সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো সম্পাদকীয়

বাংলার প্রাচীন বা মধ্যযুগের ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় সমস্যা নদী আর মাটি। প্রাচীন কাল থেকে বাংলার নদীগুলি ক্রমাগত প্রবাহপথ পরিবর্তন করে চলেছে, আজ নদী যে খাত ধরে ভীমবেগে প্রবাহিত, কাল সেই খাত পরিত্যক্ত, বিস্মৃত। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার জনপদ আর ধর্মীয় সৌধমালার উত্থান-পতনের সঙ্গে বাংলা থেকে নদীপথ হয়ে সমুদ্রে বাণিজ্যযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজ যখন প্রত্নতাত্ত্বিক মাটির গভীর থেকে বাংলার ইতিহাসকে সূর্যের আলোকে নিয়ে আসতে উত্সুক হন, তখন পলিমাটির গভীর থেকে সেই সত্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁকে প্রথমে জানতে হয় বাংলার ভূতত্ত্বের সেই ইতিবৃত্ত – নদী আর মাটির কথা। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় ভূতত্ত্বের জ্ঞানের প্রয়োজন আজ বিশ্বজনীন, আর সেই কারণে বিকশিত হচ্ছে এক নতুন শাস্ত্র – ভূপ্রত্নতত্ত্ব। ইতিমধ্যেই বাংলার বেশ কয়েকজন তরুণ গবেষক এই নতুন পথে চলতে শুরু করেছেন। কে বলতে পারে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভূতত্ত্বকে বাদ দিয়ে প্রত্নতত্ত্বের শিক্ষাকে অসম্পূর্ণ বলে মনে করা হবে।
আজ বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে ভারতীয় উপমহাদেশে বর্ষশুরুর দিনের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে উনিশ শতকের শেষ দশকে গিরিশ চন্দ্র তর্কালঙ্কার ও প্রাণ নাথ সরস্বতীর লেখা ‘ক্রনোলজিক্যাল টেবলস’ আর রবার্ট সিওয়েল ও শংকর বালকৃষ্ণ দীক্ষিতের লেখা ‘দ্য ইন্ডিয়ান ক্যালেন্ডার’ গ্রন্থদুটি থেকে প্রাচীন ও মধ্যযুগ থেকে প্রচলিত বেশ কয়েকটি সনের নামের সন্ধান পাওয়া গেল। এদের মধ্যে কলিযুগ, সপ্তর্ষি সংবৎ বা লৌকিক অব্দ, শকাব্দ বা শালিবাহন অব্দ, মালব সংবৎ বা বিক্রম সংবৎ, বৃহস্পতি চক্র বা বার্হস্পত্য সংবৎ, বাংলা সন বা বঙ্গাব্দ, ফসলি সন, বিলায়তি সন, কোল্লম আণ্ডু, আমলি সন, নেওয়ার বা নেপাল সংবৎ, এবং মগী সন এই গ্রন্থদ্বয় প্রকাশের সময় প্রচলিত ছিল।

‘সত্য আর মিথ্যা এসে বিবাহে বসেছে একাসনে’

ভারতের ইতিহাস চর্চার এক অভাবনীয় পর্বের যবনিকা প্রতিদিন উন্মোচিত হচ্ছে। ভারতে প্রযুক্তিবিদ্যার সর্বশ্রেষ্ঠ মানের উচ্চশিক্ষার জন্য নির্মিত প্রতিষ্ঠান আজ এক বিচিত্র ইতিহাস চর্চা নিয়ে ব্যস্ত। প্রযুক্তিবিদ্যার পীঠস্থানের সেই ইতিহাস চর্চা থেকে বৈজ্ঞানিক যুক্তিবোধ অপসৃত হয়েছে গহন তমিস্রায়; অন্ধ বিশ্বাস আর ধর্মীয় বিদ্বেষ আছন্ন করেছে মনন। প্রচণ্ড প্রচারের মাধ্যমে ক্রমশ এক সম্মোহনী মায়ায় অস্বচ্ছ করে দেওয়া হচ্ছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থ – ঔপনিবেশিক শাসনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে অগ্রাহ্য করে দেশের পরাধীনতার কালপর্বকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক সহস্রাব্দ পূর্বে। পরাধীনতার দিনগুলিতে বিদেশি শাসককুলের সঙ্গে তাদের দেশি সহযোগীদের গলাগলির ইতিহাসকে জনমানস থেকে মুছে দেবার জন্য এক বুদ্ধিদীপ্ত ভোজবাজির খেলা চলছে!