সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

বাংলার প্রত্ন-প্রযুক্তি: প্রসঙ্গ পোশাক ধৌতকরণ

বাংলার প্রত্ন-প্রযুক্তি: প্রসঙ্গ পোশাক ধৌতকরণ

ড. মো. শাহিনুর রশীদ

সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪ ৯১ 2

বিশ্বের সর্বত্রই সমাজের গতি-প্রকৃতি ও কাঠামোর স্বরূপ অনুধাবনের জন্য প্রযুক্তির ইতিহাস-চর্চা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। কিন্তু বাংলার সামাজিক ইতিহাসে আলোচনার বিষয় হিসাবে প্রযুক্তির প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়নি বললেই চলে। তবে বাংলার ইতিহাস সচেতনভাবে পর্যবেক্ষণ করলে বাংলার মানুষকে বা তাঁদের জীবনকে কখনই প্রযুক্তিহীন বলে প্রতীয়মান করা যায় না। যেমন, ভূমি-কর্ষণ, বীজ-সংরক্ষণ, সেচ, ধান থেকে চাউল তৈরি, তৈলবীজ থেকে তেল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির জ্ঞান না থাকলে প্রাচীনযুগ বা তার পূর্ব থেকেই বাংলার ধন উৎপাদনের প্রধান উপায় হিসেবে কৃষি-কর্ম বিবেচিত হতো না। অথচ কী উপায়ে ভূমি-কর্ষণ, বীজ-সংরক্ষণ, ধান থেকে চাউল, তৈলবীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হতো—বাংলার ইতিহাস-গ্রন্থসমূহে তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। একইভাবে বাংলার বস্ত্রের গৌরব দেশ-বিদেশের ঐতিহাসিকদের রচনায় বিশেষ গুরুত্ব পেলেও স্থানীয় মানুষ কাপড় বা পোশাক কী প্রক্রিয়ায় ধৌত বা পরিষ্কার করত, সে ব্যাখ্যাও করা হয়নি। এমনকি ‘লোক-জ্ঞান ও প্রযুক্তি’ চর্চাতেও বাংলার পোশাক ধৌতকরণ-প্রযুক্তির আলোচনা স্থান পায়নি। মূলত তথ্যের সংকট এবং ইতিহাসের বিষয় নির্ধারণে রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি মনে হয় বাংলার জ্ঞান-প্রযুক্তি ইতিহাস চর্চার ‘বিষয়’ হিসেবে অন্তভুর্ক্ত করতে বাধা দিয়েছে। এরূপ প্রেক্ষাপটে মধ্য ও প্রাচীনযুগে বাংলা অঞ্চলে পোশাক-পরিচ্ছদ ধৌত বা পরিষ্কারের কী উপায় ছিল—সে বিষয়ে আলোকপাত করার প্রয়াস পাওয়া গেল।

ভারতীয় উপ-মহাদেশের সূত্রসমূহের মধ্যে ঋগ্বেদ-এ (আনু. খ্রি. পূর্ব ২৫০০ – ১৫০০ অব্দ) বিবিধ বস্ত্র ও উপকরণের নাম পাওয়া যায়। সম্ভবত এটাই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন সূত্র। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে লেখা ‘Periplus of the Erythrean Sea’ গ্রন্থেও রোমে বাংলার রপ্তানি পণ্যসমূহের মধ্যে রেশম বস্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। ঐতিহাসিক হেরোডোটাসও উল্লেখ করেছেন যে, ভারতে এক প্রকারের ‘উল-গাছ’ থেকে স্থানীয়রা ভেড়ার লোমের চেয়েও উন্নত কাপড় তৈরি করে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে রচিত অর্থশাস্ত্র-এ মগধ, পৌণ্ড্রদেশ ও সুবর্ণকুঞ্জে রেশমকীট জাত উৎকৃষ্ট বস্ত্রের খবর পাওয়া যায়। নবম শতকের আরব ভূগোলবিদ সোলায়মান রচিত সিলসিলাত-উত-তাওয়ারিখ-এ বাংলার সূক্ষ্ম ও মিহি সুতি বস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া প্রত্নক্ষেত্র চন্দ্রকেতুগড়ে প্রাপ্ত প্রত্ন-নিদর্শনসমূহে (খ্রি. পূর্ব ১০০ – খ্রি. ১০০ অব্দ), বাংলায় প্রাপ্ত মৌর্য, শুঙ্গ, কুশান, গুপ্ত, পাল যুগের টেরাকোটায়, সপ্তম শতকের চৈনিক বৌদ্ধ তীর্থযাত্রী ইৎসিঙ-এর বর্ণনায় এবং বাংলা সাহিত্যে সমকালীন সাধারণ ও রাজকীয় পোশাক-পরিচ্ছদের চমৎকার চিত্র ফুটে উঠেছে। তাই এসব পোশাক পরিষ্কার করার প্রয়োজনীয়তা নিশ্চয় অস্বীকার করা যায় না। সাধারণভাবে এ প্রশ্ন করা যেতে পারে এসব পোশাক (সাধারণ ও রাজকীয়) পরিষ্কারকরণে পানির ব্যবহার হতো কিনা? হলেও সে পানিতে কাপড় থেকে ময়লা পৃথক করা জন্য কোন দ্রব্য মিশ্রণ করা হতো কিনা? এসব প্রশ্ন উত্থাপন বা তার উত্তর জানার চেষ্টা করা নিশ্চয় অপ্রাসঙ্গিক নয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো বিষয়টি ইতিহাসের আলোচ্য বিষয় কিনা? বাংলার মানুষ কাপড় পরিষ্কার করত কিনা এবং তার উত্তর হাঁ অথবা না—শুধু এটুকু জানার জন্য এ প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। একটি সমাজ কতটা উন্নত, প্রযুক্তি ব্যবহারে কতটা অভ্যস্ত, ব্যবহৃত প্রযুক্তি কিভাবে তাঁদের জীবন ও সমাজকে প্রভাবিত করেছে ইত্যাদি প্রশ্ন নিশ্চয় সমকালীন সমাজের কাঠামো ও সামাজিক স্তরবিন্যাস জানতে সাহায্য করে। তাই সামাজিক ইতিহাস চর্চায় সামাজিক প্রযুক্তির আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বর্তমানে ‘মধ্যযুগীয় রীতি’, ‘প্রাচীন পদ্ধতি’, ‘সনাতন প্রথা’ প্রভৃতি নেতিবাচক প্রত্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর কারণ কী? সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে বাংলার মানুষ সত্যই মূর্খ, গেঁয়ো, প্রযুক্তিহীন জীবন-যাপন করত কিনা, তা বাংলার সনাতন প্রযুক্তির অধ্যয়ন ব্যতীত জানা সম্ভব নয়। তাই আমাদের পূর্বসূরিরা কতটা ‘জ্ঞানহীন’ ছিলেন তা জানার জন্যও প্রযুক্তির চর্চা আবশ্যক।

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধ্যয়নে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ইতিহাস পাঠক্রমে স্থান পায়নি। সেখানে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সর্বশেষ তত্ত্ব ও ব্যবহারিক বিষয়ই মাত্র চর্চার বিষয়। কিন্তু ‘সর্বশেষ তত্ত্ব’ হঠাৎ আবির্ভূত হয় না, তার একটি অতীত থাকে; বরং সে তত্ত্ব অতীত অনেক জ্ঞান-চর্চার ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত বা পরবর্তী ধাপ মাত্র। তাই বলা যায়, বর্তমান বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চর্চা অনেকটা মূলহীন বৃক্ষ। টেকসই জ্ঞান-চর্চার উদ্দেশ্য শুধু বর্তমানের সমাধান নয়; বরং অতীত ঐতিহ্য অনাগতদের জন্য সুরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা। এ জন্য অবশ্যই প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট জ্ঞানের অতীত স্তরের উপযোগিতার সাথে পরিচয় থাকা; প্রয়োজনীয় জ্ঞানের সেই অতীত স্তরের দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল কতটা টেকসই তা জানা। কার্যত এর পরই অতীতের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং অধিক উপযোগী ও টেকসই করা সম্ভব, নতুবা নয়। ‘কেননা ইতিহাস এমন একটি ‘ডিসিপ্লিন’ বা বিষয়, যা মানুষের সামাজিক সত্তা, সমাজের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক করে দেয়। …. অতীত বিষয়ে আমাদের জ্ঞানই কিন্তু বর্তমান বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেয়। সুতরাং অতীত বলতে কী বুঝছি, কী জানছি, সেটা আমাদের স্থির করতে হবে খুব সতর্কভাবে।’ অতএব, মধ্য ও প্রাচীনযুগে বা তারও পূর্বে বাংলা অঞ্চলে পোশাক-পরিচ্ছদ ধৌত বা পরিষ্কারে ব্যবহৃত জ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাস অন্বেষণ মোটেও অযৌক্তিক নয়।

প্রেক্ষাপট

বাংলা সহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষ শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কারকরণে নানাবিধ পদ্ধতি ও উপকরণ ব্যবহার করে থাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংশ্লিষ্ট এসব পণ্যের মধ্যে সাবান নিঃসন্দেহে অন্যতম প্রাচীন। জ্ঞাত তথ্য মতে সাবান ব্যবহারের প্রথম দৃষ্টান্ত প্রমাণিত হয়েছে ব্যাবিলন সভ্যতায়। সেখানে খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ অব্দের চর্বি ও ছাই মিশ্রিত সাবানের নমুনা পাওয়া গেছে। ১৯৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার টেম্পল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর মার্টিন লেভি সুমেরিয়ান একটি মৃৎ-ফলক আবিষ্কার করেন। এই ফলকে উৎকীর্ণ লিপিসূত্রে জানা যায়, সুমেরীয়রা ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সাবান তৈরি এবং পশমি-পোশাক ধোয়ার জন্য সেই সাবান ব্যবহার করেছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২২০০ অব্দের অপর একটি মৃৎ-ফলকে বলা হয়েছে সাবান তৈরির প্রধান উপকরণ হলো ক্ষার ও তেল। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দের নথিসূত্রে জানা যায়, মিশরীয়গণ পশুর চর্বি বা উদ্ভিজ্জ তেল ও নীল উপত্যকা থেকে সংগ্রহকৃত সোডা জাতীয় উপাদান (ট্রোনা) দিয়ে সাবান তৈরি করত। প্রাচীন চিনেও ভেষজ সাবান তৈরি হতো। ৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপে সাবান সাধারণ পণ্যে পরিণত হয়। বারো শতকে সাবানের উৎপাদন ব্যাপক বৃদ্ধি পায় এবং সমগ্র ইউরোপে ব্যবহৃত হতে থাকে। এই সাবান তৈরি হতো পশুর চর্বি থেকে। অবশ্য এর গন্ধ ছিল খুবই খারাপ। এসময়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে আরবরা সোডা-ভস্ম ও জলপাই তেল দিয়ে অপেক্ষাকৃত নরম ও সুগন্ধি কেক-সাবান তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর মধ্য দিয়ে সাবানের বাণিজ্যও স্পেন ও মেডিটেরিয়ান অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ে। সাবানের এই উন্নতি সাধনে আল রাজীর ভূমিকা অনন্য। তিনি অলিভ তেল থেকে গ্লিসারিন উৎপাদন প্রণালিও আবিষ্কার করেন। ফলে এই সময় ক্ষারের সাথে জলপাই তেল, গ্লিসারিন, লেবু সহযোগে উন্নত সাবান তৈরি হতে থাকে। তখন নাবলুস, দামেস্ক, আলোপ্প প্রভৃতি শহরে সাবান তৈরির কারখানা গড়ে উঠে। এসব কারখানায় উৎপাদিত সাবান অন্যত্র রপ্তানি করা হতো।

ভারতে শরীর ও কাপড় পরিষ্কারের প্রত্ন-তথ্য পাওয়া গেলেও কেক-সাবানের ইতিহাস খুব প্রাচীন নয়। সম্ভবত বারো শতকের পরে তা ভারতে প্রসার লাভ করে। সিরাৎ-ই-ফিরোজশাহি সূত্রেও জানা যায় ১৩৭২ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে সাবান উৎপাদন হতো। দিল্লি সালতানাতে সাবান খুবই গুরুত্বপূর্ণ পণ্য ছিল। এর উৎপাদন ও ব্যবহার ব্যাপক ছিল – এই অনুসিদ্ধান্ত অমূলক নয়। কারণ সেই সময় সাবান উৎপাদকদের (সাবুন-গরী) কর দিতে হতো। উৎপাদন ও বিপণন সুবিস্তৃত না হলে তাতে প্রশাসন করারোপ করত না। যদিও সুলতান ফিরোজ শাহ্ তুঘলক (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রি.) ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সাবুন-গরীদের উপর থেকে কর প্রত্যাহার করে নেন। নিশ্চয় এর ফলে সাবানের বিক্রয় মূল্য হ্রাস পেয়েছিল। তবে আইন-ই-আকবরি সূত্রে জানা যায় তৎকালে বেরার প্রদেশে সাবান প্রস্তুত করা হতো এবং সেটা থেকে প্রচুর রাজস্ব পাওয়া যেত। ঔপনিবেশিক আমলের দলিলপত্রেও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত বোম্বে, পাঞ্জাব, বাংলা, সিন্ধু প্রভৃতি প্রদেশে সাবান উৎপাদনের তথ্য পাওয়া যায়।

বাংলা অঞ্চলে বস্ত্র পরিষ্কার সংস্কৃতি

জ্ঞাত তথ্য মতে বাংলা অঞ্চলের কোন প্রত্ন-ক্ষেত্র থেকে সাবান বা তৎ-সংশ্লিষ্ট কোন নিদর্শন বা অন্য কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে ঔপনিবেশিক রচনায় সাবান উৎপাদন, উৎপাদক ও উপকরণ প্রভৃতির তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া নিকট অতীতের বাংলা সাহিত্যে, মধ্যযুগের সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্যে বস্ত্র পরিষ্কারের উপকরণ সাবান, ক্ষার, সাজিমাটি, পেশাজীবী হিসেবে রজক বা ধোপার উল্লেখ রয়েছে। প্রাচীনযুগের একটি তাম্রলিপিতেও ধোপার উল্লেখ পাওয়া গেছে।

স্বদেশি আন্দোলনের প্রভাবে ঢাকাতে গড়ে ওঠা শিল্পসমূহের মধ্যে সাবান অন্যতম। ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ৩০,০০০ রুপির মূলধন নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বুলবুল সাবান ফ্যাক্টরি’। জাপান থেকে প্রশিক্ষিত সরোজেন্দ্র গুহ এই কারখানার প্রকৌশলী ছিলেন। ১৯০৬-০৭ বর্ষের Indian Industrial Exhibition-এ বুলবুল সাবান ফ্যাক্টরি প্রথম পুরস্কার পায়।

উনিশ শতকের ষষ্ঠ দশকের ঢাকার সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজের মতে, হিন্দুদের কাছে সাবান ছিল এক অচেনা অজানা বস্তু। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার জন্য তারা ব্যবহার করতেন সাজিমাটি ও বেসন। ঢাকার রফতানি দ্রব্যের মধ্যে সাবান অন্যতম। বাংলার সর্বত্র এর কদর আছে। এমনকি বার্মার পেনাং ও মালয়ে এ সাবান পরিচিত। তিনি সাবান প্রস্তুত-প্রণালিও উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, আশি পাউন্ড পাত্তা ও চল্লিশ পাউন্ড সাজিমাটির সঙ্গে পানি মিশিয়ে জাল দেয়া হতো যতক্ষণ পর্যন্ত না সব লবণ গলে যায়। এরপর এগুলো মটকায় ঢেলে তাতে মেশানো হয় পশুর চর্বি ও তিলের তেল। আবার জাল দেওয়া হয়। কয়েক দিন রেখে দিয়ে ঠাণ্ডা করা হয়। সাবান এবারে বাজারের জন্যে প্রস্তুত। তবে উৎকৃষ্ট মানের সাবান পেতে হলে জাল দিতে হয় তিন চার বার। ভাল সাবান প্রস্তুত করতে সময় লাগে দুই সপ্তাহ। ফ্রান্সিস বুকাননও বিহারের সাবান উৎপাদন, শ্রমিক, উপকরণ, দাম প্রভৃতির বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন।

উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ঢাকা ফ্যাক্টরির কমার্শিয়াল রেসিডেন্ট তাঁর প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন – বাংলায় উৎপাদিত সাবানের মধ্যে ঢাকার সাবান সর্বাপেক্ষা উন্নত, যা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে এবং বসরা, জেদ্দা প্রভৃতি শহরে রপ্তানি করা হতো। এই সাবানের উৎপাদন উপকরণের অনুপাত ছিল: ঝিনুক-চুন ১০ মণ, সাজিমাটি ১৬ মণ, লবণ ১৫ মণ, তিলের তেল ১২ মণ এবং ছাগলের চর্বি ১৫ সের।

সাহিত্যেও সাবান প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) ঘরে-বাইরে উপন্যাসে নিখিলেশ মেজরানীর জন্য বাক্স বাক্স দেশি সাবান কিনলে বিমলা দেশি সাবানকে অবজ্ঞাসুরে বলে ‘সে কি সাবান, না সাজিমাটির ড্যালা!’ এই সূত্রে জানা যায়, তখন বাংলায় দেশীয় সাবান উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিন্তু তা ততো উন্নত নয় বরং সাজিমাটির খণ্ডের ন্যায় শক্ত।

রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেন (১৮৮০-১৯৩২) ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ‘চাষার দুক্ষ’ প্রবন্ধে লিখেছেন- ‘পূব্বের্ পল্লীবাসিনীগণ ক্ষার প্রস্তুত করিয়া কাপড় কাচিত; এখন তাহাদের কাপড় ধুইবার জন্য হয় ধোপার প্রয়োজন, নয় সোডা। চারি পয়সার সোডায় যে কার্য্য সিদ্ধ হয়, তাহার জন্য আর কষ্ট করিয়া ক্ষার প্রস্তুত করিবে কেন?’ বিভূতিভূষণের (১৮৯৪-১৯৫০) রচনাতেও এই ক্ষারের প্রসঙ্গ এসেছে। দুর্গা অপুকে তেল ও নুন আনতে বলে যেহেতু ‘মা-র আসতে ঢের দেরী, ক্ষার কাচতে গিয়েচে।’ শুধু সাধারণ মানুষই না, রাজা রানিরাও পরিষ্কারকরণে ক্ষার ব্যবহার করতেন। তাইত দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার (১৮৭৭-১৯৫৭)-এর সাহিত্যে রাজকীয় ব্যক্তিবর্গের পোশাক ও শরীর পরিষ্কারকরণে ক্ষার ও খৈল ব্যবহারের একাধিক উল্লেখ রয়েছে। ‘পাতাল-কন্যা মণিমালা’ গল্পে মণিমালাকে ক্ষার ও খৈল দিয়ে শরীর পরিষ্কার করাতে দেখা যায়; ‘কাঁকনমালা, কাঞ্চনমালা’ গল্পে দাসী রানিকে বলছে, ‘রাণী মা, তুমি বড় কাহিল হইয়াছ; কতদিন না-জানি ভাল করিয়া খাও না, নাও না। গায়ের গহনা ঢিলা হইয়াছে, মাথার চুল জটা দিয়াছে। তুমি গহনা খুলিয়া রাখ, বেশ করিয়া ক্ষার-খৈল দিয়া স্নান করাইয়া দেই।’ অপর একটি গল্প ‘শীত বসন্ত’-এ সুয়োরানি দুয়োরানিকে ডেকে বলছেন, ‘আয় তো, তোর মাথায় ক্ষার খৈল দিয়ে দি’ আবার ‘সুখু আর দুখু’ গল্পেও দুখুকে একটু তেল মাথায় ছুঁয়ে এক চিমটি ক্ষার খৈল নিয়ে জলে নেমে ডুব দিতে দেখা যায়।

কার্যত যাঁরা জীবিকার জন্য কাপড় ধোয় তাঁরা ধোপানী, ধোপা, ধোবা, রজক প্রভৃতি নামে পরিচিত। মধ্যযুগের সাহিত্যে প্রায়ই তাঁরা উল্লিখিত হয়েছেন। আঠারো শতকে মানিকরাম গাঙ্গুলী লিখেছেন, ‘কুমার কামার সাজে কলু মালী ধবা।/ ভারি তেলি বাগুনি বেপারিজীবী যেবা্’। আরো পূর্বে আঠারো শতকের প্রথম দশকের পূর্বে কেতকাদাস তাঁর মনসামঙ্গল কাব্যের ‘বেহুলার দেব-বস্ত্র ধৌতকরণ’ অধ্যায়ে লিখছেন আরও বিস্তারিত – বেহুলা দেব-বস্ত্র নিজ হাতে কাচার জন্য ধোপানীর নিকট মিনতি করে এবং পায়ে পড়ে। শেষে ধোপানী রাজি হয়। দেখা যাচ্ছে ধোপানী কাপড় কাচে ‘ক্ষার আর জলে’ অপর দিকে বেহুলা শুধু ‘গঙ্গাজলে’। তবু ধোপার কাপড় কাঁচড়ার ফুলের ন্যায় অপর দিকে বেহুলার কাপড় যেন ‘সূর্য্যসমতুল’। ভারতচন্দ্রের (১৭১২-১৭৬০) রচনাতেও ধোপার প্রসঙ্গ এসেছে (ধোপা বধি বস্ত্র পরি কুব্জারে সুন্দরী করি/ সুশোভিত মালির মালায়/)। সমসাময়িক পোতুর্গিজ ধর্মপ্রচারক মানুয়েল দা আসসুম্পসাঁও তাঁর অভিধানে সাবান শব্দ উল্লেখ করেছেন। বেহুলা-লক্ষীন্দরের বিয়ের আয়োজনে নানান শ্রেণি-পেশার মানুষের ব্যস্ততার মধ্যেও ধোপার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। সতেরো শতকের কবি আবদুল হাকিম রচিত লালমোতি সয়ফুল মুল্ক গ্রন্থে ধোপা অর্থে রজক উল্লিখিত হয়েছে ‘রজকের হন্তে আন অতি দিব্য বাস’ হিসেবে।

একইভাবে ষোল শতকের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর (আনু. ১৫৪০-১৬০০) চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে উল্লিখিত হয়েছে, ‘নগরে করিআ শোভা নিবসে অনেক ধোবা/ দড়ায় শুখায় নানা বাসে/ দরজি কাপড় শিঞে [সেলাই করে] বেতন করিআ জিঞে/ গুজরাটে বৈসে এক পাশে।’ এই কাব্যে আরও উল্লিখিত হয়েছে – ‘নিশা মধ্যে আনিহ দেউলের পাটিকাল/ পুজিবে ধোবার পাটে জালি দিব জ্বাল।’ এসময় বাংলায় নতুন কাপড় শুভ্রকরণের উত্তম ব্যবস্থা ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় সম্রাট আকবরের সভাসদ আবুল ফজলের (১৫৫১-১৬০২) রচনায়। তিনি উল্লেখ করেছেন সরকার সোনারগাঁও-এর এগারসিন্ধুতে এমন এক জলাশয় আছে যাতে ধৌত করা কাপড় অপূর্ব শুভ্র রূপ ধারণ করত। পনেরো শতকের কবি বিজয় গুপ্ত লিখেছেন, ‘পট্টপস্ত্র পরিধান বড় দেখি শোভা।/একে চাপে চলিয়াছে দুই শত ধোপা’। আরও বলছেন, ‘পদ্মাবতীর অধিবাস কৌতুক অপার। ধোপায় যে ছোয়ায় ক্ষার লোক ব্যবহার’। তবে আরও পূর্বে চৌদ্দ শতকের কবি চণ্ডীদাস ধোপানি অর্থে রজকিনিকে বলছেন ‘শুন রজকিনি রামি’। তিনি ধোপা অর্থে বলছেন ‘বিশুদ্ধ রতিতে কারণ কি।/ সাধহ সতত রজক-ঝি’। সমসাময়িক রচনা (১২-১৪ শতক) বৃহদ্ধর্মপুরাণ-এ বলা হয়েছে, করণের ঔরসে বৈশ্যার গর্ভে তক্ষা ও রজক (ধোপা) জাতির উৎপত্তি, যাঁরা ছিলেন মধ্যম-সংকর বর্ণের মানুষ, তবে একই সময় (১২-১৪ শতক) রচিত ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ-এর হিসেবে ধোপা ছিলেন অসৎশুদ্র পর্যায়ভুক্ত। এই গ্রন্থে অন্যত্র বলা হয়েছে কৃষ্ণের জন্মদিনে যে ভোজন করবে সে ধোপা বা রজক হিসেবে জন্মাবে। এই রচনার শ্রীকৃষ্ণের জন্মখণ্ডের ৫১তম অধ্যায়ে রজক-নিগ্রহের কথাও বলা হয়েছে। রাজা লক্ষণ সেনের সভা কবি গোবর্ধন আচার্য রচিত (১২ শতক) আর্যসপ্তশতী কাব্য গ্রন্থে বস্ত্র ধোয়ার কাজে রজক-গৃহিনীর অসততার কথাও উল্লিখিত হয়েছে। বলা হয়েছে তাঁরা অপরের অধৌত মলিন বস্ত্র পরিধান করত, সে পোশাকের প্রতি তাঁদের মায়া ছিল না (শ্লোক ৪০২)। এমন কি অর্থের বিনিময়ে প্রেমিকাকে প্রেমিকের বস্ত্র দিয়ে দিত (শ্লোক ৯০)। জ্ঞাত-তথ্য মতে এর চেয়ে প্রাচীন তথ্য সাহিত্যে সূত্রে পাওয়া যায় না। তবে সিলেট জেলার ভাটেরা গ্রামে প্রাপ্ত (আনুমানিক) ১০৪৯ খ্রিস্টাব্দে রচিত গোবিন্দ কেশবদেবের তাম্র-লিপিতে গ্রামের একজন ধোপার নাম পাওয়া যায়। তাঁর নাম সিরূপা। এসব তথ্য দৃষ্টে এটা সহজেই অনুমেয় যে, সমকালে পোশাক-পরিচ্ছদ ধোয়ার জন্য সমাজে ধোপা পেশাজীবীর সরব উপস্থিতি ছিল।

আলোচনার এই পর্যায়ে বলা যায় ভারত অঞ্চলে মধ্যযুগে কেক-সাবানের প্রচলন শুরু হলেও বাংলায় ঔপনিবেশিক যুগের আগে তার ব্যবহার ব্যাপক বিস্তৃত ছিল না। কারণ সাহিত্যিক উৎসে বস্ত্র ধোয়া এবং পেশা হিসেবে ধোপার উল্লেখ বারংবার পাওয়া গেলেও সাবানের উল্লেখ নাই। তবে বাংলা অঞ্চলে প্রচুর স্থান-নাম আছে যা ধোপার সাথে সংশ্লিষ্ট। তাই সার্বিকভাবে বলা যায় পোশাক-পরিচ্ছদ ধোয়ার ব্যবস্থা বাংলা অঞ্চলে বিদ্যমান ছিল তা স্পষ্ট  এবং তা সম্পন্ন হতো মূলত ক্ষার, খৈল, সাজিমাটি প্রভৃতির মাধ্যমে।

প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে প্রাচীন যুগের আগে বাংলা অঞ্চলে পোশাক ধৌতকরণে কী ব্যবস্থা ছিল? অথবা উল্লিখিত ক্ষার কী উপায়ে পাওয়া যেত? এই প্রশ্নদ্বয়ের উত্তর অন্বেষণের জন্য নিকট অতীতে ক্ষার উৎপাদনে গ্রামীণ ঐতিহ্যের প্রতি আলোকপাত করা যেতে পারে। বাংলা অঞ্চলে সনাতন পদ্ধতিতে শরীর, চুল ও বস্ত্র ধৌতকরণের প্রধাণত তিনটি উপায় ছিল।

এক. গুল্ম-লতার রস ও ফলের ব্যবহার। এধরনের উদ্ভিদ মূলত fuller’s herb বা fuller’s plant হিসেবে পরিচিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এ ধরনের উদ্ভিদের অভাব ছিল না – তা ঔপনিবেশিক সূত্রে ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। আঠারো শতকের শেষ দিকে বম্বে থেকে রয়াল সোসাইটির প্রেসিডেন্টকে হেলেন স্কট বস্ত্রশিল্পে উদ্ভিজ্জ উপকরণ ব্যবহারে ভারতীয়দের দক্ষতার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এরকম একটি বৃক্ষ রিঠা বা রিটা। প্রায় সব অভিধান রিঠাকে কাপড় কাচার জন্য ব্যবহৃত ছোট ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বৃক্ষ-বিশেষজ্ঞ মোকারম হোসেন লিখেছেন – রিঠার বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফেনা হয়। উলের তৈরি পোশাক পরিষ্কারের জন্য এই ফেনা উত্তম। এখনো দেশের কোথাও কোথাও এ পদ্ধতিতে কাপড় ধোয়া হয়। বিউটি পার্লারেও শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে চুল ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। রিঠার ইংরেজি নাম Soap Plant, মানে সাবান গাছ। অন্যান্য নামের মধ্যে আছে Soap Nut, Soap Berry, Wash Berry ইত্যাদি। এরা উত্তর ভারত ও হিমালয়ের প্রজাতি। এই গণের প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ১৩। Sapindus mukorossi ছোট জাতের রিঠা। সাধারণত এ প্রজাতিটিই বাগানে রোপণ করা হয়। এখনও ঢাকায় মিরপুরের ‘বানিয়া’র দোকানে রিঠা পাওয়া যায়। এছাড়া Sapindaceae পরিবারের অন্যান্য সোপ নাটও বাংলায় পাওয়া যেত। বাংলাদেশের পাবনা অঞ্চলে তিলের তাজা পাতা ভেজা মাথায় ঘষে ফেনা তৈরি করে চুল পরিষ্কার করার রীতি প্রচলিত ছিল। পি. কে. গোড এরূপ আরো কিছু বৃক্ষের নাম উল্লেখ করেছেন, যেমন, Sapindus, Energinata, Maduriensis, Saponarius, Senegalensis।

দুই. নিকট অতীত পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক ধরনের মাটি মাথায় মেখে চুল পরিষ্কার করা হতো। লেখক নিজেও তিন দশক পূর্বে গ্রামে অন্যদের সাথে মাটি ব্যবহার করেছেন। বিশেষ ধরনের এই মাটি ‘সাজিমাটি’ নামে পরিচিত। বাংলা অভিধানসমূহে এবং সাহিত্যে সাজিমাটির এই ব্যবহার উল্লিখিত হয়েছে। উল্লেখ্য সাজিমাটি এক ধরনের ক্ষারজাতীয় মাটি যে মাটির পিএইচ মান ৭.৪ বা তার বেশি। জানা যায় পাবনা অঞ্চলে চুল পরিষ্কারের জন্য উঁইয়ের মাটিও (বাসা) ব্যবহৃত হতো। নিকট অতীতের মতো দূর অতীতেও সারা বাংলাসহ ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ক্লিনিং এজেন্ট হিসেবে এই মাটি ব্যবহৃত হতো। সম্ভবত মিশরীয়রাও কাপড় ধোয়ার জন্য এ ধরনের মাটি (Fuller’s earth) ব্যবহার করত। একই কাজে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দ থেকেই ব্যাবিলনিয়ানরাও ডিটারজেন্ট হিসেবে বিশেষ ধরনের মাটি ব্যবহার করত। ঔপনিবেশিক সূত্রে জানা যায় ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় লুনাভাদা ও বালাসিনোরে সাবান উৎপাদনে এই মাটি ব্যবহৃত হতো। এসব সাবান কাপড় কাচার জন্য অধিক ব্যবহৃত হতো। ঢাকার সিভিল সার্জন জেমস ওয়াইজও বাংলায় সাবান হিসেবে সাজিমাটির ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন।

তিন. শুধু মাটি না কিছু লতা-পাতা ও বৃক্ষ থেকে উৎপন্ন ছাইও ক্লিনিং এজেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ছাই থেকেই মূলত প্রকৃতিক ক্ষার তৈরি করা হতো। উদ্ভিজ্জ ছাই থেকে পাওয়া যায় বলে সোডিয়াম কার্বনেট সোডা অ্যাশ নামেও পরিচিত হওয়ার কারণ। ইতোমধ্যে ভারতবর্ষে প্রাকৃতিক ক্ষার ব্যবহারের অনেক নজির উল্লেখ করা হয়েছে। লেখক সুমিতা দাসও প্রাকৃতিক ক্ষার ব্যবহারের উল্লেখ করেছেন। গবেষক কর্তৃক গৃহীত সাক্ষাৎকার সূত্রেও জানা যায় হলুদ, কলা ও সরিষার গাছ শুকানোর পর পুড়িয়ে তা থেকে উৎপন্ন ছাই হতে ক্ষার তৈরি করার রেওয়াজ বাংলায় প্রচলিত ছিল।

হলুদ, কলা ও সরিষার গাছ ছাড়াও শিমুল ফুল থেকে উৎপন্ন ছাই ব্যবহার করেও ক্ষার তৈরি করা হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে একটি এনজিও-র মাসিক প্রচারপত্র সূত্রে জানা যায়, নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কিসমত আড়া গ্রামের জহুরা বেগম তখন পর্যন্ত কাপড় কাচার কাজে শিমুল ফুলের ক্ষার ব্যবহার করতেন। জহুরা বেগমের মতে রং ওঠার ভয় নাই এমন অধিক ময়লাযুক্ত কাপড় পরিষ্কারের জন্য এই ক্ষার অধিক কার্যকর। তাঁর মতে কাপড় কাচার সাবান অথবা সোডার চাইতেও এর কাপড় পরিষ্কার করার ক্ষমতা অনেক বেশি।

সাক্ষাৎকার দাতাদের ভাষ্যমতে, ক্ষার তৈরির জন্য সাধারণত হলুদ, কলা ও সরিষা গাছ ভালো করে শুকিয়ে সারা বছরের জন্য সংরক্ষণ করা হতো। লক্ষণীয় বিষয় বর্ষার পূর্বে এই সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হতো। বৃষ্টিতে এর গুণাগুণ হ্রাস পায় বলে ভালো করে ঢেকে রাখা হয়। এর পর প্রয়োজন অনুসারে চুলায় রান্নার কাজে জ্বালানী হিসেবে শুকনা কলা বা সরিষার গাছ পোড়ানো হয়। এরপর আগুন নিভিয়ে গেলে সেই ছাই সাধারণত মাটির পাত্রের পানিতে ভেজানো হয়। ঘণ্টা খানেক সময় পর পানি থেকে ছাই পৃথক করা হয়। কার্যত এই পানিই ক্ষার দ্রবীভূত পানি। এই পানিতে কাপড় ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর কাপড় তুলে নতুন পানিতে আছাড় দিয়ে ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার কাপড় পাওয়া যায়। পূর্বোক্ত নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কিসমত আড়া গ্রামের জহুরা বেগম সূত্রে জানা যায়, শিমুল ফুলের ছাই থেকে মণ্ড তৈরি করে তা সারা বছরের জন্য সংরক্ষণও করা যায়। এজন্য প্রথমে শিমুল ফুল রৌদ্রে ভালো করে শুকিয়ে চুল্লিতে পোড়ানো হয়। এই ছাই অল্প একটু চুন দিয়ে বা চুনের পানি দিয়ে মণ্ড বানিয়ে কাগজে মুড়িয়ে মাটির হাঁড়িতে বা অন্য কোনও পাত্রে বায়ুরোধক অবস্থায় শুষ্ক কোনও জায়গায় রেখে দিতে হয়। বাতাস লাগলে এর কাপড় পরিষ্কার করার ক্ষমতা বা গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। শুষ্ক ও বায়ুর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকলে এই মণ্ড অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়। পরে প্রয়োজন মতো নিয়ে কাপড় ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা যায়। কাপড় কাচার জন্য প্রথমে পানি খুব ভালোভাবে গরম করে অল্প পরিমাণ যেমন এক মুঠো মণ্ড সেই পানিতে গুলে নিতে হয়। মণ্ডটি ভালোমতো পানিতে মিশে গেলে আরো কিছুক্ষণ জ্বাল করে তাতে ময়লা কাপড়গুলো ভিজিয়ে রাখতে হয়। মূলত এসব কাপড় এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর তুলে নিয়ে ভালো করে আছড়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিলেই পাওয়া যায় কাক্ষিত পরিষ্কার কাপড়।

ঔপনিবেশিক দলিল, বাংলা সাহিত্য, তাম্র্রলিপি প্রভৃতির তথ্য মতে বাংলা অঞ্চলে পোশাক-পরিচ্ছদ ধোয়ার জ্ঞান-প্রযুক্তি ও ব্যবস্থার এই ঐতিহ্যের প্রাচীনত্ব সর্বাতীত একাদশ শতক পর্যন্ত প্রমাণিত হয়। জ্ঞাত তথ্যমতে এ সম্পর্কে এর চেয়ে প্রাচীন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে পোশাক-পরিচ্ছদ ও শরীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সংস্কৃতির আরো অতীতের ইতিহাস অন্বেষণ করা অসম্ভব নয়। এ বিষয়ে বাংলা শব্দের ব্যুৎপত্তিগত (etymologycal) তথ্য ও সামাজিক ব্যাখ্যা বিশেষ সাহায্য করতে পারে। যেমন:

কলা: সংস্কৃত কদলক প্রাকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় কলা রূপে গৃহীত হয়েছে। পাহাড়পুরের পোড়ামাটির ফলকে ও নানান প্রস্তরচিত্রে প্রায়ই ফলসহ বা ফল ছাড়া কলাগাছের চিত্র দৃষ্ট হয়। আদি অস্ট্রেলীয় কাল থেকেই কলা বাঙালির প্রিয় খাবার। শূন্যপুরাণ-এও কলা (অথ বৈতরণী, ৪; অথ চাস, ১৩) উল্লিখিত হয়েছে।

তিল: এক প্রকার তৈলবীজ। তিল শব্দও আর্যপূর্ব দ্রাবিড় উৎস হয়ে বাংলায় এসেছে। শব্দটি দ্রাবিড় ভাষা গোষ্ঠীর তামিল, মলয়ালম, কন্নড় ভাষাতে সমার্থক শব্দ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

সরিষা: বাংলা অভিধান মতে সরিষা শব্দ সংস্কৃত সর্ষপ থেকে উদ্ভূত। সরিষা শব্দ অর্থশাস্ত্র ও অভিধানরত্নমালা-তে উল্লিখিত হয়েছে। প্রথম-ষষ্ঠ শতাব্দীর লেখক বাৎস্যায়নও সরিষা চাষের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থশাস্ত্র-এ শস্যের নামের তালিকায় সরিষার উল্লেখ রয়েছে। ছয় শতকের অমরকোষ-এ সরিষা শব্দ পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে প্রাপ্ত সাত শতকের জয়নাগের বপ্পঘোষবাট তাম্র্রলিপির দশম লাইনে সরিষা উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়া খনার বচনেও সরিষা চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যায়। আনুমানিক ১২০০ খ্রিস্টাব্দে রচিত কেদারভট্টের বৃত্তরত্নাকর-এও সরিষা শাকের কথা উল্লিখিত হয়েছে। দশম শতাব্দীর অভিধানরত্নমালা-তে সরিষার উল্লেখ রয়েছে। রাজশেখর (সাহিত্যিক জীবন ৮৮০-৯২০ খ্রিস্টাব্দ) রচিত কাব্য-মীমাংসা গ্রন্থে কলা, সরিষা প্রভৃতি উল্লিখিত। শূন্যপুরাণ-এও সরিষার কথা আছে (অথ চাস, ১১)। ১১০০ খ্রিস্টাব্দে আচার্য বিদ্যাকর কর্তৃক সংকলিত সুভাষিতরত্নকোষ-এ পাঁচ জন কবির অন্তত আটটি শ্লোকে সরিষা গাছ, সরিষা ফুল, সরিষার মাঠ, সরিষার তেল প্রভৃতি প্রসঙ্গ উল্লিখিত হয়েছে।

শিমুল: সংস্কৃত শাল্মলী থেকে বাংলা শিমুল শব্দের উৎপত্তি। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ (Silk cotton, Red Silk-Cotton, Red Cotton Tree) ও গণ ও প্রজাতির নাম (Bombax buonopozense, Bombax ceiba, Bombax costatum Pellegr, Bombax insigne, Bombax mossambicense) দৃষ্টে মনে হয় শিমুল শব্দটিও স্থানীয়।

কাচা (কাপড়): ক্ষার জলে কাপড় সিদ্ধ করে বারংবার ওপরে তুলে আছড়ানো অর্থে ‘কাচাও’ শব্দ অস্ট্রিক ভাষার সাঁওতালি শব্দ। এই কাচাও থেকে বাংলা কাচা শব্দের ব্যুৎপত্তি।

ধোওয়া, ধোয়া, ধোপা, ধোবা, ধোলাই: সংশ্লিষ্ট এই শব্দসমূহ দ্রাবিড় ভাষাজাত।

সাজি (মাটি): মলিন বস্ত্রাদি ধৌত করার পক্ষে উপযুক্ত ক্ষারযুক্ত (মাটি) অর্থে এটি অস্ট্রিক ভাষার গোষ্ঠির সাঁওতালি শব্দ, যা সরাসরি বাংলা ভাষায় আজও ব্যবহৃত হয় পূর্ণাঙ্গ রূপে।

ক্ষার: সাঁওতালি শব্দ খর ও খরা এই শব্দদ্বয়ের অর্থ পোড়ানো এমন, পোড়া স্বাদযুক্ত, তিক্ত, রুক্ষ, ক্ষারজাতীয়, লবণাক্ত। বাংলা ক্ষার শব্দও সাঁওতালি খর বা খরা থেকে বাংলায় প্রবেশ করেছে।

খইল: বাংলা একাডেমির অভিধান মতে শব্দটি খইল ছাড়াও খৈল ও খোল বানানেও প্রচলিত রয়েছে। যার অর্থ তিল, সরিষা প্রভৃতি থেকে তেল বের করার পর যা অবশিষ্ট থাকে। শব্দটির উৎপত্তি নিদের্শ করা হয়েছে সংস্কৃত খলি শব্দ থেকে। একই মত প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক ওয়াকিল আহমদ। তবে শব্দটি মনে হয় আরো প্রাচীন উৎসজাত। ক্ষুদিরাম দাশ জানিয়েছেন, অস্ট্রিক ভাষাগোষ্ঠীর সাঁওতালি ভাষায় খৌড়ি থেকে খলি ও খইল শব্দের উৎপত্তি। খৌড়ি শব্দের অর্থও একই: তেলের ঘানি পিষ্ট ও বর্জিত অংশ।

সংশ্লিষ্ট শব্দসমূহের উপর্যুক্ত ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যা শব্দসমূহের প্রাচীনত্ব প্রমাণ করে। এটা সর্বজন স্বীকৃত যে জ্ঞাত তথ্যমতে বাংলা অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপনকারী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অস্ট্রিক-দ্রাবিড়রা ছিলেন প্রধান। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দের দিকে উত্তর ভারতে আগমনের অনেক পরে আর্যরা বাংলায় প্রবেশ করে। গুপ্তযুগের পূর্বে বাংলা অঞ্চলে আর্যদের অনুপ্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত অস্ট্রিক-দ্রাবিড়রাই ছিলেন প্রধান জনগোষ্ঠী। এদের ভাষা যথাক্রমে অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় ভাষা নামে পরিচিত। অস্ট্রিক ভাষার বর্তমান প্রতিভূ হচ্ছে মুণ্ডারি ভাষা—যে ভাষা সাঁওতাল, মুণ্ডা, কোরওয়া, কোরবু প্রভৃতি জাতিসমূহ ব্যবহার করে থাকে। অপর দিকে দ্রাবিড় ভাষার উত্তরসূরী হলো: গোণ্ড, মালের, কুই (খন্দ), ওরাওঁ (কুড়–খ) ভাষা। আর যেহেতু শরীর ও পোশাক-পরিচ্ছদ ধোয়ার সনাতন সংস্কৃতির একাধিক শব্দ আর্যপূর্ব ভাষাগোষ্ঠী হতে আগত, তাই বলা যেতে পারে স্থানীয়ভাবে ক্ষার উৎপাদন-প্রযুক্তি ও ব্যবহার সংস্কৃতির সাথে আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রগাঢ় সম্পর্ক রয়েছে। সকলেই অবগত যে, বাংলা অঞ্চলে সংস্কৃতভাষীদের বিস্তার ঐতিহাসিক যুগের পূর্বেই সূচিত হয়েছে। এসব সম্পর্কের সূত্র ধরে এ অনুমান অমূলক নয় যে, মধ্যযুগের ন্যায় প্রাচীন যুগে এবং তারও পূর্বে বাংলা অঞ্চলের মানুষ হলুদ, সরিষা, কলা, শিমুলফুল প্রভৃতি হতে ক্ষার প্রস্তুত করতে কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার জানত। পাশাপাশি খৈল ও সাজিমাটি প্রভৃতির ব্যবহারও ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল।

পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বের অন্যত্র অনেক পূর্বেই পরিষ্কার করার উপকরণ হিসেবে সাবান ব্যবহৃত হলেও ভারতে বিশেষত বাংলা অঞ্চলে সাবানের প্রচলন হয়েছে অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে। এমনকি মধ্যযুগে দিল্লি-আগ্রা কেন্দ্রিক শাসকদের অধীনে সাবান উৎপাদন ও বিপণন শুরু হলেও বাংলা অঞ্চলে মনে হয় তখনও জনসাধারণের মধ্যে সহজলভ্য ছিল না। ঔপনিবেশিক সময়ে বাণিজ্যিকভাবে সাবান উৎপাদন শুরু হলে চাহিদা বাড়ে। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বাংলার অধিকাংশ মানুষের সাথে সেই সাবানের সংশ্লেষ ছিল না। কারণ হিসেবে দামের ভূমিকা অস্বীকার না করেই বলা চলে শরীর, চুল ও বস্ত্র পরিষ্কার করার কার্যকর স্থানীয় ও সহজলভ্য ব্যবস্থা বাংলার মানুষের জানা ছিল। এর ঐতিহাসিক সত্যতা পাওয়া গেছে ঔপনিবেশিক দলিলপত্রে, মধ্যযুগের সাহিত্যে, অভিধানে, ও রাজকীয় দলিলে। এমনকি প্রাচীন যুগের তাম্র্রলিপিতেও স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। এসব প্রমাণে নিশ্চিত করেই বলা চলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ধৌতকরণ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তি মধ্য যুগেও মানুষের প্রয়োজন মেটাত। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত বাংলায় উৎপাদন ব্যবস্থায় বাইরের কোন প্রভাব পড়েনি। এই প্রেক্ষাপটে মনে হয় বাংলার সনাতন পরিষ্কারকরণ সংস্কৃতি আরো প্রাচীন। আর যেহেতু বাংলা অঞ্চলের সনাতন পরিষ্কারকরণের উৎস-উপকরণ – হলুদ, তিল, কলা, সরিষা প্রাচীন কাল থেকেই সুলভ ছিল; অন্তত – তিল, কাচা, ধোওয়া, ধোয়া, ধোপা, ধোবা, ধোলাই, সাজি (মাটি), ক্ষার, খৈল শব্দসমূহ আর্যপূর্ব ভাষাগোষ্ঠী হতে আগত এবং প্রাচীন ও মধ্যযুগে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, তাই সনাতন পরিষ্কারকরণ প্রযুক্তি বা সংস্কৃতির সাথে আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রগাঢ় সম্পর্কের অনুমান অমূলক নয়। সম্ভবত নিকট অতীতের রীতি অনুসারে স্থানীয় উপকরণে ও পারিবারিক পর্যায়ে বা ক্ষুদ্র আয়োজনে ক্ষার উৎপাদন করা হতো। কার্যত এই পারিবারিক উৎপাদনে নারীর ভূমিকা ছিল মূখ্য। ধোপারাও সম্ভবত নিজেরাই নিজের ক্ষার উৎপাদন করে চাহিদা মিটিয়ে ফেলতো। পাশাপাশি চুল ও শরীর পরিষ্কার করতে তিলের পাতা, ক্ষার, খৈল এবং উঁইয়ের মাটি ও সাজিমাটির প্রচলন ছিল যা সমসাময়িক বিশ্বে প্রচলিত প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও বটে। বাংলার এই ধৌতকরণ পদ্ধতিতে ব্যবহৃত উপকরণ, জ্ঞান ও প্রযুক্তি আমদানি নির্ভর নয় আরোপিতও নয়, বরং অনেকটা স্ব-উদ্ভাবিত ও পরিবেশ বান্ধব।

সূত্র:

১. ‘A Descriptive and Historical Account of the Cotton Manufacture of Dacca, in Bengal’; London: John Mortimer, 1851.

২. Abul Fazl-i-‘Allami, ‘Ain-I-Akbari, Vol. II, (Tran. H.S. Jarrett)’; Calcutta: Royal Asiatic Society of Bengal, 1949.

৩. Ahmad Y. Al-Hassan, “Alchemy, Chemistry and Chemical Technology” in A. Y. Al-Hassan (ed.), ‘The Different Aspects of Islamic Culture Vol. 4 (Science and Technology in Islam), Part 2 (Technology and Applied Sciences)’; Paris: UNESCO, 2001.

৪. Albert Neuburger, ‘The Technical Arts and Sciences of the Ancients (Tran. Henry L. Brose)’; London: Methuen & Go. Ltd., 1930.

৫. C.P. Khare (ed.), ‘Indian Medicinal Plants’; New York: Springer, 2007.

৬. Charles Fabri, ‘A History of Indian Dress’; Calcutta: Orient Longmans, 1960.

৭. Charles Singer, E. J. Holmyard, A. R. Hall and Trevor I. Williams (Ed.), ‘A History of Technology, Vol. II (The Mediterranean Civilizations and The Middle Ages, C 700 BC to 1500 AD)’; New York and London: Oxford University Press,1956.

৮. Daniel H. H. Ingalls (Tran.), ‘An Anthology of Sanskrit Court Poetry: Vidyākara’s “Subhāṣitaratnakoṣa”’; Cambridge: Harvard University Press, 1965.

৯. Delwar Hassan (ed.), ‘Commercial History of Dhaka’; Dhaka: Dhaka Chamber of Commerce and Industry, 2008.

১০. Edward H. S Cxafer, “The Development of Bathing Customs in Ancient and Medieval China and the History of the Floriate Clear Palace” in ‘Journal of the American Oriental Society, Vol. 76, No. 2 (Apr. – Jun., 1956)’.

১১. Enamul Haque, ‘Chandraketugarh: A Treasure-house of Bengal Terracottas’; Dhaka: ICSB, 2001.

১২. Epigraphia Indica, Vol. XIX (1927-28).

১৩. Epigraphia Indica, Vol. XVIII (1925-26).

১৪. Eusebius Renaudot (Trans.), ‘Ancient Accounts of India and China by Two Mohammedan Travellers, Who Went to Those Parts in the 9th Century’; London: Sam. Harding, 1733.

১৫. Francis Buchanan, ‘An Account of the District of Bihar and Patna in 1811-1812: Vol. II’; Patna: The Bihar and Orissa Research Society, 1939.

১৬. ‘Futuhat-i-Firuz Shahi (edited with introduction, translation & notes Azra Alvi)’; Delhi: Idara-i-Adabiyat-i-Delhi, 1996.

১৭. ‘Gazetteer of the Bombay Presidency, Vol. VI (Rewa Kanta, Narukot, Cambay and Surat)’; Bombay: Government Central Press. 1880.

১৮. Geoffrey Jones, ‘Beauty Imagined: A History of the Global Beauty Industry’; Oxford: Oxford University Press, 2010.

১৯. H. H. Wilson, ‘Rig-Veda-Sanhita, Vol. II, IV, V, VI’; Poona: Ashtekar & Co., 1925, 1927,1928.

২০. H. Verbeek, “Historical Review” in J. Falbe (ed.), ‘Surfactants in Consumer Products: Theory, Technology and Application’ Berlin: Springer-Verlag, 1987.

২১. T. H. Aufrecht (ed.), ‘Halayudha’s Abhidhanaratnamala’; London: Williams & Norgate, 1861.

২২. Haran Chandra Chakladar, ‘Social Life in Ancient India: Studies in Vatsyayana’s Kamasutra’; Calcutta: Greater India Society, 1929.

২৩. Herodotus (Translated by George Rawlinson), ‘The Histories’; Moscow: Roman Roads Media, 2013.

২৪. Irfan Habib, ‘Technology in Medieval India, c. 650-1750’; New Delhi: Tulika Books, 2009.

২৫. I-Tsing (Trans. by J. Takakusu), ‘A Record of the Buddhist Religion as Practised in India and the Malay Archipelago (A.D. 671-695)’; Oxford: Clarendon Press, 1896, Chapter X.

২৬. J. F. Fleet, ‘The Date of the Rajasekhara’.

২৭. James Wise, ‘Notes on The Races, Castes, and Trades of Eastern Bengal’; London: Harrison and Sons, 1883.

২৮. Luis Spitz, “The History of Soaps and Detergents” in Luis Spitz (ed.), ‘SODEOPEC: Soaps, Detergents, Oleochemicals, and Personal Care Products’; Champaign: AOCS Press, 2004.

২৯. Martin Levey, “The Early History of Detergent Substances: A Chapter in Babylonian Chemistry” in ‘Journal of Chemical Education, vol. 31, 1954’.

৩০. Michael Willcox, “Soap” in Hilda Butler (ed.), ‘Poucher’s Perfumes, Cosmetics and Soaps’ Dordrecht/Boston/London: Kluwer Academic Publishers, 2000, 10th ed., first pub., 1923.

৩১. P. K. Gode, ‘Studies in Indian Cultural History, Vol. III’; Poona: Bhandarkar Oriental Research Institute, 1969.

৩২. R. Shamasastry (tran.), ‘Kautilya’s Arthasastra’; Mysore: The Wesleyan Mission Press, 1929.

৩৩. Richard Burton & F. F. Arbuthnot (tran.), ‘The Kama Sutra of Vatsyayana’; London: George Allen & Unwin, 1985.

৩৪. Saifuddin Chowdhury, ‘Early Terracotta Figurines of Bangladesh’; Dhaka: Bangla Academy, 2000.

৩৫. Taponath Chakravarty, ‘Food and Drink in Ancient Bengal’; Calcutta: Firma K. L. Mukhopadhyay, 1959.

৩৬. ‘The Kama Sutra of Vatsyayana’; Benares, 1883-1925.

৩৭. Varaha Mihira (trans. and notes V. Subrahmanya Sastri and M. Ramakrishna Bhat), ‘Brhat Samhita’; Bangalore: V.B. Soobbiah & Son, 1946.

৩৮. Wilfred H. Schoff (trans.), ‘The Periplus of the Erythraean Sea: Travel and Trade in the Indian Ocean by a Merchant of the First Century’; London, Bombay and Calcutta: Longmans, Green and Co., 1972.

৩৯. অতীন্দ্র মজুমদার, ‘মধ্য ভারতীয়-আর্য ভাষা ও সাহিত্য’; কলিকাতা: নয়া প্রকাশ, ১৪০৪।

৪০. অতুল সুর, ‘বাঙালীর নৃতাত্ত্বিক পরিচয়’; কলিকাতা: জিজ্ঞাসা, ১৯৭৭।

৪১. ‘অমরকোষ (ম˜ গুরুনাথ বিদ্যানিধি ভট্টাচার্য সম্পা.), ২য় কাণ্ডে বৈশ্যবর্গঃ ৪০-৭১’; কলিকাতা: সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার, ১৪১৭ বঙ্গাব্দ।

৪২. অমলেন্দু মিত্র, ‘রাঢ়ের সংস্কৃতি ও ধর্মঠাকুর’; কলিকাতা, ফার্মা কে. এল. মুখোপাধ্যায়, ১৯৭২।

৪৩. আবদুল কাদির (সম্পা.), ‘রোকেয়া-রচনাবলী’; ঢাকা: বাংলা একাডেমি, ২০১৫।

৪৪. আবদুল মমিন চৌধুরী, ‘প্রাচীন বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি’; ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স, মার্চ ২০১২।

৪৫. ইরফান হাবিব, “ইতিহাস-গবেষণায় প্রযুক্তি-চর্চার গুরুত্ব”, ইরফান হাবিব (সম্পা.), ‘মধ্যকালীন ভারত: প্রথম খণ্ড’; কলকাতা: কে পি বাগচী অ্যান্ড কোম্পানী, ২০০৭।

৪৬. ওয়াকিল আহমদ, ‘লোকজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি’; ঢাকা: গতিধারা, ২০১০।

৪৭. কেতকাদাস-ক্ষেমানন্দ (যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য্য সম্পা.), ‘মনসা-মঙ্গল, প্রথম খণ্ড’; কলিকাতা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৪৩।

৪৮. ‘কৌটিলীয় অর্থশাস্ত্র (অনু. রাধাগোবিন্দ বসাক)’; কলকাতা: সংস্কৃত বুক ডিপো, ২০১৫।

৪৯. কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্য, ‘তরাই-ডুয়ার্সের লোকায়ত শব্দকোষ’; কলকাতা: প্যাপিরাস, ২০০৬।

৫০. ‘খনার কৃষি ও ফল সংক্রান্ত বচন’; ঢাকা: নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, ২০১১।

৫১. গিরীশচন্দ্র বেদান্ততীর্থ, “প্রাচীন শিল্প-পরিচয়”, ‘সাহিত্য, বর্ষ ২৪, ১ম সংখ্যা (বৈশাখ ১৩২০)’, পৃ. ৬-১২ এবং ‘বর্ষ ২৪, ২য় সংখ্যা (জ্যৈষ্ঠ ১৩২০)’।

৫২. জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী, ‘আর্যসপ্তশতী ও গৌড়বঙ্গ’; কলকাতা: সান্যাল এন্ড কম্পানী, ১৩৬৭।

৫৩. তপতী রানী সরকার, ‘বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার: অনার্যভাষী জনগোষ্ঠীর প্রভাব’; ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০১৩।

৫৪. তুষার কান্তি পাণ্ডে (সম্পা.), ‘চাণক্য শ্লোক, সাতশ প্রবাদ ও খনার বচন’; কলকাতা: গ্রন্থনা, ২০০২।

৫৫. নগেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, ‘রাজশেখর ও কাব্য—মীমাংসা’; কলকাতা: বিশ্বভারতী, ১৯৬০।

৫৬. নীলরতন মুখোপাধ্যায় (সম্পা.), ‘চণ্ডীদাসের পদাবলী’; কলিকাতা: বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ মন্দির, ১৩২১ বঙ্গাব্দ।

৫৭. নীহাররঞ্জন রায়, ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস: আদিপর্ব’; কলকাতা: দেজ পাবলিশিং, ১৪০২ বঙ্গাব্দ।

৫৮. পঞ্চানন তর্করত্ন (সম্পা. ও অনু.), ‘বৃহদ্ধম্মর্পুরাণম্; কলিকাতা: কেবলরাম চট্টোপাধ্যায়, ১৩০০।

৫৯. ‘বাংলা একাডেমি ব্যাবহারিক অভিধান’।

৬০. বিজয় গুপ্ত (বসন্ত কুমার ভট্টাচার্য্য সংক.), ‘পদ্মপুরাণ বা মনসা মঙ্গল’; কলিকাতা: শুধাংশ সাহিত্য মন্দির, ১৩৪২ বঙ্গাব্দ।

৬১. ‘বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান (তৃতীয় খণ্ড, ভ-হ)’; ঢাকা: বাংলা একাডেমি, ২০১৪।

৬২. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘পথের পাঁচালী’; ঢাকা: চৌধুরী এণ্ড সন্স, ২০০৬।

৬৩. ভারতচন্দ্র রায়, ‘অন্নদামঙ্গল’, কলিকাতা: প্র. নে., ১৭৭৫ শক।

৬৪. মুকুন্দরাম চক্রবর্তী (সম্পা. সুকুমার সেন), চণ্ডীমঙ্গল, নতুন দিল্লি: সাহিত্য অকাদেমি, ২০১৩।

৬৫. মানিকরাম গাঙ্গুলী (বিজিতকুমার দত্ত ও সুনন্দা দত্ত সম্পা.), ‘ধর্মমঙ্গল’; কলিকাতা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬০।

৬৬. মোকারম হোসেন, ‘সাবানের গাছ’; দৈনিক সমকাল, ঢাকা, ২৪ নভেম্বর ২০১৯।

৬৭. মলয় রায়, ‘বাঙালির বেশবাস: বিবর্তনের রূপরেখা’; কলকাতা: মনফকিরা, ২০২০ (প্রথম প্রকাশ ২০১৩)।

৬৮. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ‘বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত’; ঢাকা: মাওলা ব্রাদার্স, ২০১০।

৬৯. রোমিলা থাপর [থাপার], “ক্রমাগত স্মরণ করাতে হবে”, ‘দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা (সাক্ষাৎকারভিত্তিক উপ-সম্পাদকীয়), ১৫ আগস্ট ২০২১ খ্রি.’; কলকাতা।

৭০. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘ঘরে-বাইরে’; কলিকাতা: বিশ্বভারতী গ্রন্থালয়, ১৯২৬, চতুর্থ সং. (১ম প্রকাশ ১৯১৫)।

৭১. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস প্রথম খণ্ড [প্রাচীন যুগ]’; কলকাতা: জেনারেল প্রিন্টার্স য়্যান্ড পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৯২।

৭২. লাবিবা আলী, “মুসলিম আত্মপরিচয় (১৩০০-১৬০০ সা. অব্দ)”, আবদুল মমিন চৌধুরী (সম্পা.), ‘বাংলাদেশের ইতিহাস: সুলতানি ও মোগল যুগ (আনু. ১২০০-১৮০০ সা. অব্দ), দ্বিতীয় খণ্ড’; ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০২০।

৭৩. সুকুমারী ভট্টাচার্য, ‘প্রাচীন ভারত’; কলকাতা: ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রা. লি., ২০০৯।

৭৪. ‘সাঁওতালি বাংলা সমশব্দ অভিধান (সংকলন ক্ষুদিরাম দাশ)’; কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ১৯৯৮।

৭৫. সত্যনারায়ণ দাশ, ‘বাংলায় দ্রাবিড় শব্দ (ব্যুৎপত্তিকোষ)’; কলিকাতা, পুস্তক বিপণি, ১৯৯৩।

৭৬. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ‘বাঙ্গালা ভাষাতত্ত্বের ভূমিকা’; কলিকাতা: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৩৪।

৭৭. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, “পোশাক, অলংকরণ ও প্রসাধনী’”, সুফি মোস্তাফিজুর রহমান (সম্পা.), ‘প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য’; ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৭।

৭৮. সুবোধচন্দ্র মজুমদার (সম্পা. ও অনু.), ‘শ্রীশ্রীব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ’; কলিকাতা: দেব সাহিত্য কুটীর, ১৩৬০।

৭৯. স্বদেশরঞ্জন চক্রবর্ত্তী, “প্রাচীন বাঙলা কাব্যে বস্ত্র-শিল্প”, ‘বঙ্গশ্রী, চৈত্র ১৩৪৬ (১ম খণ্ড ৩য় সংখ্যা)’।

৮০. সুমিতা দাস, ‘ভারত থেকে ম্যাঞ্চেস্টার: প্রথম বিশ্বায়িত পণ্য-সুতিবস্ত্র’; কলকাতা: পিপলস্ বুক সোসাইটি, ২০২০।

৮১. হেপী রায়, “প্রাকৃতিক সাবান শিমুল ফুল”, ‘আমাদের পরিবেশ, মার্চ ২০১৪, বর্ষ ১৪, সংখ্যা ৩’।

৮২. সাক্ষাৎকার: মো. ফকরুল ইসলাম (৫৮), চৌহালী, সিরাজগঞ্জ, তারিখ: ২২/১১/২০২১; মনোয়ারা বেগম (৫৫), মিরপুর—১, ঢাকা, তারিখ: ০২/০১/২০১৪; হামিদা খাতুন (৫২), মালাহার, ধামইরহাট, নওগাঁ, তারিখ: ১৫/০৩/২০১৭; ছহিরন নেছা (৮৫), টেগরা, বিরামপুর, দিনাজপুর, তারিখ: ০৭/১০/২০১৫; মো. মারুফ বিল্লাহ (৪৫), উত্তর শোলাবাড়িয়া, সাঁথিয়া, পাবনা, তারিখ: ০৮/০৫/২০২৩।

মন্তব্য তালিকা - “বাংলার প্রত্ন-প্রযুক্তি: প্রসঙ্গ পোশাক ধৌতকরণ”

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।