সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (সপ্তম পর্ব)

শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (সপ্তম পর্ব)

আগস্ট ১২, ২০২০ ৭৬৫ 0

পূর্ববর্তী পর্বের লিংক : শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ (ষষ্ঠ পর্ব)

প্রতিদিন ক্যামেরা হাতে দেশ বিদেশের প্রচুর সাংবাদিক তখন জড়ো হচ্ছেন উশিকু ডিটেনশন ক্যাম্পে। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ কোনো অবস্থাতেই ববি ফিশারের সাথে তাঁদের দেখা করার অনুমতি দিতে রাজি নন। প্রথমে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় তারপর গায়ের জোরে সবাইকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো কারারক্ষীরা। কোনোক্রমে একজন স্থানীয় রিপোর্টার ভিতরে ঢুকে অনেক দূর থেকে ববি ফিশারকে দেখতে পেলেন। চিৎকার করে  ববি ফিশার জানালেন তাঁকে একটা জানলা বিহীন ছোট ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো ঢোকে না সেই কুঠুরিতে। অনেক উপরে একটা ছোট ঘুলঘুলি ছাড়া কিছু নেই। সারাক্ষণ ঘরের মধ্যে আশেপাশের সেলগুলো থেকে তীব্র কটু তামাকের গন্ধ তাঁকে অস্থির করে তুলছে।

কানাডিয়ান সাংবাদিক জন বসনিচ

এদিকে প্যারিসে বসে সব খবরই পাচ্ছিলেন ফিশারের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দাবাড়ু বরিস স্প্যাসকি। ফিশারের ওপর কোথাও যেন একটা স্নেহের পরশ কাজ করতো তাঁর মনে। তিনি চুপ করে বসে রইলেন না। ববি ফিশারের মুক্তি প্রার্থনা করে খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের কাছে তাঁর চিঠি পাঠানোর ঘটনা সবিস্তারে উল্লেখ করেছি একদম শুরুতে।

এদিকে প্রাথমিক ভাবে ববি ফিশারের কারাবাসের মেয়াদ ষোলো দিন ধার্য হলেও পরে সেটা অনির্দিষ্ট কালের জন্যে বাড়িয়ে দিলো জাপান সরকার।  উশিকুর বন্দী নিবাসে মিয়কো ওয়াতাই বেশ কয়েকবার দেখা করলেন ফিশারের সাথে। জাপানের সাথে আমেরিকার বন্দী প্রত্যার্পণ চুক্তি ছিল। তাই ববি ফিশারের আশঙ্কা ছিল জাপান সরকার যে কোনো সময় তাঁকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চালান করে দিতে পারে। সেটাকে এড়াতে চাইছিলেন তিনি। জাপান চেস এসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন হওয়ার সুবাদে দেশে মিয়কো ওয়াতাই-এর প্রভাব ছিল সর্বস্তরে। তিনি ফিশারের জন্যে কয়েকজন ভালো আইনজীবীর ব্যবস্থা করলেন। একই সাথে কানাডিয়ান সাংবাদিক জন বসনিচের উদ্যোগে জাপানে ‘কমিটি টু ফ্রি ববি ফিশার’-এর মেম্বাররা সমস্ত জাপান জুড়ে ববি ফিশারের মুক্তির দাবিতে জনমত গড়ে তুলতে লাগলেন। এদিকে পার্লামেন্টে জাপানের আইনমন্ত্রী ববি ফিশারকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিলেন।

মিয়কো ওয়াতাই

আইনজীবীরা সমস্ত কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখলেন যে সেই বছর ১৫-ই এপ্রিল ববি ফিশার যখন জাপানে এসেছিলেন তখন তাঁর কাছে নব্বই দিন মেয়াদের বৈধ ভিসা ছিল। এছাড়াও ২০০৩ সালের ১১-ই ডিসেম্বর তারিখে ফিলিপিন্সের ম্যানিলায় মার্কিন দূতাবাস থেকে তার পাসপোর্ট বাতিল করার কথা জানিয়ে যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল সেটা ববি ফিশারের কাছে কোনোদিনই পৌঁছায়নি। তবে ববি ফিশারের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানেরও আশু প্রয়োজন ছিল। কারণ, সেই মুহূর্তে ববি ফিশার আইনত কোনো দেশেরই নাগরিক নন।

ববি ফিশার আইন আদালতের ঝামেলায় যেতে চাননি। তাই তিনি প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সেক্রেটারি কলিন পাওয়েল-কে চিঠি লিখে তাঁর নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু যথারীতি তাঁর সেই অনুরোধে কান দিলো না কেউ। শেষ পর্যন্ত মিয়কো ওয়াতাই আর সাংবাদিক জন বসনিচের পরামর্শ মেনে জাপানের আইনমন্ত্রীর ঘোষণার বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করলেন ববি ফিশারের আইনজীবীরা।

এদিকে মামলা চলাকালীন অবস্থায় ববি ফিশার জার্মানির চ্যান্সেলর গেরহার্ড স্ক্রোডার-কে চিঠি লিখে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। জার্মানির সাথে আমেরিকার বন্দী প্রত্যার্পণ চুক্তি ছিল। তাছাড়া ববি ফিশারের হিটলার প্রীতির খবর ছিল বিশ্ববিদিত। জার্মানির তরুণ প্রজন্মের একাংশের মধ্যে এডলফ হিটলারের জনপ্রিয়তা তখন নতুন করে মাথা চাড়া দিচ্ছে। সরকার কঠোর ভাবে এই নব্য নাৎসিজম ঠেকাতে তখন বদ্ধপরিকর। তাই জার্মান সরকারের পক্ষে তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব ছিল না। নিরুপায় ববি ফিশার আইসল্যান্ড সরকারের কাছে তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। আইসল্যান্ড গভর্মেন্ট কিন্তু এই ব্যাপারে যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা নিলেন। কারণ, ১৯৭২ সালে বরিস স্প্যাসকি আর ববি ফিশারের সেই ঐতিহাসিক খেতাবি লড়াইয়ের আগে বিশ্বের মানচিত্রে আইসল্যান্ডের কোনো গুরুত্বই ছিল না। মাত্র তিন লক্ষ জনসংখ্যা বিশিষ্ট ক্ষুদ্র দেশটাকে বিখ্যাত করে তুলেছিলেন ববি ফিশার। তাই ফিশারের প্রতি তাঁদের দেশের যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা আর বিশেষ সন্মান ছিল। তবে তাঁরা এলিয়েন পাসপোর্টে ববি ফিশারকে তাঁদের দেশে আশ্রয় দিতে রাজি হলেন। পাশে দাঁড়িয়ে সমস্ত ব্যাপারটাই সামলাচ্ছিলেন মিয়কো ওয়াতাই।

‘জাপান সরকার বনাম ববি ফিশার’ মামলা দীর্ঘায়িত হলো। ববি ফিশারের হয়ে আদালতে জোরালো সওয়াল করলেন জাপানের বিখ্যাত আইনজীবী মাসাকো সুজুকি। অবশেষে ২০০৫ সালের মার্চ মাসের তৃতীয সপ্তাহে কোর্টের প্রধান বিচারপতি ফিশারকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ জারি করলেন। শুধু তাই নয়, ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ববি ফিশারকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়ার জন্যে জাপান সরকারকে আদেশ দিলেন তিনি। জাপানের মানুষজনও সেটাই চাইছিলেন। ফলে দেশে একটা খুশির চোরাস্রোত বয়ে গেলো।

কিন্তু সমস্যা একটা রয়েই গেলো। কারণ, জাপান গভর্মেন্টের কাছে ববি ফিশারের এই আইস্ল্যান্ডিক এলিয়েন পাসপোর্টের ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য ছিল না। প্রয়োজন ছিল পূর্ণ নাগরিকত্বের।  মার্চ মাসের বাইশ তারিখ মঙ্গলবার সকালের অধিবেশনে আইসল্যান্ড পার্লামেন্টে ববি ফিশারকে পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে প্রস্তাব আনা হলো। ভোটাভুটিতে ৭০ শতাংশ ভোট পড়লো ফিশারের পক্ষে। আইসল্যান্ডের স্থানীয় সময় ঠিক দুপুর দুটো বেজে তিরিশ মিনিটে ববি ফিশারের পূর্ণ নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথিপত্রে সই করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী হ্যালটর উসক্রিমসন আর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন স্টেইনার গন্যাউগসন। দেশের প্রেসিডেন্ট রেগনার গ্রিমসন বিদেশে ছিলেন বলে তাঁর হয়ে কাগজ পত্রে সই করলেন আইসল্যান্ড পার্লামেন্ট কমিটির স্পিকার হ্যাল্ডার ব্লনডেল। এর ঠিক এক ঘণ্টা বাদে আইসল্যান্ড স্টেট গেজেটে এই ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণী সরকারি ভাবে প্রকাশ করা হলো। আইসল্যান্ড চেস ফেডারেশন নতুন পাসপোর্টের ফটোকপি সমেত ববি ফিশারের নাগরিকত্ব সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র তাঁদের দূতাবাসের মাধ্যমে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে দিলেন। একটা করে কপি পাঠানো হলো মিয়কো ওয়াতাই-এর কাছে। সমস্ত কাজটাই সারা হলো অত্যন্ত গোপনে।

সেদিনই সন্ধ্যায় টোকিওয় কানাডিয়ান সাংবাদিক জন বসনিচ প্রেস কনফারেন্স করে সারা বিশ্বকে জানালেন আগামী ২৪ তারিখ, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ন’টায় ববি ফিশারকে উশিকু ডিটেনশন সেন্টার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। সেখান থেকে তাঁকে সাথে নিয়ে জাপানের জাতীয় চেস চ্যাম্পিয়ান মিস মিয়কো ওয়াতাই গাড়িতে করে সকাল দশটা নাগাদ টোকিওর নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছাবেন। এয়ারপোর্টেই প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন প্রাক্তন ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়ান ববি ফিশার। এরপর ঠিক দুপুর বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিটে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে টোকিও ছেড়ে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেন পৌঁছাবেন তিনি। সম্পূর্ণ যাত্রাপথে ফিশারের সফরসঙ্গী হবেন মিয়কো ওয়াতাই। কোপেনহেগেন এয়ারপোর্টে ববি ফিশারকে অভ্যর্থনা জানাবেন আইসল্যান্ড চেস ফেডারেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা। এরপর তাঁদের দুজনকে সাথে নিয়ে সবাই চলে যাবেন আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইকিয়াভিক শহরে ফিশারের নতুন ঠিকানায়।

২০০৫ সালের ২৪-শে মার্চ। জাপানের সময় অনুযায়ী ঘড়িতে ঠিক সকাল দশটা বেজে কুড়ি মিনিট। আইসল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে সমস্ত আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে ববি ফিশারের নিরাপত্তার জন্যে দুজন পুলিশ অফিসার অপেক্ষা করছিলেন এয়ারপোর্টের ভেতরে।  গাড়ি থেকে নেমে টোকিওর নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের লাউঞ্জে প্রবেশ করলেন ববি ফিশার। সঙ্গে মিয়কো ওয়াতাই। দুজনকেই ছেঁকে ধরলেন দেশ বিদেশের অসংখ্য সাংবাদিক। কানাডিয়ান সাংবাদিক জন বসনিচের ব্যবস্থাপনায় এয়ারপোর্টেই প্রেস কনফারেন্স করলেন ববি ফিশার। একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। আমেরিকার অন্যায় ভাবে ইরাক আক্রমণ করার তীব্র সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট বুশের মুণ্ডপাত করতে ছাড়লেন না তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মিয়কো ওয়াতাইকে নিজের বান্ধবী বলে উল্লেখ করলেন। এরপর নির্ধারিত সূচি মেনে দুপুর বারোটা চল্লিশের ফ্লাইট ধরে কোপেনহেগেনের উদ্দেশে রওয়ানা দিলেন দু’জন। সাথে রইলেন দুজন আইস্ল্যান্ডিক পুলিশ অফিসার। দীর্ঘ এগারো ঘণ্টার বিরতিহীন বিমানযাত্রা। কোপেনহেগেন বিমানবন্দরে প্রচুর ক্যামেরাম্যান আর ফুলের স্তবক নিয়ে উপস্থিত ছিলেন আইসল্যান্ড চেস ফেডারেশনের কয়েকজন বিশিষ্ট কর্মকর্তা। বিশাল সম্বর্ধনা দেওয়া হলো ববি ফিশারকে। আইসল্যান্ডের টিভি চ্যানেলগুলোয় সবটাই লাইভ সম্প্রচার করা হলো। এরপর সবাইকে নিয়ে বিশেষ চার্টার্ড প্লেন যখন সাড়ে তিন ঘণ্টার ফ্লাইটে সোজা রেইকিয়াভিক এয়ারপোর্টে নামলো তখন আইসল্যান্ডের সময় অনুসারে প্রায় শেষ রাত। বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছিলো। ববি ফিশারকে আরেক প্রস্থ সম্বর্ধনা দিতে এয়ারপোর্টে উপস্থিত ছিলেন রেইকিয়াভিক শহরের মেয়র সহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি।

পরদিন বিকেলে রেইকিয়াভিক শহরের টাউন হলে ববি ফিশারের সম্মানার্থে এক বিশাল সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হলো। সেখানেও সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরলেন ববি ফিশারকে। মিয়কো ওয়াতাইকে পাশে দাঁড় করিয়ে এমনিতে বেশ সপ্রতিভ উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি। হঠাৎ তাল কাটলো আমেরিকান টিভি চ্যানেল ইএসপিএন-এর জেরেমি স্ক্যাপ নামে এক তরুণ সাংবাদিকের একটা নিরীহ প্রশ্নে। জেরেমি জানতে চেয়েছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া ছেড়ে আইসল্যান্ডে থাকতে তিনি স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন কিনা। রাগে ফেটে পড়লেন ফিশার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু বাছা বাছা শব্দবন্ধ ব্যবহার করে বসলেন। প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করে বলে ওঠেন সমস্ত ঘটনাটাই হলো আমেরিকার প্রচ্ছন্ন মদতে তাঁর বিরুদ্ধে এক ইহুদি ষড়যন্ত্র।

বসবাসের জন্যে রেইকিয়াভিক শহরেই একটা বেশ বড়ো সাজানো গোছানো এপার্টমেন্ট দেওয়া হলো ববি ফিশারকে। সেই একই বিল্ডিং-এ পরিবার নিয়ে থাকতেন আইসল্যান্ডের বিখ্যাত লেখক ও পার্লামেন্টের বিশিষ্ট সদস্য গার্ডার সেভার্সন। ববি ফিশারের আইসল্যান্ডের পূর্ণ নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে বিশাল ভূমিকা ছিল সেভার্সনের। কয়েকদিন আইসল্যান্ডে কাটিয়ে জাপানে ফিরে গেলেন মিয়কো ওয়াতাই। গার্ডার সেভার্সনের স্ত্রী ক্রিস্টিন ছিলেন পেশায় একজন ট্রেন্ড নার্স। ববি ফিশারের দেখাশোনার দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিলেন তিনি। গার্ডার সেভার্সনের সাথে খুব গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে ফিশারের। সেভার্সন দম্পতির দুজন সন্তান ছিল। এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলেটার সাথে ফিশারের গভীর স্নেহের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

আইসল্যান্ডে ববি ফিশার ধীরে ধীরে প্রবাসী জীবন যাপন করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে লাগলেন। টোকিও থেকে মাঝে মাঝে মিয়কো ওয়াতাই আসতেন ববি ফিশারের সাথে দেখা করতে। জাপানে বসেও নিয়মিত টেলিফোনে খবর নিতেন ফিশারের। আইসল্যান্ডে খুব বেশি মানুষজনদের সাথে ববি ফিশার মিশতেন না। একটা নির্দিষ্ট ছোট বৃত্তেই ঘোরাফেরা করতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। ম্যাগনাস স্কুলাসন নামে এক মনোবিদের কাছে মাঝে মাঝে যেতেন ববি ফিশার। মনের কথা খুলে বলতেন তাঁর কাছে। আলোচনা হতো বহু বিষয় নিয়ে। ববি ফিশারের কথাবার্তায় চমৎকৃত হয়েছিলেন তিনি। অনেক পরে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ম্যাগনাস স্কুলাসন লিখেছিলেন প্রায় সমস্ত বিষয়ে ফিশারের জ্ঞান ছিল অত্যন্ত গভীর। সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনীতির ব্যাপারে তাঁর বিশ্লেষণ ছিল একজন নিরপেক্ষ সমালোচকের মতো স্বচ্ছ ও যুক্তিসম্মত।

এছাড়াও সেইমি পলসন নামে আইসল্যান্ডের একজন প্ৰাক্তন পুলিশ অফিসারের সাথে অন্তরঙ্গতা ছিল ববি ফিশারের। ১৯৭২ সালে বরিস স্প্যাসকির সাথে রেইকিয়াভিক শহরে খেতাবি লড়াইয়ের সময় ববি ফিশারের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন পলসন। উশিকু ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ফিশারকে টোকিও থেকে এস্কর্ট করে আইসল্যান্ডে নিয়ে আসার জন্যে নারিতা এয়ারপোর্টে এসেছিলেন তিনি।

ধীরে ধীরে ববি ফিশার শান্ত হয়ে উঠলেন। সাংবাদিকদের শত প্ররোচনায়ও আমেরিকা বিরোধী মন্তব্য করতেন না তিনি। চেস নিয়েও বেশি কিছু আলোচনা করতে চাইতেন না। সম্ভবত ফিশার বুঝে গিয়েছিলেন আর কোনোদিনই দেশে ফেরা হবে না তাঁর। ছোটবেলার শহর ব্রুকলিন, মধ্যে যৌবনের লস এঞ্জেলস, সারা আমেরিকা জুড়ে তাঁকে নিয়ে সেই উন্মাদনা, সবই তখন অতীত।

এদিকে ২০০৬ সালের প্রথম দিকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ববি ফিশারের যাবতীয় জিনিসপত্র তাঁকে না জানিয়েই eBay-তে নিলামে বিক্রি করে দেয় মার্কিন আয়কর দফতর।  তিনি ছিলেন জীবন্ত একজন কিংবদন্তী। তাই অসংখ্য ট্রফি, স্মারক, সার্টিফিকেট, মেমেন্টো ছাড়াও তাঁর ব্যবহার করা সামগ্রিগুলো অনেক দামেই কিনে নিলেন অনেকে।  ববি ফিশার কিন্তু এক কানাকড়িও পেলেন না। আমেরিকায় ববি ফিশারের ব্যাংক এক্যাউন্টে পড়ে থাকা অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়। যদিও সেই অর্থের পরিমাণ ছিল যৎসামান্য। ১৯৯২ সালের প্রাইজ মানির একটা বড়ো অংশ ববি ফিশার রেখেছিলেন স্যুইস ব্যাংকে। সেখান থেকে পাওয়া সুদই ছিল তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস। সবচাইতে আশ্চর্য ব্যাপার ঘটলো যখন  আগাম অনুমতি না নিয়েই সেই এক্যাউন্ট বন্ধ করে সমস্ত অর্থ আইসল্যান্ডে ববি ফিশারের ব্যাংকে ট্রান্সফার করে দেয় ইউনিয়ান ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ড। সেই সময় আইসল্যান্ডে প্রচণ্ড মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেওয়ায় ব্যাংকের সুদের হার অনেকটাই কমে গেছে। এই সব ঘটনায় প্রচণ্ড মর্মাহত হন ববি ফিশার।

রেইকিয়াভিক শহরে ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিতে থাকেন ববি ফিশার। খুব সাধারণ মানের জীবন যাপন করতেন তিনি। তবে প্রবাসী জীবনেও তিনি চলনে বলনে, আদাব কায়দায়, পোশাক পরিচ্ছদে ছিলেন একজন প্রকৃত আমেরিকান। সাংবাদিকদের যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতেন। বিভিন্ন কফি শপে আর পাবলিক লাইব্রেরিগুলোয় তাঁকে প্রায়ই দেখতে পেতেন আইসল্যান্ডের মানুষজন। তাঁদের সবার কাছেই ববি ফিশার ছিলেন একজন বিশিষ্ট সেলিব্রিটির মতো। ‘বোকিন’ বুকস্টলে সপ্তাহে রুটিন মাফিক নির্দিষ্ট দু’দিন আসতেন তিনি। কোণার দিকে একটা টেবিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুখ গুঁজে বসে একমনে বই পড়তেন। ইতিহাস থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন বিখ্যাত মানুষদের জীবনী, সবকিছুতেই পড়তেন খুব আগ্রহ নিয়ে। ‘ডেনিস দ্য মেনাস’ কমিক সিরিজের বইগুলোও ছিল তাঁর পছন্দের তালিকায়। শুধু তাঁরই জন্যে খাস আমেরিকা থেকে সেগুলো আনিয়ে দিতেন বুকস্টলের কর্তৃপক্ষ। পারতপক্ষে লোকজন এড়িয়ে চলতে চাইলেও কেউ অটোগ্রাফের খাতা এগিয়ে দিলে হাসি মুখে সই করে দিতেন ফিশার। রাস্তায় কেউ তাঁকে দেখে উইশ করলে প্রত্যুত্তরে তিনিও সামান্য হেসে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানাতে ভুলতেন না। রেইকিয়াভিক শহরের মানুষরা সসম্ভ্রমে তাকাতেন তাঁর দিকে। সখের ফটোগ্রাফার থেকে চিত্র সাংবাদিক সবারই অত্যন্ত পছন্দের বিষয় ছিলেন তিনি। আইসল্যান্ডের বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় নিয়মিত ছবি ছাপা হতো ববি ফিশারের। কোথাও তাঁর আগাম আসার খবর থাকলে ক্যামেরা হাতে ফটো শিকারিরা লুকিয়ে অপেক্ষা করে থাকতেন। সেই কারণে কোনো রেস্টুরেন্টে কফি টেবিল বুক করা থাকলেও ববি ফিশার নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে আসতেন না। প্রায়ই  বেশ খানিকক্ষণ দেরি করে হাজির হতেন। তবে মানুষজন এড়িয়ে চললেও মাঝে মধ্যে ঘনিষ্ট বন্ধু বান্ধবের সাথে ফিশারকে কফিশপে হাসি ঠাট্টায় মেতে উঠতে দেখেছেন অনেকে। এমনকি মেজাজ ভালো থাকলে মাঝে মধ্যে ঘনিষ্ঠ মহলে দু’এক কলি গান গেয়েও শোনাতেন তিনি।

টোকিও থেকে মিয়কো ওয়াতাই মাঝে মাঝেই এসে উঠতেন রেইকিয়াভিকে ফিশারের এপার্টমেন্টে। বন্ধুদের সাথে আড্ডায় তাঁকেও তখন সাথে নিয়ে যেতেন ববি ফিশার। পরিচিতদের কাছে মিয়কো ওয়াতাইকে নিজের বান্ধবী বলেই পরিচয় দিতেন তিনি। বন্ধুত্বের বাইরেও তাঁদের দু’জনের মধ্যে কোনো বিশেষ সম্পর্ক আছে কিনা সেটা নিয়ে বিশেষ কেউ মাথাও ঘামায়নি। তবে মিয়কো আইসল্যান্ডে এলেই সক্রিয় হয়ে উঠতো রেইকিয়াভিকের জাপানি দূতাবাস। সন্তর্পণে তাঁরা নজরদারি চালাতো দু’জনের উপর। সাংবাদিকরাও তাঁদের দুজনের ভিতরের আসল সম্পর্ক জানার জন্যে যথেষ্ট উৎসুক ছিলেন। ফিশারের পরিচিতদের কাছে নানা অছিলায় সুযোগ পেলেই আসল খবরটা স্কুপ করার চেষ্টা চালিয়ে যেতেন তাঁরা। কিন্তু ববি ফিশারের নির্দেশে তাঁর বন্ধুরা নিউজ মিডিয়ার শত প্ররোচনায়ও কোনোদিন মুখ খোলেননি।

১৯৯২ সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মন্টিনিগ্রোতে আসার পর থেকে ববি ফিশার আর আমেরিকায় ফিরতে পারেননি। সত্যি কথা বলতে, এই বিরাট সময়টা তিনি এক দেশ থেকে আরেক দেশে পালিয়েই বেড়িয়েছেন। এই নিঃসঙ্গ এক যাযাবরের মতো জীবন যাপন ফিশারের মন আর শরীর স্বাস্থ্যের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিলো। ২০০৭ সালের প্রথম দিক থেকেই দ্রুত তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ জনিত অসুখে ভুগছিলেন তিনি। এবার কিডনির সমস্যাটাও মাথাচাড়া দিতে আরম্ভ করলো। ববি ফিশারের একটা অন্য মানসিক সমস্যাও ছিল। ডাক্তারদের একদমই বিশ্বাস করতেন না তিনি। তাই পারতপক্ষে তিনি ডাক্তার দেখাতে চাইতেন না।  সেই বছরই অক্টোবর মাসে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে জাপান থেকে ছুটে এলেন মিয়কো ওয়াতাই। ববি ফিশারকে জোর করে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। কয়েকদিন হাসপাতালে থেকে খানিকটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলেন তিনি। তখন তিনি প্রায় চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়েছেন। ফিশারকে সেবা শ্রুশ্রূষা করার জন্যে মিয়কো এবার থেকে গেলেন রেইকিয়াভিকে। কিন্তু ববি ফিশারকে নিয়মিত ওষুধপত্র খাওয়ানো কিংবা প্রয়োজনে চেকআপে নিয়ে যাওয়া ছিল ভীষণ দুরূহ ব্যাপার। স্মৃতি শক্তিও হারিয়ে যাচ্ছে তখন। শেষের দিকটায় ভুল বকতে আরম্ভ করলেন। সম্ভবত জীবনের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন ববি ফিশার। ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ বুধবার সন্ধ্যায় রেইকিয়াভিক শহরের ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অফ আইসল্যান্ড’-এ ভর্তি করা করা হলো তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টাই ব্যর্থ করে পরদিন মানে ১৭-ই জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকালে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চির নিদ্রায় ঢলে পড়লেন দাবার দুনিয়ায় এক বিস্ময়কর প্রতিভা ববি ফিশার। দাবার বোর্ডে ৬৪-টা ঘর থাকে। দাবাই ছিল ববি ফিশারের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। আশ্চর্য সমাপতন দেখুন। ৬৪ বছর বয়সেই মারা গেলেন তিনি।

ববি ফিশারের ইচ্ছানুযায়ী তার মৃত্যু সংবাদ সযত্নে মিডিয়ার কাছে গোপন রাখা হয়। তিনদিন তাঁর মরদেহ রাখা থাকলো হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজারে। অবশেষে ২১-শে জানুয়ারি সোমবার গভীর রাতে গার্ডার সেভার্সন আর মিয়কো ওয়াতাই মিলে গাড়িতে ফিশারের কফিন-বন্দী দেহ নিয়ে পৌঁছালেন রেইকিয়াভিক থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে সেলফোস বলে একটা ছোট শহরতলিতে। গাড়িতে তাঁদের সাথে আরো তিনজন ব্যক্তি ছিলেন। দু’জন কবর খোঁড়ার লোক আর ফ্র্যাঙ্ক জ্যাকব রোনাল্ড নামে একজন পাদ্রি।  সেখানে লৌগার্ডালীর বলে ছোট একটা ক্যাথলিক চার্চ ছিল। এমনিতে ছোট হলেও চার্চের চারদিকে ছড়ানো জায়গা জুড়ে ছিল প্রশস্ত ফুলের বাগান। সেই বাগানের একপ্রান্তে দেয়াল ঘেঁষে খুব সন্তর্পণে খুঁড়ে ফেলা হলো খানিকটা জায়গা। অবশেষে ক্যাথলিক রীতিনীতি মেনে কফিনের মধ্যে শায়িত ববি ফিশারকে সমাধিস্থ করার পর্ব সাঙ্গ করে চুপি চুপি সবাই যখন চার্চের গেট দিয়ে বেরিয়ে এলেন তখন প্রায় ভোর হয় হয়। যদিও ববি ফিশার ক্যাথলিক ছিলেন না তবুও এর চাইতে বেশি ব্যবস্থা করা গেলো না। সমস্ত ব্যাপারটাই সম্পন্ন করা হলো অত্যন্ত গোপনে।

কিন্তু শত চেষ্টা করেও ঘটনাগুলো গোপন রাখা গেলো না। পরদিন সকালেই লৌগার্ডালীর ক্যাথলিক চার্চের পরিচালন মণ্ডলীর প্রেসিডেন্ট তথা আইসল্যান্ড পার্লামেন্ট মিনিস্টার ক্রিস্টিন ফ্রিডফিনসন-এর প্রথম চোখে পড়ে সদ্য খোদাই করা সমাধিটা। একটু খোঁজ খবর নিতেই সম্পূর্ণ ঘটনাটা সামনে চলে আসে। মুহূর্তের মধ্যেই দাবানলের মতো খবরটা ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে। পৃথিবীর সমস্ত টিভি চ্যানেলে আর নিউজ প্রিন্টে হেড লাইনে জায়গা করে নিলো ববি ফিশারের মৃত্যু সংবাদ। সাংবাদিকদের সামনে ক্রিস্টিন ফ্রিডফিনসন বললেন যে হতে পারে চার্চের চত্বরে মরদেহ সমাধিস্থ করার জন্যে প্রয়োজনীয় আগাম অনুমতি নেওয়া হয়নি কিন্তু ববি ফিশারের মতো একজন বিরল প্রতিভাবান ব্যক্তিত্বের শেষ বিশ্রামস্থল ও স্থায়ী বাসিন্দা হিসাবে এই জায়গাটা বেছে নেওয়ার জন্যে আমরা চার্চের কর্তৃপক্ষ হিসাবে অত্যন্ত গর্বিত।

আইসল্যান্ডে ববি ফিশারের সমাধি ফলক

ববি ফিশারের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে চমকে উঠলেন পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষজন। শোক প্রস্তাব আর বিবৃতির বন্যা বয়ে গেলো। বরিস স্প্যাসকি, আনাতোলি কারপভ, গ্যারি কাসপারভ থেকে আরম্ভ করে সেই সময় পর্যন্ত জীবিত সমস্ত প্রাক্তন দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানরা আলাদা আলাদা বিবৃতি দিয়ে ববি ফিশারকে সর্বকালীন বিস্ময়কর প্রতিভাধর চেস খেলোয়াড় বলে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন। সেই সময় ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়ান ছিলেন ভারতের বিশ্বনাথন আনন্দ। তিনিও ববি ফিশারের কীর্তিকে সম্মান জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমের কাছে বিবৃতি দিলেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও বিশিষ্ট মানুষজন ববি ফিশারের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করে আন্তরিক ভাবে শোক জানালেন। সারা জীবনে অসংখ্য মানুষজনের সংস্পর্শে এসেছিলেন ফিশার। পরে তাদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে ববি ফিশারের স্মৃতিচারণ করে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। অসংখ্য বই লেখা হয়েছে তাঁকে নিয়ে। ফিশারের মৃত্যুর পর আইসল্যান্ডের জাতীয় পতাকা দুদিন অর্ধনমিত রাখা হয়।

আমেরিকা থেকে সরকারি ভাবে কোনো বিবৃতি না দেওয়া হলেও ইউনাইটেড স্টেটস চেস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট বিল গয়েচবার্গ দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন ববি ফিশার ছিলেন অফিসিয়ালি একমাত্র আমেরিকান ওয়ার্ল্ড চেস চ্যাম্পিয়ান। তাঁর বিরল প্রতিভার জোরে ও একক প্রচেষ্টায় তিনি ১৯৭২ সালে দাবার দুনিয়ায় সোভিয়েত রাশিয়ার একাধিপত্যকে রুখে দিয়েছিলেন। তাঁর ক্যারিশমা আর জনপ্রিয়তার কারণেই আমেরিকান তরুণ আর যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে দাবা খেলার প্রচণ্ড প্রসার ঘটে। ফিশার বুমের জন্মদাতা তিনি। আমেরিকার ক্রীড়া জগতে তিনি চিরস্মরণীয় হয়েই থাকবেন।

ববি ফিশার তাঁর জীবনের শেষ ষোলো বছর তার নিজের দেশ আমেরিকায় ফিরতে পারেননি। শেষের কয়েকটা বছর আইসল্যান্ডে আপাত নিরুপদ্রব জীবন কাটানোর কথা বাদ দিলে ১৯৯২ সালের পর থেকে তিনি মার্কিন প্রশাসনের রোষানল থেকে বাঁচার জন্যে পালিয়ে বেড়িয়েছেন এক দেশ থেকে আরেক দেশে। কিন্তু জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই কখনো নতি স্বীকার করেননি। তিনি কোনোদিনই হারতে চাইতেন না। আমৃত্যু তিনি অপরাজিতই রয়ে গেলেন।

আজীবন বিতর্ক তাড়া করে বেড়িয়েছে ববি ফিশারকে। কিন্তু মৃত্যুর পরেও বিতর্কের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেলেন না তিনি। সেই কাহিনীও কিন্তু কোনো অংশে কম রোমাঞ্চকর নয়।

পরবর্তী পর্বের লিংক : শতাব্দীর সেরা দ্বৈরথ ( অষ্টম এবং শেষ পর্ব)

মন্তব্য করুন

আপনার ইমেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।