সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

জাহাজ ভাসে সাগর জলে

জাহাজ ভাসে সাগর জলে

ভাস্কর দাস

জুলাই ১৩, ২০২৪ ২৮৩ 4

।। ১ ।।

‘একদা যাহার বিজয় সেনানী হেলায় লঙ্কা করিল জয়

একদা যাহার অর্ণবপোত ভ্রমিল ভারত সাগরময়।’

ছেলেবেলায় দুলে দুলে যখন এই দুই ছত্র মুখস্ত করতাম, তখন তার ইতিহাস-ভূগোল নিয়ে প্রশ্ন করার বয়স হয়নি। মনেই আসেনি কে বিজয়, আর অর্ণবপোতই বা কী। পরিণত বয়সে তত্ত্ব তল্লাশ করে জানলাম খ্রিস্ট জন্মের প্রায় পাঁচশো বছর আগের বাংলার (নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন থাকবে— ভৌগোলিক সীমারেখার আন্দাজ দিতে নামটি ‘বাংলা’ লিখলাম) রাঢ় অঞ্চলের অধিপতি সিংহবাহু আর তার আপন বোন সিংহসিবলির দাম্পত্যজাত বত্রিশ পুত্রের সবচেয়ে বড়োটির নাম ছিল বিজয় সিংহ। তার জন্মের পর বাকি একত্রিশটি সন্তানের উৎপাদনে ব্যস্ত বাবা মা বিজয়ের কোনো দেখভাল করতে না পারায় এক নিখুঁত লম্পট হয়ে ওঠে সে। তার সপারিষদ উৎপাতে অতিষ্ঠ প্রজাদের উপর্যুপরি অভিযোগে বিরক্ত হয়ে একসময় সিংহবাহু তাকে দেশান্তরী হবার আদেশ দেন। তবে কিনা রাজপুত্রের নির্বাসন। অতএব, সাত’শো সহচর, নিজের ও সাগরেদদের স্ত্রী, নর্মসহচরী ও পুত্রকন্যারা, তৎসহ তাদের দেখাশোনার জন্য পাচক, ভৃত্য ও পাইক বরকন্দাজের সুবিশাল বাহিনী সেই নির্বাসনের ভাগিদার হয়। এদের দূরদেশে নিয়ে যেতে তাম্রলিপ্ত বন্দরে তৈরি হয় তিনটি অর্ণবপোত। সেখান থেকে তাদের সিংহলযাত্রা আর তার পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে কয়েকটি পর্যবেক্ষণ করতে পারি।

১) বাংলা তথা ভারত থেকে আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগেও সমুদ্রের বুক তোলপাড় করে দেশীয় জাহাজে এক দেশ থেকে আর এক দেশে যাওয়ার প্রচলন ছিল।

২) তাম্রলিপ্ত বন্দর ছিল বাংলা তথা ভারতের এক প্রতিষ্ঠিত নৌ-বন্দর যেখান থেকে সমুদ্রগামী জাহাজের যাতায়াত ছিল।

৩) সাত-আট’শো মানুষকে পেটের খোলে ঢুকিয়ে নিতে পারে এমন বিশাল জাহাজ তৈরির পরিকাঠামো আর কারিগরি বিদ্যা বাংলাতে লভ্য ছিল।

সিংহলি পুঁথি মহাবংশে লিপিবদ্ধ এ কাহিনি ইতিহাসের অংশ। তবে এক দিনে তো কেউ লায়েক হয় না। এহেন মাথা ঘুরিয়ে দেয়া নৌ-প্রযুক্তিরও তো ছিল একটা শুরুর দিন। সেটা কবে?

ভারতবর্ষের নৌ-বাণিজ্য ও তার প্রযুক্তির উদ্ভবের ইতিহাস নিয়ে Indian Shipping: A History of the Sea-borne Trade and Maritime Activity of the Indians from the Earliest Times (1912)-এ শ্রী রাধাকুমুদ মুখার্জি লিখছেন:

“We shall have ample evidence to show that for full thirty centuries India stood out as the very heart of the Old World, and maintained her position as one of the foremost maritime countries. She had colonies in Pegu, in Cambodia, in Java, in Sumatra, in Borneo, and even in the countries of the Farther East as far as Japan. She had trading settlements in Southern China, in the Malayan peninsula, in Arabia, and in all the chief cities of Persia and all over the east coast of Africa. She cultivated trade relations not only with the countries of Asia, but also with the whole of the then known world, including the countries under the dominion of the Roman Empire, and both the East and the West became the theatre of Indian commercial activity and gave scope to her naval energy and throbbing international life.”

“আমাদের যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে পুরো ত্রিশ শতাব্দী ধরে ভারত পুরোনো বিশ্বের হৃদয় হিসাবে দাঁড়িয়েছিল এবং অগ্রণী সামুদ্রিক দেশগুলির মধ্যে একটি হিসাবে তার অবস্থান বজায় রেখেছিল। তার পেগু, কম্বোডিয়ায়, জাভা-তে উপনিবেশ ছিল। সুমাত্রা, বোর্নিওতে, এমনকি সুদূর প্রাচ্যের দেশগুলিতে, দক্ষিণ চীন, মালয় উপদ্বীপ, আরব ও পারস্যের সমস্ত প্রধান শহরগুলিতে এবং সমস্ত আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে তার ব্যবসায়িক বসতি ছিল। শুধুমাত্র এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গেই নয়, রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে থাকা দেশগুলি সহ সমগ্র পরিচিত বিশ্বের সঙ্গেও বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল এবং প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য উভয়ই ভারতীয় বাণিজ্যিক কার্যকলাপের মঞ্চ হয়ে ওঠে। তার নৌ শক্তি এবং স্পন্দিত আন্তর্জাতিক জীবনকে সুযোগ দিয়েছে (এই বানিজ্য)।” [অনুবাদ সম্পাদকের]

অতুলনীয় অধ্যবসায়ে, অকল্পনীয় পরিশ্রমে ওই ‘ample evidence’ যা তিনি পেশ করেছেন, তাকে ভাগ করা যায় এইভাবে;

১) ভারতীয় উৎস; ২) বিদেশী উৎস;

ভারতীয় উৎসের মধ্যে রয়েছে:

ক) ভারতীয় সাহিত্য ও শিল্পকলা; সংস্কৃত, পালি ও পার্শি ভাষায় লেখা প্রাচীন পুঁথি এর মধ্যে প্রধান। তামিল, মরাঠি আর বাংলায় লেখা পুঁথি ও সাহিত্যও প্রামাণ্য তথ্যের আকর।

খ) পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ; এই ভাগের অংশীদার শিলালিপি সহ অন্যান্য লিপিচিত্রমালা, স্মারকসৌধ আর মুদ্রা ও ফলক জাতীয় ন্যুমিসমাটিক সাক্ষ্য।

অন্যদিকে বিদেশী উৎসের মূল উপাদান: 

ক) বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণবৃত্তান্ত। মূলত আলেখ্য, যার মধ্যে চিনা, আরবি ও ফার্সি ভাষায় লেখা বৃত্তান্ত প্রধান। পাশাপাশি ইউরোপের পর্তুগীজ, ইংরেজ, ইতালিয় পর্যটকদের বিবরণীও মুল্যবান দলিলের ভুমিকা নিয়েছে। একাদশ শতকে আল-বিরুনি, দ্বাদশ শতকে আল-ইদ্রিশি, ত্রয়োদশ শতকে মার্কো পোলো-র বিবরণী প্রামাণ্য নথি হিসেবে পাওয়া যায়। পঞ্চদশ শতকে চিনা পরিব্রাজক মা-হুয়ান, নিকোল কোন্তি, আব্দের-রজ্জাক বা হিয়েরোনিমো-ডি-সান্টো-স্টেফানোর বৃত্তান্ত উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। আর হিউয়েন-সাং বা ফা-হিয়েন-এর বিবরণ তো সর্বজনবিদিত। সচিত্র বিবরণীতে আঁকা ছবিও কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণের জোগানদার।  

খ) বিদেশী পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন জাভার বরবদুরের মন্দিরের গায়ে রিলিফে আঁকা ভারতীয় জাহাজের ছবি।

এর মধ্যে থেকে কয়েকটি যা খুব আকর্ষক আর প্রামাণ্য বলে মনে হয়েছে, সেগুলো পেশ করলাম।   

সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরির বিষয়ে এক সাবধানবাণীতে তিনি লিখছেন, সেই জাহাজের তলদেশে লোহার তৈরি কোনো পেরেক বা জোড় ব্যবহার করা যাবে না। কারণ লোহার ওপর সমুদ্রের তলদেশের চৌম্বকক্ষেত্রের প্রতিকূল প্রভাবে দিক-নির্ণয়ে ভুল হবার সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাবে। প্রসঙ্গত দিক নির্ণয়ে সেই সময়ে কম্পাসের ভুমিকায় ব্যবহার হতো যে যন্ত্রের, তার নাম মৎস্যযন্ত্র। কারণ তাতে থাকত একটা সমতোল পাত্রে রাখা তেলের মধ্যে ভাসা বিশেষ ধাতুনির্মিত একটা মাছ যার মুখ সবসময় উত্তরমুখো।

জাহাজের মাপ (আজকের পরিভাষায় tonnage) অনুসারে তাদের মূল দুভাগে ভাগ করেন ভোজ।

১) সামান্য – অর্থাৎ যে জাহাজ বা নৌকো আভ্যন্তরীণ যোগাযোগে জন্য তৈরি হয়, চলে নদী নালা খালে বিলে।

২) বিশেষ – যারা সমুদ্রযাত্রা করে, ব্যবহৃত হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, ভ্রমণ বা নৌযুদ্ধে। 

মাপ অনুসারে ‘সামান্য’ ১০ রকমের, আর ‘বিশেষ’ দীর্ঘা আর উন্নতা, এই দুটি ভাগে বিভক্ত আর পুনর্বিভক্ত হয়ে মোট ১৫ রকমের।  

জাহাজের ঘর বা কেবিনের গঠনের ভিত্তিতেও নির্দিষ্ট ভাগ উপস্থিত। প্রথম ভাগে ‘সর্বমন্দিরা’- যেখানে জাহাজের সামনে থেকে পেছন অব্দি সবটাতেই কেবিনের উপস্থিতি। মহিলা, রাজ-সম্পত্তি আর ঘোড়ার বহনে এই ধরণের জলযান ব্যবহৃত হতো। দ্বিতীয় ভাগে ‘মধ্যমন্দিরা’, যেখানে কামরার উপস্থিতি শুধু মাঝখানে। রাজা বাদশাহের প্রমোদভ্রমণ আর বর্ষাকালে অল্প মানুষ ও পণ্য পরিবহনে এর ব্যবহার ছিল। তৃতীয় শ্রেণীর নাম ‘অগ্রমন্দিরা’। অল্প কটি কামরার সমাহারটি থাকত জাহাজের একেবারে অগ্রভাগে। নৌযুদ্ধে এরাই ছিল প্রধান হাতিয়ার।  

জাহাজের অভ্যন্তরীণ অঙ্গসজ্জার জন্য ব্যবহৃত ধাতু নির্দিষ্ট— সোনা, রুপা, তামা আর এই তিনের বিভিন্ন মিশ্রণ। জাহাজের বাইরের রঙও নির্দিষ্ট। চার মাস্তুলের জাহাজের রং সাদা, তিন মাস্তুলের জাহাজ লাল, দুই মাস্তুলের হলুদ আর এক মাস্তুলের নীল। ভাষানিরপেক্ষ এক আন্তর্জাতিক চিহ্ন-সংলাপ যা দূর থেকে বুঝিয়ে দেবে জাহাজের চরিত্র। জাহাজের অগ্রভাগ শিল্পীর কল্পনার প্রকাশের ক্ষেত্র। সেখানে তাই ময়ুর, টিয়া, হাতি, সিংহ, বাঘ বা অন্য পশু ও পাখির মুখের ভাস্কর্যের উপস্থিতি। সোনা আর মণিমাণিক্যের অপর্যাপ্ত ব্যবহারে সেগুলো প্রত্যেকে এক একটি শিল্পের নিদর্শন।

।। ২ ।।

প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে পুরোনো যে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনে তার সমুদ্র সঙ্গের আভাস মেলে, তা আছে দ্বিতীয় শতাব্দীতে পাথরের গায়ে উৎকীর্ণ ছবিতে। সাঁচির এক নম্বর স্তূপের পূর্ব দরজার গায়ে খোদাই করা আছে শনের দড়ি দিয়ে বাঁধা কয়েকটি পাটাতনের ওপর একটি সুসজ্জিত ছই-এর ছবি। তাতে তিনজন আরোহী। 

“It represents a river or a sheet of fresh water with a canoe crossing it, and carrying three men in the ascetic priestly costume, two propelling and steering the boat, and the central figure, with hands resting on the gunwale, facing towards four ascetics, who are standing in reverential attitude at the water’s edge below.” According to Sir A. Cunningham, the figures in the boat represent Sakya Buddha and his two principal followers. (R. Mookerji)

“এটি নদী বা বিশুদ্ধ জলের একটি স্তরকে ডিঙি নৌকো দিয়ে অতিক্রম করে, এবং তপস্বী পুরোহিতের পোশাকে তিনজন পুরুষকে বহন করে, দুজন নৌকার হাল ধরে এবং কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব, বন্দুকে হাত রেখে চারজন সন্ন্যাসীর দিকে মুখ করে দাঁড়ায়, এঁরা নীচে জলের ধারে শ্রদ্ধাশীল মনোভাবে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।” স্যার এ. কানিংহামের মতে, নৌকার চিত্রগুলো শাক্য বুদ্ধ এবং তাঁর দুই প্রধান অনুসারীর প্রতিনিধিত্ব করে। (আর. মুখার্জি) [অনুবাদ সম্পাদকমণ্ডলীর]

অজন্তার গুহার গায়ে প্রাচীন ভারতের জাহাজি ইতিহাসের অনেক ছবি দেখা যাচ্ছে। সময়ের হিসেবে গুহা ৮, ৯, ১০, ১২ আর ১৩তে আঁকা ছবিগুলো খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় ও প্রথম শতকের। গুহা ১ থেকে ৫ এ রয়েছে তার আধুনিকতম নিদর্শন, সময়কাল ষষ্ঠ ও সপ্তম খ্রিস্টাব্দ।

যে নিদর্শনের কথা না বললে আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে, তা জাভার বরবদুরের মন্দিরের গায়ে খোদাই করা জাহাজের চিত্রাবলী। ভারতবর্ষ থেকে জাভার উপকূলে জাহাজে পৌঁছনোর গল্পের শুরু খ্রি: দ্বিতীয়-তৃতীয় শতাব্দী থেকে। বস্তুত, পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমদিকে এক জাহাজ শ্রীলঙ্কা হয়ে তিনমাস জলে ভেসে জাভার তীরে ভিড়েছিল। যাত্রীসংখ্যা ছিল ২০০, যার মধ্যে ছিলেন হিউয়েন সাং। তারপর বহুবার নিশ্চয়ই ভারতীয় জাহাজ পৌঁছেছিল সেখানে। কারণ খ্রি: নবম শতাব্দীর এই মন্দিরের গায়ে রিলিফ পদ্ধতিতে তৈরি যে সব জাহাজের ছবি পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে পঞ্চম শতাব্দী থেকে পরবর্তী চারশো বছরের বিভিন্ন ‘মডেল’-এর জাহাজের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে এই রিলিফে। ই.বি.হ্যাভেল তাঁর Indian Sculpture & Painting -এ এরকমই এক জাহাজ সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়নে বলছেন:

“The ship, magnificent in design and movement, is a masterpiece in itself. It tells more plainly than words the perils which the Prince of Gujarat and his companions encountered on the long and difficult voyages from the west coast of India. But these are over now. The sailors are hastening to furl the sails and bring the ship to anchor.”

“জাহাজটির নকশা এবং চলাচল দুর্দান্ত, এটি নিজেই একটি সেরা কাজ। এটিতে গুজরাটের যুবরাজ এবং তাঁর সঙ্গীরা ভারতের পশ্চিম উপকূল থেকে দীর্ঘ এবং কঠিন সমুদ্রযাত্রায় যে বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন তা শব্দের চেয়ে স্পষ্টভাবে বলে। কিন্তু এগুলো এখন শেষ। নাবিকরা পাল তুলে জাহাজটিকে নোঙর করার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। [অনুবাদ সম্পাদকমণ্ডলীর]

কথিত যে, ৬০৩ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের এক নৃপতি তাঁর সাম্রাজ্য ধ্বংস হবার নিশ্চিত পূর্বাভাস পেয়ে তাঁর ছেলে ও ৫০০০ সহচর, যার মধ্যে ছিলেন কৃষক, কুম্ভকার, শিক্ষক, চিকিৎসক প্রভৃতি সমস্ত শ্রেণীর মানুষ, নিয়ে ৬টি অতিবৃহৎ আর ১০০টি ছোটো জাহাজে দেশ ছেড়ে জাভায় আসেন। তাঁর হাত ধরে জাভায় পত্তন হয় এক নতুন সভ্যতার যার ফসল বরবদুরের মন্দির।

বিদেশি উৎসের প্রসঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের লেখার দিকে দৃষ্টি দিলে এ দেশের জাহাজি ঐতিহ্যের অসংখ্য নমুনা মেলে। ব্রিটিশ নাগরিক থমাস বাওরে, জিনি একাধারে ব্যবসায়ী, অভিযাত্রী ও সুলেখক, সপ্তদশ শতকের শেষভাগে বাংলার গঙ্গার বুকে নৌবাণিজ্যের বহর ও তাতে ব্যবহৃত বিরাট মাপের বিভিন্ন নকশার নৌকো ও জাহাজ দেখে তাঁর A Geographical Account of Countries Round the Bay of Bengal 1669-1679 গ্রন্থে লিখলেন:

“Great flat-bottomed vessels of an exceeding strength which are called Patellas and built very strong. Each of them would bring down 4,000, 5,000, or 6,000 Bengal mounds.”

“অতিরিক্ত শক্তসমর্থ চ্যাপ্টা-তলির জাহাজ, যাকে বলা হয় প্যাটেলাস, খুব শক্তি করে নির্মিত। তাদের প্রত্যেকে ৪০০০, ৫০০০ বা ৬০০০ বাংলার ঢিবি (দুর্গের প্রাচীর অর্থে?) নামিয়ে আনবে।” [ অনুবাদ সম্পাদকমণ্ডলীর]

১৫১৬ সালে লেখা বই The book of Duarte Barbosa তে পর্তুগীজ কলমচি বারবোসা লিখছেন:

“They (Bengalis) all were great merchants, and own large ships of the same build as those of Mekka, and others of the Chinese build which they call jangos, which are very large and carry a very considerable Cargo. With these ships they navigate to Cholemender, Malabar, Combay, Peigu, Tarnasari, Sumatra, Ceylon, and Malacca and they trade in all kinds of goods, from many places to others.” 

“তারা (বাঙালিরা) সকলেই মহান বণিক ছিলেন, এবং মেক্কার মতো একই গঠনের বড় বড় জাহাজের মালিক। অন্যান্য জাহাজের ছিল চীনা গড়ন, যাকে তারা ‘জাঙ্ক’ বলে, এগুলো খুব বড় এবং উল্লেখযোগ্য পণ্য বহন করে। এই জাহাজগুলির সাহায্যে তারা চোলেমেন্ডার, মালাবার, কমবে, পেগু, টারনাসারি, সুমাত্রা, সিলন এবং মালাক্কায় গেছেন এবং তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সমস্ত ধরনের পণ্যের ব্যবসা করেন। [ অনুবাদ সম্পাদকমণ্ডলীর] 

।। ৩ ।।

ঠিক কী দেখে বাংলার জাহাজ সম্পর্কে এদের এত উচ্ছ্বাস? উত্তর রয়েছে পঞ্চদশ, ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের প্রথম দিকের ইতিহাসের পাতায়। বাংলায় সে এক প্রাচুর্যের সময়। সম্পদের ব্যবসায়িক লেনদেনে উৎসুক বাঙ্গালির সংখ্যা প্রচুর, বাঙ্গালির মন্ত্র ‘বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী’। নদী নালা খাল বিলে ভরা বাংলায় কটি রাজপথের বাইরে স্থলপরিবহণ সীমিত। দক্ষিণ সীমানার ওপারে বিস্তীর্ণ সমুদ্রে বহির্বাণিজ্যের অসংখ্য চেনা পথ। বনসম্পদ ভরা জলযান তৈরির উপযুক্ত শাল পিয়াল শিশু কাঁঠাল কাঠের জঙ্গলে। সবার ওপরে জলযান তৈরির কারিগরিবিদ্যার কয়েক শতাব্দীর মেধাসম্পদ। এই আবহে জাহাজশিল্প ঈর্ষণীয় উচ্চতায় পৌঁছবে, সেটাই স্বাভাবিক। সেই সুবাদে সোনারগাঁর রাজ্যপাল গৌর-এ তৈরি করছেন পঞ্চদশ শতকের পর্তুগীজ ‘ক্যারাভেল’ জাতীয় জাহাজ। বাংলার সুলতানের নৌবহরের উপযোগী করে তাতে থাকছে দু’শো দাঁড়ের চালনার ব্যবস্থা। এক অনামি পর্তুগীজের লেখায় পাওয়া এই সব তথ্য আরও জানাচ্ছে, বাংলার সুলতানের রয়েছে আরবের কারিগরি কৌশলের ভিত্তিতে বাংলায় তৈরি ১৩০টি ছোটো ও মাঝারি জাহাজ, পরিবহণ ও যুদ্ধ, দু’কাজেই যারা সমান পারদর্শী।

বস্তুত, সে সময়ে বাণিজ্য, প্রমোদভ্রমণ, হজযাত্রা ইত্যাদি কাজে বাংলায় প্রচুর মাঝারি ও বড়ো জাহাজ তৈরি হয়েছে, যাদের কারিগরি কৌশলের ভিত্তি আরবি বা চিনা প্রযুক্তি। নির্মিত পণ্য কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যবহারিক ও শৈল্পিক উৎকর্ষে তার প্রেরণাকে পেছনে ফেলে দিয়েছে কয়েক কদম। ১৫ ও ১৬ শতকে হুসেন শাহ ও নুসরত শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় চিনা ‘জাঙ্ক’ জাহাজের আদলে যে জাহাজ তৈরি হতো, সেগুলো কমবেশি ২৫০ ফুট লম্বা আর ১১০ ফুট চওড়া। সাধারণত দেবদারু কাঠে তৈরি একতলা এই জাহাজে কামরার সংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ৬০। এর মধ্যে পিছনের দিকের কয়েকটি ঘর নির্দিষ্ট থাকত রান্নাঘর, ভাঁড়ার ঘর, কম্পাস ঘর, আর হিন্দু-মুসলমানের আলাদা প্রার্থনার ঘর হিসেবে। মূল পালটি টাঙ্গানো হতো ৯০ ফুট উচ্চতার মাস্তুল থেকে। এর পাশে থাকত চারটি ছোটো পাল যাদের মুখ ঘুরিয়ে জাহাজের অভিমুখ ঠিক করা হতো বৈঠার সাহায্যে। জাহাজের নোঙ্গরও ছিল সংখ্যায় ৬টি, জাহাজের বিশালতার সঙ্গে যা মানানসই। জাহাজে ন্যুনতম তিরিশজন কর্মচারী থাকত, যাদের একজনের ভুমিকা ছিল ধূপ-রক্ষকের। প্রাচ্যবিদ সাইমন ডিগবি এই জাতীয় জাহাজের ভার বহন ক্ষমতার পরিমাপ করে লিখছেন— এরা ছিল দু-ধরনের; ৭২০ অথবা ১১৬২ টন মাল বহন করত। 

অন্যদিকে আরবি কারিগরিতে তৈরি জাহাজ ব্যবহৃত হতো সমুদ্রবাণিজ্যে। এক পাটাতনের সঙ্গে অন্য পাটাতনের যোগের মাধ্যম ছিল নারকেল দড়ি। সমুদ্রের নোনাজলে এদের কোনো ক্ষয় হতো না। জোড়ের কৌশল এতই পোক্ত ছিল যে সামুদ্রিক ঝড়ের তাণ্ডবেও তা ছেঁড়ার জো ছিল না। এদের না ছিল ডেক, না ছিল তলি। এই জাহাজ পুরোটাই কামরায় ভরা থাকত। ফলে মাল বহনের অসীম ক্ষমতা ছিল এদের। মূলত ১৬ শতাব্দীতে তৈরি এ জাহাজ ৩৭৫ থেকে ৮০০ টন (মাঝিমাল্লা সহ) পণ্য অনায়াসে বয়ে নিয়ে যেত। আরব জলযান ‘ধোও’ এর আদলে তৈরি এই জলযান কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত বাঙ্গালির সমুদ্রযাত্রায় ভরসা জুগিয়েছিল।

মজার কথা, বাণিজ্যপোত বা প্রমোদতরণী নির্মাণে যখন বিদেশী নকশা অনুসরণ করছে বাংলা, তখন রণতরী নির্মাণের কৌশলটি থাকছে গোপন ও দেশজ। আর সেই অনন্যতার সুত্রে রণতরী নির্মাণের কৃতকৌশলে বাংলাকে পৌঁছে যাচ্ছে সাফল্যের শিখরে। তাই ষোড়শ শতাব্দীতে চট্টগ্রাম আর সন্দীপে এসে সেখানকার বাণিজ্যপোত আর যুদ্ধজাহাজের সম্ভার দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন মার্চেন্ট অফ ভেনিস সিজার ফ্রেডেরিক। খ্রি: সপ্তদশ শতকে তুরস্কের সম্রাট তার আস্ত নৌবহর তৈরি করছেন চট্টগ্রামে। আর এই পরম্পরা বজায় থাকছে ব্রিটিশপূর্ব ভারত তথা বাংলায়।

আবুল ফজলকৃত আইন-ই-আকবরি আমাদের জানাচ্ছে, মুঘল আমলে বাদশাহি শাসনে যথেষ্ট শক্তিশালী এক নৌবহর পালিত হতো। বাংলার দক্ষিণ উপকূলে বোম্বেটেদের আক্রমণ থেকে নৌবাণিজ্যের রক্ষার প্রয়োজনে যে নৌবহরের আয়োজন রাখতে হতো, অর্থনীতিবিদ ইন্দ্রজিত রায়ের অনুসন্ধান অনুযায়ী আকবরের আমলে তাতে জাহাজের সংখ্যা ছিল ৩০০০। সেই আমলে ওই বহর পোষার খরচের বহরটাও ছিল চোখে পড়ার মতো— বছরে ৮.৫ লক্ষ টাকা, যার মধ্যে ৩.৫ লক্ষ টাকা ছিল মাইনে (৩২৩ জন বেতনভুক পর্তুগীজ নাবিকের মাইনে সহ) আর ৫ লক্ষ টাকা ছিল জাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ আর নতুন জাহাজ কেনার ব্যয়। (সূত্রঃ Bengal Industries and the British Industrial Revolution (1757–1857). Indrajit Ray). এর পুরোটাই নির্ভরশীল ছিল আজকের ভাষায় ‘আউটসোর্সিং’-এর ওপর। জাহাজ সারাই থেকে নতুন জাহাজ কেনা, সবটাই হতো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে। ফলে সেসময়ে সদর দফতর ঢাকা ও সংলগ্ন অঞ্চল, হুগলি, বলেশ্বর, মুরাং, চিলমারী, যশোর এবং করিবাড়ি, যেখানে “যতটা সম্ভব নৌকা তৈরি করে ঢাকায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।” (রাধাকুমুদ মুখার্জি) [অনুবাদ সম্পাদকের] সেসব অঞ্চলে বেসরকারি জাহাজনির্মাণশিল্প তার সৃজনের উত্তুঙ্গে উঠে যায়। বাংলায় আকবরের প্রতিনিধি টোডরমল এই শিল্পে পুঁজির সুস্থির জোগান বজায় রাখতে ঢাকা অঞ্চলের ১১২টি পরগণায় জমিদারদের ওপর কর চাপান। পরগণাগুলি ছিল আর্থিকভাবে অতি সম্পন্ন। তাই সেই কর আদায়ে কোনোদিন বিবাদ উপস্থিত হয়নি, আর ‘নোয়ারা’ নামে পরিচিত সে রাজকীয় নৌবহরও তার সুস্বাস্থ্য বজায় রেখেছিল দীর্ঘদিন। 

বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে মোগল পত্তনিগুলোতে রসদ সরবরাহের মাধ্যমও ছিল নদীপথ। তাতে ব্যবহৃত জলযানও তারা ভাড়া নিত ব্যক্তিগত স্বত্বাধিকারী সংস্থা থেকে। সেই সুত্রে শ্রীপুর, বাকলা, সাগরদ্বীপ, দুধালি, জাহাজঘাটা চকসারি ইত্যাদি অঞ্চলের হিন্দু জমিদারেরা জাহাজ তৈরির কারখানা খুলে ভাড়া দেবার জাহাজ বানাত। আর সেই সুবাদে সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বাংলায় তৈরি ৪ থেকে ৫ হাজার জাহাজ ভেসে বেড়াত নদীমাতৃক বাংলার বুক জুড়ে। বহতা নদীর গভীর থেকে রুপোলী শস্যের আহরণের উদ্দেশ্যে গাছের গুঁড়ির পেট চিরে নৌকা নামের যে বাহন কয়েক হাজার বছর আগে বানিয়েছিল মানুষ, বাঙালি তাকে যুগার্জিত নৈপুন্যে এক অলৌকিক জলযানে পরিণত করে ফেলেছে ততদিনে। হাল পাল বৈঠার মেধাবী সমন্বয়ে উত্তাল নদীস্রোতেও তার মসৃণ চলন তীরবাসী মানুষকে মুগ্ধ করে। চৈত্রসন্ধ্যায় ডুবন্ত সূর্যের পশ্চাৎপটে শোনা যায় গলুই-এ বসা সিল্যুটমূর্তি মাঝির উদাত্ত গলার গান

“দুদিনের খেলা ঘর / ভাঙবে বেলা ডোবার পর / আসবে নেমে আঁধার রাত্রি /

দয়াল, আমি একা পথের যাত্রী।

নৌকোর খোল ভরে থাকে চাল, নুন, কাঠ, বস্ত্রসম্ভার ইত্যাদি নানা বাণিজ্যপসরায়। বাংলার সে বড়ো সুখের সময়। 

গ্রন্থপঞ্জী:

  1. Indrajit Ray, Bengal Industries and the British Industrial Revolution (1757-1857); Routledge. (2011)
  2. Balthazar Solvyns, Boats of Bengal. Eighteenth Century Portraits, Monohor, (2001)
  3. গোকুলচন্দ্র দাস, বাংলার নৌকা; প্রাক-ঔপনিবেশিক অ ঔপনিবেশিক যুগ, প্রগতিশীল প্রকাশক, (২০১১)
  4. রঙ্গনকান্তি জানা, পশ্চিমবঙ্গের লৌকিক জলযান- লোকসংস্কৃতি অ আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্র, পঃবঃ সরকার, (২০০৯)
  5. Radhakumub Mookerji, Indian Shipping: A History of the Sea-borne Trade and Maritime Activity of the Indians from the Earliest Times.Longmans, Green & Co. (1912)
  6. E.B. Havell, Indian Sculpture and Paintings, Cosmo Publication, (1st Edition 1908), (2003)
জন্ম ১৯৫৯। কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা। পেশায় অস্থিশল্য চিকিৎসক। লেখার জগতে বিলম্বিত প্রবেশ। লেখা প্রকাশিত 'দেশ', হরপ্পা, ভ্রমি ভ্রমণআড্ডা সহ নানা পত্রিকায় ও সংকলনে। প্রকাশিত বই 'টাইমলাইন আলাস্কা', 'এক চামচ বিদেশ', 'কোভিড-১৯, এক বিভ্রান্তির সন্ত্রাস'। ভ্রমণআড্ডা প্রদত্ত 'কলম' সম্মান লাভ ২০২২এ। ভ্রমণ, ইতিহাস অনুসন্ধান নিয়ে বিশেষভাবে অনুরাগী। ছবি তোলার নেশায় দেশে বিদেশে পাড়ি, তাতে কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানপ্রাপ্তি। দেশে ও বিদেশে একক ও দলগত প্রদর্শনী।

মন্তব্য তালিকা - “জাহাজ ভাসে সাগর জলে”

  1. সিংহল বিজয়ী বঙ্গ সন্তানের পিতা মাতার সন্তান উৎপাদন দক্ষতা মানব ইতিহাসে অনন্য। এক নারীরা ৩২ সন্তান। ধরা যাক ১৬ বৎসর থেকে শুরু করেছেন। শেষ করেছেন ৪৮ বৎসর বয়সে।
    না তাতে হবে না। বৎসরের গড়ে তিন মাসের একটা গ্যাপ থাকবেই।
    এইসব ইতিহাস কেউ লিখেছেন হয়ত, কিন্তু বর্তমানে উল্লেখ করার আগে একটু সম্ভব অসম্ভব তো যাচাই করা দরকার।
    ৭০০ সহচর নিয়ে সমুদ্রে ভাসা হল। তাই ৭০০ জন একটি জাহাজের খোলে? তাই লেখা আছে? জাহাজের আয়তন কত হতে হবে? ৭০০ জনের খাবার পানীয় জল, রাঁধুনি এসব ও থাকবে।
    হিসেব করুন। দুই তিন মাসের জল রাগতে কতটা জায়গা লাগবে।
    কম্বোডিয়ায় ভারতীয় উপনিবেশ।
    ভারতীয় গাথা লেখা আছে।
    কম্বোডিয়ার ইতিহাস কি বলছে? ক্রস চেক করা দরকার, ইতিহাসের পাতায় দুই দিকের কথাই থাকা দরকার।
    সময়
    যে সময়কে বলা হচ্ছে ভারতীয় এবং বাঙালি উপনিবেশ বিস্তারের কাল, সেই সময়ে তাইওয়ান থেকে ওসানিয়ানরাও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার তাদের বৃস্তিতি ঘটায়।
    আজ গোটা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া তে তাদের ই দেখা যায়। তির মাঝে ভগ্নদশা ভারতীয় মন্দির উঁকি দেয়।
    সফল কারা হয়েছিল তার চাক্ষুষ প্রমানিত।
    কিন্তু আমির প্রশ্ন এই দুই ঔপনিবেশিক শক্তির মধ্যে একটিও সংঘাত হল না? কেন?
    পরবর্তী প্রশ্ন ঐ সময়ে উপনিবেশ স্থাপন হত?
    উপনিবেশ ধারনা তো ইয়োরোপের।

    1. ৩২ সন্তান উৎপাদনে ৩২ বছর লাগবে তার কোন মানে নেই। Twin, Triplet, Quadruplet জন্মের ঘটনা ঘটলে তার অনেক আগেই সিলেবাস শেষ হওয়া সম্ভব।

      ৭০০ যাত্রীর সংখ্যাটার সূত্র উল্লেখ আছে। সেটাকে প্রশ্ন করার কথা ভাবিনি। অসম্ভব মনে হলেই objectively true অনেক ঘটনার যেমন ব্যখ্যা জানিনা, এটিকেও সেই আলোয় গ্রহণ করেছি।
      সত্যাসত্য নিরূপণে আমার মত সখের ইতিহাস উৎসাহীর কর্ম নয়, হার্ডকোর ইতিহাসবিদরা আলোচনা করে আমায় ঋদ্ধ করুন, এই কামনা।

  2. 4000,5000,6000 mounds
    অনুবাদ গোলমেলে অর্থহীন মনে হল।
    এখান mounds এর অনুবাদ বাংলায় মণ করলে মনে হয় অর্থবোধক হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।