সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

সামাজিক ইতিহাস

শাসক শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত ইতিহাস ও সাহিত্যে তাদেরই জয়গান গাওয়া হয়, তাদের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের ও জনগণের অবস্থার বিশ্লেষণ করা হয় কিন্তু সেই শাসকের রাজ্যে বসবাসকারী জনগণের, বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক অবস্থান বা জীবন যাপন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার নিম্নবর্গীয় মানুষের, শাসক শ্রেণির বিপরীত মেরুতে শ্রেণিবদ্ধভাবে অবস্থানকারী মানুষের জীবনধারার পরিচয় পাওয়া যায় নির্দিষ্ট কতগুলি গ্রন্থে। প্রাচীন বাংলার নিম্নবর্গের ইতিহাস পাওয়া যায় চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্যের মতো কিছু সাহিত্যে, কিছু ধর্মীয় গ্রন্থে। আর মধ্যযুগীয় বাংলার পূর্বাঞ্চলের নিম্নবর্গের ইতিহাস পাওয়া যায় মৈমনসিংহ-গীতিকা, পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকার মতো লোকসাহিত্য সংকলনে। লোকসাহিত্যই নিম্নবর্গের মানুষের ইতিহাসের আকর। এই মৈমনসিংহ–গীতিকা তেমনি একটি আকর গ্রন্থ।
আদি মধ্যযুগের বাঙালি সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের প্রাচীন ইতিহাস জানতে প্রাচীন বাংলা ভাষায় রচিত চর্যাপদ এক আকর গ্রন্থ। 'চর্যা' শব্দের অর্থ হল আচরণ— বৌদ্ধ ধর্মের সিদ্ধপুরুষেরা ‘আলো-আঁধারি’ ভাষায় এতে সাধনার জন্য পালনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। আজ থেকে হাজার বছর আগে এই অঞ্চলের নিম্ন বর্ণের মানুষ, যারা আবার আর্থ-সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের নিম্ন প্রান্তে অবস্থান করতেন, যাদের নব-নাম সাবল্টার্ন, কেমনভাবে জীবন যাপন করতেন, সমাজ কতটা শ্রেণি বিভক্ত ছিল ইত্যাদি জানতে হলে চর্যাপদ ঘাঁটতে হয়। ১৯০৭ সালে পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপাল রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে এই পুঁথি উদ্ধার করেন। তাঁরই সম্পাদনায় পুঁথিখানি ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক ১৯১৬ সালে প্রকাশিত হয়।