সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং স্থান

প্রথম যুগের বিপ্লবী বিপিনচন্দ্র পাল লিখেছিলেন, "নবগোপাল মিত্র এবং তাঁহার বন্ধু ও গুরুস্থানীয় রাজনারায়ণ বসু মহাশয়, ইঁহারাই বাংলার 'স্বদেশী'র প্রথম পুরোহিত।"১ বস্তুত, ব্রিটিশ ভারতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মনে স্বাদেশিকতার ভাব জাগরণ ও জাতীয় চেতনার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৮৬৭ সালের ১২ই এপ্রিল রাজনারায়ণ বসুর প্রেরণায় এবং জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহপাঠী 'ন্যাশনাল পেপার'এর সম্পাদক নবগোপাল মিত্র চৈত্রমেলা নামে একটি জাতীয় মেলার সূচনা করেন। ঘটনাটির সময়কাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন বা ভারত সভা স্থাপিত হওয়ার প্রায় বছর দশেক আগে। পরবর্তীকালে এরই নামকরণ হয় হিন্দুমেলা।
একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও আমরা ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার কথা শুনে থাকি। এ যেন আদিম পৃথিবীর উত্তরাধিকার। মানুষের শিক্ষা ও সভ্যতার পথে ইতিহাসের প্রশ্নচিহ্ন। আজ থেকে চারশত বছর আগে এক পরমতসহিষ্ণু ভারতীয় রাজপুত্র নিজের মুক্তচিন্তার জন্য তৎকালীন অসহিষ্ণুতার বলি হয়েছিলেন। তিনি শাহজাদা সুলতান মুহম্মদ দারাশুকো। পিতামহ সম্রাট জাহাঙ্গীরের দেয়া নাম। শাহজাহান ও মমতাজমহলের এই জ্যেষ্ঠপুত্রটি আর দশজন মধ্যযুগীয় শাহজাদার মতো একদমই ছিলেন না। যে হাতে তরবারি শোভা পাবার কথা, সে হাতে থাকতো লেখনী। রাজনীতির কূটচালের পরিবর্তে তিনি মগ্ন থাকতেন সাধুসঙ্গে, অতীন্দ্রিয়বাদী আলোচনায়। সুফি মতবাদ আর বেদান্ত দর্শন চর্চায় দিন কাটতো তাঁর। ধর্মীয় সহাবস্থানের সূত্রটির অনুসন্ধানে জীবনব্যাপী বহু প্রচেষ্টায় নিরত ছিলেন তিনি। সেই খোঁজের ফলাফল রয়েছে তাঁর রচিত কয়েকটি গ্রন্থে।
ভারতীয় চিন্তাধারায় মহাপুরুষ বা সাধকদের সংসার আশ্রমের সঙ্গিনী রা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাব্যে উপেক্ষিতা। এমনই এক নারী বুদ্ধপত্নী যশোধরা। মাতা মায়াদেবী(যিনি সিদ্ধার্থের জন্মের অনতিবিলম্বে মারা যান) ব্যতীত, একাধারে বুদ্ধের পারিবারিক ও ধর্মীয় জীবনের সাথে জড়িত দুই নারী হলেন তাঁর বিমাতা তথা পালিকামাতা গৌতমী ও পত্নী যশোধরা। এই দুজনের মধ্যে, অপেক্ষাকৃত কম উল্লেখিত আবার যশোধরা, অন্তত প্রাচীন পালি ধর্মীয় সাহিত্যে। কিন্তু সেই খ্রিঃ পূঃ ষষ্ঠ শতক থেকে, যত সময় এগিয়েছে, যশোধরা/গোপা/বিম্বা ততই জনপ্রিয় হয়েছেন, লৌকিক জীবনে। বিভিন্ন বৌদ্ধ সাহিত্যে তিনি যেমন চিত্রিত হয়েছেন পুণ্যবতী সাধিকা হিসাবে, তেমনি এক দুখিনী অথচ তেজস্বিনী নারী হিসাবেও। এই লেখার বিষয় ও উদ্দেশ্য, তাঁর সেই চিরন্তন মানবী সত্ত্বার অন্বেষণ।