সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

অমিয় চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণাতেই রচিত হয়েছিল যুগান্তকারী কবিতা ‘আফ্রিকা’

অমিয় চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণাতেই রচিত হয়েছিল যুগান্তকারী কবিতা ‘আফ্রিকা’

শিবাশীষ বসু

নভেম্বর ১৬, ২০২৪ ৮৪ 0

১৯৩৫ সাল। ফ্যাসিবাদী ইতালির এবং নাৎসি জার্মানির রণহুঙ্কার যেন তখন কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেই ১৯৩৪ সালের ২রা আগস্ট প্রেসিডেন্ট হিন্ডেনবার্গের মৃত্যুর পর হিটলার নিজেই প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর উভয় পদই দখল করে নিয়েছেন এবং নিজেকে ফ্যুয়েরার হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এর মাস খানেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গেছে ইহুদিদের উপর জার্মান নিপীড়ন। সাম্রাজ্যবাদী লক্ষ্য পূরণে মুসোলিনির প্রথম প্রয়াস হল আবিসিনিয়া দখল করা। ইতালিতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় স্থান অনুসন্ধান, খাদ্য সংস্থান, শিল্পের জন্য কাঁচামাল সংগ্রহ, ও উৎপাদিত দ্রব্য সামগ্রী বিপণনের উপযুক্ত বাজার ইত্যাদির জন্য আবিসিনিয়া তথা ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা দখল করার জন্য ইতালি সচেষ্ট ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ঠিক এই সময়েই ১৭ মার্চ ১৯৩৫, রবীন্দ্রনাথের কালি ও কলমে ছবি হয়ে উঠে এসেছিলেন মুসোলিনি। ‘রবীন্দ্রনাথের মুসোলিনী’ প্রবন্ধে দেবদত্ত গুপ্ত লিখেছেন, “অস্থির রেখার দ্রুত গতির চলনে যেন এক পাগলের তাণ্ডবের ছবি এটি। এর আগে রবীন্দ্রনাথ এমন কোনও সমর নায়কের ছবি বা কোনও নামজাদা মানুষেরও অবয়ব এঁকেছেন কিনা সন্দেহ। মুসোলিনীকেও যে চেনা যাচ্ছে এমনটা নয়। কিন্তু তিনি সরাসরি ছবির তলায় চরিত্রের নাম মুসোলিনী লিখেই দিলেন। কবি অঙ্কিত মুসোলিনীর এই ছবির মধ্যে ধরা পড়েছে তাঁর উন্মাদের মতো রণ হুঙ্কারের চিত্র। ক্ষিপ্র রেখায় ও ভঙ্গিতে কবি মুসোলিনীর চরিত্রের সেই বেতালা আর বদ মেজাজি রূপটিকে পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন।” নিজের কথায় ও লেখায় যে ভাবে একসময়ে এই হীন চরিত্রের রাষ্ট্রনায়কের প্রশংসা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ, তারই যেন প্রায়শ্চিত্ত করলেন তিনি।

এই পরিস্থিতিতে ২১ জুন ১৯৩৫, প্যারিসে আয়োজিত সারা বিশ্বের বিবেকী শিল্পী ও সাহিত্যিকদের সম্মেলন থেকে ফ্যাসিজম ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হল। রোম্যাঁ রোলাঁ, অঁরি বারব্যুস, ম্যাক্সিম গোর্কির নেতৃত্বে আয়োজিত এই সম্মেলনে আঁদ্রে জিদ, আঁদ্রে মার্লো, এডওয়ার্ড এম ফরস্টার, অলডৌস হাক্সলি, মাইকেল গোল্ড, জন স্ট্রাচি প্রমুখ প্রখ্যাত সাহিত্যিকদের পাশাপাশি ভারত থেকে উপস্থিত ছিলেন মূলকরাজ আনন্দ। বারব্যুস-রোলাঁ জুটি অক্লান্তভাবে ফ্যাসিবাদ ও যুদ্ধসৃষ্টির চক্রান্তের বিরুদ্ধে তাঁদের আপসহীন প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৩৫ সালের ১১ই নভেম্বর প্যারিসে তাঁরা একটি শান্তি মহাসম্মেলন আহ্বান করলেন। এই সম্মেলনে যোগ দিয়ে তাকে সফল করে তুলতে বারব্যুস সকল দেশের শান্তিকামী মানুষের কাছে উদাত্ত আহ্বান জানালেন। জুন মাসের মাঝামাঝি তিনি সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে লেখা একটি পত্রের মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে গান্ধি, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখকে এই সম্মেলনে সহযোগিতা করবার আবেদন জানালেন। ৯ই জুলাই বারব্যুসের এই আবেদনের মর্মার্থ প্রকাশিত হল আনন্দবাজার পত্রিকায়। ভারতবর্ষের নেতারা সোৎসাহে স্বাগত জানান এই আহ্বানকে এবং স্থির হয় যে, ভারত থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধি, সরোজিনী নাইডু এবং রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্যারিসের ওই শান্তি সম্মেলনে যোগদান করবেন। রামানন্দবাবু এই সম্মেলনের সংবাদ দিয়ে ‘শান্তিবাদ প্রচার ও সমর্থন’ এই শিরোনামে প্রবাসী পত্রিকায় লেখেন: “পৃথিবীর গভর্নমেন্টপক্ষীয় লোক নহেন এরূপ কতকগুলি আদর্শানুরাগী (idealist) মনীষী আছেন যাঁহারা বাস্তবিক জাতিতে জাতিতে শান্তি চান। তাঁহারা লেখা, বক্তৃতা প্রভৃতি দ্বারা সকল দেশের জনগণকে যুদ্ধবিরাগী ও শান্তির অনুরাগী করিবার চেষ্টা করিয়া আসিতেছেন। তাঁহাদের মুখপাত্রস্বরূপ ফ্রান্সের বিখ্যাত সম্পাদক ও গ্রন্থকার অঁরি বারব্যুস আগামী নভেম্বর মাসে প্যারিসে শান্তিবাদের সমর্থক একটি কংগ্রেসের আয়োজন করিতেছেন। সকল দেশের লোকদের সমর্থন এই কংগ্রেসের উদ্যোক্তারা চান। সকল দেশের প্রতিনিধিরা কংগ্রেসে উপস্থিত হইবেন, উপস্থিত হইতে না-পারিলে নিজ নিজ বক্তব্য লিখিয়া পাঠাইবেন। কবিসার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী, কবি ও স্বরাজপ্রচেষ্টার অন্যতমা সরোজিনী নাইডু, এবং পত্রিকা-সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের নিকট হইতে আপাতত উদ্যোক্তারা ভারতবর্ষের প্রতিনিধিত্ব করিতে সম্মতি পাইয়াছেন।” 

৩ অক্টোবর ১৯৩৫ ইতালি আবিসিনিয়া আক্রমণ করল। পাঁচ লক্ষ ফ্যাসিস্ট সৈন্য এই অভিযানে যোগ দিয়েছিল এবং এই যুদ্ধের সবচেয়ে বড় আয়রনি হল আধুনিক বিজ্ঞানে অনগ্রসর হাবসিদের উপর ইতালি বোমাবর্ষণ তো বটেই এমনকি বিষাক্ত গ্যাসও ব্যবহার করল। শুধু তাই নয়, রবীন্দ্রনাথের পার্ষদ অমিয় চক্রবর্তী গবেষক নেপাল মজুমদারকে লেখা একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন, “তখন আমার মতো অর্বাচীন ব্যক্তি Federation of Indian Students Abroad (FISCA)-র প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হয়েছিলাম। সেই সূত্রে রোমের এক সভায় যাই এবং মুসোলিনীর সঙ্গে কথাও হয়। কী ভয়ানক জান্তব প্রকৃতির মানুষ চেহারাতেও তিলার্ধ সৌজন্য বা বীর্যের কমনীয়তা ছিল না — মনে হচ্ছিল যেন তিনি prize bullfighter। তখন রোমে অন্যান্য সহরে আবিসিনিয়া বধের ‘রিহার্সাল’ চলছে — সত্য সত্যই রাস্তায় (আমি সেই procession Bolzno নামক ইতালির সহরে — তাতে কাঠ ও খড়ের তৈরি কালো এবং অঙ্গহীন Abyssinian — মূর্তিসম্পন্ন মানুষদের যেন তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে গায়ে রক্তের জায়গায় প্রচুর magenta ব্যবহার হয়েছিল। জনসাধারণ এই নববিজয়ের দৃশ্য দেখে গর্বিত হবে এই ছিল fascistদের উদ্দেশ্য। তাছাড়া যুদ্ধের লুটের উদাহরণস্বরূপ আবিসিনীয়ন নারীদের পোস্টকার্ড-চিত্র দোকানে বিক্রী হচ্ছিল — জনসাধারণকে লুব্ধ উত্তেজিত করার জন্যে। আরো অনেক কিছু ব্যাপার ছিল। আমরা শুধু পূর্ব ভারতীয় নয় এশিয়া ও আরবদেশের কিছু ছাত্র অধ্যাপক নিমন্ত্রিত হয়েছিলাম — কেননা মুসো-হিটলারের বিশ্বাস ছিল দেশের পর দেশ বধ করে তারা জাপানীরা (অন্যদিক থেকে) ভারতে পদার্পণ করবে। সেইভাবে ইতালীয় নিমন্ত্রণকর্তারা আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়েছিলেন।” 

রবীন্দ্রনাথ তখন শান্তিনিকেতনে। ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণের সংবাদে অত্যন্ত মর্মাহত হলেও কিভাবে প্রতিবাদ করবেন তা ভেবে পেলেন না রবীন্দ্রনাথ। গবেষক নেপাল মজুমদার ‘আফ্রিকা কবিতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি : রবীন্দ্রনাথ ও অমিয় চক্রবর্তী’ শীর্ষক প্রবন্ধে জানিয়েছেন, “সাম্রাজ্যবাদীদের পররাজ্যলোলুপতা ও আগ্রাসন-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে কবি সারাজীবনই তীব্র প্রতিবাদ ও ভর্ৎসনা জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু এই সব প্রতিবাদ ও নিন্দাবাদের কার্যকারিতা সম্পর্কে মাঝে মাঝে তাঁর মনে সন্দেহ জন্মাত। ভাবতেন — এসব অক্ষম ও দুর্বলের প্রতিকারহীন নিষ্ফল কালা বিশেষত ভারতবর্ষের মত পরাধীন দেশের পক্ষে।” এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ অ্যান্ড্রুজকে বলেছিলেন, “I keenly feel the absurdity, of raising my voice against an act of unscrupulous and virulent imperialism of this kind when it is pitiably feeble against all cases that vitally concern ourselves. What was the use he would wish to say, of a subject people making a protest in favour of another country’s independence when their own country was not free?” রবীন্দ্রনাথের এই মনোবেদনার বিবরণ দিয়ে ১৯৩৫ সালের পয়লা নভেম্বর অ্যান্ড্রুজ লন্ডনের প্রখ্যাত ‘ম্যাঞ্চেস্টার গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় একটি রচনা প্রকাশ করেন।

ইতালি, জাপান ও জার্মানির হুঙ্কারে ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলি শঙ্কিত হওয়ায় ৭ই অক্টোবর ১৯৩৫, জেনেভায় লীগ অফ নেশনসের একটি সভা বসল। সেই সভায় ইতালিকে আক্রমণকারী বলে ঘোষণা করা হল এবং ইতালির বিরুদ্ধে নাম-কে-ওয়াস্তে একটি অর্থনৈতিক অবরোধ জারি করা হল। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখা গেল ইতালি যথারীতি বৃহৎ শক্তিবর্গের কাছ থেকে লোহা, কয়লা এবং পেট্রোল সরবরাহ পাচ্ছে। ঐতিহাসিক বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “এই প্রহসনের শেষ অঙ্কে দেখা গেল যে, ফ্রান্স মুসোলিনীর সঙ্গে আপোষ করিয়া ফেলিয়াছে এবং বৃটেন ‘সাম্রাজ্যের প্রাণপ্রবাহের পথ’ ভূমধ্যসাগরে ইতালীর সঙ্গে যুদ্ধের আশঙ্কায় ‘মৌনং সম্মতি লক্ষণং’ নীতি অবলম্বন করিয়াছে।” এই কারণেই আবিসিনিয়া আক্রমণের সূচনাকাল থেকেই অঁরি বারব্যুস এবং রোম্যাঁ রোলাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ ও ফ্যাসি বিরোধী সংঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনকে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে অগ্রণী হয়। আগেই জানিয়েছি, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তাঁরা একটি বিশ্বশান্তি সম্মেলনেরও আহ্বান করেছিলেন, কিন্তু বারব্যুসের আচমকা মৃত্যুতে সেই সম্মেলন পিছিয়ে যায়। মাস খানেক পরে রোলাঁ পুনরায় এই সম্মেলনের আয়োজন করবার জন্য উঠে পড়ে লাগেন। জওহরলাল নেহেরু তখন ইউরোপে। একান্ত আলাপে রোলাঁ নেহেরুকে এই আন্দোলনে কংগ্রেসের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করলেন। গান্ধিজি ও নেহেরুকে বিশ্বশান্তি সম্মেলনে যোগদানের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়ে ভিলনাভ থেকে ২৫শে ফেব্রুয়ারি একটি পত্রও দিয়েছিলেন রোলাঁ, যাতে তিনি লিখেছিলেন, “আমাকে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ব শান্তি সম্মেলন’-এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপনের জন্য আপনাকে ও গান্ধীকে যেন আমি অনুরোধ জানাই। সম্ভবত আগামী সেপ্টেম্বর মাসে জেনেভায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনটি হবে বৃহৎ ও শক্তিশালী। বলা যেতে পারে যে পৃথিবীর শান্তিকামী সমস্ত শক্তি এর দ্বারা সংহতি লাভ করবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু বড় বড় সংস্থা এবং ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চেকোস্লোভাকিয়া, স্পেন, বেলজিয়াম ও হল্যান্ডের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি ইতিমধ্যেই এতে যোগ দিয়েছেন। (ইংল্যান্ডে যোগ দিয়েছেন লর্ড রবার্ট সিসিল, মেজর অ্যাটলি, নর্মান এঞ্জেল, ফিলিপ নোয়েল বেকার, অ্যালেকজান্ডার ও অধ্যাপক লাস্কি। ফ্রান্সে যোগ দিয়েছেন হেরিও, পিয়ের কত্, জুর্হ, কাজ্ঞাঁ, রাকামঁ, অধ্যাপক ল্যাঁজেভ্যাঁ প্রমুখ ব্যক্তিবৃন্দ। চেকোস্লোভাকিয়ায় যোগ দিয়েছেন বেনেস, হোডজা। স্পেনে যোগ দিয়েছেন আজানা, আল্ভারেজ দেল ভাগো প্রভৃতি। বেলজিয়ামে যোগ দিয়েছেন লুই দ্যু ব্রুকের, আঁরি লাফঁতাইন প্রভৃতি।) পৃথিবী জুড়ে আগুন জ্বলে উঠবার যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য।” 

এদিকে ইতালীয় আক্রমণ প্রতিরোধে ব্যর্থ আবিসিনীয় সম্রাট হাইলে সেলাসি দেশ ত্যাগ করলেন। ৫ মে ১৯৩৯, রাজধানী আদ্দিস-আবাবার পতন হল। ওই দিনই রোমের প্রাসাদ থেকে মুসোলিনি সদম্ভে ঘোষণা করলেন, “আবিসিনিয়া ন্যায্যত ইতালিরই, কারণ ইতালি তার তরবারির জোরে ও সভ্যতার শক্তিতেই তা অধিকার করেছে। সভ্যতা ও বর্বরতার দ্বন্ধে, সভ্যতাই জয়লাভ করেছে।” লীগ অফ নেশনস স্রেফ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করল। আবিসিনিয়ার পতনের সংবাদ পাওয়ার পর নেহেরু ৯ই মে সারা দেশে ‘আবিসিনিয়া দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়ে বললেন, “আজ আদ্দিস আবাবা বিজয়ীর পদানত। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বীরত্বের সহিত সংগ্রাম করিয়াও আবিসিনিয়া আজ ফ্যাসিস্ট সাম্রাজ্যবাদের পশুবলের নিকট পরাজিত ও ধূল্যবলুণ্ঠিত। বিষাক্ত গ্যাস, তরলাগ্নি এবং আধুনিক যুগের বিধ্বংসী যন্ত্র বিজয়ী হইয়াছে; তাহাদের বিজয়ে যে সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপই নূতন করিয়া উদ্ঘাটিত হইয়াছে, শুধু তাহাই নহে, তাহাদের বিজয়ে প্রধান প্রধান রাষ্ট্রগুলির ভণ্ডামি এবং রাষ্ট্রসংঘ নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির ব্যর্থতাও প্রমাণিত হল। সমগ্র বিশ্বব্যাপী সুদীর্ঘকাল ধরিয়া যে মুক্তি সংগ্রাম চলিয়াছে, সেই সংগ্রামে সাময়িক কালের মতো সাম্রাজ্যবাদের জয় হইল; কিন্তু যতদিন পর্যন্ত প্রাধীন জাতিসমূহ মুক্তিলাভ না-করিবে, যতদিন পর্যন্ত সর্বত্র সাম্রাজ্যবাদের অবসান না ঘটিবে, ততদিন পর্যন্ত ইথিওপিয়ার এবং অন্য সর্বত্র এই মুক্তিসংগ্রাম চলিতেই থাকিবে। আমরা বিপন্ন ইথিওপিয়ান ভাতৃবর্গের সাহায্য করিতে অক্ষম; কারণ আমরাও সাম্রাজ্যবাদের কবলগ্রস্ত। কিন্তু তাহাদের এই বিপদের দিনে আমরা তাহাদিগকে অন্ততঃ সহানুভূতি জানাইতে পারি।” 

অবশেষে ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণের ঘটনাটির পরিপ্রেক্ষিতে বিচলিত রবীন্দ্রনাথ লিখলেন তাঁর বিখ্যাত কবিতা — পত্রপুট কাব্য সংকলনের অন্তর্গত ‘আফ্রিকা’। এই কবিতাটিতে বিভিন্ন ইউরোপীয় শক্তির উপনিবেশ দখলের প্রক্রিয়াকে রবীন্দ্রনাথ যেন দেখলেন এক পরাধীন নিপীড়িত জাতির প্রতিনিধি হিসেবে। আফ্রিকা কবিতায় রবীন্দ্রনাথ আফ্রিকাকে একটি পশ্চাদপদ, নির্যাতিত এবং বঞ্চিত জনপদ ও জাতিসত্তার ভূমি হিসেবে চিত্রিত করেন। আফ্রিকার দুর্দশার জন্য দায়ী করলেন সাদা চামড়ার ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের ও দাসব্যবসায়ীদের। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি আপন সমৃদ্ধশালী সমাজ তৈরির জন্য কিভাবে উপনিবেশগুলি শোষণ করে চলেছে, তার স্পষ্ট উচ্চারণ রয়েছে কবিতাটিতে। একইসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ তুলে ধরেছেন নিজের দেশে তাদের উদারনৈতিকতার ভণ্ডামিকেও।

“উদ্‌ভ্রান্ত সেই আদিম যুগে

    স্রষ্টা যখন নিজের প্রতি অসন্তোষে

        নতুন সৃষ্টিকে বারবার করছিলেন বিধ্বস্ত,

           তাঁর সেই অধৈর্যে ঘন-ঘন মাথা-নাড়ার দিনে

                       রুদ্র সমুদ্রের বাহু

                    প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে

                  ছিনিয়ে নিয়ে গেল তোমাকে, আফ্রিকা,

          বাঁধলে তোমাকে বনস্পতির নিবিড় পাহারায়

                        কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।

                    সেখানে নিভৃত অবকাশে তুমি

                       সংগ্রহ করছিলে দুর্গমের রহস্য,

                 চিনছিলে জলস্থল-আকাশের দুর্বোধ সংকেত,

                      প্রকৃতির দৃষ্টি-অতীত জাদু

                  মন্ত্র জাগাচ্ছিল তোমার চেতনাতীত মনে।

                      বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে

                       বিরূপের ছদ্মবেশে,

                        শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে

              আপনাকে উগ্র করে বিভীষিকার প্রচণ্ড মহিমায়

                       তাণ্ডবের দুন্দুভিনিনাদে।

হায় ছায়াবৃতা,

        কালো ঘোমটার নীচে

    অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ

             উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে।

এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে

 নখ যাদের তীক্ষ্ম তোমার নেকড়ের চেয়ে,

   এল মানুষ-ধরার দল,

 গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।

  সভ্যের বর্বর লোভ

নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।

   তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে

          পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে ;

    দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়

           বীভৎস কাদার পিণ্ড

    চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।

সমুদ্রপারে সেই মুহূর্তেই তাদের পাড়ায় পাড়ায়

      মন্দিরে বাজছিল পূজোর ঘণ্টা

      সকালে সন্ধ্যায়, দয়াময় দেবতার নামে;

                শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে;

                কবির সংগীতে বেজে উঠছিল

                      সুন্দরের আরাধনা।

           আজ যখন পশ্চিমদিগন্তে

       প্রদোষকাল ঝঞ্ঝাবাতাসে রুদ্ধশ্বাস,

         যখন গুপ্তগহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল,

            অশুভ ধ্বনিতে ঘোষণা করল দিনের অন্তিমকাল,

                       এসো যুগান্তরের কবি,

                       আসন্ন সন্ধ্যার শেষ রশ্মিপাতে

                       দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে,

                              বলো ক্ষমা করো —

                              হিংস্র প্রলাপের মধ্যে

          সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।”১০ 

বস্তুত কবিতাটির প্রায় প্রতিটি স্তবক ফ্যাসিবাদের হাতে নিপীড়িত মানবসভ্যতার হাহাকারে সমৃদ্ধ। 

২৭ মাঘ ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি অমিয় চক্রবর্তীর অনুরোধে রচিত হয়েছিল। এই অসামান্য কবিতাটি রচনার পর্দার পিছনের কাহিনিটি আমাদের শুনিয়েছেন গবেষক নেপাল মজুমদার, ‘আফ্রিকা কবিতার পঞ্চাশ বছর পূর্তি: রবীন্দ্রনাথ ও অমিয় চক্রবর্তী’ শীর্ষক প্রবন্ধে। অমিয়বাবু তখন ইংল্যান্ডে। ইতালির আবিসিনিয়া আক্রমণের পর ইংল্যান্ডের প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র মুসোলিনি বিরোধী ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই সময় অমিয় বাবুর মনে হয়েছিল যে, মুসোলিনি তথা ইতালীয় ফ্যাসিস্টদের এই নগ্ন আক্রমণের বিরুদ্ধে যদি রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে কোনো বলিষ্ঠ প্রতিবাদ ধ্বনিত হত তাহলে জগতের কাছে ভারতের মর্যাদা খুবই বেড়ে যেত। অমিয়বাবু ২ আগস্ট ১৯৩৫, এই অনুরোধ জানিয়ে রবীন্দ্রনাথকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, “Abyssinia সম্বন্ধে আর যাই হোক, য়ুরোপের চেতনা আলোড়িত হয়েচে। এ সময়ে আপনার কাছ থেকে কোনো কথা শুনতে পেলে সকলেই আনন্দিত হবেন। যদি দেশী কোনো কাগজে দু’চার ছত্র interview দেন। রাজনীতির দিক থেকে তো আলোচনার শেষ নেই কিন্তু আবিসিনিয়ার দেশবাসীর প্রতি ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধাপূর্ণ আশার কথা কেউ বলচে না, মহাত্মাজীর উক্তি স্পষ্ট বোঝা গেল না। যদি সামান্য কিছু টাকাও ভারতবর্ষের জনসাধারণ আবিসিনীয় নারী সংঘকে পাঠায় বা ঐ রকম কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানকে তাহলে জগতের চক্ষে আমাদের গৌরব বাড়বে। আমাদের আত্মসম্মানবোধও এতে প্রকাশিত হবে।”১১ নেপাল মজুমদারের মতে, অমিয়বাবুর এই চিঠি পাওয়ার পরও কবি খুব উৎসাহিত বোধ করেন নি। ২৫ আগস্ট, কবি তাঁর জবাবি-চিঠিতে অমিয়বাবুকে তাঁর মানসিক প্রতিক্রিয়া ও চিন্তা-ভাবনার কথা ব্যক্ত করে লিখলেন, “দিশি এমন একটি কাগজও নেই যাতে আবিসিনিয়া আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র অভিযোগ প্রকাশ করেনি। রাষ্ট্রনৈতিক শ্রেয়োবৃদ্ধি থেকেই যে এটা করা হয়েছে তা নয়, এর মধ্যে বর্ণভেদমূলক উত্তেজনা আছে। … আমার জীবলীলার মেয়াদ ফুরিয়ে এসেছে সে কথা বলা বাহুল্য। আমি য়ুরোপীয় নই, কর্ম্মের কাছে আত্মবলি দিয়ে শক্তি সাধনার চরমমূল্য স্বীকার করিনে। ভাঁটার গতি সমুদ্রের দিকে, জীবনের এই ভাঁটার খেয়াকে উজানের দিকে লগি ঠেলে চলবার প্রাণপণ প্রয়াসকে ধন্য ধন্য করা আমার ভারতীয় স্বভাববিরুদ্ধ। আজ আমার মন সমুদ্রমুখে, কর্তব্যের দোহাই পাড়লে ফল হবে না। পূর্ব্বকৃত কর্ম্মের বোঝা সম্পূর্ণ হালকা করতে পারি নি, চেষ্টায় আছি নূতন কৰ্ম্ম বাড়াব না। … বাইরের কর্মক্ষেত্রে আমাদের নিরুপায় অক্ষমতা সুদীর্ঘকাল স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছি। তার বিরুদ্ধে কণ্ঠচালনা করে সান্তনাচেষ্টারও অন্ত নেই। সেই ক্ষীণ কলরবের ব্যর্থ প্রতিধ্বনি নিজের কাছে ফিরে এসে আমাদের পরিহাস করে। তবুও এই পথে অনেকদিন স্বর সাধনা করতে ছাড়ি নি — এখন দিন শেষ হয়ে এল, বহির্মুখী চেষ্টাগুলোকে প্রতিসংহার করবার সময় এসেছে।”১২ 

নেপাল মজুমদার জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর পর ৩১ ডিসেম্বর ১৯৩৬, অমিয়বাবু পুনরায় কবিকে এক পত্রে আফ্রিকা সম্পর্কে একটি কবিতা রচনার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানালেন। এই সময় অমিয়বাবু স্কটল্যান্ডে আলেকজান্ডার ফ্রেজার এবং লর্ড লোথিয়ান পরিচালিত একটি শিক্ষাকেন্দ্র দেখতে যান। সেখানে ফ্রেজারের আফ্রিকা সংক্রান্ত একটি বক্তৃতা শুনে তিনি খুবই অভিভূত হন এবং রবীন্দ্রনাথকে তাঁর একটি কপি পাঠিয়ে দিয়ে লিখলেন, “স্কটল্যান্ডে নূতন শিক্ষাসমবায়কেন্দ্র দেখতে গিয়েছিলাম। Fraser এবং Lothian নিমন্ত্রণ করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে অনেক বিষয়ে কথা হোলো। … এই বিষয়ে সামান্য একটু উদ্ধৃত করি এই বছরের Africa & Peace নামে Burge Memorial Lecture থেকে। Fraser-এর সমগ্র বক্তৃতা আলাদা পাঠাচ্চি। আমার কেবলি মনে হচ্ছিল আফ্রিকার এই Tribe Eternal নিয়ে আপনি যদি একটি কবিতা লেখেন। আফ্রিকার সম্পর্কে আপনার কোনো কবিতা নেই এই রকম কবিতা পেলে কী রকম আনন্দ হবে বলতে পারি না। পরে ইংরাজি হয়ে বেরোতে পারে Quarterlyতে। Tribe Eternal এর বিষয়ে আপনার একটি কবিতা পাবার আশায় একান্ত উৎসুক হয়ে রইলাম।”১৩ 

নেপাল মজুমদারের মতে, অমিয়বাবু প্রেরিত Fraser-এর Africa & Peace বক্তৃতাটি পড়ে কবির ভালো লেগেছিল, সম্ভবত কিছুটা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অমিয়বাবুর এই চিঠি পাওয়ার কিছুদিন পরই ৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭, কবি তাঁর বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি লিখে বিলেতে অমিয়বাবুর কাছে পাঠিয়ে দেন এবং একটি পত্রে লেখেন (২৭শে মাঘ ১৩৪৩), “আফ্রিকার উপরে কবিতা লিখতে অনুরোধ করেছিলে। লিখেছি। কিন্তু কিসের জন্যে বুঝতে পারিনে। আধুনিকের ভঙ্গী আমার অনভ্যস্ত। আমার নিজ দেশী ভাষায় যে রস আছে সেখানে পরদেশীর রসনা পৌঁছবে না। ইংরেজিতে তর্জমা করবার সাহস মাত্র নেই। বাংলা কবিতাকে শিকলি বেঁধে পরের হাটে নিয়ে যেতে দুঃখ হয়। তাছাড়া ধিক্কার বোধ করি খ্যাতির জন্যে হাত পাততে অনাত্মীয়ের দ্বারে। কাঙালপনার বয়স প্রায় কেটে এসেছে। বাংলাভাষার কুলুপমারা এই কবিতা নিয়ে ওদের কী কাজে লাগবে?”১৪

নেপাল মজুমদার আরও জানিয়েছেন, ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি পেয়ে অমিয় চক্রবর্তী প্রথমে দেখান উগান্ডার চিফ প্রিন্স নিয়াবোঙ্গা-কে (Prince Nyabongo)। কবিতার ভাবার্থটি শুনে তিনি খুবই মুগ্ধ ও বিচলিত হন। প্রিন্স নিয়াবোঙ্গার উদ্যোগে সোহাইলি ও বান্টু ভাষায় ‘আফ্রিকা’ কবিতাটি অনুদিত হয়ে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রচার করা হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং ‘আফ্রিকা’ কবিতাটির ইংরেজি অনুবাদ করেন এবং অনুবাদটি ইংল্যান্ডের ‘স্পেক্টেটর’ (Spectator) পত্রিকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বলা বাহুল্য, ‘স্পেক্টেটর’ পত্রিকায় ‘আফ্রিকা’ কবিতার ইংরেজি তর্জমাটি প্রকাশের পর ওখানকার বুদ্ধিজীবী মহলে প্রবল আলোড়নের সৃষ্টি হয়। অমিয়বাবুকেও এই অনুবাদের একটি কপি পাঠান হয়েছিল। অমিয়বাবু আবিসিনিয়ার সম্রাট হাইলে সেলাসিকেও কবিতাটি শোনালে তিনি উচ্ছ্বসিত ভাষায় এর তারিফ করেন

তথ্যসূত্র:

১. দেবদত্ত গুপ্ত, ‘রবীন্দ্রনাথের মুসোলিনী’; বঙ্গদর্শন ডট কম, ২৪শে মার্চ ২০১৭।

২. রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত, ‘প্রবাসী পত্রিকা শ্রাবণ ১৩৪২ সংখ্য‍া’; ১৯৩৫, পৃষ্ঠা ৬০১।

৩. প্রীতীন্দ্রকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত, ‘পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা রবীন্দ্রসংখ্যা’; ১৯৮৭, পৃষ্ঠা ৯৫৪

৪. প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ৯৫৪।

৫. ক্ষুদিরাম দাস ও অন্যান্য সম্পাদিত, ‘রবীন্দ্র প্রসঙ্গ: রবীন্দ্রনাথের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রবন্ধ সংকলন’; তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, ১৯৮৮, পৃষ্ঠা ২২৫।

৬. বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায়, ‘দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের ইতিহাস প্রথম খণ্ড’; নবপত্র প্রকাশন, ২০২১, পৃষ্ঠা ৫৩।

৭. জওহরলাল নেহেরু সম্পাদিত, ‘পত্রগুচ্ছ’; এম সি সরকার এ্যান্ড সন্স, ১৯৬০, পৃষ্ঠা ১৪৮।

৮. ধনঞ্জয় দাশ সম্পাদিত, ‘মার্কসবাদী সাহিত্য বিতর্ক’; নতুন পরিবেশ প্রকাশনী, ১৯৫৮, পৃষ্ঠা ৪৪৬।

৯. নেপাল মজুমদার, ‘ভারতে জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতা এবং রবীন্দ্রনাথ চতুর্থ খণ্ড’; দেজ পাবলিশিং, ২০১৬, পৃষ্ঠা ৪৫-৪৬।

১০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘রবীন্দ্র রচনাবলী বিংশ খণ্ড’; বিশ্বভারতী প্রকাশন, ১৯৬৭, পৃষ্ঠা ৪৯-৫০।

১১. প্রীতীন্দ্রকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত, ‘পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা রবীন্দ্রসংখ্যা, ১৯৮৭’; পৃষ্ঠা ৯৫৫।

১২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘চিঠিপত্র একাদশ খণ্ড’; বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ১৬৬।

১৩. প্রীতীন্দ্রকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সম্পাদিত, ‘পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা রবীন্দ্রসংখ্যা, ১৯৮৭’; পৃষ্ঠা ৯৫৬।

১৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘চিঠিপত্র একাদশ খণ্ড’; বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, ১৯৭৪, পৃষ্ঠা ২০১। 

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।