত্তরিলা গিয়া”।।
(মধ্যখণ্ড, চৈতন্যভাগবত )

বৃন্দাবনদাসের বর্ণনা অনুযায়ী, সেদিন চৈতন্যের সংকীর্তনের সঙ্গী লক্ষ লক্ষ গৌরভক্ত কোটি কোটি মশাল নিয়ে কাজির বাড়িতে হাজির হয়ে বিষম হাঙ্গামা বাঁধিয়েছিলেন। বৃন্দাবনদাসের ‘লক্ষ-কোটি’ সংখ্যাগুলো ভক্তিময় ভাবাবেগের অতিরঞ্জন মনে করা যায়। যদি সেটা কয়েকশোও হয়, তবে তারও অভিঘাত কম নয়। বৃন্দাবনদাস লিখেছেন—
“প্রাণ লৈয়া কোথা কাজি গেল দিয়া দ্বার।
‘ঘর ভাঙ্গ, ভাঙ্গ’—প্রভু বলে বারবার।।…
মহামত্ত সর্ব্ব লোক চৈতন্যের রসে।
ঘরে উঠিলেন সবে প্রভুর আদেশে।।
কেহো ঘর ভাঙ্গে, কেহো ভাঙ্গে দুয়ার।
কেহো লাথি মারে, কেহো করয়ে হুঙ্কার।।
আম্র পনসের ডাল ভাঙ্গি কেহো ফেলে।
কেহো কদলক-বন ভাঙ্গি ‘হরি’ বলে।।
পুষ্পের উদ্যানে লক্ষ লক্ষ লোক গিয়া।
উপারিয়া ফেলে সব হুঙ্কার করিয়া।।
পুষ্পের সহিত ডাল ছিণ্ডিয়া ছিণ্ডিয়া।
‘হরি’ বলি নাচে সবে শ্রুতি-মূলে দিয়া।।…ইত্যাদি

শেষকালে–
“ভাঙ্গিলেন যত সব বাহিরের ঘর।
প্রভু বলে অগ্নি দেহ বাড়ির ভিতর।।
পুড়িয়া মরুক সব গণের সহিতে।
সর্ব্ব বাড়ি বেড়ি অগ্নি দেহ চারি ভিতে।।
অগ্নি দেহ ঘরে সব না করিও ভয়।
আজি সব যবনের করিব প্রলয়”।।…
(মধ্যখণ্ড, চৈতন্যভাগবত)
প্রভুর ভয়ানক রুদ্রমূর্তি দেখে শেষ পর্যন্ত সমস্ত শিষ্য স্তব করে তাঁকে শান্ত করলেন। কাজিদলনের পর চৈতন্য শঙ্খবণিক নগর, তন্তুবায় নগর, গাদিগাছা, মাজিদা ইত্যাদি স্থান দিয়ে কীর্তন করতে করতে চললেন।

পাদটীকা [৫]:

“আসলে এগুলি হল বাংলা নামের কৃত্রিম তৎসমকরণ। মর্যাদা বাড়াবার জন্য কেউ কেউ এরকম হাস্যকর কৃত্রিম শুদ্ধতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। যেমন কলিকাতাকে কালীক্ষেত্র, বেলেঘাটাকে বিল্বঘৃষ্ট এবং মির্জাপুরকে মৌর্যপুরম্ বলে আভিজাত্যের ছদ্মবেশ পরানো হয়। উক্ত নামগুলির মধ্যে সীমন্তদ্বীপ হল শিমুলিয়ার ছদ্মনাম, গোদ্রুমদ্বীপ গাদিগাছার, মধ্যদ্বীপ মাজিদার, পর্বতাখ্য-কোলদ্বীপ পাড়পুর-কুলিয়ার, জহ্নুদ্বীপ জাহাননগরের। এই বাংলা নামগুলি ঐ সময়কার সাহিত্যে পাচ্ছি। কিন্ত অন্তর্দ্বীপ = আতোপুর, ঋতুদ্বীপ = রাতুপুর, আবার মহৎপুর = মাতাপুর, ভরদ্বাজটিলা = ভারুইডাঙ্গা, এগুলি পাওয়া যাচ্ছে না। পুরাতন নবদ্বীপ বিলীন হওয়ার পর সম্ভবত চর অঞ্চলগুলি এইসব নামে চলিত হয়। আদর্শ ভক্ত নরহরি কেবল ঐ অঞ্চলগুলির সংস্কৃত নামকরণ করেই ক্ষান্ত হননি। প্রত্যেকটি অঞ্চলের একটি করে কল্পিত অলৌকিক কাহিনীও জুড়ে দিয়েছেন। যেমন— সীমন্তদ্বীপ নামের কারণ—
পার্বতী শ্রীচৈতন্যের পদধূলি সীমন্তে ধারণ করেছিলেন। গোদ্রুমদ্বীপ নামের কারণ— ঐখানে অশ্বত্থবৃক্ষেরর নীচে সুরভি গাভী থাকতেন এবং সুরভি গৌরদর্শনে গৌরমহিমা কীর্তন করেছিলেন। তেমনি গৌরাঙ্গ সপ্তর্ষির কাছে মধ্যাহ্নে দর্শন দিয়েছিলেন, তাই মধ্যদ্বীপ। তারপর ব্রহ্মা হরিদাস হয়ে জন্মাবেন এই কথা বলে কৃষ্ণ অন্তর্ধান করেছিলেন, তাই অন্তর্দ্বীপ। এই রকম সর্বত্র এবং নিতান্ত বিশ্বাসী ভক্তের কাছে এই সব অলৌকিক কল্পিত কাহিনীর মূল্য যেমন অপরিসীম, ইতিহাস-ভূগোলের দিক থেকে এসব তেমনি বিভ্রান্তিকর। নরহরি চক্রবর্তী ভাগীরথী ও জলঙ্গীর অবস্থান বিষয়ে কোন ইঙ্গিত কোথাও দেননি”। (ড. ক্ষুদিরাম দাস)

পাদটীকা [৬]:

“যৈছে বৃন্দাবনে যোগপীঠ সুমধুর।
তৈছে নবদ্বীপে যোগপীঠ মায়াপুর”।।
(ভক্তিরত্নাবলী, নবদ্বীপ মহিমায় উদ্ধৃত)

পাদটীকা [৭]:

এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন। বর্তমান নবদ্বীপ শহরের ‘প্রাচীন মায়াপুর’ অঞ্চলে চৈতন্য জন্মস্থান মন্দির স্থাপিত আছে। সেখানেও শচীমায়ের কোলে নিমাইয়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই মন্দিরটিও চৈতন্যের প্রকৃত জন্মভিটে নয়। আঠারো শতকের শেষদিকে নবদ্বীপের বৈদিক পল্লি চৈতন্যের পিতা জগন্নাথ মিশ্রের গৃহ সহ গঙ্গাগত হওয়ার পরবর্তীকালে ওয়ারেন হেস্টিংসের বিশেষ ঘনিষ্ঠ সরকারি দেওয়ান তথা কলকাতার পাইকপাড়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গঙ্গাগোবিন্দ সিংহ ১৭৯১-৯২ সাধারণাব্দ নাগাদ একটি ষাট ফুট উঁচু চৈতন্য-মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। গঙ্গাগোবিন্দ জন্মস্থানের হদিস না পেয়ে লোকশ্রুতি অনুসারে তখনকার নবদ্বীপের উত্তরাংশে রামচন্দ্রপুরের গঙ্গার চড়ায় মন্দিরটি নির্মাণ করান। যদিও সেখানে চৈতন্য বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা হয়নি। অন্য কিছু দেবদেবীর মূর্তির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। ১৮২০-২১ সাল নাগাদ এই মন্দিরটিও প্রবল বন্যায় তলিয়ে যায়। পরবর্তীকালে বৃন্দাবনবাসী ব্রজমোহন দাস (বৈষ্ণব হওয়ার আগে ইনি পেশায় ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার) নবদ্বীপে এসে বহু পরিশ্রমে গঙ্গার চড়ায় অনেক কূপ খনন করে তল্লাশি চালিয়ে এখনকার জন্মস্থান মন্দিরের জায়গায় মাটির নীচ থেকে কিছু অলংকৃত পাথর উদ্ধার করেন এবং ওই জায়গাই গঙ্গাগোবিন্দের বানানো মন্দিরস্থল বলে সিদ্ধান্ত করেন। ওরকম পাথর যদিও পরবর্তীকালেও ওই অঞ্চলের কোনো কোনো বাড়ির ভিত খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ গঙ্গাগোবিন্দের বানানো মন্দিরটি যে ব্রজমোহন নির্দিষ্ট স্থানেই ছিল তা হলফ করে বলা যায় না। গঙ্গাগর্ভে ভগ্ন মন্দিরের পাথরগুলো নানান দিকে ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে এই পাথর উদ্ধারের ফলে প্রমাণিত হয় যে চৈতন্যের জন্মভিটে বর্তমান নবদ্বীপের উত্তরাংশের কোথাও ছিল। কারণ, গঙ্গাগোবিন্দ তলিয়ে যাওয়া জন্মভিটের অদূরেই তাঁর মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন।

কিন্তু কথা হল, রামচন্দ্রপুরের চড়ার নাম ‘প্রাচীন মায়াপুর’ কেন হল? এর একটা কারণ ব্রজমোহন দাস নরহরি চক্রবর্তীর ‘ভক্তিরত্নাকর’ দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। ফলে তাঁরও বিশ্বাস ছিল চৈতন্যের জন্মভিটে নবদ্বীপের মধ্যে ‘মায়াপুর’ নামে স্থানে ছিল। তবে তা কেদারনাথ দত্ত প্রচারিত বর্তমান ভাগীরথীর পূর্ব পাড়ে মিঞাপুরে নয়। দ্বিতীয়ত, সেই সময়ে কেদারনাথের প্রচারে মিঞাপুরের মায়াপুর চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠায় নবদ্বীপের বৈষ্ণবেরা প্রমাদ গুণলেন। তাঁরাও তখন নরহরির মায়াপুর-তত্ত্ব মেনে নিয়ে প্রচার করতে লাগলেন যে মায়াপুরের আসল অবস্থিতি বর্তমান নবদ্বীপে এবং এটাই আসলে আদি। সেই অর্থে প্রাচীন। তাঁদের আবেদনে নবদ্বীপ মিউনিসিপ্যালিটি স্থানটিকে ১৯৩৫ সাধারণাব্দে প্রাচীন মায়াপুর নামে নথিভুক্ত করে।

সহায়ক রচনাপঞ্জি:

১) নবদ্বীপ পরিচয় – নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ প্রকাশিত, জুলাই ২০১৬
২) নবদ্বীপ মহিমা – কান্তিচন্দ্র রাঢ়ী, যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী সম্পাদিত, নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৪৪ সাল
৩) শ্রীচৈতন্যদেব ও সমকালীন নবদ্বীপ – যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী, নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদ, সেপ্টেম্বর ২০০৪
৪) নবদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৃহত্তর নবদ্বীপের ইতিহাস (প্রবন্ধ) –
অধ্যাপক নৃপেন্দ্রনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, নবদ্বীপ আদর্শ পাঠাগার রজতজয়ন্তী স্মরণিকা ১৯৭৭
৫) নবদ্বীপের ইতিবৃত্ত (প্রথম খণ্ড) – মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল, সুজয়া প্রকাশনী, নবদ্বীপ,
জানুয়ারি ২০০২
৬) শ্রীচৈতন্যের জন্মভূমি নবদ্বীপ (প্রবন্ধ) – ক্ষুদিরাম দাস, দেশ (১৯.৬.৭৫)
৭) চৈতন্যভাগবত – বৃন্দাবনদাস, রাধানাথ কাবাসী সম্পাদিত, মদনমোহন মন্দির, ধান্যকুড়িয়া, ২৪ পরগণা, শ্রাবণ ১৩৪৪ সাল
৮) চৈতন্যচরিতামৃত – কৃষ্ণদাস কবিরাজ, সম্পদনা- সুকুমার সেন, সাহিত্য অকাদেমী,
নিউ দিল্লি, ১৯৩৬
৯) চৈতন্যের ধর্মান্দোলন : মূল্যায়ন – রমাকান্ত চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ,
জানুয়ারি ২০০৭
১০) শ্রীগৌরাঙ্গদেবের জন্মস্থান – সত্যেন্দ্রনাথ বসু, শ্রীগৌরাঙ্গ-জন্মভূমি-নির্ণয়-সমিতি, কলকাতা, ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ। পুনঃপ্রচার ১৩৯০ বঙ্গাব্দ।
১১) মন্দিরময় নবদ্বীপ ধাম – নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজ প্রকাশিত, নভেম্বর ২০১৬
১২) আনন্দবাজার পত্রিকা (নদিয়া জেলা পাতা), ১১ জানুয়ারি ২০১৯

কবি, প্রাবন্ধিক, প্রাক্তন সাংবাদিক

মন্তব্য তালিকা - “চৈতন্যের জন্মস্থান: নবদ্বীপ না কি মায়াপুর”

  1. অদ্ভুত তাই না !

    জন্ম ও জন্মস্থান নিয়ে যেমন বিতর্ক ঠিক তেমনই মৃত্যুর কারন ও মৃত্যুস্থান নিয়ে।

  2. এটাই মোটামুটি ভাবে নবদ্বীপের চৈতন্য মহাপ্রভু লীলার পরবর্তী ইতিহাস বলে মনে হয়। যথেষ্ট তথ্যপূর্ণ ও যত্ন সহকারে লেখা।
    খুব ভালো লাগলো কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার সঠিক উল্লেখ ও লেখকের পরিশীলিত লেখনীতে তার আত্মপ্রকাশ। এন এন সি ও
    এস এম স্যারের সাথে এই নিয়ে আলোচনা ও
    হয়েছিল। দুজনে ই এক সময় আমায় পরামর্শ দিয়েছিলেন ইতিহাস নিয়ে (নবদ্বীপ ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল) নিয়ে কাজ করার জন্য।
    সে সময় তো বুঝতে পারি নি।
    যাইহোক আবার জানাই একেবারে সঠিক ভাবে প্রস্তুত এই সারাংশ খুব যত্ন নিয়ে লেখা।
    ডাক্তার নীহার রঞ্জন রায় এর বাংলার ইতিহাস, আদি পর্বে ও কিছু কিছু উল্লেখ করা আছে যে নবদ্দ্বীপের প্রাচীনত্ব নিয়ে অনেক কিছু করার আছে।
    লেখক কে অনেক অভিনন্দন জানাচ্ছি এই লেখাটির জন্য।

  3. মহাপ্রভুর জন্মস্থান মায়াপুরে হওয়া আর শহর নবদ্বীপের লোকের এত পেছন ফাটার একটাই কারণ হলো টাকা। চেয়েছিল যে মহাপ্রভুর নাম ভাঙিয়ে টাকা পাওয়া যাবে। তাই এত সময় ধরে বিরাট এক ঐতিহাসিকের মত বকবক করলেন।লোকের মাথা খাওয়ার চেষ্টা করলেন।

  4. কে তুমি বৎস?ধরিয়া মৎস,😶
    বেচিয়া গঞ্জে,আকুল ও কুঞ্জে,😆
    না খাইয়া তাজা,😁😁
    কেন তুমি সেবন করিলে,
    মেয়াদ উত্তীর্ণ গাঁজা।😂😂
    কথা কও বোকা বোকা,
    পেতে চাও কত টাকা?🤨🤨
    ডাকাতি দিনের বেলা😶
    তথ্য-তে ছেলেখেলা?😜
    তুমিই কি সেই ক্যালা?🤔🤔
    নাকি কলির চেলা?🤔
    বৃথা কেন ভাট দিলা?🤭🤭
    কিসের এত জ্বালা? 😡😡
    ফ্যাচ ফ্যাচ করিলে মেলা।😝😝
    ঐতিহাসিক সাজিয়া,ঘেঁটে দিলে সত্য😯😯
    এই নাও বেচারা রাঁচির পথ্য।😎😎
    🙏🙏🙏

  5. কে তুমি বৎস?ধরিয়া মৎস,🤨
    ধরিয়া গঞ্জে,আকুল ও কুঞ্জে,
    না খাইয়া তাজা,😁
    কেন তুমি সেবন করিলে,😋😋
    মেয়াদ উত্তীর্ণ গাঁজা?😂😂😂😂
    কথা কও বোকা বোকা😜😜
    পেতে চাও কত টাকা?🤔🤔
    ডাকাতি দিনের বেলা,🤨🤨🤨
    তথ্য-তে ছেলেখেলা।😶😶😶
    তুমিই কি সেই ক্যালা?🙄
    নাকি কলির চেলা?🙄🙄
    ইতিহাসের অবহেলা,😏😏
    গাঁজাখুরি গল্প বলা😡
    অকারণ ভাট দিলা😡😡
    কিসের এত জ্বালা?🧐🧐
    মহাপ্রভুর ঘরের কলা 😑
    করিয়াছ চুরি পাইবে ঠেলা।😑😑
    এত বড় স্পর্ধা, বৈষ্ণব নিন্দা😠😠😠
    স্বার্থপর ভাই ওহে
    কি তব ধান্দা?🤔🤔
    পন্ডিত সাজিয়া,ঘেঁটে দিলে সত্য😇😇😇
    নিত্য সেবন করো রাঁচির পথ্য।🤓🤓
    অহংকারে মত্ত হইয়া,বৈষ্ণবপদ পাসরিয়া
    অসত্যরে সত্য করি মানি
    হৃদয়েতে দম্ভ বাস্তবে অজ্ঞানী🙈🙈
    মিথ্যার খনি তব লেকচার খানি।💩💩💩
    কপট,কুটিল,খল,জোচ্চোর,বেইমান🧐
    একদিন হবে এই দম্ভ খানখান।😡😡

  6. সত্যকে কিভাবে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেওয়া যায়, তারি বিশদ বিবরণ বক্ষমান নিবন্ধ।
    মুনাফার জন্য কিভাবে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়, ইসকন তার জাজল্যমান প্রমাণ।
    লেখাটি পড়ে যথেষ্ট সমৃদ্ধ হলাম, লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

  7. সত্যকে মিথ্যায় পরিণত করার জাজল্যমান প্রমাণ বক্ষমান নিবন্ধ। গবেষণালব্ধ এই নিবন্ধ আমার চেতনার জগতকে প্রসারিত করল। বৈশ্বিক পুঁজি তার মুনাফার জন্য কিভাবে ধর্মকে ব্যবহার করে, সে বিষয়টিও এই লেখায় উঠে এসেছে। জন্ম দেওয়া হয়েছে ইসকনের।
    অত্যন্ত পরিশ্রম সাপেক্ষ এই লেখার জন্য লেখক কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।