সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

ইতিহাস তথ্য ও তর্কর উপস্থাপনায়, প্রকাশিত হয়েছে ‘বঙ্গ ইতিহাস প্রবাহ’

সাম্প্রতিক লেখা

দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত বাংলার কাশীপুর, আজ থেকে প্রায় চারশ বছর আগে সুবর্ণরেখা নদীর কোলে ঘন অরণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। অস্ট্রো-এশিয়াটিক জনগোষ্ঠী এবং দ্রাবিড় ভাষাভাষী মানুষের সহাবস্থান আর মিশ্রণে গড়ে ওঠা আরণ্যক গ্রামীণ সভ্যতা কিন্তু এই চারশ বছর আগেও শুধুই আরণ্যক ছিল না। এই দক্ষিণ–পশ্চিম সীমান্ত বাংলা হাজার হাজার বছর ধরে বারবার রূপান্তরিত হয়েছে নতুন নতুন বিশ্বাসের টানাপোড়েনে। এখানে এসেছেন জৈনরা, পরবর্তীতে বৌদ্ধরা। ফলে লৌকিক ধর্মের সঙ্গে মিশেছে জৈন ও বৌদ্ধ ধর্ম। গুপ্ত যুগে যখন তথাকথিত ব্রাহ্মণ্য ধর্ম তার সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে দেখা দিল তখন এই অঞ্চলও সেই আঁচ থেকে বাইরে ছিল না। এদিকে এই অঞ্চলের আদি অধিবাসীদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে তথাকথিত সনাতন ধর্মের আওতায় এসেছেন কিংবা আসতে বাধ্য হয়েছেন।
শাসক শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায় রচিত ইতিহাস ও সাহিত্যে তাদেরই জয়গান গাওয়া হয়, তাদের দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের ও জনগণের অবস্থার বিশ্লেষণ করা হয় কিন্তু সেই শাসকের রাজ্যে বসবাসকারী জনগণের, বিশেষ করে প্রান্তিক মানুষের প্রকৃত আর্থ-সামাজিক অবস্থান বা জীবন যাপন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার নিম্নবর্গীয় মানুষের, শাসক শ্রেণির বিপরীত মেরুতে শ্রেণিবদ্ধভাবে অবস্থানকারী মানুষের জীবনধারার পরিচয় পাওয়া যায় নির্দিষ্ট কতগুলি গ্রন্থে। প্রাচীন বাংলার নিম্নবর্গের ইতিহাস পাওয়া যায় চর্যাপদ, মঙ্গলকাব্যের মতো কিছু সাহিত্যে, কিছু ধর্মীয় গ্রন্থে। আর মধ্যযুগীয় বাংলার পূর্বাঞ্চলের নিম্নবর্গের ইতিহাস পাওয়া যায় মৈমনসিংহ-গীতিকা, পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকার মতো লোকসাহিত্য সংকলনে। লোকসাহিত্যই নিম্নবর্গের মানুষের ইতিহাসের আকর। এই মৈমনসিংহ–গীতিকা তেমনি একটি আকর গ্রন্থ।