সূচী

ইতিহাস তথ্য ও তর্ক

আর্কাইভ

১৯৭২ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ানের খেতাব জয়ের পর থেকে ববি ফিশার বাস্তবিক অর্থে কোনো অফিসিয়াল চেস টুর্নামেন্টে অংশ নিলেন না। ১৯৭৫ সালে খেতাব রক্ষার লড়াইয়ে ওয়ার্ল্ড চেস ফেডারেশন তাঁর খেতাব বাজেয়াপ্ত করলেও তিনি লিখিত ভাবে কোনো প্রতিবাদ জানাননি। ১৯৭৭ সালে তিনি একবার ম্যাসাচুসেটস গিয়েছিলেন। সেখানে 'ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি'-র বিখ্যাত কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ রিচার্ড গ্রিনব্ল্যাট কৃত্রিম মেধার সাহায্যে এক বিশেষ ধরণের চেস খেলার প্রোগ্রামিং তৈরী করে ববি ফিশারকে খেলতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গ্রিনব্ল্যাটের দাবি ছিল যে তার কম্পিউটার পৃথিবীর যে কোনো গ্র্যান্ডমাস্টারকে রুখে দিতে সক্ষম। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো তিনবার খেলে তিনবারই জিতলেন ফিশার।
এমনিতে ভারতবর্ষে দাবার ইতিহাস যথেষ্ট পুরনো। ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই ভারতে সম্ভবত গুপ্ত সাম্রাজ্যের আমলে দাবা খেলার প্রচলন শুরু হয়। তখন এর নাম ছিল ‘চতুরঙ্গ’। পরে ভারত থেকে খেলাটা আমদানি হয় পারস্য বা আধুনিক ইরানে। সেখানে আবার খেলাটার নাম দেওয়া হয় ‘শতরঞ্জ’। পরে ইরান দখল করার পর আরবরা এই খেলাটার সাথে পরিচিত হয়। ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাটরাও ‘শতরঞ্জ’ খেলতে উৎসাহী ছিলেন। তবে তখন খেলাটা সীমাবদ্ধ ছিল দরবারের আমির ওমরাহ আর ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে। এরপর মুঘল ব্যবসায়ীদের হাত ধরেই দাবা খেলা চলে আসে দক্ষিণ ইউরোপে। তারপর ইউরোপ থেকেই এই খেলাটা মূলত আজকের আধুনিক দাবার রূপ নেয়। দাবা খেলায়‘ চেকমেট’ শব্দটা খুব সম্ভব ইরানে প্রচলিত ‘শাহ মাত’ কথাটা থেকেই এেছে ।
১৯৭০ সালের নভেম্বর আর ডিসেম্বর মাসে স্পেনে ইন্টারজোনাল টুর্নামেন্টের আসর বসে | এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্যে পয়েন্টের বিচারে সারা পৃথিবীর দাবা খেলিয়ে দেশগুলোর সেরা চব্বিশজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হলো | এইবার কিন্তু আমেরিকা থেকে ববি ফিশার অংশ নিলেন | শুধু তাই নয় সাড়ে আঠেরো পয়েন্ট পেয়ে তালিকায় সবার শীর্ষে রইলেন তিনি | নিয়মমতো এই টুর্নামেন্টের প্রথম ছয় জন সুযোগ পেলেন ১৯৭১ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে | সাথে পূর্ববর্তী মানে ১৯৬৮ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের দুই ফাইনালিস্টের সুযোগ পাওয়ার কথা | কিন্তু যেহেতু বরিস স্প্যাসকি আগেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়ে গেছেন তাই এইবার রানার্স আপ ভিক্টর করশনয় আর তৃতীয় স্থান অধিকারী মিখায়েল তাল-এর নাম নথিভুক্ত করা হলো | মোট আটজনকে নিয়ে মে মাসে শুরু হলো ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট | নক আউট প্রতিযোগিতার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনাল আর সেমিফাইনালে ববি ফিশার প্রতিপক্ষদের দাঁড়াতেই দিলেন না | দশ রাউন্ডের দুটো ম্যাচেই সরাসরি প্রথম ছটা করে গেম জিতে সবাইকে চমকে দিলেন তিনি | শেষে সেই বছরের সেপ্টেম্বর আর অক্টোবর মাস জুড়ে আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস-এ আয়োজিত ফাইনালে দুবারের প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান টাইগ্রেন পেট্রোসিয়ানকে হেলায় হারালেন ববি ফিশার | সেখানে নয় রাউন্ড খেলায় ফিশার জেতেন পাঁচটা | পেট্রোসিয়ান মাত্র একটা | তিনটে গেম ড্র হয়েছিল | ১৯৭১ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ান হিসাবে ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক চেস ফেডারেশন ববি ফিশারকে সেই সময় দাবায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান বরিস স্প্যাসকির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জার হিসাবে মনোনীত করে | এছাড়াও ১৯৭০ আর ৭১ সালে পরপর কুড়িটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিতে পয়েন্টের হিসাবে ইন্টারন্যাশনাল চেস ফেডারেশনের তালিকায় একেবারে শীর্ষে উঠে আসেন ববি ফিশার |
করোনা ভাইরাসের কার্যকরী ওষুধ যেদিন বেরোবে, সেদিন আমাদের আতঙ্ক কমবে ঠিকই, কিন্তু রোগ ছড়ানো কমবে না। রোগ হওয়া আটকাতে চাই করোনা-র টীকা। টীকার ইতিহাস থেকে মনে হয়, প্রথমেই খুব ভাল টীকা আবিষ্কার হবার সম্ভাবনা কম। প্রথম ধাপে যে টীকা আবিষ্কার হল, তা দিয়ে কিছু কাজ হল, পরে আরেকটি উন্নত টীকা এল, তাতে আরও ভাল কাজ হল, এমনটাই সম্ভব। ভাইরাসঘটিত একটি রোগ পোলিও এখন নির্মূলের মুখে—সেখানে প্রথমে ইঞ্জেকশন দেওয়া টীকা ছিল, পরে মুখে খাবার টীকা দিয়ে রোগ নির্মূলের কাজ প্রায় পুরোটা হয়েছে। এখন আবার নির্মূলীকরণের শেষ পর্যায়ে ইঞ্জেকশন টীকা দিতে হচ্ছে। আর আমরা তো জানি, গুটিবসন্ত নির্মূল হয়েছে জেনারের ভ্যাক্সিনে, কিন্তু তার সলতে পাকানোর কাজ করেছে ভারত-চীনের আবিষ্কার ভ্যারিওলেশন। ইউরোপে প্রায় এক’শ বছরের ভ্যারিওলেশনের ইতিহাসে আমরা দেখেছি, উল্লেখযোগ্য সাফল্য সত্ত্বেও তা সমস্ত জনসাধারণকে দেবার কথা ভাবা হয়নি। ভারতেও সবাই পাননি, আর সেটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু ভারতে কতজন মানুষ ভ্যারিওলেশন পেয়েছিল? কে তাদের এই টীকা দেবার ব্যবস্থা করেছিল? ভ্যাক্সিন আসার আগে ও পরে বৃটিশ সরকার এ নিয়ে কেমন মনোভাব দেখিয়েছিল?