সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

ইতিহাসচিন্তা

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীন যুগে ইতিহাস লেখকদের যখন প্রায় কোন সন্ধানই পাওয়া যায় না, তখন মধ্যযুগের কাশ্মীরের চার সংস্কৃত ইতিবৃত্তকার – কল্হণ (দ্বাদশ শতাব্দী সাধারণাব্দ), জোনরাজ (১৩৮৯? - ১৪৫৯ সাধারণাব্দ), শ্রীবর (পঞ্চদশ - ষোড়শ শতাব্দী সাধারণাব্দ) ও শুকের (ষোড়শ শতাব্দী সাধারণাব্দ) লেখা ‘রাজতরঙ্গিণী’ নামে পরিচিত অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিক ইতিবৃত্ত গ্রন্থমালা আমাদের বিস্মিত করে। শুধু তাই নয়, এই চার ইতিবৃত্তকারদের জীবন মধ্যযুগের কাশ্মীরের রাজশক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকার কারণে তাঁদের লেখা ইতিবৃত্ত প্রামাণিকতার নিরিখেও মূল্যবান। সপ্তদশ শতকে লিপিবদ্ধ ‘রাজতরঙ্গিণী’ গ্রন্থমালার শারদা পাণ্ডুলিপিগুলি আজও মধ্যযুগের কাশ্মীরের চার প্রতিভাশালী সংস্কৃত কবির ইতিবৃত্ত রচনার দক্ষতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।১
ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসচর্চা প্রায় ফরাসি বিপ্লবের পরেই শুরু হয়েছিল। ১৭৮৯ সালের ২৭ জুন আর্থার ইয়ং লিখেছিলেন যে, ‘সমস্ত ব্যাপারটাই মিটে গেছে এবং বিপ্লব সমাপ্ত হয়েছে।’ ইয়ং দীর্ঘদিন ধরে ফ্রান্সে ভ্রমণ করেছিলেন এবং তাঁর প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা লিখেছিলেন।১ এডমন্ড বার্ক তার ‘রিফ্লেকশন্স অন দ্য ফ্রেঞ্চ রিভোলিউশন’ গ্রন্থে বিপ্লবকে একটি ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখেছিলেন।২ মিশলের ‘ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস’ ১৭৯৪ সালে রোবসপিয়েরের মৃত্যুর সঙ্গেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। নেপোলিয়নের দাবি ছিল যে তিনি বিপ্লবকে ১৭৯৯ সালে সমাপ্ত করেছিলেন। ফরাসি বিপ্লবের চরিত্র, কারণসমূ্‌হ, তাৎপর্য, বিভিন্ন কুশীলবের ভূমিকা, বিপ্লবের প্রভাব ইত্যাদি সমস্ত দিক দিয়েই ঐতিহাসিকরা দুশো বছরের বেশি সময় ধরে পর্যালোচনা করেছেন এবং নিজেদের অনুভূতি, মতাদর্শ ও সময়ানুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
বর্তমান বিহারের নালন্দা জেলায় অবস্থিত, প্রাচীন মগধের দুই প্রধান নগর রাজগৃহ ও পাটলিপুত্রকে সংযোগকারী রাজপথের ধারে অবস্থিত নালন্দার বৌদ্ধ মহাবিহারের গৌরবের ইতিহাস বিগত কয়েক দশক যাবৎ ভারতের প্রায় সব বিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত। কিভাবে পঞ্চম শতকের শুরুতে গুপ্ত বংশের সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতায় স্থাপিত পূর্ব ভারতের বৌদ্ধশাস্ত্রের, বিশেষতঃ মহাযান ধর্মশাস্ত্র ও বৌদ্ধ মূর্তিনির্মাণশাস্ত্র চর্চার এই মহান বিদ্যাপীঠের পঠন-পাঠনের সমাপ্তি ঘটল, এই প্রশ্নের উত্তরে, বোধহয় প্রায় সবাই বলবেন, ‘নালন্দা মুসলিম আক্রমণকারী বখতিয়ার খলজি ধ্বংস করেছিল।‘ এই বিশ্বাস জনমানসে অত্যন্ত ব্যাপক, এবং এর কারণ সম্ভবতঃ বিংশ শতক থেকে বহু আধুনিক বিদ্বানদের রচনায় এই বিশ্বাসের অভিব্যক্তি। এই বিদ্বানদের অনেকেই আবার নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ১১৯৩, ১১৯৭, ১১৯৮, ১২০০ ১২০২, ১২০৫ বা ১২০৬ সাধারণাব্দের মধ্যে কোন একটি বর্ষকে এই ‘ঘটনা’র সম্ভাব্য তারিখ বলে চয়ন করেছেন।[১]