সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

পুরনো লেখা

১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের পুঁথিশালা থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কার করলেন চর্যাপদ সমূহের একটি সংকলন। আবিষ্কারের দশ বছরের মাথায় তাঁর সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে সেগুলি প্রকাশিত হল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে। তারপর থেকে এর ভাষা ও বিষয়বস্তু নিয়ে, চর্যার পদকর্তাদের নিয়ে অনেক গবেষণা হল। আলাপ আলোচনা ও বিতর্কের দীর্ঘ ইতিহাস পেরিয়ে প্রাচীনতম বাংলা ভাষার প্রায় একমাত্র এই নিদর্শনের নানাদিক আমাদের কাছে এখন অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, বৌদ্ধধর্মের বিশেষজ্ঞ আচার্য বিধুশেখর শাস্ত্রী, চর্যাপদের তিব্বতী টীকার আবিষ্কর্তা প্রবোদ চন্দ্র বাগচী ছাড়াও যে সমস্ত ভাষাতাত্ত্বিকের গবেষণা এই কাজে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য তাঁরা হলে ভাষাচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, মহম্মদ শহীদুল্লাহ, আচার্য সুকুমার সেন, অধ্যাপক পরেশচন্দ্র মজুমদার, অধ্যাপক রামেশ্বর শ, অধ্যাপক নির্মল দাশ প্রমুখ।
প্রয়াণের অর্ধ শতক পেরিয়ে যাওয়া টেরাকোটা মন্দির গবেষক অধ্যাপক ডেভিড ম্যাককাচন ছিলেন বাংলার টেরাকোটা মন্দিরশিল্প চর্চায় এক অন্যতম পথিকৃত। এই ইংরেজ সাহেব তাঁর করা কঠোর পরিশ্রম ও প্রবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে বাঙালীদের বাংলার শ্রেষ্ঠ এক শিল্প সম্পদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এই অদ্ভুতকর্মা মানুষটি তাঁর গবেষণামূলক কাজের প্রধান ক্ষেত্র পশ্চিমবঙ্গের সীমানা পেরিয়ে প্রবল ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেত্রসমীক্ষার প্রয়োজনে গিয়েছিলেন তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানে। আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ তার পাকিস্তান আমলে ভারত থেকে যাওয়া একজন মানুষের পক্ষে মোটেও নিরাপদ স্থান ছিল না।
হরপ্পীয় সমাজে নারীর স্থান কেমন ছিল? হরপ্পীয় সভ্যতার অধিবাসীরা ছিল মিশ্র মানুষ। এই দেশের প্রথম জনগোষ্ঠী আফ্রিকা থেকে আগত ‘আন্দামানি শিকারী-সংগ্রাহরা। দীর্ঘদিন ওই শিকারী-সংগ্রাহকরা দক্ষিণ এশিয়াতে নিরঙ্কুশভাবে থেকেছে। এরাই আদি ভারতীয়। পরে প্রায় ১২ হাজার বছর আগে আসে প্রাচীন ইরান থেকে আরেক শিকারী-সংগ্রাহক জনগোষ্ঠী। দেশের আদি শিকারী-সংগ্রাহকদের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে এরা পরে শুরু করে কৃষি ও পশুপালন। গড়ে তোলে হরপ্পীয় সভ্যতা। ভারতবর্ষে সেই প্রথম তৈরি হয়েছে শহর, জেটি, বাঁধানো সোজা রাস্তা, বলদে টানা গাড়ি। গড়ে উঠেছে পুরোদস্তুর নগরসভ্যতা। সিন্ধু নদের তীরে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে ইঁট-বাঁধানো শস্যাগারে মানুষ চাষবাস করে ফসল তুলে রেখেছে। মহিষ, ষাঁড়, ছাগলকে গৃহপালিত করেছে। তখন মানুষ চাষের কাজে হালের ব্যবহার হয়েছে। হাল বা লাঙল ভারতীয় আদিম কৃষিযন্ত্র।
১৬ই মার্চ, ১৯৬৮-এর সকাল বেলায় আমেরিকান ডিভিশনের ১১তম পদাতিক ব্রিগেডের একটা ইউনিট চার্লি কোম্পানির সৈন্যরা দক্ষিণ ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলে মাই লাই গ্রামে পৌঁছেছিল। তাদের ৪৮তম ভিয়েতকং ব্যাটালিয়নকে এলাকা থেকে নির্মূল করার জন্য ‘অনুসন্ধান এবং ধ্বংস’ মিশনে পাঠানো হয়েছিল। তারা মাই লাইতে কোনো প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়নি, তবে সেখানে তখনও প্রায় ৭০০ বাসিন্দা ছিল। অবশ্য সেখানে যুদ্ধ করার উপযোগী ও বয়সী কোনো পুরুষ ছিল না। সেই সকালে গ্রামবাসীরা জলখাবার খেতে বসেছে। তা সত্ত্বেও, পরবর্তী তিন ঘণ্টায় সৈন্যরা ৫০৪ জন ভিয়েতনামী নাগরিককে হত্যা করে। ড্রেনের খাদে সারিবদ্ধ করে রেখে অনেককে গুলিবিদ্ধ করা হয়। মৃত বেসামরিক নাগরিকদের মধ্যে ৩ বছর বা তার কম বয়সী ৫০ জন, ৪ থেকে ৭ বছরের মধ্যে ৬৯ জন এবং ৭০ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ২৭ জন ছিলেন।
দক্ষিণ ভারতের এক ছোট্ট পাহাড়ঘেরা গ্রাম। সূর্যাস্তের পর চতুর্দিক নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। পথ ঘাট জনমানব শূন্য। আঁধাররাতে ছোট ছোট পাহাড়গুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, যেন চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। গ্রামের প্রান্তে এক ছোট বাংলো। সেই বাংলো থেকে টিমটিম আলো দেখা যাচ্ছে। রাত যত গভীর হতে লাগলো চতুর্পাশ আরও নিঝুম হয়ে গেলো। তখনো বাংলো থেকে মোমবাতির আলো আসছে। দরজা জানলা সব বন্ধ। হালকা হালকা শীত পড়েছে। চাদর মুড়ি দিয়ে এক যুবক দ্রুত পদে বাংলার দরজায় পৌঁছে কড়া নাড়তে লাগলেন। বেশ কিছুক্ষণ কড়া নাড়ার পর বাংলার দরজা উন্মুক্ত হোল। যিনি দরজা খুললেন, তিনি যুবতী এবং বিদেশিনী। যুবক উদ্বিগ্ন হয়ে তার অবস্থা ব্যক্ত করলেন। যুবতী কিন্তু যুবকের ভাষা ও পরিস্থিতি দুটোই বুঝতে পারলেন। যুবক জানালেন, তার স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। এই মুহূর্তে না গেলে তার স্ত্রীর প্রাণ সংশয় হতে পারে। যুবতী দেখলেন গ্রামের ব্রাহ্মণ যুবক। বড়ই বিপদে পড়েছেন। কিন্তু তিনি নিরুপায়।